বৃহস্পতিবার, ৩ এপ্রিল ২০২৫ | ১৯ চৈত্র ১৪৩১
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-১৯

যারা যুদ্ধ করেছিল

লুকোতে চাইলেও সব কথা লুকনো যায় না। সাকিবের লিঙ্গ কর্তনের কথা রাতারাতি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তারা এই ঘটনা নিয়ে নানা রসিকতা করতে থাকে। আর যারা পাকিস্তানপন্থী তারা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ফজলুর রহমানের মতো ডাক সাইটের মুসলিম লীগার শান্তি কমিটির নেতাকেও মুক্তিবাহিনী ছাড় দেয়নি। বাকিরাতো চুনোপুটি। তারা এর আগে একটু আধটু মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে কিছু বললেও এই ঘটনার পর তারা মুখে কুলুপ এঁটেছে।

লজ্জা শরমে সাকিব বাড়ির বাইরে যায় না। একা একা যাওয়াও সমস্যা। যারা জন্মান্ধ তাদের পথঘাট চিনতে সমস্যা হয় না। তারা পথের নমুনা হৃদয় দিয়ে অনুমান করতে পারে। সাকিব অন্ধ হয়েছে সদ্য। তাকে অন্ধ করেছে মুক্তিবাহিনী। এই লজ্জায়ও সে ঘর থেকে বেরিয়ে কারও সামনে মুখ দেখাতে পারছে না।

সাকিব বাইরে যাচ্ছে না বটে কিন্তু গ্রামবাসির কৌতূহল অবদমন করবে কে? খবর পেয়ে তারা দলে দলে ছুটে আসছে। সাকিবকে ঘিরে তাদের নানা জিজ্ঞাসা। সাকিব নিরব নিঃস্তব্ধ। ঘরে গিয়ে মুখ ঢেকে শুয়ে থাকে। গ্রামবাসি তা সত্ত্বেও ঘরে গিয়ে সাকিবের পাশে বসে। কেউ কেউ সহানুভূতি জানায়। কেউ মুচকি হেসে পরিহাসমূলক কথা বলে।

‘ফজলু চাচাকে তখনই কইছিলাম, ‘মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে বাড়াবাড়ি না করতে। চাচা আমার কথা শুনলো না। উল্টা আমারে আরও নানা ভয় দেখাইলো। এখন কেবা হইল। গরীবের কথা বাসি অইলে ফলে।’

একজন যুবক রহস্য করে বললো, ‘তুইতো নাটকের ডায়লগ ঝাড়া শুরু করলি?’
আরেকজন যুবক থামিয়ে বললো, ‘তোরা কি শুরু করলি? সাকিব ভাইয়ের সর্বনাশ আর তোগো পৌষ মাস।’
‘এটাওতো তুই নাটকের ডায়লগ কইলি।’ চাপা হাসির শব্দ শোনা গেল তারপর।

সাকিবের বুক ফেটে কান্না আসছিল। বার বার মনে হচ্ছিল এটা তার পাপের ফল। আজ যারা তাকে নিয়ে মজা করছে এটা তার প্রাপ্য। নিজেই সে দুর্ভোগ কপালে তুলে নিয়েছে। বন্ধুর বোনকে বাঁচানোর নামে সে যা করেছে এটা খুবই জঘন্য কাজ। পরিণামের কথাটা আগে ভাবা উচিত ছিল। এখন কেঁদে আর কি হবে? এখন আমি নপুংসক। খোজা। বিয়ে করার যোগ্যতা হারিয়েছি। সন্তানের মুখ দেখার সুযোগ হবে না। লোকজনের সামনে মুখই বা কি করে দেখাবো? তার উপর জ্যান্ত মরা হয়ে বেঁচে থাকতে হবে। পৃথিবীর আলো দেখতে পাবো না। এ জীবন রাখার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো।

এদিকে সাকিব অর্ন্তজ্বালায় দগ্ধ হচ্ছে অন্যদিকে সাকিবকে দেখতে আসা প্রতিবেশীদের মজার রসিকতার কমতি হচ্ছে না। তারা দুখির সঙ্গে দুঃখ প্রকাশ না করে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করছে। কদিন আগেও এমন করার সাহস তাদের ছিল না। মুক্তিবাহিনী সাকিবের বাপকে হত্যা এবং সাকিবকে অন্ধ আর খোজা করার পর প্রতিবেশীরা এতটা সাহস পেয়েছে। ফজলুর রহমান শান্তি কমিটির নেতা হওয়াতে প্রতিবেশীরা ছিল হুমকির মুখে। এদের মধ্যে যারা স্বাধীনতাকামী তারা ফজলুর রহমানের শান্তি কমিটিতে যোগ দেওয়া কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি। একের পর এক তার বিতর্কিত কাজ তারা কোনোভাবেই সমর্থন করতে পারছিল না। তারা সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। সেই সুযোগ এমনভাবে হাতে নাতে ফলে যাবে তারাও আশা করতে পারেনি। তাই চাপা আনন্দ তারা চেপে রাখতে পারছে না।
সাকিবের প্রতিবেশী আফজাল হোসেন তারা মামাতো ফুপাতো ভাই। এক সঙ্গে লেখাপড়া করেছে। কলেজে পড়ার সময় প্রেম করে বিয়ে করার পর আর লেখাপড়া করা হয়নি। এখন জুটমিলে জুনিয়র অ্যাকাউন্ট অফিসার পদে চাকরি করে। ২৫ মার্চের পর কিছুদিন মিলে যায়নি। তারপর পরিস্থিতি খানিকটা স্বাভাবিক হলে মামা ফজলুর রহমানের কথা মতো চাকরিতে জয়েন করে। আজই কয়েকদিনের ছুটি নিয়ে বাড়ি এসেছে। এসেই সাকিব এবং ফজলু মামার কাহিনি শুনে দেরি না করে অমনি ছুটে এসেছে সাকিবকে দেখতে। আফজাল এসেই সাকিবের গা ঘেষে বসে। গায়ে হাত বুলায়।

সাকিব জিজ্ঞেস করে, ‘কে?’
আফজাল বলে, ‘আমি আফজাল।’ আফজালকে দেখে অনেকে উঠে চলে যায়। যারা থাকে তারাও আর রঙ্গরসের কথা বলে না। চাপা হাসিও বন্ধ হয়ে যায়।

আফজাল জিজ্ঞেস করে, ‘কিভাবে এমন হলো?’
সাকিব কিছু বলে না। লম্বা করে শ্বাস ফেলে।
আফজাল বলে, ‘মামা শান্তি কমিটি করছে তাকে ধরছে ঠিকআছে। কিন্তু তোকে? তোর জীবনটা এমন করে বরবাদ করলো কেন? তুই কি করেছিস?’ সাকিব এবার শব্দ করে কেঁদে ফেলে।
আফজাল আবার জিজ্ঞেস করে, ‘তুই কি কাউকে চিনতে পেরেছিস?’
‘চিনে লাভ কি? তাদের তুই কিছু করতে পারবি? শক্তিশালী পাকিস্তানি বাহিনী তাদের কিছু করতে পারছে না, তুই সেখানে কি করবি?’
আফজাল বলে, ‘কিছু করতে পারি আর না পারি অন্তত চিনে রাখতাম।’
‘চেনার দরকার নেই। বাপের দেওয়া জানটা আর হারানোর কাম নাই।’
‘চিনা থাকলে তুই নাম ক।’
‘বললাম না বাপের দেওয়া জানটা আর হারানোর কাম নাই।’
‘তুই না বলছিলি মুক্তিবাহিনী এক সপ্তাহের মধ্যে হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে। পাকিস্তানি মিলিটারির সামনে পুচকে মুক্তিবাহিনীরা দাঁড়াতেই পারবে না।’
‘তখন বুঝতে পারিনিরে। পরে বুঝছি শালারা এক একটা ধাইনা মরিচ। পোদ ভরা ঝাল।’
‘মামাকে কোথায় মেরেছে? তার লাশ পাওয়া গেছে?’
‘না।’
‘মামাকে আমি না করছিলাম। মামা হুনলো না। কিন্তু একটা জিনিস আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না, তোকে তারা নিয়া গেল ক্যা? ওরাতো বাপের শাস্তি পোলাকে দেয় না।’

সাকিব জবাব দেয় না। এইসময় বড় ঘর থেকে দুজন মহিলার উচ্চস্বরে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে। আফজাল সচকিত হয়ে সেইদিকে তাকায়। প্রতিবেশী যারা এসেছিল তারা এই ফাঁকে উঠে চলে যায়। আফজাল উঠে বড় ঘরের দিকে যায়। গিয়ে দেখে সাকিবের ছোটখালা আর খালাতো বোন পপি এসেছে। দুই গ্রাম পরেই তাদের বাড়ি। বোনের দুঃখের কাহিনি শুনে থাকতে পারেনি। বিপদের মধ্যেই ছুটে এসেছে। দুই বোন গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। এই দৃশ্য দেখে আফজালেরও চোখ ভিজে আসে।

