রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৯

দিগন্ত বিস্তৃত মরুভূমির ভেতর দিয়ে আমরা সুদান সীমান্তের দিকে এগোচ্ছি। আবু সিম্বেল থেকে সুদানের দূরত্ব মাত্র কুড়ি কিলোমিটার। আসোয়ানে প্রয়োজনীয় অনুমোদন নিয়ে ওয়াদি হালফা সীমান্ত দিয়ে সুদানে ঢুকে পড়া যায়। আমাদের তেমন সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা না থাকায় আপাতত দুপাশের মরুভূমি দেখতে দেখতে এগিয়ে যাই আবু সিম্বেলের পথে। মরুভূমিতে হলদে বাদামি ধূসর সারিসারি বালির স্তূপ কোথাও কোথাও বালির পাহাড় হয়ে উঠেছে। মরু প্রান্তরে বিদ্যুতের দীর্ঘ বিদ্যুৎসঞ্চালন লাইন এবং পথের পাশে সাজানো নির্মাণ সামগ্রী থেকে বোঝা যায় আসোয়ান হাই ড্যাম মিশরের মানুষের জীবনে কতোটা ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। প্রান্তরের মাঝখানে ফসলের সবুজ ক্ষেত এবং রাস্তার পাশে সবুজ গাছের দীর্ঘ সারি দেখে অনুমান করা যায় জলের ছোঁয়ায় ধূসর মরুর ঊসর বুকেও প্রাণের উন্মেষ ঘটেছে। ওসামা জানালেন, দেশের বিদ্যুতের শতকরা পনের ভাগই আসে আসোয়ান ড্যাম থেকে। অন্যদিকে লেক নাসেরের জলে এই অঞ্চলে আবাদি জমির পরিমাণ বেড়েছে। শুধু সেচের পানি নয়, বন্যার সময় উপচে পড়া পানি নীল এবং লেক নাসেরের দুপাশ প্লাবিত করে যাবার পরেই এই অঞ্চলে শুরু হয়ে যায় চাষাবাদ।   মিনিট পঁচিশেক পরে গাড়ির গতি একটু কমে এলে ওসামা জানালেন এখানে একটা চেকপোস্ট আছে। চেকপোস্টে অবশ্য কেউ কিছু চেক করলো না, এমনকি গাড়িও পুরোপুরি থামলো না। শুধু পথে দাঁড়ানো পুলিশ আরবিতে কিছু একটা জিজ্ঞেস করলে ওসামা উত্তর দিলেন, ‘বাংলাদেশে’। বুঝলাম, সাদা সাদা টুরিস্টের ভিড়ে এইসব আধাকালা মানুষের আমদানি কোন দেশ থেকে সেটাই তাদের জিজ্ঞাসার বিষয়। শুধু কৌতূহল নয়, খাতায় দেশের নাম টুকে রাখাও তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তবে খাতা লেখা শেষ হবার আগেই আয়মান গাড়ি টান দিলে মনে হলো এদেশের নিরিহ পুলিশকে কেউ খুব বেশি পাত্তা দেয় না। পথের পাশের সরাইখানা থেকে বেরোবার সময় দেখেছি রাস্তায় হাইওয়ে পুলিশ গাড়ি নিয়ে নির্বিকার দাঁড়িয়ে আছে। 

 

 

চেকপোস্ট পার হবার পরে মনে হয়েছিল, আমরা বোধহয় আবু সিম্বেল পৌাঁছে গেছি। আসলে এটি ছিল আবু সিম্বেল এলাকায় প্রবেশ পথ। এরপর থেকেই দুপাশে গাছপালার সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। প্রচুর খেজুর এবং তাল জাতীয় গাছ, পাশাপাশি তুলা, ভুট্টা ও গমের ক্ষেত, ঝোপঝাড় এবং ফুলের দেখা মেলে কোথাও কোথাও। এই বিরাণ ভূমিতে চলছে একটা শহর গড়ে তোলার প্রাণান্ত প্রচেষ্টা। রাস্তাঘাট কারুকাজ করা দেয়াল, আধুনিক ভবন এবং সুদৃশ্য মসজিদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সাড়ে আটটায় আবু সিম্বেল পৌঁছালে টেম্পলের সংরক্ষিত এলাকার বাইরে একটা গাছের ছায়ায় দাঁড়ালাম। ওসামা প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে গেলে মাথার উপরে পাখির কিচির মিচির শুনে উপরে তাকিয়ে দেখি টুনটুনি জাতীয় ছোট্ট পাখি সবুজ পাতার ফাঁকে বাসা বুনছে। ‘জলই জীবন’ কথাটার সত্যতা আরো একবার উপলব্ধি করলাম। নীল নদের পানি আটকে রাখতে না পারলে কোথায় থাকতো লেক নাসের আর কোথায় থাকতো এই টুনটুনি পাখি! 

