ইংরেজি বাবা, বাংলা কালন
১.
প্রতি বছরই বাংলা নববর্ষের আগের সন্ধ্যায় মা আর বাবা মিলে ওদের বন্ধুদের বাসায় বেড়াতে যায়। অনেক রাত পর্যন্ত সবাই মিলে খাওয়া-দাওয়া হয়। ম্যাক আর ম্যাকের বড় বোন সোহানা তখন মা-বাবার বন্ধুদের ছেলে-মেয়েদের সাথে মিলে খেলাধুলা করে। ম্যাকের আসল নাম রিজওয়ান রিজভি। ওর মা-বাবা ক্লাসমেট ছিল আর দু’জনেই মেট্রিকে পড়ার সময় টিভিতে ‘ম্যাকগাইভার’ দেখতো। দু’জনেরই ‘ম্যাকগাইভার’ খুব প্রিয় সিরিয়াল ছিল বলে প্রথমে মেয়ে বা ম্যাকের বড় আপা হবার দুই বছর পর ওর জন্ম হলে, একমাত্র ছেলের ডাক নাম তারা ‘ম্যাক’ রাখলেন। এসব গল্প মা-বাবাই কত করেন!
‘এই নববর্ষের আগের পার্টিটাই এখন যা একটু কম্ফোর্টেবল লাগে। তোমার বাংলা সাহিত্যের বন্ধুরা এখানে সব থাকে কিনা! তাই হেড কভার করে না গেলেও কেউ কিছু বলে না। মনে হয় সেই ক্যাম্পাস লাইফের মত শাড়ি পরে আর চুলে বেলী ফুলের মালা পরে যাচ্ছি। তোমার ফ্রেন্ডসদের ওয়াইফরা সব গান করে- ভালই লাগে!’
গত বছর বাবার ‘বাংলা সাহিত্য’ করা বন্ধু-বান্ধবীদের বাসায় যাবার সময় মা বলছিল। নববর্ষের আগের দিনটা- হ্যাঁ, কঠিন একটা নাম আছে- চৈত্র সনকা- ওই কি বলে বাংলা বছরের শেষ মাসের শেষ দিন ছিল। রিজভি বা ম্যাক বাংলা মাসগুলো কিছুই মনে রাখতে পারে না। কি করে রাখবে? সানি ডেল স্কুলে ক্লাস সেভেনে পড়ছে সে এখন। তার ডেস্ক ক্যালেন্ডারে ইংরেজি মাসের তারিখগুলোর পাশে বাংলা মাস বা তারিখ থাকলেও স্কুলের ক্লাস, এক্সাম, এক্সট্রা-কারিক্যুলার, তাদের দুই ভাই-বোন আর বাবা-মা’র বার্থ ডে বা ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি- সবই ত’ ইংরেজি তারিখে। ‘তুমি আর লিখলে না, না?’মা বলেছিল। ‘দু’টো একসাথে হয় না- তুমি আর আবৃত্তি করো?’ বাবা সেদিন নিজেই গাড়ি চালাচ্ছিল। ম্যাক আর সোহানার বাবা যে ঢাকার একজন বড় ডাক্তার সেটা তাদের স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরাও জানে। আর মা প্রাইভেট একটি ব্যাংকে ক্রেডিট সেকশনের প্রধান।
‘তোমার আম্মু এত বিউটিফুল- এত প্রেটি- মাশাল্লাহ!’ ম্যাককে তার স্কুলে বন্ধু-বান্ধবী বা শিক্ষকেরাও কখনো কখনো বলে। সত্যিই- ম্যাকের মা আর দশজনের মায়ের মত জাস্ট হাউসওয়াইফ নয়। যেদিন বাবা সময় পায় বাবা আর যেদিন মা সময় পায় সেদিন মা তাদের গাড়িতে করে স্কুলে পৌঁছে দেয়। ম্যাকের ব্যাংকার মা যে কোন সুন্দর সালোয়ার-কামিজের সাথে এক সাইডে ওড়না দিয়ে যখন বের হয়, তখন ম্যাকের বন্ধুরা যারা কেউ কেউ ধানমন্ডি লেকের পাড় দিয়ে ছুটির দিনে হাঁটার সময় ম্যাককে সিগারেট খেয়ে দেখতে বলে আর ম্যাক মা’র কাছে ধরা পাবার ভয়ে খায় না...তারা বলে, ‘ইওর মম লুকস লাইক ইওর এল্ডার সিস্টার- অ্যাট বেস্ট অ্যান ইয়াঙ্গার আন্ট। আ পার্মানেন্ট ছোট খালা হু নেভার এজেস!’