ছোট খালা বলে. ‘এইসময় দুলাভাইয়ের বাড়িতে থাকার কি দরকার ছিল? সময় খারাপ দুলাভাই বুঝতে পারেনি?’
‘আমিও বারে বারে সাবধান করেছি। আমার কথা কানেই তোলেনি। উল্টা আমাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিয়েছে।’
ছোটখালা বলে, ‘সাকিবকে দিয়ে বলাতে পারতিস।’
আয়েশা বেগম ক্রুব্ধ কণ্ঠে বলে, ‘বাপ-বেটা সমান হইছিল। তোর দুলাভাইকে মাইরা ফেলছে তাও আমি মানতে পারতাম। আমার আদরের ছোয়ালটাকে ওরা জ্যান্ত মরা করছে। ওরা সাকিবের দুই চোখ তুইলা দিছে। ছোয়াল আমার জনমের মতো অন্ধ হয়া গেছে।’ এই কথা শুনে পপির শরীর কেঁপে ওঠে। সাকিব ভাই অন্ধ তাহলে তার কি হবে? তাদের যে অদম্য প্রেম। সেই প্রেমের কি হবে? ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে পপি।

ছোটখালা জিজ্ঞেস করে, ‘সাকিবের চোখ তুলছে ক্যা?’
‘সে কথা আর জিগাইস না। মধ্যপাড়ার মমিন গেছে মুক্তিবাহিনীতে। সাকিব ওর বোন সাথীকে ধইরা নিয়া আইসা এই বাড়িতে রাখতো। রাইতে একসাথে থাকতো। আমি বারে বারে না করছি। বলছি এটা ঘোর অন্যায়, মহাপাপ। এই পাপ আল্লাহ কোনোদিন মাফ করবে না। তারা বাপ-বেটা মিলা আমারে বুঝায়, সাথীর ভাই পাকিস্তান ভাঙার লাইগা ভারতের হিন্দুদের সাথে হাত মিলাইছে। সেই কারণে সাথী নাকি এখন শত্রুর বোন, গণিমতের মাল। তাকে ভোগ করার কথা নাকি হাদীসে আছে।’

ছোটখালা মিন মিন করে বলে, ‘আছেতো। হাদীস কোরআনে এ সব কথা উল্লেখ আছে।’
‘এইটা কোন কথা হইল?’ আয়েশা বেগম আবারও কান্না গলায় ফুঁপিয়ে ওঠে। সব হারিয়ে মানুষ যেমন দিশেহারা হয়ে পড়ে আয়েশা বেগমও তেমনি দিশেহারা হয়ে কথার তাল হারিয়ে ফেলেছে। সে কি বলছে নিজেই বুঝতে পারছে না। তার যেন স্বাভাবিক জ্ঞান লোপ পেয়েছে। কি বলা যাবে আর কি বলা যাবে না এ সব তার মাথায় কাজ করছে না। সে রাগতঃ বলে উঠলো, ‘বোনকে গণিমতের মাল বানানোর প্রতিশোধ নিতে একরাতে সাথীর ভাই দলবল নিয়া এসে আমার ছেলে আর ওর বাপকে ধরে নিয়ে যায়। তোর দুলাভাইকে জবাই করে। তার লাশটা পর্যন্ত পাই নাই। আর সাকিবকে অন্ধ কইরা...... ’

আয়েশা বেগমর কথা শেষ হয় না। টিনের ঘরের ছাদ কাঁপিয়ে ও...বাবাগো বলে শব্দ করে কেঁদে ওঠে। কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘ছোয়াল আমার জন্মের নুলা হইছে। তাকে আমি বিয়াও করাইতে পারমু না।’
‘ক্যা?’ ছোটখালা বিষ্ময়ে জিজ্ঞেস করে।
‘ওরা সাকিবরে খোজা বানায়া দিছে।’
‘সর্বনাশ! এই কথা মাইনষের কাছে কওয়া যাইবো? বুবু তুমি চুপ করো।’
‘আমি চুপ করলে কি ঘটনা থেমে থাকবে?’

