মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-৪৬

নেই দেশের নাগরিক

‘হে আল্লাহ! তুমি এসব কী শাস্তি দিচ্ছ! খাবার আনিয়েও চোখের সামনে দিয়ে নিয়ে চলে গেলে! আমরা কী এমন পাপ করেছিলাম যে এমন আজাব দিচ্ছ!’ ডুকরে উঠলেন হালেমা। নৌকোর পাটাতনের উপর থপ করে বসে পড়লেন। বুড়ো থুত্থুরে দেহটা আলুথালু হয়ে এলিয়ে পড়ল! ছুটে এল আরিফা। দুই হাত বেড় দিয়ে খাড়া করে ধরল শাশুড়িকে, ‘মা, ভেতরে চলেন। আল্লাহ আমাদের উপর থেকে চোখ তুলে নিয়েছে। আমাদের কথা আর শুনতে পায় না।’

‘কেন আমাদের কথা শুনতে পাবে না? বান্দার কাঁদনে তারও যে অন্তর কাঁদে যে গো! আল্লাহ যে রহমানের রহিম।’ মাথার ঘোমটাটা পুবালি হাওয়ায় সরে যায়। আরও ডুকরে উঠেন, ‘আমরা যে আল্লাহর পিয়ারা নবী মোহাম্মদের উম্মত, আমাদের ডাক খোদাতায়ালা কী করে অস্বীকার করবে? ঠিকমতো ডাকলে সাড়া তাকে দিতেই হবে।’

‘কই আর সাড়া দিচ্ছে? আর কত কী করে ডাকব? আমরা কি একাই ডাকছি? গোটা রোহিঙ্গা জাতি জান খুলে প্রাণ খুলে ডাকছে। আল্লাহ তো এতটুকুও আইচাই করছে না!’ আরিফার ভেতরটা হাহা করে উঠে।

‘মা, আল্লাহর দোষ দিও না। আল্লাহ আমাদের দিকে না তাকালে গতরাতের ঝড়ে আমরা কি কেউ বেঁচে থাকতাম? সবকটা পানির কোন তলায় তলিয়ে যেতাম। আল্লাহ আমাদের হেদায়েত করেছিল বলেই না আজ আমরা এখনো দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারছি। আল্লাহ আমাদের সঙ্গেই আছে গ।’ চোখ মুছল মতি। গামছার আঁচলটা চোখের জলে আধভেজা। এই সাড়ে চারহাত গামছাটায় কত যে কষ্টের ছাপ লেগে আছে তার ইয়াত্তা নেই। মনের কষ্ট চোখ দিয়ে বেরিয়ে এই গামছাতে গিয়েই তো সবুর হয়। জিরোয়। গামছা একদিন ন্যাকড়া হয়ে যাবে, কিন্তু কষ্টগুলো আবারও মাঝে মধ্যে দলা পাকিয়ে হৃদয় ডুকরে অশ্রু হয়ে বেরিয়ে আসবে। তখন আবারও সুতির কোনো নতুন গামছা সে কষ্ট মোছার জন্যে ঘাড়ে এসে জড়ো হবে। গামছা যেন মানুষের কষ্টের ব্লটিংপেপার।

‘চাড্ডে খাবার পাওয়ার একটা সুযোগ ছিল, সেটাও হাত ফসকে গেল! এবার কী যে হবে!’ চোখ ছোট হয়ে এল নুহুর।
‘আবারও হেলিকপ্টার আসতে পারে।’ মতির বুকে আশার ঢেউ।
‘তার কি কোনো গ্যারেন্টি আছে। না আসতেও তো পারে।’
‘না না, ঠিক আসবে, তুই দেখে নিস। একটা হেলিকপ্টারে কি আর ত্রাণ বিলি করে? কত শরণার্থী! দেখ না ক্যানে, এই হেলিকপ্টারটাই হয়তো আবার চক্কর দিতে দিতে এই দিকে ঘুরে আসবে। নাহলে নতুন কোনো কপ্টার।’
‘ওই ভরসা ছাড়ো। এখন একটাই উপায়, যত তাড়াতাড়ি পারা যায়, নয়াপাড়া ঘাটে পৌঁছতে হবে।’ কথাটা শেষ করেই বৈঠাটা শক্ত করে ধরে বসল নুহু। রোদ দিগন্তের কলি ফুঁড়ে ঝলমলে হতে শুরু করেছে। ঝড়ঝাপ্টা সামলানো নৌকোটা রাতের যন্ত্রণা মুছে সে রোদে রোদ-ছায়া খেলছে। ছইয়ের মটকা বেয়ে সুড়সুড় করে নামছে সদ্য ভূমিষ্ঠ বেলা। তিরতির করে বয়ে চলা নাফ নদীর গা যন্ত্রণা ঝেরে গোলাপি হয়ে উঠছে। দিগন্তের রঙ তার গা’এ মিশে তাকে করে তুলছে আঠারোর যৌবনা। নদীর উচ্ছ্বলা শরীরে যেন বসন্তের পলাশ চুমু দিয়ে উঠছে। একটা মোহমোহি সকাল নদীকে কামনার কামড় দিচ্ছে। দিগন্তের হলুদ-গোলাপি রঙ মেখে মিস্টি সকাল আরও উদ্দাম যৌবনাময়ী হয়ে উঠছে। নুহু ঘুঁত ঘুঁত করে বৈঠা টেনে যাচ্ছে।

শক্ত করে হাল ধরে বে-খেয়াল হয়ে বসে আছে মতি। ভেতরের রক্ত উঠা ‘খক’ ‘খক’ কাশিটা
আচানক গতি পেল! মতি ধড়ফড় করে ছইয়ের দিকে এগিয়ে গেল, ‘কী হলো?’
‘কাশি যে আর থামছেই না! কফ নয়, শুধু দলা দলা রক্ত উঠছে এবার!’ আরিফার চোখে-মুখে উদ্বেগ।
‘এবার মনে হয় আল্লাহ ওকে তুলে নেবে রে......।’ নির্লিপ্ত চোখে আকাশের দিকে তাকালেন হালেমা।
বারো ‘এত নৌকো!’ গাদাগাদি নৌকোর কলোনি দেখে আতিফের চোখ কপালে উঠার জোগাড়। চোখ পানসে করে বলল, ‘এই ঠাসাঠাসি ভিড়ে আমাদের নৌকোটা খুঁজে পাওয়াই তো দুষ্কর!’
‘হ্যাঁ, নৌকোর দেশ।’ বলল সাদ্দাম।
‘হ্যাঁ, তাই তো দেখছি!’ আতিফের চোখে বিস্ময়।
‘আলাদা কোনো চিহ্নোত রয়েছে কি?’ জানতে চাইল সাদ্দাম।
‘আলাদা কোনো চিহ্নোত বলতে গেলে, আমাদেরটা তো ‘ঘাটবাড়ি কৌশা’ নৌকো, কিন্তু এখানে তো অনেকগুলোই ‘ঘাটবাড়ি কৌশা’ নৌকো দেখছি! আলাদা করে চিহ্নিত করা তো খুবই মুশকিল।’
‘তা ছাড়া নৌকোগুলো এমনভাবে গায়ে গা লাগিয়ে আছে ভেতরে ঢোকাও অসম্ভব।’
‘সে তো আরেক খিটকেল। এখন কী করা যায় বল তো।’ সাদ্দামের কাছে বুদ্ধি চাইল আতিফ।
‘তুই বোট থেকে নেমে নৌকোয় হেঁটে হেঁটে যা।’
‘ওভাবে আর কতটা ভেতরে যেতে পারব। মাঝে মধ্যে তো বড়ো বড়ো ফাঁকও রয়েছে। তা ছাড়া সব নৌকোয় তো আমাকে উঠতেও দেবে না।’
‘আর তো কোনো উপায়ও দেখছি নে।’
‘কিছু তো একটা করতেই হবে।’

‘আতিফ, হেলিকপ্টার! বোট লুকোতে হবে, বোট!’ মাথার উপরে ‘ভু’ ‘ভু’ করে একটা হেলিকপ্টার চক্কর কাটতে দেখে আঁতকে উঠল সাদ্দাম। আতিফ, বোটের পিঠে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর লোগো আর জাতীয় পতাকা আঁকা জায়গাটায় উপুড় হয়ে শুইয়ে আড়াল করার চেষ্টা করল, যাতে হেলিকপ্টার থেকে সেসব দেখা না যায়।
সাদ্দামরা ভাবল, হেলিকপ্টারটা মনে হয় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর। মেজর মহম্মদ আসলামের খুনের কথা জেনে, খুনিকে ধরার জন্যে নদীতে চক্কর কাটছে। কারণ এতক্ষণে বিজিবি’র সেনা কর্মকর্তারা জেনে গেছেন যে সাদ্দামই মেজর আসলামকে খুন করেছে। সাদ্দাম স্পিডবোটটাকে একটা ধাংড়া নৌকোর গা ঘিষে লাগাল। যাতে করে, হেলিকপ্টার থেকে তাদের নজরে না পড়ে। মাথা গুঁজে চুপ মেরে থাকল সাদ্দাম আর আতিফ। আতিফ তো একেবারে লাশের মতো উপুড় হয়ে শুয়ে থাকল। তারা অপেক্ষা করতে থাকল, হেলিকপ্টারটার এখান থেকে চলে যাওয়ার। কিন্তু কপ্টারটা কোথাও না গিয়ে মাথার ওপরেই ‘ভু’ ‘ভু’ করে চক্কর কাটতে লাগল।

সাদ্দাম মনে মনে গাল দিতে লাগল, শালা হেলিকপ্টারটা এখান থেকে ফুড়ুৎ কাটবে না তো ‘ভু’ ‘ভু’ করে মাথার উপরে কী ফন্দি করছে! সাদ্দামরা দুশ্চিন্তা আর ভয়ের ঠেলায় বুঝতেই পারেনি যে হেলিকপ্টারটাকে চক্কর কাটতে দেখে সমস্ত নৌকোর মানুষেরা হৈ হৈ করে হুল্লোর বাঁধিয়েছে! হাজার হাজার মানুষ চিল-চিৎকার করছে। নৌকোর পাটাতনে ব্যাঙের মতো তিড়িং বিড়িং করে লাফিয়ে উপরের দিকে হাত বাড়িয়ে খাবার চাইছে। হাজার হাজার মানুষের খলবল করা হাতগুলোর নড়ানো দেখে মনে হচ্ছে, কোন সমুদ্রের উপকূলে ফুলের উদ্যানে বকফুল হাওয়াতে খিলখিল করে পাপড়ি মেলছে।

নৌকোয় আটকে পড়া মানুষগুলোর হাঁকডাক শুনে শুকনো ঢোক গিলে সাদ্দাম বলল, ‘এ তো রাষ্ট্রসংঘের ত্রাণ বিলিকারি হেলিকপ্টার রে!’
‘তাইই তো মনে হচ্ছে।’ গিরগিটির মতো বুক তুলে মিনমিন করে বলল আতিফ।
‘মনে হচ্ছে না, তাইই। দেখছিস ন্যা, হেলিকপ্টারটার বুকের কাছে রাষ্ট্রসংঘের লোগো আঁকা।’
আতিফ চিলের মতো চোখ ফেড়ে তাকাল। বলল, ‘হ্যাঁ, তাইই তো।’
বলতে বলতে হেলিকপ্টারটার দরজা দিয়ে ঝাঁক ঝাঁক শুকনো খাবারের প্যাকেট নৌকোগুলোর উপরে পড়তে লাগল। হাফ ছেড়ে বাঁচল সাদ্দামরা। সাদ্দাম স্পিডবোটটাকে কালো রঙের বড় নৌকোর খোল থেকে সরিয়ে নিয়ে ভেতরের দিকে ঢোকার চেষ্টা করল। কানে ভেসে আসছে, ধপাধপ শব্দ। প্যাকেট প্যাকেট খাবার আছড়ে পড়ছে নৌকোর পাটাতনে। কেউ খপ করে ধরে নিচ্ছে, আবার কেউ ঝপাং করে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে নদীতে ছিটকে পড়া খাবারের প্যাকেটগুলো কুড়িয়ে নিচ্ছে। একেবারে হুটোপুটি লেগে গেছে। যেন প্রতিযোগিতা চলছে, কে কত পারে খাবার কুড়িয়ে নেয়।