তা’ সেই ম্যাকের মা- ব্যাংকে যাবার সময় এক সাইডে ওড়না দিয়ে সালোয়ার-কামিজে, ছুটিতে দেশের বাইরে বা দেশের ইন্টিওরেই হিলি টেরাইনে ঘুরতে গেলে জিন্স আর ফতুয়া পরা মা- নববর্ষের আগের সন্ধ্যায় বাবা আর ওদের দুই ভাই-বোনের সাথে বাবার এক সময়ের ‘বাংলা সাহিত্য করা’ বন্ধুদের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার সময় শাড়ি আর বেলী ফুলের মালা পরা মা দুই সপ্তাহ আগে ম্যাকের এক কাজিন সিস্টারের বিয়েতে ‘মেহেন্দি ও সঙ্গীত’ অনুষ্ঠানে লেহেঙ্গা পরে হিন্দি গানের সাথে নাচলেও পরে রিলেটিভরা সব এত হিসিং করেছে যে সেই বিয়েরই বৌভাতের দিন মা প্রথম হিজাব পরেছিল। তবে হিজাবের সাথে টিকলিও পরেছিল।
‘বাব্বা- সবাই যা ক্রিটিক করছিল লেহেঙ্গা পরে নেচেছিলাম বলে! কেন বলিউডের ছবিতে ত’ দেখায় শাশুড়িরাও নাচে, তখন? তোমার মামাতো বোন তোমার চেয়ে পঁচিশ বছরের বড়- উনি শাশুড়ি বলে সাদা জামদানি আর সাদা হিজাব পরেছেন। কিন্ত ওনার আর আমার বয়স এক? ইন ফ্যাক্ট তোমার যে কাজিনের বিয়ে হলো- অনেক দেরিতে বিয়ে হলো- আমি তার চেয়েই বা কতটা বড়?’
বাবা মুচকি হেসে ড্রাইভ করতে করতে বলছিল, ‘বাট ইউ মেক মি প্রাউড- অলওয়েজ প্রাউড- ইউ লুকড ড্যাম বিউটিফুল ইভেন ইন হিজাব! ডিপ কোলস অন ইওর আইস, মাশকারা অন ইওর আইল্যাশেস, আ টিকলি অন হিজাব- আ কমপ্লিটলি মাইন্ড-ব্লোয়িং লুক- ইভেন ইউ ডোন লুক দ্যাট মাচ গর্জিয়াস ইন নর্ম্যাল অ্যাটায়ার- মানে যখন তোমার চুল খোলা থাকে তখনো এত গর্জিয়াস লাগে না!’
তা’ সেই ম্যাকের মা- ব্যাংকে যাবার সময় সালোয়ার-কামিজ, ছুটিতে দূরে কোথাও ঘুরতে গেলে জিন্স-ফতুয়া, বিয়ের অনুষ্ঠানে কখনো লেহেঙ্গা পরে নাচ আর কখনো লাল টকটকে হিজাবে গোঁজা টিকলির সাথে লাল ক্রেপ বেনারসি, লাল লিপস্টিক...ঠিকই মা গতবার বাংলা বছরের শেষ দিনে- চৈত্র সনকা- দূর, এ শব্দটা কখনো ম্যাকের মাথায় থাকে না- স্লিভলেস সবুজ গামছা চেকের ব্লাউজের সাথে সাদার উপর হাল্কা সবুজ ও গোলাপী চেকের একটি শাড়ি পরে বাবার পাশে বসে যেতে যেতে বলে,‘শাড়িটা কেমন হয়েছে?’‘দারুণ- মনে হচ্ছে ‘ছায়ানট’-এ গান গাইতে যাচ্ছ।’‘ওগুলো সব স্টুডেন্ট লাইফের কথা। গান না গাই, আবৃত্তি করতাম টিএসসি-তে। এখন ভুলেও গেছি। তবু যে বছরে একবার এখনো তুমি তোমার বাংলা সাহিত্য করা বন্ধুদের কাছে যাও-’‘হ্যাঁ- ওরা আমার প্রফেশনের নয় বলেই ওদের সাথেই প্রাণ খুলে আড্ডা দেয়া যায়-’‘এখানে হেড কভার না করলে কেউ কিছু বলে না।’ ‘হ্যাঁ- এখনো এই বাংলা সাহিত্য করা বন্ধুরা- কয়েকজন মাইনরিটি ফ্রেন্ডসও আসে এই চৈত্র সংক্রান্তির অনুষ্ঠানে-’কি বললো বাবা শব্দটা? ‘সনকা’- দূর! আবার ম্যাক ভুলে যায়। তবে বাবাও যে বাংলা সাল-তারিখ ম্যাকের চেয়ে বেশি জানে তা’ না। একবার ত’ মা’র সে কি টেনশন! ‘ও আল্লা- আজ পহেলা ফাল্গুন ভুলেই গেছিলাম। সালোয়ার-কামিজ পরে ফেলেছিলাম। বের হবার মোমেন্টসে ফিমেল কলিগসরা মেসেজে জানাচ্ছে যেন ইয়েলো শাড়ি পরে যাই। এত মনে থাকে? তুমিও যদি একটু মনে করাতে!’