রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৭ পৌষ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-২০

যারা যুদ্ধ করেছিল

মজনু বলে, ‘আমরা তো আগে এক পাকিস্তান ছিলাম। তাইলে তাদের সঙ্গে আমাদের যুদ্ধ হচ্ছে কেন?’
মমিন বলে, ‘শোন, পাকিস্তান হওয়ার লগে লগে তারা আমাদের দাবিয়ে রাখা শুরু করে। প্রথমে হাত দেয় আমাদের ভাষার উপর। আমরা বাঙালিরা সংখ্যায় বেশি। বেশি মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। অথচ পাকিস্তানের গর্ভনর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্না ঢাকায় এসে ঘোষণা দেয় ‘উর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।’ আর যায় কোথায়? শুরু হয় বাংলা ভাষার দাবিতে ভয়ংকর আন্দোলন। সেই আন্দোলনে আমাদের কয়েকজর বাঙালি শহীদ হয়। সেই থেকে আমরা ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস পালন করি।
তারপর ধর পাট উৎপাদন হয় আমাদের দেশে। সেই পাট চলে যায় পশ্চিম পাকিস্তান। যত কলকারখানা সব ওই প্রদেশে। সেনাবাহিনী সব বড় পদে ওরা চাকরি করে। আমাদের কোন বড় পদে চাকরি দেয় না। এই ধরনের বৈষম্যের প্রতিবাদে ১৯৬৬ সালে ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম পাকিস্তানের লাহোরে সম্মিলিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ মজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ৬ দফা দাবি পেশ করেন।
পরবর্তী কালে এই ৬ দফা দাবিকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতির স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের জন্য এই আন্দোলন এতই গুরুত্বপূর্ণ যে একে ম্যাগনা কার্টা বা বাঙালি জাতির মুক্তিসনদও বলা হয়।
‘ম্যাগনা ফাটা না কী যেন কইলেন, সেটা আবার কী?’

