প্রতি বিভাগে প্রতিবন্ধীদের জন্য আবাসন ভবন করা হবে: প্রধানমন্ত্রী
ট্রাস্টের মাধ্যমে প্রতিটি বিভাগে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধকতা বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন শিশুদের আবাসন নিশ্চিত করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, প্রথমে আমরা ৮টি বিভাগে করে দেব এরপর জেলাগুলোতেও দেব। এই কাজে তিনি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে শনিবার (২ এপ্রিল) সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত আলোচনা সভায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিবন্ধী শিশু ইসাবা হাফিজ সুশ্মির বক্তব্য শুনে প্রধানমন্ত্রী এই প্রতিশ্রতি দেন। সুশ্মি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘আমি আমার মাকে বলতে শুনেছি আমি মারা গেলে ওর (আমার) ভবিষৎ কী হবে?’
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এই শিশুদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার কথা চিন্তা করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রীকে একটি প্রজেক্ট প্রস্তুত করার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'আমরা প্রতিটি বিভাগে প্রতিবন্ধীদের জন্য স্থায়ী আবাসন করে দেব। সেখানে তারা প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেদের মেধা বিকাশের সুযোগ পাবে।'
তিনি বলেন, 'অটিজম শিশুদের সব ধরনের সহযোগিতা আমি করে যাব। যেকোনো প্রয়োজনে আপনাদের পাশে আছি। আমি জানি প্রত্যেকের ওই ধরনেরই চিন্তা। বাবা-মা ওভাবেই ভাবে যে, সে না থাকলে তার শিশুর কী হবে? এ চিন্তাটা আমাদেরও আছে। এজন্য আমাদেরও একটা উদ্যোগ আছে। ট্রাস্ট গঠনের মাধ্যমে এমন একটা ব্যবস্থা যদি করতে পারি যেন বাবা মা যখন থাকবে না বা অভিভাবক কেউ থাকবে না, তখন তারা সেখানে বসবাস করতে পারে বা থাকতে পারে। সুশ্মির কথা নিয়ে আমি সায়মা ওয়াজেদের সঙ্গে আলোচনা করেছি এবং আমরা মনে করি ট্রাস্টের মাধ্যমে হোস্টেল বা ডরমেটরি নির্মাণ করা উচিত। যেখানে এরা থাকবে।'
বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, 'এই কাজে বিত্তবানরা অনুদান দিতে পারবেন। আপনাদের অনুদান দিয়েই চলবে। তা ছাড়া আমি সরকার পরিচালনায় যত দিন আছি সব রকম সহযোগিতা করব।'
প্রতিবন্ধীদের অবহেলা না করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা কোনো রোগ বা অসুস্থতা না। একটা মানুষের জন্ম এভাবে হয়েছে তাকে তো ফেলে দিতে পারি না। তাদের আপন করে নিতে হবে। এক সময় পরিবারগুলো বড় ছিল, যৌথ পরিবারে যখন এ ধরনের শিশু জন্ম নেয়, তারা অনেক ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজন সবার সঙ্গে চলতে-ফিরতে অনেক সময় সমস্যাগুলো স্বাভাবিকভাবে দূর হয়ে যেত। কিন্তু এখন আসলে ছোট পরিবার, সুখি পরিবার হতে যেয়ে অর্থাৎ একা একা এদের মেধা বিকাশেরও সুযোগ হয় না। আর সুস্থ হওয়াও সম্ভব না। কাজেই যে সকল শিশুদের মধ্যে অটিজমটা একটু কম আছে বা তারা মিশতে পারে তাদের সাধারণ স্কুলে বা যারা প্রতিবন্ধী তাদের সাধারণ স্কুলে অন্যান্য ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে যদি বড় করা যায় তাহলে সবার সাথে থেকে নিজেরা অনেকটা সুস্থ হয়ে যাবে। তারা শেয়ার করতে শেখে। খেলাধুলা করলে, বন্ধুত্ব করলে, এক সাথে বড় হলে ধীরে ধীরে ভালো হয়ে যায়।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিবন্ধীদের শুধু আলাদাভাবে ব্যবস্থা করলেই চলবে না। অনেক মানুষের সাথে চলার সুযোগ করে দিতে হবে। তাদের এদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসটা বাড়বে। এই ধরনের শিশুদের মধ্যে অনেক সুপ্ত প্রতিভা থাকে, সেই প্রতিভা বিকশিত করবার সুযোগ দিতে হবে। প্রত্যেকের কারও না কারও একটা প্রতিভা থাকে। সুপ্ত প্রতিভা বের করে এনে সমাজে কাজে লাগাতে পারলে বা সমাজে সেই সুযোগ করে দিতে পারলে জীবনটাও সুন্দর হবে। পাশাপাশি তাদের বাবা-মা আর তাদের বোঝা মনে করবে না। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় অটিজম সম্পন্ন কেউ পিছিয়ে থাকবে না। সবার জন্যই কাজ করে যাচ্ছি। অনগ্রসর যারা আছে তারাও সমাজের অংশ। তাদেরও যে কর্মদক্ষতা, মেধা আছে সেটা বিকাশের সুযোগ করে দিচ্ছি।
১৫তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষে চার ক্যাটাগরিতে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা এবং সম্মাননা সনদ প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সম্মাননা সনদ তুলে দেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ।
এসএম/টিটি