‘লোক কত রে! লোকে লোকারণ্য!’ ভ্রু টান করল আতিফ।
‘তুই কী ভাবছিলি, ছিটেফোঁটা কয়েকটা নৌকো হবে? আধখানা রাখাইন এই নাফ নদীতেই ভেসে আছে।’ বলল সাদ্দাম।
‘তাই তো দেখছি, নয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরের থেকে নদীতেই বেশি লোক!’
‘কী আর করবে, ছিন্নমূল মানুষগুলোর কাছে এই আন্তর্জাতিক সীমানার নাফ নদীটাই একমাত্র ভরসা। নদী পেটের ভাত না দিতে পারুক, একটুখানি ঠাঁই তো দিয়েছে। এই ঠাঁইটুকু পাওয়ার জন্যেই তো আমরা এতকিছু করছি।’ কথাটা বলে একবার নদীর দিকে ভ্যালভ্যাল করে তাকাল সাদ্দাম। তারপরে বলল, ‘তুই ভালো করে খুঁজে দেখ, তোদের নৌকোটা এই ভিড়ের মধ্যে কোথাও আছে কি না।’

‘এপাশ ওপাশ তো খোঁজা হয়ে গেল, দেখতে তো পাচ্ছি নে। পাড়ঘাটের দিকে একবার ভালো করে দেখে আসি। দক্ষিণ দিক ঘুরিয়ে বোটটা লাগা। ওই দিকে একটা নৌকোকে ওরকম মনে হচ্ছে।’ আতিফের কথা মতো সাদ্দাম স্পিডবোটটাকে দক্ষিণ দিকে দিয়ে পাড়ঘাটের দিকে নিয়ে গেল। সকাল ততক্ষণে হাঁটি হাঁটি পা পা করতে করতে পাড়ঘাট থেকে নদীতে নেমে এসেছে। তাম্বুল তাম্বুল নৌকোগুলোর ছায়া ধীরে ধীরে ছোট হতে শুরু করেছে। হেলিকপ্টারটাও তার কাজ সম্পূর্ণ করে আকাশে মিলিয়ে গেছে।

আতিফ তন্য তন্য করে খুঁজল, কিন্তু নাহ, তাদের নৌকোটার নাগাল পেল না! অনেককে জিজ্ঞেস করল। অনেকের কাছেই খোঁজখবর নিল। কিন্তু নাহ, তার আব্বা, ভাইদের কেউ কোনো হদিস দিতে পারল না। নৌকোর ভিড় ঠেলে ফাঁকার দিকে এগোতে থাকল স্পিডবোটটা। নৌকোকলোনিতে ততক্ষণে সকালের সংসার শুরু হয়ে গেছে। ভেসে আসছে, হাঁড়িকুড়ির হাতাখুন্তির টুংটাং, ঠংঠং শব্দ। কোনো কোনো নৌকোয় রান্নাবান্না চলছে, কোনো কোনোটাই চলছে হেঁসেল গোছানোর কাজ।

নৌকোগুলোতে আর কোনো পশুপাখি নেই। ছাগল-মুরগি যা ছিল সেসব নদীতে ফেলে দিয়ে নৌকো ভার মুক্ত হয়েছে। এরা যখন বাড়ি ছেড়ে ছিল তখন প্রায় সবারই হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল কিছু না কিছু নৌকোতে তুলেছিল। ভেবেছিল, বাংলাদেশের কোনো শরণার্থী শিবিরে ঠাঁই নিয়ে সেগুলোকে লালন-পালন করবে। খাইয়ে পুষে বড় করবে। এই আপদের দিনে হাতে দুটো পয়সা আসবে। কিন্তু গরু-ছাগলের ঠাঁই তো দূরের কথা নিজেদেরই ঠাঁই না হওয়ায়, একসময় বাড়ির পোষা পশু-পাখিগুলোকে নদীর জলে জীবন্ত ফেলে দিতে বাধ্য হয়েছে। মন না চাইলেও, হৃদয় না চাইলেও পরিস্থিতি তাদেরকে এই করুণ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে।

গৃহপালিত পশু-পাখি কোনো অংশে নিজের সন্তানের থেকে তো কম নয়? সন্তানের মতোই গায়েপিঠে বেড়ে উঠে। মায়ার টানে একদিন দুদিন অনেকেই নৌকোতে নিরীহ পশু-পাখিগুলোকে বেঁধে রেখেছিল। কিন্তু যখনই খাবারের জোগানে টান পড়তে শুরু করল তখনই পশু-পাখিগুলোর উপর কোপ পড়ল। তা ছাড়া ততক্ষণে তারা বুঝে গেছে যে তাদেরকে বাংলাদেশ সীমান্ত বাহিনী কোনোমতেই আর কাঁটাতার পেরিয়ে বাংলাদেশের ভেতর ঢুকতে দেবে না। ফলে যতদিন না সমস্যার কোনো সুরাহা হচ্ছে, এই নদীতেই তাদেরকে দিন কাটাতে হবে। চোখে সহ্য হবে না বলে, রাতের অন্ধকারে ঝপাং ঝপাং করে পশু-পাখিগুলোকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হল নদীর গর্ভে। ‘ভ্যা’ ‘ভ্যা’ করে ভেবিয়ে, ‘হাম্বা’ ‘হাম্বা’ করে হামলে, ‘পক’ ‘পক’ করে ডেকে পশু-পাখিগুলো ছটফট করে ডুবে মারা গেল। অনেকে জবেহ করে খেলো। কখনো কখনো এভাবেই একটা জীবনকে বাঁচাতে আরেকটা জীবনকে বলি হতে হয়। একজনকে ডাঙায় উঠানোর জন্য আরেকজনকে জলে ডুবে মরতে হয়। তখন এক জীবন আরেক জীবনের পরম শত্রু হয়ে উঠে।

‘সমুদ্রের দিকে কি আর যাবি?’ জিজ্ঞেস করল সাদ্দাম।
‘সে তো অনেক দূর। কিন্তু যেতে তো হবেই। লোকটা ফোনে যখন বলেছে, এদিকটাই আছে, তখন নিশ্চয় আশেপাশে কোথাও আছে ওরা। চল, নামুর দিকে যাই।’
‘চল, কিছু দূর তো যাই।’ সাদ্দাম স্পিডবোটটার পিকআপ তুলল হাইয়ে। ‘স্যাত’ ‘স্যাত’ করে জল কেটে ছুটতে লাগল দ্রুতগতির জলযানটা। কিছুটা বেগবান গতিতে যাওয়ার পরেই ‘কচ’ ‘কচ’ করে ব্রেক কষল সাদ্দাম। আতিফ জিজ্ঞেস করল, ‘কী হলো?’
‘বাংলাদেশ নৌবাহিনীর টহলদারি লঞ্চ! এদিকেই আসছে!’ চোখে আতঙ্কের বলিরেখা সাদ্দামের।
আতিফ মাথা তুলে দেখল আগত লঞ্চটাকে। চোখ বড় বড় করে বলল, ‘তাই তো!’
‘শুধু কী লঞ্চ, সঙ্গে গুচ্চের স্পিডবোটও আছে!’ সাদ্দাম সতর্ক হলো।
‘ওগুলো তো লঞ্চটাকে গার্ড করে আসছে। এখন উপায়?’
‘আমাদেরকে বোট ঘুরিয়ে নিয়ে আবার উত্তর দিকেই পালাতে হবে। তা ছাড়া তো কোনো পথ নেই। সামনের দিকে গেলেই নির্ঘাত ধরা পড়ে যাব!’
‘আরও পূবদিক ঢলে যাওয়া যাবে না?’
‘সে তো আরেক বিপদ। মায়ানমার সেনাদের খপ্পরে পড়ে যাব। তখন কুকুর থেকে বাঁচতে বাঘের মুখে পড়ার মতো হবে ব্যাপারটা।’
সাদ্দামের কণ্ঠ কাঁপল। তারপর বোটটাকে পেছনের দিকে ঘোরাতে ঘোরাতে বলল, ‘অত কিছু ভাবার এখন সময় নেই। আগে নিজের জান বাঁচাই, তারপরে চাচাদের জান বাঁচাতে নামব।’
চলবে...

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৪৫
নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৪৪

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৪৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৪২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৪১

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৪০

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩৯

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩৮

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩৭

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩৬

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩৫

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩৪

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩১

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩০

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৯

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৮

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৭

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৬

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৫

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৪

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২১

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২০

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১৯

Header Ad
Header Ad

বিদ্যুৎ খাতে ১৫ বছরে ৭২ হাজার কোটি টাকার লুটপাট

ছবি: সংগৃহীত

আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বিদ্যুৎ খাতকে কেন্দ্র করে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। দ্রুত সরবরাহ আইন (কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট আইন) প্রণয়ন করে দায়মুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে এই খাতে লুটপাটের মডেল তৈরি হয়। গত ১৫ বছরে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনায় ঘুষ, কমিশন, এবং অপ্রয়োজনীয় সক্ষমতার কারণে জনগণের ওপর ৭২ হাজার কোটি টাকার বোঝা চাপানো হয়েছে।

২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৫,৭০০ মেগাওয়াট থেকে বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৩২,০০০ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে। এ সময়ে শতাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে বেশিরভাগ প্রকল্প দ্রুত সরবরাহ আইনের আওতায় অনুমোদন পাওয়ায় উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার সুযোগ বন্ধ ছিল।

বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে ৩০ থেকে ৩৩ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার দুর্নীতির মাধ্যমে লুট হয়েছে।

মহাপরিকল্পনায় ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুতের চাহিদা ৩০,০০০ মেগাওয়াট ধরা হলেও, পরে এই লক্ষ্যমাত্রা ৪০,০০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করা হয়। চাহিদার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করায় অপ্রয়োজনীয় সক্ষমতা তৈরি হয়। এই অতিরিক্ত সক্ষমতার জন্য ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বাবদ প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার অপচয় হয়েছে।

বিশেষজ্ঞ ম. তামিম বলেছেন, “উচ্চমাত্রার লক্ষ্য নির্ধারণ করে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এর ফলে জনগণের কাঁধে ভাড়া ও অন্যান্য ব্যয়ের বোঝা চেপেছে।”

শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যে সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন নির্মাণ এবং মিটার কেনাকাটায় বিপুল অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। তবে এসব খাতে দুর্নীতির বিস্তারিত চিত্র এখনও স্পষ্ট নয়।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিদ্যুৎ খাতে এ ধরনের দুর্নীতি অর্থনীতিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। সরকারের উচ্চাভিলাষী প্রকল্পের ফলে জনগণকে অযৌক্তিকভাবে অতিরিক্ত ব্যয় বহন করতে হয়েছে।

প্রস্তাবিত সমাধান:

- বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি কমাতে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে প্রকল্প অনুমোদন।
- দায়মুক্তি আইন বাতিল করে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
- শ্বেতপত্রে বিস্তারিত তদন্তের মাধ্যমে দুর্নীতির চিত্র প্রকাশ।
- অপ্রয়োজনীয় সক্ষমতা বন্ধ এবং বিদ্যুতের চাহিদা অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ।

বিদ্যুৎ খাতের এই সংকট উত্তরণে জনসাধারণ, বিশেষজ্ঞ এবং গণমাধ্যমের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

Header Ad
Header Ad

সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের অভিযোগে ভারতীয় নাগরিক আটক

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের অভিযোগে মো. নাজির উদ্দিন কার্তিক (২৫) আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সকাল ৯টার দিকে নওগাঁ ব্যাটালিয়নের (১৬ বিজিবি) বিজিবি সদস্যরা গোমস্তাপুর উপজেলার কেতাব বাজার এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করেন।

আজ মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে ১৬ বিজিবির গণমাধ্যম শাখা থেকে পাঠানো এক হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।

নওগাঁ ব্যাটালিয়নের (১৬ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল মুহাম্মদ সাদিকুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার বাংগাবাড়ি বিজিবির নিয়মিত টহল দল মঙ্গলবার সকালে সীমান্ত পিলার ২০৪/এমপি হতে আনুমানিক ১ কিলোমিটার বাংলাদেশের অভ্যান্তরে কেতাব বাজার এলাকায় টহল পরিচালনা করছিলেন। টহল দেওয়ার সময় একজন ব্যক্তির গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলে বিজিবির সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি অসংলগ্ন বক্তব্য দিতে থাকেন। পরে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদে ওই ব্যক্তি স্বীকার করেন তিনি ভারতীয় নাগরিক। ওই ব্যক্তির ভাষ্যমতে তাঁর নাম, নাজির উদ্দিন কার্তিক। তিনি ভারতের বিহার রাজ্যের কাঠিয়ার জেলার আবাদপুর থানার গাবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা। তল্লাশী করে ওই ব্যক্তির কাছ ভারতীয় ১০ রুপি এবং বাংলাদেশী ২৫০ টাকা পাওয়া গেছে। তাঁর কাছ থেকে কোনো পাসপোর্ট বা বৈধ ডকুমেন্ট পাওয়া যায়নি।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে ওই ব্যক্তিকে আটক পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ কার্যক্রম চলমান আছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁর বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Header Ad
Header Ad

ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশি জানলেই হয়রানি

ছবি: সংগৃহীত

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় ভ্রমণ ও চিকিৎসার কাজে যাওয়া বাংলাদেশিরা সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক হয়রানির শিকার হচ্ছেন। চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতি এবং বিজেপি সমর্থকদের লংমার্চ কর্মসূচি ঘিরে এই হয়রানির মাত্রা বেড়ে গেছে।

সোমবার (২ ডিসেম্বর) থেকে আগরতলায় হোটেল ভাড়া না পেয়ে বাংলাদেশি পর্যটকরা চরম বিপাকে পড়েছেন। কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার বাসিন্দা ফরিদ মিয়া জানান, হোটেল ভাড়া নেওয়ার পর মুসলিম এবং বাংলাদেশি হওয়ায় তাকে এক ঘণ্টার মধ্যেই হোটেল থেকে বের করে দেওয়া হয়। টাকা ফেরত না পেয়ে তিনি বাধ্য হয়ে শহরের বাইরে আত্মীয়ের বাড়িতে রাত কাটান এবং পরদিন দেশে ফিরে আসেন।

আগরতলা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্টে বাঁশের বেড়া দিয়ে চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সীমান্ত পারাপারের সময় বাংলাদেশিদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করা হচ্ছে। আখাউড়া স্থলবন্দরে ফিরে আসা যাত্রীরা জানিয়েছেন, সীমান্তে বাংলাদেশিদের হুমকি ও হয়রানির মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ব্যবসায়ী মুজিবুর রহমান শিলচরে ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ফেয়ারে জামদানি শাড়ির একটি স্টল দিয়েছিলেন। সেখানে একদল যুবক "জয় শ্রী রাম" স্লোগান দিয়ে তার দোকানে হামলা চালায়। হামলাকারীরা দোকান ভাঙচুর করে এবং সমস্ত টাকা-পয়সা লুটপাট করে নিয়ে যায়।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবি অতিরিক্ত সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। বিজিবি ৬০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল জাবের বিন জব্বার জানিয়েছেন, সীমান্তে কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা এড়াতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশিরা এমন হয়রানি ও বৈষম্যমূলক আচরণের নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে এর সমাধানের জন্য দুই দেশের সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা নিরসনে কূটনৈতিক পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

বিদ্যুৎ খাতে ১৫ বছরে ৭২ হাজার কোটি টাকার লুটপাট
সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের অভিযোগে ভারতীয় নাগরিক আটক
ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশি জানলেই হয়রানি
প্রতিবেশী রাষ্ট্রের গোলামি করতে স্বাধীনতা অর্জন করিনি: সোহেল তাজ
মাইক্রোসফটের সমীক্ষায় ভুয়া খবর ছড়ানোর শীর্ষে ভারত
আগরতলার বাংলাদেশ হাইকমিশনে কনস্যুলার সেবা বন্ধ
একটি ইস্যু দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক মূল্যায়ন করা যাবে না : ভারতীয় হাইকমিশনার
জাতীয় ঐক্যের ডাক দেবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ
শান্তিরক্ষী বাহিনীর ভূমিকা মমতা বোঝেন কিনা, নিশ্চিত নই: শশী থারুর
যমুনার চর কেটে বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ
২০২৩ সালে সর্বোচ্চ দুর্নীতি পাসপোর্ট, বিআরটিএ ও আইনশৃঙ্খলায়
শেখ হাসিনার পতন কোনোভাবেই মানতে পারছেন না ভারত : রিজভী
ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে জরুরি তলব
সেনাবাহিনীর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, এসএসসি পাসেই আবেদনের সুযোগ
এস আলম পরিবারের ৩৫০ ব্যাংক হিসাবের সন্ধান
২৮ বিয়ে প্রসঙ্গে যা বললেন নায়িকা রোমানা
বাংলাদেশিদের সেবা দেবে না ত্রিপুরার কোনো হোটেল–রেস্তোরাঁ
ভারত সফরে আসছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন
‘বাংলাদেশি কনস্যুলেটে হামলা প্রতিবেশীদের মধ্যে বিবাদের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে’
বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলায় ৩ পুলিশ বরখাস্ত, গ্রেপ্তার ৭