ইসি, ইভিএম নিয়ে সংসদে তুমুল বিতর্ক
নির্বাচন কশিন (ইসি) ও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন নিয়ে সংসদে তুমুল বিতর্ক হয়েছে। অনেকে বলেছেন যে পদ্ধতিতেই ভোট হোক যার শক্তি বেশি সেই বিজয়ী হবেন। আবার কেউ বলেছেন এই কমিশন কোনোভাবেই অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারবে না।
ইভিএম নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে এমপিরা যা বললেন
বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট পাশের আগে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ নিয়ে আনিত মঞ্জুরি দাবির উপর আলোচনা করতে গিয়ে এসব কথা বলেন সংসদ সদস্যরা।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে, আধুনিক রাষ্ট্রে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো বিকল্প নাই।
নির্বাচনী ইনস্টিটিউশন যদি শক্তিশালী না হয় নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি যদি জনগণের আস্থা বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায় সেই দেশে নিঃসন্দেহে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, বিগত দশ বছরে নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পর্কে এমন একটা অনাস্থা তৈরি হয়েছে এখানে নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে যে অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে এটি জনপ্রশাসন এবং জননিরাপত্তা বিভাগে দিয়ে দেন। নির্বাচন কমিশন এখন নির্বাচন করে না, নির্বাচন করে স্থানীয় পর্যায়ের প্রশাসন এবং জননিরাপত্তা বিভাগ এবং জনপ্রশাসনের ব্যক্তিরা।
তিনি আরও বলেন, সার্চ কমিটির মাধ্যমে যাদের নিয়োগ দিলেন তারা তো এই গ্রহরেই মানুষ, অন্য গ্রহ থেকে তো নিয়ে আসেননি। সিইসি দায়িত্ব পাওয়ার পর বিভিন্ন জায়গায় বসেছেন। তিনি কি জানেন না নির্বাচনে কি সংকট তৈরি হয়েছে।
বর্তমান ইসি বলছে ইভিএম এর ভোট কক্ষে যে ডাকাত থাকে সেটি ধরাই হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ। সরকারের যদি সদিচ্ছা না থাকে কোনোভাবেই নির্বাচন সঠিক করতে পারবেন না। আওয়ামী লীগ ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দল ইভিএম চাচ্ছে না। শুধু মাত্র আওয়ামী লীগ চাচ্ছে ইভিএম।
প্রধানমন্ত্রী ৯৬ সালে যখন আন্দোলন করেছেন তখন তিনি বলেছেন আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। তো আজকে বিএনপিকে ছাড়া কি নির্বাচন গ্রহণ যোগ্য হবে? পারবেন না। আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে কীভাবে নির্বাচনে আনবেন সেটিই বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা নিয়ে আসতে হবে।
রুমিন ফারহানা বলেন, দেশে যদি নির্বাচনেই না থাকে মানুষ যদি তার ভোটই প্রয়োগ না করতে পারে মানুষ যদি তারপছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে না পারে আগে থেকে যদি ব্যালটে বাক্স ভরা থাকে দিনের ভোট যদি রাতে হয় তাহলে নির্বাচন কমিশন দিয়ে হবে কি। নির্বাচন যে এখন একটা মল্লযুদ্ধ তার একটা বড় প্রমাণ এই নির্বাচন কমিশন শপথ নেওয়ার পর পরই প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন জেলনস্কির মতো বিএনপিকে মাঠে থাকতে হবে।
ভোট কি একটা যুদ্ধ যে জেলনস্কির মতো বিএনপিকে মাঠে থাকতে হবে? আর এক কমিশনার বলেছেন মেশিনে কোনো সমস্যা নাই সমস্যা হচ্ছে গোপন কক্ষে যে ডাকাত ঢুকে থাকে। এই ডাকাত যে শুধু দলীয় ক্যাডার তা নয় এরমধ্যে আছে পুলিশ, প্রশাসন এবং এই ডাকতদের যেভাবে পুরস্কৃত করা হয় সেই পুরস্কার দেখে বোঝা যায় ভবিষৎতে আরও ডাকাত বাড়বে। একজন ডাকতের উদাহরণ ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় যিনি নির্বাচন কমিশনে সচিব ছিলেন হেলালুদ্দিন সাহেব তাকে পরবর্তী সময়ে প্রাইজ পোস্টিং হিসে্বে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব করা হয়। তিনি অবসরের ২৪ ঘণ্টা আগে ইউরোপ সফর করে আসেন।
