প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় দেশের অনেক জেলা
দেশের বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার কথা জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। আগামী দুই দিনে দেশের আরও অন্তত ১৭টি জেলা বন্যা কবলিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সারাদেশে ৯৫টি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র বলছে, আগামী দুই দিনের মধ্যে উত্তরাঞ্চল ও দেশের মধ্যাঞ্চলের আরও ১৭টি জেলা বন্যায় প্লাবিত হতে পারে। ওইসব জেলায় নদীর পানি বাড়ছে। ফলে বন্যার তীব্রতা বাড়ছে। একইসঙ্গে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।
শনিবার (১৮ জুন) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘সিলেট, সুনাগমঞ্জ এলাকায় শনিবার এবং আগামীকাল রবিবারও বৃষ্টি হবে। ফলে সেসব এলাকার বন্যার পানি আরও বাড়তে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। সেইসঙ্গে যমুনা নদীর পানিও বাড়তে শুরু করেছে।’
তিনি বলেন, ‘যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে উত্তরাঞ্চলের আরও কিছু জেলা প্লাবিত হতে পারে। বন্যার এই পানিটা আবার নীচের দিকে নেমে এলে মধ্যাঞ্চলের কিছু জেলাও প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা আছে।’
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় তার প্রভাব পড়েছে দেশের কুড়িগ্রাম, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায়। উজানের পানি এই তিন জেলা দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে।
ফলে জামালপুর, বগুড়া, শেরপুর, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, লালমনিরহাট, নীলফামারি ও পাবনায় বন্যা ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ ছাড়া নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভিবাজার বন্যা কবলিত হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। বন্যার পানি আরও নীচের দিকে নেমে এলে রাজবাড়ী, ফরিদপুর, শরীয়তপুর ইত্যাদি এলাকা প্লাবিত হতে পারে।
ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে আরও ৫৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে। গত তিনদিনে চেরাপুঞ্জিতে প্রায় আড়াই হাজার মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আসামেও অন্তত ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে।
আর উজানের এই বৃষ্টির পানি বাংলাদেশের সিলেট ও কুড়িগ্রাম দিয়ে নেমে আসবে।
ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে গত বৃহস্পতিবার ৯৭২ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা ১২২ বছরের মধ্যে রেকর্ড।
এদিকে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, মেঘালয় ও আসামে বৃষ্টি না কমলে দেশের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, সিলেট, কানাইঘাট, সুনামগঞ্জ ও দিরাইয়ে সুরমা নদী, কুড়িগ্রামে ধরলা, চিলমারিতে ব্রহ্মপুত্র, লরেরগড়ে জাদুকাটা, কলমাকান্দায় সোমেশ্বরী নদীর পানি, নাকুয়াগাঁওয়ে ভোগাই বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা নদীর পানিও বাড়ছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ৭২ ঘণ্টায় বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলসহ, ভারতের আসাম, মেঘালয়ে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এসব পানি সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কুড়িগ্রাম এলাকা দিয়ে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে সাগরে নামবে। ফলে এসব এলাকার নদ-নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এনএইচবি/এমএমএ/