'সারাদেশের চিত্র পাল্টে দেবে পদ্মা সেতু'
জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের সদস্যরা বলেছেন, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নিজস্ব অর্থায়নে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছেন। এই সেতুর কারণে সারাদেশের চিত্র পাল্টে যাবে। তারা আরও বলেন, এখনো ষড়যন্ত্র চলছে। এ সম্পর্কে সকলকে সতর্ক করতে হবে।
সোমবার (২০ জুন) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ওই আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও প্যানেল সভাপতি এ বি তাজুল ইসলাম।
আলোচনায় অংশ নেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক, সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, সরকারি দলের কাজী কেরামত আলী, বেগম মুনিরা সুলতানা, মুহিবুর রহমান মানিক, জিল্লুল হাকিম, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, বেনজির আহমেদ, তাহজিব আলম সিদ্দিকী, গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, বেগম হাবিবা রহমান খান, হোসনে আরা, রানা মোহাম্মদ সোহেল, সালমা চৌধুরী ও আদিবা আনজুম মিতা এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের মেজর (অব.) আবদুল মান্নান।
আলোচনায় অংশ নিয়ে অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক বলেন, বর্তমান সরকারের গত ১৩ বছরের উন্নয়নের কথা বলে শেষ করা যাবে না। এ সময়ে সারাদেশের চিত্রই পাল্টে গেছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা ষড়যন্ত্র ও বাধা মোকাবিলা করেই স্বপ্নের পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করে গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে সারাদেশের মানুষকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দিয়ে সফলভাবে করোনা মোকাবিলা করেছেন, যা বিশ্বের কাছে প্রশংসা পাচ্ছে।
সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, আজকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, এটা সমগ্র বিশ্বে প্রশংসা পাচ্ছে। কিন্তু বিএনপি সেই উন্নয়ন দেখতে পায় না। জনবিচ্ছিন্ন এই দলটি এখনো ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের চেষ্টায় লিপ্ত। উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে দেশবাসীকে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করায় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনা বুকে ধারণ করে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নিজস্ব অর্থায়নে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছেন। এর মাধ্যমে একদিকে শেখ হাসিনা একজন আত্মবিশ্বাসী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছে, অন্যদিকে বিশ্ববাসীও বাংলাদেশের সক্ষমতা জানতে পেরেছে। এটাতে দেশের ভাবমূর্তি অনেক বেড়েছে।
তিনি বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনতে প্রস্তাবিত বাজেটের সুযোগটি সঠিক উল্লেখ করে বলেন, পৃথিবীর বহু দেশ নানা কলা-কৌশলে পাচার হওয়া টাকা দেশে ফেরত এনে বিনিয়োগ করে। আমাদেরও এসব টাকা ফেরত এনে পুঁজিবাজার কিংবা শিল্প-কারখানায় বিনিয়োগ কর যেতে পারে।
সিলেট-সুনামগঞ্জের চলমান বন্যাকে স্মরণকালের বড় বন্যা বলে উল্লেখ করেন সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক। তিনি বলেন, বিএনপি দলীয় এমপি আজকে বন্যা নিয়ে মানবতা দেখানোর চেষ্টা করলেও তাদের দল বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে ১৯৯৫ ও ২০০৪ সালের বন্যায় বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি। ১৯৯৫ সালের আগস্ট মাসে বন্যায় ৬১ কেজি ওজনের কেক কাটতে দেখেছি।
১২২ বছরের ইতিহাসে ভয়াবহ বন্যা—এই তথ্যটি ঠিক নয় উল্লেখ করে মুহিবুর রহমান বলেন, বড় বন্যা হয়েছে। চেরাপুঞ্জিতে ১২২ বছরের ইতিহাসে একদিনে রেকর্ড বৃষ্টি হয়েছে। ১২২ বছরের ইতিহাসে এত বড় বন্যা হয়নি সেটা বলব না। তবে আমি ১৯৮৮, ১৯৯৫, ১৯৯৮, ২০০৪ ও ২০১৭ সালের বন্যা দেখেছি। মনে করি স্মরণকালের সর্ববৃহৎ বন্যা। সবচেয়ে বেশি মানুষ দুর্ভোগের শিকার হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বন্যা মোকাবেলার জন্য দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সেভাবে তৈরি করতে হবে। সুরমা কুশিয়ারা ও মেঘনা নদীর উৎসস্থল খননের প্রয়োজন। হাওর জলাশয় ভরাট হয়ে গেছে। খালগুলো থেকে পানি চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। এগুলো করা সম্ভব হলে এই পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে পারব।
বিদেশে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনার সুযোগ দেওয়ার সমালোচনা করে জাতীয় পার্টির মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিদেশে অর্থ পাচার মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা এই সুযোগ গ্রহণ করতে চায়। তাদেরকে কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। এ নিয়ে আইনি জটিলতা সৃষ্টি হবে। তাই প্রস্তাব প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। তিনি পদ্মা সেতুসহ দেশে একের পর এক বৃহত্তর প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
উপকূলের উন্নয়নে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর আহ্বান জানান সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে চ্যালেঞ্জ নিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছেন। যা শুধু দক্ষিণাঞ্চলের নয়, সারাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ধরণের ভূমিকা রাখবে।
সরকারি দলের মুনিরা সুলতানা বলেন, সরকারের উন্নয়ন দেখলেই বিএনপির মাথা খারাপ হয়ে যায়। এরা দেশ ও দেশের মানুষের শত্রু। সবক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়ে এরা নানা ষড়যন্ত্র-চক্রান্তে লিপ্ত। এরা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দেওয়ার দুঃসাহস দেখাচ্ছে। আবার যদি বিএনপি নেতারা এ ধরণের হুমকি দেয়, তবে পুরুষদের লাগবে না, আমরা নারীরাই রাজপথে তাদের মোকাবিলা করে দাঁতভাঙ্গা জবাব দেব।
কাজী কেরামত আলী বিএনপির সমালোচনা করে বলেন, বিএনপির আমলে দুটি সরকার ছিল। একটা হাওয়া ভবনের অন্যটা খালেদা জিয়ার সরকার। হাওয়া ভবনের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি করে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। আজ তারাই বড় বড় কথা বলেন। শত ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে চ্যালেঞ্জ নিয়েই পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছেন। আমরা আশাবাদী, এরপর দৌলদিয়া-পাটুরিয়াতেও তিনি দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ করবেন।
তাহজীব আলম সিদ্দিকী বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের সোনার সেতু। সক্ষমতার প্রতীক। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে বিএনপি। দেশে কিছু করতে না পারে বিদেশীদের কাছে ধর্না দিয়ে মিথ্যাচারের মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। মিথ্যাচার করে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু তাদের কোনো ষড়যন্ত্রই দেশের জনগণ মেনে নেবে না।
আবিদা আনজুম মিতা বিএনপিকে খুনির দল উল্লেখ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলেন বলেই ইনডেমনিটি দিয়ে বিচার বন্ধ করে দিয়েছিলেন। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকতে হাওয়া ভবনে বসে পরিকল্পনা করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়েছে। এখন তারা পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু সেই দিন আর তাদের কোনোদিন আসবে না, বিএনপির স্বপ্নও কোনোদিন পূরণ হবে না।
এসএম/এসজি/