বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-১৯

যারা যুদ্ধ করেছিল

লুকোতে চাইলেও সব কথা লুকনো যায় না। সাকিবের লিঙ্গ কর্তনের কথা রাতারাতি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তারা এই ঘটনা নিয়ে নানা রসিকতা করতে থাকে। আর যারা পাকিস্তানপন্থী তারা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ফজলুর রহমানের মতো ডাক সাইটের মুসলিম লীগার শান্তি কমিটির নেতাকেও মুক্তিবাহিনী ছাড় দেয়নি। বাকিরাতো চুনোপুটি। তারা এর আগে একটু আধটু মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে কিছু বললেও এই ঘটনার পর তারা মুখে কুলুপ এঁটেছে।

লজ্জা শরমে সাকিব বাড়ির বাইরে যায় না। একা একা যাওয়াও সমস্যা। যারা জন্মান্ধ তাদের পথঘাট চিনতে সমস্যা হয় না। তারা পথের নমুনা হৃদয় দিয়ে অনুমান করতে পারে। সাকিব অন্ধ হয়েছে সদ্য। তাকে অন্ধ করেছে মুক্তিবাহিনী। এই লজ্জায়ও সে ঘর থেকে বেরিয়ে কারও সামনে মুখ দেখাতে পারছে না।

সাকিব বাইরে যাচ্ছে না বটে কিন্তু গ্রামবাসির কৌতূহল অবদমন করবে কে? খবর পেয়ে তারা দলে দলে ছুটে আসছে। সাকিবকে ঘিরে তাদের নানা জিজ্ঞাসা। সাকিব নিরব নিঃস্তব্ধ। ঘরে গিয়ে মুখ ঢেকে শুয়ে থাকে। গ্রামবাসি তা সত্ত্বেও ঘরে গিয়ে সাকিবের পাশে বসে। কেউ কেউ সহানুভূতি জানায়। কেউ মুচকি হেসে পরিহাসমূলক কথা বলে।

‘ফজলু চাচাকে তখনই কইছিলাম, ‘মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে বাড়াবাড়ি না করতে। চাচা আমার কথা শুনলো না। উল্টা আমারে আরও নানা ভয় দেখাইলো। এখন কেবা হইল। গরীবের কথা বাসি অইলে ফলে।’

একজন যুবক রহস্য করে বললো, ‘তুইতো নাটকের ডায়লগ ঝাড়া শুরু করলি?’
আরেকজন যুবক থামিয়ে বললো, ‘তোরা কি শুরু করলি? সাকিব ভাইয়ের সর্বনাশ আর তোগো পৌষ মাস।’
‘এটাওতো তুই নাটকের ডায়লগ কইলি।’ চাপা হাসির শব্দ শোনা গেল তারপর।

সাকিবের বুক ফেটে কান্না আসছিল। বার বার মনে হচ্ছিল এটা তার পাপের ফল। আজ যারা তাকে নিয়ে মজা করছে এটা তার প্রাপ্য। নিজেই সে দুর্ভোগ কপালে তুলে নিয়েছে। বন্ধুর বোনকে বাঁচানোর নামে সে যা করেছে এটা খুবই জঘন্য কাজ। পরিণামের কথাটা আগে ভাবা উচিত ছিল। এখন কেঁদে আর কি হবে? এখন আমি নপুংসক। খোজা। বিয়ে করার যোগ্যতা হারিয়েছি। সন্তানের মুখ দেখার সুযোগ হবে না। লোকজনের সামনে মুখই বা কি করে দেখাবো? তার উপর জ্যান্ত মরা হয়ে বেঁচে থাকতে হবে। পৃথিবীর আলো দেখতে পাবো না। এ জীবন রাখার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো।

