সোমবার, ২৭ জানুয়ারি ২০২৫ | ১৩ মাঘ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-২০

যারা যুদ্ধ করেছিল

মজনু বলে, ‘আমরা তো আগে এক পাকিস্তান ছিলাম। তাইলে তাদের সঙ্গে আমাদের যুদ্ধ হচ্ছে কেন?’
মমিন বলে, ‘শোন, পাকিস্তান হওয়ার লগে লগে তারা আমাদের দাবিয়ে রাখা শুরু করে। প্রথমে হাত দেয় আমাদের ভাষার উপর। আমরা বাঙালিরা সংখ্যায় বেশি। বেশি মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। অথচ পাকিস্তানের গর্ভনর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্না ঢাকায় এসে ঘোষণা দেয় ‘উর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।’ আর যায় কোথায়? শুরু হয় বাংলা ভাষার দাবিতে ভয়ংকর আন্দোলন। সেই আন্দোলনে আমাদের কয়েকজর বাঙালি শহীদ হয়। সেই থেকে আমরা ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস পালন করি।
তারপর ধর পাট উৎপাদন হয় আমাদের দেশে। সেই পাট চলে যায় পশ্চিম পাকিস্তান। যত কলকারখানা সব ওই প্রদেশে। সেনাবাহিনী সব বড় পদে ওরা চাকরি করে। আমাদের কোন বড় পদে চাকরি দেয় না। এই ধরনের বৈষম্যের প্রতিবাদে ১৯৬৬ সালে ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম পাকিস্তানের লাহোরে সম্মিলিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ মজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ৬ দফা দাবি পেশ করেন।
পরবর্তী কালে এই ৬ দফা দাবিকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতির স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের জন্য এই আন্দোলন এতই গুরুত্বপূর্ণ যে একে ম্যাগনা কার্টা বা বাঙালি জাতির মুক্তিসনদও বলা হয়।
‘ম্যাগনা ফাটা না কী যেন কইলেন, সেটা আবার কী?’

মজনুর প্রশ্নে মমিন হো হো করে হেসে ওঠে। পরক্ষণে নিজেই নিজের মুখ চেপে ধরে। তারা এখানে আত্মগোপনে আছে। সেটা জানাজানি হয়ে গেলে তাদেরই মহাবিপদ। মমিন নিচু গলায় বলে, ‘ম্যাগনা ফাটা না। ম্যাগনা কার্টা। এটা হলো রাজার ক্ষমতা খর্ব করার আইন। আগে তো পৃথিবীর সব দেশে রাজতন্ত্র ছিল। দেশের সব ক্ষমতা ছিল রাজার হাতে। পাবলিকের কোনো ক্ষমতা ছিল না। ১২১৫ সালে ইংল্যান্ডের রাজা আর সামন্তদের মধ্যে এই ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যে চুক্তির ফলে সাংবিধানিক শাসনের সূচনা হয়। এরই নাম ম্যাগনা কার্টা।’
‘যা বলছিলাম’, মমিন আবার বলতে শুরু করে। ‘৬ দফা পেশ করার পর থেকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের মাথা খারাপ হয়ে যায়। সে পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে যেখানে পায় সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা শুরু করে। সেই থেকে বঙ্গবন্ধুর জেলজীবন শুরু। এমনও হয়েছে যে, জামিন পেয়ে জেলখানা থেকে বেরোনোর পর জেলগেটে তাকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারপরও তাঁকে দমাতে যায়নি। অবশেষে সামরিকজান্তা ১৯৬৮ সালে জানুয়ারি মাসে তিনিসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ দিয়ে তার মুখ বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।’
‘সেটা আবার কী?’ মজনু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে।
মমিন বলে, ‘পাকিস্তানিরা মামলায় অভিযোগ করে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে কয়েকজন সামরিক এবং বেসামরিক ব্যক্তি সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পূর্ববাংলাকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এই মামলার নাম আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। ষড়যন্ত্রটা নাকি হয়েছিল আগরতলায়। তাই এর নাম আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। গোপনে এই বিচারকার্য শরু হয়। তারা এই মামলায় শেখ মুজিবকে শাস্তি দেওয়ার গোপন ষড়যন্ত্র করতে থাকে। আর এদিকে বাঙালি জাতি তাতে ফুঁসে ওঠে। ছাত্ররা ১১ দফা আন্দোলন শুরু করে। তারা আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলে। ঢাকা শহর হয়ে পড়ে মিছিলের শহর। মিছিলে মিছিলে রাজপথ উত্তাল। গণআন্দোলনে নতি স্বীকার করে আইয়ুব খান আগরতলা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে। শেখ মুজিবসহ সকল বন্দিদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
তারপর ২৩ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে রেসকোর্স ময়দানে বিশাল গণসংবর্ধনার আয়োজন করে। লক্ষ জনতার সেই সভায় ডাকসুর ভিপি তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন। সেই থেকে আমরা শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু বলি।
পূবর্ পাকিস্তানে তখন আন্দোলন দাবানলের মতো চারদিকে ছড়িয়ে যাচ্ছিল। আইয়ুব খান কোনো উপায় না দেখে সেনাপতি ইয়াহিয়া খানের কাছে ক্ষমতা দিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যায়। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় বসেই সাধারণ নির্বাচন দেওয়ার ঘোষণা দেন। সেই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করে। কিন্তু ইয়াহিয়া খান ও জুলফিকার আলী ভুট্টো ষড়যন্ত্র করে বঙ্গবন্ধুর হাতে ক্ষমতা না দেওয়ার ফন্দি আঁটতে থাকে। সংসদের মিটিং ডেকে সেই মিটিং আবার ক্যানসেল করে দেয় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। এই খবর ঢাকায় পৌঁছলে ঢাকার মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। ঢাকা তখন মিছিলে মিছিলে সয়লাব হয়ে যায়। তারপর আসে ৭ মার্চ। রেসকোর্স ময়দানে অগ্নিঝরা ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু। আমি নিজে সেই ভাষণ শুনেছি। ভাষণ শুনে আমার শরীর দিয়ে মনে হয় আগুন বেরুচ্ছিল। মূলতঃ সেই ভাষণ শুনেই আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছি।
এদিকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় আসেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেন। আলোচনা কিছু না। গোপনে গোপনে অস্ত্র আনতে থাকে বাঙালিকে শায়েস্তা করার জন্য। যেদিন ইয়াহিয়া খান ঢাকা ত্যাগ করে সেই রাতেই অর্থাৎ ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি মিলিটারিরা নিরস্ত্র বাঙালির উপর ঝাপিয়ে পড়ে। তারা এই অপারেশনের নাম দেয় ‘অপারেশন সার্চ লাইট।’ তারা রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা ইপিআর ক্যাম্প এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল আক্রমণ করে নির্বিচারে বাঙালি নিধন করতে থাকে। তার আগে ২৫ মার্চ গভীর রাতে মিলিটারিরা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের আগে ইপিআরের ওয়ারলেসের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং দেশের স্বাধীনতা না পাওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতা যেমন তাজউদ্দিন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আহমেদ, কামরুজ্জামানসহ অন্য নেতারা প্রবাসী সরকার গঠন করেন। তাজউদ্দিন আহমদ হন প্রধানমন্ত্রী এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। তারা তরুণদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে আহ্বান জানালে সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে তরুণরা দলে দলে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিতে থাকে। মোটামুটি এই হলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অংশ নেওয়ার ঘটনা।

মজনু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, ‘তাহলে তো ঠিকই আছে। বলা যায় যুদ্ধ করা আমাদের ফরজ হয়ে গেছে।’
‘তুমি ঠিকই বলেছ। আমাদের সব তরুণ যুবকের জন্য মুক্তিযুদ্ধ ফরজ হয়ে গেছে। এমন কি যুবক হয়েও যারা যুদ্ধে অংশ নেয়নি তারাও রাজাকারের সামিল।’
‘তাইতো। এখনতো আমার মনে হচ্ছে আমি ঠিক কামটাই করছি। আমার মনোবল আরও বাইড়া গেল ওস্তাদ।’
‘তোর মতো মনোবল যদি সবার থাকত তাহলে পাকিস্তানি মিলিটারি বাপ বাপ করে এ দেশ থেকে পালাত। অথচ দুঃখের বিষয় কি জানিস, আমাদেরই কিছু জাত ভাই তাদের পেছনে হেইও দিচ্ছে।’
‘এই জন্যে রাজাকার পাইলে আমার মাথায় আগুন চইড়া যায় ওস্তাদ। আমি ওদের বেয়োনেট দিয়া খোঁচাইয়া খোঁচাইয়া মারি।’
তাদের আলোচনার মাঝে বাড়ির মালিক হরমুজ মিয়া ঢুকে পড়ে রুমে। লোকটি অতি সরল। মাথায় সারাক্ষণ টুপি। মুখে লম্বা দাড়ি। অতিরিক্ত পান খাওয়ায় সবগুলো দাঁতই লাল। ঠোঁটজোড়াও লাল টুকটুকে। দেখতে খারাপ লাগে না। তার আকস্মিক রুমে ঢুকে পড়ায় মমিন মাথা তুলে বাঁকা দৃষ্টিতে তাকায়।
হরমুজ মিয়া দম নিয়ে ভয়ার্ত মুখে বলে, ‘একজন আপনার সাথে দেখা করতে আইছে।’
মমিন জিজ্ঞেস করে, ‘কে?’
‘আমাদের গাঁয়েরই একজন মহিলা।’
‘কী চায় সে?’
হরমুজ মিয়া বেড়ার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ঝুনুর মা, কী কইবা কয়া ফালাও।’
ঘরটি টিনের ছাউনি। কিন্তু বেড়া পাটশোলার। বেড়ার আড়াল থেকে ঝুনুর মা কান্না গলায় বলে, ‘আমি আপনাদের কাছে বিচার দিবার আইছি।’
‘কীসের বিচার?’ মমিন জিজ্ঞেস করে।
‘ঝুনুর মা কান্না গলায় বলে, ‘আমার জামাই আমারে খালি মারে।’
প্রশ্ন শুনে মজনু ফিক করে হেসে ফেলে। মমিনের মুখেও হাসি চড়েছিল। কিন্তু সে হাসি অবদমন করে। কারো দুঃখ নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করা ঠিক না।
মমিন বলে, ‘এটাতো আমাদের বিচার করার কাজ না। আপনার জামাই যদি রাজাকার হতো তাহলে এতক্ষণ তাকে আমরা ধরে এনে ঝুলাতাম। তো আপনার স্বামী কি রাজাকার?’
‘রাজাকার হলে আর বিচার দিতে আসতাম না। আমি নিজেই তারে ঘুমের মধ্যে জবাই কইরা দিতাম।’
মমিন বিস্ময়ে হতভম্ব হয় ঝুনুর মায়ের কথা শুনে। রাজাকারদের প্রতি তার এত ঘৃণা। মমিন বলে, ‘তাহলে আমাদের আপনি কী করতে বলেন?’
‘আপনারা তারে ডাইকা একটু ভয় দেখাইবেন। যাতে যখন তখন আমার গায়ে হাত না তোলে।’
হঠাৎ মজনু কথা বলে ওঠে। বলে, ‘আমরা মিছেমিছি ভয় দেখাই না। ডাইরেক্ট অ্যাকশনে যাই। বুঝছেন কিছু। ডাইরেক্ট অ্যাকশন মানে গলা কাইটা দেই।’
মমিন মৃদু স্বরে ধমক দেয় মজনুকে। বলে, ‘এভাবে কথা বলছ কেন? চুপ থাক।’ মমিন মহিলাকে বুঝিয়ে বলে, ‘দেখুন এটা আমাদের কাজ না। এই ধরনের কাজ করে গ্রাম্য প্রধান বা মাতব্বররা। আমরা আরও বড় কাজের জন্য ঝাড়-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছি। আপনি যান।’

মহিলা এবার কাঁদতে শুরু করে। কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘আমি এতিম। আমারে মাইরা কাইটা ফালাইলেও কেউ দেখার নাই। গাঁয়ের মাতবরদের কাছে কত বিচার দিছি। বিচার তো করেই নাই। উল্টো আমার কপালে শণির দশা হয়। মাইর আরও বেশি কইরা দেয়। আমার আর জানে কুলায় না।’
মমিন এবার ভাবনায় পড়ল। মহিলার জন্য কিছু করতেও পারছে না। তাকে ধমক দিয়ে চলে যেতে বলবে, তাও পারছে না। উভয় সংকটে মমিন।
মজনু বলে, ‘ওস্তাদ মহিলার জন্য আমার খুব মায়া হইতাছে। ব্যাটারে ধইরা আইনা সাইজ কইরা দেই।’
‘না।’ মমিন ধমকে ওঠে।
মহিলার কান্না বন্ধ হচ্ছে না। এবার গলা চড়িয়ে কান্না শুরু করে সে।
মমিন বাড়ির মালিক হরমুজ চাচাকে ডেকে মহিলাকে চলে যেতে বলেন। হরমুজ নিজেও তার পক্ষে সাফাই গায়। বলে, ‘আপনারা কিছু একটা করেন।’
মমিন এবার বিস্ময়ে হরমুজের দিকে তাকিয়ে থাকে। মজনু উঠে দাঁড়ায়। বলে, ‘ওস্তাদ, আমি গেলাম। ব্যাটারে ডাইকা আনি। তারপর আপনি দুই কথা কয়া দিয়েন।’ মজনু আর পারমিশনের অপক্ষো না করে বেরিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর একজন একহারা গড়নের লোককে সঙ্গে নিয়ে রুমে ঢোকে। বয়স চল্লিশের ঘরে। হ্যাংলা পাতলা। দেখেই বোঝা যায় শরীরে পুষ্টির অভাব।
মমিন লোকটিকে দেখে ভাবে কী বলবে তাকে। সে লোকটিকে বসতে বলে। ঘরে একটি টুল ছিল সেটা টেনে নিয়ে সেখানেই বসে লোকটি।
‘নাম কী?’ মমিন জিজ্ঞেস করে।
লোকটি খুব স্বাভাবিকভাবে বলে, ‘হাকিম।’
‘কী করেন?’
‘পাইট খাটি।’
‘কী খাটেন?’
বাড়িওলা হরমুজ বলে, ‘কামলা খাটে। খুবই গরিব। জমি-জমা নাই। সারাদিন কামলা খাইটা যা পায় তাই দিয়া সংসার চালায়।’
‘তাহলে সমস্যাটা কোথায়?’ মমিন কণ্ঠ চড়িয়ে বাড়িওলা হরমুজ চাচাকে কথাটা জিজ্ঞেস করে। হরমুজ চাচা জবাব দিতে আটকে যায়। মমিন এবার হাকিমকে জিজ্ঞেস করে, ‘কোন দোষে আপনি আপনার বউয়ের গায়ে হাত তোলেন?’
‘কে বলল আমি আমার বউয়ের গায়ে হাত তুলি?’
‘সবাই বলে। এই যে হরমুজ চাচা সেও বলে। আপনার বউ বলে গেছে। বলেন, ‘কেন মারেন লক্ষ্মী বউটাকে?’ মমিনের কণ্ঠ চড়ে গেলে হাকিম ভয় পেয়ে মাথা নিচু করে থাকে। কথা বলে না। মমিন ধমকে ওঠে। বলে, ‘কথা বলছেন না কেন? কথা কিন্তু আমরা বাইর করতে জানি। বাইর করমু কথা?’
মজনু ভেংচিয়ে বলে, ‘এখন চামচিকা সাজছ। মুখ দিয়া কথা বাইর হইতাছে না। বউটারে দুর্বল পায়া তার সামনে সিংহ সাজ। ওস্তাদ অর্ডার দেন, ব্যাটারে হাল্কা সাইজ কইরা দেই। যাতে জীবনে আর বউয়ের গায়ে হাত না তোলে।’
অবস্থা বেগতিক দেখে হাকিম ছুটে এসে মমিনের পা জড়িয়ে ধরে। বলে, ‘আমারে মাফ কইরা দেন। আমি আর বউরে মারমু না।’
মমিন বলে, ‘সত্যি কইরা বলেন তো, আপনি কেন মারেন বউটাকে?’
মমিন বাধ্য করে বলতে। হাকিম তোতলিয়ে বলে, ‘ভুল দেখলে মাথায় রক্ত চইড়া যায়।’
‘কী ভুল?’
‘রান্ধার ভুল। তরকারিতে খাবলা খাবলা নুন দিয়া রাখে। কইলেও ঠিক হয় না।’
‘তাই বলে লাঠি দিয়া পিটাইবেন?’ সে মানুষ না?’
‘আমার ভুল অয়া গেছে। আমারে মাফ কইরা দেন। আমি আর বউরে মারমু না।’
‘আপনার চোখ বলছে আপনি মিছা কথা কইতাছেন। এখন থেকে মাথায় রক্ত চড়লে মাটির দিকে তাকিয়ে থাকবেন। দেখবেন রাগ পানি হয়ে গেছে। মনে থাকবে? শোনেন, আমরা কিন্তু এই এলাকায় থাকব। আবার যদি শুনি বউয়ের গায়ে হাত তুলছেন তাইলে কিন্তু নির্ঘাত মৃত্যু। কেউ আপনাকে রক্ষা করতে পারবে না।’
‘জি। আর মারমু না।’
‘এবার যান।’ লোকটি ঘর থেকে বের হয়ে দ্রুত পায়ে বাড়ির দিকে যায়।
মমিন বলে, ‘মজনু। লোকটাকে ফলো কর। দেখ সে পাকিস্তানি ক্যাম্পের দিকে যায় কি না।’
মমিন বলার পর চাদরের নিচে স্টেনগান নিয়ে মজনু বেরিয়ে যায়।

বি.দ্র. ইসহাক খানের ‘যারা যুদ্ধ করেছিল’ উপন্যাসটি এবারের একুশে বইমেলায় মাওলা ব্রাদার্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে। উপন্যাসটি ‘মাওলা ব্রাদার্স’ এর স্টল থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন পাঠকরা।

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>
যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-১৯

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-১৮

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-১৭

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব- ১৬

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব- ১৫

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-১৪

Header Ad
Header Ad

পুলিশের শতকরা ৮০ জনের হৃদয়ে ছাত্রলীগ: আসিফ নজরুল

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, বর্তমান পুলিশের শতকরা ৮০ জনই আওয়ামী আমলের, যাদের হৃদয়ে ছাত্রলীগ। তারাই এ সরকারের জন্য কাজ করছে না।

রোববার (২৬ জানুয়ারি) জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে চারটি বইয়ে প্রকাশনা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে এ মন্তব্য করেন তিনি।

আইন উপদেষ্টা বলেন, বিপ্লব পরবর্তী কিছু সমস্যা থাকে। তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে সরকার। গণঅভ্যুত্থান নিয়ে সকলের মধ্যে যে ঐক্য ছিল, সেই ঐক্য আগামীতেও অব্যাহত থাকবে বলেও আশাপ্রকাশ করেন আসিফ নজরুল।

এর আগে, সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক পোস্টে বিএনপির সঙ্গে গণঅভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের কোনো দূরত্ব বা ভুল বোঝাবুঝি কাম্য নয় বলে মন্তব্য করেন আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে গণ-অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের কোনো দূরত্ব বা ভুল বোঝাবুঝি কাম্য নয়। এটি গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও তাদের দোসরদের কতটা উৎসাহিত এবং বেপরোয়া করে তুলতে পারে তার কিছুটা প্রমাণ আমরা গত কয়েক দিনে পেয়েছি।

আইন উপদেষ্টা বলেন, তিনি যতটা জানেন এবং বিশ্বাস করেন— বিএনপি কোনো ষড়যন্ত্রে জড়িত নয় এবং তারা ১/১১ ধরনের কিছু করতে চাচ্ছে না, ছাত্রনেতারা সরকারের অংশ হিসেবে কোনো নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাচ্ছে না বা এতে যোগ দিচ্ছে না, জুলাই ঘোষণাপত্র একটি রাজনৈতিক দলিল হবে এবং ছাত্রনেতারা গণঅভ্যুত্থানের শক্তির মতামত সঠিকভাবে প্রতিফলিত করার জন্য চেষ্টা করছেন এবং বিএনপি এবং ছাত্রনেতারা এমনকি নির্বাচন কেন্দ্রিক বৃহত্তর সমঝোতার ব্যাপারে আগ্রহী, তবে সেটি আলোচনা সাপেক্ষে। এর অর্থ হলো, বিরোধের কোনো কারণ নেই, বরং সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

আসিফ নজরুল আরও বলেন, গণহত্যায় জড়িতদের হাতে রয়েছে লুটপাট করা বিপুল পরিমাণ টাকা, অনেক সুবিধাবাদী গোষ্ঠী, শক্তিশালী প্রচারণা নেটওয়ার্ক এবং শক্তিশালী আন্তর্জাতিক সমর্থন। তাদের বিরুদ্ধে যদি কিছু করতে হয়, তবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ছাত্রদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের মধ্যে ভিন্নমত থাকবে, তবে তা যেন দেশের শত্রুদের জন্য উৎসাহের কারণ না হয়।

Header Ad
Header Ad

৭ কলেজ শিক্ষার্থীদের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মামুন আহমেদের পদত্যাগ এবং শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচারের দাবিতে সোমবার (২৭ জানুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।

রোববার (২৬ জানুয়ারি) শেষ রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর আন্দোলনের সংগঠক আব্দুর রহমান।

তিনি বলেন, বিচারের আগে কোনো ধরনের পরীক্ষা হবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বৈরাচারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে ৭ কলেজকে ঢাবির অধিভুক্তি থেকে বাতিল করে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলাম।

তিনি বলেন, চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকেই স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার দাবি ছিল আমাদের। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তা করেনি। উল্টো ধারণক্ষমতার চেয়েও বেশি শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা এসব নিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছি। সবশেষ বিশ্ববিদ্যালয় প্রো-ভিসি (শিক্ষা) আমাদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছেন। এর প্রতিবাদে গণতন্ত্র ও মুক্তি তোরণের নিচে অবস্থানকালে ঢাবি শিক্ষার্থী ও পুলিশ সম্মিলিতভাবে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়।

৭ কলেজকে নিয়ে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা করতে হবে, এমন দাবি জানিয়ে আব্দুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রো-ভিসি মামুন আহমেদের বিচার করতে হবে।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সোমবার সকাল ৯টা থেকে ঢাকা শহর অবরোধ করা হবে। সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ক্যাম্পাস এলাকায় অবরোধ কর্মসূচি পালন করবেন।

Header Ad
Header Ad

ছাদের কার্নিসে ঝুলে থাকা শিক্ষার্থীকে গুলি, সেই এসআই চঞ্চল গ্রেপ্তার

শিক্ষার্থীকে গুলি করা পুলিশের সেই উপপরিদর্শক (এসআই) চঞ্চল সরকার। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় ছাদের কার্নিসে ঝুলে থাকা শিক্ষার্থীকে গুলি করা পুলিশের সেই উপপরিদর্শক (এসআই) চঞ্চল সরকারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের হোতাকে খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা থেকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা থেকে আসা পুলিশের একটি বিশেষ ইউনিট।

রোববার (২৬ জানুয়ারি) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল তানভীর হাসান জোহার নেতৃত্বে একটি টিম দীঘিনালায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে।

দীঘিনালা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকারিয়া এসআই চঞ্চল সরকারকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি করেছেন। তিনি জানান, রাত সাড়ে ৯টার দিকে দীঘিনালা থানা থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশ তাকে আটক করে। আটকের পর রাতেই তাকে ঢাকার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

জুলাই আন্দোলনে মৃত্যুর ভয়ে ৪ তলার কার্নিশে ঝুলে থাকা কিশোরকে ঠাণ্ডা মাথায় খুব কাছ থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি করে হত্যা করে দুই পুলিশ।

রামপুরা-বনশ্রীর মেরাদিয়া বাজারে অবস্থিত রামপুরা থানার পার্শ্ববর্তী নির্মাণাধীন বিল্ডিং-এ পুলিশের গুলিতে টিকতে না পেরে কিশোর ছেলেটি থানার পাশেই মেইনরোড সংলগ্ন একটি নির্মাণাধীন ৪তলা ভবনে উঠে যায়। সবাই চলে যেতে পারলেও এই কিশোর ওই ভবনে আটকা পড়ে যায়। ৪ তলার ছাদের সাইড দিয়ে নেমে সে নিজেকে লুকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তাকে দেখেই দুই পুলিশ রিভলভার দিয়ে পর পর ছয় রাউন্ড গুলি করে ওই কিশোরের মৃত্যু নিশ্চিত করেন।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর গত ৭ নভেম্বর এসআই চঞ্চল সরকার দীঘিনালা থানায় যোগদান করেন। আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন তিনি।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

পুলিশের শতকরা ৮০ জনের হৃদয়ে ছাত্রলীগ: আসিফ নজরুল
৭ কলেজ শিক্ষার্থীদের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি
ছাদের কার্নিসে ঝুলে থাকা শিক্ষার্থীকে গুলি, সেই এসআই চঞ্চল গ্রেপ্তার
সাত কলেজের সব পরীক্ষা স্থগিত
আজ পবিত্র শবে মেরাজ
মধ্যরাতে ঢাবি ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, আহত ৮
সাবেক দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান গ্রেপ্তার
রয়্যাল এনফিল্ড কিনে না দেয়ায় ট্রেনের নিচে ঝাঁপ কিশোরের!
রংপুরের টানা দ্বিতীয় হার, রাজশাহীর নাটকীয় জয়
সায়েন্সল্যাব ও টেকনিক্যাল মোড় অবরোধ করেছেন সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা
আসাদুজ্জামান খান কামাল বাংলাদেশের কসাই: প্রেস সচিব
পুলিশের সংখ্যা পর্যাপ্ত, কিন্তু মনোবলের ঘাটতি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
বাংলাদেশে আসছে স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট
মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ড যাচ্ছেন বাংলাদেশি রোগীরা, কলকাতার হাসপাতাল ব্যবসায় ধস
২৫ দিনে এলো ২০৪৪৭ কোটি টাকার প্রবাসী আয়
বেতন-ভাতায় না পোষালে অন্য পেশায় চলে যান: প্রাথমিক শিক্ষা উপদেষ্টা
অ্যাডভোকেট তপন বিহারী নাগ ট্রাস্ট বৃত্তি পেলেন কুবির ৩০ শিক্ষার্থী
নির্বাচনের কথা বললে উপদেষ্টাদের মুখ কালো হয়ে যায়: মেজর হাফিজ
পদ্মশ্রী পাচ্ছেন সংগীতশিল্পী অরিজিৎ সিং
‘মাকে খুশি করতে’ শিক্ষার্থী সেজে রাবিতে ক্লাস, চার মাস পর আটক