মজনুর প্রশ্নে মমিন হো হো করে হেসে ওঠে। পরক্ষণে নিজেই নিজের মুখ চেপে ধরে। তারা এখানে আত্মগোপনে আছে। সেটা জানাজানি হয়ে গেলে তাদেরই মহাবিপদ। মমিন নিচু গলায় বলে, ‘ম্যাগনা ফাটা না। ম্যাগনা কার্টা। এটা হলো রাজার ক্ষমতা খর্ব করার আইন। আগে তো পৃথিবীর সব দেশে রাজতন্ত্র ছিল। দেশের সব ক্ষমতা ছিল রাজার হাতে। পাবলিকের কোনো ক্ষমতা ছিল না। ১২১৫ সালে ইংল্যান্ডের রাজা আর সামন্তদের মধ্যে এই ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যে চুক্তির ফলে সাংবিধানিক শাসনের সূচনা হয়। এরই নাম ম্যাগনা কার্টা।’
‘যা বলছিলাম’, মমিন আবার বলতে শুরু করে। ‘৬ দফা পেশ করার পর থেকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের মাথা খারাপ হয়ে যায়। সে পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে যেখানে পায় সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা শুরু করে। সেই থেকে বঙ্গবন্ধুর জেলজীবন শুরু। এমনও হয়েছে যে, জামিন পেয়ে জেলখানা থেকে বেরোনোর পর জেলগেটে তাকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারপরও তাঁকে দমাতে যায়নি। অবশেষে সামরিকজান্তা ১৯৬৮ সালে জানুয়ারি মাসে তিনিসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ দিয়ে তার মুখ বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।’
‘সেটা আবার কী?’ মজনু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে।
মমিন বলে, ‘পাকিস্তানিরা মামলায় অভিযোগ করে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে কয়েকজন সামরিক এবং বেসামরিক ব্যক্তি সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পূর্ববাংলাকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এই মামলার নাম আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। ষড়যন্ত্রটা নাকি হয়েছিল আগরতলায়। তাই এর নাম আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। গোপনে এই বিচারকার্য শরু হয়। তারা এই মামলায় শেখ মুজিবকে শাস্তি দেওয়ার গোপন ষড়যন্ত্র করতে থাকে। আর এদিকে বাঙালি জাতি তাতে ফুঁসে ওঠে। ছাত্ররা ১১ দফা আন্দোলন শুরু করে। তারা আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলে। ঢাকা শহর হয়ে পড়ে মিছিলের শহর। মিছিলে মিছিলে রাজপথ উত্তাল। গণআন্দোলনে নতি স্বীকার করে আইয়ুব খান আগরতলা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে। শেখ মুজিবসহ সকল বন্দিদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
তারপর ২৩ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে রেসকোর্স ময়দানে বিশাল গণসংবর্ধনার আয়োজন করে। লক্ষ জনতার সেই সভায় ডাকসুর ভিপি তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন। সেই থেকে আমরা শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু বলি।
পূবর্ পাকিস্তানে তখন আন্দোলন দাবানলের মতো চারদিকে ছড়িয়ে যাচ্ছিল। আইয়ুব খান কোনো উপায় না দেখে সেনাপতি ইয়াহিয়া খানের কাছে ক্ষমতা দিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যায়। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় বসেই সাধারণ নির্বাচন দেওয়ার ঘোষণা দেন। সেই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করে। কিন্তু ইয়াহিয়া খান ও জুলফিকার আলী ভুট্টো ষড়যন্ত্র করে বঙ্গবন্ধুর হাতে ক্ষমতা না দেওয়ার ফন্দি আঁটতে থাকে। সংসদের মিটিং ডেকে সেই মিটিং আবার ক্যানসেল করে দেয় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। এই খবর ঢাকায় পৌঁছলে ঢাকার মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। ঢাকা তখন মিছিলে মিছিলে সয়লাব হয়ে যায়। তারপর আসে ৭ মার্চ। রেসকোর্স ময়দানে অগ্নিঝরা ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু। আমি নিজে সেই ভাষণ শুনেছি। ভাষণ শুনে আমার শরীর দিয়ে মনে হয় আগুন বেরুচ্ছিল। মূলতঃ সেই ভাষণ শুনেই আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছি।
এদিকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় আসেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেন। আলোচনা কিছু না। গোপনে গোপনে অস্ত্র আনতে থাকে বাঙালিকে শায়েস্তা করার জন্য। যেদিন ইয়াহিয়া খান ঢাকা ত্যাগ করে সেই রাতেই অর্থাৎ ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি মিলিটারিরা নিরস্ত্র বাঙালির উপর ঝাপিয়ে পড়ে। তারা এই অপারেশনের নাম দেয় ‘অপারেশন সার্চ লাইট।’ তারা রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা ইপিআর ক্যাম্প এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল আক্রমণ করে নির্বিচারে বাঙালি নিধন করতে থাকে। তার আগে ২৫ মার্চ গভীর রাতে মিলিটারিরা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের আগে ইপিআরের ওয়ারলেসের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং দেশের স্বাধীনতা না পাওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতা যেমন তাজউদ্দিন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আহমেদ, কামরুজ্জামানসহ অন্য নেতারা প্রবাসী সরকার গঠন করেন। তাজউদ্দিন আহমদ হন প্রধানমন্ত্রী এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। তারা তরুণদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে আহ্বান জানালে সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে তরুণরা দলে দলে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিতে থাকে। মোটামুটি এই হলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অংশ নেওয়ার ঘটনা।

