রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-২০

যারা যুদ্ধ করেছিল

মজনু বলে, ‘আমরা তো আগে এক পাকিস্তান ছিলাম। তাইলে তাদের সঙ্গে আমাদের যুদ্ধ হচ্ছে কেন?’
মমিন বলে, ‘শোন, পাকিস্তান হওয়ার লগে লগে তারা আমাদের দাবিয়ে রাখা শুরু করে। প্রথমে হাত দেয় আমাদের ভাষার উপর। আমরা বাঙালিরা সংখ্যায় বেশি। বেশি মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। অথচ পাকিস্তানের গর্ভনর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্না ঢাকায় এসে ঘোষণা দেয় ‘উর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।’ আর যায় কোথায়? শুরু হয় বাংলা ভাষার দাবিতে ভয়ংকর আন্দোলন। সেই আন্দোলনে আমাদের কয়েকজর বাঙালি শহীদ হয়। সেই থেকে আমরা ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস পালন করি।
তারপর ধর পাট উৎপাদন হয় আমাদের দেশে। সেই পাট চলে যায় পশ্চিম পাকিস্তান। যত কলকারখানা সব ওই প্রদেশে। সেনাবাহিনী সব বড় পদে ওরা চাকরি করে। আমাদের কোন বড় পদে চাকরি দেয় না। এই ধরনের বৈষম্যের প্রতিবাদে ১৯৬৬ সালে ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম পাকিস্তানের লাহোরে সম্মিলিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ মজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ৬ দফা দাবি পেশ করেন।
পরবর্তী কালে এই ৬ দফা দাবিকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতির স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের জন্য এই আন্দোলন এতই গুরুত্বপূর্ণ যে একে ম্যাগনা কার্টা বা বাঙালি জাতির মুক্তিসনদও বলা হয়।
‘ম্যাগনা ফাটা না কী যেন কইলেন, সেটা আবার কী?’

মজনুর প্রশ্নে মমিন হো হো করে হেসে ওঠে। পরক্ষণে নিজেই নিজের মুখ চেপে ধরে। তারা এখানে আত্মগোপনে আছে। সেটা জানাজানি হয়ে গেলে তাদেরই মহাবিপদ। মমিন নিচু গলায় বলে, ‘ম্যাগনা ফাটা না। ম্যাগনা কার্টা। এটা হলো রাজার ক্ষমতা খর্ব করার আইন। আগে তো পৃথিবীর সব দেশে রাজতন্ত্র ছিল। দেশের সব ক্ষমতা ছিল রাজার হাতে। পাবলিকের কোনো ক্ষমতা ছিল না। ১২১৫ সালে ইংল্যান্ডের রাজা আর সামন্তদের মধ্যে এই ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যে চুক্তির ফলে সাংবিধানিক শাসনের সূচনা হয়। এরই নাম ম্যাগনা কার্টা।’
‘যা বলছিলাম’, মমিন আবার বলতে শুরু করে। ‘৬ দফা পেশ করার পর থেকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের মাথা খারাপ হয়ে যায়। সে পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে যেখানে পায় সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা শুরু করে। সেই থেকে বঙ্গবন্ধুর জেলজীবন শুরু। এমনও হয়েছে যে, জামিন পেয়ে জেলখানা থেকে বেরোনোর পর জেলগেটে তাকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারপরও তাঁকে দমাতে যায়নি। অবশেষে সামরিকজান্তা ১৯৬৮ সালে জানুয়ারি মাসে তিনিসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ দিয়ে তার মুখ বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।’
‘সেটা আবার কী?’ মজনু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে।
মমিন বলে, ‘পাকিস্তানিরা মামলায় অভিযোগ করে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে কয়েকজন সামরিক এবং বেসামরিক ব্যক্তি সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পূর্ববাংলাকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এই মামলার নাম আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। ষড়যন্ত্রটা নাকি হয়েছিল আগরতলায়। তাই এর নাম আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। গোপনে এই বিচারকার্য শরু হয়। তারা এই মামলায় শেখ মুজিবকে শাস্তি দেওয়ার গোপন ষড়যন্ত্র করতে থাকে। আর এদিকে বাঙালি জাতি তাতে ফুঁসে ওঠে। ছাত্ররা ১১ দফা আন্দোলন শুরু করে। তারা আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলে। ঢাকা শহর হয়ে পড়ে মিছিলের শহর। মিছিলে মিছিলে রাজপথ উত্তাল। গণআন্দোলনে নতি স্বীকার করে আইয়ুব খান আগরতলা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে। শেখ মুজিবসহ সকল বন্দিদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
তারপর ২৩ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে রেসকোর্স ময়দানে বিশাল গণসংবর্ধনার আয়োজন করে। লক্ষ জনতার সেই সভায় ডাকসুর ভিপি তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন। সেই থেকে আমরা শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু বলি।
পূবর্ পাকিস্তানে তখন আন্দোলন দাবানলের মতো চারদিকে ছড়িয়ে যাচ্ছিল। আইয়ুব খান কোনো উপায় না দেখে সেনাপতি ইয়াহিয়া খানের কাছে ক্ষমতা দিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যায়। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় বসেই সাধারণ নির্বাচন দেওয়ার ঘোষণা দেন। সেই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করে। কিন্তু ইয়াহিয়া খান ও জুলফিকার আলী ভুট্টো ষড়যন্ত্র করে বঙ্গবন্ধুর হাতে ক্ষমতা না দেওয়ার ফন্দি আঁটতে থাকে। সংসদের মিটিং ডেকে সেই মিটিং আবার ক্যানসেল করে দেয় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। এই খবর ঢাকায় পৌঁছলে ঢাকার মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। ঢাকা তখন মিছিলে মিছিলে সয়লাব হয়ে যায়। তারপর আসে ৭ মার্চ। রেসকোর্স ময়দানে অগ্নিঝরা ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু। আমি নিজে সেই ভাষণ শুনেছি। ভাষণ শুনে আমার শরীর দিয়ে মনে হয় আগুন বেরুচ্ছিল। মূলতঃ সেই ভাষণ শুনেই আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছি।
এদিকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় আসেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেন। আলোচনা কিছু না। গোপনে গোপনে অস্ত্র আনতে থাকে বাঙালিকে শায়েস্তা করার জন্য। যেদিন ইয়াহিয়া খান ঢাকা ত্যাগ করে সেই রাতেই অর্থাৎ ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি মিলিটারিরা নিরস্ত্র বাঙালির উপর ঝাপিয়ে পড়ে। তারা এই অপারেশনের নাম দেয় ‘অপারেশন সার্চ লাইট।’ তারা রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা ইপিআর ক্যাম্প এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল আক্রমণ করে নির্বিচারে বাঙালি নিধন করতে থাকে। তার আগে ২৫ মার্চ গভীর রাতে মিলিটারিরা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের আগে ইপিআরের ওয়ারলেসের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং দেশের স্বাধীনতা না পাওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতা যেমন তাজউদ্দিন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আহমেদ, কামরুজ্জামানসহ অন্য নেতারা প্রবাসী সরকার গঠন করেন। তাজউদ্দিন আহমদ হন প্রধানমন্ত্রী এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। তারা তরুণদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে আহ্বান জানালে সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে তরুণরা দলে দলে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিতে থাকে। মোটামুটি এই হলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অংশ নেওয়ার ঘটনা।

মজনু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, ‘তাহলে তো ঠিকই আছে। বলা যায় যুদ্ধ করা আমাদের ফরজ হয়ে গেছে।’
‘তুমি ঠিকই বলেছ। আমাদের সব তরুণ যুবকের জন্য মুক্তিযুদ্ধ ফরজ হয়ে গেছে। এমন কি যুবক হয়েও যারা যুদ্ধে অংশ নেয়নি তারাও রাজাকারের সামিল।’
‘তাইতো। এখনতো আমার মনে হচ্ছে আমি ঠিক কামটাই করছি। আমার মনোবল আরও বাইড়া গেল ওস্তাদ।’
‘তোর মতো মনোবল যদি সবার থাকত তাহলে পাকিস্তানি মিলিটারি বাপ বাপ করে এ দেশ থেকে পালাত। অথচ দুঃখের বিষয় কি জানিস, আমাদেরই কিছু জাত ভাই তাদের পেছনে হেইও দিচ্ছে।’
‘এই জন্যে রাজাকার পাইলে আমার মাথায় আগুন চইড়া যায় ওস্তাদ। আমি ওদের বেয়োনেট দিয়া খোঁচাইয়া খোঁচাইয়া মারি।’
তাদের আলোচনার মাঝে বাড়ির মালিক হরমুজ মিয়া ঢুকে পড়ে রুমে। লোকটি অতি সরল। মাথায় সারাক্ষণ টুপি। মুখে লম্বা দাড়ি। অতিরিক্ত পান খাওয়ায় সবগুলো দাঁতই লাল। ঠোঁটজোড়াও লাল টুকটুকে। দেখতে খারাপ লাগে না। তার আকস্মিক রুমে ঢুকে পড়ায় মমিন মাথা তুলে বাঁকা দৃষ্টিতে তাকায়।
হরমুজ মিয়া দম নিয়ে ভয়ার্ত মুখে বলে, ‘একজন আপনার সাথে দেখা করতে আইছে।’
মমিন জিজ্ঞেস করে, ‘কে?’
‘আমাদের গাঁয়েরই একজন মহিলা।’
‘কী চায় সে?’
হরমুজ মিয়া বেড়ার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ঝুনুর মা, কী কইবা কয়া ফালাও।’
ঘরটি টিনের ছাউনি। কিন্তু বেড়া পাটশোলার। বেড়ার আড়াল থেকে ঝুনুর মা কান্না গলায় বলে, ‘আমি আপনাদের কাছে বিচার দিবার আইছি।’
‘কীসের বিচার?’ মমিন জিজ্ঞেস করে।
‘ঝুনুর মা কান্না গলায় বলে, ‘আমার জামাই আমারে খালি মারে।’
প্রশ্ন শুনে মজনু ফিক করে হেসে ফেলে। মমিনের মুখেও হাসি চড়েছিল। কিন্তু সে হাসি অবদমন করে। কারো দুঃখ নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করা ঠিক না।
মমিন বলে, ‘এটাতো আমাদের বিচার করার কাজ না। আপনার জামাই যদি রাজাকার হতো তাহলে এতক্ষণ তাকে আমরা ধরে এনে ঝুলাতাম। তো আপনার স্বামী কি রাজাকার?’
‘রাজাকার হলে আর বিচার দিতে আসতাম না। আমি নিজেই তারে ঘুমের মধ্যে জবাই কইরা দিতাম।’
মমিন বিস্ময়ে হতভম্ব হয় ঝুনুর মায়ের কথা শুনে। রাজাকারদের প্রতি তার এত ঘৃণা। মমিন বলে, ‘তাহলে আমাদের আপনি কী করতে বলেন?’
‘আপনারা তারে ডাইকা একটু ভয় দেখাইবেন। যাতে যখন তখন আমার গায়ে হাত না তোলে।’
হঠাৎ মজনু কথা বলে ওঠে। বলে, ‘আমরা মিছেমিছি ভয় দেখাই না। ডাইরেক্ট অ্যাকশনে যাই। বুঝছেন কিছু। ডাইরেক্ট অ্যাকশন মানে গলা কাইটা দেই।’
মমিন মৃদু স্বরে ধমক দেয় মজনুকে। বলে, ‘এভাবে কথা বলছ কেন? চুপ থাক।’ মমিন মহিলাকে বুঝিয়ে বলে, ‘দেখুন এটা আমাদের কাজ না। এই ধরনের কাজ করে গ্রাম্য প্রধান বা মাতব্বররা। আমরা আরও বড় কাজের জন্য ঝাড়-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছি। আপনি যান।’

মহিলা এবার কাঁদতে শুরু করে। কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘আমি এতিম। আমারে মাইরা কাইটা ফালাইলেও কেউ দেখার নাই। গাঁয়ের মাতবরদের কাছে কত বিচার দিছি। বিচার তো করেই নাই। উল্টো আমার কপালে শণির দশা হয়। মাইর আরও বেশি কইরা দেয়। আমার আর জানে কুলায় না।’
মমিন এবার ভাবনায় পড়ল। মহিলার জন্য কিছু করতেও পারছে না। তাকে ধমক দিয়ে চলে যেতে বলবে, তাও পারছে না। উভয় সংকটে মমিন।
মজনু বলে, ‘ওস্তাদ মহিলার জন্য আমার খুব মায়া হইতাছে। ব্যাটারে ধইরা আইনা সাইজ কইরা দেই।’
‘না।’ মমিন ধমকে ওঠে।
মহিলার কান্না বন্ধ হচ্ছে না। এবার গলা চড়িয়ে কান্না শুরু করে সে।
মমিন বাড়ির মালিক হরমুজ চাচাকে ডেকে মহিলাকে চলে যেতে বলেন। হরমুজ নিজেও তার পক্ষে সাফাই গায়। বলে, ‘আপনারা কিছু একটা করেন।’
মমিন এবার বিস্ময়ে হরমুজের দিকে তাকিয়ে থাকে। মজনু উঠে দাঁড়ায়। বলে, ‘ওস্তাদ, আমি গেলাম। ব্যাটারে ডাইকা আনি। তারপর আপনি দুই কথা কয়া দিয়েন।’ মজনু আর পারমিশনের অপক্ষো না করে বেরিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর একজন একহারা গড়নের লোককে সঙ্গে নিয়ে রুমে ঢোকে। বয়স চল্লিশের ঘরে। হ্যাংলা পাতলা। দেখেই বোঝা যায় শরীরে পুষ্টির অভাব।
মমিন লোকটিকে দেখে ভাবে কী বলবে তাকে। সে লোকটিকে বসতে বলে। ঘরে একটি টুল ছিল সেটা টেনে নিয়ে সেখানেই বসে লোকটি।
‘নাম কী?’ মমিন জিজ্ঞেস করে।
লোকটি খুব স্বাভাবিকভাবে বলে, ‘হাকিম।’
‘কী করেন?’
‘পাইট খাটি।’
‘কী খাটেন?’
বাড়িওলা হরমুজ বলে, ‘কামলা খাটে। খুবই গরিব। জমি-জমা নাই। সারাদিন কামলা খাইটা যা পায় তাই দিয়া সংসার চালায়।’
‘তাহলে সমস্যাটা কোথায়?’ মমিন কণ্ঠ চড়িয়ে বাড়িওলা হরমুজ চাচাকে কথাটা জিজ্ঞেস করে। হরমুজ চাচা জবাব দিতে আটকে যায়। মমিন এবার হাকিমকে জিজ্ঞেস করে, ‘কোন দোষে আপনি আপনার বউয়ের গায়ে হাত তোলেন?’
‘কে বলল আমি আমার বউয়ের গায়ে হাত তুলি?’
‘সবাই বলে। এই যে হরমুজ চাচা সেও বলে। আপনার বউ বলে গেছে। বলেন, ‘কেন মারেন লক্ষ্মী বউটাকে?’ মমিনের কণ্ঠ চড়ে গেলে হাকিম ভয় পেয়ে মাথা নিচু করে থাকে। কথা বলে না। মমিন ধমকে ওঠে। বলে, ‘কথা বলছেন না কেন? কথা কিন্তু আমরা বাইর করতে জানি। বাইর করমু কথা?’
মজনু ভেংচিয়ে বলে, ‘এখন চামচিকা সাজছ। মুখ দিয়া কথা বাইর হইতাছে না। বউটারে দুর্বল পায়া তার সামনে সিংহ সাজ। ওস্তাদ অর্ডার দেন, ব্যাটারে হাল্কা সাইজ কইরা দেই। যাতে জীবনে আর বউয়ের গায়ে হাত না তোলে।’
অবস্থা বেগতিক দেখে হাকিম ছুটে এসে মমিনের পা জড়িয়ে ধরে। বলে, ‘আমারে মাফ কইরা দেন। আমি আর বউরে মারমু না।’
মমিন বলে, ‘সত্যি কইরা বলেন তো, আপনি কেন মারেন বউটাকে?’
মমিন বাধ্য করে বলতে। হাকিম তোতলিয়ে বলে, ‘ভুল দেখলে মাথায় রক্ত চইড়া যায়।’
‘কী ভুল?’
‘রান্ধার ভুল। তরকারিতে খাবলা খাবলা নুন দিয়া রাখে। কইলেও ঠিক হয় না।’
‘তাই বলে লাঠি দিয়া পিটাইবেন?’ সে মানুষ না?’
‘আমার ভুল অয়া গেছে। আমারে মাফ কইরা দেন। আমি আর বউরে মারমু না।’
‘আপনার চোখ বলছে আপনি মিছা কথা কইতাছেন। এখন থেকে মাথায় রক্ত চড়লে মাটির দিকে তাকিয়ে থাকবেন। দেখবেন রাগ পানি হয়ে গেছে। মনে থাকবে? শোনেন, আমরা কিন্তু এই এলাকায় থাকব। আবার যদি শুনি বউয়ের গায়ে হাত তুলছেন তাইলে কিন্তু নির্ঘাত মৃত্যু। কেউ আপনাকে রক্ষা করতে পারবে না।’
‘জি। আর মারমু না।’
‘এবার যান।’ লোকটি ঘর থেকে বের হয়ে দ্রুত পায়ে বাড়ির দিকে যায়।
মমিন বলে, ‘মজনু। লোকটাকে ফলো কর। দেখ সে পাকিস্তানি ক্যাম্পের দিকে যায় কি না।’
মমিন বলার পর চাদরের নিচে স্টেনগান নিয়ে মজনু বেরিয়ে যায়।

বি.দ্র. ইসহাক খানের ‘যারা যুদ্ধ করেছিল’ উপন্যাসটি এবারের একুশে বইমেলায় মাওলা ব্রাদার্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে। উপন্যাসটি ‘মাওলা ব্রাদার্স’ এর স্টল থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন পাঠকরা।

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>
যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-১৯

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-১৮

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-১৭

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব- ১৬

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব- ১৫

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-১৪

Header Ad
Header Ad

পাকিস্তানে সেনাবাহিনী-সন্ত্রাসী গোলাগুলি, দুই সেনাসদস্যসহ নিহত ১৭

ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ার তিনটি ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর তুমুল গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই সেনাসদস্যসহ মোট ১৭ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সামরিক বাহিনী।

শনিবার (২৬ এপ্রিল) পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জনসংযোগ পরিদপ্তর আইএসপিআর এক বিবৃতিতে জানায়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে খাইবার পাখতুনখোয়ার কারাক জেলায় অভিযান চালানো হয়। সেখানে আটজন সন্ত্রাসীকে হত্যা করা হয়। একই দিনে উত্তর ওয়াজিরিস্তান ও দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের দুটি স্থানে আরও দুটি অভিযান চালানো হয়।

উত্তর ওয়াজিরিস্তানে চারজন এবং দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের গোমাল জ্যাম এলাকায় তিনজন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে সেনাবাহিনী। এই সংঘর্ষগুলোর একটিতে পাক বাহিনীর দুই সেনা সদস্য প্রাণ হারান।

আইএসপিআরের বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, অভিযানের সময় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করা হয়েছে।

এদিকে, পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ জানিয়েছে, এসব অভিযান ছিল পরিকল্পিত ও গোয়েন্দা তথ্যভিত্তিক। সাম্প্রতিক সময়ে দেশটিতে সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে, বিশেষ করে নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে।

‘পাকিস্তান ইন্সটিটিউট ফর কনফ্লিক্ট অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ’ (PICS) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা ডিসেম্বরের তুলনায় প্রায় ৪২ শতাংশ বেড়েছে। এতে করে পুরো অঞ্চলে নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে।

Header Ad
Header Ad

টাঙ্গাইলে ট্রাক-সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষে চালকসহ নিহত ২

ছবি: সংগৃহীত

টাঙ্গাইলের মধুপুরে ট্রাক-সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই জন নিহত হয়েছেন। শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০ টার দিকে টাঙ্গাইল-জামালপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের মধুপুর পৌর এলাকার কাইতকাই রূপালী ফিলিং স্টেশনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- ধনবাড়ী উপজেলা পৌর এলাকার চরভাতকুড়া গ্রামের মৃত হাতেম আলীর ছেলে সিএনজি চালা হেলাল উদ্দিন (৫৫)। অপরজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তবে তিনি সিএনজি যাত্রী ছিলেন।

রবিবার (২৭ এপ্রিল) সকালে মধুপুর থানার ডিউটি অফিসার মো. মনজুরুল হক এ বিষয়টি নিশ্চিত করছেন।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, শনিবার রাতে দুর্ঘটনা কবলিত সিএনজি ধনবাড়ীর দিকে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে বিপরীত দিক থেকে আসা দ্রুতগতির ট্রাকের সাথে সংঘর্ষ হয়। এতে সিএনজির চালক ঘটনা স্থলে মারা যান। এ সময় গুরুতর আহত হয় এক যাত্রী।

এরপর তাকে উদ্ধার করে মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। পরে রাতেই হাসপাতালে তিনি মারা যায়।

এ ব্যাপারে মধুপুর থানার ডিউটি অফিসার মো. মনজুরুল হক জানান, নিহত সিএনজি চালকের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

অপরদিকে, অজ্ঞাত ওই যাত্রীর পরিচয় পাওয়া যায়নি, শনাক্তের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় আইনগত বিষয় প্রক্রিয়াধীন।

Header Ad
Header Ad

হজের ফ্লাইট শুরু মঙ্গলবার, উদ্বোধন করবেন ধর্ম উপদেষ্টা

হজের ফ্লাইট শুরু মঙ্গলবার। ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র হজ ফ্লাইট শুরু আগামী মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল)। ওই দিন ৪১৯ জন সৌদি আরবের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। হজের প্রথম ফ্লাইট উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন।

চলতি বছর ৮৭ হাজার ১০০ জন পবিত্র হজ পালনে সৌদি আরব যাবেন। এর মধ্যে ৫ হাজার ২০০ জন হজযাত্রী সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবং বাকি ৮১ হাজার ৯০০ জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালন করবেন।

প্রথম ফ্লাইটটি রাত ২টা ১৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সৌদি আরবের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। হজ ব্যবস্থাপনাকে নির্বিঘ্ন করতে সরকারি পর্যায়ে ১১২ জন এবং বেসরকারি পর্যায়ে ১ হাজার ৭৪৩ জন গাইড দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি ৭০ জন মোয়াল্লেম হজযাত্রীদের সার্বিক সহায়তা করবেন।

হজযাত্রী পরিবহনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসসহ তিনটি এয়ারলাইনস। ৩১ মে পর্যন্ত হজের ফ্লাইট চলবে। ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে ১০ জুন এবং শেষ হবে ১০ জুলাই।

পবিত্র হজ উপলক্ষে এ বছর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস পরিচালনা করবে ১১৮টি, সাউদিয়া ৮০টি এবং নাস এয়ারলাইনস ৩৪টি ফ্লাইট।

হজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো আরাফাতের ময়দানে হজের খুতবা, যা ৯ জিলহজ মসজিদে নামিরা থেকে প্রদান করা হয়। এবারও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরাসরি সম্প্রচারিত হবে হজের খুতবা, এবং তাৎক্ষণিক অনুবাদ করা হবে ২০টি ভাষায়। 

যেসব ভাষায় হজের খুতবা অনুবাদ করা হবে সেগুলো হলো- বাংলা, ফরাসি (ফ্রেঞ্চ), মালয়, উর্দু, ফারসি, চাইনিজ, তুর্কি, রাশিয়ান, হাউসা, ইংরেজি, সুইডিশ, স্প্যানিশ, সোয়াহিলি, আমহারিক, ইতালিয়ান, পর্তুগিজ, বসনিয়ান, মালায়লাম, ফিলিপিনো এবং জার্মান। 

উল্লেখ্য, ১৪৪৬ হিজরির ৯ জিলহজ (চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২০২৫ সালের ৫ জুন) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

পাকিস্তানে সেনাবাহিনী-সন্ত্রাসী গোলাগুলি, দুই সেনাসদস্যসহ নিহত ১৭
টাঙ্গাইলে ট্রাক-সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষে চালকসহ নিহত ২
হজের ফ্লাইট শুরু মঙ্গলবার, উদ্বোধন করবেন ধর্ম উপদেষ্টা
ইরানের বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ১৪, আহত সাড়ে ৭ শতাধিক
ধর্ষণের শিকার জুলাই আন্দোলনে শহীদের মেয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
সিন্ধুর পানি ছাড়ল ভারত, হঠাৎ বন্যায় ডুবলো পাকিস্তানের কাশ্মীর
রিয়ালের হৃদয়ভাঙা রাত, কোপা দেল রে চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনা
উত্তরায় সেলফি তুলতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় তরুণ-তরুণীর মৃত্যু
জাতীয় গ্রিডে যান্ত্রিক ত্রুটিতে ১০ জেলায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট
আবারও দুই ধাপে ৬ দিনের ছুটি পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা
পাকিস্তানি হামলার আশঙ্কায় বাঙ্কারে আশ্রয় নিচ্ছেন ভারতীয়রা
চীনা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করলো বিএনপি
আওয়ামী লীগ ভারতের গোলামী করা দল : নুরুল হক নুর
ইরানের রাজাই বন্দরে শক্তিশালী বিস্ফোরণ, আহত ৫১৬ জন
প্রায় দুই ঘণ্টা পর মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক
গোবিন্দগঞ্জে মৃত আওয়ামী লীগ নেতার নামে জামাতের মামলা
গুজরাটে ১ হাজারের বেশি বাংলাদেশি গ্রেফতারের দাবি পুলিশের
নওগাঁর রাণীনগর ও আত্রাই বাসীর গলার কাঁটা ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ অবশেষে সংস্কার
যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মেট্রোরেল চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ
গোবিন্দগঞ্জে গাঁজাসহ ট্রাকের চালক-হেলপার গ্রেপ্তার