৫ মিনিটেই মেলে পাসপোর্ট!
পাসপোর্টের ফরম জমা দিতে যেমন টাকা লাগে, তেমনি পাসপোর্ট ডেলেভারি পেতেও টাকা লাগে। দীর্ঘ লাইনে না দাঁড়িয়ে পাঁচ থেকে দশ মিনিটের মধ্যেই পাওয়া যায় পাসপোর্ট। এ জন্য দালালদের হাতে এক হাজার থেকে পনেরো শত টাকা দিলেই দ্রুত চলে আসে পাসপোর্ট। দালালদের কাছে যেতে হয় না, দালালরাই আপনাকে খুঁজে বের করে নেবে।
এই চিত্র রাজধানীর আগারগাঁও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের। মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে সরেজমিন পাসপোর্ট অফিসের সামনে কথা হয় অনেকের সঙ্গে। যাদের প্রায় সবাই পাসপোর্ট নিতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন কিংবা এক দরজা থেকে আরেক দরজায় ঘুরছেন। সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া নানান ভোগান্তির তথ্য।
পাসপোর্ট নিতে বা জমা দিতে আসা সাধারণ মানুষের অভিযোগ, হয়রানির আরেক নাম হচ্ছে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পাসপোর্ট অফিস। এখানে দালালদের হাতেই জিম্মি সাধারণ মানুষ। তাদের অভিযোগ, প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে দালালদের কর্মকাণ্ড।
পাসপোর্ট নিতে আগারগাঁও অফিসে এসেছেন জয়নাল আবেদীন। তিনি বলেন, এখানে এক ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। কিছু সময় লাইন ভালোই চলছিল, এখন আর লাইন সামনের দিকে এগোচ্ছে না। লাইনের শেষে এবং সামনে দুজন লোক আছে। তারা সবাইকে জিজ্ঞেস করছেন কীভাবে সহযোগিতা করতে পারি, মূলত এরা দালাল চক্র। তারা এক হাজার থেকে পনেরো শ টাকার বিনিময়ে লাইনে না দাঁড়িয়ে খুব সহজেই মানুষকে পাসপোর্ট দিয়ে দেন। আমি বলে দিয়েছে তাদেরকে টাকা দেব না। দালালদের আরও বলেছি, লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেই পাসপোর্ট নেব।
চুয়াডাঙ্গা থেকে পাসপোর্ট নিতে এসেছেন সোহেল রানা। তিনি বলেন, প্রায় এক ঘন্টার বেশি সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। দালালদের অনেকে আমাকে বলছেন আগে দিয়ে দিব ১০০০ টাকা দিন। আমি বলেছি লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেই আমি নিয়ম অনুযায়ী পাসপোর্ট নেব, কোনো দালালকে টাকা দেব না।
বকশিবাজার থেকে পাসপোর্ট নিতে আসা হাবিব হোসেন অভিযোগ করে বলেন, দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে কোমর ধরে গেছে, আর কত সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকবো বলতে পারছি না। পাসপোর্ট অফিসের দালালচক্র কখনো যাবেই না, এদের জন্যই আমাদের ভোগান্তি বেশি হয়।
পাসপোর্ট ডেলিভারি গেটে ডিউটি করছে শের-ই-বাংলানগর থানার সাব-ইন্সপেক্টর দেলোয়ার হোসেন। তিনি লাইনটি নিয়ন্ত্রণ করছেন। তারপরও মাঝে মাঝে সেবামুখী মানুষ তার সহযোগিতা চাচ্ছেন। তিনিও কীভাবে সহযোগিতা করতে পারেন সেটা বলে দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাব ইন্সপেক্টর দেলোয়ার হোসেন বলেন, লাইন ঠিকঠাক চলছে, কোনো ভোগান্তি নেই। বাইরের পরিবেশ আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করছি।
অনেকেই অভিযোগ করছেন, আপনি অনেককে পাসপোর্ট আগে পেয়ে দেবেন বলে আশ্বস্ত করছেন। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসব মিথ্যা কথা আমি আইশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি।
পাসপোর্ট ডেলিভারি নিতে আসা সাগর নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘দালাল চক্রের সদস্যরা আমার কাছে এসে বলছে এক হাজার টাকা দিলেই খুব কম সময়ের মধ্যে আপনার পাসপোর্ট পাবেন লাইনে দাঁড়ানোর দরকার নেই। আমি এই চক্করে খপ্পরে না পড়েই পাসপোর্ট নেব এজন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছি।’
দীর্ঘ সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা জামাল হোসেন বলেন, ‘আজ লাইন এগোচ্ছে কম। ভেতরে ভেতরে অনেকে গরমের মধ্যে দাঁড়িয়ে না থেকে দালাল ধরে পাসপোর্ট নিয়ে যাচ্ছে আগেভাগে।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ূব চৌধুরী ঢাকাপ্রকাশ-কে মুঠোফোনে বলেন, ‘পাসপোর্ট অফিসের এখন আর আগের মতো দালাল নেই। অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। পাসপোর্ট ডেলিভারি দেওয়ার সময় আমাদের লাইনটা একটু বড় হয়। তবে লাইনে বেশি সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না। বাইরে যদি কেউ কাউকে কিছু বলে সেটা তো অন্য বিষয়।’
তিনি বলেন, আপনারা পারলে দালালদের একটি লিস্ট আমাদের দেন, আপনারা তাদেরকে চিহ্নিত করে দেন। এবং সম্ভব হলে আমাদের অফিসের যে সমস্ত কর্মকর্তারা এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে বা যদি থেকে থাকে তাহলে তাদেরও চিহ্নিত করে দেন এতে করে অপরাধ কমে আসবে। আশা করি অভিযোগের সত্যতা মিললে দালাল চক্র এবং পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আমরা অফিসিয়াল আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। তাছাড়া ঢাকা জেলার প্রশাসন আমাদের সবসময় বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করছে প্রয়োজনে বিষয়টি আমরা তাদেরকে জানাবো। তারা যেন আশেপাশে তদারকি করেন।
এনএইচবি/এমএমএ/এএস