 

প্রবেশ পথে পর্যটকদের দীর্ঘ লাইন দেখে একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। ভোর সাড়ে চারটায় রওনা দিয়ে চার ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি। ফেরার পথে কোথাও যাত্রা বিরতি না দিলেও সাড়ে তিন ঘণ্টা লাগবে। আমাদের জাহাজ ছেড়ে যাবে দুপুর দেড়টায়। রামেসেস এবং নেফারতারির সাথে দেখা সাক্ষাৎ করে সময় মতো ফিরতে পারবো তো! আমাদের অবাক করে দিয়ে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই ওসামা টিকেটসহ ফিরে  এলে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কতোক্ষণ সময় পাবো এখানে?’  নির্বিকার ওসামার উত্তর, ‘তোমাদের যতোক্ষণ ইচ্ছে ঘুরে এসো। দু ঘণ্টার বেশি লাগবে না আশা করি।’


দু’ঘণ্টা এখানে কাটালে বেলা সাড়ে দশটা বাজবে, বেলা দুটোর আগে তো ফিরতে পারবো না। তারপরেও ওসমার আশ্বাসে আমরা চমৎকার বাদামি সিরামিক ইটের আধুনিক ভবনের ডিজিটাল নিরাপত্তা প্রহরা পার হয়ে ভেতরে ঢুকে পড়লাম।  প্রবেশ পথের পরে চোখের সামনেই বিশাল পাহাড়। আগেই জানা হয়ে গেছে, যে পাহাড় কেটে রামসেসের রূপ দেয়া হয়েছে, সে পাহাড় আসল পাহাড় নয়। এই কৃত্রিম পাহাড়ের গায়েই বসানো হয়েছে স্থানান্তরিত দুটি মন্দির। রামসেসের মন্দির এবং নেফারতারি মন্দিরে ঢুকতে হলে পাহাড়ের ডান দিক দিয়ে লেক নাসেরের পাড় ধরে বেশ কিছুটা পথ চড়াই উৎরাই পেরিয়ে সামনে পৌঁছাতে হবে। প্রশ্ন হতেই পারে, মন্দির যাত্রীদের পাহাড়ের পেছন দিকে না ঘুরিয়ে সরাসরি মূর্তিসহ মন্দির দুটো এখানে বসিয়ে দিলে কি ক্ষতি হতো? এই প্রশ্নের উত্তরেই রয়েছে সে যুগের স্থপতিদের অসামান্য প্রজ্ঞার প্রমাণ। জ্যোর্তিবিদ্যা ও গাণিতিক হিসাব নিকাশে তাঁরা যে অসাধারণ উৎকর্ষ লাভ করেছিলেন তা সহজেই অনুমান করা যায়। সারা বছর মন্দিরের অভ্যন্তরে সূর্যালোক প্রবেশ না করলেও বছরে দুবার, ২২ শে ফ্রেবুয়ারি রামসেসের জন্ম দিনে এবং ২২ শে অক্টোবর ভোরে সম্রাটের অভিষেকের দিনে সরাসরি সূর্যের আলো এসে পড়ে দ্বিতীয় রামসেসের মুখে। মন্দিরের এই সুনির্দিষ্ট কৌনিক অবস্থান স্থানান্তরের সময়েও যথাযথভাবে বজায় রাখা হয়েছে। এই বিশাল স্থাপনা পরে এক জায়গা থেকে তুলে এনে অক্ষত অবস্থায় একইভাবে নতুন করে বসাবার সময় যে পাঁচ মিলিমিটার এদিক সেদিক হয়েছে হাজার তিনেক বছরের হিসাবে সেটি নগন্য। 

আমরা লেকের ধার দিয়ে হেঁটে  আবু সিম্বেলের প্রথম মন্দিরের সামনে এসে পৌঁছলাম। খাড়া পাহাড়ের শরীরে, সম্রাটের চারটি বিশাল মূর্তি মন্দিরে আগত হাজারো মানুষের মনে হয়তো সম্ভ্রম জাগাতো কিংবা ছড়িয়ে দিতো ভীতি। এখনো উদ্ধত মূর্তিমানরা সর্বময় ক্ষমতার অধিকারি ফারাওয়ের শক্তির পরিচয় দিতেই যেনো জনগণের রক্ষাকর্তা হিসাবে বসে আছেন। ষাট ফুটের চেয়েও দীর্ঘ মূর্তিগুলোর মাঝে ছোট আকারে জায়গা করে নিয়েছে রামসেসের মা রানি টুইয়া, স্ত্রী নেফারতিতি এবং অসংখ্য সন্তানের মধ্যে প্রিয় কয়েকজন। প্রবেশ দ্বারের ঠিক উপরে বসে আছেন বাজপাখির মাথাওয়ালা সূর্যদেব রা-হোরাখথি।


বাইরে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে মূূল মন্দিরে ঢুকবার পথে প্রথমবারের মতো দ্বাররক্ষীদের দ্বারা বাধাগ্রস্ত হলাম। ফারাওর সাক্ষাৎ উত্তর পুরুষ লম্বা জোব্বা এবং মাথায় পাগড়ি পরে দুয়ারে দাঁড়িয়ে ‘লা সুরাতান-লা তসবীর’ বলে আমাদের নিরস্ত করার চেষ্টা করছিলেন। আমাদের চেহারা সুরতে তিনি কী ভেবেছিলেন কে জানে! নব্বই ভাগ মুমিন মুসলমানের দেশের মানুষ হয়েও আমরা যে আরবি জানি না, সে কথা তাকে কে বলবে! অবশ্য বলার আগে তিনি নিশ্চয়ই বুঝে ফেলেছিলেন তাই ‘নো ফটো, নো ভিডিও’ বলে আমাদের বিষয়টা বুঝিয়ে দিলেন। সমস্যা হলো ক্যামেরা রাখবো কোথায়? আমার জিজ্ঞাসার উত্তরে প্রহরী জানালেন ক্যামেরা সাথে নিয়ে যাওয়া যাবে তবে ছবি তোলা যাবে না। আরও একটু আগ বাড়িয়ে বললেন, ‘মোবাইল ফোন ওকে-টেক পিকচার!’ তার অর্থ হলো মোবাইল ফোনে ছবি তুলতে কোনো মানা নেই। বড় হলঘরের দুপাশে আটটি করে কলামের প্রতিটির সামনে দাঁড়িয়ে আছে রামসেসের বিপুলায়তন মূর্তি। দেয়ালে রিলিফের কাজগুলোতে তুলে ধরা হয়েছে যুদ্ধে পরাক্রমশালী ফারাওদের অপ্রতিরোধ্য বিজয়গাথা, শত্রুদের পদানত করে দেবতাদের উপস্থিতিতে তাদের হত্যা করার দৃশ্য। উত্তরের দেয়ালে  হতোদ্যম সেনাবাহিনিকে উজ্জীবীত করে আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১২৭৪ অব্দের বিখ্যাত কাদেশের যুদ্ধ জয়ের দৃশ্য চিত্রিত। এই দৃশ্যে রথের আরোহী রামসেস তার পলায়নপর শত্রুদের দিকে তীর নিক্ষেপ করছেন! পরের হলটিতে চার স্তম্ভের একটি চত্বরে রামসেস এবং নেফারতারি সিংহাসনে আসীন পবিত্র মন্দিরের তিন মহা-দেবতার সামনে উপস্থিত। দেয়ালগুলোর মতো মন্দিরের সিলিংও বিচিত্র চিত্রকর্মে সাজানো। শকুনরূপী প্রতিরক্ষার দেবী নেখবেত রামসেসের মাথার উপরে সিলিং-এ বসে সম্রাটের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করেছেন। ভেতরের প্রকাণ্ড পাথুরে কলামগুলো দৈর্ঘে প্রস্থে এতোটাই বড় যে এর নির্মাণ শৈলীর কথা ভাবলে শুধু তিনহাজার বছর আগের প্রেক্ষিতে নয় বর্তামানেও আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেও প্রায় অসম্ভব কাজ বলে মনে হয়। চিত্রিত দেয়ালগুলো জুড়ে আছে দ্বিতীয় রামসেস এবং তার পরিবার পরিজন, মহান দেব দেবী ও সৈন্য-সামন্ত ছাড়াও শিয়াল দেবতা আনুবিসের উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য, সারিবদ্ধ শ্রমদাস, সমকালীন জীবন যাপনের চিত্র এবং হাইরোগ্লিফিক লিপিতে লেখা ইতিহাস। বিভিন্ন অংশে ঘুরে ঘুরে দেখার সময় লক্ষ করলাম পশ্চিমা ভ্রাতা-ভগ্নিরা দিব্যি ক্যামেরায় ছবি তুলছেন এবং নিঃশব্দে ভিডিও করে যাচ্ছেন। ধারণা করা যায় এ জন্য জোব্বাধারী দ্বাররক্ষীর হাতে যৎকিঞ্চিত ঈজিপশিয়ান পাউন্ড গুঁজে দিতে হয়েছে। আমাদের গাত্র বর্ণের কারণে মন্দিরের প্রহরী কিছু প্রত্যাশা করেননি, আর আমরাও কিছু দিতেও চাইনি। অতএব মোবাইল ফোনে বেশ কিছু ছবি তুলে বাইরে বেরিয়ে এলাম। 

