আমিনুল ইসলামের তিনটি কবিতা
দ্বিতীয় পর্যায়
আগ্রাসিত বাগানের একপাশে বারুদের হিংসা থেকে গাছটি বেঁচেছিল
ফলে ফুলটিও; তারপর বহুদিন আর যত্ন নেওয়া হয়নি;
ঝড় গেছে, খরা গেছে, কায়েম হয়েছে আগাছার আধিপত্য,
গাছের বাগানপ্রেম এবং ফুলটির ঘ্রাণ নিয়ে
জাতীয় উদ্যানের সবুজ সিলেবাসে নানাবিধ দুর্গন্ধ ছড়ানো হলে
মালিরাও বাগানের খাতায় আগাছার স্তুতি রচেছেন।
কেউ দেখেছে কি দেখেনি—পাখির ঠোঁটে ঠোঁটে ছড়িয়ে গেছে বীজ
ফলে ইতিহাসের লগ্নভূমিতে
নতুন প্রাণে— সবুজ সামর্থ্যে গড়ে উঠেছে বীজতলা।
আর আলস্য ঝেড়ে ফেলে জেগে উঠেছে প্রকৃতি, জমি তো প্রস্তুত আছেই
এখন আমাদের কাজ আগাছার শেকড় উৎপাটন
অতঃপর দিনে দিনে বিস্তীর্ণ ভূমিতে রোপে দিতে হবে চারা।
তবে কাকতাড়ুয়ার আর জরুরত আছে কিনা তা পরিষ্কার নয় এখনো।
পরম্পরা
আজ যা কমতে কমতে তলানিতে এসে ঠেকেছে,
সমাজে একসময় আগাছার মতো ছিল তার প্রাদুর্ভাব
গ্রামে-গঞ্জে শহরে-বন্দরে মোড়লের বিস্তৃত উঠোনে
সম্রাট-জমিদারের নূপুরধ্বনিত রাজকীয় প্রাসাদে;
পরিসংখ্যান বিভাগ সেই বহুপত্নীক পরিবারের কথা
ভুলে গেলেও ইতিহাস চলে যায়নি ছেড়ে আমাদের;
সতীন নাই কিন্তু সতীনদের রেখে যাওয়া ঈর্ষা ও
আগুন, বিষ ও বিতৃষ্ণা ধরে রেখেছে পুরোনো রাজত্ব
যেভাবে চলে যাওয়ার পরও রয়ে গেছে বৃটিশদের
ডিভাইড অ্যান্ড রুল পলিসির দ্বন্দ্বমুখর সাম্রাজ্য
আকীর্ণ হয়ে বয়কট, বুলডোজার ও ঘৃণার প্রচারণায়!
ফলে আমরা যারা আজ সতীনহীন মায়ের সন্তান
তাদের রক্তেও রাজত্ব করছে বাতাসস্থ
কার্বনডাই অক্সাইডের মতো ঈর্ষা ও আগুন, বিষ ও বিবমিষা।
সেসবের উদ্গীরণ মাঝে মাঝে সংক্রমণের বন্যা হয়—
আমাদের ভাবনায় ও ভাষণে, মন্তব্যে ও মিডিয়ায়...
বন্ধক দেওয়া দিন রাত
অথচ তার বুক ছুঁয়ে বঙ্গোপসাগর: এই ঝড় তো এই ঝঞ্ঝা!
আন্দোলিত ডালপালা নিয়ে সে অনুগত ছায়া ও অম্লজান
সারাটা দিন পালন করে যায় ডাঙ্গার সংবিধিবদ্ধ দায়িত্ব;
ভাসমান চোখে চোখ মেলে দ্যাখে তা ভাসমান গাঙচিলেরা,
নক্ষত্রের চোখ মেলে দেখে তা মুখ-বুজে-থাকা আকাশ,
কিন্তু দেখে না কেবল অন্ধ মালিকের সন্দেহপ্রেমিক সিপাহীরা
যদিও আকাশের মতো দিনরাত খোলা তাদের সবকটি
খাই খাই চোখ; ফল এই যে পুঞ্জিভূত বেদনার সুপ্ত আগ্নেয়গিরি
মাঝে মাঝে দীপদেশের জাভা দ্বীপ করে তোলে অমূল্যায়িত অস্তিত্ব!
দ্যাখো, প্রচারিত কত নকল কান্নার ছবি দেখে আহা উহু
করে ওঠে অনুগত ফেসবুক ফ্রেন্ডস! সাজানো রিপোর্টের
ক্যামেরায় কত কাঁদন হয় অতীতকে বর্তমানে গাঁথার সূত্র
কত হত্যাকারী অশ্রু পায় সাজানো শোকের প্রযোজনা!
কিন্তু রুমির কাঁদার জন্য কোনো সিডিউল রাখে না অধীনস্থ সময়
সে তার সমস্ত সময় বন্ধক দিয়ে রেখেছে অন্ধ মালিকের হাতে।
আরএ/