বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কোনো পথ-নির্দেশ নেই: মেনন
‘সামাজিক সুরক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ অবাক করেছে’ মন্তব্য করে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, একইসঙ্গে বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কোনো পথ-নির্দেশও নেই।
রবিবার (১৯ জনু) জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থ বছরের বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনায় রাশেদ খান মেনন এ কথা বলেন।
মেনন বলেন, অর্থমন্ত্রী সংসদ প্রণীত আইনও তিনি বিবেচনায় নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। সংসদ প্রণীত দুদক আইন ও মানি লন্ডারিং আইন দু’টোতেই অর্থ পাচার দণ্ডণীয় অপরাধ। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের ২৯ পৃষ্ঠায় অর্থ পাচার সম্পর্কিত উপ-শিরোনামে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা আছে। ২ হাজার কোটি টাকার অর্থ পাচারে অভিযুক্ত সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর ভাই খন্দকার মোহাতে মোনেম জামিনের শুনানিতে হাইকোর্ট বলেছেন, এটা এত বড় অপরাধ যে জামিনও দেওয়া যায় না।
সামাজিক সুরক্ষা যাতে বাজেট বরাদ্দ মাত্র ২ শতাংশ বেড়ে ১ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। বাজেটের শতাংশ হিসেবে এটি ১৯ শতাংশ থেকে কমে ১৭ শতাংশ হয়েছে। দ্রব্য মূল্যের চাপে থাকা এই বরাদ্দ অবাক করেছে। করের ক্ষেত্রেও আঘাত এসেছে ৪ কোটি মধ্যবিত্ত ও তদুর্ধদের উপর। তাদের কর-জালে আনুন আপত্তি নাই। কিন্তু সম্পদশালীদের সম্পদ করের ব্যাপারে কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা না নিয়ে অর্থমন্ত্রী আপনি ৩৮ প্রকার সেবা পেতে কর রিটার্ন দেওয়ার বিধান করছেন মধ্যবিত্তের জন্য। মুসক কর্মকর্তাদের দিচ্ছেন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার অধিকার। কী দোষ করেছে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, গরিব মানুষরা?
তিনি বলেন, আমি কয়েকটি বাজেট বক্তৃতায় বলেছি, বাংলাদেশের রাষ্ট্রের কর্তৃত্বভার এখন অতিক্ষুদ্র ধনীক গোষ্ঠী, সামরিক বেসামরিক আমলাদের হাতে বন্দি হয়ে আছে। কোভিডকালে প্রধানমন্ত্রী সাহসিকতার সাথে যে সকল প্রণোদনা দিয়েছেন তার কতখানি এরা বাস্তবায়িত করতে দিয়েছেন তার মূল্যায়ন হওয়া দরকার। সে সবের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় সংসদ সদস্যদের অতি অসম্মানজনকভাবে আমলাদের অধীন করা হয়েছিল। এই আমলা নিয়ন্ত্রণই রাজনীতিকদের দুর্বৃত্ত বলে বিবৃতি দিতে তাদের সাহস জোগায়। প্রতি বাজেট আলোচনাতেই আমি দেশের ক্রমবর্ধমান বৈষম্য কোনো বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে সে সম্পর্কে বলেছি। বৈষম্য পরিমাপের গিনি সোহাগ অনুসারে এই বিপদ কোন মাত্রায় তাও উল্লেখ করেছি।
কোভিডের পর এই বৈষম্য আরও বেড়েছে। এই সময়কালে আমাদের দেশেসহ পৃথিবীর ধনীদের সম্পদ লাফিয়ে বেড়েছে, আর গরীব মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্তদের আয় কমেছে। সরকারি কোনো হিসাব নাই অথচ বেসরকারি হিসাবে নতুন তিন কোটি দরিদ্র হয়েছে। সরকার স্বীকার করছে না। তাহলে সরকারিভাবে নতুন জরিপ করুন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সংশ্লিষ্ট খাতে বরাদ্দে প্রস্তাব করা হয়েছে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৫২৪ কোটি। কিন্তু হিসাবে ওই উভয় খাতে বাজেট অনুপাতে বরাদ্দ কমেছে, জিডিপি মান সম্মত লক্ষ্য পূরণ করা দূরে থাক। স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতির মহোৎসবটি কোভিডকাল আমাদের দেখিয়েছে। মন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বাস্তবায়নে তাদের সক্ষমতা নাই। ২০১০-এর জাতীয় শিক্ষানীতি এখন যেন অতীতের ব্যাপার। নতুন শিক্ষাক্রমে বিজ্ঞান, গণিত পিছিয়েছে। আর দুর্নীতির কথা না বললাম।
মেনন বলেন, আমরা যখন আলোচনা করছি তখন সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কুড়িগ্রামের ভয়াবহ বন্যা হচ্ছে। বলা হচ্ছে উজানে বৃষ্টিপাতের কারণে নদীর পানি বেড়ে গেছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনই কি এর জন্য দায়ি? ভারতের সাথে ৫৪টি নদীর সমস্যা সমাধানে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক দীর্ঘদিন না হওয়ায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী হতাশা প্রকাশ করেছেন। বছরের পর বছর তিস্তা চুক্তি হচ্ছে না। আবার তিস্তা নদী খননের যে সমীক্ষা সরকার করেছে তার বাস্তবায়ন হতে পারছে না। কী কারণে? কী সেই ভূ-রাজনৈতিক বাধা? সুরমা নদী শুকনো মৌসুমে হেঁটে পার হওয়া যাচ্ছে। এখন সুরমার পানি সিলেট শহরের বাড়িতে বাড়িতে?
রাশেদ খান মেনন বলেন, অর্থমন্ত্রী মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে বাজেটের অন্যতম কৌশল বলেছেন। কিন্তু কোনো পথ নির্দেশ দেন নাই।
এসএম/এমএসপি