সাক্ষাৎকার
পানি এতটা বাড়বে ধারণার বাইরে ছিল: এনামুর রহমান
সিলেট-সুনামগঞ্জে পানি এতটা উচ্চতায় পৌঁছাবে, এটা আমাদের ধারণার বাইরে ছিল। আমরা ধরে নিয়েছিলাম স্বাভাবিক বন্যা হবে। কিন্তু চেরাপুঞ্জির প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে সিলেট-সুনামগঞ্জ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
ঢাকাপ্রকাশ-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।
রবিবার (১৯ জুন) দুপুরে নিজের দপ্তরে বসে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সরকারের এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বৃষ্টিপাত না হলে আমরা আশা করছি তিন-চার দিনের মধ্যে সিলেট ও সুনামগঞ্জের পানি নেমে যাবে। সিলেট-সুনামগঞ্জ অঞ্চলের বন্যাটা হচ্ছে ফ্ল্যাশ ফ্লাড। এই ধরনের বন্যায় পানি দ্রুত নেমে যায়। এর আগে গত মে মাসে যখন বন্যা হয়েছিল তখন ও চার দিনের মধ্যে পানি নেমে গিয়েছিল।’
তবে দেশের আরও কয়েকটি জেলা যেমন রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারসহ আরও কয়েকটি জেলায় ইতিমধ্যে প্লাবিত হয়েছে।
ঢাকাপ্রকাশ: সিলেট-সুনামগঞ্জের বন্যা নিয়ে আপনাদের কাছে কি কোনো আগাম বার্তা ছিল না? যদি থেকে থাকে তাহলে প্রস্তুতি কেমন ছিল?
এনামুর রহমান: দেখেন এত অস্বাভাবিক বন্যা হবে এটা আমরা ভাবিনি। সর্তকতা ছিল। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সর্তকতাও ছিল। আমাদের প্রস্তুতিও ছিল। মানবিক সহায়তর প্রস্তুতি রাখা হয়েছিল। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোও প্রস্তুত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনও তাদের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। তবে এটা সত্য যে, আমি স্বীকার করি, আমরা ভাবিনি পানি এত উচ্চতায় পৌঁছাবে। দুই দিনে আট ফুট পানি বৃদ্ধি আমাদের ধারণা ছিল না। এটা খুবই অস্বাভাবিক। দেখেন ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ১২২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে এ কারণেই উজানের পানি নেমে এসেছে দ্রুততম সময়ে।
বন্যা পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষকে উদ্ধারে জোর দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ১৭ জুন থেকে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও বিজিবি সবাই সম্মিলিতভাবে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়েছে। বিশেষ করে আমরা দুর্গত এলাকার মানুষদের উদ্ধারে জোর দিয়েছি। তাদেরকে আশ্রয় কেন্দ্রে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছি। সিলেটে আমরা ৩২২টি আশ্রয় কেন্দ্রে ২৬ হাজার ৫০০ লোককে আশ্রয় দিয়েছি। সুনামগঞ্জের ৩০০ আশ্রয়কেন্দ্রে ৭০ হাজার মানুষকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তাদের খাবারের ব্যবস্থা, চিড়া, মুড়ি, শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। স্যানিটেশনের ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ পানির জন্য ট্যাবলেট দেওয়া সব কিছু করা হয়েছে।
দেড় দিনের মধ্যে এক লাখ মানুষকে দুর্গত এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা গ্রামের মানুষকে উদ্ধারে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। আর যারা শহরে উচু ভবনে আছেন তাদেরকে আমরা চাল, ডাল দিচ্ছি।
ঢাকাপ্রকাশ: বন্যা দুর্গত এলাকায় আপনাদের ত্রাণ তৎপরতা আর কী অবস্থা?
এনামুর রহমান: আমরা ইতিমধ্যে সিলেটে নগদ এক কোটি ৩০ লাখ টাকা এবং সুনামগঞ্জে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছি। দেড় হাজার মেট্টিক টন চাল এবং ৩৬ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আরও প্রয়োজন হলে আরো বরাদ্দ দেওয়া হবে। ত্রাণের কোনো সংকট নেই।
ঢাকাপ্রকাশ: কবে নাগাদ বন্যার পানি নামবে বলে আশা করছেন?
এনামুর রহমান: সিলেট শহরে আজকে (১৯ জুন, রবিবার) পানি কিছুটা কমছে। তবে সুনামগঞ্জে একই অবস্থায় আছে। মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
আবহাওয়া পূর্বাভাস এবং বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে যে তথ্য পেয়েছি তাতে আজকেও বৃষ্টি থাকবে, পানি বাড়তে পারে। আশা করছি, সোমবার থেকে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
এই পানি নিচের দিকে নেমে মেঘনা অববাহিকায় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, চাঁদপুর, নরসিংদী এসব এলাকা প্লাবিত হতে পারে। তবে বৃষ্টি না হলে আর খুব একটা প্লাবিত হবে না। কারণ মেঘনার পানি ধারণের ক্ষমতা অনেক বেশি। মেঘনা অনেক গভীর ও চওড়া।
ঢাকাপ্রকাশ: ত্রাণটা পর্যাপ্ত না-এমন অভিযোগ শোনা যাচ্ছে...
এনামুর রহমান: না, এই অভিযোগ সঠিক না। পর্যাপ্ত ত্রাণ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকাপ্রকাশ: আজকালের মধ্যে আরও ১৬/১৭ জেলা বন্যাকবলিত হবে, এ তথ্য দিচ্ছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণকেন্দ্র...
এনামুর রহমান: বুঝতে হবে এটা আষাঢ় মাস। এ মাসে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাগর উত্তপ্ত হচ্ছে। আবহাওয়া পরিবর্তন হচ্ছে। আমরা বন্যা মোকাবিলা করে অভ্যস্ত। এত বড় বন্যা হয়েছে, আমরা ঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করেছি। উদ্ধার কাজে সিভিল প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড, ফায়ার সার্ভিস ডুবুরি দল কাজ করেছে। তারা প্রবল শ্রোত উপেক্ষা করে, বৃষ্টি ও অন্ধকারের মধ্যে দুর্গত এলাকা থেকে মানুষকে উদ্ধার করে আশ্রয় কেন্দ্রে এনেছেন।
ঢাকাপ্রকাশ: বলছিলাম ১৭ জেলা সম্পর্কে...
এনামুর রহমান: দেখেন এই ১৭ জেলা তো প্লাবিত অলরেডি প্লাবিত হয়ে গেছে। ব্রহ্মপুত্র, যমুনা বেসিন, তিস্তা-ধরলা বেসিন, মনু-খোয়াই বেসিন...নতুন করে যদি প্লাবিত দেখেন তাহলে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, জামালপুর, শেরপুর জেলা। এগুলো প্লাবিত হয়েছে।
এনএইচবি/এমএমএ/