৩ মাসেও মেলেনি প্রবাসী হাফিজুলের পাসপোর্ট
হাফিজুল ইসলাম। বাড়ি মেহেরপুরের সদর উপজেলার চরশ্যামনগরে। থাকতেন আফ্রিকার দেশ সিসিলিতে। প্রায় তিন মাস আগে দেশে এসেছেন পাসপোর্ট নবায়ন করার জন্য। কিন্তু আবেদন ফরম পূরণ করার দুই মাস ২৩ দিন পরও মেহেরপুর থেকে নতুন পাসপোর্ট পাননি।
নিজের পাসপোর্টের সর্বশেষ অবস্থান জানতে বড় বোন রাহিমা খাতুনকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকার আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে ঘুরছেন দুই দিন ধরে। তাতেও পাসপোর্টের অবস্থান জানতে পারেননি। বরং নানা ভোগান্তি আর হয়রানির শিকার হয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকাপ্রকাশ কার্যালয়ে এসে সেই ভোগান্তির কথা জানিয়ে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন দুই ভাই-বোন।
হাফিজুল খুব একটা লেখাপড়া করেননি। তাই বোনকে সঙ্গে নিয়েই পাসপোর্টের জন্য দৌড়-ঝাপ করছেন। সঙ্গে থাকা রাহিমা খাতুন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘তার ভাই পাসপোর্ট নবায়ন করার জন্য দেশে আসেন। গত ২০ জুলাই তারা মেহেরপুর জেলা পাসপোর্ট অফিসে আবেদন করেন। ডেলিভারির সম্ভাব্য তারিখ ছিল ১১ আগস্ট। কিন্তু নির্ধারিত তারিখে পাসপোর্ট না পেয়ে আরও অন্তত ১০ দিন অপেক্ষা করে তারা মেহেরপুর পাসপোর্ট অফিসে যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে জানতে পারেন তাদের আবেদনটি ঢাকাতেই পাঠানো হয়নি। কি জন্য পাঠানো হয়নি সে বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
রহিমা অভিযোগ করে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে যেখান থেকে পাসপোর্ট ফরম পূরণ করেছেন মেহেরপুরের সাগর-সৈকত টেলিকমের মালিক শহিদুলের সঙ্গে দেখা করেন। শহিদুল পাসপোর্ট অফিসের দালালি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।’
তিনি রাহিমাকে বলেন, ত্রিশ হাজার টাকা দিলে পাসপোর্টের কাজ দ্রুত হয়ে যাবে। এরপর রাহিমা যান আরেক দালাল কুদ্দুসের কাছে। তিনি বলেন, ২৭ হাজার টাকা লাগবে পাসপোর্ট দ্রুত পেতে।
কিন্তু রাহিমা দালালদের কোনো টাকা দিতে পারবেন না জানিয়ে ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, মেহেরপুর অফিস থেকে তাকে বলা হয়েছে পাসপোর্ট ঢাকায় চলে আসছে। এ কথা জানার পর গত রবিবার রাতে তিনি ঢাকায় আসেন। একটি হোটেলে উঠে সোমবার ও আজ মঙ্গলবার দুই দিন আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে দৌড়াদৌড়ি করেছেন।
রাহিমা বলেন, ‘একবার তিন তলায় যাই তো, আরেকবার পাঁচ তলায়। সেখান থেকে আবার চার তলায়, এভাবে এক ফ্লোর থেকে আরেক ফ্লোরে, এক কক্ষ থেকে আরেক কক্ষে দৌড়াদৌড়ি করার পর চার তলার ৪১৪ নম্বর কক্ষের একজন তাকে বলেন, রিসিটে মেহেরপুরের কর্মকর্তার স্বাক্ষর নিয়ে আসেন তাহলে পাসেপোর্ট নিতে পারবেন।’
রাহিমা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘তার ভাই গত মাসের (আগস্ট) ২৮ তারিখে সিসিলিতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পাসপোর্ট না পাওয়ায় আর যেতে পারেননি। এখন কবে পাসপোর্ট পাবে আর কবে যেতে পারবেন আমরা জানি না।’
রাহিমা বলেন, ‘টাকা ছাড়া কোনো কাজ হচ্ছে না। সবাই টাকা চায়। আমার ভাই যে বিদেশ থেকে দেশের জন্য টাকা পাঠাই এতে তো দেশের উপকার হয়। তাহলে প্রবাসীদেরকে কেন হয়রানির শিকার হতে হয়? আমাদের কথা শোনার কেউ নেই।’
রাহিমার অভিযোগ, মেহেরপুর পাসপোর্ট অফিসেই তার ভাইয়ের পাসেপোর্টের আবেদন পড়েছিল এক মাসের বেশি সময়। ওখানে টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না।
জানতে চাইলে মেহেরপুর পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা মো. জাকির ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘এই পাসপোর্টের অনেক সমস্যা ছিল। আবেদনকারীর নাম, বয়স, তার পিতা ও মাতার নাম সংশোধনের বিষয় ছিল। আপনার অফিসেই আবেদনটি কেন একমাস পড়েছিল-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
তিনি বলেন, ‘আমি ২২ আগস্ট ঢাকায় পাঠিয়েছি। সেখান থেকে কিছু বিষয়ে জানতে চেয়ে ২৪ আগস্ট সেটি ফেরত আসে। এরপর আমি ২৯ আগস্ট আবার পাঠিয়েছি।’
অভিযোগ উঠেছে, দালালদের মাধ্যমে আবেদনকারীর কাছে টাকা চেয়েছেন। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী? এ প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, আপনি আমার অফিসে আসেন কথা বলব। এ কথা বলেই তিনি লাইন কেটে দেন।
প্রসঙ্গত, পাসপোর্ট নিয়ে ভোগান্তি কমছেই না সাধারণ সেবাগ্রহীতাদের। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে একেবারে প্রত্যন্ত জেলা পর্যায় পর্যন্ত ভোগান্তি পোহাচ্ছেন পাসপোর্ট করতে যাওয়া সাধারণ মানুষ। জেলা পর্যায়েও দালাল এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ সেবাগ্রহীতারা। এই অবস্থা থেকে কবে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে তার কোনো জবাব নেই কারও কাছে।
এনএইচবি/এমএমএ/