বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-১৬

যারা যুদ্ধ করেছিল

যমুনা নদীর বুকে গড়ে ওঠা ধইনার চরে মোখদম আলী নামের একজন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান, যার অত্যাচারে অতিষ্ঠ চরবাসি। মাঝে-মধ্যেই পাকিস্তানি মিলিটারিদের ডেকে এনে খাওয়ার মজমা তৈরি করে। চরের কোনো বাসিন্দার বাছুর ধরে এনে জবাই করে খানাপিনার আয়োজন করে। সেখানে রাজাকারদের একটি বাহিনী গঠন করেছে মোখদম আলী। তাদের দিয়ে চরে তার ফ্যাসিবাদি শাসন চালিয়ে যাচ্ছে। রাজাকারদের দিয়ে চরের কয়েকজন নারীকে তুলে দিয়েছে পাকিস্তানি ক্যাম্পে। রাজাকারদের দিয়ে কাউকে ধরে এনে বেঁধে মারপিট করে। তাদের কাছ থেকে জমি দখল নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়।

খবরটি শোনার পর মমিনের বাহিনী ক্রোধে ফেটে পড়ে। তারা ধইনার চর আক্রমণ করে মোখদম আলীকে উচিৎ শিক্ষা দিতে চায়। গভীর রাতে নৌকা করে ধইনার চর পৌঁছে তারা একজন গ্রামবাসীর সাহায্য নিয়ে মোখদম আলীর বাড়ি ঘেরাও করে। মোখদমের বাড়িতে থাকা রাজাকার ক্যম্পের রাজাকাররা কিছু বুঝে ওঠার আগে তাদের ক্যাম্প গ্রেনেড মেরে উড়িয়ে দেয়। ২০ জনের রাজাকার দলটির জনা দশেক রাজাকার ঘটনাস্থলেই মারা যায়। বাকিরা আহত হয়ে গোঙরাতে থাকে। বাকিদের ধরে লাশ বানিয়ে যমুনায় ভাসিয়ে দেয়। তারপর মুক্তিযোদ্ধারা মোখদম আলীকে খুঁজতে থাকে। গ্রেনেডের শব্দে চতুর মোখদম আলী পরিস্থিতি প্রতিকূল বুঝতে পেরে আত্মগোপন করে। মোখদম আলীর বাড়ি তছনছ করে মুক্তিযোদ্ধারা তাকে খুঁজে না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ে। মমিন মোখদম আলীর স্ত্রীকে ভয় দেখিয়ে বলে, ‘বলেন আপনার স্বামী কোথায়? না বললে আপনার ছেলেমেয়েসহ সবাইকে মেরে ফেলবো।’ মোখদমের স্ত্রী এবং তার তিন মেয়ে এসে মমিনের পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। বাবার প্রাণভিক্ষা চায় মেয়েরা। মমিন বলে, ‘যখন তোমাদের বাবা অন্য মেয়েদের ধরে মিলিটারি ক্যম্পে নিয়ে যায় তখন তোমরা বাঁধা দাওনি কেন? তোমরা জান, বর্তমানে সেই মেয়েদের অবস্থা কি?’

মোখদমের স্ত্রী ছুটে গিয়ে সিন্দুক থেকে পোটলায় বাঁধা প্রায় পঞ্চাশ ভরি সোনা এনে মমিনের হাতে দেয়। মমিন পোটলা দেখে জিজ্ঞেস করে, ‘কী এটা?’
মোখদমের স্ত্রী বলে, ‘কিছু না বাবা। তোমরা যুদ্ধ করতাছো। তোমাদের খাওয়া খরচের জন্য সামান্য কিছু সোনা-দানা।’
‘মমিন গর্জে ওঠে। ‘আপনি আমাদের ঘুষ দিচ্ছেন! আপনার সাহসতো কম না। জানেন এর পরিণাম কি?’
‘বাবা, আপনার দুটি পায়ে পড়ি। আমার মেয়েদের আপনি এতিম করবেন না।’ বলেই মোখদমের স্ত্রী মমিনের পা জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করতে থাকে।

