বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ ২০২৫ | ২১ ফাল্গুন ১৪৩১
Dhaka Prokash

অনুবাদ গল্প

হারুকি মুরাকামির ‘দ্য ইয়ার অব স্প্যাগেটি’

জাপানের বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক হারুকি মুরাকামি বিশ্বসাহিত্যেরই একজন গুরুত্বপূর্ণ লেখক। শুধু জাপান নয়, সারা বিশ্বেই রয়েছে তার বিপুল পাঠক ও জনপ্রিয়তা। ‘দ্য ইয়ার অব স্প্যাগেটি’ গল্পটা তার গল্পগ্রন্থ ব্লাইন্ড উইলো, স্লিপিং উইমেন থেকে নেওয়া হয়েছে। এই গল্প জাপানিজ থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন ফিলিপ গ্যাব্রিয়েল।

শিগগিরই ঢাকার প্রকাশনা সংস্থা বাতিঘর থেকে প্রকাশিত হবে মুরাকামির গল্প সংকলন কনফেশনস অব আ শিনাগাওয়া মাংকি। প্রকাশের অপেক্ষায় থাকা সেই সংকলনের জন্য গল্পটা বাংলায় অনুবাদ করেছেন কথাসাহিত্যিক, অনুবাদ এবং নির্মাতা আলভী আহমেদ। ইতিমধ্যে তার অনুবাদে প্রকাশিত হয়েছে হারুকি মুরাকামির নরওয়েজিয়ান উড, হিয়ার দ্য উইন্ড সিং, পিনবল, ১৯৭৩ ইত্যাদি গ্রন্থ।

 

১৯৭১ সাল। সেটা ছিল আমার স্প্যাগেটির বছর।
বছরজুড়ে বেঁচে থাকার জন্য আমি শুধু স্প্যাগেটি খেয়েছি এবং বেঁচে থাকতাম কেবলমাত্র ওই সরু সুতোর মতো জিনিসটাখাব বলে। স্প্যাগেটি রান্না করা ছিল আমার জীবনের একমাত্র বিনোদন। চুলায় স্প্যাগেটি সেদ্ধ হচ্ছে, সেখান থেকে গরম ভাপ উঠছে—এই মহান দৃশ্য নিয়ে আমার বড় গর্ব হতো। কড়াইতে টমেটো সসের বুদবুদ ছিল আমার বেঁচে থাকার প্রেরণা।
বেশ আয়োজন করেই আমি আমার স্প্যাগেটি অভিযান শুরু করেছিলাম।
প্রথমে একটা বড়সড় দোকান খুঁজে বের করলাম, যেখানে সব ধরনের রান্নাবান্নার জিনিস পাওয়া যায়। বেশ বাছাবাছির পর একটা কিচেন টাইমার কিনলাম। স্প্যাগেটি কতক্ষণ ধরে সেদ্ধ করব এ নিয়ে আমি কোনো আপস করতে চাইনি। সেদ্ধ করার জন্য একটা বড় অ্যালুমিনিয়ামের পাত্র কিনলাম। পাত্রটা এত বিশাল ছিল যে অনায়াসে একটা জার্মান শেফার্ড টাইপের কুকুরকে সেখানে বসিয়ে গোসল করানো যাবে। আমাকে প্রচুর স্প্যাগেটি খেতে হবে। তাই রান্নার পাত্রটাও হতে হবে বড়।
এরপর রান্নায় কী কী জিনিস ব্যবহার করা যেতে পারে, সেগুলো খুঁজে বের করার পালা। আগেই বলেছি, আমি ছিলাম আপসহীন। যাবতীয় মসলা, পেঁয়াজ, রসুন খুঁজে খুঁজে কিনলাম। বাজারের সেরা জিনিসটা আমার চাই। মানুষ একটা-দুটো করে টমেটো কেনে, আমি কিনলাম ডজনে। বইয়ের দোকান থেকে বেছে নিলাম রান্নার বই, যেখানে স্প্যাগেটি রান্নার কলাকৌশল নিখুঁতভাবে লেখা আছে।
এরপর মূল জিনিস কেনার পালা। বাজারে যত ধরনের স্প্যাগেটি পাওয়া যায় সব কিনে ফেললাম। ইতালি থেকে সে বছর জাপানে যত ধরনের স্প্যাগেটি এসেছিল তার কোনোটাই বাদ গেল না। পেঁয়াজ, রসুন আর অলিভ অয়েলের গন্ধ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল আমার অ্যাপার্টমেন্টে। সে গন্ধ যেন মেঘ হয়ে ভাসতে ভাসতে আমার জামা-কাপড়, বই-খাতা, কাগজ-কলম, ফাইলপত্র, একটা পুরোনো টেনিস র‌্যাকেটে সবকিছুতে ছড়িয়ে পড়ল।
খ্রিষ্টের জন্মের ঠিক এক হাজার নয় শত সত্তর বছর পরের ঘটনা। ১৯৭১। সেটা ছিল আমার স্প্যাগেটির বছর।
এ বছরের একটাই নিয়ম ছিল। আমি স্প্যাগেটি রান্না করব এবং খাব। একা। এই বিশেষ বছরটার আগে পৃথিবীর বোকা মানুষগুলো মনে করত, স্প্যাগেটি হচ্ছে এমন একটা খাবার যা কখনো একার জন্য রান্না করতে হয় না। কয়েকজনের জন্য তৈরি করে একসঙ্গে মিলেমিশে খেতে হয়। আমি এই সনাতন ধ্যানধারণায় একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনলাম। পরিবর্তনটা কাউকে না কাউকে আনতেই হতো। আমি এই মহান দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিলাম। শুধু নিজের জন্য রান্না করে একা একা পেট পুরে খেতে শুরু করলাম।
স্প্যাগেটি, সঙ্গে লেটুস আর শসা দিয়ে তৈরি সালাদ। শেষে চা। সবকিছু টেবিলে সুন্দরভাবে সাজানো থাকত। একঘেয়েভাবে চলতে চলতে পৃথিবীটা এসে থমকে যেত আমার কিচেন টেবিলে। আমি ধীরেসুস্থে খাবারগুলো খেতাম আয়েশ করে, পত্রিকা পড়তে পড়তে।
রোববার থেকে শনিবার প্রতিটা দিনই ছিল আমার স্প্যাগেটি দিন। প্রতিটা সপ্তাহ ছিল আমার স্প্যাগেটি সপ্তাহ এবং শেষ পর্যন্ত গোটা বছরটা হয়ে উঠল স্প্যাগেটিময়।

