ছোট ভোটে বড় চাপে ইসি
দায়িত্ব গ্রহণের পর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম পরীক্ষায় বসতে যাচ্ছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বুধবার (১৫ জুন) কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ভোট গ্রহণের মধ্য দিয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে মরিয়া কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। কিন্তু সেই শক্তি পরীক্ষার শুরুতেই হোঁচট খেল নির্বাচন কমিশন। এমনটাই মনে করছেন সাবেক একজন নির্বাচন কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টরা।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনকে সামনে রেখে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল ও তার চার কমিশনার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। তবে তাদের সেই চেষ্টার ফল অনেকটাই তেতো। অন্তত সিইসি ও ইসি সদস্যদের সাম্প্রতিক কথা বিশ্লেষণ করলেও তাদের অসহায়ত্ব চোখে পড়বে।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের ক্ষেত্রে যে আচারণবিধিগুলো মেনে চলতে হয়, তার মধ্যে রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা ২০১৬ এর বিধি ২২ এর (১) ও (২) অনুযায়ী সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তথা সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচনপূর্ব সময়ে নির্বাচনী এলাকায় প্রচার ও নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নেওয়া যাবে না।
কিন্তু কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেই আচারণবিধির ধারে কাছেও নেই স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। এক বাহারের বাহারি খেলায় অনেকটা দিশেহারা বর্তমান নির্বাচন কমিশন।
মৌখিক সতর্ক ও লিখিত চিঠিতে টনক নড়েনি এমপি বাহারের। তাই সব অসহায়ত্ব নিয়েই আগামী ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে ভোট গ্রহণ হবে। সব প্রকার প্রচার-প্রচারণার শেষ হচ্ছে সোমবার মধ্য রাত থেকেই। এখন শুধু ভোটের অপেক্ষা।
নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের তুলনায় নিশ্চই একটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অতি ছোট নির্বাচন। সেই ছোট ভোটেই বড় চাপে পড়েছে নির্বাচন কমিশন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের চাপ সামলাতেই যেভাবে অসহায়ত্ব প্রকাশ করছেন নির্বাচন কমিশন তাতে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কীভাবে সম্পন্ন করবে বর্তমান কমিশন।
এমপি বাহারের কাছে অসহায় নির্বাচন কমিশন। বড় নির্বাচনে কি এর প্রভাব পড়বে- এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) শাহাদত হোসেন চৌধুরী ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘চাপ নিতে পারছে না সেটা আমি মনে করি না। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনাররা বলেছেন একজন সংসদ সদস্য যদি আচারণবিধি না মানেন, আমিও ব্যক্তিগতভাবে মনে করি উনার মানা উচিত। তিনি হয়তো বা কোর্টের শরণাপন্ন হয়েছেন সেজন্য মনে হয় নির্বাচন কমিশন আর আগায়নি। যেহেতু কোর্টে গেছেন সেজন্য কোর্ট অব কনটেম্পট (আদালত অবমাননা) হতে পারে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার তিনি নিজেই আইন ব্যাকগ্রাউন্ডের। এখন কী কারণে কথাটা বলেছেন সেটা বলতে পারব না।’
আপনাদের সময়ও তো এরকম ঘটনা ঘটেছে, তখনও কী একই ছিল? জবাবে সাবেক এ কমিশনার বলেন, ‘আমাদের সময়ও এধরনের ঘটনা ঘটেছে। অনেক ক্ষেত্রে আমরা সফল হয়েছি। অনেক মন্ত্রীদেরও নির্বাচনী এলাকা থেকে সরানোর জন্য পদক্ষেপ নিয়েছি সফলও হয়েছি। এখানে কী কারণে তিনি মানছেন না সেটা তো বলতে পারব না।’
সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘সংসদ সদস্যের জন্য ইসির অনুরোধই ‘যথেষ্ট’। এরপরও না মানলে ও মামলার ফলাফল না পেলে করার কিছু থাকে না সাংবিধানিক সংস্থাটির।’
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন ভোটের সবশেষ প্রস্তুতি দেখতে গিয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান (অবসরপ্রাপ্ত) বলেছেন, ‘তিনি একজন জনপ্রতিনিধি। উনারা আইন প্রণয়ন করেন। উনারাই যদি আইন না মানেন- তাহলে আর কী বলার আছে? উনাকে তো আর আমরা টেনে-হিঁচড়ে নামাতে পারি না। এখানে ইজ্জত গেল কার? আপনারাই বুঝুন।’
এসএম/এনএইচবি/এসএন