জেসিসি বৈঠক আজ/গুরুত্ব পাবে জ্বালানি-পানিবণ্টন
নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ পরামর্শক কমিশনের (জেসিসি) বৈঠকে গুরুত্ব পাবে কানেকটিভিটি, অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, জ্বালানি সহযোগিতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর।
রবিবার (১৯ জুন) পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্করের মধ্যে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে জেসিসির বৈঠকটি গত ৩০ মে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এ লক্ষ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারত সফরেও গিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ বৈঠকটি পিছিয়ে দেওয়া হয়।
দ্বিপক্ষীয় এই বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে আরও থাকছে বাণিজ্য সহযোগিতা, আইসিটি, জলবায়ু পরিবর্তন, পি কে হালদারকে ফেরানো এবং ভারত থেকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের মতো ইস্যুগুলো।
বৈঠক প্রসঙ্গে বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ভারতের সঙ্গে অনেকগুলো বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। দেশটির সঙ্গে অমীমাংসিত পুরনো ইস্যু যেমন রয়েছে তেমনি অ্যান্টিডাম্পিং ও জ্বালানি নিরাপত্তার মতো নতুন ইস্যুও রয়েছে। তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন নিয়ে আলোচনা তো থাকছেই।
সফরের প্রথম দিন অর্থাৎ শনিবার (১৮ জুন) কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রির (সিআইআই) প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। রবিবার (১৯ জুন) জেসিসি বৈঠক। সফরের শেষদিন সোমবার (২০ জুন) ভারতের কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ ছাড়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাতের কথা রয়েছে ড. মোমেনের।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। গত ২৮ এপ্রিল বাংলাদেশ সফরকালে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্করও বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। সাংবাদিকদের ব্রিফ করার আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখাও করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
জানা যায়, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে যেতে পারেন। এমন দিনক্ষণ ধরেই তার নয়াদিল্লি সফরের আয়োজন করছে দুই দেশ।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফর করেন। সেই সফরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
এবারের বৈঠকে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা হবে। এর পাশাপাাশি মনু, ধরলা, দুধকুমার, গোমতি, খোয়াই, মুহুরি ও কুশিয়ারা নদীসহ মোট ৫২টি অভিন্ন নদীর পানির বণ্টনের বিষয় আলোচনায় স্থান পাবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফরকালে কোনো চুক্তি বা কোনো সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তিস্তা নিয়েও কোনো সুখবর পাওয়া যাবে না।
এ প্রসঙ্গে শনিবার (১৮ জুন) ভারত সফরে যাওয়ার আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, সব চূড়ান্ত হওয়ার ১০ বছর পরও তিস্তা চুক্তি না হওয়া বাংলাদেশের জন্য দুঃখজনক, আর ভারতের জন্য লজ্জাজনক। এবারও আলোচনায় তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের প্রসঙ্গ উত্থাপন করব।
২০১১ সালে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি অনেক দূর এগিয়েছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বিরোধিতায় ভেস্তে গিয়েছিল সেই উদ্যোগ।
বাংলাদেশের দুই সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম ও মোংলা ব্যবহার করতে চায় ভারত। বাংলাদেশও সম্মতি দিয়েছিল। ফলে বাংলাদেশের দুই বন্দর দিয়ে ভারতের পণ্য পরিবহনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত সেই ২০১৯ সালেই হয়েছিল। তারপর তিনবছর পেরিয়ে গেলেও বিষয়টি তারপর আর এগোয়নি।
জানা যায়, চলতি বছরের শেষ দিকে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন শুরু হবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে এমনটাই জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিচ্ছে ঢাকা।
বন্দর ব্যবহার ছাড়াও বাস ও রেল কানেকটিভিটি নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া ওয়াটার কানেকটিভিটি কীভাবে আরও বাড়ানো যায় সেই বিষয়টি নিয়েও বিশদ আলোচনা হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছেন, আমরা চাইব ওয়াটার কানেকটিভিটি কীভাবে আরও বাড়ানো যায়।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর এপ্রিলে ঢাকা সফরকালে সাংবাদিকদের বলেন, জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করতে চায় ভারত ও বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে জলবিদ্যুতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর বিষয়টি উল্লেখ করেন তিনি।
গত ২৮ এপ্রিলের ওই যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও সাংবাদিকদের বলেন, জ্বালানি সহযোগিতা নিয়ে ভারতের সঙ্গে কাজ করতে চায় বাংলাদেশ।
জানা যায়, এক্ষেত্রে ৩ বা ৪ দেশ মিলিয়ে এটি করা হবে। বাংলাদেশ বা ভারত ছাড়া অন্য দেশগুলো হলো নেপাল ও ভুটান। জেসিসি বৈঠকে ঢাকার পক্ষ থেকে বিষয়টি উত্থাপন করা হবে।
এ ছাড়া সীমান্ত সমস্যা, পিকে হালদারকে ফেরানো, ভারত থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশসহ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নানা প্রসঙ্গে নিয়ে জেসিসি বৈঠকে আলোচনা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
আরইউ/এনএইচবি/আরএ/