মুহূর্তে পপির কান্না বিপরীতমুখী হয়ে ওঠে। এ কি শুনছে সে। সাকিব ভেতরে ভেতরে এতোটা শয়তান। পপি ঘুণাক্ষরেও ধারণা করতে পারেনি। সাকিব মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী এটাও পপি মানতে পারেনি। সাকিবকে চিঠি লিখে সে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে অনুরোধ করেছিল। একবার ভেবেছিল তাকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বিরুদ্ধ মত সে বদলিয়ে দেবে। তাকে যুদ্ধে পাঠাবে। অন্তত জামাতের সমর্থক পিতার পাপ খানিকটা পুত্র কাধে নিয়ে পিতার শাস্তি খানিকটা হাল্কা করতে পারে। তাছাড়া একজন যুবক হিসেবে দেশের স্বাধীনতার জন্য শত্রুর মুখোমুখি বুক চিতিয়ে না দাঁড়ালে কিসের সে দেশের সে দেশের সন্তান? কোথায় তার দেশ প্রেম? যেখানে পাকিস্তানিরা এদেশের নারীদের নির্বিচারে ধর্ষণ করছে। এমন ঘটনা শুনে একজন যুবক কিভাবে ঘরে বসে থাকতে পারে? তাহলে সে কিসের পুরুষ?
পপি এখন যা শুনছে তাতে আর কষ্ট হচ্ছে না। মনে হচ্ছে সাকিব তার কাজের উপযুক্ত শাস্তি পেয়েছে।

পপি পায়ে পায়ে সাকিবের ঘরে যায় নিঃশব্দে। সাকিব মাথার নিচে হাত দিয়ে উদাসভাবে শুয়ে আছে। তার দুচোখে ব্যান্ডেজ। চোখের ঘা পুরোপুরি ঠিক হয়নি। ব্যথা বেদনা এখনো সাকিবকে ঘুমোতে দেয় না। পপি নিঃশব্দে ঢুকলেও সাকিব বুঝতে পারে তার ঘরে কে যেন ঢুকেছে। সাকিব অনুস্বরে জিজ্ঞেস করে, ‘কে?’
‘আমি।’ পপি জবাব দেয়।
‘তুমি কখন এলে?’
‘অনেকক্ষণ।’
সাকিব হতাশ কণ্ঠে বলে, ‘পপি, কি চেয়েছিলাম আর কি হলো?’
পপি আকস্মিক জিজ্ঞেস করে, ‘সাথী কে?’

সাকিব সহজভাবে জবাব দিতে থাকে। পপি ভেবেছিল সাথীর প্রশ্নে সাকিব নির্বাক হয়ে যাবে। সাকিব করে উল্টোটি। জীবনে সবই হারিয়ে গেছে এখন আর ভনিতা করে কি লাভ? জবাবে সাকিব বলে, ‘মধ্যপাড়ার আমার বন্ধু মমিনের ছোটবোন সাথী। কলেজে প্রথম বর্ষে পড়ে। আর কিছু?’
‘না। আর কি বলবো? বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।’ পপি নিরুত্তাপ কণ্ঠে বলে।

সাকিব দম নিয়ে হতাশ কণ্ঠে বলে, ‘আমাদের সম্পর্কের কথা ভুলে যাও পপি। পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।’
‘ক্ষমা না করে উপায় কি? তুমিতো তোমার কর্মফল পেয়ে গেছ। অথচ আমি তোমাকে চেয়েছিলাম দেশপ্রেমিক বীর যোদ্ধা হিসেবে। তোমাকে সে কথা চিঠিতে লিখেছিলাম। তুমি কানে তোলনি। উল্টো তুমি রাজাকারের পক্ষ নিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করেছ। তুমি যা করেছ সেটা তোমার ব্যাপার। তুমি ভুলে যেতে না বললেও আমি ঠিকই ভুলে যেতাম। অন্তত ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করতাম। কারণ পলাশীর যুদ্ধের আড়াইশো বছর পরও মানুষ মীরজাফরকে ঘৃণা করে। কেন করে জানো, দেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার জন্য।’

কথাগুলো ঝড়ের গতিতে বলে পপি আর দেরি করে না। দ্রুত বেরিয়ে যায়।

চলবে…

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-১৮

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-১৭

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব- ১৬

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব- ১৫

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-১৪

Header Ad
Header Ad

সাতক্ষীরায় মদপানে দুই যুবকের মৃত্যু, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৯

