সোমবার, ২৭ জানুয়ারি ২০২৫ | ১৩ মাঘ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-৪৫

নেই দেশের নাগরিক  

“সে তো যাবই। একা একা এই ধূ ধূ সমুদ্রে পড়ে থেকে মরব নাকি। আব্বার অবস্থা খুবই খারাপ। জানটা জিভের ডগায় ধুকধুক করছে। এবার যেভাবেই হোক, বাংলাদেশের কোনো পাড়ে উঠতেই হবে।“
“হ্যাঁ হ্যাঁ, পাড় তো তোমার কেনা। বাপের জায়গির যে ইচ্ছে হলো আর ফট করে উঠে গেলে! বর্ডার সব সিল করে দিয়েছে, দেখছ না?” কথায় আগুনের ছ্যাকা দেয় নুহু।
“তুই ঘোড়ার ডিম জানিস। বর্ডার সিল থাকলেও, ফাঁকফোকর থেকেই যায়। সব জায়গায় তো আর কাঁটাতার নেই। অনেক জায়গা ফাঁকা আছে। ওগুলোকে চোরাবর্ডার বলে। ওইসব চোরাই বর্ডার দিয়ে কোনোমতে ঢুকে পড়ে আব্বার মরদেহটাকে কবর দিয়ে দিতে পারলেই তো হলো, তারপর আমরা না হয় নদীতেই পড়ে থাকব। আব্বা কবরের মাটি তো পাবে।“ প্রথম কথাটা বলার সময় চোখমুখ উলটালেও, শেষের কথাটা বলার সময় মতির চোখেমুখে যেন একটা ড্যাফোডিল ফুল ফুটে উঠল। মাটি পাওয়ার গন্ধ মনে লাগতেই, মনটা আচানক পাঁপড়ি মেলে উঠল। মতি এবার ঠোঁটে হাসির মোম লাগিয়ে বলল, “আব্বা পরহেজগার মানুষ, আল্লাহর এলেম জানা বান্দা, বুদ্ধি হয়ে থেকে আল্লাহর আমল করে আসছে, আর তার মরদেহ কবরের মাটি পাবে না, তাই হয়?”

“না পেতেও পারে। দেহের আর কী আছে। আল্লাহর তো রুহু নিয়ে কাজ। রুহুর উপরেই যত হিসাব-নিকাশ। আব্বা যেসব নেক কাজ করেছে, তাতে সে জান্নাতবাসী হতে পারে। মরা দেহ মাটি পেল কি না পেল, তাতে কী যায় আসে? হিসাব তো দেবে রুহু, নাকি?” নহুর কণ্ঠ যেন লঙ্কাপেষাইয়ের মেশিন থেকে বেরিয়ে আসে। মতিও ঝাল পেড়ে উঠল। তার কণ্ঠও ধানি লঙ্কা হয়ে উঠল, “তুই হাদিস কোরানের কী জানিস? আল্লাহর কাছে, দেহটা কি ফকেটিয়া ভাবছিস? ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে তিনি দেহের হিসাব নেবেন। আল্লাহ, দেহ ছেড়ে চলে যাওয়া রুহু আবার পুনরায় দেহে ফিরিয়ে আনবেন। মানুষকে আবার জ্যান্ত করবেন। অক্ষরে অক্ষরে বুঝে নেবেন দুনিয়াদারির হিসাব।“ পায়ের তালু গিঁটটায় চেপে ধরে, হাত দিয়ে টেনে, শরীরটাকে ধনুকের মতো বেঁকিয়ে, কুঁত পেড়ে বাঁধনটাকে পোক্ত করল মতি। একেবারে জাব্দা করে ছইটাকে বেঁধে দিল। ঝড়ে নৌকো পাল্টি খেলেও, ছইটা যাতে খুলে না যায়। জাব্দা বাঁধনের সাথে সাথে মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল জাব্দা কথা, “আল্লাহ শুধু রুহুর চাষ করেন না, দেহেরও চাষ করেন। মাটির হিসাব কাঠিতে বুঝে নেবেন।“
“মাটি দেহ, দেহ মাটি।“ মুখটা নদীর দিক করে কথায় মিহি সুর লাগিয়ে বলল নুহু।

“মর, তখন বুঝবি।“ ঠ্যালা মেরে বলল মতি। তারপর চোখ কটমট করে বলল, “টাপাটাকে(ছই) একটু উপরের দিকে ঠেলে তুলে ধর। দেখছিস ন্যা, কাত হয়ে যাচ্ছে?”