 


প্রতিটা বিপ্লবের কিছু প্রতিবিপ্লব থাকে। আমার ক্ষেত্রেও সেগুলোর লক্ষণ দেখতে শুরু করলাম।
মনে করেন, একদিন বিকেলে ঝুমবৃষ্টি এল। কিচেন টেবিলে এক প্লেট স্প্যাগেটি নিয়ে বসেছি। আমার মনের মধ্যে কোথায় যেন এ রকম একটা অনুভূতি হতো, এখনই বোধ হয় কেউ দরজায় নক করবে। এই কেউ কোনো নির্দিষ্ট মানুষ নয়। একেক দিন একেকজন। পরিচিত হতে পারে, অপরিচিতও হতে পারে। একবার দরজায় নক করা মানুষটা ছিল একটা মেয়ে, কলেজে পড়ার সময় যার সঙ্গে আমার হালকা প্রেম ছিল। আরেকবার হলো কী, সেই মানুষটা হয়ে গেলাম আমি নিজে। বেশ কয়েক বছর আগের আমি। হুট করে নতুন আমিকে দেখতে এসেছি। দরজার বাইরে দাঁড়ানো। এখনই নক করব। আরেকবার হলিউড থেকে এল বিখ্যাত উইলিয়াম হোল্ডেন, সঙ্গে জেনিফার জোনস।
এই প্রত্যেকটা মানুষই দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকত। মনে হতো, এখনই বুঝি তারা দরজায় নক করবে। কিন্তু, না। তারা শেষ পর্যন্ত নক করত না। চলে যেত।
বসন্ত গেল, গ্রীষ্ম এল, তারপর একদিন শরৎ। বিপ্লব দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে হতে প্রায় দীর্ঘজীবী হয়ে গেল। আমি রান্না করে যেতে লাগলাম। এ যেন নিজের ওপর একধরনের প্রতিশোধ।
ধরা যাক, একটা মেয়ে প্রেমে ছ্যাঁকা খেয়েছে। সে প্রথম যে কাজটা করবে সেটা হচ্ছে, তার পুরোনো প্রেমপত্রগুলো খুঁজে বের করবে। তারপর সেগুলো মুঠোয় নিয়ে চুলার আগুনে ছুড়ে দেবে। আমিও ঠিক তেমন করে মুঠোভর্তি স্প্যাগেটি নিতাম এবং সেগুলো রান্নার পাত্রে ছুড়ে ছুড়ে মারতাম।
সরু সুতোর মতো স্প্যাগেটিগুলো আমি চোখে চোখে রাখতাম। যেন আমি চোখ সরিয়ে নিলেই ওরা ফুটন্ত পানি থেকে এক লাফে বেরিয়ে আসবে এবং অদৃশ্য হয়ে যাবে।
যেটুকু পারতাম, গপগপ করে খেতাম। বাকিটুকু থেকে যেত ফ্রিজে। সেখান থেকে ওদের জায়গা হতো ময়লার ঝুড়িতে। তারপর অন্য ময়লা-আবর্জনার সঙ্গে সেগুলোর শেষ ঠিকানা হতো নদীর বুকে।
আগুনে তার জন্ম,মৃত্যু নদীর স্রোতে—এরকম কাব্যময় কথাও মনে আসত আমার প্রাণপ্রিয় স্প্যাগেটির ব্যাপারে।