এদিকে সাকিব অর্ন্তজ্বালায় দগ্ধ হচ্ছে অন্যদিকে সাকিবকে দেখতে আসা প্রতিবেশীদের মজার রসিকতার কমতি হচ্ছে না। তারা দুখির সঙ্গে দুঃখ প্রকাশ না করে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করছে। কদিন আগেও এমন করার সাহস তাদের ছিল না। মুক্তিবাহিনী সাকিবের বাপকে হত্যা এবং সাকিবকে অন্ধ আর খোজা করার পর প্রতিবেশীরা এতটা সাহস পেয়েছে। ফজলুর রহমান শান্তি কমিটির নেতা হওয়াতে প্রতিবেশীরা ছিল হুমকির মুখে। এদের মধ্যে যারা স্বাধীনতাকামী তারা ফজলুর রহমানের শান্তি কমিটিতে যোগ দেওয়া কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি। একের পর এক তার বিতর্কিত কাজ তারা কোনোভাবেই সমর্থন করতে পারছিল না। তারা সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। সেই সুযোগ এমনভাবে হাতে নাতে ফলে যাবে তারাও আশা করতে পারেনি। তাই চাপা আনন্দ তারা চেপে রাখতে পারছে না।
সাকিবের প্রতিবেশী আফজাল হোসেন তারা মামাতো ফুপাতো ভাই। এক সঙ্গে লেখাপড়া করেছে। কলেজে পড়ার সময় প্রেম করে বিয়ে করার পর আর লেখাপড়া করা হয়নি। এখন জুটমিলে জুনিয়র অ্যাকাউন্ট অফিসার পদে চাকরি করে। ২৫ মার্চের পর কিছুদিন মিলে যায়নি। তারপর পরিস্থিতি খানিকটা স্বাভাবিক হলে মামা ফজলুর রহমানের কথা মতো চাকরিতে জয়েন করে। আজই কয়েকদিনের ছুটি নিয়ে বাড়ি এসেছে। এসেই সাকিব এবং ফজলু মামার কাহিনি শুনে দেরি না করে অমনি ছুটে এসেছে সাকিবকে দেখতে। আফজাল এসেই সাকিবের গা ঘেষে বসে। গায়ে হাত বুলায়।

সাকিব জিজ্ঞেস করে, ‘কে?’
আফজাল বলে, ‘আমি আফজাল।’ আফজালকে দেখে অনেকে উঠে চলে যায়। যারা থাকে তারাও আর রঙ্গরসের কথা বলে না। চাপা হাসিও বন্ধ হয়ে যায়।

আফজাল জিজ্ঞেস করে, ‘কিভাবে এমন হলো?’
সাকিব কিছু বলে না। লম্বা করে শ্বাস ফেলে।
আফজাল বলে, ‘মামা শান্তি কমিটি করছে তাকে ধরছে ঠিকআছে। কিন্তু তোকে? তোর জীবনটা এমন করে বরবাদ করলো কেন? তুই কি করেছিস?’ সাকিব এবার শব্দ করে কেঁদে ফেলে।
আফজাল আবার জিজ্ঞেস করে, ‘তুই কি কাউকে চিনতে পেরেছিস?’
‘চিনে লাভ কি? তাদের তুই কিছু করতে পারবি? শক্তিশালী পাকিস্তানি বাহিনী তাদের কিছু করতে পারছে না, তুই সেখানে কি করবি?’
আফজাল বলে, ‘কিছু করতে পারি আর না পারি অন্তত চিনে রাখতাম।’
‘চেনার দরকার নেই। বাপের দেওয়া জানটা আর হারানোর কাম নাই।’
‘চিনা থাকলে তুই নাম ক।’
‘বললাম না বাপের দেওয়া জানটা আর হারানোর কাম নাই।’
‘তুই না বলছিলি মুক্তিবাহিনী এক সপ্তাহের মধ্যে হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে। পাকিস্তানি মিলিটারির সামনে পুচকে মুক্তিবাহিনীরা দাঁড়াতেই পারবে না।’
‘তখন বুঝতে পারিনিরে। পরে বুঝছি শালারা এক একটা ধাইনা মরিচ। পোদ ভরা ঝাল।’
‘মামাকে কোথায় মেরেছে? তার লাশ পাওয়া গেছে?’
‘না।’
‘মামাকে আমি না করছিলাম। মামা হুনলো না। কিন্তু একটা জিনিস আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না, তোকে তারা নিয়া গেল ক্যা? ওরাতো বাপের শাস্তি পোলাকে দেয় না।’

সাকিব জবাব দেয় না। এইসময় বড় ঘর থেকে দুজন মহিলার উচ্চস্বরে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে। আফজাল সচকিত হয়ে সেইদিকে তাকায়। প্রতিবেশী যারা এসেছিল তারা এই ফাঁকে উঠে চলে যায়। আফজাল উঠে বড় ঘরের দিকে যায়। গিয়ে দেখে সাকিবের ছোটখালা আর খালাতো বোন পপি এসেছে। দুই গ্রাম পরেই তাদের বাড়ি। বোনের দুঃখের কাহিনি শুনে থাকতে পারেনি। বিপদের মধ্যেই ছুটে এসেছে। দুই বোন গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। এই দৃশ্য দেখে আফজালেরও চোখ ভিজে আসে।