মতি ছইটার যেদিক খাড়া করে বাঁধল, তার বিপরীত দিকও ঢেরখানি কাত হয়ে আছে। সেদিকটায়ও একটা শক্ত বাঁধন দিতে হবে। নুহুকে বেশি বকবক করতে দেখে, তাকেই হুকুমটা করল। নুহু তার ডান কাঁধটার উপরে কাত হয়ে থাকা ছইটা ভার নিয়ে উপরের দিকে তোলা দিয়ে ধরল। দুমড়ে যাওয়া ছইটা আগের মতো হয়ে গেল। মতি পাশের বাঁশের খুঁটির সাথে ছইটাকে দঢ় করে বাঁধল। নুহু একটু ঝুঁকে আলতো করে ভর খাওয়া কাঁধটাকে ছইয়ের ভেতর থেকে বাইরে বের করে নিয়ে এল। ছইটা কী সুন্দর অর্ধচোঙাকৃতি ঘরের চালা হয়ে গেল। মতি এবার বানরের মতো তিড়িং করে লাফ মেরে নিচে নামল। নৌকোটা আলুথালু করে নড়ে উঠল। একটা লম্বা কালো ছায়া হাত-পা বাড়িয়ে নৌকোর পাটাতনে ভাঁজ হয়ে পড়া শরীরটাকে ছুঁল। ছইয়ের এই সাতসকালের ছায়াটা তার গা-গতরের ছায়াকে খেয়ে ফেলল। দিগন্ত থেকে নিঙরে আসা হলুদ রঙে গলা ডুবিয়ে স্নান করছে নৌকোটা।