বাবা ব্রেকফাস্ট টেবলে বসে মাথা চুলকে বলেন, ‘মেডিক্যাল কলেজের ক্লাস, সন্ধ্যায় চেম্বারে এত পেশেন্ট! কিন্তু আজ যে পহেলা ফাল্গুন তা’ তুমি কনফার্ম ত’? ম্যাক- ড্রয়িং রুম থেকে পেপার নিয়ে এসো ত’!’ম্যাক ডেইলি স্টার আনলে বাবা ধমক লাগায়, ‘ছেলে-মেয়েদের ইংলিশ মিডিয়াম পড়ানোই ঠিক হয় নাই! বাংলা পেপারটা আনো।’ ম্যাক বাংলা পেপারটা আনলে বাবা পেপারের গায়ে ইংরেজির পাশে বাংলা তারিখ দেখে বললো, ‘হুম- আজই পহেলা ফাল্গুন!’ ‘কিন্তুÍ- ইংলিশ নিউজ পেপারেও বাংলা তারিখ থাকে ত’- জাস্ট ওরা রোমানে লেখে!’ চুপচাপ সোহানা বলেছিল ওর দুধ আর পিরিজ থেকে মুখ তুলে। কিন্তু এত কিছু কেন মনে করছে ম্যাক? খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সে গতবছরের চৈত্র সনকা- দূর- শব্দটি কিছুতে মুখস্থ’ হয় না তার- গতবছরের শেষ বাংলা দিনের সেলিব্রেশনে অনেক রাত পর্যন্ত বাবা-মা’র বন্ধুদের পার্টিতে কোন কোন আন্টি গান গাইলো, মা বাংলায় কবিতা পড়েছে, অনেক খাওয়া-দাওয়া হলো আর তারা দুই ভাই-বোন তাদের সমবয়সীদের সাথে খেলে একটু রাত করেই সবাই মিলে আবার গাড়ি করে ফিরল। সকালে আবার পহেলা বৈশাখের মিছিলেও যেতে হবে। কিন্তু অনেক রাতে কালবৈশাখীর ঝড় এসেছিল কিনা কে জানে? ম্যাকের মনে হলো ঘরের এসিটা হুট করে দশ গুণ ঠান্ডা লাগছে আর পাশের বেড থেকে সোহানা (ওরা দুই ভাই-বোন এক ঘরে পাশাপাশি বেডে ঘুমায় এখনো আর রাত-দিন মারামারি করে) উঠে একবার বুঝি ম্যাকের গায়ে ‘আড়ং’ থেকে কেনা একটি নকশি কাঁথা গুঁজে দিলে ঠান্ডাটা একটু কেটে ম্যাক আবার ঘুমিয়ে পড়েছিল।
‘সোহানা- ঘুম ভাঙ্গতে কি অনেক দেরি করছি?’ অন্য দশটা পহেলা বৈশাখের মত এবার সকালে গনগনে রোদ নয়, অনেক ঝড়ের পর ঠান্ডা আর খানিকটা মেঘলা একটি সকাল। ‘দ্যাখ- জানালার পাশের জারুল গাছটার ডাল উপড়ে গ্যাছে,’ সোহানা বললো। ‘আমরা কখন রেডি হব?’সোহানা ততক্ষণে দাঁত ব্রাশ করে আর মুখ ধুয়ে একটি সাদা-নীল সালোয়ার-কামিজ পরে রুম থেকে বের হচ্ছে। মা-বাবা তাদের রুম থেকে বের হচ্ছে। মা’র গায়ে তখনো হাউসকোট। রুমানার মা বুয়া এক ঝুড়ি কাঁচা আম সামনে এনে তার পান-জর্দা খাওয়া দাঁত মেলে হাসলো, ‘কাইল রাইতে ঝড়ে ম্যালা আম পড়ছে, আম্মা! কিন্ত একটা লোক গেটের কাছে আইসা ঘরের ভেতর ঢুকতে চাইতাছে।’‘এটা কোন কথা? মকবুলকে বললেই হয়! এত বেতন দিয়ে গার্ড রাখছি কেন?’মকবুলকে সামনে হাজির করা হলে সে অবশ্য মাথা চুলকে বলে, ‘যিনি আসছেন তিনি মনে হয় দরবেশ-ফকির কেউ হবেন!’‘হোয়াট? দরবেশ-ফকির হবে আর তাই তুমি তাকে নিচতলায় বাগানের ভেতর ঢুকতে দিচ্ছ?’‘লোকটা কাল অ্যাকসিডেন কইরা মাথায় ব্যান্ডেজ, রক্ত’-‘যাও- এত মুরগীর মত নরম মন নিয়া হাতে চুড়ি পরো- ‘বাবা চেঁচালে মা সাথে সাথে প্রটেস্ট করে, ‘ইউ মেন- অলওয়েজ টু মেল শভিনিস্ট-’‘রাখো- সবসময় জানো এক জেন্ডার। তোমার ইউএনডিপির বান্ধবীরা দেখি মাথা চিবিয়ে খেয়েছে একদম। বের হব পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান দেখতে তা’ না আবার কোন ঝামেলা শুরু হলো কে জানে!’‘এবার রোদ কম। যা ঝড় হলো, অনুষ্ঠান শুরু হতে-’‘ম্যাক- সোহানা- পাঁচ মিনিটে নিচে রেডি হয়ে নামবি। আর ঐ দরবেশ না ফকিরকে কয়েকটা টাকা দিয়ে বিদায় করতে হবে।’
২.