ছোট খালা বলে. ‘এইসময় দুলাভাইয়ের বাড়িতে থাকার কি দরকার ছিল? সময় খারাপ দুলাভাই বুঝতে পারেনি?’
‘আমিও বারে বারে সাবধান করেছি। আমার কথা কানেই তোলেনি। উল্টা আমাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিয়েছে।’
ছোটখালা বলে, ‘সাকিবকে দিয়ে বলাতে পারতিস।’
আয়েশা বেগম ক্রুব্ধ কণ্ঠে বলে, ‘বাপ-বেটা সমান হইছিল। তোর দুলাভাইকে মাইরা ফেলছে তাও আমি মানতে পারতাম। আমার আদরের ছোয়ালটাকে ওরা জ্যান্ত মরা করছে। ওরা সাকিবের দুই চোখ তুইলা দিছে। ছোয়াল আমার জনমের মতো অন্ধ হয়া গেছে।’ এই কথা শুনে পপির শরীর কেঁপে ওঠে। সাকিব ভাই অন্ধ তাহলে তার কি হবে? তাদের যে অদম্য প্রেম। সেই প্রেমের কি হবে? ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে পপি।

ছোটখালা জিজ্ঞেস করে, ‘সাকিবের চোখ তুলছে ক্যা?’
‘সে কথা আর জিগাইস না। মধ্যপাড়ার মমিন গেছে মুক্তিবাহিনীতে। সাকিব ওর বোন সাথীকে ধইরা নিয়া আইসা এই বাড়িতে রাখতো। রাইতে একসাথে থাকতো। আমি বারে বারে না করছি। বলছি এটা ঘোর অন্যায়, মহাপাপ। এই পাপ আল্লাহ কোনোদিন মাফ করবে না। তারা বাপ-বেটা মিলা আমারে বুঝায়, সাথীর ভাই পাকিস্তান ভাঙার লাইগা ভারতের হিন্দুদের সাথে হাত মিলাইছে। সেই কারণে সাথী নাকি এখন শত্রুর বোন, গণিমতের মাল। তাকে ভোগ করার কথা নাকি হাদীসে আছে।’

ছোটখালা মিন মিন করে বলে, ‘আছেতো। হাদীস কোরআনে এ সব কথা উল্লেখ আছে।’
‘এইটা কোন কথা হইল?’ আয়েশা বেগম আবারও কান্না গলায় ফুঁপিয়ে ওঠে। সব হারিয়ে মানুষ যেমন দিশেহারা হয়ে পড়ে আয়েশা বেগমও তেমনি দিশেহারা হয়ে কথার তাল হারিয়ে ফেলেছে। সে কি বলছে নিজেই বুঝতে পারছে না। তার যেন স্বাভাবিক জ্ঞান লোপ পেয়েছে। কি বলা যাবে আর কি বলা যাবে না এ সব তার মাথায় কাজ করছে না। সে রাগতঃ বলে উঠলো, ‘বোনকে গণিমতের মাল বানানোর প্রতিশোধ নিতে একরাতে সাথীর ভাই দলবল নিয়া এসে আমার ছেলে আর ওর বাপকে ধরে নিয়ে যায়। তোর দুলাভাইকে জবাই করে। তার লাশটা পর্যন্ত পাই নাই। আর সাকিবকে অন্ধ কইরা...... ’

আয়েশা বেগমর কথা শেষ হয় না। টিনের ঘরের ছাদ কাঁপিয়ে ও...বাবাগো বলে শব্দ করে কেঁদে ওঠে। কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘ছোয়াল আমার জন্মের নুলা হইছে। তাকে আমি বিয়াও করাইতে পারমু না।’
‘ক্যা?’ ছোটখালা বিষ্ময়ে জিজ্ঞেস করে।
‘ওরা সাকিবরে খোজা বানায়া দিছে।’
‘সর্বনাশ! এই কথা মাইনষের কাছে কওয়া যাইবো? বুবু তুমি চুপ করো।’
‘আমি চুপ করলে কি ঘটনা থেমে থাকবে?’

মুহূর্তে পপির কান্না বিপরীতমুখী হয়ে ওঠে। এ কি শুনছে সে। সাকিব ভেতরে ভেতরে এতোটা শয়তান। পপি ঘুণাক্ষরেও ধারণা করতে পারেনি। সাকিব মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী এটাও পপি মানতে পারেনি। সাকিবকে চিঠি লিখে সে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে অনুরোধ করেছিল। একবার ভেবেছিল তাকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বিরুদ্ধ মত সে বদলিয়ে দেবে। তাকে যুদ্ধে পাঠাবে। অন্তত জামাতের সমর্থক পিতার পাপ খানিকটা পুত্র কাধে নিয়ে পিতার শাস্তি খানিকটা হাল্কা করতে পারে। তাছাড়া একজন যুবক হিসেবে দেশের স্বাধীনতার জন্য শত্রুর মুখোমুখি বুক চিতিয়ে না দাঁড়ালে কিসের সে দেশের সে দেশের সন্তান? কোথায় তার দেশ প্রেম? যেখানে পাকিস্তানিরা এদেশের নারীদের নির্বিচারে ধর্ষণ করছে। এমন ঘটনা শুনে একজন যুবক কিভাবে ঘরে বসে থাকতে পারে? তাহলে সে কিসের পুরুষ?
পপি এখন যা শুনছে তাতে আর কষ্ট হচ্ছে না। মনে হচ্ছে সাকিব তার কাজের উপযুক্ত শাস্তি পেয়েছে।

পপি পায়ে পায়ে সাকিবের ঘরে যায় নিঃশব্দে। সাকিব মাথার নিচে হাত দিয়ে উদাসভাবে শুয়ে আছে। তার দুচোখে ব্যান্ডেজ। চোখের ঘা পুরোপুরি ঠিক হয়নি। ব্যথা বেদনা এখনো সাকিবকে ঘুমোতে দেয় না। পপি নিঃশব্দে ঢুকলেও সাকিব বুঝতে পারে তার ঘরে কে যেন ঢুকেছে। সাকিব অনুস্বরে জিজ্ঞেস করে, ‘কে?’
‘আমি।’ পপি জবাব দেয়।
‘তুমি কখন এলে?’
‘অনেকক্ষণ।’
সাকিব হতাশ কণ্ঠে বলে, ‘পপি, কি চেয়েছিলাম আর কি হলো?’
পপি আকস্মিক জিজ্ঞেস করে, ‘সাথী কে?’

সাকিব সহজভাবে জবাব দিতে থাকে। পপি ভেবেছিল সাথীর প্রশ্নে সাকিব নির্বাক হয়ে যাবে। সাকিব করে উল্টোটি। জীবনে সবই হারিয়ে গেছে এখন আর ভনিতা করে কি লাভ? জবাবে সাকিব বলে, ‘মধ্যপাড়ার আমার বন্ধু মমিনের ছোটবোন সাথী। কলেজে প্রথম বর্ষে পড়ে। আর কিছু?’
‘না। আর কি বলবো? বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।’ পপি নিরুত্তাপ কণ্ঠে বলে।

সাকিব দম নিয়ে হতাশ কণ্ঠে বলে, ‘আমাদের সম্পর্কের কথা ভুলে যাও পপি। পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।’
‘ক্ষমা না করে উপায় কি? তুমিতো তোমার কর্মফল পেয়ে গেছ। অথচ আমি তোমাকে চেয়েছিলাম দেশপ্রেমিক বীর যোদ্ধা হিসেবে। তোমাকে সে কথা চিঠিতে লিখেছিলাম। তুমি কানে তোলনি। উল্টো তুমি রাজাকারের পক্ষ নিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করেছ। তুমি যা করেছ সেটা তোমার ব্যাপার। তুমি ভুলে যেতে না বললেও আমি ঠিকই ভুলে যেতাম। অন্তত ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করতাম। কারণ পলাশীর যুদ্ধের আড়াইশো বছর পরও মানুষ মীরজাফরকে ঘৃণা করে। কেন করে জানো, দেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার জন্য।’

কথাগুলো ঝড়ের গতিতে বলে পপি আর দেরি করে না। দ্রুত বেরিয়ে যায়।

চলবে…

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-১৮

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-১৭

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব- ১৬

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব- ১৫

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-১৪

Header Ad

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’

ছবি: সংগৃহীত

দেশের জনপ্রিয় নির্মাতা আশফাক নিপুন। কাজের পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমেও বেশ সরব তিনি। কথা বলেন নানা ইস্যু নিয়ে। সেই ধারাবাহিকতায় সরকার পতনের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনেও বিভিন্ন সময় নিজের আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যেও বিভিন্ন বার্তা দিয়েছেন। এবার এমনি একটি বার্তায় দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জনগনের আস্থার বিষয়ে আক্ষেপ জানালেন এই নির্মাতা।

বুধবার (২০ নভেম্বর) আশফাক নিপুন তার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে লেখেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সর্বস্তরের ছাত্র এবং সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল, বাসায় বসে বসে দোয়া করেছিল, যার যা সামর্থ্য দিয়ে সহায়তা করেছিল। কারণ, তারা দেখেছিল লড়াইটা আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শাসক বনাম সাধারণ ছাত্র-জনতার। এটাও অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই যে এই আন্দোলন বেগবান করতে বিরোধী সকল দলের কর্মীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাদের সংগ্রামও গত দেড় দশকের। কিন্তু এটা যদি শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার লড়াই হতো তাহলে সাধারণ মানুষ এই লড়াই থেকে দূরে থাকত। সেই প্রমাণ বিগত ১৫ বছরে আছে।

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ এখনো দেশের কোনো রাজনৈতিক দলকেই পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারে না। এটাই বাস্তবতা। এই বাস্তবতা মেনে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত কীভাবে সাধারণ জনগণের ভেতর নিজের দলের প্রতি আস্থা তৈরি করা যায় সেই বিষয়ে নিরলস কাজ করা। এই আস্থা ক্ষমতায় গিয়ে অর্জন করা সম্ভব না। কারণ, সাধারণ মানুষ আজীবন এস্টাবলিশমেন্টের বিপক্ষে। এই আস্থা অর্জন করতে হয় ক্ষমতা বলয়ের বাইরে থেকেই।

নিপুন আরও লিখেন, অরাজনৈতিক সরকার দিয়ে দীর্ঘদিন দেশ চালানো যেমন কাজের কথা না ঠিক তেমনি রাজনৈতিক সরকার হতে চাওয়া সকল রাজনৈতিক দলগুলোর বোঝা উচিত মুক্তিযুদ্ধের পরে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে সকল প্রকার পূর্বানুমান (যেমন- বর্ষাকালে আন্দোলন হয় না, নির্বাচনের আগেই কেবল জোরেশোরে আন্দোলন হয়, ঘোষণা দিয়ে বিরোধী সকল পক্ষ আন্দোলনে শামিল না হলে সফল হয় না) অগ্রাহ্য করেই। সেটা সম্ভব হয়েছে সাধারণ মানুষের ন্যায্যতার আকাঙ্ক্ষা থেকেই।

সবশেষ এই নির্মাতা লিখেছেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের এই আকাঙ্ক্ষার দুই পয়সার দাম দেন নাই। সাধারণ মানুষের এই আকাঙ্ক্ষা, ইচ্ছা আর দেশপ্রেমকে পুঁজি করে অরাজনৈতিক এবং রাজনৈতিক যারাই রাজনীতি রাজনীতি খেলতে চাইবে, তাদের দশাও কোন একসময় যেন পলাতক শেখ হাসিনার মতো না হয়, সেই বিষয় নিশ্চিত করতে হবে তাদেরকেই।

Header Ad

‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’: প্রধান উপদেষ্টা

ফাইল ছবি

জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, জুলাই-আগস্ট ছাত্র জনতার বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করেছি। এ নতুন দেশে আমাদের দায়িত্ব সকল মানুষকে এক বৃহত্তর পরিবারের বন্ধনে আবদ্ধ করা। কেউ কারো উপরে না, আবার কেউ কারো নিচেও না, এই ধারণা আমরা আমাদের জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।

তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে সুযোগ ছাত্র-জনতার সাহস ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে সম্প্রতি আমরা অর্জন করেছি, সেটাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী ভবিষ্যৎ গড়তে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ, আহত এবং জীবিত ছাত্র-জনতার কাছে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে চাই। যে সুযোগ তারা আমাদের দিয়েছে, তার মাধ্যমে আমাদের দেশকে পৃথিবীর সামনে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী দেশে পরিণত করতে আমরা শপথ নিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, ছাত্র আন্দোলনে জীবন উৎসর্গ করে যারা দেশ গঠনের সুযোগ করে দিয়েছে জাতি তাদের সারা জীবন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।

বক্তব্য শেষে সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা। পরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