 

 

পাশের পাহাড়ের ঢালে রামসেসের সবচেয়ে প্রিয় স্ত্রী নেফারতারির উদ্দেশ্যে নির্মিত মন্দির দেখতে যাবার আগে প্রধান মন্দিরের বিশালত্ব বুঝতে হলে বাইরে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা ছাড়া উপায় নেই। একবার ডাইনে একবার বাঁয়ে ছোটাছুটি করে একটু ক্লান্তও হয়ে পড়েছিলাম। মহামন্দির থেকে দুশ গজের মতো দূরে ছোট মন্দিরে যাবার মাঝখানে একটা ছাউনির ছায়ায় বসে অল্প কিছুক্ষণ জিরিয়ে নেয়ার সাথে সাথে ক্যামেরার মেমোরি কার্ড বদলে নিলাম। বেশিক্ষণ বসার উপায় ছিল না। সময় দ্রুত গড়িয়ে যাচ্ছে, কাজেই হাঁটতে শুরু করলাম নেফারতারি দর্শনে।  তুলনামূলকভাবে ছোট হলেও এখানেও মন্দিরের বাইরে চল্লিশ ফুট উঁচু বেদীতে দাঁড়িয়ে আছেন সম্রাট দ্বিতীয় রামসেস ও তাঁর স্ত্রী নেফারতারি। মহান সম্রাট নিজের চারটি এবং প্রিয়তমা স্ত্রীর দুটি  বিশাল মূর্তি স্থাপন করিয়েছেন পাহাড়ের গায়ে। সংখ্যায় দুটি বেশি হলেও উচ্চতায় এখানে দুজনেই সমান। তবে রাজা মশাই বোধহয় নিরাপত্তাজনিত কারণে রাণীমার মূর্তিটি মাঝখানে রেখে নিজে দাঁড়িয়েছেন দুপাশে।  প্রাচীন মিশরের ইতিহাসে নারীদের, এমন কি সম্রাটজ্ঞীদের অনেক ছোট আকারে দেখানো হতো। এখানে দুজনেই বত্রিশ ফুট দীর্ঘ। ফারাওদের রাজত্বে নারীকে সম-মর্যাদা দানের এটি দ্বিতীয় ঘটনা। এর আগে সম্রাট আখেনাতন স্ত্রী নেফারতিতির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেছিলেন প্রথম মন্দির। মন্দিরের ভেতরে দেয়াল চিত্রে এখানেও প্রাধান্য পেয়েছে ফারাওদের বিজয় গাথা এবং দেব দেবীর উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য, বিশেষ করে দেবী হাথোরের উদ্দেশ্যে সম্রাট ও সম্রাটজ্ঞীর নিবেদনের দৃশ্য। 