‘কে আপনি? কি চান?’‘ কিছু ত’ চাই না বাবা-’‘কিছু চান না? তাহলে আমার বাসার সামনে কি?’‘ঐ কাল রেইতে খুব ঝড়-বিষ্টির ভিতর শওরের (শহরের) এদিকটায় প্রথম আসিচি।’‘দেশ কোথায় আপনার?’‘কুষ্টে। কুষ্টের মেহেরপুর- নবগঙ্গার তিরিতে (তীরে) আমাদের একটা আখড়া ছেলো।’‘আপনি বাউল?’‘হাঁ- বাবা- ত’ ঐ মাসখানেক হয় আমাদের আখড়া কারা কারা- গুন্ডা লোকজন সব লাঠি-সোটা নিয়ে আসি ভাঙ্গি দেলো। কয় আমরা শরা-শরিয়ত কিচু মানি নে- সমাজের আচার-বিচার মানি নে- একতারা-দোতারা সব ভাঙ্গি দেলো- মাথার চুল-দাড়ি বুড়ো বয়সে সব কাটি ফেললো!’‘তারপর?’‘তাপ্পড় আর কি? ঘুরতি ঘুরতি আর এই শওরে- দিন পনেরো হাইকোর্টের মাজারের ওখানটায় ছেলাম। তা’ কাজ-কর্ম, আয়-বাণিজ্য কিচু ত’ নাই। কাল হাঁটতি হাঁটতি শওরের এদিকটা আসতি এক গাড়ির সাতে লাগলো ধাক্কা। মাতাটা কাটলি পর এক ওষুদির দোকান থেকে মাথা বান্ধি দিলো। টাকা-পয়সা কিচু নিলো না। বুড়ো মানুষ- কাজ-কাম যদি কিচু পাতাম!’‘আপনার নাম?’‘কালন। কালন শা।’‘আপনাকে যে কাজ দেব, কি কাজ করতে পারেন?’‘বাগানির কাজ করতি পারব। আপনার এত বড় বাগান!’বাবা-মা এ ওর দিকে তাকালো। ‘স্ট্রেঞ্জ! আজিজ হ্যাজ এসকেপড আস টু ডেইজ অ্যাগো অ্যান্ড গড সেন্ডস হিম অল অন আ সাডেন!’মা হাসি হাসি মুখে বলে। সত্যিই- মাত্র দু’দিন আগেই আজিজ মালী বাসার কিছু জিনিষ-পত্র চুরি করে পালিয়েছে। একটা জিডিও করা হয়েছে পাশের থানায়। সেই থেকে গত একটা বছর হয় কালন শা আছে তাদের সাথে। আর কালন শা আছে বলেই না চারপাশটা হুট করে বদলে গেল ম্যাকের। এই যেমন গত বছর পহেলা বৈশাখেই সারা রাত ঝড়ের পর মা ভাবছে যে বের ত’ তারা সবাই হচ্ছে কিন্তু আবার না ঝড়-বৃষ্টি হয়, তখন কালন শা বলে কি, ‘না- মা- এখন রোদ উটবি। বের হতি সমস্যা হবে না।’ ‘রোদ উঠবে? এত ঝড়-বৃষ্টির পর?’‘হ্যাঁ- ঐ যে বাতাস মেঘ কাটি সরায়ি দিতিচে- একটু পরই রোদ উটবি।’ ঠিক ঠিক কালনের কথায় বাতাসে মেঘ কেটে গিয়ে রোদ উঠলো। তার দু’দিন পরেই সন্ধ্যার একটু আগে বা দুপুরের শেষে যখন ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো, ম্যাকের মনে হলো সে আর সোহানা যে ভেবেছিল ছাদে উঠে সেদিন আকাশের তারা দেখবে মা-বাবাকে লুকিয়ে- তা’ আর হবে না। কালন শা কিন্তু শুনে একটু হেসে বলে কি, ‘তারা উঠবি- ভয় করো না। বিষ্টি আর অবেনানে।’ ঠিক কালনের কথা ফললো। এ ঘটনায় ম্যাক ত’ ম্যাক, সোহানও কৌতূহলী হয়ে পড়লো। ‘আমি ত’ তোমাদের মত ইঞ্জিরি পড়া মানুষ না! ইঞ্জিরি পড়লি লোকে গাড়ি-ঘোড়া চাপে, ডাক্তার-এঞ্জিনীয়ার হয়। কিন্তু কোনো মেগ এখুনি কাটি গিয়ি রোদ উঠবি আর কখুন বিষ্টির পর আবার তারা ফুটবি তা’ ভুলি যায়। তা’ আর তারা শিকি উটতি পারে না। ‘