রোদ উঠতে দেখে মতি তাড়া দিল, “নুহু, তাড়াতাড়ি হাত চালা, সন্ধ্যের আগে নয়াপাড়া পৌঁছতে হবে।“ হালটা ধরে একটা জোর প্যাঁচ মারে মতি। নুহু আনমনে তিরতির করে ঢেউ ওঠা কালাপানি দেখে। জলের কত ঢং! এখন তিরতির করে প্রজাপতির ডানার মতো উতলাচ্ছে, অথচ ঝড়ের হুল ফুটলেই একেবারে বাঘের মতো হালুম করে ওঠে। গ গ করে আছড়ে পড়ে দুই পাড়ে। ভেঙে মুচড়ে সব লণ্ডভণ্ড করে দেয়। ঠোঙার মতো দুমড়ে মুচড়ে দেয় ভেসে থাকা নৌকোগুলোকে। আর এখন সেই নদীর রূপ দেখে মনে হচ্ছে, আহাঃ, এমনই নিরীহ যেন ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানে না! প্রকৃতি এভাবেই কখনো ফুল হয়ে ওঠে আবার কখনো কাঁটা হয়ে জীবনকে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়! বুঝিয়ে দেয়, জীবনের মালা এভাবেই ফুল আর কাঁটা দিয়ে গড়া।
“সাঁই সাঁই করে হাত চালাও। গায়ে বল লাগিয়ে বৈঠা ঠ্যালো। সেরকম খাবার আর মজুত নেই। বিকেলের মধ্যে কিছু একটা জোগাড় না হলে না খেয়ে মরতে হবে!” ছইয়ের বাইরে বেরিয়ে এসে ঘোমটা টানল আরিফা। চোখে-মুখে দুশ্চিন্তার কালো মেঘ।
“কিছুই নেই!” মতির চোখ থির।
“থাকা বলতে গেলে, ক-গাল মুড়ি আছে। ওতে আর কী হবে! কোনোরকমে এক বেলার পেট চলবে।“ হাঁড়ির খবর দিল হাঁড়িমানুষ। আরিফা একখানা আস্ত হাঁড়িমানুষ। সেই যে বিয়ের পর থেকে হাঁড়ির সাথে লেগে গেছে, ছাড়ার আর কোন ফুরসত পায়নি। হাঁড়ি-হেঁসেল আর উঠোন-ঘর করেই তার তিন সিকি জন্ম কেটে গেল।
“কত করে বললাম, চালের বস্তাটা বুকে জাপটে ধরে থাকি, তা না করে আমাকে বৈঠা টেনে ধরে থাকতে বললে, এখন দ্যাখো, মজা। হাওয়া আর পানি খেয়ে থাকো।“ নদীর দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করল নুহু।
“কী করে জানব, অমন কুলক্ষণে ঝড় টাপার ভেতরেও শিং ঢুকিয়ে দেবে! বস্তাটা তো টাপার ভেতরেই ছিল। আমরা নৌকো সামলাব না চালের বস্তা সামলাব? আরিফা তো খেয়াল করতে পারত?” বৌ’এর ঘাড়ে দোষ চাপায় মতি। স্বামীর কথা শুনে ছ্যান করে ওঠে আরিফা, “ওহ, আমার দোষ? আমি একা হাতে তোমার বুড়ো বাপ-মা আর পেটের ছেলেকে সামলাব না ওই চালের বস্তা কুছায় ভরে নিয়ে বসে থাকব? মেয়ে মানুষের ঘাড়ে দোষ চাপাতে ভালই লাগে!”
“একবার তো মুখের কথা বলতে পারতে যে, দেখো গো চালের বস্তাটা পানিতে পড়ে যাচ্ছে।“
“হ্যাঁ হ্যাঁ, আমার তো চারটে চোখ যে, দুর্যোগের সময় সব দিক তাকিয়ে বসে থাকব? তিন তিনটে অসহায় মানুষ দেখব না চালের বস্তা দেখব? মানুষের থেকে কি চালের বস্তা বড়ো?” ধানি লঙ্কা হয়ে ওঠে আরিফা। আহারের টান পড়তেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঠুকমুক লেগে গেল। দুজনেরই মেজাজ তেতো হয়ে উঠতে লাগল। মানুষের থেকে চাল বড়ো নয়, এটা ঠিকই, তবে এই আপদে চাল না পেলে যে মানুষগুলোও মরে বস্তা হয়ে যাবে! ক্ষুধা মনে হয় এভাবেই ধীরে ধীরে ভালোবাসার মাঝে খুটুরমুটুর লাগিয়ে সম্পর্ককে তেতো করে তোলে।
“তোরা চুপ কর। এই আকালে একে তো আপদের শেষ নেই, তার ওপর নিজেদের মধ্যে ঝগড়াঝাটি লাগিয়ে এই হাঁটুগুঁজে বাঁচাটাকে জাহান্নাম বানিয়ে দিস ন্যা।“ ভেতর থেকে হালেমার কাতর স্বর।
“আমি কি আর একবার নদীতে লাফ মেরে দেখব, বস্তাটা কোথাও আটকে আছে কি না?“ অনুমতি চাইল নুহু।
“হ্যাঁ মার, লাফ মার, চালের বস্তা গেছে, এবার তুই যা।“ চোখ গরম করল মতি।
“না, বাপ, তুই অমন কাজ করতে যাস নে। এই জায়গাটা নদী নয়, সমুদ্র, ঢের পানি, একবার নামলে কোন তলে তলিয়ে যাবি, তার হদিসও পাবি ন্যা।“ হালেমার কন্ঠ হেলে উঠল। আরিফা কিচ্ছু বলল না। চোখ ছল ছল করে ছইয়ের ভেতরে ‘দ’ মেরে বসে থাকল। একটা কষ্টের দলা ভেতর থেকে ঠেলা মেরে উঠছে। মানুষটা বলে কি, আমার দোষেই নাকি চালের বস্তাটা জলে পড়ে গেছে! আমার কি এতটুকুও জ্ঞান-বোধ নেই, যে ছেলের মা হয়ে এই আপদের সময় চালের বস্তাকে চোখের সামনে জলে পড়তে দেখেও চুপ করে থাকব? আমি সারাক্ষণ ভাবছি, কী করে ছেলেটার মুখে দুটো দানাপানি তুলে দিতে পারব, কী করে বুড়ো শশুর-শ্বাশুড়ির পেটে একগাল সেদ্ধভাত তুলে দিতে পারব? আর মানুষটা আমাকে বলছে কি না, আমি চোখের সামনে চালের বস্তাটাকে নদীতে পড়ে যেতে দেখেও কিচ্ছু বলিনি! আমি কি জানি নে, ওই চালকটা শুধু শুধু ধানসেদ্ধ চাল নয়, ওই চালকটা এই নৌকোতে থাকা মানুষকটার পেটের একমাত্র রিজিক। পেটে একগাল সেদ্ধভাত পড়লেও জান’টা ধরে বেঁচে থাকবে। এই উপরে আকাশ আর নিচে জলের জীবনে একটা সেদ্ধভাত মানে আকাশের চাঁদ পাওয়া। মানুষটা আমাকে অমন কী করে ভাবতে পারল! অমন কথা বললই বা কোন মুখে! হালেমা তার থুত্থুরে হাত’টা বৌমার পিঠে দিয়ে বলেন, “চুপো মা, চুপো। ছেলেদের কাজই হল, মেয়েদের ঘাড়ে দোষ চাপানো। শোনো মা, সব কথা মনে পুষে রাখতে হয় না। আল্লাহ দুটো কান কেন দিয়েছে, জানো? একটা কান দিয়ে শোনা আর একটা কান দিয়ে বের করে দেওয়ার জন্যে।“
কাঁথায় জড়ানো মানুষটার মুখ থেকে ‘খক’ ‘খক’ করে নলি ছেঁড়া কাশি বেরিয়ে এল। হালেমা ওদিকে চোখ ঘোরাতেই,ছইয়ের চালার ফাঁক দিয়ে ভেসে এল একটা বিকট ‘ভু’ ‘ভু’ শব্দ! নুহু নৌকোর পাটাতন থেকে তিড়িং করে লাফ মেরে বলল, “হেলিকপ্টার! হেলিকপ্টার!” মতিও জিরাফের মতো গলা তুলে ফড়িঙের মতো দুই হাত বাড়িয়ে চিৎকার করে উঠল, “খাবার খাবার।“ নুহু এবার ওপরের দিকে হাত ছুড়ে ছুড়ে আরও জোরে চিৎকার করে উঠল, “খাবার খাবার, খাবার দিন, খাবার।“
হেলিকপ্টারটা ‘ভু’ ‘ভু’ করে ডেকে বনবন করে পাখা ঘুরিয়ে চক্কর কাটতে কাটতে নৌকোটা টপকাচ্ছে। হেলিকপ্টারটা তুলনামূলকভাবে কিছুটা উঁচুতেই। যে উচ্চতায় কপ্টারটা রয়েছে সেখান থেকে নৌকোটাকে একটা ছোট্ট ডিঙির মতো লাগবে। নুহু মতিরা আগে থেকেই জানে, আকাশে ওড়া হেলিকপ্টার থেকে ত্রাণের খাবার ছুড়ে ফেলে। রাষ্ট্রসংঘের হেলিকপ্টার এই নাফ নদীর ওপরের আকাশে উড়ে উড়ে নৌকোয় আটকে থাকা মানুষের উদ্দেশে শুকনো খাবার ছুড়ে ছুড়ে ফেলে। বাংলাদেশের বিভিন্ন শরণার্থীশিবিরেও হেলিকপ্টার থেকে খাবার ছুড়ে ফেলা হয়। ঘাড় কাত করে উপরের দিকে চেঁচিয়েই যাচ্ছে নুহু আর মতি। নিচ থেকে হেলিকপ্টারটাকে একবার একটা বড়ো ঘুড়ির মতো লাগছে। আরেকবার ছোট ঢেঁকির মতো লাগছে। পাখাগুলো এতটুকুও দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু তার ব্লেড ঘোরার ‘সাঁ’ ‘সাঁ’ শব্দ কান ফুঁড়ে ঢুকছে। হেলিকপ্টারটার বুকের আঁকিবুঁকি দেখে মনে হচ্ছে, রাষ্ট্রসংঘেরই হেলিকপ্টার। অত চোখে না পড়লেও, আঁকিবুঁকির আন্দাজ সে কথায় বলছে।

আরও একটু মাথার উপরে আসতেই, হেলিকপ্টারটার লেজটার কাঠামো অনেকটাই দেখা গেল। নুহু এবার হাঙরের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ল। এমন করে ওপরের দিকে হাত বাড়িয়ে ঝাঁপাতে লাগল, দেখে মনে হচ্ছে, হেলিকপ্টারটাকে হাত দিয়ে ধরে টেনে নামাবে। চিৎকার করে তার গলা ছিড়ে যাওয়ার উপক্রম হল। দুই ভাইয়ের চেঁচামেচি নদীর তলার পোকারা শুনতে পেলেও, হেলিকপ্টারটার কেউ শুনতে পেলেন না! স্বামী দেউরকে লাফানো ঝাপানো, চিল-চিৎকার করতে দেখে ছইয়ের ভেতর থেকে ধড়ফড় করে বেরিয়ে এল আরিফা। সে বুদ্ধি করে একটা লালরঙের কাপড়কে শূন্যে উড়িয়ে উড়িয়ে আগোলদারি হাঁক হাঁকতে লাগল। তার মিহি স্বর বাতাস ভেদ করে হেলিকপ্টারের ধাতব গায়ে ঠক্কর লাগলেও, হেলিকপ্টারের ভেতরের কোনো মানুষের কান ছুঁল না!