 


তিনটা বেজে ঠিক কুড়ি মিনিটে ফোনটা বাজল। আমি তখন তোশকের ওপর চিত হয়ে শুয়ে ছিলাম। চোখ ছিল ছাদ বরাবর। জানালা দিয়ে মিষ্টি রোদ এসে আমার শরীরে পড়ছিল। শীতের দিনে এই রোদটা ভারি আরামের। একটা মৃত মানুষ যেভাবে শুয়ে থাকে ঠিক সেভাবেই শুয়ে ছিলাম আমি। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের কোনো এক বিকেল। সময় তিনটা বেজে কুড়ি।
প্রথমে আমি ঠিক বুঝতেই পারিনি ফোনটা বাজছে। একটা অপরিচিত শব্দ বাতাসে ভাসতে ভাসতে আমার দিকে এগিয়ে এল। ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না শব্দটা কিসের। অবশেষে সেই অপরিচিত শব্দটা আমার মাথার কোষগুলোতে একধরনের পরিচিত রূপ ধারণ করল। বুঝতে পারলাম ফোন বাজছে। উঠে গিয়ে রিসিভারটা কানে লাগালাম।
ওপ্রান্তে একটা মেয়ে। আমার এক বন্ধুর সাবেক প্রেমিকা। কোনো এক কারণে তারা জীবনের কোনো এক মুহূর্তে প্রেমে পড়েছিল এবং অনিবার্যভাবে তাদের সম্পর্কটা একসময় ভেঙে যায়। তাদের সম্পর্ক গড়ার পেছনে আমার কিঞ্চিৎ অবদান ছিল।
‘তোমাকে বিরক্ত করছি,’ সে বলল, ‘তুমি কি জানো ও কোথায় আছে?’
মেয়েটার কণ্ঠে এমন কিছু একটা ছিল, যেটা বলে দেয় কোনো একটা সমস্যা হয়েছে। সমস্যাটা কী, আমি সেটা জানি না। কিন্তু এটা জানি, তাতে আমি জড়াতে চাই না।
মেয়েটা এবার বেশ ঝাঁজের সঙ্গেই বলল, ‘কেউ আমাকে বলছে না, ও কোথায় আছে। সবাই এমন একটা ভাব করছে, তারা জানে না। কিন্তু, আমার খুব জরুরি কিছু কথা আছে ওর সাথে। প্লিজ আমাকে বলো, কোথায় ও? আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, তোমাকে এর ভেতর জড়াব না। তুমি শুধু আমাকে এটুকু বলো, ও কোথায় আছে?’
‘সত্যিই আমি জানি না,’ তাকে বললাম, ‘অনেক দিন হয়ে গেছে, ওর সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নেই।’
আমার গলাটা নিজের গলা বলে মনে হচ্ছিল না। আমি যখন মিথ্যা কথা বলি, গলার স্বরটা অন্য রকম হয়ে যায়। আমি টের পাই।
হ্যাঁ, এটা সত্যি যে অনেক দিন তার সঙ্গে আমার ঠিকই যোগাযোগ হয়নি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে সে কোথায় থাকে সেটা আমি জানি না। আমি খুব সহজেই আমার বন্ধুর বাসার ঠিকানা, ফোন নম্বর মেয়েটাকে দিতে পারি। কিন্তু তার বদলে বললাম, ‘জানি না।’
সে কোনো উত্তর দিল না।
ফোনটা যেন জমে বরফ হয়ে গিয়েছিল।
তারপর একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটতে শুরু করল। শুধু ফোন নয়, আমার চারদিকের প্রত্যেকটা জিনিস একটু একটু করে বরফের মতো জমে যেতে শুরু করল।
নাহ। শীত শীত লাগছে। বরফ গলানোর জন্য বললাম, ‘তুমি বোধ হয় বিশ্বাস করছ না। কিন্তু আমি আসলেই কিছু জানি না। অনেক দিন ধরেই আমি ওর কোনো সাড়াশব্দ পাচ্ছি না।’
মেয়েটা হাসল।
‘হাসির মতো কিছু বললাম?’
‘তুমি এমন মজার কথা বলো! ও কি এমন মানুষ যে সাড়াশব্দ না দিয়ে থাকতে পারে?’