আবু সিম্বেল মন্দির প্রাঙ্গনে যে পথে প্রবেশ করেছিলাম, বেরোবার সময় তার বিপরীত দিকের সবুজ গাছপালায় ছাওয়া সুন্দর বাঁধানো পথ দিয়ে লেক নাসের হাতের ডাইনে রেখে পাহাড়ের গায়ে ওড়ানো পতাকার সারি পার হয়ে এলাম। বাইরে বেরিয়ে যাবার আগে বিশ্রাম নেবার জন্যে কয়েকটি সুদৃশ্য ছাউনি থাকলেও আমাদের বসার সময় নেই। আমার রীতিমতো ভাবনা হচ্ছিল, তিনজনকে আসোয়ানে ফেলে রেখেই টুইয়া ভেসে যায় কিনা! কনকোর্সের বাইরে দীর্ঘ সারিতে টুরিস্টদের জন্যে আকর্ষণীয় সব সাজানো সুভ্যেনিয়ার এবং দোকানীদের বিনীত আমন্ত্রণ উপেক্ষা করে আমরা দ্রুত গাড়িতে উঠে বসলাম।  


পথে রানাভাই বলছিলেন রামসেসের জন্মদিন আসলে ২১ ফেব্রুয়ারি আর অভিষেক ২১ অক্টোবর। আবু সিম্বেল স্থানান্তরের পরে পাঁচ মিলিমিটারের গোলমালে এখন দিনের প্রথম সূর্য সম্রাট এবং দেবতাদের অবয়ব আলোকিত করে একদিন পরে একদিন পরে অর্থাৎ ২২ ফেব্রুয়ারি এবং ২২ অক্টোবর। আমি সারাক্ষণ উদ্বেগের মধ্যে থাকায় রানা ভাইয়ের কথাটা তখন খুব ভালো করে উপলব্ধি করতে পারিনি। বেলা সাড়ে এগারোটা বেজে গেছে, আমরা দু ঘণ্টার জায়গায় তিন ঘণ্টা কাটিয়েছি আবু সিম্বেলে। সাড়ে তিন ঘণ্টায় আসোয়ান পৌঁছালেও আড়াইটা বাজবে। তবে আমি টেনশনে থাকলেও ওসামা বেশ নিরুদ্বেগ! আসোয়ানের কাছাকাছি এসে একবার গাড়ি থামিয়ে নিজের এবং রানা ভাইয়ের জন্য অষুধও কিনেছেন। টুইয়া থেকে ভোরে বেরিয়ে যাবার সময় হিসাব রাখার সুবিধার জন্যে আমাদের প্রত্যেকের হাতে একটা করে কার্ড ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। প্রবেশ পথে দাঁড়ানো রিসেপশনিস্ট যখন আমাদের হাত থেকে মাথা গুনতির কার্ড বুঝে নিলেন, তখন ঘড়িতে দুটো বেজে পঁয়ত্রিশ মিনিট। তিনি বিরস বদনে ম্যানেজারকে জানালেন, ‘এখনো পাঁচজনের কোনো খবর নেই।’ আমি ম্যানেজারের উদ্দেশ্যে বললাম, ‘তাহলে আমাদের জন্যে জাহাজ ছাড়তে দেরি হয়নি নিশ্চয়ই।’ ম্যানেজার একটু কাষ্ঠ হাসি দিয়ে বললেন, ‘ইয়া। উই ডোন্ট নো, হাউ লং উই উইল হ্যাভ টু ওয়েট ফর দেম!’ওসামা ঠিকই জানতেন, প্রায় সব সময়েই কেউ না কেউ  দেরি করবেই। মিনিট দশেক পরে সেই শেষ পাঁচজন ফিরে আসার পরে নোঙর তুলে বন্দর ছেড়ে নীল নদের জলে ভেসে চললো টুইয়া। 

 


চলবে...  

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৮

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৭

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৬

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৫

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৪

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৩

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ২

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১

Header Ad
Header Ad

হাকিমপুরে গরীবের চাল ছাত্রলীগ নেতার গুদামে

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

দিনাজপুরের হাকিমপুরে সরকারি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ওএমএস) সাড়ে ৫ মেট্রিকটন চাল ও ১০৪টি খালি চালের বস্তা উদ্ধার করা হয়েছে। এসব চাল একটি ধান ভাঙ্গা মিলের গুদামে মজুদ করা ছিল। ঘটনাটি ঘটেছে ২৬ এপ্রিল, শনিবার রাতে, যখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অমিত রায় অভিযান চালিয়ে এসব উদ্ধার করেন।

