মুজাহিদ চাপ দিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করতে: কাজী ফিরোজ রশীদ
দুই হাজার এক সালে চার দলীয় জোট গঠন ও সে সময়কার স্মৃতি তুলে ধরে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ২০০১ সালে নির্বাচনের পূর্বে আমার চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ দায়িত্ব দিয়েছিলেন জোট করার জন্য। চারদলীয় জোট করেছিলাম বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলাম এবং ইসলামি ঐক্যজোট। এই চারদলীয় জোট করার পর এরশাদ সাহেব হঠাৎ করে চলে গেলেন। আমরা নামাজ পড়ে সালাম ফেরানোর আগে দেখি ইমাম সাহেব নাই। কোথায় যাবো? সেসময় জামাতের মুজাহিদ আমাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসনে নির্বাচন করতে চাপ দিয়েছিল। বলেছিল যত টাকা লাগে দেবো নির্বাচন ওখানেই করতে হবে।
রবিবার (২৬ জুন) বিকালে সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশগ্রহণ করে এসব কথা বলেন তিনি। এসময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদে সভাপতিত্ব করছিলেন।
পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, পদ্মা সেতু কোন রাজনৈতিক আইটেম না। রাজনীতির বিষয় না। এই সেতু গোটা বাঙালি জাতির গর্ব এবং অহংকারের বিষয়। এই সেতু করার মাধ্যমে গোটা পৃথিবীতে আমাদের আর্থিক শক্তি ও সক্ষমতার বার্তা। ইতোমধ্যে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এটা সব থেকে বড় গৌরবের বিষয়। এই সেতুকে কেউ কেউ উপহাস করে গোল্ডেন সেতু বলেছেন। পদ্মা ওপরে তিন কোটি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য চাবিকাঠি হচ্ছে এই পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক অহংকার। অনেক স্বপ্ন। এখানে অনেক শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে বেকার সমস্যা দূর হবে। এই সেতুর সঙ্গে গোল্ডেন সেতুর তুলনা করা যায়না। এটা আমাদের কাছে হিরকের বেশি মূল্যবান।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু থেকে বছরে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা টোল আদায় হবে। কোনো টাকা আদায়ের উৎসের জন্য এই পদ্মা সেতু তৈরি হয় নাই। জনগণের অর্থে জনগণের কল্যাণের জন্য এবং জনগণের স্বার্থে পদ্মা ওপারে অবহেলিত ৩ কোটি মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য এই পদ্মা সেতু প্রধানমন্ত্রী আমাদের উপহার দিয়েছেন। এই সেতু চিরদিন তাকে অমর করে রাখবে।
বাজেট প্রসঙ্গে বলেন, সুখে থাকা মানুষগুলো বোঝে না গরীবের দু:খ কষ্ট কি? আর স্বপ্ন দেখা মানুষগুলো বোঝে না বাস্তবতা কত নির্মম কত কঠিন। প্রথম শ্রেণীর ধর্নাড্য শিল্পপতি। বাংলাদেশের মানুষের অর্থমন্ত্রী। যে কোন জটিল হিসাব মিলিয়ে দেওয়া একদম সহজ। যেটা আমাদের অত্যান্ত জটিল। এই বাজেটে তেল আর জ্বল এমন সুক্ষভাবে মিশিয়েছেন যে এটাকে আলাদা করা সম্ভব নয়। অর্থমন্ত্রী যথেষ্ট মুলশিয়ানা দেখিয়েছে মনে হয় ধনীদের চেহারা সামনে রেখে উনি বাজেট প্রণয়ন করেছেন।
কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করা সর্বাগে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো লুটেরাদের দখলে চলে গেছে। উচ্চ মূল্যস্ফিতি যদি লাগামহীনভাবে এভাবে বাড়তে থাকে তাহলে ধনী এবং দরিদ্রের মাঝে ব্যবধান আরও বেড়ে যাবে। যেটা একটা বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে।
আর্থিক খাতের বিশৃঙ্খলা তুলে ধরে বলেন, আর্থিক খাত দেখলে মনে হয় কেউ দেখার নাই। এখানে যে দেখার প্রতিষ্ঠান আছে বাংলাদেশ ব্যাংক মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকের ডিভিশিন অন্যান্য সংস্থা তারা কিন্তু একদম নিরব নিশ্চুপ লুটপাট কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না। কিভাবে পিকে হালদার প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা নিয়ে দেশের বাইরে চলে গেল। বছরের পর বছর ব্যাংকিং সেক্টর থেকে এই টাকা চুরি করেছে এটা কি দেখার কেউ নাই। এটা তো এক দিনে হয়নি। অভ্যন্তরীন অডিট তো প্রতি মুহূর্তে হয় প্রত্যেকটা সংগঠনে ব্যাংকে অডিট হচ্ছে প্রতিদিন তাহলে কিভাবে হলো? এই টাকা তো দেশে ফিরে আসবে না। এক পরিচালক আর এক ব্যাংক থেকে লোন নিচ্ছে। এটা একে অপরের সঙ্গে যোগসাজসে টাকা নিয়ে যাচ্ছে। এটাকে আড়াল করার জন্য হঠাৎ করে দেখলাম গণ তদন্ত কমিশনের নামে যাদের কোন সাংগঠনিক ভিত্তি নাই সাংবিধানিক ভিত্তি নাই একটা সংগঠন। ২২০০ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন দাখিল করলো ১১৬ জন আলেমের নামে। তাদের কাছে কি আছে? এই আলেমদের কি ঢাকা শহরে বাড়ি ঘর আছে? ধানমন্ডী , গুলশান বনানী বাড়িধারা কোথায় তাদের বাড়ি? লাখ লাখ হাজার হাজার কোটি টাকা তারা কোথায় পাচার করেছে? মানি লন্ডারিং মামলা তাদের বিরুদ্ধে কেনো হবে? এই যে খোঁচা দেয়, সামনে আমাদের নির্বাচন এদের পেছনে কি লোক আছে? এদের পেছনে কি ভোট আছে এরা ২২০০ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন করলো সারা দেশ ঘুরলো করোনার মধ্যে দুই বছর। এই টাকা তারা কোথায় পেল? এই টাকার উৎস কোথায়, এটা জানতে চাই।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের টাকা যা পাচার হওয়ার হয়ে গেছে। পাচার করা টাকা ফেরাতে অর্থমন্ত্রীর উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। এই প্রস্তাব অনৈতিক হলেও সমর্থন করি। তাতে যদি কিছু টাকা ফেরত আসে ভালো। তবে যদি আনে ৭ শতাংশ না ১২ শতাংশ দিয়ে আনুক। টাকা যেটা যায় সেটা বাইরে থেকে আনা কঠিন।
তিনি আরও বলেন, ২০০১ সালে নির্বাচনের পূর্বে আমার চেয়ারম্যান দায়িত্ব দিয়েছিলেন জোট করার জন্য। চারদলীয় জোট করেছিলাম বিএনপি জাতীয় পার্টি জামায়াতে ইসলাম এবং ইসলামি ঐক্যজোট। এই চারদলীয় জোট করার পর এরশাদ সাহেব হঠাৎ করে চলে গেল আমরা নামাজ পড়ে সালাম ফেরানোর আগে দেখি ইমাম সাহেব নাই। কোথায় যাবো? এরশাদ সাহেব আর একটা দল করলেন আলাদা নির্বাচন করবেন? আমরা যখন নির্বাচনের নমিনেশন দেই একদিন মান্নান ভূইয়ার বাসায় জামায়াতের মুজাহিদ সাহেব বললেন আপনি তো ঢাকা-১০ আসনে করবেন আপনার জন্য আর একটা সুসংবাদ আছে, আপনার জন্য আর একটা সুসংবাদ আছে আপনার জন্য আর একটা আছে গোপালগঞ্জ-৩ প্রধানমন্ত্রীর আসন। আমি বলেছিলাম বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আছেন ওখানে আমার পক্ষে সম্ভব না। পাস করাও সম্ভব না। বলে তা না আপনার দাঁড়াতে হবে ওখানে ঢাকা আমরা করবো ওটা আপনার দাঁড়াতে হবে, আমি বললাম দাঁড়ানো সম্ভব না। বলে দাঁড়াতে হবে টাকা তেবো যত টাকা লাগে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর আসনে আর একজন প্রার্থী দিয়েছি রংপুরে সেটা আমাদের সাথে ফয়সালা হয়েছে। কিন্তু আপনাকে এখানে করতে হবে। আমি বললাম আমি দু:খিত এই সভা থেকে চলে যাচ্ছি আমাদের এখানে গোলাম মোস্তফা সাহেব থাকুক। যে নির্বাচনে মুজাহিদ এই কথা বলতে পারে আমি নির্বাচন করবো না। আমি নির্বাচন করলাম না। যৌবনের শ্রেষ্ঠ সময় উৎসর্গ করেছি স্বাধীনতার জন্য।
এসএম/