মেয়েটার কথা ঠিক। থাকে না কিছু মানুষ যারা কিছু করার আগেই অনেক বেশি সাড়াশব্দ দিয়ে ফেলে? ওই যে ‘খালি কলসি বাজে বেশি’ প্রবাদের মতো।
কিন্তু আমি এত বোকা নই যে মেয়েটা আমার সঙ্গে কথার খেলা খেলবে আর আমি ধুপ করে বলে দেব বন্ধুটা কোথায় আছে। অন্যের ব্যক্তিগত ঝামেলায় আমি জড়াতে চাই না। ইতিমধ্যে অনেকবার জড়িয়েছি। এর ফল আমার কাছে কখনো ভালো মনে হয়নি। আমি আসলে মাটির মধ্যে একটা গর্ত করতে চাই এবং সে গর্তে আমার জীবনের যত অপ্রয়োজনীয় ব্যাপার আছে, এই বন্ধুটার মতো, সেগুলোকে কবর দিতে চাই। কবর দেবার পরে, সেখানে একজন পাহারাদার নিয়োগ করতে চাই, যেন সেই কবর খুঁড়ে কেউ পুরোনো মড়াগুলো তুলে আনতে না পারে।
‘আমি আসলেই সরি। আমি জানি না।’
‘তুমি আমাকে একেবারেই পছন্দ করো না, না?’
এর মধ্যে পছন্দ করার ব্যাপার কোথা থেকে এল সেটা আমি ঠিক বুঝে পেলাম না। কিছু একটা হলেই মেয়েগুলো ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলের রাস্তা ধরে! উফ, আর পারি না এদের নিয়ে!
আমি মেয়েটাকে অপছন্দ করতাম না। আবার পছন্দ করার মতো কোনো চিন্তাভাবনাও আমার মাথায় আসেনি কখনো। সত্যি কথা বলতে কি, মেয়েটার ব্যাপারে আমার কোনো অনুভূতি কখনো কাজ করেনি। ভালো, খারাপ কিছু না।
‘আমি সরি। আমাকে রাখতে হবে, আমি আসলে রান্না করছি।’
‘কী রান্না করছ?’
‘স্প্যাগেটি।’
‘কী!’
‘কেন? রান্না করা যাবে না? স্প্যাগেটি রান্নার ব্যাপারে কি বিশেষ ধরনের কোনো নিষেধাজ্ঞা এসেছে? ’
আমি মিথ্যে বললাম কেন কে জানে। মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে আসলে। কিন্তু ব্যাপার হচ্ছে, আমি বলে ফেলেছি। এখন এটাকে আর ফিরিয়ে নেওয়া যাবে না। এটাকে যত দূর পারা যায় সত্যের রূপ দিতে হবে। সত্যি কথা বলতে কি, মিথ্যেটা আমার কাছে ঠিক মিথ্যা মনে হচ্ছে না।
আমি মনে মনে একটা কাল্পনিক পাত্র তুলে নিলাম। তারপর সেটা পানি দিয়ে ভরলাম। একটা কাল্পনিক ম্যাচ দিয়ে কাল্পনিক চুলা জ্বালালাম।
মেয়েটি অবাক হয়ে বলল, ‘তুমি স্প্যাগেটি রান্না করছ, এ কারণে কথা বলতে পারবে না?’
‘ঠিক তাই।’
কাল্পনিক কিছু লবণ হাতে তুলে নিলাম। তারপর ফুটন্ত পানিতে ছড়িয়ে দিলাম। মুঠোভর্তি কিছু কাল্পনিক স্প্যাগেটি পাত্রে ঢাললাম। এরপর আমার কল্পনার কিচেনের টাইমারটা এগারো মিনিটে সেট করলাম। আমি তো আগেই বলেছি, স্প্যাগেটি সেদ্ধ হবার সময় নিয়ে আমি আপসহীন।
মেয়েটাকে বললাম, ‘কথা বলতে একটু অসুবিধা হচ্ছে। তুমি তো জানো, ছেলেরা রান্নায় অত পটু হয় না। একটু এদিক-সেদিক হলেই আমার খাবারটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।’
মেয়েটা কিছু বলল না।
‘আমি আসলেই খুব সরি। কিন্তু তুমি জানো, স্প্যাগেটি রান্না করাটা একটু জটিল। বিশেষ করে একটা ছেলের জন্য।’
মেয়েটা এবারও চুপ করে রইল।