গুদামটির মালিক আসাদুজ্জামান আসাদ, যিনি উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের সদস্য, তার বিরুদ্ধে চাল মজুদ করার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা জানান, আলীহাট ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের কাছে তার মিলের গুদামে এসব চাল মজুদ ছিল। অভিযান চালিয়ে সাড়ে ৫ মেট্রিকটন চাল জব্দ করা হয়, তবে অভিযানের সময় মিল মালিক এবং কোনো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি পাওয়া যায়নি।

এ ঘটনায় আসাদকে গ্রেপ্তার করা না গেলেও তাকে আসামী করে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, চাল মজুদ করা বেআইনি এবং এটি অপরাধ। উদ্ধারকৃত চাল উপজেলা খাদ্যগুদামে পাঠানো হয়েছে এবং পরবর্তীতে নিয়মিত মামলায় তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা খালেদা খাতুন জানিয়েছেন, মামলাটি রবিবার বিকালে থানায় করা হবে, যেখানে আসাদুজ্জামান আসাদকে প্রধান আসামী হিসেবে দায়ের করা হবে।

এদিকে, আসাদ আগেও বৈষম্যবিরোধী দুই ছাত্র হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জামিনে মুক্তি পেয়েছিলেন।

Header Ad
Header Ad

চুরির অভিযোগে কুবির দুই শিক্ষার্থী বহিষ্কার

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

ক্যামেরার লেন্স চুরির অভিযোগ প্রমাণের ভিত্তিতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) আইন বিভাগের দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃত দুই শিক্ষার্থী হলেন ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের আইন বিভাগের আনাস আহমেদ ও শামীম ভূঁইয়া।

রবিবার (২৭ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বোর্ডের মিটিংয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে বলে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল হাকিম। 

আনাস আহমেদকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার ও আবাসিক হলের সীট বাতিল এবং শামীম ভুঁইয়াকে সাময়িকভাবে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া তার ব্যাপারে পরিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে আগামীকাল সিন্ডিকেটে আলোচনা করা হবে বলে জানা গেছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল হাকিম বলেন, "গণমাধ্যমে আনাসকে নিয়ে রিপোর্ট হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট হয়েছে। এছাড়া তার চুরির সত্যতা পাওয়া গেছে। ফলে তাকে এক বছরের বহিষ্কার এবং হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আর শামীমের ব্যাপারে শৃঙ্খলা বোর্ড বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে। আগামীকাল বিষয়টি সিন্ডিকেটে আলোচনা হবে।'

এ ব্যাপারে রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, 'শৃঙ্খলা বোর্ড দুইটি সিদ্ধান্তের সুপারিশ করেছে। এখনো সাইন হয়নি পেপারে। আগামীকাল সিন্ডিকেটে ফাইনাল হবে বিষয়টি।'

উল্লেখ্য, এর আগে কুমিল্লার একটি অভিজাত হোটেল থেকে ক্যামেরার লেন্স চুরি করে আনাস এবং শামীম। সিসি ফোটেজ বিশ্লেষণ করে এর সত্যতাও পাওয়া যায়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২৫ এপ্রিল রাতে বেশ কয়েকজন বহিরাগত এসে ক্যাম্পাসে আনাসকে মারধরও করে।

Header Ad
Header Ad

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগবাড়িয়ে কিছু করার পক্ষে নয় ঢাকা

ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

অধিকৃত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলার জেরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা বেড়েই চলছে। তবে এই ইস্যুতে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে চলমান উত্তেজনা প্রশমনের পক্ষে বাংলাদেশ। দুটি বন্ধুপ্রতিম দেশ চাইলে বাংলাদেশ মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে তার আগে আগবাড়িয়ে কিছু করার পক্ষে নয় ঢাকা।