মমিন ধমকিয়ে ওঠে। ‘পা ছাড়ুন। ছাড়ুন বলছি। নইলে গুলি করবো।’ মোখদমের বড় মেয়েকে মমিন বলে, ‘তোমার মাকে সরাও। নইলে তোমাকে আমরা ধরে নিয়ে যাব।’ বড়মেয়ে মাকে ধরে তোলে। মমিন বলে, ‘আপনার স্বামী যে সমস্ত মেয়েদের মিলিটারি ক্যাম্পে দিয়ে এসেছে তাদের অবস্থা এখন কেমন সেটা কি আপনি জানেন? তাদের সারারাত ওই পশুরা দলবেঁধে ধর্ষণ করে। এই যন্ত্রণা সইতে না পেরে অনেক মেয়ে পরনের শাড়ি গলায় পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। মিলিটারি সেই থেকে মেয়েদের উলঙ্গ করে রাখে। আপনি ভাবতে পারেন এই ঘটনা আপনার মেয়ের সঙ্গে হলে আপনি সহ্য করতে পারতেন? আজ আমরা আপনার তিন মেয়েকে নিয়ে যাব। সারারাত ওদের ধর্ষণ করবো। তখন বুঝবেন কেমন লাগে।’
মমিন আবার জিজ্ঞেস করে, ‘এতো সোনা আপনি কোথায় পেয়েছেন?’
মোখদমের স্ত্রী কথা বলে না। মমিন বলে, ‘সত্যি কথা বললে আপনাদের ছেড়ে দেব। বলেন, এতো সোনা কোথায় পেয়েছেন? নিশ্চয় গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি থেকে এ সব আপনার স্বামী লুট করে এনেছে, তাই না?’

ততোক্ষণে চরের বাসিন্দারা জেনে গেছে মুক্তিযোদ্ধারা মোখদম আলীকে ধরতে এসে তার বাড়ি ঘেরাও করেছে। কথাটা মুহূর্তে গোটা চরে চাউর হয়ে যায়। চরবাসী আনন্দ উল্লাস এবং জয়ধ্বনি দিয়ে মোখদম আলীর বাড়ির দিকে ছুটে আসে। তারা মুক্তিফৌজ দেখে জয়বাংলা বলে উল্লাস করে ওঠে। মমিনের প্রশ্নের জবাবে মোখদমের স্ত্রী খামোশ হয়ে মমিনের পা জড়িয়ে ধরে। তখন একজন বয়স্ক লোক দূর থেকে চেঁচিয়ে বলে, ‘এইসব গয়না সব লুটের মাল। মোখদম রাজাকার আমাদের জীবনটা নরক বানাইয়া রাখছে। আপনারা এই শয়তানকে ছাইড়া দিয়েন না।’
‘ওই হারামজাদাতো পালিয়েছে। আপনারা তাকে আমাদের কাছে ধরিয়ে দিন। আমরা ওই রাজাকারকে না নিয়ে যাব না। আমরা তার সম্পর্কে সবধরনের খবর নিয়ে এসেছি।’

এইসময় একজন মহিলা মজনুকে ইশারায় কাছে ডেকে নিয়ে ফিস ফিস করে বলে, চরের দক্ষিণে ভাসমান কচুড়িপানার স্তুপের মধ্যে লুকায়া আছে। মজনু ছুটে এসে মমিনকে বিষয়টি জানালে মমিন কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে সেই কচুরিপানার স্তুপের কাছে পাঠিয়ে দেয়। মোখদমের স্ত্রী বুঝতে পারে এবার আর তার স্বামীর রক্ষা নাই। সে চিৎকার করে কেঁদে ওঠে। মোখদমের স্ত্রী জানে ওই মহিলা প্রতিশোধ না নিয়ে ছাড়বে না। হবি নামের তার যুবক ছেলেকে রাজাকাররা চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে এলে হবির মা মোখদমের পা জড়িয়ে ধরে ছেলের প্রাণভিক্ষা চেয়ে মাটি চাপড়ে কেঁদেছিল। মোখদমের এতটকু দয়া হয়নি। তাকে মেরে যমুনার জলে ভাসিয়ে দিয়েছে রাজাকাররা। হবির অপরাধ সে ভোটের সময় নৌকার মার্কার মিছিলে অংশ নিয়েছে।

ওই মহিলা দেখিয়ে দেয় যমুনার স্রোতে ভেসে আসা কচুরিপানার ভেতর নাক জাগো করে ডুব মেরে আছে মোখদম।

মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকজন গ্রামবাসিকে মোখদমকে খুঁজতে পানিতে নামতে বললে কয়েকজন ঝাঁপ দিয়ে যমুনায় নেমে পড়ে। তারা কচুরিপানার ভেতর খুঁজে মোখদমকে পায় না। গ্রামবাসীরা তারপর নানা জায়গায় মোখদম আলীকে খুঁজতে থাকে।

চরের মাঝখানে অনেকখানি জায়গা নিয়ে একটি গরুর খামার। একজন জোতদার অনেক পরিশ্রম করে এই খামারটি গড়ে তুলেছে। একটি মাত্র শংকর জাতের গরু দিয়ে শুরু করা খামারে এখন গরুর সংখ্যা প্রায় ৬০টি। বাছুর আছে গোটা ত্রিশেক। খামারির নাম আবুল হাশেম। হাশেমের খামারে গরু আরও ছিল। চরে মিলিটারি এলে রাজাকাররা এসে খামার থেকে বাছুর গরু ধরে নিয়ে জবাই করে মিলিটারিদের রান্না করে খাওয়ায়। প্রথম দিন বাঁধা দিয়ে বিপদে পড়ে গিয়েছিল হাশেম। বাঁধা দেওয়ায় রাজাকাররা চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে গিয়েছিল হাশেমকে। হাশেম মাফ চেয়ে কোনো মতে রক্ষা পায়। সেই থেকে আর কোনোদিন বাঁধা দেয়নি। চরে হৈচৈ হচ্ছে। হাশেম বিষয়টি বুঝতে না পেরে খামারে এসে খামার পাহারা দিতে থাকে। হঠাৎ একটি দৃশ্য দেখে ভয়ে চমকে ওঠে সে। ছায়া মতো কি যেন সুরুত করে তার খামারে ঢুকে পড়ে। ভয়ে হাশেম মিয়া বাড়ির দিকে যায়। বড় রাস্তায় উঠে দেখে মশাল জ্বালিয়ে অনেক মানুষ এই দিকে আসছে। হাশেম দাঁড়িয়ে এতো লোকের মশাল মিছিলের কারণ জানতে উন্মুখ হয়ে অপেক্ষা করে। মিছিল কাছে এলে হাশেম জানতে চায় মিছিলের কারণ কী? একজন অতি উৎসাহে বলে, ‘আমরা মোখদম রাজাকারকে খুঁজতাছি।’
‘কেন?’
‘মুক্তিবাহিনী আইছে মোখদম রাজাকারকে ধরতে।’

এতক্ষণে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয় হাশেমের কাছে। ওই ছায়া মানব আর কেউ নয়। সে মোখদম রাজাকার। কথাটা কানে কানে হাশেম তাদের বলে দেয়। তাদের নিঃশব্দে যেতে বলে। সেই মতো তারা মশাল নিভিয়ে খামারে ঢুকে ধরে ফেলে মোখদমকে। সে একটি শোয়া জাবর কাটা বড় গরুর পাশে শুয়ে ছিল। পাশের একটি গরু মোখদমের মুখ বরাবর পেশাব করে দেয়। গরুর পেশাবের তীব্র ঝাঁঝালো উৎকট গন্ধ প্রাণ বাঁচাতে মোখদম সবই নিরবে হজম করে।

পরণের জামা খুলে মুখ মোছে। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে জামা পাশে রেখে আবার শুয়ে পড়ে। আর তখনই টর্চ লাইটের তীব্র আলো এসে পড়ে মুখে। মুহূর্তে ঝাপসা হয়ে আসে সব। চোখে অন্ধকার দেখে মোখদম। রাইফেলের একটি নল বুকে তাক করে আছে একজন। আজ আর কোনোভাবেই বাঁচার আশার নেই। মনে মনে দোয়া পড়তে পড়তে সারা শরীর ঘেমে নেয়ে ওঠে। মুক্তিযোদ্ধারা তাকে চোখ বেঁধে নিয়ে আসে মমিনের কাছে। তারপর মোখদম আলীকে নৌকায় তুলে তারা রওনা হয় যমুনার পশ্চিম পাড়।

মমিনরা এসে যে বাড়িতে আশ্রয় নেয় সেই বাড়ির কিশোর ছেলে মিন্টু আড়াল থেকে মুক্তিবাহিনীকে দেখছিল। এতোদিন শুধু মুক্তিবাহিনীর নাম শুনেছে। চোখে দেখেনি। মিন্টু ক্লাস এইটে পড়ে। খুবই সাধারণ মানের মেধাবী। তবে তার চেহারায় তীব্র আকর্ষণ। মাথায় ঝাকড়া চুল। টানা টানা চোখ। হাসলে মনে হয় চাঁদ হেসে উঠলো।
মজনু জানালার ফাঁক দিয়ে মিন্টুকে দেখছিল। মনে মনে খুব আফসোস হচ্ছিল মজনুর। ওই ছেলেটা কত সুন্দর। আর সে? ভ্যাবলা মার্কা চেহারা। আজ পর্যন্ত কেউ তার চেহারার তারিফ করেনি।

