লাইসেন্সের মেয়াদ ৫ বছর, বিআরটিএ খেয়েছে ২ বছর!
পেশাদার মোটর ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী মো. তালব আলী। নিজের ড্রাইভিং লাইসেন্সে নবায়ন করতে ২০২০ সালে আবেদন করেন। অনেক কাঠখোর পুড়িয়ে ২০২২ সালের ১১ অক্টোবর কাঙ্খিত সেই লাইসেন্স হাতে পান। তার লাইসেন্স পাওয়ার অভিজ্ঞতা ঢাকাপ্রকাশ-এর কাছে বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন, ‘আমি ২০২০ সালের আগস্টের দিকে আবেদন করি। প্রথমে নিজে নিজে আবেদন করার চেষ্টা করি। কিন্তু এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে দৌড়াতে দৌড়াতে ক্লান্ত হয়ে যাই। এরপর আমার পরিচিত একজনের সঙ্গে করি। সে আমার কাছ থেকে ৬ হাজার টাকা নেয়। ব্যাংকে জমা দিতে হয় ১৬২০ টাকা। আমার আর কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়নি।’
মেডিকেল ফিটনেসসহ সমস্ত কাজ শুধু সময় অনুযায়ী আসতে হয়। এখানে সবই টাকায় সিস্টেম হয়। টাকা দিলে কোনো কাজই করতে হয় না। ড্রাইভিং টেস্ট করার ক্ষেত্রেও একই। টাকা দিলে গাড়ীর হ্যান্ডেল ধরতে হয় না। শুধু হাজির হলেই চলে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স হাতে পেয়ে তালব আলী বলেন, দুই বছর শুধু বিএরটিএ খেয়ে দিয়েছে। আমার লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর। আর লাইসেন্স হাতে পেলাম ২০২২ সালের ১১ অক্টোবর। অর্থাৎ হাতে পাওয়ার আগেই দুই বছরের মেয়াদ পার হয়ে গেছে। তালব আলী নির্ধারিত ফির বাইরে অতিরিক্ত ৫ হাজার টাকা দিলেও লাইসেন্স হাতে পেতে দীর্ঘ সময় লেগেছে।
তার হাতে লাইন্সে দেখে এগিয়ে আসেন শহিদ উল্লাহ (৫০)। তিনিও পেশাদার চালক। ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করতে এসেছেন বিআরটিএতে। এসে কোথাও কোনো তথ্য না পেয়ে তালব আলীর কাছে জানতে চান নবায়ন করতে কী কী লাগবে।
দুইজনের বয়স প্রায় কাছাকাছি। তাই তালব আলী কথা না ঘুড়িয়ে বলেন, হেল্প ডেস্কে যান ওরা বুঝিয়ে দেবে। অথবা বাইরে যান মক্কেল ধরেন কাজ হয়ে যাবে আপনার কোনো দৌড়ঝাপ করতে হবে না। শুধু যখন যেটার তারিখ পড়বে এসে হাজির হলেই চলবে। তার কথা শুনে শহিদ উল্লাহ বলেন, আমার পরিচিত একজন যাকে দিয়ে আগে কাগজ করেছি সে ৬ হাজার টাকা চেয়েছে। আজকে আসছি অবস্থা বুঝতে। যদি টাকা দিয়েই করতে হয় তাহলে পরিচিত ওই লোকের দিয়ে কাজ করাব।
শুধু তালব আলী বা শহিদ উল্লাহ না। ড্রাইভিং লাইসেন্স যারাই করতে আসছেন তাদের পোহাতে হচ্ছে দীর্ঘ ঝক্কিঝামেলা। কেউ কেউ ক্লান্ত হয়ে টাকা দেওয়াকে সহজ মনে করেন। বিআরটিএ মিরপুর কার্যালয়ে দাঁড়িয়ে অন্তত ১০ জনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
সবার অভিমত প্রায় এক। একটা কথাই ছিল এত ঝামেলায় যাওয়ার কী দরকার। নিজে নিজে গেলে এই কাগজ সেই কাগজ ছোট খাটো ভুল ধরে অযথা ঘোরাবে। তাই ৫-৬ হাজার টাকা নিলেও শান্তিতে কাজ করে চলে যাওয়া যায়। এসব ঝামেলা না যেয়ে টাকা দিয়ে করানো অনেক ভালো।
বিআরটিএ কার্যালয়ে ড্রাইভিং করতে আসা বা গাড়ির ফিটনেস নিতে আসা প্রত্যেকে হয়রান হয়ে দালাল ধরে থাকেন। আর এই দালাল চক্র এখন বাইরের চাইতে ভেতরেই বেশি। সেখানে নিয়োজিত আনসার সদস্যদের হাতে দেখা গেছে লাইসেন্সের জন্য কাগজ নিয়ে রুমে রুমে ঘুরছেন।
তানবীর নামে এক ভুক্তভোগী ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এখানে সাধারণভাবে কাজ করার কোনো সিস্টেম নাই। যার কাছেই যাওয়া যায় বলে এখানে না ওই রুমে যান। সেখানে বলে এখানে না। এটা স্রেফ হয়রানি করার জন্য করা হয়। যেন মানুষ হয়রান হয়ে দালাল ধরতে বাধ্য হয়।
লাইসেন্স প্রাপ্তির দীর্ঘসূত্রিতা সম্পর্কে জানতে চাএল মিরপুর বিআরটিএ অফিসে কর্মরত সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.) আব্দুল্লাহ আল মামুন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, সাধারণ মানুষের অভিযোগগুলো পুরোপুরি সঠিক না। ভেতরে আমাদের কোনো অসঙ্গতি নেই। নিয়ম অনুযায়ী সবাই ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়ে থাকেন। অনেকে মনে করেন টাকা দিলে অনেক কিছু হয় এখন আর বিআরটিএতে এসব চলে না।
তিনি বলেন, ‘লাইসেন্সের যে প্লাস্টিক কার্ডে লেখা হতো সেটি আগে টাইগার আইটি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের অধিনে ছিল। তাদের কাজের মান ভালো না হওয়ায় মাদরাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স প্রাইভেট লিমিটেডকে (ভারত) কাজ দেওয়া হয়। এই ট্রানজেকশন সময়ে অনেক লাইসেন্স জমা পড়ে গেছে। সেগুলো ধীরে ধীরে দেওয়া হচ্ছে। আশা করি দ্রুতই এই সমস্যার অবসান হবে।’
এসএম/এমএমএ/