রোববার (২৭ এপ্রিল) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

তিনি বলেন, আমাদের অবস্থান স্পষ্ট, আমরা শান্তি চাই দক্ষিণ এশিয়ায়। আমরা জানি, বিভিন্ন ইস্যুতে দীর্ঘদিন ধরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাতময় সম্পর্ক আছে। কিন্তু আমরা চাই না এখানে কোনো বড় কোনো সংঘাত সৃষ্টি হোক, যাতে এটা এ অঞ্চলের মানুষের কোনো বিপদের কারণ না হয়ে উঠতে পারে। ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক বিদ্যমান।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমরা চাইব তারা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তাদের সমস্যার সমাধান করে ফেলুক। আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি, দু’একটি দেশের পক্ষ থেকে মধ্যস্থতার প্রস্তাব এসেছে। যেভাবে হোক মধ্যস্থতার মাধ্যমে হোক, দ্বিপক্ষীয় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে হোক, আমরা চাই উত্তেজনা প্রশমিত হোক এবং শান্তি বজায় থাকুক।

ভারত-পাকিস্তান দুটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক রয়েছে। ইতোমধ্যে ইরান ও সৌদি আরব ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সমস্যা সমাধানে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশও মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করতে পারি কি না– এমন প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, আমি মনে করি না এই মুহূর্তে আমাদের মধ্যস্থতা করার মতো কোনো ভূমিকা নেওয়া উচিত। আমরা চাইব, তারা নিজেরা নিজেরা সমস্যার সমাধান করুক। তারা যদি আমাদের সহায়তা চায়, আপনারা মধ্যস্থতা করুন তাহলে হয়ত আমরা যাব। কিন্তু তার আগে আমরা আগবাড়িয়ে কিছু করতে চাই না।

ভারত-পাকিস্তানের চলমান উত্তেজনার কোনো প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে কি না– জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, আধুনিক জামানায় সবকিছু সবাইকে কমবেশি প্রভাবিত করে। কাজেই কোনো কিছু আমাদের একটুও প্রভাবিত করবে না, সেটা আমি বলি না। তাদের যেই সংঘাত সেটা আমাদের সরাসরি প্রভাবিত করার কিছু নাই। কারণ, আমরা এতে কোনো পক্ষ নিইনি। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যেকোনো সংঘাত বা সম্পর্ক খারাপ হলে প্রভাব পড়ে।

‘তবে তাদের কাছ থেকে আমাদের যদি কোনো স্বার্থ থাকে আমদানি করার, আমরা করব।’, যোগ করেন তৌহিদ হোসেন।

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশ্নে উপদেষ্টা জানান, এটা হয়ত নিরাপত্তা নিয়ে যারা সরাসরি কাজ করেন তারা বলতে পারবেন। এই মুহূর্তে আমার কাছে এরকম কোনো তথ্য নেই।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

হাকিমপুরে গরীবের চাল ছাত্রলীগ নেতার গুদামে
চুরির অভিযোগে কুবির দুই শিক্ষার্থী বহিষ্কার
ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগবাড়িয়ে কিছু করার পক্ষে নয় ঢাকা
সাব-ইন্সপেক্টর পদে প্রাথমিক সুপারিশ পেল ৫৯৯ জন
দুই উপদেষ্টার এপিএস-পিও’র দুর্নীতির খোঁজে গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু
নির্বাচনে প্রতিটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা চায় জামায়াত
কক্সবাজার-১ আসনের সাবেক এমপি জাফর আলম গ্রেপ্তার
ভারতের দিকে তাক করা পাকিস্তানের ১৩০ পারমাণবিক বোমা
চার ম্যাচের নিষেধাজ্ঞায় তাওহিদ হৃদয়, বাড়ছে নাটকের রঙ
উত্তেজনার মধ্যেই যুদ্ধজাহাজ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাল ভারত
ছেলে খুঁজে পাচ্ছি না, একজন জীবনসঙ্গী দরকার: মিলা
টাঙ্গাইলে শ্রমিকদলের নেতাকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধে ভারতের ১.১৪ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির শঙ্কা
দেশের পথে প্রধান উপদেষ্টা
রাজনীতির চেয়ারে ঘুণপোকা ধরেছে, এটি সংস্কার করা প্রয়োজন: ব্যারিস্টার ফুয়াদ
উত্তাল ইউআইইউ ক্যাম্পাস, ভিসি-ডিনসহ ১১ কর্মকর্তার পদত্যাগ
এপ্রিলেই দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া, সঙ্গে থাকবেন দুই পুত্রবধূ
বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে বিশাল নিয়োগ, পদ ৬০৮
ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় ফ্যাসিবাদী শাসক পালাতে বাধ্য হয়েছে: আলী রীয়াজ
মহেশপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত