রাত পোহালেই দুর্গাপূজা, অতিরিক্ত নিরাপত্তা জোরদার

রাজধানীতে ২৩৩টিরও বেশি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ৪টি বিশেষ মণ্ডপ রয়েছে। এগুলো হলো- ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রামকৃষ্ণ মন্দির, ধানমন্ডি পূজামণ্ডপ ও বনানী সার্বজনীন পূজামণ্ডপ। সবগুলো মণ্ডপে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও পুলিশ সদর দপ্তর। নিরাপত্তার জন্য আর্চওয়ে থেকে শুরু করে সিসিটিভি ক্যামেরাসহ সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) র্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
ডিএমপি জানায়, রাত পোহালেই শুরু হচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। গত বছরের সহিংসতার বিষয়টি মাথায় রেখে এবারের দুর্গাপূজা ঘিরে তৎপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পূজার প্রথম দিন শনিবার (১ অক্টোবর) থেকে বিসর্জন বুধবার (৫ অক্টোবর) পর্যন্ত পাঁচদিন দেশজুড়ে থাকবে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। গুরুত্বপূর্ণ মন্দির বিবেচনায় তালিকা করে প্রতিটি মণ্ডপ ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে নিরাপত্তা বলয়। এ ছাড়া এবার প্রতিটি মণ্ডপে সার্বক্ষণিক আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। টহলে থাকবেন র্যাব-পুলিশের সদস্যরা।
এদিকে বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকালে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, নিরাপত্তা-ঝুঁকি দুই ধরনের হয়। একটা হলো জঙ্গি হামলার আশঙ্কা। আর অন্যটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে সাধারণদের উসকানি দিয়ে বিশৃঙ্খলা করা।
পুলিশ জানায়, গত বছর কুমিল্লার নানুয়ার দিঘিরপাড়ের পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরীফ রেখে যায় এক যুবক। এর জেরে ওই মণ্ডপসহ নগরীর আরও কয়েকটি মণ্ডপে ভাঙচুর চালানো হয়। সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে চাঁদপুর, নোয়াখালী ও রংপুরের বিভিন্ন স্থানে। গতবারের এ সহিংসতার বিষয়টি মাথায় রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চ পর্যায় থেকে এবার সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থানে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে এবারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা উত্তপ্ত। দুর্গাপূজার সময় কোনো মহলের উদ্দেশ্যমূলকভাবে নাশকতা ঘটানোর শঙ্কার বিষয়টিও মাথায় রাখা হয়েছে। এমনকি সম্প্রতি দেশজুড়ে অন্তত ৫০ জন যুবকের বাড়ি ছেড়ে জঙ্গি সংগঠনে জড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কার বিষয়টিও থাকছে এবারের নিরাপত্তা বিবেচনায়।
তথ্য মতে জানা যায়, সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে মাঠপর্যায়ে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি চলছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর। যেকোনো গুজব প্রতিরোধে নজর রাখা হচ্ছে সাইবার স্পেসেও। এরপরও যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে সোয়াট, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, র্যাবের হেলিকপ্টারসহ স্ট্রাইকিং ফোর্স। গুরুত্বপূর্ণ মন্দিরগুলোর প্রবেশপথে আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে তল্লাশি করা হবে। প্রয়োজনে পুরো এলাকা সুইপিং করবে ডগ স্কোয়াড ইউনিট।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য বলছে, প্রত্যেকটি ইউনিট সমন্বয় করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। এর বাইরে মন্দিরের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবীদেরও সার্বক্ষণিক তৎপর থাকতে বলা হয়েছে। যেকোনো অসঙ্গতি দেখলে তাৎক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিতে বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেছেন, পূজা আয়োজকদের ২১ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেখানে আর্থিক সঙ্গতি সাপেক্ষে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং সরকারি নির্দেশনা মেনে মন্দিরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রেখে বাইরে আলোকসজ্জা পরিহার করতে বলা হয়েছে। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার আন্তরিক রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আমরাও প্রতিটি মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে নিজস্ব নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব ইউনিট দেশের সব পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। মণ্ডপে আনসার, পুলিশ থাকবে টহলে। স্বেচ্ছাসেবকরা সন্দেহজনক কিছু দেখলে ৯৯৯ কল করে পুলিশ-র্যাবকে জানানোর অনুরোধ রইল।
র্যাব সূত্র জানায়, পূজা কমিটি ও মণ্ডপের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে সমন্বয় করে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছে র্যাবের ১৫টি ব্যাটালিয়ন ও ৬০টি ক্যাম্প। সাদা পোশাকে মাঠপর্যায়ে নজরদারির পাশাপাশি তৎপরতা রয়েছে সাইবার স্পেসেও। মণ্ডপকেন্দ্রিক নিরাপত্তায় থাকবে স্ট্রাইকিং ও রিজার্ভ ফোর্স।
এ বিষয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, যেসব এলাকায় আগের বছর প্রতিমা ভাঙচুর বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে এবং যেসব মণ্ডপের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ত্রুটি আছে, সেসব স্থানে র্যাবের পক্ষ থেকে বাড়তি নজর রাখা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নজরদারি চলছে যেন কেউ গুজব ছড়িয়ে পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করতে না পারে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) হাফিজ আল আসাদ বলেন, দুর্গোৎসব ঘিরে সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকি বা হামলার তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। তারপরও শান্তিপূর্ণভাবে পূজা সম্পন্ন করতে শতভাগ নিরাপত্তার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। মণ্ডপগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করতে বলা হয়েছে। এর ফলে সবাই নিশ্চিন্তে ও নির্বিঘ্নে এ আয়োজনে অংশ নিতে পারবেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা জঙ্গি হামলার শঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছি না। কারণ গত ১ মাস ধরে আমরা একটা বিষয় নিয়ে কাজ করছি। আপনারা জানেন ৫০ জন ছেলে তাদের বাসা-বাড়ি ছেড়েছে। তারা কোথায় ট্রেনিং নিচ্ছে আমরা এখনো তা জানি না। তবে আমাদের গোয়েন্দারা এ নিয়ে কাজ করছে। আমরা আশা করি তারা ফিল্ডে কোনো অপারেশনে আসার আগেই তাদের ধরে ফেলতে পারব এবং আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন গুজব রোধে আমাদের সাইবার মনিটরিং রয়েছে সেসব বিষয় বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। অনলাইনে গুজব ছড়িয়ে, ভুয়া পোস্ট দিয়ে সহিংসতার ঝুঁকি সব সময়ই থাকে। গত বছর কুমিল্লায় একটি মণ্ডপে কোরআন শরীফ রাখা নিয়ে যে ঘটনা হলো এবারও এরকম অপতৎপরতা থাকতে পারে।
কেএম/এসজি