ছবি: সংগৃহীত

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলায় মদপানের ফলে দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। একই ঘটনায় আরও ৯ জন গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দুই যুবকের মৃত্যু হয়। এর আগে, ঈদের সন্ধ্যায় তারা মদপান করেন এবং রাতের মধ্যে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।

মৃতদের মধ্যে রয়েছেন আশাশুনি উপজেলার তেতুলিয়া গ্রামের জাফর আলী খাঁর ছেলে জাকির হোসেন টিটু (৪০) ও সোহরাব গাজীর ছেলে নাজমুল গাজী (২৬)।

এ ঘটনায় অসুস্থদের মধ্যে রয়েছেন ব্রাহ্মণ তেতুলিয়া গ্রামের সাইদ সরদারের ছেলে ফারুক হোসেন, মোকামখালী গ্রামের কুদ্দুস সরদারের ছেলে ইমরান, মিত্র তেতুলিয়ার মর্জিনা খাতুনের ছেলে ইকবাল, কামরুলের ছেলে লিফটন, আজিবার সরদারের ছেলে রবিউল, শহীদ গাজীর ছেলে তুহিন, আনিসের ছেলে নাজমুলসহ আরও কয়েকজন।

গুরুতর অসুস্থদের মধ্যে ফারুক হোসেনকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ইমরানকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ঈদের দিন সন্ধ্যায় আশাশুনির তেতুলিয়া শ্মশানঘাট মাঠে বসে জাকির হোসেন টিটু, নাজমুল গাজীসহ মোট ১১ জন একসঙ্গে মদপান করেন। মদপানের পর তারা বাড়ি ফিরে যান এবং ঘুমিয়ে পড়েন।

এরপর রাত ১২টার দিকে একে একে সবাই মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের আশাশুনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জাকির হোসেন টিটু ও নাজমুল গাজী মারা যান। বাকি ৯ জনের চিকিৎসা চলছে।

আশাশুনি থানার ডিউটি অফিসার এসআই ফিরোজ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, "অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে মৃত্যু অন্য কোনো কারণে হয়েছে কিনা, তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে।"

নিহতদের মধ্যে একজনের মরদেহ উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় বিস্তারিত তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

Header Ad
Header Ad

ইরানের ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্র নেটওয়ার্কের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা

ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরান, চীন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) একাধিক ব্যক্তি ও সংস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ইরানের অস্ত্র সংগ্রহ নেটওয়ার্কের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ এই নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয়।

এই পদক্ষেপকে ইরানের ওপর আরও চাপ সৃষ্টির একটি অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর আগে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে সতর্ক করে বলেছিলেন, নতুন পারমাণবিক চুক্তিতে রাজি না হলে দেশটির ওপর বোমা হামলা চালানো বা নতুন শুল্ক আরোপ করা হতে পারে।

মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ ও বিচার বিভাগ যৌথভাবে জানিয়েছে, ইরানের ড্রোন কর্মসূচির অন্যতম প্রধান নির্মাতার জন্য মানববিহীন এয়ার ভেহিকল (ইউএভি)–এর উপকরণ সংগ্রহের সঙ্গে যুক্ত ছয়টি সংস্থা ও দুই ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট এক বিবৃতিতে বলেন, "ইরান তাদের ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়াসহ তাদের প্রক্সিদের সরবরাহ করছে। রুশ বাহিনী এগুলো ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে, যা বেসামরিক নাগরিক, মার্কিন বাহিনী ও মিত্রদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।"

তিনি আরও বলেন, "আমরা ইরানের সামরিক-শিল্প কমপ্লেক্স এবং তাদের ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও প্রচলিত অস্ত্রের বিস্তার ব্যাহত করতে কাজ চালিয়ে যাব।"

মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, নতুন নিষেধাজ্ঞার আওতায় এসেছে একটি ইরান-ভিত্তিক সংস্থা, দুইজন ইরানি নাগরিক, একটি চীন-ভিত্তিক সংস্থা এবং চারটি সংযুক্ত আরব আমিরাত-ভিত্তিক সংস্থা।

এ বিষয়ে জাতিসংঘে ইরানের মিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

Header Ad
Header Ad

বিশ্বব্যাপী অপপ্রচার ছড়াচ্ছে আওয়ামী লীগের দোসররা: রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগের দোসররা বিশ্বব্যাপী অপপ্রচার চালিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, "পরাজিত শক্তি নিউইয়র্ক টাইমসে মিথ্যা তথ্য দিয়ে রিপোর্ট করিয়েছে। ফ্যাসিবাদের দোসররা হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে। তারা এই অবৈধ টাকা ব্যবহার করে বাংলাদেশকে কলঙ্কিত করতে চায়।"

