শাহবাগে প্রতিবাদ সমাবেশ আহ্বান
টিপ পরায় কলেজ শিক্ষিকাকে হেনস্তা, তীব্র ক্ষোভ
ফার্মগেট এলাকায় ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময়ে কলেজ শিক্ষিকা ড. লতা সমদ্দারের কপালে পরা টিপ নিয়ে আপত্তি জানিয়ে পুলিশের পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তির অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মোটর সাইকেল চাপা দেওয়ার চেষ্টার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় বইছে।
খ্যাতিমান সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বলেছেন, ‘কলেজ শিক্ষক লতা সমাদ্দারকে কপালে টিপ পরার জন্য ঢাকার রাস্তায় একজন পুলিশ শারীরিকভাবে হেনস্তা করে প্রাণনাশের চেষ্টা চালিয়েছে। আমরা কি ধ্বংসের প্রান্তসীমায় এসে দাঁড়িয়েছি! দোষীকে গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবি করছি।’
সংস্কৃতিকর্মী ও শিক্ষক সঙ্গীতা ইমাম লিখেছেন, `টিপ ছাড়া এ মুহূর্ত ভাবতেই পারি না। স্নান খাওয়া ঘুমের সময়ও টিপ থাকে কপালে। যখন নিজে থেকে পড়ে যায় তখন নতুন করে আরেকটা টিপ পরি। টিপ যেন আমার আরেক পরিচয়। আমার শিক্ষার্থীদের প্রিয় আমার টিপটি। বহু বছর পরে দেখা হলেও টিপের কথা বিশেষ করে তারা বলবেই। আমার মা এখনো টিপ পরেন। শাড়ি টিপ বাঙালি নারীর পরিচয়। আমি টিপ পরবো। আমার সজ্জা আমার স্বাধীনতা, আমার অধিকার। আমার কপালের টিপ যার পছন্দ হবে না সে এ ভূখণ্ডে কোন অংশী নয়।’
প্রতিবাদ জানিয়েছেন, লেখক ও সংস্কৃতিকর্মী রবীন আহসান। তার মতে, ‘শিক্ষা-সংস্কৃতি নষ্টের ফল হচ্ছে টিপ পরছিস ক্যা...’। এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ শাহবাগে প্রতিবাদ সমাবেশ আহ্বান করেছেন। ‘টিপ পরছোস কেন বলে লতা সমাদ্দারকে পুলিশি হয়রানির বিরুদ্ধে আজ বেলা সাড়ে ৪ টা শাহবাগে প্রতিবাদী সমাবেশ করবো আমরা। সবার যোগদানের অনুরোধ করছি।’
কপালে টিপ পরায় নারীকে হেনস্তার ঘটনায় জাতীয় সংসদে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সুবর্ণা মুস্তাফা। তিনি প্রশ্ন রাখেন, বাংলাদেশের কোন সংবিধানে, কোন আইনে লেখা আছে যে একজন নারী টিপ পরতে পারবেন না? জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দেওয়া বক্তব্যে অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের প্রতিবাদ
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ এক বিবৃতিতে ঢাকায় একটি কলেজের শিক্ষিকাকে কপালে টিপ পরায় এক পুলিশ সদস্য কর্তৃক লাঞ্ছনা ও নির্যাতনের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে ফার্মগেট এলাকায় ঢাকা মহানগর পুলিশের পোষাক পরিহিত একব্যক্তি নারী শিক্ষিকাকে টিপ পরায় অশ্লীল মন্তব্য করেন এবং এই নারী এর প্রতিবাদ করায় তাকে ঐ পুলিশ মোটর সাইকেল চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
একজন মানুষ কি পোষাক পরবেন এটি তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। রাষ্ট্রের কাজে নিয়োজিত একজন পুলিশ তার পোষাক পরা অবস্থায় একজন নারীকে প্রকাশ্যে দিবালোকে নিপীড়ন আইন-শৃঙ্খলার বিপজ্জনক চিত্র তুলে ধরে। একজন সরকারী কর্মচারী তার ব্যক্তিগত বিশ্বাস বা চিন্তা রাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিকের উপর চাপাতে পারেন না। তিনি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিকে বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি করেন।
এপি/