সোমবার, ২৭ জানুয়ারি ২০২৫ | ১৩ মাঘ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-১৯

যারা যুদ্ধ করেছিল

লুকোতে চাইলেও সব কথা লুকনো যায় না। সাকিবের লিঙ্গ কর্তনের কথা রাতারাতি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তারা এই ঘটনা নিয়ে নানা রসিকতা করতে থাকে। আর যারা পাকিস্তানপন্থী তারা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ফজলুর রহমানের মতো ডাক সাইটের মুসলিম লীগার শান্তি কমিটির নেতাকেও মুক্তিবাহিনী ছাড় দেয়নি। বাকিরাতো চুনোপুটি। তারা এর আগে একটু আধটু মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে কিছু বললেও এই ঘটনার পর তারা মুখে কুলুপ এঁটেছে।

লজ্জা শরমে সাকিব বাড়ির বাইরে যায় না। একা একা যাওয়াও সমস্যা। যারা জন্মান্ধ তাদের পথঘাট চিনতে সমস্যা হয় না। তারা পথের নমুনা হৃদয় দিয়ে অনুমান করতে পারে। সাকিব অন্ধ হয়েছে সদ্য। তাকে অন্ধ করেছে মুক্তিবাহিনী। এই লজ্জায়ও সে ঘর থেকে বেরিয়ে কারও সামনে মুখ দেখাতে পারছে না।

সাকিব বাইরে যাচ্ছে না বটে কিন্তু গ্রামবাসির কৌতূহল অবদমন করবে কে? খবর পেয়ে তারা দলে দলে ছুটে আসছে। সাকিবকে ঘিরে তাদের নানা জিজ্ঞাসা। সাকিব নিরব নিঃস্তব্ধ। ঘরে গিয়ে মুখ ঢেকে শুয়ে থাকে। গ্রামবাসি তা সত্ত্বেও ঘরে গিয়ে সাকিবের পাশে বসে। কেউ কেউ সহানুভূতি জানায়। কেউ মুচকি হেসে পরিহাসমূলক কথা বলে।

‘ফজলু চাচাকে তখনই কইছিলাম, ‘মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে বাড়াবাড়ি না করতে। চাচা আমার কথা শুনলো না। উল্টা আমারে আরও নানা ভয় দেখাইলো। এখন কেবা হইল। গরীবের কথা বাসি অইলে ফলে।’

একজন যুবক রহস্য করে বললো, ‘তুইতো নাটকের ডায়লগ ঝাড়া শুরু করলি?’
আরেকজন যুবক থামিয়ে বললো, ‘তোরা কি শুরু করলি? সাকিব ভাইয়ের সর্বনাশ আর তোগো পৌষ মাস।’
‘এটাওতো তুই নাটকের ডায়লগ কইলি।’ চাপা হাসির শব্দ শোনা গেল তারপর।

সাকিবের বুক ফেটে কান্না আসছিল। বার বার মনে হচ্ছিল এটা তার পাপের ফল। আজ যারা তাকে নিয়ে মজা করছে এটা তার প্রাপ্য। নিজেই সে দুর্ভোগ কপালে তুলে নিয়েছে। বন্ধুর বোনকে বাঁচানোর নামে সে যা করেছে এটা খুবই জঘন্য কাজ। পরিণামের কথাটা আগে ভাবা উচিত ছিল। এখন কেঁদে আর কি হবে? এখন আমি নপুংসক। খোজা। বিয়ে করার যোগ্যতা হারিয়েছি। সন্তানের মুখ দেখার সুযোগ হবে না। লোকজনের সামনে মুখই বা কি করে দেখাবো? তার উপর জ্যান্ত মরা হয়ে বেঁচে থাকতে হবে। পৃথিবীর আলো দেখতে পাবো না। এ জীবন রাখার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো।