মজনু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, ‘তাহলে তো ঠিকই আছে। বলা যায় যুদ্ধ করা আমাদের ফরজ হয়ে গেছে।’
‘তুমি ঠিকই বলেছ। আমাদের সব তরুণ যুবকের জন্য মুক্তিযুদ্ধ ফরজ হয়ে গেছে। এমন কি যুবক হয়েও যারা যুদ্ধে অংশ নেয়নি তারাও রাজাকারের সামিল।’
‘তাইতো। এখনতো আমার মনে হচ্ছে আমি ঠিক কামটাই করছি। আমার মনোবল আরও বাইড়া গেল ওস্তাদ।’
‘তোর মতো মনোবল যদি সবার থাকত তাহলে পাকিস্তানি মিলিটারি বাপ বাপ করে এ দেশ থেকে পালাত। অথচ দুঃখের বিষয় কি জানিস, আমাদেরই কিছু জাত ভাই তাদের পেছনে হেইও দিচ্ছে।’
‘এই জন্যে রাজাকার পাইলে আমার মাথায় আগুন চইড়া যায় ওস্তাদ। আমি ওদের বেয়োনেট দিয়া খোঁচাইয়া খোঁচাইয়া মারি।’
তাদের আলোচনার মাঝে বাড়ির মালিক হরমুজ মিয়া ঢুকে পড়ে রুমে। লোকটি অতি সরল। মাথায় সারাক্ষণ টুপি। মুখে লম্বা দাড়ি। অতিরিক্ত পান খাওয়ায় সবগুলো দাঁতই লাল। ঠোঁটজোড়াও লাল টুকটুকে। দেখতে খারাপ লাগে না। তার আকস্মিক রুমে ঢুকে পড়ায় মমিন মাথা তুলে বাঁকা দৃষ্টিতে তাকায়।
হরমুজ মিয়া দম নিয়ে ভয়ার্ত মুখে বলে, ‘একজন আপনার সাথে দেখা করতে আইছে।’
মমিন জিজ্ঞেস করে, ‘কে?’
‘আমাদের গাঁয়েরই একজন মহিলা।’
‘কী চায় সে?’
হরমুজ মিয়া বেড়ার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ঝুনুর মা, কী কইবা কয়া ফালাও।’
ঘরটি টিনের ছাউনি। কিন্তু বেড়া পাটশোলার। বেড়ার আড়াল থেকে ঝুনুর মা কান্না গলায় বলে, ‘আমি আপনাদের কাছে বিচার দিবার আইছি।’
‘কীসের বিচার?’ মমিন জিজ্ঞেস করে।
‘ঝুনুর মা কান্না গলায় বলে, ‘আমার জামাই আমারে খালি মারে।’
প্রশ্ন শুনে মজনু ফিক করে হেসে ফেলে। মমিনের মুখেও হাসি চড়েছিল। কিন্তু সে হাসি অবদমন করে। কারো দুঃখ নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করা ঠিক না।
মমিন বলে, ‘এটাতো আমাদের বিচার করার কাজ না। আপনার জামাই যদি রাজাকার হতো তাহলে এতক্ষণ তাকে আমরা ধরে এনে ঝুলাতাম। তো আপনার স্বামী কি রাজাকার?’
‘রাজাকার হলে আর বিচার দিতে আসতাম না। আমি নিজেই তারে ঘুমের মধ্যে জবাই কইরা দিতাম।’
মমিন বিস্ময়ে হতভম্ব হয় ঝুনুর মায়ের কথা শুনে। রাজাকারদের প্রতি তার এত ঘৃণা। মমিন বলে, ‘তাহলে আমাদের আপনি কী করতে বলেন?’
‘আপনারা তারে ডাইকা একটু ভয় দেখাইবেন। যাতে যখন তখন আমার গায়ে হাত না তোলে।’
হঠাৎ মজনু কথা বলে ওঠে। বলে, ‘আমরা মিছেমিছি ভয় দেখাই না। ডাইরেক্ট অ্যাকশনে যাই। বুঝছেন কিছু। ডাইরেক্ট অ্যাকশন মানে গলা কাইটা দেই।’
মমিন মৃদু স্বরে ধমক দেয় মজনুকে। বলে, ‘এভাবে কথা বলছ কেন? চুপ থাক।’ মমিন মহিলাকে বুঝিয়ে বলে, ‘দেখুন এটা আমাদের কাজ না। এই ধরনের কাজ করে গ্রাম্য প্রধান বা মাতব্বররা। আমরা আরও বড় কাজের জন্য ঝাড়-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছি। আপনি যান।’