ম্যাক আর সোহানা ফ্যালফ্যাল করে এ ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। জীবনে এই প্রথম তারা শুনলো যে ইংরেজি পড়লে মানুষ গাড়ি-ঘোড়া চাপতে বা ডাক্তার-ইঞ্জিনীয়ার হতে পারলেও মেঘ-বৃষ্টি-তারাদের অচেনা রহস্য জানতে পারেনা। অথচ, বাবা-মা তাদের দুই ভাই-বোনকে নিজেদের ভেতর ভুলেও বাংলা বলতে শুনলেও রাগ করে! এত টাকা খরচ করে তাদের ইংরেজি পড়ানো হচ্ছে কেন? বাবা-মা বাংলা মিডিয়ামে পড়েই তাই কিনা নিজেদের চেষ্টায় ভাল ইংরেজি শিখে আর একজন ডাক্তার ও অন্যজন ব্যাংকার হয়ে এখন আশি ভাগ সময় নিজেদের ভেতর ইংরেজিতে কথা বলে। সরকারি বাংলা স্কুলে মা-বাবাদের নাকি মাসে পাঁচ টাকা বেতনে পড়া হয়ে যেত যেখানে কিনা ম্যাক আর সোহানাকে এক/এক মাসেই বেতনই লাগে দুই ভাই-বোনের জন্য সত্তর হাজারের মত। তার উপর টিউশনি-কোচিং, খাতা-কলম, স্কুল ড্রেস-ক্লাস পার্টি- এত খরচের পর ম্যাক-সোহানা যদি দিনের একশো ভাগ সময়ই ইংরেজি না বলে তাহলে কীভাবে চলে? খরচ ওঠে? আজকের গ্লোবাল কম্পিটিশনে তারা কিছু করে উঠতে পারবে? অথচ কোত্থেকে এই কালন বুড়োটা এসে বাগানের কাজ নিয়ে বলছে যে বাংলা না শিখলে মেঘ-বৃষ্টি-তারাদের কথা জানা যায় না।
‘কিন্তু বাংলা শেখার কথা আমাদের যে কেউ বলে না!’
‘সে বাংলা গরীবির ভাষা। তা’ আপনারা ত’ সাহেব-মেম। বলেন ত’ আজ যষ্টি (জ্যৈষ্ঠ) মাসের কত তারিখ?’
কালন মালী বলে বাগানের গাছে গাছে ওয়াটার স্প্রে করার ফাঁকে ফাঁকে। জ্যৈষ্ঠ মাসের কত তারিখ? দূর- এটা মনে রাখা যায় নাকি? সোহানাকে ‘ছায়ানট’-এ ভর্তি করানোর পর থেকে সে পহেলা আষাঢ়, পহেলা শ্রাবণ, পহেলা আশ্বিন, হেমন্তের প্রথম দিন বা পহেলা ফাল্গুনও মনে রাখতে পারছে- ওই দিনগুলোয় ওদের অনেক প্রোগ্রাম হয়। মা-বাবা কখনো কখনো সময় পেলে যায়। তাই বলে জ্যৈষ্ঠের কত তারিখ?’‘আজ তিরিশ তারিখ,’ নির্বিকার মুখে একটি নিড়ানী দিয়ে বাগানের ঘাস নিড়াতে নিড়াতে বলে কালন শা। সোহানা এক দৌড়ে বাংলা আর ইংরেজি পেপার দু’টোই নিয়ে এলো। কালন শা’র বলা তারিখ ঠিকই মিলে গেছে।
‘দিজ বাউল পিপল অ্যাকচ্যুয়ালি নো আ লট। দে ডু মেডিটেশনস- ইউ নো ম্যাক?’---সোহানার ইংরেজি বুঝুক বা না বুঝুক, কালন শা গোলাপ গাছের চারায় খানিকটা সেদ্ধ চা পাতা ঢেলে দিতে দিতে বলে, ‘না- বাংলা মাস শুদু আমি কেন- এ বাড়ির যারাই কাজ করে, তারা সবাই জানে।’ দেখা গেলো কথা সত্যি। রুমানার মা বুয়া, কালন মালী থেকে মকবুল গার্ড বা বিজন ড্রাইভার- সবাই বাংলা মাস ততটাই সড়গর যতটা ম্যাক, সোহানা, তাদের বাবা-মা, বন্ধু আর বন্ধুদের মা-বাবারা ইংরেজি মাসের সব সন-তারিখে সড়গর। ‘আচ্ছা- আমাদের সামনে ত’ ক্যালেন্ডার থাকে বলে আমরা তারিখে ভুল করিনা। কিন্তু তোমরা কি করে ক্যালেন্ডার ছাড়াই বাংলা মাসের সন-তারিখ সব মনে রাখো?’
