বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রতিরোধে জাতীয় কর্ম-পরিকল্পনার আহ্বান আর্টিকেল নাইনটিনের
বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রতিরোধে অবিলম্বে জাতীয় কর্ম-পরিকল্পনা তৈরী করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিন।
১৮ জুন (শনিবার) প্রথম বারের মত জাতিসংঘ ঘোষিত 'বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক দিবস' পালিত হবে। তার আগ মুহুর্তে আর্টিকেল নাইনটিন শুক্রবার (১৭জুন) এই আহ্বান জানিয়েছে সরকারের প্রতি।
বিশ্বে প্রথম দেশ হিসেবে কেনিয়া গত সপ্তাহে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রতিরোধে জাতীয় কর্ম-পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে।
আর্টিকেল নাইনটিন বাংলাদেশে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রতিরোধ ও সহনশীলতা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ সরকার এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের আন্তঃধর্মীয় এবং আন্তঃসাংস্কৃতিক সংলাপের কার্যক্রম জোরদার করার আহ্বান জানায়।
আর্টিকেল নাইনটিন-এর দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল সংবাদমাধ্যম পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, 'বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের ব্যাপক বিস্তার এবং বৃদ্ধি একটি গভীর উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠছে। যদিও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য নতুন কোন বিষয় নয়, তবে তথ্য-প্রযুক্তির প্রসার, অনলাইন মাধ্যমে যোগাযোগ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার বাড়ার কারণে এর মাত্রা এবং প্রভাব ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশে বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের প্রভাবে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে শারীরিক ও মৌখিক হামলা বাড়ছে।'
বিবৃতিতে তিনি বলেন, 'জাতিগত ও ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, বৈষম্য এবং সহিংসতার ঘটনা মোকাবেলা ও প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশের সংবিধান ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের অধীনে বাংলাদেশ সরকারের দায়বদ্ধতা রয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে এবং সাম্প্রদায়িকতা, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহার, ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য বা পক্ষপাতিত্ব নিষিদ্ধ করা হয়েছে (অনুচ্ছেদ ১২)। সংবিধানে আরও বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্র শুধুমাত্র ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ বা জন্ম স্থানের ভিত্তিতে কোনো নাগরিকের প্রতি বৈষম্য করবেনা (অনুচ্ছেদ ২৮ (১)। বাংলাদেশ নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী যা জাতি, বর্ণ, ধর্ম, জাতীয়তা, জন্ম বা অন্যান্য কারণে বৈষম্য নিষিদ্ধ এবং সবার সমান মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলে।'
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর প্রায় তিন হাজার ৬৭৯টি হামলা হয়েছে। হামলার মধ্যে রয়েছে ৫৫৯টি বাড়ি ও ৪৪২টি দোকান, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর এবং আগুন দেওয়া হয়। হিন্দু মন্দির, মূর্তি ও উপাসনালয়ে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের অন্তত এক হাজার ৬৭৮টি ঘটনা ঘটেছে। এইসব ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ১১ জন নাগরিক নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও ৮৬২ জন। এই সময় দুই হিন্দু নারীকে ধর্ষণ করা হয় এবং আরও চারজনকে যৌন নির্যাতন করা হয়। ২০১৯ এবং ২০২০ সালে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ১৭টি বাড়ি এবং ৪টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছিল। এই সব ঘটনায় এই সম্প্রদায়ের অন্তত ৫০ জন সদস্য আহত হয়েছিলেন। এই সময়ে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর চারটি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই প্রতিবেদনটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।
মানবাধিকারকর্মীরা বলেছেন, এই প্রতিবেদন প্রকৃত পরিস্থিতির প্রতিনিধিত্ব করেনা। কারণ গণমাধ্যমে সব সহিংসতা উঠে আসেনা। ২০২১ সালের অক্টোবরে, দূর্গা পূজা উদযাপনের সময় সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতা এবং মারপিটে কমপক্ষে ছয় জন নিহত এবং ১০০ জন আহত হয়েছিলেন।
বিবৃতিতে আর্টিকেল নাইনটিন সরকার এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের প্রতি ধর্ম, বিশ্বাস এবং জাতিসত্তার ভিত্তিতে সংঘটিত সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধ, বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রতিরোধ ও সহনশীলতা বৃদ্ধির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এনএইচবি/এএস