মহিলা এবার কাঁদতে শুরু করে। কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘আমি এতিম। আমারে মাইরা কাইটা ফালাইলেও কেউ দেখার নাই। গাঁয়ের মাতবরদের কাছে কত বিচার দিছি। বিচার তো করেই নাই। উল্টো আমার কপালে শণির দশা হয়। মাইর আরও বেশি কইরা দেয়। আমার আর জানে কুলায় না।’
মমিন এবার ভাবনায় পড়ল। মহিলার জন্য কিছু করতেও পারছে না। তাকে ধমক দিয়ে চলে যেতে বলবে, তাও পারছে না। উভয় সংকটে মমিন।
মজনু বলে, ‘ওস্তাদ মহিলার জন্য আমার খুব মায়া হইতাছে। ব্যাটারে ধইরা আইনা সাইজ কইরা দেই।’
‘না।’ মমিন ধমকে ওঠে।
মহিলার কান্না বন্ধ হচ্ছে না। এবার গলা চড়িয়ে কান্না শুরু করে সে।
মমিন বাড়ির মালিক হরমুজ চাচাকে ডেকে মহিলাকে চলে যেতে বলেন। হরমুজ নিজেও তার পক্ষে সাফাই গায়। বলে, ‘আপনারা কিছু একটা করেন।’
মমিন এবার বিস্ময়ে হরমুজের দিকে তাকিয়ে থাকে। মজনু উঠে দাঁড়ায়। বলে, ‘ওস্তাদ, আমি গেলাম। ব্যাটারে ডাইকা আনি। তারপর আপনি দুই কথা কয়া দিয়েন।’ মজনু আর পারমিশনের অপক্ষো না করে বেরিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর একজন একহারা গড়নের লোককে সঙ্গে নিয়ে রুমে ঢোকে। বয়স চল্লিশের ঘরে। হ্যাংলা পাতলা। দেখেই বোঝা যায় শরীরে পুষ্টির অভাব।
মমিন লোকটিকে দেখে ভাবে কী বলবে তাকে। সে লোকটিকে বসতে বলে। ঘরে একটি টুল ছিল সেটা টেনে নিয়ে সেখানেই বসে লোকটি।
‘নাম কী?’ মমিন জিজ্ঞেস করে।
লোকটি খুব স্বাভাবিকভাবে বলে, ‘হাকিম।’
‘কী করেন?’
‘পাইট খাটি।’
‘কী খাটেন?’
বাড়িওলা হরমুজ বলে, ‘কামলা খাটে। খুবই গরিব। জমি-জমা নাই। সারাদিন কামলা খাইটা যা পায় তাই দিয়া সংসার চালায়।’
‘তাহলে সমস্যাটা কোথায়?’ মমিন কণ্ঠ চড়িয়ে বাড়িওলা হরমুজ চাচাকে কথাটা জিজ্ঞেস করে। হরমুজ চাচা জবাব দিতে আটকে যায়। মমিন এবার হাকিমকে জিজ্ঞেস করে, ‘কোন দোষে আপনি আপনার বউয়ের গায়ে হাত তোলেন?’
‘কে বলল আমি আমার বউয়ের গায়ে হাত তুলি?’
‘সবাই বলে। এই যে হরমুজ চাচা সেও বলে। আপনার বউ বলে গেছে। বলেন, ‘কেন মারেন লক্ষ্মী বউটাকে?’ মমিনের কণ্ঠ চড়ে গেলে হাকিম ভয় পেয়ে মাথা নিচু করে থাকে। কথা বলে না। মমিন ধমকে ওঠে। বলে, ‘কথা বলছেন না কেন? কথা কিন্তু আমরা বাইর করতে জানি। বাইর করমু কথা?’
মজনু ভেংচিয়ে বলে, ‘এখন চামচিকা সাজছ। মুখ দিয়া কথা বাইর হইতাছে না। বউটারে দুর্বল পায়া তার সামনে সিংহ সাজ। ওস্তাদ অর্ডার দেন, ব্যাটারে হাল্কা সাইজ কইরা দেই। যাতে জীবনে আর বউয়ের গায়ে হাত না তোলে।’
অবস্থা বেগতিক দেখে হাকিম ছুটে এসে মমিনের পা জড়িয়ে ধরে। বলে, ‘আমারে মাফ কইরা দেন। আমি আর বউরে মারমু না।’
মমিন বলে, ‘সত্যি কইরা বলেন তো, আপনি কেন মারেন বউটাকে?’
মমিন বাধ্য করে বলতে। হাকিম তোতলিয়ে বলে, ‘ভুল দেখলে মাথায় রক্ত চইড়া যায়।’
‘কী ভুল?’
‘রান্ধার ভুল। তরকারিতে খাবলা খাবলা নুন দিয়া রাখে। কইলেও ঠিক হয় না।’
‘তাই বলে লাঠি দিয়া পিটাইবেন?’ সে মানুষ না?’
‘আমার ভুল অয়া গেছে। আমারে মাফ কইরা দেন। আমি আর বউরে মারমু না।’
‘আপনার চোখ বলছে আপনি মিছা কথা কইতাছেন। এখন থেকে মাথায় রক্ত চড়লে মাটির দিকে তাকিয়ে থাকবেন। দেখবেন রাগ পানি হয়ে গেছে। মনে থাকবে? শোনেন, আমরা কিন্তু এই এলাকায় থাকব। আবার যদি শুনি বউয়ের গায়ে হাত তুলছেন তাইলে কিন্তু নির্ঘাত মৃত্যু। কেউ আপনাকে রক্ষা করতে পারবে না।’
‘জি। আর মারমু না।’
‘এবার যান।’ লোকটি ঘর থেকে বের হয়ে দ্রুত পায়ে বাড়ির দিকে যায়।
মমিন বলে, ‘মজনু। লোকটাকে ফলো কর। দেখ সে পাকিস্তানি ক্যাম্পের দিকে যায় কি না।’
মমিন বলার পর চাদরের নিচে স্টেনগান নিয়ে মজনু বেরিয়ে যায়।

বি.দ্র. ইসহাক খানের ‘যারা যুদ্ধ করেছিল’ উপন্যাসটি এবারের একুশে বইমেলায় মাওলা ব্রাদার্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে। উপন্যাসটি ‘মাওলা ব্রাদার্স’ এর স্টল থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন পাঠকরা।

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>
যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-১৯

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-১৮

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-১৭

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব- ১৬

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব- ১৫

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-১৪

Header Ad
Header Ad

  সংকট কাটছে, মেট্রোর যাত্রীদের সুখবর দিল ডিএমটিসিএল

ছবি: সংগৃহীত

সিঙ্গেল জার্নির টিকিট নিয়ে সমস্যা চলছিল রাজধানীর মেট্রোরেলে। এবার মেট্রোরেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) জানিয়েছে, এই সংকট কেটে যাচ্ছে। মেট্রোরেলের সিঙ্গেল জার্নির টিকিট সংকট আর থাকছে না।

শনিবার (২১ ডিসেম্বর) প্রতিষ্ঠানটি তাদের ফেসবুক পেজে করা এক স্ট্যাটাসে এ সুখবরের কথা জানায়।

স্ট্যাটাসে বলা হয়, মেট্রোরেলের সম্মানিত যাত্রীদের জন্য সুসংবাদ। মেট্রোলের সম্মানিত যাত্রীদের জানানো যাচ্ছে যে, ২১ ডিসেম্বর থেকে মেট্রোরেল স্টেশনগুলো থেকে চাহিদামতো সিঙ্গেল জার্নি টিকিট বিক্রয় করা হচ্ছে।

এতে আরও বলা হয়, পাশাপাশি র‍্যাপিড পাসও বিক্রয় এবং রিচার্জ করা হচ্ছে। এমআরটি পাসও রিচার্জ করা হচ্ছে। আপনারা সানন্দে মেট্রোরেল ভ্রমণ করুন। এছাড়া ডিএমটিসিএল পরিবারের পক্ষ থেকে সবার সার্বিক সহযোগিতার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।

প্রসঙ্গত, এর আগে মেট্রোরেলের ভাড়া পরিশোধের কার্ডের সংকটে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে যাত্রীদের। একক যাত্রার কার্ড না থাকায় অনেক স্টেশন থেকে যাত্রীদের ফিরে যেতে হয়েছে। আবার সরবরাহ না থাকায় স্থায়ী কার্ড বা এমআরটি পাস বিক্রিও একেবারে বন্ধ ছিল।

Header Ad
Header Ad

অনূর্ধ্ব-১৯ নারী এশিয়া কাপ:

ভারতের বিপক্ষে ১১৮ রান করলেই এশিয়া কাপ ঘরে উঠবে বাংলাদেশ

ছবি: সংগৃহীত

চলতি মাসেই ছেলেদের অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশের যুবারা। এবার অনূর্ধ্ব-১৯ নারী এশিয়া কাপের ফাইনালে মুখোমুখি বাংলাদেশ-ভারত। যেখানে আগে ব্যাট করা ভারত গোঙ্গাদি তৃষার ফিফটিতে টাইগ্রেসদের ১১৮ রানের লক্ষ্য দিয়েছে ভারত। বাংলাদেশি পেসার ফারজানা ইয়াসমিন সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট নিয়েছেন।

অনূর্ধ্ব-১৯ নারী এশিয়া কাপের পুরো আয়োজন হয়েছে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে। একই ভেন্যু বায়েওমাস স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চলছে শিরোপানির্ধারণী ম্যাচ। টস জিতে এদিন ভারতকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠান বাংলাদেশ অধিনায়ক সুমাইয়া আক্তার। শুরু থেকেই ভারতীয়দের চেপে ধরেন বাংলাদেশি বোলাররা। একের পর এক উইকেট তুলে নিলেও একপ্রান্ত আগলে রেখে ভারতকে লড়াকু পুঁজি এনে দেন তৃষা।

বিস্তারিত আসছে.......

Header Ad
Header Ad

বিরামপুরে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ

শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ। ছবি: সংগৃহীত

দিনাজপুর জেলার বিরামপুরে উপজেলা বিএনপি, পৌর বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের আয়োজনে ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে বিরামপুর পাইলট হাইস্কুল মাঠে দুস্থ শীর্তাতদের মাঝে কম্বল বিতরণ করেন প্রধান অতিথি বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

শনিবার (২১ ডিসেম্বর) বিকালে বিরামপুর পাইলট হাইস্কুল মাঠে এই শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

পৌর বিএনপি’র সভাপতি হুমায়ূন কবিরের সভাপতিত্বে ও পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজু'র সঞ্চালনায় দুস্থ শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। এসময় বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন, দিনাজপুর জেলা বিএনপির সদস্য ও নবাবগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মকবুলার রহমান গোর্কি, দিনাজপুর জেলা বিএনপির অন্যতম সদস্য তোছাদ্দেক হোসেন তোছা,উপজেলা বিএনপি সভাপতি মিজ্ঞা শফিকুল ইসলাম মামুন প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে বিরামপুর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও মুকুন্দপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জোবয়াদুর রহমান জুয়েল,উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব এ‍্যাড. মিঞা শিরন আলম, বিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মমতাজুল হক, পৌর যুবদলের আহ্বায়ক জীবন চৌধুরী শাহীন, পৌর যুবদলের সদস্য সচিব পলাশ বিন আশরাফী পলাশ সহ বিরামপুর উপজেলা বিএনপি,পৌর, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড বিএনপি এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতা-কর্মীবৃন্দ'র পাশাপাশি স্থানীয় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

অপরদিকে বিরামপুর উপজেলা পলিপ্রায়গ ইউনিয়নের টাটকপুর মাদ্রাসা মাঠে উপজেলা বিএনপি সভাপতি মিজ্ঞা শফিকুল ইসলাম মামুনের সভাপতিত্বে ও বিরামপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর এলাহী চৌধুরী রুবেল'র সঞ্চালনায় ছিন্নমূল, অসহায়, হতদরিদ্র ও দুস্থদের মাঝে প্রধান অতিথি বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন শীতবস্ত্র কম্বল বিতরণ করেন।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

  সংকট কাটছে, মেট্রোর যাত্রীদের সুখবর দিল ডিএমটিসিএল
ভারতের বিপক্ষে ১১৮ রান করলেই এশিয়া কাপ ঘরে উঠবে বাংলাদেশ
বিরামপুরে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ
টাঙ্গাইলে আ.লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আলীম আটক
শেখ হাসিনা নিজ হাতে তার বাবাকে দ্বিতীয়বার হত্যা করেছে: গয়েশ্বর
চুয়াডাঙ্গায় অবৈধ যানবাহন বন্ধ না হলে গণপরিবহন বন্ধের ঘোষণা
জুমার দিনে ফিলিস্তিনের মসজিদে আগুন দিল ইসরায়েলিরা
গাইবান্ধায় বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষ, আহত অন্তত ১০
আশ্বস্ত করছি বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দেবে না: প্রধান উপদেষ্টা
সত্যি কি থাপ্পড় মেরেছিলেন শাহরুখ, ৯ বছর পর মুখ খুললেন হানি সিং
মেয়ে থেকে ছেলেতে রূপান্তর, বগুড়ার শ্রাবণী এখন শ্রাবণ
বাড়ি ফেরার পথে সড়কে ঝরে গেল বাবা-ছেলের প্রাণ
ছাত্রলীগ নেতা মুক্তাদির শিক্ষার্থীদের হাতে আটক, থানায় সোপর্দ
এ দেশে মেজরিটি–মাইনরিটি বলে কিছু নেই: জামায়াতের আমির
আজ বছরের দীর্ঘতম রাত, সবচেয়ে ছোট দিন আগামীকাল
রাজনীতিবিদকে বিয়ে করতে চান ফারজানা সিঁথি
গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা পেয়েছে কমিশন
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ
পাকিস্তানে জঙ্গি হামলায় ১৬ সেনা নিহত
বাধ্যতামূলক অবসরপ্রাপ্ত সচিব ইসমাইল বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার