মা বলেই হারিয়ে গেলেন ইব্রাহিম
মা বলে চিৎকার দিয়ে আর কথা বলতে পারেনি আমার ভাই এমন আকুতি করে কথাগুলো বলছিলেন সীতাকুণ্ডের অগ্নিকাণ্ডে নিহত ইব্রাহিমের বোন সেলিনা ও হালিমা। জানা যায়, ইব্রাহিম নতুন বিয়ে করেছেন এবং তার স্ত্রী মুন্নী ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
সোমবার (৬ জুন) ভোর সাড়ে চারটার দিকে মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সে ইব্রাহিম হোসেনের (২৭) দগ্ধ মরদেহ পৌঁছায় তার বাড়িতে। এ সময় পরিবারের সদস্য-স্বজন ও গ্রামের মানুষ কান্না শুরু করেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিহত ইব্রাহিমকে গ্রামের সবাই পছন্দ করতেন।
শনিবার (৪ জুন) রাত ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে নিহত হন ইব্রাহিম হোসেন।
যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার জহুরপুর ইউনিয়নের নরসিংহপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত মাদরাসা শিক্ষক আবুল কাশেম মুন্সীর ছোট ছেলে ইব্রাহিম। তিনি প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির এক্সপোর্ট ডিপার্টমেন্টের শিপিং সহকারী পদে চাকরি করতেন।
কান্নাজড়িত কন্ঠে ইব্রাহিমের বোন সেলিনা ও হালিমা বলেন, ‘তোর ভিডিও করার কি দরকার ছিলরে ভাই। আমার ভাই কী করে হারিয়ে গেল আল্লাহ। আমার ভাইতো আর আসবে না কোনোদিন। এখন আমরা কি নিয়ে বেঁচে থাকব।’
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, ইব্রাহিমের মাথার পেছনে, পেটে আঘাত ও আগুন লাগে। তার মুখ, টি-শার্ট আর সেলফোন দেখেই মরদেহ শনাক্ত করা হয়। যখন তাকে উদ্ধার করা হয়, তখন ফোন সচল ছিল।
জানা যায়, ইব্রাহিমের নিহত হবার খবরে রবিবার সকাল থেকেই প্রতিবেশী ও গ্রামের লোকজন তাদের বাড়িতে ভিড় জমাতে শুরু করেন। ছেলের অকাল মৃত্যুতে বিলাপ করছেন মা দুলুপি বেগম ও বাবা আবুল কাশেম। জীবনসঙ্গীকে হারিয়ে স্ত্রী মুন্নি খাতুন যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন। ভাই-বোনসহ অন্যান্য স্বজনদের গগনবিদারী আহাজারিতে চারপাশ ভারী হয়ে উঠেছে। মুন্নী ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। চিকিৎসক জুলাই মাসের ২৮ তারিখে তার সন্তান ভূমিষ্টের সাম্ভাব্য দিন দিয়েছেন।
ইব্রাহিমের মা দুলুপি বেগম ও বাবা আবুল কাশেম বলেন, ‘শনিবার রাত নয়টায় তার সঙ্গে ফোনে তাদের শেষ কথা হয়। কোরবানি ঈদে বাড়ি আসতে চেয়েছিলে সে। তারা বলেন, আমার বৌ-মার বাচ্চা হবে। ইব্রাহিমের কপাল যে এত খারাপ হবে আমরা জানতে পারিনি।
ইব্রাহিমের মা ও বাবা আরও বলেন, আল্লাহ আমার ছেলেটাকে জান্নাত দান করুক। আর যেন এমন ভাবে কারও বুক খালি না হয়।
তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে তো আর সরকারী চাকরি করে না। আমরা কি কোনো সাহায্য পাব? কীভাবে এখন আমাদের সংসার চলবে। আমার বৌ-মা ও তার বাচ্চার কী হবে?
কেএম/এমএমএ/