এদিকে সাকিব অর্ন্তজ্বালায় দগ্ধ হচ্ছে অন্যদিকে সাকিবকে দেখতে আসা প্রতিবেশীদের মজার রসিকতার কমতি হচ্ছে না। তারা দুখির সঙ্গে দুঃখ প্রকাশ না করে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করছে। কদিন আগেও এমন করার সাহস তাদের ছিল না। মুক্তিবাহিনী সাকিবের বাপকে হত্যা এবং সাকিবকে অন্ধ আর খোজা করার পর প্রতিবেশীরা এতটা সাহস পেয়েছে। ফজলুর রহমান শান্তি কমিটির নেতা হওয়াতে প্রতিবেশীরা ছিল হুমকির মুখে। এদের মধ্যে যারা স্বাধীনতাকামী তারা ফজলুর রহমানের শান্তি কমিটিতে যোগ দেওয়া কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি। একের পর এক তার বিতর্কিত কাজ তারা কোনোভাবেই সমর্থন করতে পারছিল না। তারা সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। সেই সুযোগ এমনভাবে হাতে নাতে ফলে যাবে তারাও আশা করতে পারেনি। তাই চাপা আনন্দ তারা চেপে রাখতে পারছে না।
সাকিবের প্রতিবেশী আফজাল হোসেন তারা মামাতো ফুপাতো ভাই। এক সঙ্গে লেখাপড়া করেছে। কলেজে পড়ার সময় প্রেম করে বিয়ে করার পর আর লেখাপড়া করা হয়নি। এখন জুটমিলে জুনিয়র অ্যাকাউন্ট অফিসার পদে চাকরি করে। ২৫ মার্চের পর কিছুদিন মিলে যায়নি। তারপর পরিস্থিতি খানিকটা স্বাভাবিক হলে মামা ফজলুর রহমানের কথা মতো চাকরিতে জয়েন করে। আজই কয়েকদিনের ছুটি নিয়ে বাড়ি এসেছে। এসেই সাকিব এবং ফজলু মামার কাহিনি শুনে দেরি না করে অমনি ছুটে এসেছে সাকিবকে দেখতে। আফজাল এসেই সাকিবের গা ঘেষে বসে। গায়ে হাত বুলায়।

সাকিব জিজ্ঞেস করে, ‘কে?’
আফজাল বলে, ‘আমি আফজাল।’ আফজালকে দেখে অনেকে উঠে চলে যায়। যারা থাকে তারাও আর রঙ্গরসের কথা বলে না। চাপা হাসিও বন্ধ হয়ে যায়।

আফজাল জিজ্ঞেস করে, ‘কিভাবে এমন হলো?’
সাকিব কিছু বলে না। লম্বা করে শ্বাস ফেলে।
আফজাল বলে, ‘মামা শান্তি কমিটি করছে তাকে ধরছে ঠিকআছে। কিন্তু তোকে? তোর জীবনটা এমন করে বরবাদ করলো কেন? তুই কি করেছিস?’ সাকিব এবার শব্দ করে কেঁদে ফেলে।
আফজাল আবার জিজ্ঞেস করে, ‘তুই কি কাউকে চিনতে পেরেছিস?’
‘চিনে লাভ কি? তাদের তুই কিছু করতে পারবি? শক্তিশালী পাকিস্তানি বাহিনী তাদের কিছু করতে পারছে না, তুই সেখানে কি করবি?’
আফজাল বলে, ‘কিছু করতে পারি আর না পারি অন্তত চিনে রাখতাম।’
‘চেনার দরকার নেই। বাপের দেওয়া জানটা আর হারানোর কাম নাই।’
‘চিনা থাকলে তুই নাম ক।’
‘বললাম না বাপের দেওয়া জানটা আর হারানোর কাম নাই।’
‘তুই না বলছিলি মুক্তিবাহিনী এক সপ্তাহের মধ্যে হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে। পাকিস্তানি মিলিটারির সামনে পুচকে মুক্তিবাহিনীরা দাঁড়াতেই পারবে না।’
‘তখন বুঝতে পারিনিরে। পরে বুঝছি শালারা এক একটা ধাইনা মরিচ। পোদ ভরা ঝাল।’
‘মামাকে কোথায় মেরেছে? তার লাশ পাওয়া গেছে?’
‘না।’
‘মামাকে আমি না করছিলাম। মামা হুনলো না। কিন্তু একটা জিনিস আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না, তোকে তারা নিয়া গেল ক্যা? ওরাতো বাপের শাস্তি পোলাকে দেয় না।’

সাকিব জবাব দেয় না। এইসময় বড় ঘর থেকে দুজন মহিলার উচ্চস্বরে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে। আফজাল সচকিত হয়ে সেইদিকে তাকায়। প্রতিবেশী যারা এসেছিল তারা এই ফাঁকে উঠে চলে যায়। আফজাল উঠে বড় ঘরের দিকে যায়। গিয়ে দেখে সাকিবের ছোটখালা আর খালাতো বোন পপি এসেছে। দুই গ্রাম পরেই তাদের বাড়ি। বোনের দুঃখের কাহিনি শুনে থাকতে পারেনি। বিপদের মধ্যেই ছুটে এসেছে। দুই বোন গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। এই দৃশ্য দেখে আফজালেরও চোখ ভিজে আসে।