হঠাৎ দুজন দুজনকে দেখে ফেলে। মিন্টু চলে যাচ্ছিল। মজনু তাকে ডাকে। এইভাবে লুকিয়ে কি দেখছিল ওই ছেলে? ব্যাপারটা জানা দরকার। সে কোনো গোপন গুপ্তচর কি না কে জানে।

মিন্টু ভয়ে ভয়ে কাছে আসে। মজনু জিজ্ঞেস করে, ‘তুমি লুকিয়ে লুকিয়ে কি দেখছিলে?’
‘না। কিছু না।’
‘বাড়ি কোথায় তোমার?’
‘এই বাড়ি।’ অর্থাৎ যে বাড়িতে তারা আশ্রয় নিয়েছে। বাড়ির কথা জিজ্ঞেস করায় মিন্টুর ততক্ষণে সাহস বেড়ে গেছে।
মিন্টু বলে, ‘ধইনার চরে মোখদম নামে একজন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যানকে মুক্তিযোদ্ধারা মেরে ফেলেছে। যারা এই কাজটি করেছে তারা একটা কামের কাম করেছে। তাদের আমি সাবাসি দেই।’
‘কেন?’
‘লোকটা ছিল ভীষণ বদ। সে অনেক মানুষ মেরেছে। অনেক যুবককে মিলিটারির হাতে ধরিয়ে দিয়েছে। চরের অনেক মেয়েকে জোর করে পাকিস্তানিদের ক্যাম্পে নিয়ে গেছে।’
‘তুমি এত কথা জানলে কীভাবে?’
‘আমাদের বাড়ির কামলা কুদ্দুস বলেছে। সে সব খবর রাখে। সেও যুদ্ধে যেতে চায়। দুএকবার চেষ্টাও করেছে। যাওয়ার রাস্তা খুঁজে পায়নি। আব্বা ধমক দিয়েছে। বলেছে, ‘তুই লেখাপড়া জানিস না। কোথায় গিয়ে কি উল্টোপাল্টা বলে শেষে নিজের জানটা হারাবি।’
‘ধইনার চরটা কোথায়?’ মজনু হেয়ালি ঢংয়ে জিজ্ঞেস করে।
মিন্টু বলে, ‘যমুনার মধ্যিখানে চর পড়েছে। আমাদের বাড়ি থেকে ধইনার চর দেখা যায়। দেখা গেলেও চর কিন্তু দূর আছে।’
মিন্টু এবার মাথা নামিয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘একটা কথা কই?’
‘কও।’
‘আপনি এ যাবত কয়টা যুদ্ধ করছেন?’
‘প্রায় আট/দশটা।’
মিন্টু এবার চারপাশ তাকিয়ে দৃঢ়ভাবে বলে, ‘মিলিটারি রাজাকারদের অত্যাচার দেখে আমারও যুদ্ধে যাইতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে হয় দেশের জন্য কিছু করি। কিন্তু সাহস পাই না।’
‘কেন, ভয় কিসের?’
‘গুলির শব্দ শুনলে আমার হাত-পা কাঁপে। আপনার ভয় করে না?’
‘প্রথম প্রথম একটু আধটু ভয় করতো। তারপর যুদ্ধ করতে করতে ভয়-ডর সব পালিয়ে গেছে। এখন যুদ্ধের সময় শুধু সামনে এগিয়ে যেতে ইচ্ছা করে। মনে হয় ওদের সবাইকে হত্যা করি।’
‘ইস, আমি যদি যুদ্ধ করার সুযোগ পাইতাম। আমি শুধু ওদের মারতাম।’ মিন্টু দীর্ঘশ্বাস ফেলে। ‘আমার সে সুযোগ হলো না। প্রমাণ করতে পারলাম না দেশকে আমিও ভালবাসি। দেশটা আমারও।’ বিষন্ন মুখে মিন্টু চলে যায়। মজনু আবেগ ভরা দৃষ্টিতে সেইদিকে তাকিয়ে থাকে।

চলবে…

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব- ১৫

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-১৪

Header Ad

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’

