অনাস্থা দূর করতে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন চায় ইসি
আগামী বছর নভেম্বর মাসে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সময় ধরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশন মনে করে ঘোষিত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে কোনো রাজনৈতিক দলেরই কমিশনের প্রতি আর অনাস্থা থাকবে না। তফসিল ঘোষণার সময় নিবন্ধিত সকল রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হবে বলেও জানান নির্বাচন কমিশনরা।
তারপরও কোনো দল না আসলে কমিশনের কিছু করার থাকবে না। তফসিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা বন্ধ কমিশন ভূমিকা রাখবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন ভবনের মিলনায়নে আনুষ্ঠানিকভাবে সংসদ নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা করা হয়। নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান (অব.) এ রূপরেখা ঘোষণা করেন।
নির্বান কমিশন সচিবালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর, মো. আনিছুর রহমান।
এ কর্মপরিকল্পনা ঘোষণার পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন অন্য তিন কমিশনার। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার আলমগীর বলেন, যেহেতু ইভিএম এ আগে পরে ভোট করার সুযোগ নাই। যেখানে ব্যালটে ভোট হবে সেখানে আমাদের চ্যালেঞ্জ আছে। আমরা যদি দেড়শ আসন নিরাপদ রাখি বাকি দেড়শ আসনে যেহেতু ইভিএম আগে পরে ভোট দেওয়ার সুযোগ নাই, জাল ভোট দেওয়ারও সুযোগ নাই। আমরা পারলে ইভিএম আরও বাড়াতাম। কিন্তু আমাদের তো সময় নেই, সেই ট্রেনিং দেওয়ার সময় নেই। এমন যদি হতো আমাদের হাতে তিনটা বছর সময় থাকত তাহলে আমরা ৩০০ আসনেই ইভিএম এ করতে পারতাম। এমনও হতে পারে একদিনে নির্বাচন করব না।’
বিএনপি আপনাদের প্রতি আস্থা রাখেনি সেই অবস্থায় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন কতটা সম্ভব এমন প্রশ্নের জবাবে আলমগীর বলেন, একটি রাজনৈতিক দল তারা আমাদের উপর অনাস্থা এনেছে। আস্থা আনার জন্য আমরা কি কি কাজ করব আমাদের কর্মপরিকল্পনায় দিয়েছি। এখনো নির্বাচন হতে এক বছর চার মাস বাকি আছে। একটি রাজনৈতিক দলের যদি এখন পর্যন্ত অনাস্থা আছে। এই এক বছর চার মাসে আমরা যদি আমাদের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে আমাদের ধারণা কোনো রাজনৈতিক দলের আর কোনো অনাস্থা থাকবে না। রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের কার বাড়ি কোথায় কার পরিচয় কি এটা জানতে চাইবে না তারা চাইবে আমাদের কার্যক্রম। আমাদের কার্যক্রমে যদি হয় যে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ এবং একটি সুন্দর নির্বাচনের জন্য যা করছি, করে যাচ্ছি তাতে তাদের আস্থা ফিরে আসবে। আমাদের কাজ দেখেন, আমাদের কাজ দেখে মূল্যায়ন করেন।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে কোনো কর্মকর্তা নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনে অনীহা বা পক্ষপাতিত্ব প্রমাণ পেলে বিশেষ বিধান আইন ১৯৯১ প্রয়োগ করা হবে। সেই আইনে চাকরিচ্যুত করার ক্ষমতাও রয়েছে। নির্বাচন কমিশনও সরাসরি শাস্তি দিতে পারবে। নির্বাচন কমিশনের আদেশ অগ্রাহ্য করার সুযোগ নাই। যদি কোনো কর্তৃপক্ষ অগ্রাহ্য করে তাহলে সেই কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও সরাসরি ব্যবস্থা নিতে পারবে কমিশন। তা ছাড়া, আদালতে মামলার সুযোগ থাকবে।’
রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রসঙ্গে কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, ‘নতুন কোনো মামলা বা নতুন হয়রানি যেন না হয় সেই ব্যবস্থা কমিশন করবে। যে মামলা চলমান আছে, নতুন করে পুনরুজ্জীবিত করার প্রক্রিয়া আছে। যেই মামলা চলমান আছে সেই মামলায় আমরা হস্তক্ষেপ করতে পারছি না।’
তা ছাড়া, সেই মামলায় কারা আসামি আছে সেই তথ্য আমাদের হাতে নেই। নতুন মামলা দিলে আমরা প্রতিকারের ব্যবস্থা নেব। মামলা তার নিজস্ব গতিতে চলবে। হয়রানিমূলক মামলা করেত পারবে না বিশেষ করে নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার পর, যারা প্রার্থী তাদের বিরুদ্ধে নতুন করে কোনো মামলা করা যাবে না, যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, যে পরিস্থিতি আমরা সৃষ্টি করতে চাই। সবার যদি সহযোগিতা যদি আমরা পাই তাহলে সেই রকম অবস্থার সৃষ্টি হবে না। হয়রানিমূলক মামলা হয়তো হবেই না।
কমিশনার রাশেদা সুলাতানা বলেন, ‘যেকোনো মানুষ যদি সংক্ষুব্ধ হয় যে কোনো ভাবেই হোক আর সুক্ষুদ্ধ না হলেও যদি কেউ মনে করে হয়রানিমূলক মামলা করব, একটা মিথ্যা মামলা হয়। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে কি আদৌ এটা বন্ধ করা সম্ভব? আসলে আমরা কখনই নিজের ভালো ছাড়া অন্যেরটা দেখেনি। বাঙালি দুই মুখো থাকতে পছন্দ করি। নির্বাচন সুষ্ঠু সুন্দর করতে গেলে যে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার আমরা সেগুলো নেব। আমরা একটুও পিছপা হব না।’
নির্বাচনে বিএনপির না আসার ঘোষণা প্রসঙ্গে বলেন, ‘কেউ একজন দাওয়াত দেওয়ার পর যদি যাব না বলে মনস্থির করে রাখি আমি যাব না। আমার অজুহাতের শেষ থাকবে না। দাওয়াত দিলে অংশগ্রহণে ইচ্ছার মনোভাব থাকতে হবে। জোর করে খাওয়াতে পারবেন? নিশ্চয়ই পারবেন না। যখন দেশের জন্য কাজ করব এই সদিচ্ছা তো মনের ভেতর থাকতে হবে। আমরা হাল ছেড়ে দেব কেন? আমরা হাল ছাড়িনি।’
যারা নির্বাচন করবেন তাদের তো ইচ্ছা থাকতে হবে। কেউ যদি আসতে না চায় আমাদের কী করার থাকে? তবে শিডিউল ঘোষণা করার সময় সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান করা হবে।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী বছর (২০২৩ সালের) নভেম্বরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। একই বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
বর্তমান একাদশ জাতীয় সংসদের মেয়াদ ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারি শেষ হবে। সংবিধান অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিন পূর্বে নির্বাচন অনুষ্ঠান করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
এসএম/এমএমএ/