ছোট খালা বলে. ‘এইসময় দুলাভাইয়ের বাড়িতে থাকার কি দরকার ছিল? সময় খারাপ দুলাভাই বুঝতে পারেনি?’
‘আমিও বারে বারে সাবধান করেছি। আমার কথা কানেই তোলেনি। উল্টা আমাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিয়েছে।’
ছোটখালা বলে, ‘সাকিবকে দিয়ে বলাতে পারতিস।’
আয়েশা বেগম ক্রুব্ধ কণ্ঠে বলে, ‘বাপ-বেটা সমান হইছিল। তোর দুলাভাইকে মাইরা ফেলছে তাও আমি মানতে পারতাম। আমার আদরের ছোয়ালটাকে ওরা জ্যান্ত মরা করছে। ওরা সাকিবের দুই চোখ তুইলা দিছে। ছোয়াল আমার জনমের মতো অন্ধ হয়া গেছে।’ এই কথা শুনে পপির শরীর কেঁপে ওঠে। সাকিব ভাই অন্ধ তাহলে তার কি হবে? তাদের যে অদম্য প্রেম। সেই প্রেমের কি হবে? ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে পপি।

ছোটখালা জিজ্ঞেস করে, ‘সাকিবের চোখ তুলছে ক্যা?’
‘সে কথা আর জিগাইস না। মধ্যপাড়ার মমিন গেছে মুক্তিবাহিনীতে। সাকিব ওর বোন সাথীকে ধইরা নিয়া আইসা এই বাড়িতে রাখতো। রাইতে একসাথে থাকতো। আমি বারে বারে না করছি। বলছি এটা ঘোর অন্যায়, মহাপাপ। এই পাপ আল্লাহ কোনোদিন মাফ করবে না। তারা বাপ-বেটা মিলা আমারে বুঝায়, সাথীর ভাই পাকিস্তান ভাঙার লাইগা ভারতের হিন্দুদের সাথে হাত মিলাইছে। সেই কারণে সাথী নাকি এখন শত্রুর বোন, গণিমতের মাল। তাকে ভোগ করার কথা নাকি হাদীসে আছে।’

ছোটখালা মিন মিন করে বলে, ‘আছেতো। হাদীস কোরআনে এ সব কথা উল্লেখ আছে।’
‘এইটা কোন কথা হইল?’ আয়েশা বেগম আবারও কান্না গলায় ফুঁপিয়ে ওঠে। সব হারিয়ে মানুষ যেমন দিশেহারা হয়ে পড়ে আয়েশা বেগমও তেমনি দিশেহারা হয়ে কথার তাল হারিয়ে ফেলেছে। সে কি বলছে নিজেই বুঝতে পারছে না। তার যেন স্বাভাবিক জ্ঞান লোপ পেয়েছে। কি বলা যাবে আর কি বলা যাবে না এ সব তার মাথায় কাজ করছে না। সে রাগতঃ বলে উঠলো, ‘বোনকে গণিমতের মাল বানানোর প্রতিশোধ নিতে একরাতে সাথীর ভাই দলবল নিয়া এসে আমার ছেলে আর ওর বাপকে ধরে নিয়ে যায়। তোর দুলাভাইকে জবাই করে। তার লাশটা পর্যন্ত পাই নাই। আর সাকিবকে অন্ধ কইরা...... ’

আয়েশা বেগমর কথা শেষ হয় না। টিনের ঘরের ছাদ কাঁপিয়ে ও...বাবাগো বলে শব্দ করে কেঁদে ওঠে। কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘ছোয়াল আমার জন্মের নুলা হইছে। তাকে আমি বিয়াও করাইতে পারমু না।’
‘ক্যা?’ ছোটখালা বিষ্ময়ে জিজ্ঞেস করে।
‘ওরা সাকিবরে খোজা বানায়া দিছে।’
‘সর্বনাশ! এই কথা মাইনষের কাছে কওয়া যাইবো? বুবু তুমি চুপ করো।’
‘আমি চুপ করলে কি ঘটনা থেমে থাকবে?’

মুহূর্তে পপির কান্না বিপরীতমুখী হয়ে ওঠে। এ কি শুনছে সে। সাকিব ভেতরে ভেতরে এতোটা শয়তান। পপি ঘুণাক্ষরেও ধারণা করতে পারেনি। সাকিব মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী এটাও পপি মানতে পারেনি। সাকিবকে চিঠি লিখে সে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে অনুরোধ করেছিল। একবার ভেবেছিল তাকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বিরুদ্ধ মত সে বদলিয়ে দেবে। তাকে যুদ্ধে পাঠাবে। অন্তত জামাতের সমর্থক পিতার পাপ খানিকটা পুত্র কাধে নিয়ে পিতার শাস্তি খানিকটা হাল্কা করতে পারে। তাছাড়া একজন যুবক হিসেবে দেশের স্বাধীনতার জন্য শত্রুর মুখোমুখি বুক চিতিয়ে না দাঁড়ালে কিসের সে দেশের সে দেশের সন্তান? কোথায় তার দেশ প্রেম? যেখানে পাকিস্তানিরা এদেশের নারীদের নির্বিচারে ধর্ষণ করছে। এমন ঘটনা শুনে একজন যুবক কিভাবে ঘরে বসে থাকতে পারে? তাহলে সে কিসের পুরুষ?
পপি এখন যা শুনছে তাতে আর কষ্ট হচ্ছে না। মনে হচ্ছে সাকিব তার কাজের উপযুক্ত শাস্তি পেয়েছে।

পপি পায়ে পায়ে সাকিবের ঘরে যায় নিঃশব্দে। সাকিব মাথার নিচে হাত দিয়ে উদাসভাবে শুয়ে আছে। তার দুচোখে ব্যান্ডেজ। চোখের ঘা পুরোপুরি ঠিক হয়নি। ব্যথা বেদনা এখনো সাকিবকে ঘুমোতে দেয় না। পপি নিঃশব্দে ঢুকলেও সাকিব বুঝতে পারে তার ঘরে কে যেন ঢুকেছে। সাকিব অনুস্বরে জিজ্ঞেস করে, ‘কে?’
‘আমি।’ পপি জবাব দেয়।
‘তুমি কখন এলে?’
‘অনেকক্ষণ।’
সাকিব হতাশ কণ্ঠে বলে, ‘পপি, কি চেয়েছিলাম আর কি হলো?’
পপি আকস্মিক জিজ্ঞেস করে, ‘সাথী কে?’

সাকিব সহজভাবে জবাব দিতে থাকে। পপি ভেবেছিল সাথীর প্রশ্নে সাকিব নির্বাক হয়ে যাবে। সাকিব করে উল্টোটি। জীবনে সবই হারিয়ে গেছে এখন আর ভনিতা করে কি লাভ? জবাবে সাকিব বলে, ‘মধ্যপাড়ার আমার বন্ধু মমিনের ছোটবোন সাথী। কলেজে প্রথম বর্ষে পড়ে। আর কিছু?’
‘না। আর কি বলবো? বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।’ পপি নিরুত্তাপ কণ্ঠে বলে।

সাকিব দম নিয়ে হতাশ কণ্ঠে বলে, ‘আমাদের সম্পর্কের কথা ভুলে যাও পপি। পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।’
‘ক্ষমা না করে উপায় কি? তুমিতো তোমার কর্মফল পেয়ে গেছ। অথচ আমি তোমাকে চেয়েছিলাম দেশপ্রেমিক বীর যোদ্ধা হিসেবে। তোমাকে সে কথা চিঠিতে লিখেছিলাম। তুমি কানে তোলনি। উল্টো তুমি রাজাকারের পক্ষ নিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করেছ। তুমি যা করেছ সেটা তোমার ব্যাপার। তুমি ভুলে যেতে না বললেও আমি ঠিকই ভুলে যেতাম। অন্তত ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করতাম। কারণ পলাশীর যুদ্ধের আড়াইশো বছর পরও মানুষ মীরজাফরকে ঘৃণা করে। কেন করে জানো, দেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার জন্য।’

কথাগুলো ঝড়ের গতিতে বলে পপি আর দেরি করে না। দ্রুত বেরিয়ে যায়।

চলবে…

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-১৮

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-১৭

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব- ১৬

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব- ১৫

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-১৪

Header Ad
Header Ad

পুলিশের শতকরা ৮০ জনের হৃদয়ে ছাত্রলীগ: আসিফ নজরুল

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, বর্তমান পুলিশের শতকরা ৮০ জনই আওয়ামী আমলের, যাদের হৃদয়ে ছাত্রলীগ। তারাই এ সরকারের জন্য কাজ করছে না।