ছবি: সংগৃহীত

দেশের জনপ্রিয় নির্মাতা আশফাক নিপুন। কাজের পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমেও বেশ সরব তিনি। কথা বলেন নানা ইস্যু নিয়ে। সেই ধারাবাহিকতায় সরকার পতনের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনেও বিভিন্ন সময় নিজের আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যেও বিভিন্ন বার্তা দিয়েছেন। এবার এমনি একটি বার্তায় দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জনগনের আস্থার বিষয়ে আক্ষেপ জানালেন এই নির্মাতা।

বুধবার (২০ নভেম্বর) আশফাক নিপুন তার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে লেখেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সর্বস্তরের ছাত্র এবং সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল, বাসায় বসে বসে দোয়া করেছিল, যার যা সামর্থ্য দিয়ে সহায়তা করেছিল। কারণ, তারা দেখেছিল লড়াইটা আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শাসক বনাম সাধারণ ছাত্র-জনতার। এটাও অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই যে এই আন্দোলন বেগবান করতে বিরোধী সকল দলের কর্মীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাদের সংগ্রামও গত দেড় দশকের। কিন্তু এটা যদি শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার লড়াই হতো তাহলে সাধারণ মানুষ এই লড়াই থেকে দূরে থাকত। সেই প্রমাণ বিগত ১৫ বছরে আছে।

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ এখনো দেশের কোনো রাজনৈতিক দলকেই পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারে না। এটাই বাস্তবতা। এই বাস্তবতা মেনে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত কীভাবে সাধারণ জনগণের ভেতর নিজের দলের প্রতি আস্থা তৈরি করা যায় সেই বিষয়ে নিরলস কাজ করা। এই আস্থা ক্ষমতায় গিয়ে অর্জন করা সম্ভব না। কারণ, সাধারণ মানুষ আজীবন এস্টাবলিশমেন্টের বিপক্ষে। এই আস্থা অর্জন করতে হয় ক্ষমতা বলয়ের বাইরে থেকেই।

নিপুন আরও লিখেন, অরাজনৈতিক সরকার দিয়ে দীর্ঘদিন দেশ চালানো যেমন কাজের কথা না ঠিক তেমনি রাজনৈতিক সরকার হতে চাওয়া সকল রাজনৈতিক দলগুলোর বোঝা উচিত মুক্তিযুদ্ধের পরে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে সকল প্রকার পূর্বানুমান (যেমন- বর্ষাকালে আন্দোলন হয় না, নির্বাচনের আগেই কেবল জোরেশোরে আন্দোলন হয়, ঘোষণা দিয়ে বিরোধী সকল পক্ষ আন্দোলনে শামিল না হলে সফল হয় না) অগ্রাহ্য করেই। সেটা সম্ভব হয়েছে সাধারণ মানুষের ন্যায্যতার আকাঙ্ক্ষা থেকেই।

সবশেষ এই নির্মাতা লিখেছেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের এই আকাঙ্ক্ষার দুই পয়সার দাম দেন নাই। সাধারণ মানুষের এই আকাঙ্ক্ষা, ইচ্ছা আর দেশপ্রেমকে পুঁজি করে অরাজনৈতিক এবং রাজনৈতিক যারাই রাজনীতি রাজনীতি খেলতে চাইবে, তাদের দশাও কোন একসময় যেন পলাতক শেখ হাসিনার মতো না হয়, সেই বিষয় নিশ্চিত করতে হবে তাদেরকেই।

Header Ad

‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’: প্রধান উপদেষ্টা

ফাইল ছবি

জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, জুলাই-আগস্ট ছাত্র জনতার বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করেছি। এ নতুন দেশে আমাদের দায়িত্ব সকল মানুষকে এক বৃহত্তর পরিবারের বন্ধনে আবদ্ধ করা। কেউ কারো উপরে না, আবার কেউ কারো নিচেও না, এই ধারণা আমরা আমাদের জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।

তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে সুযোগ ছাত্র-জনতার সাহস ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে সম্প্রতি আমরা অর্জন করেছি, সেটাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী ভবিষ্যৎ গড়তে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ, আহত এবং জীবিত ছাত্র-জনতার কাছে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে চাই। যে সুযোগ তারা আমাদের দিয়েছে, তার মাধ্যমে আমাদের দেশকে পৃথিবীর সামনে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী দেশে পরিণত করতে আমরা শপথ নিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, ছাত্র আন্দোলনে জীবন উৎসর্গ করে যারা দেশ গঠনের সুযোগ করে দিয়েছে জাতি তাদের সারা জীবন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।