বুধবার (২ এপ্রিল) সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব মন্তব্য করেন।

রিজভী আহমেদ অভিযোগ করেন, "শেখ হাসিনা জঙ্গি দমনের নামে একটি নাটক সাজিয়ে বিশ্ববাসীকে বিভ্রান্ত করেছেন। এটি মূলত ক্ষমতায় টিকে থাকার একটি রাজনৈতিক কৌশল ছিল। এমনকি একজন সাবেক আইজিপির বইয়েও এটি উঠে এসেছে।"

তিনি আরও বলেন, "বাংলাদেশে উগ্রবাদের কোনো উত্থান ঘটেনি। বরং বর্তমানে দেশে ফ্যাসিবাদের কোনো ছোবল নেই, মানুষ নির্বিঘ্নে ধর্মপালন করতে পারছে, কথা বলতে পারছে। এবার মানুষ নির্ভয়ে ঈদ উদযাপন করেছে, যা অতীতে সম্ভব হয়নি।"

আওয়ামী লীগ সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বিএনপির এই নেতা বলেন, "আওয়ামী লীগ বসে নেই, তারা কালো টাকা ব্যবহার করে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। তারা অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। বিদেশে পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগের নেতারাই দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।"

তিনি আরও বলেন, "শেখ হাসিনার নির্দেশে মুগ্ধ ফাইয়াজদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, কিন্তু এ নিয়ে তার কোনো অনুশোচনা নেই। প্রশাসনের চারপাশে আওয়ামী লীগের দোসররা বসে আছে, যার ফলে দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন ভূলুণ্ঠিত হয়েছে।"

রিজভী আহমেদ দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানান। তিনি বলেন, "নির্বাচনী সরকারই হচ্ছে বৈধ সরকার। নির্বাচন নিয়ে গড়িমসি সাধারণ জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হলে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হবে।"

তিনি নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দ্রুত নির্বাচনের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

সাতক্ষীরায় মদপানে দুই যুবকের মৃত্যু, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৯
ইরানের ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্র নেটওয়ার্কের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
বিশ্বব্যাপী অপপ্রচার ছড়াচ্ছে আওয়ামী লীগের দোসররা: রিজভী
দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের ঘটনা ঘটেনি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
আখাউড়ায় ট্রেনের ছাদে টিকটক বানাতে গিয়ে দুর্ঘটনা, নিহত ২
বাংলাদেশকে ভেঙে ফেলার আহ্বান ভারতের ত্রিপুরার রাজপরিবার প্রধানের
বিএনপি কখনোই নির্বাচনের পরে সংস্কারের কথা বলেনি: মির্জা ফখরুল
বিরামপুরে জমি নিয়ে বিরোধ, চাঁদা দাবি ও হামলার ঘটনায় আটক ৫
হলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা ভ্যাল কিলমার আর নেই
ময়মনসিংহে সিনেমা হলে যান্ত্রিক ত্রুটির জেরে দর্শকদের ভাঙচুর
সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ড. ইউনূসের মন্তব্যে ভারতীয় রাজনীতিবিদদের তীব্র প্রতিক্রিয়া
মিয়ানমারের ভূমিকম্পে এক ইমামের ১৭০ স্বজনের মৃত্যু
ঈদের আনন্দে যমুনার দুর্গম চরে গ্রাম-বাংলার ঘুড়ি উৎসব, আনন্দে মেতে উঠে বিনোদনপ্রেমীরা!
ইমামকে ঘোড়ার গাড়িতে রাজকীয় বিদায়, দেওয়া হলো ৯ লাখ টাকার সংবর্ধনা
লন্ডনে একসঙ্গে দেখা গেলো সাবেক চার আওয়ামী মন্ত্রীকে
ঢাকায় ফিরছে ঈদযাত্রীরা, অনেকে ছুটছেন শহরের বাইরে
চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় আবারও সড়ক দুর্ঘটনা, নিহত ৭
বিটিভিতে আজ প্রচারিত হবে ঈদের বিশেষ ‘ইত্যাদি’
ঈদের ছুটিতে ফাঁকা ঢাকা, নেই যানজটের চিরচেনা দৃশ্য
মাদারীপুরে তিন মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ৪, আহত ২