সব স্থলবন্দরে যাত্রী ছাউনি নির্মাণের প্রস্তাব
দেশের প্রতিটি স্থল বন্দরে যাত্রী ছাউনি নির্মাণের প্রস্তাব করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। তাদের এই প্রস্তাবের সঙ্গে সম্মতি প্রকাশ করেছে মন্ত্রণালয়। অতিদ্রুত কিভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা যায় তা নিয়ে পরবর্তী কার্যক্রম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নেওয়া হবে বলে সংসদীয় কমিটিকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
রবিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত নৌ-পবিরহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সব প্রস্তাব করেন কমিটির সদস্যরা।
কমিটির সদস্যরা মনে করেন, যে সব বন্দর দিয়ে মানুষ আসা যাওয়া করে সেই সব বন্দরে যাত্রী ছাউনি, উন্নতমানের শৌচাগার, বেস্টফিডিং রুম থাকা অত্যাবশকীয়। তাই মন্ত্রণালয়কে দ্রুত একটি প্রকল্প নিয়ে স্থল বন্দরগুলোতে এ সব সুবিধা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
কমিটি যাত্রীদের পারাপারের সুবিধার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপসহ যাত্রীশেড, টয়লেট, স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে একটি মাস্টারপ্ল্যান গ্রহণ করার সুপারিশ করে।
কমিটির সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, আমরা দেখেছি সোনা মসজিদ বন্দর এলাকায় যাত্রীদের ভোগান্তি। কোনো কোনো যাত্রীর পাসপোর্ট ক্লিয়ারেন্স করতে আধা ঘণ্টা থেকে ১ ঘণ্টা লেগে যায়। অনেক সময় বৃদ্ধ নারী, পুরুষ, অসহায় হয়ে রাস্তার দোকানের ছাউনির নিচে বসে থাকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয় যে কারণে বন্দরগুলোতে যদি একটা সুন্দর যাত্রী ছাউনি থাকে তাহলে অন্তত দুই দেশ থেকেই আসা যাওয়া করা যাত্রীরা স্বস্তি পাবে। তাই প্রস্তাবটি দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে ভারতের সঙ্গে ১২টি স্থল বন্দর চালু রয়েছে। তারমধ্যে ৭টি সরকারিভাবে পরিচালিত হয়। বাকি ৫টি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এ সকল বন্দরের মধ্যে বেনাপোল বন্দরে শুধু যাত্রী ছাউনিসহ অন্যান্য সুবিধা রয়েছে। বাকিগুলোতে এ সব সুযোগ-সুবিধা নেই।
অন্যদিকে পায়রা বন্দরকে কিভাবে আরও গতিশীল করা যায় তা নিয়ে কমিটির সদস্যরা আলোচনা করেছেন। পায়রা বন্দর চালু হওয়ার পর এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ জাহাজ পার্কিং করেছে। তাতে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার মতো রাজস্ব আহরণ হয়েছে পায়রা বন্দর থেকে। আগামী ২৩ জুন থেকে পায়রা বন্দরটি পুরোপুরি চালু হবে বলে কমিটিকে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
পায়রা বন্দরের বিষয়ে কমিটির সদস্য এসএম শাহাজাদা ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, পায়রা বন্দর চালু হওয়ার পর বেশ সাড়া মিলেছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০০ কোটি রাজস্ব এসেছে। ২৩ জুনের পর এটি পুরোপুরি অপারেশনে যাবে। তার আগেই সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে একটা পরিদর্শন হবে। সেখানে গিয়ে আরও কি কি করা যায় সেসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হবে।
এবার ঈদ যাত্রায় মানুষের চাপ কিছুটা বাড়বে বলেই মনে করে সংসদীয় কমিটি। যেহেতু ঈদে দীর্ঘদিন ছুটি তাই যাত্রীদের চাপ বেশি থাকবে। সেই বাড়তি চাপ মোকাবিলা করার জন্য লঞ্চ মালিকদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে কমিটিকে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। কমিটি ও মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ একসঙ্গে সবাই ঢাকা না ছেড়ে কেউ কেউ যদি ঈদের আগে ভাগে যায়, তাহলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানো সম্ভব। তাই ছুটি কিভাবে সমন্বয় করে ভাগে ভাগে মানুষ যেতে পারে সে বিষয়ে ভেবে দেখতে বলেছে কমিটি।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেজর (অব.) রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য মো. মজাহারুল হক প্রধান, রনজিত কুমার রায়, ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, মো. আছলাম হোসেন সওদাগর এবং এস এম শাহজাদা অংশগ্রহণ করেন।
বৈঠকের শুরুতে কমিটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিস্মরণীয় দিন ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।
বৈঠকে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি, সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। বৈঠকে ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউটের সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। কমিটি ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউটের যাবতীয় সীমাবদ্ধতা দূরীকরণে মন্ত্রণালয়কে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করে।
এই বৈঠকে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কতৃর্পক্ষের প্রকল্প পরিচালক, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এসএম/আরএ/