এবার হাঁটু ভাঁজ করে থড়বড় করে বেরিয়ে এলেন হালেমা। জড়ানো গলায় কাঁইকুঁই করে আকাশের দিকে গলা ছাড়লেন। চারজনের সমবেত হাঁক বাঘের গর্জনের মতো বাতাস ফুঁড়লেও হেলিকপ্টারের অন্দরের কোনো মানুষকে ছুঁতে পারল না! ‘ভু’ ‘ভু’ ‘গ’ ‘গ’ ‘সাঁ’ ‘সাঁ’ করতে করতে হেলিকপ্টারটা আকাশ ফুঁড়ে নয়াপাড়ার দিকে উড়ে গেল! নুহু মতিরা হাত নাড়িয়ে চেঁচাতে চেঁচাতে একসময় তাদের ডুকরানো কণ্ঠ মিহি করে থেমে এল। যেন পেটের ভেতরের সবটুকু চিৎকার বেরিয়ে খোল হয়ে গেল। গলার চিৎকার ফুরিয়ে এলে চোখ দিয়ে গলগল করে বেরোতে থাকল অশ্রু। ফুঁপিয়ে উঠল দু-ভাই। আরিফা তার গায়ে হাত দিতেই হাউমাউ করে উঠল মতি।

আরিফার চোখও ছলছল। পেটের ক্ষিদের টানে একপেট খাবার জোগাড় করার মরিয়া চেষ্টায় দুই মানুষের মধ্যে একটু আগে হওয়া খুটুরমুটুরটা এখন বাসি। বিপদ এভাবেই মানুষের সম্পর্কের মধ্যে যেমন চিড় ধরায়, ঠিক তেমনি চিড় ধরা সম্পর্ককে জোড়ও লাগায়। আসলে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে, তখন ছোটখাট ভুলত্রুটি, রাগ-অভিমান জল হয়ে একে অপরকে আঁকড়ে ধরে। ভালোবাসা আরও গাঢ় হয়। বন্ধন পোক্ত হয়ে ওঠে। সম্পর্কের সংজ্ঞা এখানেই জীবন্ত হয়ে ওঠে। প্রকৃত রূপ-রস পায়। দেহ নামক খোলের ভেতরে ভালোবাসার একতারা বাজায় বেঁচে থাকার টিকে থাকার নিখাদ প্রেম।

চলবে...
আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>
নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৪৪

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৪৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৪২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৪১

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৪০

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩৯

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩৮

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩৭

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩৬

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩৫

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩৪

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩১

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩০

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৯

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৮

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৭

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৬

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৫

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৪

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২১

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২০

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১৯

এসএন

 

Header Ad
Header Ad

পুলিশের শতকরা ৮০ জনের হৃদয়ে ছাত্রলীগ: আসিফ নজরুল

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, বর্তমান পুলিশের শতকরা ৮০ জনই আওয়ামী আমলের, যাদের হৃদয়ে ছাত্রলীগ। তারাই এ সরকারের জন্য কাজ করছে না।

রোববার (২৬ জানুয়ারি) জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে চারটি বইয়ে প্রকাশনা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে এ মন্তব্য করেন তিনি।