ফোন এবং ফোনের চারপাশের সবকিছু আবারো একটু একটু করে জমতে শুরু করল। জমাট বরফ।
বললাম, ‘তুমি কি আমাকে একটু পরে ফোন করতে পারবে?’
‘পরে কেন ফোন করব? এখন তুমি রান্না করছ, তোমার কথা বলতে অসুবিধা হচ্ছে, এ জন্য?’
‘একদম ঠিক ধরেছ।’
‘কার জন্য রান্না করছ? তোমার কোনো গেস্ট আছে? নাকি তুমি একা একা খাবে?’
‘গেস্ট কোত্থেকে পাব আমি? একাই খাব।’
দীর্ঘক্ষণ সে কোনো কথা বলল না। মনে হলো নিঃশ্বাস আটকে রেখেছে। তারপর ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস ছাড়ল। বলল, ‘তুমি আসলেই জানো না আমি কত বড় সমস্যার মধ্যে আছি! আমি জানি না আমি কী করব, কী করলে এই সমস্যা থেকে বের হতে পারব।’
‘যদি সাহায্য করতে পারতাম, তাহলে খুব খুশি হতাম। কিন্তু আমি তো বললাম, কিছু জানি না।’
‘দেখো, সমস্যাটা আসলে টাকাপয়সাকেন্দ্রিক।’
‘ও আচ্ছা।’
‘আমার কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিয়েছিল ও,’ সে বলল, ‘ধারটা আমার আসলে দেওয়া উচিত হয়নি। কিন্তু দিতে বাধ্য হয়েছিলাম।’
কাল্পনিক স্প্যাগেটি রান্না করতে করতে একটু থেমে গেলাম।
‘আমি সরি। আসলে এটা খুবই বাজে ব্যাপার হয়েছে। তোমার জন্য আসলেই খুব খারাপ লাগছে। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি, আমি তোমাকে আগেই বলেছি, এখন রান্না করছি। পরে যদি ফোন করতে!’
ওপাশ থেকে যেন একটা হাসির শব্দ শুনতে পেলাম। হাসিটা বিদ্রুপের কি না ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না।
‘ঠিক আছে, রাখছি। আমার পক্ষ থেকে তোমার মহান স্প্যাগেটিকে শুভেচ্ছা দিয়ো। আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করব, মহান স্প্যাগেটি যেন তোমার খাবার উপযোগী হয়ে ওঠে।’
‘বাই।’ ন্যূনতম সুযোগ না দিয়ে ফোনটা নামিয়ে রাখলাম।
তোশকের ওপর গিয়ে আবার শুয়ে পড়লাম। জানালা দিয়ে যে রোদটা আসছিল কিছুক্ষণ আগে, সেটা বেশ কয়েক ইঞ্চি সরে গেছে। রোদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শরীরের অবস্থান কিছুটা পরিবর্তন করতে হলো।
শুয়ে শুয়ে একটু ভাবলাম। মেয়েটার জন্য একটু কষ্টই হলো। আমার বোধ হয় মেয়েটাকে সত্য কথা বলা উচিত ছিল। কিছু কিছু মানুষ থাকে, যাদের ভেতরটা ফাঁপা। কিন্তু তারা যখন কোনো কিছু উপস্থাপন করে, খুব সুন্দরভাবে করতে পারে। সুতরাং ধান্দাবাজি করে বেঁচে থাকতে তাদের তেমন কোনো অসুবিধা হয় না। মেয়েটার বয়ফ্রেন্ড, মানে আমার বন্ধুটা ছিল সে রকম। আমরা বন্ধুরা বিষয়টা জানতাম। মেয়েটা জানত না। না জেনে বোকার মতো ছেলেটার প্রেমে পড়ে গিয়েছিল।
আহা! মেয়েটার অনেকগুলো টাকা গচ্চা গেল। নিশ্চয়ই অনেক কষ্টের টাকা। এই টাকা সে ফেরত পাবে তেমন কোনো সম্ভাবনা আমি দেখি না। মনটা একটু দুর্বল হয়ে এল।
পরে ফোন করতে বলেছিলাম। ভয়ে ছিলাম, কখন ও ফোন করে বসে। কিন্তু ও আর আমাকে ফোন করেনি। কখনো না। ওর কোনো খবরও আর পাইনি।

 


মেয়েটা কেন ফোন করল না? ও কি তবে হারিয়ে গেল? চিরতরে? শেষ বিকেলের দীর্ঘ ছায়া কি তাকে গিলে ফেলল? পুরো ব্যাপারটাতে আমি কি কোনোভাবে দোষী?
আমি জানি, আপনারা আমাকে দোষী ভাবছেন। কোনো না কোনোভাবে ভাবছেন। কিন্তু আমার অবস্থাটা একটু বুঝতে হবে আপনাদের। ওটা ছিল সেই সময়, যখন আমি কোনো ঝামেলায় জড়াতে চাইতাম না। সবকিছু থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চাইতাম। যে কারণে আমি জীবনে একটিমাত্র কাজ বেছে নিয়েছিলাম। তা হলো স্প্যাগেটি রান্না করা।

 


সেটা ছিল ১৯৭১ সাল। আমার স্প্যাগেটির বছর। পৃথিবীর অর্ধেক স্প্যাগেটি সে বছর আমি একাই রান্না করেছিলাম। সুদূর ইতালি থেকে আমদানি করা আমার মহান স্প্যাগেটি।
সে বছর জাপান আসলে ইতালি থেকে স্প্যাগেটি আমদানি করেনি। আমদানি করেছিল মুঠোভরা নিঃসঙ্গতা।

Header Ad
Header Ad

রাজধানীর ভাষানটেকে বস্তিতে আগুন

রাজধানীর ভাষানটেকে বস্তিতে আগুন। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর ভাষানটেকে বিআরপি বস্তিতে আগুন লেগেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় আগুনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় ফায়ার সার্ভিস।

ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের কর্মকর্তা তালহা জুবায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বেলা ১১টার দিকে আগুন লাগার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।

তবে প্রাথমিকভাবে আগুনের ক্ষয়ক্ষতি ও সূত্রপাত সম্পর্কে কোনো তথ্য জানাতে পারেননি তিনি।

এর আগে গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে রাজধানীর গাবতলীর শাহী মসজিদ বস্তিতে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। রাত ৩টার দিকে এ আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিটের প্রায় দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

Header Ad
Header Ad

সাবেক এমপি এম এ মালেক গ্রেপ্তার  

ঢাকা-২০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ মালেক। ছবিঃ সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত ও নিহতদের স্বজনদের দায়ের করা হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ও ঢাকা-২০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ মালেককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বুধবার (০৫ মার্চ) রাতে রাজধানীর মিরপুরে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহীনূর কবির গ্রেফতারের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেফতার এম এ মালেক ঢাকা-২০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং ধামরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।

পুলিশ জানায়, আন্দোলন চলাকালে হামলার ঘটনায় আহত ও নিহতদের স্বজনেরা একাধিক মামলা দায়ের করেছেন। এমন চারটি মামলার আসামি এম এ মালেক।

মামলা দায়ের হওয়ার পর থেকে তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছে পুলিশ। অবশেষে বুধবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর মিরপুরে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

শাহীনূর কবির গণমাধ্যমকে বলেন, আশুলিয়া থানার ছাত্র-জনতা হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি সাবেক সংসদ এম এ মালেককে বুধবার রাতে রাজধানীর মিরপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ধামরাই ও আশুলিয়া থানায় চারটি হত্যা মামলা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার রিমান্ড চেয়ে তাকে ঢাকার আদালতে পাঠানো হবে বলেও জানান তিনি।

