কবি মারুফুল ইসলামের তিনটি কবিতা
বিজয়দিবস
শব্দে শব্দে ছবি ফুটে ওঠে ওই
পুবের আকাশ চেতনার রঙে লাল
ডানা ঝাপটায় পাখিদের হইচই
জয় বাংলার হৃদয়ে রংমশাল
ভোরের জানালা খুলে দেয় চরাচর
সবুজের বিস্তারে আনন্দঢেউ
একটি শ্লোগান জীবনের বরাবর
অমন স্বপ্ন দেখায়নি আর কেউ
সাগরে সফেন গর্জন আলোড়ন
পাহাড় দাঁড়ায় মাথা উঁচু করে তার
তর্জনী তাঁর অবিনাশী আবাহন
সোনার বাংলা অনন্ত অনিবার
পুতুলের বিয়ে ভাঙবে না কোনোদিন
পুড়বে না আর দু:খিনী মার ঘর
আশ্বাসে আশা শ্বাসপ্রশ্বাসে ঋণ
শ্যামল বাংলা জননীর অন্তর
দুহাত বাড়ায় পৌষের পার্বণ
শূন্যে উড়াল নীলিমায় চাষবাস
কুয়াশায় নীল শিশিরের কম্পন
বিজয়দিবস মানবিক উল্লাস
মাটির বরন মানুষের হাতিয়ার
রোদে ঝলকায় সংগ্রামে উচ্ছল
প্রাণের আগুনে প্রোজ্জ্বল সংসার
রূপসী বাংলা কবিতায় বিহ্বল
ফিরে ফিরে শুনি নয়া জমানার ডাক
সাত কোটি থেকে ষোলো কোটি উত্তাল
এ মাটি কখনো মানে না দুর্বিপাক
বাংলাদেশের সবুজের বুকে লাল
একটি দিনের ব্যবধানে
একটি দিনের ব্যবধানে কোনোকিছু কতটুকু আর বদলাতে পারে, বলো
অথচ একটি দিনের ব্যবধানেই সবকিছু কী অপূর্ব বদলে গেল
পনেরো আর ষোলোর মধ্যে কী অশেষ পার্থক্য
না, ষোলো কোনো তারিখ মাত্র নয়
যেমন নয় একুশ কিংবা ছাব্বিশ
না, ডিসেম্বর কোনো মাস শুধু নয়
যেমন নয় ফেব্রুয়ারি কিংবা মার্চ
না, উনিশশো একাত্তর কোনো সাল কেবল নয়
যেমন নয় উনিশশো বায়ান্ন
গাছের রং একই রকম সবুজ
ঘাসের গালিচা একই রকম নরম
নদীর পানি একই রকম প্রবহমান
পাখির ডাক একই রকম মধুময়
কমলালেবুর ঘ্রাণও বদলে যায়নি রাতারাতি
কুয়াশায় শিশিরে একই ছায়া একই মায়া
খেজুর রসের স্বাদে একই পরিতৃপ্তি
শিশুর হাসিতে সেই আপ্লুত আনন্দ
নারীর প্রেমে সেই অনন্তের ঢেউ
জননীর আঁচলে সেই আবহমান আশ্রয়
তবু কী জন্ম আর মৃত্যুর অধিক প্রভেদ
মাত্র একটি দিনের ব্যবধানে
তবু কী জীবন আর মরণের অধিক ফারাক
মাত্র একটি দিনের ব্যবধানে
মা বদলে যায়নি
তবু আমরা পেলাম নিজস্ব দেশমাতৃকা
মাটি বদলে যায়নি
তবু আমরা পেলাম নিজস্ব মানচিত্র
বাতাস বদলে যায়নি
তবু আমরা পেলাম নিজস্ব লালসবুজ পতাকা
মানুষ বদলে যায়নি
তবু আমরা পেলাম নিজস্ব জাতি — বাঙালি
ঠিকানা বদলে যায়নি
তবু আমরা পেলাম নিজস্ব নিবাস — বাংলাদেশ
একাত্তর
হঠাৎ করেই মনে ছুটে আসে খোয়াই নদী
পাহাড়ে কিংবা সাগরে কখনো বেড়াতে গেলে
অথবা বন্দি হয়ে থাকি যদি নিজের ঘরে
একাকিত্বের পারদমাখানো এক বিকেলে
সময়টা ছিল সোনালি রুপোলি শিশুবেলার
রোদগোলা জলে অবগাহনের মন অবুঝ
নদীর কিনারে মশাল মিছিল আর স্লোগান
একাত্তরের প্রতিটা প্রহর লাল সবুজ
ছিল মৃত্যুর বৈপরীত্যে জয়বাংলা
কান পেতে পেতে স্বাধীন বাংলা বেতার শোনা
মুক্তির পথে খরস্রোতায় রক্তধারা
নয় মাস জুড়ে নয়া সূর্যের প্রহর গোনা
যখন মানুষ জেগে ওঠে প্রাণে সম্মিলিত
তখন ফুলের পাপড়িও হয় আরো রঙিন
ঈগল পাখির উড়াল ছাড়ায় ঝড়ের স্তর
গা থেকে গাছের পাতা ঝেড়ে ফেলে অলস দিন
স্বপ্নের স্মৃতি প্রিয় পৌষের রোদ পোয়ায়
পুবের দাওয়ায় জননীর কোলে নতুন ভোর
সবার উপরে মানুষ সত্য, যুদ্ধ নয়
মানবমিলনতীর্থের নাম একাত্তর