‘৫-১০ লাখ টাকায় মানুষরে ডিলিট করিয়ে দিচ্ছে’
‘আনসারগুলো দুই লাখ, পাঁচ লাখ, ১০ লাখ টাকা নিয়ে ডিলিট করিয়ে দিচ্ছে মানুষরে। প্রতিবছর বয়স কমানোর জন্য নেওয়া হচ্ছে ১৫ হাজার টাকা। এই টাকা নেয় ভেতরের স্যারেরা।’ কথাগুলো বলছিলেন নুরুজ্জামান। তিনি দীর্ঘদিন আগারগাঁওয়ের ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে দালালির সঙ্গে যুক্ত।
মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) সরেজমিনে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের চিত্র দেখতে গেলে কথা হয় তার সঙ্গে।
নুরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা এখানে বছরের পর বছর দালাল হিসেবে কাজ করি। এই কাজের বিনিময়ে আমরা ২-৪ টাকা পাই। আর এটার (পাসপোর্ট অফিস) ভেতরে যে আনসাররা কাজ করে তারা কিছুদিন এসেই বাড়ি-গাড়ি করে ফেলছে।’
তাদের মেইন লিডার মামুন স্যার- এমনটা জানিয়ে নুরুজ্জামান বলেন, ‘মামুন স্যারের আন্ডারেই এসব কাজ হচ্ছে। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে টাকা দিয়ে বারবার এখানে থেকে যাচ্ছেন। তাকে সরানো যায় না। তাকে কেউ সরাতে পারছে না।’
‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের টাকা দিয়ে যেহেতু মামুন স্যার এখানে থাকছেন তাই তিনি বেপরোয়া। হাজার হাজার মানুষের পাসপোর্ট আটকে রেখেছেন। মোটা আংকের টাকা দিলে, দুই লাখ, তিন লাখ টাকা দিলে পাসপোর্ট দিয়ে দেওয়া হয়। মামুন সাহেব বস্তা ভরে ভরে টাকা নেন আর পাসপোর্ট দেন। এই দুর্নীতির মূল হোতা মামুন স্যার।’
এক প্রশ্নের জবাবে নুরুজ্জামান বলেন, ‘মামুন স্যার হলেন ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আবদুল্লাহ আল মামুন। তবে তার উপরে ব্রিগেডিয়ার যারা আছেন তারা অবশ্য এর মধ্যে নাই। এখানে সেনাবাহিনীর যারা আছেন তারা ভালো মানুষ। তারা ভালো কাজ করেন এবং দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন।’
দুর্নীতিগুলো করছে মূলত আনসারগুলো এমন দাবি করে নুরুজ্জামান বলেন, আনসারগুলো দুই লাখ, পাঁচ লাখ, ১০ লাখ টাকা নিয়ে ডিলিট করিয়ে দিচ্ছে মানুষরে।
ডিলিট মানে কী বোঝাচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে নুরুজ্জামান বলেন, ‘ডিলিট মানে হলো ধরেন আপনি একটা বই (পাসপোর্ট) করেছেন, ওই বই পুরা ডিলিট বানিয়ে দেবে তারা। পরে আবার একটা নতুন বই বানিয়ে দেবে।’
এতে ওই লোকের লাভ কী এমন প্রশ্নের জবাবে দীর্ঘদিন ধরে দালালির কাজ করা নুরুজ্জামান বলেন, ‘যিনি লাখ লাখ টাকা দিয়ে এটি করান তার পাসপোর্টের সঙ্গে ভোটার আইডি কার্ড বা অন্যান্য কাগজপত্রের মিল নেই। তাই এটি ডিলিট করে নতুন পাসপোর্ট নেন।’
হাজার হাজার পাসপোর্ট আটকে রাখা হচ্ছে দাবি করে নুরুজ্জামান বলেন, ‘বয়স ১০ বছর কমানোর জন্য প্রতিবছর হিসেবে ১৫ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। তার মানে ১০ বছর বয়স কমাতে এই চক্র নেয় দেড় লাখ টাকা। এই দেড় লাখ টাকা ভেতরের স্যারেরা নেয়। এর উপরে যা নিতে পারে আনসাররা। সব টাকাই আনসাররা রিসিভ করে। তারপর তারাই কাগজে সাইন নিয়ে ছেড়ে দেয়। পাসপোর্ট দুই দিনেই পেয়ে যায় লোকজন।’
আর টাকা না দিলে ভুক্তভোগীরা দিনের পর দিন ঘোরে এমন দাবি করে নুরুজ্জামান বলেন, বিশ্বাস না হলে আপনারা আরও ১০ জনের কাছে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।
বয়স কমানোর জন্য তো এফিডেভিট লাগে। এ কথার জবাবে নুরুজ্জামান বলেন, এফিডেভিটের কাগজ দিলেও তারা পাসপোর্ট আটকে রাখে যতক্ষণ ঘুষ না পায়।
এমআরপি বই ভেতরে আছে দিচ্ছে না এমন অভিযোগ করে নুরুজ্জামান বলেন, সেই বই আবার ৩০-৪০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে দেওয়া হয়। এটার মূল হতো রাশি। এই রাশির আবার পরিচালক মামুন স্যারের সঙ্গে লিয়াঁজো আছে। ওই পরিচালকের ইন্ধনেই রাশি এই কাজগুলো করায়।
জানতে চাইলে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ূব চৌধূরী ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এমনটা হওয়ার কথা নয়। যেই দালাল এমন অভিযোগ করছে তার ছবিটা দেবেন। কথা বলব।
এনএইচবি/এসজি