Header Ad
Header Ad

৭ বছরের দণ্ড থেকে খালাস পেলেন তারেক রহমান-মামুন  

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন । ছবিঃ সংগৃহীত

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক মামলায় সাত বছরের দণ্ড থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে খালাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন এবং আইনজীবী সাব্বির হামজা চৌধুরী। দুদকের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আসিফ হাসান।

এর আগে ১০ ডিসেম্বর এ মামলায় মামুনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিলের অনুমিত দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে দণ্ড স্থগিত করা হয়। পরে মামুন আপিল করেন। গত মঙ্গলবার এ আপিলের ওপর শুনানি শেষ হয়।

২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় এ মামলাটি করে দুদক। এরপর ২০১০ সালের ৬ জুলাই তারেক রহমান ও গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করা হয়।

২০১১ সালের ৮ আগস্ট এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন আদালত।

মামলাটিতে ১৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়, যাদের মধ্যে চার্জশিটের বাইরের সাক্ষী হিসেবে ছিলেন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) এজেন্ট ডেবরা লেপরোভেট।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, টঙ্গীতে প্রস্তাবিত ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য নির্মাণ কন্সট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান খাদিজা ইসলামের কাছ থেকে গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৮৪৩ টাকা নেন। সিঙ্গাপুরে এ টাকা লেনদেন হয়।

এরপর মামুন ওই অর্থ সিঙ্গাপুরের ক্যাপিটাল স্ট্রিটের সিটি ব্যাংক এনএতে তার নামে ব্যাংক হিসাবে জমা করেন। এ টাকার মধ্যে তারেক রহমান তিন কোটি ৭৮ লাখ টাকা খরচ করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।

এ মামলায় ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দিয়ে গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে অর্থপাচার মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালত।

রায়ে কারাদণ্ডের পাশাপাশি মামুনকে ৪০ কোটি টাকা জরিমানাও করা হয়। পাচার করা ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৬১৩ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করারও নির্দেশ দেন আদালত।

এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর আপিল করে দুদক। ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি এ আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। পাশাপাশি গিয়াস উদ্দিন মামুনও আপিল করেন। দুই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ২১ জুলাই তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ২০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়।

একই মামলায় গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের সাত বছরের কারাদণ্ডের সাজা বহাল রাখেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আমির হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায় দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে গিয়াস উদ্দিন মামুন আপিল বিভাগে আবেদন করেন।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

রাজধানীর ভাষানটেকে বস্তিতে আগুন
সাবেক এমপি এম এ মালেক গ্রেপ্তার  
৭ বছরের দণ্ড থেকে খালাস পেলেন তারেক রহমান-মামুন  
বসুন্ধরা এলাকায় হামলা নিয়ে যা বললেন সারজিস আলম  
ইসরায়েলি পার্লামেন্টে ধস্তাধস্তি, দুই জন আহত  
ওয়ানডে থেকে অবসরের ঘোষণা মুশফিকের
অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র  
প্রকাশ্যে ধুমপান নিষিদ্ধের দাবিতে রাজধানীতে নারীদের মশাল মিছিল  
সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিন  
প্রোটিয়াদের হারিয়ে ফাইনালে ভারতের সঙ্গী নিউজিল্যান্ড  
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মাসুদ তালুকদারের পদ স্থগিত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: স্নাতক পাশ না করেও পেল প্রথম শ্রেণীর চাকরী  
সরকারি যানবাহনের চালকরা ট্রাফিক আইন অমান্য করছে : ডিএমপি  
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্ত্রী ও শ্যালিকাকে হত্যার ঘটনায় আদালতে স্বামীর স্বীকারোক্তি
টাঙ্গাইলে পাহাড়ের লাল মাটি কাটার অভিযোগে লাখ টাকা জরিমানা  
জাতিসংঘ মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে নয়, তবে বিচার হতে হবে : ভলকার তুর্ক  
রমজানে চুয়াডাঙ্গায় নিয়মিত বাজার মনিটরিং প্রয়োজন: ক্যাব
পবিত্র রমজানে কুবিতে মিলছে ১০ টাকায় ইফতার
নিত্যপণ্যের দাম আগের বছরের চেয়ে বাড়েনি: অর্থ উপদেষ্টা  
জোটে যাবে না এনসিপি, ৩০০ আসনে দেবে প্রার্থী