আইন উপদেষ্টা বলেন, বিপ্লব পরবর্তী কিছু সমস্যা থাকে। তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে সরকার। গণঅভ্যুত্থান নিয়ে সকলের মধ্যে যে ঐক্য ছিল, সেই ঐক্য আগামীতেও অব্যাহত থাকবে বলেও আশাপ্রকাশ করেন আসিফ নজরুল।

এর আগে, সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক পোস্টে বিএনপির সঙ্গে গণঅভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের কোনো দূরত্ব বা ভুল বোঝাবুঝি কাম্য নয় বলে মন্তব্য করেন আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে গণ-অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের কোনো দূরত্ব বা ভুল বোঝাবুঝি কাম্য নয়। এটি গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও তাদের দোসরদের কতটা উৎসাহিত এবং বেপরোয়া করে তুলতে পারে তার কিছুটা প্রমাণ আমরা গত কয়েক দিনে পেয়েছি।

আইন উপদেষ্টা বলেন, তিনি যতটা জানেন এবং বিশ্বাস করেন— বিএনপি কোনো ষড়যন্ত্রে জড়িত নয় এবং তারা ১/১১ ধরনের কিছু করতে চাচ্ছে না, ছাত্রনেতারা সরকারের অংশ হিসেবে কোনো নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাচ্ছে না বা এতে যোগ দিচ্ছে না, জুলাই ঘোষণাপত্র একটি রাজনৈতিক দলিল হবে এবং ছাত্রনেতারা গণঅভ্যুত্থানের শক্তির মতামত সঠিকভাবে প্রতিফলিত করার জন্য চেষ্টা করছেন এবং বিএনপি এবং ছাত্রনেতারা এমনকি নির্বাচন কেন্দ্রিক বৃহত্তর সমঝোতার ব্যাপারে আগ্রহী, তবে সেটি আলোচনা সাপেক্ষে। এর অর্থ হলো, বিরোধের কোনো কারণ নেই, বরং সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

আসিফ নজরুল আরও বলেন, গণহত্যায় জড়িতদের হাতে রয়েছে লুটপাট করা বিপুল পরিমাণ টাকা, অনেক সুবিধাবাদী গোষ্ঠী, শক্তিশালী প্রচারণা নেটওয়ার্ক এবং শক্তিশালী আন্তর্জাতিক সমর্থন। তাদের বিরুদ্ধে যদি কিছু করতে হয়, তবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ছাত্রদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের মধ্যে ভিন্নমত থাকবে, তবে তা যেন দেশের শত্রুদের জন্য উৎসাহের কারণ না হয়।

Header Ad
Header Ad

৭ কলেজ শিক্ষার্থীদের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মামুন আহমেদের পদত্যাগ এবং শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচারের দাবিতে সোমবার (২৭ জানুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।

রোববার (২৬ জানুয়ারি) শেষ রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর আন্দোলনের সংগঠক আব্দুর রহমান।

তিনি বলেন, বিচারের আগে কোনো ধরনের পরীক্ষা হবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বৈরাচারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে ৭ কলেজকে ঢাবির অধিভুক্তি থেকে বাতিল করে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলাম।

তিনি বলেন, চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকেই স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার দাবি ছিল আমাদের। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তা করেনি। উল্টো ধারণক্ষমতার চেয়েও বেশি শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা এসব নিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছি। সবশেষ বিশ্ববিদ্যালয় প্রো-ভিসি (শিক্ষা) আমাদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছেন। এর প্রতিবাদে গণতন্ত্র ও মুক্তি তোরণের নিচে অবস্থানকালে ঢাবি শিক্ষার্থী ও পুলিশ সম্মিলিতভাবে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়।

৭ কলেজকে নিয়ে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা করতে হবে, এমন দাবি জানিয়ে আব্দুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রো-ভিসি মামুন আহমেদের বিচার করতে হবে।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সোমবার সকাল ৯টা থেকে ঢাকা শহর অবরোধ করা হবে। সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ক্যাম্পাস এলাকায় অবরোধ কর্মসূচি পালন করবেন।

