তামাকে বছরে দেড় লক্ষাধিক লোকের মৃত্যু: সাবের হোসেন চৌধুরী
প্রতিবছর বাংলাদেশে তামাকের কারণে ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ অকালে মারা যায় বলে জানিয়েছেন সরকার দলীয় সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘আমি সংসদে বার বার একটি বিষয় তামাক নিয়ে কথা বলেছি। সংসদের দৃষ্টি আকর্ষন করার চেষ্টা করছি, কিন্তু আমি ব্যর্থ হচ্ছি। তারা এটা বুঝছেন না। আমরা সেভেন ফাইভ ইয়ার প্লান, আমাদের এইট ফাইভ ইয়ার প্লানে তামাকের নিয়ন্ত্রণের কথা বলছি কিন্তু কেউ শুনছে না।’
মঙ্গলবার (১৪ জুন) সন্ধ্যায় সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতিবছর বাংলাদেশে তামাকের কারণে ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ অকালে মারা যায়।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কোভিডের জন্য কত কিছু করলাম, বাংলাদেশ বিশ্বের ৫ থেকে ৬টি দেশের মধ্যে থেকে এটা প্রতিরোধ করল। এই কোভিডে এদেশে মৃত্যুর সংখ্যা ৩০ হাজারের নিচে রাখতে সমর্থ হয়েছি আমরা। অথচ তামাকের কারণে বছরে ১ লাখ ৬০ হাজার লোক মারা যাচ্ছে। এর ফলে ক্ষতি হচ্ছে বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকা, আর তামাকের ট্যাক্স পাচ্ছি ২২ হাজার কোটি টাকা। এখানে জীবনের মূল্যের বিষয়টি ধরছে না কেউ।’
তিনি বলেন, বাজেটে আমরা সিগারেটের মূল্য ১ টাকা বাড়িয়ে তার ওপর কর বাড়াই। তা হবে কেন, আমরা সুনির্দিষ্ট কর বাড়াতে চাই। সংসদে নিশ্চই তামাক কোম্পানির মুনাফা বাড়ানোর জন্য আসিনি। তাহলে বিগত বছরে আমরা তিন হাজার কোটি আমি তামাক কোম্পানিকে দিয়ে দিলাম। আমি দাম বাড়াচ্ছি। তাদের তো উৎপাদন খরচ বাড়ছে না। তাদের বিনিয়োগ খরচও বাড়ছে না। এই ৩ হাজার কোটি টাকা তো সরকারের কাছে আসতো। আমরা তাহলে কী করলাম? আমাদের যে পলিসিটা আছে সেটা হচ্ছে সেশন পলিসি। এটাতে আমরা ডিফার করতে পারি না।’
তিনি বলেন, ‘ব্রিটিশ টোবাকো কোম্পানির শেয়ার বন্টনে দেখা যায় সরকারের শেয়ার মাত্র ৮ শতাংশ, কিন্তু পরিচালকরা পাচ্ছেন ৫০ শতাংশ। আর পরিচালকদের ৫ জনই হচ্ছে আমাদের সরকারি কর্মকর্তা বা সিভিল সোসাইটির। কেন ৩ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব একটা তামাক কোম্পানিকে মুনাফা হিসেবে দেব?’
সরকার দলীয় এই সংসদ সদস্য বলেন, যখন সাউথ এশিয়ান সামিট হলো ঢাকায় তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন ২০৪০ সালে বাংলাদেশ তামাক মুক্ত হবে। কিন্তু যেভাবে আমরা চলছি তাতে ২০৮০ সালেও আমরা তামাক মুক্ত হব না। তাহলে কোথায় থাকলো আমাদের রোড ম্যাপ। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা, কোর্টের রায় তাহলে বাস্তবায়নের জন্য কী হবে?
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, আমাদের সংবিধানের ১৮ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, যে আমরা জনস্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিব। এটা হচ্ছে সরকারে অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। আপিল বিভাগের রায়ে কি বলছে-যে তামাক কমপ্রোমাইজ দ্যা রাইট টু রাইট। কিন্তু আমরা কি দেখছি। জাপানী বিনিয়োগ আসছে, হাইকোর্টে বলেছে লাইসেন্স দিবেন না। কিন্তু তা আমরা মানছি না। তামাকে বিনিয়োগ বাড়ছে। তাহলে আমরা কি করলাম, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য-ঘোষনা সত্ত্বেও সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে তার পরেও তামাক নিয়ন্ত্রনে অগ্রগতি পারছি না। হাইকোর্টের রায়কেও মানছি না।
ফ্রেম অব কনভেনশন অব টোবাকোতে প্রথম স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমি সরকারী দলের সদস্য, সে কারণে সরকারের সব ধরনের পদক্ষেপকে সমর্থন করছি। কিন্তু যখন এই ধরনের সমস্যা আছে তখন আমাদেরকে পছন্দ করতে হয়, যখন আমাদের অর্থমন্ত্রী একটা বাজেট প্রস্তবণা নিয়ে এসেছেন, সেখানে সাংঘর্ষিক রয়েছে।
এসএম/এমএমএ/