রুমানার মা বুয়া একথার উত্তর এক গাল হেসে ঝটপট দিয়ে দিলো, ‘আপনাগো আম্মা যেমন ঐ সব ফরেন রান্না- কি কয় জানি- হ্যাঁ- পিজা-পাস্তা- সব বিদিশি রান্না পাকায় আর আমরা গরীব মানষি- শীতির দিনি আমারেই সব পিঠা বানাতি হয় না আপনাগের জন্যি? তেমন! গরীবির দিন-তারিখ সব ত’ বাংলা মাস আর মুখস্থ করিই জানতি হয়। বড়লোকের ইংরিজি তারিখ!’
৩.
করোনা যখন শুরু হয়, হুট করে দেখা গেল কালন শা একদিন বেশ কয়েকটা তুলসী গাছের চারা নিয়ে এসেছে। এখন ত’ তাকে বাগানের জন্য নানা চারা আনার কাজে নিয়মিত টাকাই দেয়া হয়। মা তখন মাত্রই প্রথম দফা করোনা থেকে উঠেছে। বাবার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো, ‘আই হ্যাভ নো প্রেজুডিস। দিস তুলসী ইজ আ মেডিসিনাল হার্ব, আই নো! কিন্তু আম্মা- তোমার মা’র কথাই ভাবছি- শি ইজ স্টিল লিভিং। উই প্রে অর মিস ইট, ফাস্ট অর মিস ইট, শি স্টিল অফারস সালাত ফাইভ টাইমজ আ ডে অর কিপস ফাস্টিং থার্টি ডেইজ অন আ রো! এখন- এই তুলসী চারাগুলো রাখব?’বাবা চিন্তিত মুখে বললো, ‘আম্মার জন্যই আরো বেশি দরকার- শি হ্যাজ ক্রসড এইটিজ। উই মে স্টিল ফাইট উইথ করোনা বাট হার চান্সেস আর মাচ থিনার দ্যান আস টু সার্ভাইভ। বা”চারও আছে। এর পাতা-’
‘হুম- আমাদের স্কুলে পড়তো বনরূপারা- বাসার পাশেই ওদের বাসা ছিল। ওর মা এই তুলসী, গাঁদা, জবা সহ কত ফুল যে ফোটাতো- ভাল ত’- আমাদের হাত-পা কেটে গেলে দূর্বা ঘাস থেঁতো করে- দারুণ এন্টি-সেপটিক!’তা’ মা ভাল হতে না হতেই ম্যাক আর সোহানার করোনা হলো। কালন ফকির তুলসী পাতা তুলে দিলে রুমানার মা বুয়া সেটা ছেঁচে তার সাথে মধু দিয়ে ম্যাক আর সোহানাকে খেতে দিতো। দু/দু’বার করোনায় ভুগতে হলো বলেই তাদের দুই ভাই-বোনকেই ফার্স্ট, সেকেন্ড এমনকি থার্ড ডোজ ভ্যাক্সিনও দেয়ানো হলো- এই বয়সেই! কিন্তু থার্ড ডোজ দেবার পর থেকে কি যে হলো ম্যাকের- সারা গায়ে এলার্জি! বাবা- শহরের নামী ডার্মেটোলজিস্ট- ভ্যাক্সিনের সাথে এলার্জির কোনো সম্পর্ক হেসে উড়িয়ে দিলেন। জিরিল, অ্যালসেট ট্যাবলেট আর জেনোবেট মলম দেয়া হলো ম্যাককে। ডান ও বাম দুই উরু ও পা, দুই হাতের কনুই পর্যন্ত এলার্জি থেকে পিঠেও খানিকটা- অসহ লাগে ম্যাকের। মা বকাবকি করে, ‘এফএফসিতে গেলেই তুই টানা কোক গিলতে থাকিস আর তারপর ওয়াশরুমে যেতে হয়। পুরুষদের ওয়াশরুম গুলো- বয়ষ্ক পুরুষদের কত বিচ্ছিরি বিচ্ছিরি রোগ আছে! ওদের কমোড ইউজ করে মনে হয় এটা হয়েছে।’