বক্তব্য শেষে সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা। পরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

Header Ad

নওগাঁ শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু

ছবি: সংগৃহীত

নওগাঁ শহরে যানযট নিরসন ও শৃঙ্খলা ফেরাতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, পৌর কর্তৃপক্ষ ও রিকশা মালিক-শ্রমিকদের যৌথ উদ্যোগে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। এতে শহরে শৃঙ্খলা ফিরবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) অভিযানের উদ্বোধন করেন নওগাঁ পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকারের উপ পরিচালক টি.এম.এ মমিন। এ সময় নওগাঁ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জিয়া উদ্দিন, নওগাঁ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন, নওগাঁ জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আফজাল হোসেন ও অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

অভিযান শুরুর পর থেকেই শহরের বরুনকান্দি, মশরপুর, তাজের মোড় ও কালীতলাসহ মোট ৮ টি প্রবেশদ্বারে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। চেক পোষ্টগুলোতে ২ জন পুলিশ সদস্য, ২ জন ছাত্র সমন্বয়ক, ৪ জন রোভার স্কাউট সদস্য ও ২ জন রিকশা মালিক শ্রমিক প্রতিনিধিসহ মোট ১২ জন করে কাজ করছেন।

পৌর প্রশাসক জানান, নওগাঁ শহরে বৈধ যানবাহনের সংখ্যা ৪ হাজার। কিন্তু প্রতিদিন পার্শবতী বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ১০ হাজার রিকশা, ব্যাটারী চালিত অটো রিকশা ও ইজিবাইক শহরে প্রবেশ করে। এতে তীব্র যানযট ও জন মানুষের ভোগান্তি তৈরী হয়। এই দূর্ভোগ লাঘোবে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল ও পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিনের দিক নির্দেশনায় যানবাহন নিয়ন্ত্রনসহ বিশেষ অভিযানের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। বৈধ চালকদের চিহ্নিত করতে তাদের মাঝে পরিধেয় বিশেষ ধরনের জ্যাকেট প্রদান করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

নওগাঁর পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিন বলেন, নওগাঁ শহরের যানযট দীর্ঘদিনের সমস্যা। পরিকল্পিত ভাবে এই সমস্যা দূর করতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের উদ্যোগে পৌর কর্তৃপক্ষ ও রিকশা মালিক শ্রমিক নেতৃবৃন্দদের সমন্বয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে স্থানীয় বাসিন্দা ও বিভিন্ন ষ্টেক হোল্ডারদের পরামর্শ নিয়ে একটি কর্ম পরিকল্পনা গ্রহক করা হয়েছে।

এ বিষয়ে নওগাঁর জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, অভিযান সফল ভাবে বাস্তবায়ন হলে শহরে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। জনগন এর সুফল পাবেন। সকলকে এই কার্যক্রমে সহযোগিতা প্রদানের আহবান জানান তিনি।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’
‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’: প্রধান উপদেষ্টা
নওগাঁ শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু
২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে নির্বাচন হতে পারে: উপদেষ্টা সাখাওয়াত
সেনাকুঞ্জে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে খালেদা জিয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ৫ জনকে রোবটিক হাত উপহার
সেনাকুঞ্জের পথে খালেদা জিয়া
সুযোগ পেলে শেখ হাসিনার পক্ষে মামলায় লড়ব: জেড আই খান পান্না
নির্বাচন কমিশন গঠন, সিইসি হলেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব নাসির উদ্দীন
ডিএনএ টেস্টের ফলাফল: ভিনিসিয়ুসের পূর্বপুরুষ ছিলেন ক্যামেরুনের
জামিন পেলেন সাংবাদিক শফিক রেহমান
বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে আসা সেই শাহজাহান ওমর গ্রেপ্তার
মিরপুর ও মহাখালীতে অটোরিকশা চালকদের সেনাবাহিনীর ধাওয়া
‘শেখ হাসিনা এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী’, এমন কথা বলেননি ট্রাম্প
লেবাননে ৮ শতাধিক ইসরায়েলি সেনা নিহত
ভারতে সাজাভোগ শেষে দেশে ফিরল ২৪ বাংলাদেশি কিশোর-কিশোরী
ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে অবরোধ করে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের বিক্ষোভ
গাজায় ইসরায়েলের হামলায় আরও ৮৮ ফিলিস্তিনি নিহত
সাবেক এমপি শাহজাহান ওমরের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর
১২ বছর পর সেনাকুঞ্জে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া