বন্যা মোকাবিলাও করব, সবই চলবে: প্রধানমন্ত্রী
আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হবে বলে আবারও জানিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বন্যাও মোকাবিলা করব, খেলাধুলাও চলবে সবই আমাদের চলবে। এটাই আমাদের জীবন, এটাই মেনে নিতে হবে। এটাই বাস্তব। বাস্তবতার সঙ্গে আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হবে।’
রবিবার (১৯ জুন) দুপুরে ২০২১ সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব ১৯ জাতীয় মহিলা দলকে সংবর্ধনা ও অর্থ সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সরকার প্রধান একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এবং মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
এসময় যমুনা সেতুর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘স্মরণ করাতে চাই, ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে সব থেকে ভয়াবহ বন্যা এবং দীর্ঘস্থায়ী বন্যা হয়। ঠিক সেই বন্যা শুরুর আগেই কিন্তু যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধন করেছিলাম। সেটা উদ্বোধন করেছিলাম বলেই উত্তরবঙ্গ থেকে পণ্য পরিবহন থেকে শুরু করে সব কাজগুলো করা যাচ্ছিল। এবার পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হলে বন্যা মোকাবিলা সহজ হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করব। পদ্মা সেতু এমন একটা সময় উদ্বোধন করতে যাচ্ছি যেখানে বন্যা একদিকে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। এ বন্যা কিন্তু দক্ষিণ অঞ্চলেও যাবে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বন্যায় যেহেতু নদী অত্যন্ত ভয়ংকর হয়ে ওঠে। খরস্রোতা হয়ে ওঠে, যোগাযোগের সুবিধা থাকে না। ১৯৯৮ সালে আমাদের দক্ষিণ অঞ্চলও প্লাবিত ছিল। উত্তর অঞ্চল থেকে সব সময় সহযোগিতা পেয়েছিলাম এবং সেই বন্যা খুব সফলভাবে মোকাবিলা করতে পেরেছিলাম।
তিনি বলেন, বন্যার কারণে বিবিসিতে ইউএনডিপি, বিশ্ব ব্যাংকসহ অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা বলেছিল, এ বন্যায় দুই কোটি মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। আমি বলেছিলাম একটা মানুষকেও না খেয়ে মরতে দেব না। আমরা দেইনি। ওই সেতু উদ্বোধন করেছিলাম বলে আমাদের বন্যা মোকাবিলায় অনেক সহযোগিতা করেছিল। ঠিক কেন যেন কথাটা মনে হলো। আমরা ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করব। এ উদ্বোধনের ফলে এটাও আল্লাহর আর্শিবাদ হবে। আমরা যখন দক্ষিণ অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগটা অব্যাহত রাখতে পারব, পণ্য পরিবহন, বন্যা মোকাবিলা, বন্যার সময় মানুষের পাশে দাঁড়ানো তাদের সহযোগিতার বিরাট সুযোগ আমাদের আসবে।
নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৮৮ সালের বন্যার সময় টুঙ্গিপাড়ায় আটকা পড়ে ছিলাম। তখন যদি এরকম পদ্মা সেতু থাকত, চলে আসতে পারতাম। সেদিক থেকে এ সেতু উদ্বোধনের পর আমাদের সুযোগ হবে বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে অন্তত রিলিফ দেওয়া, মানুষকে সাহায্য করা, ওষুধসহ সব কিছু দেওয়ার। আমার কাছে কেন যেন মনে হলো সময়টা মনে হয় ওই রকমই।
বন্যায় সরকার ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আগাম প্রস্তুতি ছিল বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৮ সালে ভয়াবহন বন্যা ছিল। সেই সময় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। পাশাপাশি তখন আমরা বাংলাদেশে মিনি বিশ্বকাপ আয়োজন করেছিলাম। যদিও অনেকে এটা নিয়ে নানা রকম কথা বলেছে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে আমাদের চলতে হবে। একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করব, আবার জীবন যাত্রা যাতে চলে সেই ব্যবস্থাটাও রাখব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সিলেট বিভাগের সিলেট ও সুনামগঞ্জে ব্যাপক বন্যা। এবারের বন্যাটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আমাদের প্রশাসন এবং সেনা, নৌ ও বিমান সব বাহিনী বন্যা কবলিত মানুষ উদ্ধার করা ও ত্রাণ দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছে। সেই সঙ্গে আমাদের দলের যারা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ প্রত্যেককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পানি নেমে গেলে অসুবিধা হবে তার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। পানিটা আজ থেকে একটু নামতে শুরু করেছে। পানি যখন নামবে তখন অন্যান্য অঞ্চলও প্লাবিত হতে শুরু করেছে। ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগেও বন্যার আশঙ্কা আছে। আগে থেকে সতর্ক ব্যবস্থা নিচ্ছি।
তিনি বলেন, পানি নিষ্কাশনের জন্য যা যা করণীয় সেটাও করে যাচ্ছি। ১০-১২ বছর পর একটা বড় বন্যা সব সময় আসে বাংলাদেশে। আমি আগে থেকেই সতর্ক করেছিলাম। সরকারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আগে থেকেই বলেছিলাম এবার বন্যা বিরাট আকারে আসবে। আমাদের প্রস্তুতি আছে। এ পানি যখন নামবে মধ্য অঞ্চল প্লাবিত হবে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত থাকবে। আবার শ্রাবণ থেকে ভাদ্র পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চল প্লাবিত হবে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের এটাই নিয়ম।
এসএম/এসএন