এলার্জিতে মাঝে মাঝে রাতে ঘুমাতেও পারেনা ম্যাক। এক দুপুরে কালন ফকির কোথা থেকে কয়েকটি পাতা সুদ্ধ নিমের ডাল আর কাঁচা হলুদ এনে রুমানার মা বুয়াকে বললো বেটে ম্যাককে দিতে। ম্যাক গায়ে মাখলে অনেকটা আরাম পাবে। ‘ওষুধ ত’ খাচ্ছিই। এটা কি দেব?’‘দে। হি- দ্যাট কালন হ্যাজ সাম ম্যাজিক্যাল পাওয়ার, ইউ নো?’ সোহানা ফিসফিস করে বলে। তা’ বাবার ওষুধ হোক আর কালনের এনে দেয়া নিম পাতার গুণেই হোক, মাস তিনেকের ভেতর অ্যালার্জি থেকে একটু সেরে উঠতে না উঠতেই মা’র উদ্ভট অসুখ শুরু হলো। এক সামার ভ্যাকেশনের দুপুরে- তাদের স্কুল বন্ধ থাকলেও মা-বাবার অফিস খোলা ছিল- মা ব্যাংক থেকে ফিরে এলো তার হলদে সালোয়ার উপচে থক থক রক্তের অসংখ্য চাকা গড়াচ্ছে এমন চেহারায়। সেই শুরু হলো। প্রতি মাসে দু’দিন মা ব্যাংকে যেতে পারে না। মেয়েদের ‘পিরিয়ড’ বলে একটি জিনিস হয় বলে হালে ক্লাসে সিগারেট খাওয়া সহ বড়দের সব কাজে এগিয়ে থাকা কয়েকটি ছেলে ম্যাককে বলছিল বটে- কিন্তু তার এত ভয়াবহ চেহারা হতে পারে সে জানত না। মাসের ওই দু’টা দিন মা কাটা মুরগীর মত চেঁচায়। মা’র ঘরে অসংখ্য এক্সর্ট্রা লার্জ স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্যাকেট থাকে- আটটা/দশটা প্যাকেট মুহূর্তে খালি হয়ে যায়- বাড়ির সবাই জেনে গেছে! ম্যাক নিজেই লজ্জার পরোয়া না করে যখন তখন বাড়ির ডিসপেন্সারিতে দৌড়ায়। এই বয়সেই মেয়েদের স্যানিটারি ন্যাপকিনের সব ব্র্যান্ড সে চিনে গেছে। মা’র ওয়াশ রুমে...মা’র তখন ধুম জ্বর ওঠে আর কমোডে ফ্লাশ করার ক্ষমতাও থাকে না- তারা দুই ভাই-বোন মা’র ওয়াশ রুম বা বাবা-মা’র বেড রুমেও দ্যাখে কখনো কখনো মেঝে ভরে গেছে থকথকে রক্তের একের পর এক চাকতিতে। বাবা তার গাইনীর বন্ধুদের কাছে নিয়ে গিয়েও কাজ হলো না। সামনে চেন্নাই যাবে না ব্যাংকক ঠিক করা হচ্ছে। গত সপ্তাহে ছোট মামা আর সেজ খালা মা’কে দু’ব্যাগ ব্লাড ট্রান্সফিউশন দিলো। ‘শি হ্যাজ বিকাম এক্সট্রিমলি এনিমিক। হার হিমোগ্লোবিন লেভেল ইজ টু পুওর। শি মে কল্যাপ্স এনি ডে।’
বাসায় রোজ কচুর শাক, খাসীর কলিজা, দুধ...মা’কে খাওয়ানো হচ্ছে আর মা ফ্যাকাশে, সাদা হতে হতে ওদের দুই ভাই-বোনের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘চেন্নাই বা ব্যাংকক গিয়ে যদি আর না ফিরি- তোরা ঘরে কোনো নতুন মা এলে ভালো ভাবে থাকিস- ঝগড়া করবি না সারাদিন!’ম্যাক আর সোহানা হাউমাউ করে কান্না শুরু করে আর বাবা আশপাশে থাকলে জোরে ধমক দেয়, ‘এসব কি উইয়ার্ড কথা-বার্তা?’ তারপরই মা’র পিঠে হাত বুলিয়ে বলে, ‘হ্যাভ পেশেন্স। আমি সরকারি মেডিক্যাল কলেজের টিচার না? ভিসা নিয়ে এত ভোগান্তি যে বলার না!’‘যা হবার তা’ ত’ হবেই। মনকে শক্ত করছি। ইফ আই অ্যাম টু পাস বাই ফর্টি-ফাইভ...’‘আরে- ইউটেরিন ফাইব্রোয়েড কোনো ব্যাপার না আজকাল। এদেশে সার্জারি করতে বলছে। আমরা দেখি বাইরে গিয়ে নন-ইনভেসিভ সার্জারি করাতে পারি কি না! আপাতত: ব্লাড ট্রান্সফিউশন চলুক।’