Header Ad
Header Ad

ছাদের কার্নিসে ঝুলে থাকা শিক্ষার্থীকে গুলি, সেই এসআই চঞ্চল গ্রেপ্তার

শিক্ষার্থীকে গুলি করা পুলিশের সেই উপপরিদর্শক (এসআই) চঞ্চল সরকার। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় ছাদের কার্নিসে ঝুলে থাকা শিক্ষার্থীকে গুলি করা পুলিশের সেই উপপরিদর্শক (এসআই) চঞ্চল সরকারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের হোতাকে খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা থেকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা থেকে আসা পুলিশের একটি বিশেষ ইউনিট।

রোববার (২৬ জানুয়ারি) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল তানভীর হাসান জোহার নেতৃত্বে একটি টিম দীঘিনালায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে।

দীঘিনালা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকারিয়া এসআই চঞ্চল সরকারকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি করেছেন। তিনি জানান, রাত সাড়ে ৯টার দিকে দীঘিনালা থানা থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশ তাকে আটক করে। আটকের পর রাতেই তাকে ঢাকার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

জুলাই আন্দোলনে মৃত্যুর ভয়ে ৪ তলার কার্নিশে ঝুলে থাকা কিশোরকে ঠাণ্ডা মাথায় খুব কাছ থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি করে হত্যা করে দুই পুলিশ।

রামপুরা-বনশ্রীর মেরাদিয়া বাজারে অবস্থিত রামপুরা থানার পার্শ্ববর্তী নির্মাণাধীন বিল্ডিং-এ পুলিশের গুলিতে টিকতে না পেরে কিশোর ছেলেটি থানার পাশেই মেইনরোড সংলগ্ন একটি নির্মাণাধীন ৪তলা ভবনে উঠে যায়। সবাই চলে যেতে পারলেও এই কিশোর ওই ভবনে আটকা পড়ে যায়। ৪ তলার ছাদের সাইড দিয়ে নেমে সে নিজেকে লুকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তাকে দেখেই দুই পুলিশ রিভলভার দিয়ে পর পর ছয় রাউন্ড গুলি করে ওই কিশোরের মৃত্যু নিশ্চিত করেন।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর গত ৭ নভেম্বর এসআই চঞ্চল সরকার দীঘিনালা থানায় যোগদান করেন। আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন তিনি।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

পুলিশের শতকরা ৮০ জনের হৃদয়ে ছাত্রলীগ: আসিফ নজরুল
৭ কলেজ শিক্ষার্থীদের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি
ছাদের কার্নিসে ঝুলে থাকা শিক্ষার্থীকে গুলি, সেই এসআই চঞ্চল গ্রেপ্তার
সাত কলেজের সব পরীক্ষা স্থগিত
আজ পবিত্র শবে মেরাজ
মধ্যরাতে ঢাবি ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, আহত ৮
সাবেক দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান গ্রেপ্তার
রয়্যাল এনফিল্ড কিনে না দেয়ায় ট্রেনের নিচে ঝাঁপ কিশোরের!
রংপুরের টানা দ্বিতীয় হার, রাজশাহীর নাটকীয় জয়
সায়েন্সল্যাব ও টেকনিক্যাল মোড় অবরোধ করেছেন সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা
আসাদুজ্জামান খান কামাল বাংলাদেশের কসাই: প্রেস সচিব
পুলিশের সংখ্যা পর্যাপ্ত, কিন্তু মনোবলের ঘাটতি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
বাংলাদেশে আসছে স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট
মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ড যাচ্ছেন বাংলাদেশি রোগীরা, কলকাতার হাসপাতাল ব্যবসায় ধস
২৫ দিনে এলো ২০৪৪৭ কোটি টাকার প্রবাসী আয়
বেতন-ভাতায় না পোষালে অন্য পেশায় চলে যান: প্রাথমিক শিক্ষা উপদেষ্টা
অ্যাডভোকেট তপন বিহারী নাগ ট্রাস্ট বৃত্তি পেলেন কুবির ৩০ শিক্ষার্থী
নির্বাচনের কথা বললে উপদেষ্টাদের মুখ কালো হয়ে যায়: মেজর হাফিজ
পদ্মশ্রী পাচ্ছেন সংগীতশিল্পী অরিজিৎ সিং
‘মাকে খুশি করতে’ শিক্ষার্থী সেজে রাবিতে ক্লাস, চার মাস পর আটক