Header Ad

নওগাঁ শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু

ছবি: সংগৃহীত

নওগাঁ শহরে যানযট নিরসন ও শৃঙ্খলা ফেরাতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, পৌর কর্তৃপক্ষ ও রিকশা মালিক-শ্রমিকদের যৌথ উদ্যোগে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। এতে শহরে শৃঙ্খলা ফিরবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) অভিযানের উদ্বোধন করেন নওগাঁ পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকারের উপ পরিচালক টি.এম.এ মমিন। এ সময় নওগাঁ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জিয়া উদ্দিন, নওগাঁ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন, নওগাঁ জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আফজাল হোসেন ও অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

অভিযান শুরুর পর থেকেই শহরের বরুনকান্দি, মশরপুর, তাজের মোড় ও কালীতলাসহ মোট ৮ টি প্রবেশদ্বারে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। চেক পোষ্টগুলোতে ২ জন পুলিশ সদস্য, ২ জন ছাত্র সমন্বয়ক, ৪ জন রোভার স্কাউট সদস্য ও ২ জন রিকশা মালিক শ্রমিক প্রতিনিধিসহ মোট ১২ জন করে কাজ করছেন।

পৌর প্রশাসক জানান, নওগাঁ শহরে বৈধ যানবাহনের সংখ্যা ৪ হাজার। কিন্তু প্রতিদিন পার্শবতী বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ১০ হাজার রিকশা, ব্যাটারী চালিত অটো রিকশা ও ইজিবাইক শহরে প্রবেশ করে। এতে তীব্র যানযট ও জন মানুষের ভোগান্তি তৈরী হয়। এই দূর্ভোগ লাঘোবে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল ও পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিনের দিক নির্দেশনায় যানবাহন নিয়ন্ত্রনসহ বিশেষ অভিযানের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। বৈধ চালকদের চিহ্নিত করতে তাদের মাঝে পরিধেয় বিশেষ ধরনের জ্যাকেট প্রদান করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

নওগাঁর পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিন বলেন, নওগাঁ শহরের যানযট দীর্ঘদিনের সমস্যা। পরিকল্পিত ভাবে এই সমস্যা দূর করতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের উদ্যোগে পৌর কর্তৃপক্ষ ও রিকশা মালিক শ্রমিক নেতৃবৃন্দদের সমন্বয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে স্থানীয় বাসিন্দা ও বিভিন্ন ষ্টেক হোল্ডারদের পরামর্শ নিয়ে একটি কর্ম পরিকল্পনা গ্রহক করা হয়েছে।

এ বিষয়ে নওগাঁর জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, অভিযান সফল ভাবে বাস্তবায়ন হলে শহরে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। জনগন এর সুফল পাবেন। সকলকে এই কার্যক্রমে সহযোগিতা প্রদানের আহবান জানান তিনি।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’
‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’: প্রধান উপদেষ্টা
নওগাঁ শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু
২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে নির্বাচন হতে পারে: উপদেষ্টা সাখাওয়াত
সেনাকুঞ্জে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে খালেদা জিয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ৫ জনকে রোবটিক হাত উপহার
সেনাকুঞ্জের পথে খালেদা জিয়া
সুযোগ পেলে শেখ হাসিনার পক্ষে মামলায় লড়ব: জেড আই খান পান্না
নির্বাচন কমিশন গঠন, সিইসি হলেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব নাসির উদ্দীন
ডিএনএ টেস্টের ফলাফল: ভিনিসিয়ুসের পূর্বপুরুষ ছিলেন ক্যামেরুনের
জামিন পেলেন সাংবাদিক শফিক রেহমান
বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে আসা সেই শাহজাহান ওমর গ্রেপ্তার
মিরপুর ও মহাখালীতে অটোরিকশা চালকদের সেনাবাহিনীর ধাওয়া
‘শেখ হাসিনা এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী’, এমন কথা বলেননি ট্রাম্প
লেবাননে ৮ শতাধিক ইসরায়েলি সেনা নিহত
ভারতে সাজাভোগ শেষে দেশে ফিরল ২৪ বাংলাদেশি কিশোর-কিশোরী
ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে অবরোধ করে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের বিক্ষোভ
গাজায় ইসরায়েলের হামলায় আরও ৮৮ ফিলিস্তিনি নিহত
সাবেক এমপি শাহজাহান ওমরের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর
১২ বছর পর সেনাকুঞ্জে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া