পদ্মা পার হতে আতঙ্কে আছি নদীতে ফেলে দেবে কিনা: হারুনুর রশীদ
বিএনপি নেতাদের পদ্মা সেতু পার না হওয়ার বিষয়ে সরকারি দলের এমপিদের বক্তব্যের জবাবে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেছেন, ‘পদ্মা পার হতে আমি আতঙ্কে আছি, ওখানে পার হতে যেয়ে আমাকে ডুবিয়ে দেবে কি-না? ফেলে দেবে কি না নদীতে। এটা তো আমি ভয়ের মধ্যে আছি।’
রবিবার (২৬ জুন) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থ বছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
হারুনুর রশীদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদ্মা ব্রিজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিলো। এখানে প্রায় এক-আধ‘শ জন পদ্মা ব্রিজ নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। আজকেও শাজাহান খান বললেন, পদ্মা ব্রিজে উঠবেন না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দাওয়াত দিচ্ছেন আর একজন সদস্য বলছেন পদ্মা ব্রিজে উঠবেন না। আমি কি করবো? এখানে পাশে বড় ভাই কাজী ফিরোজ রশীদ আছেন, নিক্সন চৌধুরী কয়েকদিন আগে দাওয়াত দিল যে উদ্বোধনের পর আমাদের বাড়িতে যাবেন। একদিকে দাওয়াত দিবেন, ওদিকে আপনি ভয় দেখাবেন, আমি তো আতঙ্কে আছি ওখানে পার হতে যেয়ে আমাকে ডুবিয়ে দেবে কি-না? ফেলে দেবে কি না নদীতে। এটা তো আমি ভয়ের মধ্যে আছি।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু এটা আমাদের জন্য গৌরবের। এটা নিয়ে তীর্যক মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপির মন খারাপ, বুকে বড় জ্বালা।’ আমাদের মন খারাপ না। আমাদের মন খারাপ কেন হবে? আমরা আনন্দে আছি। আমাদের মন খারাপ হচ্ছে আমরা মুজিবর্ষ পালন করলাম আমরা পদ্মা ব্রিজ উদ্বোধন করলাম কিন্তু দেশে যে গুম ও খুনের সংস্কৃতি চালু হয়েছে, আমরা এখান থেকে কি বের হতে পারবো। ভোটের অধিকার হারিয়ে ফেলেছি সেটাকি পুন: প্রতিষ্ঠা করতে পারবো? প্রধানমন্ত্রীকে বলবো ওই দিকে দৃষ্টি দেন ওই দিকে নজর দেন। যতই পদ্মা ব্রিজের স্বপ্ন দেখান মানুষের পেটে খাদ্য চাই।
হারুনুর রশীদ বলেন, কোভিড থেকে এখনও আমরা মুক্ত হইনি। এরকম একটা পরিস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী বাজেট উপস্থাপন করেছেন। বড় চ্যালেঞ্জ প্রতিনিয়ত আমদানি ব্যয় বাড়ছে আয় কমছে রপ্তানি মূল্যস্ফিতি বেড়ে চলেছে। ঋণের সুধ পরিশোধে ব্যয় করবো প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকার উপর। যা তিনটি পদ্মা সেতু ব্রিজ নির্মাণের কাছাকাছি। ব্যাপক ঋণ নির্ভর বাজেট স্বনির্ভর অর্থনীতি থেকে বৈদেশিক ঋণ নির্ভর বাজেটের দিকে ধাবিত হচ্ছি।
শিক্ষা খাত নিয়ে বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থা খুবই খারাপ। প্রাথমিক শিক্ষায় সারাদেশে ব্যয় প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা। সারাদেশে ৬০ হাজারের অধিক সরকারি স্কুলে ৩০ শতাংশ স্কুলে শিক্ষক স্বল্পতার কারণে কোন শিক্ষা কার্যক্রম নাই। এটি একটি ভয়াবহ সংকট এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আউট সোর্সিয়ের মাধ্যমে হোক শিক্ষক স্বল্পতা দূর করতে হবে। মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক আরও বেহাল অবস্থা। এ বছর সোয়া ২ লাখের অধিক ছাত্র-ছাত্রী পরীক্ষায় বসছে না। বিপুল সংখ্যক ছাত্র ছাত্রী ঝরে পড়েছে। উচ্চ শিক্ষার মান সত্যি খারাপ। বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে অত্যান্ত খারাপ অবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যখন বিদায় নিচ্ছেন তাদের প্রশংসা দিয়ে সুন্দরভাবে বিদায় দিতে পারছি না পুলিশ পহাড়ায় বিদায় হতে হচ্ছে।
স্বাস্থ্যখাত নিয়ে বলেন, স্বাস্থ্যের এতো বেহাল অবস্থা। নিয়োগ ভর্তি কেনা কাটায় বাণিজ্যে দুর্নীতি অনিয়ম বন্ধ করতে হবে। জনবল সংকট দ্রুত নিরসন করতে হবে। সরকারি বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থাকে আলাদা করতে হবে।
অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আপনাকে কোষাগার রক্ষা করতে হবে। কি আইন করবেন কি যন্ত্রপাতি লাগবে কি প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি লাগবে আপনি করেন। বাজেটে টাকা লাগলে টাকা বাড়ান। হাজার হাজার কোটি টাকা আপনার প্রতিষ্ঠান থেকে লুটপাট হয়ে যাচ্ছে আমরা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখব? এটা হতে পারে না।
পাচারকৃত টাকা ফেরাতে ৭ শতাংশ রিটার্ণ জমার প্রস্তাবকে বিরোধীতা করে বলেন, এটা করবেন না। এতে টাকা আসবে না বদনাম হবে। আইন সংশোধন না করে এটা করলে লাভ হবে না। টাকা আনলেই দুদক মামলা দেবে জেলে যেতে হবে।এটা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
এসএম/