ঠিক তেমন এক ব্লাড ট্রান্সফিউন নেয়া ধূসর, বিমর্ষ সন্ধ্যায় কালন ফকির এসে মা’র ঘরের পর্দার ওপাশে দাঁড়িয়ে একটু কাশে। বাবা বাসায় ছিল সেই সন্ধ্যায়। ‘কি ব্যাপার? কিছু বলবে?’‘এই অশোক গাছের ছাল আনছি। এইটা জাল দিয়া রস খাওয়ালি মহিলাদের সব মেয়েলি সমস্যা কাটি যায়।’‘ওফ-এত পেইনের ভেতর আবার! বড় বড় ডাক্তাররা যা পারছে না- এই বাগানের কাজ করতে দেওয়া হয়েছে, সেটাই করেন- যান!’পরদিন সকালে বাবা মেডিক্যাল কলেজ গেলেই ম্যাক আর সোহানা ছুটে যায় কালনের কাছে। সে তার গাঁটরি-বোঁচকা গোছাচ্ছিল। ‘কই যাবে তুমি?’‘কুষ্টে। আমার আখরার এক গুরুভাই পত্র দিয়িচে- আখরা আবার মেরামত হয়িচে।’‘তুমি আমাদের ছেড়ে যাবে?’‘লক্ষী মানিক- এক জাগায় কারো বেশিদিন থাকতি আচে?’‘মা’র ওই ওষুধটা দাও না!’‘না- আমি মুখ্যু মানুষ। ইঞ্জিরি পড়ি নাই।’
‘ইঞ্জিরিতে কোন ওষুধ সারে না- ফকির বাবা! আমরা আসলে কিচ্ছু শিখি নাই। রাদার উই হ্যাভ ফরগটেন এভরি থিং’- সোহানা হেঁচকি তুলে কাঁদতে থাকে। তারপর দুই হাত জোড় করে বলে, ‘প্লিজ- ফরগিভ আস- ফরগিভ আওয়ার ফাদার। আপনি যাবেন না। আপনি না থাকলে মা’কে কেউ ভালো করতে পারবে না।’ কালন ফকির ম্যাক আর সোহানার মাথায় হাত রেখে গাছের কালো বাকলের মতো দেখতে কি জিনিষ অনেকটা ওদের দুই ভাই-বোনের হাতে দিয়ে বললো, ‘একে বলে অশোক বৃক্ষের ছাল। রুমানার মা বুয়াকে এটা গরম পানিতি ফুটিয়ি মা’কে খাওয়াতে বললি মা ক’দিনিই সুস্থ হয়ি যাবি। ঠিক আচে?’‘তুমি যাবেই?’ ম্যাক কালন শাহর মোটা কাপড়ের বিবর্ণ পাঞ্জাবির খুঁট ধরে টান দেয়।‘যাই গো বাবা- যাই মামণি- তুমিও ত’ মা হবে এককালে। নারী জন্ম বড় কষ্টের জন্ম। মা হবার অনেক দায়। এই অশোক বৃক্ষ নারীকে সর্বংসহা হতি সাহায্য করে। জয় রাধা-গোবিন্দ! জয় বিবি ফাতিমা, জয় আল্লার রসুল! আসি গো!’
সেই অশোকের ছাল গরম পানিতে ফুটিয়ে খাওয়াতে খাওয়াতে মা সত্যিই সেরে উঠেছিল। চেন্নাই বা ব্যাংকক কোথাও যেতে হয়নি। কিন্তু ম্যাক আর তার বোন সোহানারও আজকাল ভারি ভয় করে। মেঘ ও বাতাসের কথা, নক্ষত্রদের কথা, তুলসী-নিম-অশোক বৃক্ষের ওষধি গুণের কথা জানা ওই মিস্টিক, ম্যাজিক্যাল ওল্ড ম্যান বাবার কথাতেই বোধ হয় রাগ করে হারিয়ে গেছে! মা’র অসুক যদি আবার ফিরে আসে! ইফ ইট রিকারস? আফটার অল উই ক্যান হ্যাভ লটস অফ মানি-কার-অ্যাপার্টমেন্ট অ্যান্ড ডিগ্রিস উইথ ইংলিশ। বাট উই হ্যাভ অ্যাকচ্যুয়ালি ফরগটেন এভরিথিং।‘জেই উবলিয়ে তুত সা!’ সোহানা পেন্সিল কামড়ে ধরে ওর দাঁতে। ‘মিনিং?’‘তুই ত’ থার্ড ল্যাঙ্গোয়েজ স্প্যানিশ নিলি আর আমি ফ্রেঞ্চ। আমি- আমরা সব ভুলে গেছি, ম্যাক! আমরা সব ভুলে গেছি।’
আরএ/