বন্যাকবলিত এলাকায় জনশুমারির সময় বাড়ানো হবে
বন্যা পরিস্থিতিতেও জনশুমারি ও গৃহগণণার কাজ চলবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।
তবে বন্যা কবলিত এলাকায় প্রয়োজন অনুযায়ী সময় বাড়ানো হবে বলেও জানান পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম।
গত ১৫ জুন থেকে সারাদেশে শুরু হয়েছে ষষ্ঠ জনশুমারি ও গৃহগণনার কাজ, চলবে ২১ জুন পর্যন্ত। তবে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণাসহ দেশের বেশ কিছু এলাকায় বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জে ৮০ ভাগ এলাকা তলিয়ে গেছে বানের পানিতে। বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রগুলোতে পানি উঠে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তারপরও ওই এলাকায় জনশুমারির কাজ চলবে। বন্যার কারণে কেউ বাদ পড়লে সময় বাড়ানো হবে। তাদের শুমারিতে যুক্ত করা হবে।
বিবিএস সূত্র জানায়, ১০ বছর পর পর জনশুমারি করার কথা। সারাদেশে স্থানীয়ভাবে ৩ লাখ ৬৬ হাজার তথ্য সংগ্রহকারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারাই বাড়ি বাড়ি গিয়ে এ শুমারির কাজ করছেন। কাজটি সুষ্ঠভাবে করার জন্য ৬ স্তরে সুপারভাইজ (মনিটরিং) করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের জনসংখ্যার সর্বশেষ অবস্থা উঠে আসবে। অল্প সময়ের মধ্যে এর চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে।
কিন্তু গত তিন-চার দিনে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ১২২ বছরের মধ্যে রেকর্ড বৃষ্টিপাত হওয়ায় সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নিলফামারীসহ বিভিন্ন জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে সিলেট ও সুনামগঞ্জের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। পানিতে তলিয়ে গেছে পুরো এলাকা।
এমন পরিস্থিতিতে জনশুমারি ও গৃহগণনার কাজ কীভাবে চলবে- জানতে চাইলে বিবিএস মহাপরিচালক মো. তাজুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘ জনশুমারির কাজ ২১ জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। সেইভাবে সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা পিরিস্থিতি ভয়াবহ। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কথা জানতে পেরেছি। তবে এতে বন্ধ থাকবে না জনশুমারির কাজ। কারণ এ কাজের জন্য তথ্য সংগ্রহকারী ও সুপারভাইজার স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা বলছে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তাই এ মুহূর্তে জনশুমারির কাজ বন্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই।’
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘যেহেতু ১০ বছর পর এ জনশুমারির কাজ শুরু হয়েছে। এতে কেউ বাদ পড়বে না। সবাইকে যুক্ত করা হবে। এ প্রথম ডিজিটাল পদ্ধতিতে জনশুমারি ও গৃহগণনা শুরু হয়েছে। এ তথ্য মসজিদ থেকে শুরু করে সব জায়গায় প্রচার করা হয়েছে। সবার তথ্য সংগ্রহ করা হবে। দেশের আর্থ-সামজিক উন্নয়নে এ তথ্য কাজে লাগবে। কাজেই সিলেট, সুনামগঞ্জসহ যেসব এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে তাতে শুমারির কাজ বন্ধ হবে না। তবে বন্যার কারণে কেউ বাদ পড়লে সময় বাড়ানো হবে। এটা ভোট নয় যে, সময় বাড়ানো হলে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। দুর্যোগের কারণেই এটা করা হবে।’
উল্লেখ্য, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে প্রথম জনশুমারি শুরু হয়। তখন জনসংখ্যা ছিল ৭ দশমিক ১৫ কোটি। ১০ বছর পর পর এ শুমারি হয়ে থাকে। সর্বশেষ ২০১১ সালের শুমারি করা হয়। তখন জনসংখ্যা ছিল ১৪ দশমিক ৯৮ কোটি। প্রতি শুমারিতে প্রায় দুই কোটি করে মানুষ বাড়ছে। ২০২১ সালে ষষ্ঠ শুমারি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি ও ট্যাব সংক্রান্ত জটিলতার কারণে গত বছর শুমারির কাজ শুরু করা যায়নি। অবশেষে সব প্রক্রিয়া শেষ করে গত ১৫ জুন শুরু হয়েছে সপ্তাহব্যাপী ষষ্ঠ শুমারির কাজ।
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী খানা প্রধানের (তথ্যপ্রদানকারি) তথ্য গোপন রাখা হবে। এতে কারো ভয়ের কোনো নেই। সাত দিনে একজন তথ্য সংগ্রহকারী ট্যাবে ১০০ মতো খানা জরিপ করবে। সেই তথ্য বিবিএস অফিসে জমা হয়ে যাবে। তার ভিত্তিতেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হবে।
জেডএ/এনএইচবি/এসএন