রোববার (২৬ জানুয়ারি) জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে চারটি বইয়ে প্রকাশনা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে এ মন্তব্য করেন তিনি।

আইন উপদেষ্টা বলেন, বিপ্লব পরবর্তী কিছু সমস্যা থাকে। তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে সরকার। গণঅভ্যুত্থান নিয়ে সকলের মধ্যে যে ঐক্য ছিল, সেই ঐক্য আগামীতেও অব্যাহত থাকবে বলেও আশাপ্রকাশ করেন আসিফ নজরুল।

এর আগে, সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক পোস্টে বিএনপির সঙ্গে গণঅভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের কোনো দূরত্ব বা ভুল বোঝাবুঝি কাম্য নয় বলে মন্তব্য করেন আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে গণ-অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের কোনো দূরত্ব বা ভুল বোঝাবুঝি কাম্য নয়। এটি গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও তাদের দোসরদের কতটা উৎসাহিত এবং বেপরোয়া করে তুলতে পারে তার কিছুটা প্রমাণ আমরা গত কয়েক দিনে পেয়েছি।

আইন উপদেষ্টা বলেন, তিনি যতটা জানেন এবং বিশ্বাস করেন— বিএনপি কোনো ষড়যন্ত্রে জড়িত নয় এবং তারা ১/১১ ধরনের কিছু করতে চাচ্ছে না, ছাত্রনেতারা সরকারের অংশ হিসেবে কোনো নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাচ্ছে না বা এতে যোগ দিচ্ছে না, জুলাই ঘোষণাপত্র একটি রাজনৈতিক দলিল হবে এবং ছাত্রনেতারা গণঅভ্যুত্থানের শক্তির মতামত সঠিকভাবে প্রতিফলিত করার জন্য চেষ্টা করছেন এবং বিএনপি এবং ছাত্রনেতারা এমনকি নির্বাচন কেন্দ্রিক বৃহত্তর সমঝোতার ব্যাপারে আগ্রহী, তবে সেটি আলোচনা সাপেক্ষে। এর অর্থ হলো, বিরোধের কোনো কারণ নেই, বরং সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

আসিফ নজরুল আরও বলেন, গণহত্যায় জড়িতদের হাতে রয়েছে লুটপাট করা বিপুল পরিমাণ টাকা, অনেক সুবিধাবাদী গোষ্ঠী, শক্তিশালী প্রচারণা নেটওয়ার্ক এবং শক্তিশালী আন্তর্জাতিক সমর্থন। তাদের বিরুদ্ধে যদি কিছু করতে হয়, তবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ছাত্রদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের মধ্যে ভিন্নমত থাকবে, তবে তা যেন দেশের শত্রুদের জন্য উৎসাহের কারণ না হয়।

Header Ad
Header Ad

৭ কলেজ শিক্ষার্থীদের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মামুন আহমেদের পদত্যাগ এবং শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচারের দাবিতে সোমবার (২৭ জানুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।

রোববার (২৬ জানুয়ারি) শেষ রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর আন্দোলনের সংগঠক আব্দুর রহমান।

তিনি বলেন, বিচারের আগে কোনো ধরনের পরীক্ষা হবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বৈরাচারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে ৭ কলেজকে ঢাবির অধিভুক্তি থেকে বাতিল করে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলাম।

তিনি বলেন, চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকেই স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার দাবি ছিল আমাদের। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তা করেনি। উল্টো ধারণক্ষমতার চেয়েও বেশি শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা এসব নিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছি। সবশেষ বিশ্ববিদ্যালয় প্রো-ভিসি (শিক্ষা) আমাদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছেন। এর প্রতিবাদে গণতন্ত্র ও মুক্তি তোরণের নিচে অবস্থানকালে ঢাবি শিক্ষার্থী ও পুলিশ সম্মিলিতভাবে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়।

৭ কলেজকে নিয়ে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা করতে হবে, এমন দাবি জানিয়ে আব্দুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রো-ভিসি মামুন আহমেদের বিচার করতে হবে।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সোমবার সকাল ৯টা থেকে ঢাকা শহর অবরোধ করা হবে। সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ক্যাম্পাস এলাকায় অবরোধ কর্মসূচি পালন করবেন।

