দশ নারী সচিবের দাপুটে বিচরণ
অর্থনীতিসহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে দাপটে বিচরণ করছেন ১০ নারী। নিজ নিজ দক্ষতা ও যোগ্যতা দিয়ে এ অবস্থানে উঠে এসেছেন তারা। এই দশ জন নারীর মধ্যে বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) দুই জন নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন। এর মধ্যে একজন হচ্ছেন ফাতিমা ইয়াসমিন। তিনি আগামী ১১ জুলাই থেকে সিনিয়র সচিব হিসেবে অর্থ বিভাগের দায়িত্ব সামলাবেন। এছাড়া অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শরিফা খানকে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওই আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী ১১ জুলাই থেকে ফাতিমা ইয়াসমিন অর্থসচিবের দায়িত্ব পালন করবেন। এর মধ্য দিয়ে ফাতিমা ইয়াসমিন বিদায়ী অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদারের স্থলাভিষিক্ত হবেন। সরকার ইতোমধ্যে আব্দুর রউফকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পদে নিয়োগ দিয়েছে। পৃথক আরেক আদেশে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শরীফা খানকে। তিনি ফাতিমা ইয়াসমিনের স্থলাভিষিক্ত হবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে এমবিএ করা ফাতিমা ১৯৯১ সালের বিসিএস ক্যাডারের কর্মকর্তা হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। চাকরি জীবনের একটা লম্বা সময় অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দপ্তরে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এ ছাড়া কৃষি মন্ত্রণালয়, নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়েও দায়িত্ব পালন করেন ফাতিমা ইয়াসমিন।
২০২০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রথম নারী সচিব হিসেবে যোগ দেন ফাতিমা। এই দায়িত্ব পাওয়ার আগে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান, ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিন্যান্সের মহাপরিচালক হিসেবেও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ইআরডিতে থাকা অবস্থায় তিনি বিশ্ব ব্যাংক, জাতিসংঘ, এডিবি ও আইডিবির সঙ্গে কাজ করেছেন।
অন্যদিকে ইআরডির নতুন সচিব হিসেবে নিয়োগ পাওয়া শরিফা খান বিসিএসের ১৯৯১ ব্যাচের কর্মকর্তা। তিনি কৃষি মন্ত্রণালয়, বিপিএটিসি, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ঢাকা, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা সেল এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন।
শরিফা ২০১১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনে কাউন্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
এছাড়া রয়েছেন জুয়েনা আজিজ তিনি বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের কর্মকর্তা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক (সিনিয়র সচিব পদমর্যাদা) হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন। ২০২০ সালের শুরু থেকে তিনি এ দায়িত্ব সামলে আসছেন।
গাজীপুরের শ্রীপুর থানা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন পদে চাকরি করেছেন জুয়েনা আজিজ। পরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, জনপ্রশাসন, ইআরডি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেন। এভাবে উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব হয়ে ২০১৬ সালে পদোন্নতি পেয়ে সরকারের সচিব হন। প্রথমে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব পদমর্যাদা) হন।
রয়েছে জাকিয়া সুলতানা তিনি ২০২১ সালের ১৬ মে থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এর আগে একই বছরের ১০ জানুয়ারি থেকে ১৫ মে পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের (সচিব) দায়িত্ব পালন করেন। জাকিয়া সুলতানা বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। তিনি কেন্দ্রীয় ও মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। অর্থ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৬৮ সালে নাটোর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন জাকিয়া সুলতানা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৯ সালে বিএসসি (অ্যানাটমি) ও ১৯৯১ সালে এমএসসি (অ্যানাটমি) ডিগ্রি ও পরবর্তীকালে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিবেশবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন।
রয়েছেন মাহফুজা আখতার তিনি প্রেষণে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যানের (সচিব) দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের দশম ব্যাচের কর্মকর্তা। বর্তমান পদে যোগদানের আগে তিনি ১৭ জানুয়ারি ২০২১ থেকে ১৯ মে ২০২২ পর্যন্ত প্রায় দেড় বছর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে যোগদানের আগে তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
রয়েছেন মোসাম্মৎ হামিদা বেগম তিনি ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোকপ্রশাসন বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৮৮-৮৯ বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রশাসন ক্যাডারে ১৯৯১ সালের ২৬ জানুয়ারি যোগদান করেন। ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সচিব পদে পদোন্নতি লাভের আগ পর্যন্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
রয়েছেন ড. শাহনাজ আরেফিন, এনডিসি তিনি ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর সচিব হিসেবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে যোগদান করেন। এর আগে তিনি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অতিরিক্ত সচিব পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের প্রশাসন ক্যাডারের দশম ব্যাচের একজন কর্মকর্তা হিসেবে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। এছাড়া তিনি ২০০০ সালে অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমপিএ ও ২০১৩ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালে তিনি ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ থেকে এনডিসি ডিগ্রি অর্জন করেন।
রয়েছেন ড. নাহিদ রশীদ তিনি ২০২১ সালের ১৮ আগস্ট বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক (সচিব পদমর্যাদা) পদে ড. নাহিদ রশীদ যোগদান করেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের একজন সচিব এবং বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের ১৭তম মহাপরিচালক। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের প্রশাসন ক্যাডারের দশম ব্যাচের একজন কর্মকর্তা হিসেবে তিনি তার কর্মজীবন শুরু করেন।
এছাড়া গত ১৮ মে ড. ফারহিনা আহমেদকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। এর আগে তিনি অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। এদিকে বর্তমানে সচিব পদমর্যাদায় পরিকল্পনা কমিশনে সদস্য হিসেবে দায়িত্বরত রয়েছেন মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম। এর আগে তিনি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অতিরিক্ত সচিবসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
এএজেড