রাষ্ট্রের টাকা খরচ করে যে ইউরোপ সফরে গিয়েছিলেন সেটা সম্ভবত তিনি অবসরের পর কাজে লাগাবেন। এভাবে যদি ডাকতদের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হয় তাহলে এই দেশে নির্বাচন কোন দিনও সুষ্ঠু হবে না। বিনাভোটে সংসদ গঠন চলতেই থাকবে। সরকারের পুরনো খেলা স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোকে সুষ্ঠু দেখানো বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচনের সামনে। ২০১৪ সালেও দেখেছি ২০১৮ সালেও দেখেছি।
তিনি বলেন, কুমিল্লা সিটি ভোটে মাত্র ১ জন এমপির হুমকি ধামকি এই নির্বাচন কমিশন সহ্য করতে পারে নাই। বার বার তাকে অনুরোধ করা তহয়েছে তাকে চিঠি পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে কিন্তু তাকে এলাকা থেকে সরাতে পারেন নাই। এই ইসির নতজানু মেরুদণ্ড, ভাঙা অবস্থা তাতে খুব পরিষ্কার বোঝা যায় আগামীতে কী জাতীয় নির্বাচন হবে। যে কমিশন এক এমপিকে সামাল দিতে পারে না। সেই কমিশন কী করে ৩০০ এমপিকে সামাল দিয়ে জাতীয় নির্বাচন করবে? এটাই বড় প্রশ্ন।
কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, নির্বাচন করে কারা? নির্বাচন করে রাজনৈতিক দল। স্টেকহোল্ডার হচ্ছি আমরা যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। আমরা যদি সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি না করি তাহলে ঘরে বসে নির্বাচন কমিশন কোনোদিন কোনো কিছু করতে পারবে না। সব কিছু স্বাধীন। প্রকান্তরে কোনো নির্বাচন কমিশন কোনো দিন স্বাধীন না। সমস্ত কমিশনই সরকার দ্বারা গঠিত হয় সরকারের অধিনে কাজ করে। আয়ুব খানের আমলে হয়েছে জিয়াউর রহমানের আমলে হয়েছে আমাদের আমলে হয়েছে এখনও হচ্ছে। এটা চলতেই থাকবে। নির্বাচনের সময় যার ক্ষমতা বেশি যার শক্তি বেশি লোক সংখ্যা বেশি তাকে কোনো কিছু করে রোধ করা যায় না। নির্বাচনে যদি সক্ষমতা নিয়ে না দাঁড়াতে পারে প্রতিদ্বন্দ্বিরা যদি সমকক্ষ না হয় জেতার জন্য সবাই চেষ্টা করবে নির্বাচনে জিততে। নির্বাচনে কেউ হারতে চায় না। নির্বাচন হচ্ছে যুদ্ধ ক্ষেত্র। লোকাল প্রশাসন যে দিকে শক্তি দেখে যার লোক দেখে সেন্টারে যার লোক বেশি প্রশাসন সেদিকে চলে যায়। কিচ্ছু করার থাকে না। যে যত কথাই দিক। যারা ক্ষমতায় আছে জনগণ তাকে সমর্থন করে দুর্বল নেতৃত্বে কেউ কিছু করতে পারে না। সমক্ষক লোক নির্বাচনে আসলে ভোট সঠিক হবে। ইভিএম বলেন আর ব্যালট বলেন লোক যার বেশি সেই সব। কমিশন দিয়ে কিছু হবে না। আমরা রাজনৈতিকদলগুলো ঠিক না থাকি এই নির্বাচন যদি সঠিকভাবে করার চেষ্টা না করি সমস্ত দল জাতীয় স্বার্থে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য শুধু কমিশনের ঘাড় চাপিয়ে দিলে হবে না।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মো. রস্তুম আলী ফরাজী বলেন, যার কাজ তাকে করতে দিতে হবে। আর একজনকে দিয়ে তো কাজ করানো যাবে না। ইলেকশন কমিশনের দায়িত্বই হচ্ছে নির্বাচন পরিচালনা করা। নির্বাচন সঠিক হতে হবে, ফেয়ার হতে হবে। প্রশ্ন থাকতেই পারে নানা ব্যাপারে। ভারতে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হয় সেখানে কোনো প্রশ্ন তোলা হয় না। আমাদের দেশের নির্বাচন নিয়ে ওই ধরনের পরিবেশ আসা দরকার।
ডিজিটাল যুগে ইভিএম এর কোনো দোষ নাই। যারা ইভিএম মানে না, সমস্যা কোথায় সেটা পরিবর্তন করতে হবে। সমস্যা হচ্ছে পেছনে যদি কেউ থাকে পেছনে যেন কেউ না থাকে সেটা দেখতে হবে। ইভিএম এ না হয়ে যদি ব্যালটে হয় সেখানেও তো কেউ না কেউ প্রভাব ফেলতে পারে। প্রভাব খাটানো বন্ধ করতে হবে একটি সুষ্ঠু সুন্দর অবাধ শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে হবে। প্রযুক্তিভাবে যদি নির্বাচন করেন মেশিনের মাধ্যমে সেখানে গ্যাঞ্জাম কম হবে সন্ত্রাস কম হবে। এখানে অন্য ধরনের প্রভাব বিস্তার না করে।
এসএম/এমএমএ/