Header Ad
Header Ad

ছাদের কার্নিসে ঝুলে থাকা শিক্ষার্থীকে গুলি, সেই এসআই চঞ্চল গ্রেপ্তার

শিক্ষার্থীকে গুলি করা পুলিশের সেই উপপরিদর্শক (এসআই) চঞ্চল সরকার। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় ছাদের কার্নিসে ঝুলে থাকা শিক্ষার্থীকে গুলি করা পুলিশের সেই উপপরিদর্শক (এসআই) চঞ্চল সরকারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের হোতাকে খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা থেকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা থেকে আসা পুলিশের একটি বিশেষ ইউনিট।

রোববার (২৬ জানুয়ারি) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল তানভীর হাসান জোহার নেতৃত্বে একটি টিম দীঘিনালায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে।

দীঘিনালা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকারিয়া এসআই চঞ্চল সরকারকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি করেছেন। তিনি জানান, রাত সাড়ে ৯টার দিকে দীঘিনালা থানা থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশ তাকে আটক করে। আটকের পর রাতেই তাকে ঢাকার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

জুলাই আন্দোলনে মৃত্যুর ভয়ে ৪ তলার কার্নিশে ঝুলে থাকা কিশোরকে ঠাণ্ডা মাথায় খুব কাছ থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি করে হত্যা করে দুই পুলিশ।

রামপুরা-বনশ্রীর মেরাদিয়া বাজারে অবস্থিত রামপুরা থানার পার্শ্ববর্তী নির্মাণাধীন বিল্ডিং-এ পুলিশের গুলিতে টিকতে না পেরে কিশোর ছেলেটি থানার পাশেই মেইনরোড সংলগ্ন একটি নির্মাণাধীন ৪তলা ভবনে উঠে যায়। সবাই চলে যেতে পারলেও এই কিশোর ওই ভবনে আটকা পড়ে যায়। ৪ তলার ছাদের সাইড দিয়ে নেমে সে নিজেকে লুকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তাকে দেখেই দুই পুলিশ রিভলভার দিয়ে পর পর ছয় রাউন্ড গুলি করে ওই কিশোরের মৃত্যু নিশ্চিত করেন।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর গত ৭ নভেম্বর এসআই চঞ্চল সরকার দীঘিনালা থানায় যোগদান করেন। আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন তিনি।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

পুলিশের শতকরা ৮০ জনের হৃদয়ে ছাত্রলীগ: আসিফ নজরুল
৭ কলেজ শিক্ষার্থীদের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি
ছাদের কার্নিসে ঝুলে থাকা শিক্ষার্থীকে গুলি, সেই এসআই চঞ্চল গ্রেপ্তার
সাত কলেজের সব পরীক্ষা স্থগিত
আজ পবিত্র শবে মেরাজ
মধ্যরাতে ঢাবি ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, আহত ৮
সাবেক দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান গ্রেপ্তার
রয়্যাল এনফিল্ড কিনে না দেয়ায় ট্রেনের নিচে ঝাঁপ কিশোরের!
রংপুরের টানা দ্বিতীয় হার, রাজশাহীর নাটকীয় জয়
সায়েন্সল্যাব ও টেকনিক্যাল মোড় অবরোধ করেছেন সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা
আসাদুজ্জামান খান কামাল বাংলাদেশের কসাই: প্রেস সচিব
পুলিশের সংখ্যা পর্যাপ্ত, কিন্তু মনোবলের ঘাটতি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
বাংলাদেশে আসছে স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট
মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ড যাচ্ছেন বাংলাদেশি রোগীরা, কলকাতার হাসপাতাল ব্যবসায় ধস
২৫ দিনে এলো ২০৪৪৭ কোটি টাকার প্রবাসী আয়
বেতন-ভাতায় না পোষালে অন্য পেশায় চলে যান: প্রাথমিক শিক্ষা উপদেষ্টা
অ্যাডভোকেট তপন বিহারী নাগ ট্রাস্ট বৃত্তি পেলেন কুবির ৩০ শিক্ষার্থী
নির্বাচনের কথা বললে উপদেষ্টাদের মুখ কালো হয়ে যায়: মেজর হাফিজ
পদ্মশ্রী পাচ্ছেন সংগীতশিল্পী অরিজিৎ সিং
‘মাকে খুশি করতে’ শিক্ষার্থী সেজে রাবিতে ক্লাস, চার মাস পর আটক