বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব- ১৫

যারা যুদ্ধ করেছিল

শান্তি কমিটির মেম্বর ফজলুর রহমান ভয়ঙ্কর বিরক্ত মুখে বাড়িতে আসে। তারপর রাজাকার আলিম, জহর ও গেদুকে জরুরি ভিত্তিতে ডেকে পাঠায়। রাজাকার তিনজন আসতে দেরি করছিল। ফজলুর রহমানের অস্থিরতা বেড়ে যায়। ওরা আসামাত্র ফজলুর রহমান ধমকে ওঠে, ‘কীসের ডিউটি করস? মুক্তিফৌজ কীভাবে মিলিটারি ক্যাম্প আক্রমণ করে?’

রাজাকার আলিম ঢোক গিলে বলে, ‘শালারা মনে হয় যাদু জানে। কেমনে আসে কেমনে যায় আমরা বুঝতেও পারি না মেম্বর সাব।’
ফজলুর রহমান দাঁত খিঁচিয়ে বলে, ‘মিলিটারি তোগো ডাইকা পাঠাইছে। এই কথা তাগো সামনে কইতে পারবি?’
বেটে মতো রাজাকার জহর তুতলিয়ে বলে, ‘আম-গো ডাকছে ক্যা?’
ফজলুর রহমান বলে, ‘পর পর দুই রাত মুক্তিফৌজ মিলিটারি ক্যাম্প আক্রমণ করছে। তোরা কি বইসা বইসা বাল ছেঁড়স। তাড়াতাড়ি খবর নে। দুস্কৃতিকারীরা কোন বাড়িতে আশ্রয় নেয়।’ ফজলুর রহমান গালাগালি করে ধমকে ওঠে। বোকা স্বভাবের গেদু রাজাকার বলে, ‘আমার মনে হয়, ওরা জ্বিনের মন্ত্র পইড়া আসে। তাই আমরা দেখতে পাই না।’
‘হারামজাদা কয় কী? মিলিটারি তোগো হোগার মধ্যে বন্ধুকের নল ঢুকায়া নাড়িভুড়ি বাইর কইরা দিব। খামাখা তোগো রাজাকার বানাইছে?’ ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলে ফজলুর রহমান। দম নিয়ে বিড় বিড় করে বলে, ‘আজ অল্পের জন্য জানে বাঁইচা আছি। নলসোন্দা গ্রামের বাচ্চু হাজিকে ক্যাপটেন আব্বাস খান লাত্থি দিয়া চেয়ার থাইকা ফালায়া দিছে। আমার তখন হাত পা কাঁপতে ছিল।’
‘তারে লাত্থি দিছে ক্যা?’
ফজলুর রহমান উদাস কণ্ঠে বলে, ‘ক্যাপটেনের মেজাজ ছিল চড়া। এইসময় হাজি সাহেব রসিকতা করে বলেছে, ‘স্যার, বাচ্চা পোলাপান ক্যাম্প অ্যাটাক করছে তাতে আপনারা এতো কেয়া ডরকে যাতা হায়।’
হাজি সাহেব এই কথা কওয়ার লগে লগে ক্যাপটেন সাহেবের চোখ ফাইটা যেন আগুন বাইর হচ্ছিল। উইঠা গিয়া এমন লাত্থি ঝাড়ে হাজি সাহেব কয়েক গড়ান খায়া ছিটকে বাইরে গিয়া পড়ে। ক্যাপটেন সাহেব পিস্তল বাইর করে হাজি সাহেবের বুকে ধরে। তাই দেইখা সবারই হাত-পার কাঁপুনি শুরু হয়। তার এই ব্যাঘ্র গর্জন আমরা আগে কোনোদিন দেখি নাই।’

আলিম বলে, ‘বাঁচার বুদ্ধি কন মেম্বর সাব। কী করলে তার মেজাজ ঠান্ডা হবে?’
ভাবনা মুখে ফজলুর রহমান বলে, ‘তারা যে ক্ষ্যাপা ক্ষেপছে, আমি তো বাঁচার কোনো কূল কিনারা দেখতাছি না। পারলে আমাগোরেই গুলি করে। আমিতো ভীষণ ভয় পাইছিলাম এই বুঝি বাপের দেওয়া জানটা আজ যায়।’ ফজলুর রহমান দম নিয়ে বলে, ‘একটা পথ আছে।’
‘কী পথ?’ রাজাকাররা দম ফেলে উন্মুখ হয়ে তাকায়।
‘খোঁজ নিয়া দেখ, আশে পাশের কোনো গ্রামে আওয়ামী লীগ কিংবা কোনো হিন্দুর সুন্দরী মেয়ে আছে কিনা? থাকলে তাকে ক্যাম্পে দিয়া আয়। শুনছি ক্যাপটেন সাহেবের মাইয়া নেশা আছে। সুন্দরী মেয়ে দেখলে ক্যাপ্টেনের মেজাজ ঠান্ডা হতে পারে।’
গেদু রাজাকার বলে, ‘নদীর ওপার রাধানগর গ্রামে এক হিন্দুর সুন্দরী মেয়ে আছে।’
‘ওই হিন্দুর নাম কী?
‘কালিপদ রায়।’
‘কালিপদ মাস্টার?’ ফজলুর রহমান জিজ্ঞেস করে।
গেদু বলে, ‘হ কালিপদ মাস্টার।’
‘তাইলে আর দেরি করিস না। আজই ওই মালাউনের মেয়েকে ধইরা ক্যাম্পে দিয়া আয়।’

ফজলুর রহমানের এই আদেশ পেয়ে রাজাকাররা আর দেরি করে না। তারা তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে যায়। ফজলুর রহমান আয়েশ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকে। এইসময় সাকিব ঢুকে রুমে। সে এতক্ষণ আড়াল থেকে সবই শুনেছে। সাকিব ফজলুর রহমানের কাছে গিয়ে বলে, ‘আব্বা, আপনি কালিপদ স্যারের মেয়েকে ক্যাম্পে দিতে বললেন?’
‘হ্যা। অসুবিধে কী?’
‘উনি আমার শিক্ষক। খুবই ভালো মানুষ।’
‘সে মালাউন। মালাউনরা কোনোদিন ভালো হয় না। ওরা মুশরিক কাফের। ওরা ইসলামের শত্রু। যতক্ষণ ওরা ইসলাম গ্রহণ না করবে ততক্ষণ ওরা মুসলমানদের শত্রু। ওদের হত্যা করার বিধান দিয়েছেন আল্লাহপাক।’ ফজলুর রহমান এই কথা বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। সাকিবের মনটা ভীষণ খারাপ হয়। স্যারের মতো সজ্জন অমায়িক মানুষের মেয়েকে মিলিটারি ক্যাম্পে দেওয়াটা সাকিব মেনে নিতে পারছে না। বাধা দিতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। রাজাকাররা সাথীর কথা মিলিটারিকে জানিয়ে দিতে পারে। তার এই স্বপ্নময় দিনের অবসান হয়ে যাবে। দুস্কৃতিকারির বোনকে আশ্রয় দেওয়ার অপরাধে জীবনটাও চলে যেতে পারে। সাকিব ভেবে পাচ্ছে না এখন সে কী করবে।
ঘণ্টা খানেকের মধ্যে এলাকায় প্রচার হয়ে যায় রাধানগর গ্রামের কালিপদ মাস্টার এবং তার স্ত্রীকে গুলি করে মেরে তার কলেজ পড়ুয়া ছোটমেয়ে হৈমন্তিকে তুলে নিয়ে গেছে রাজাকাররা। বড় মেয়ে শুক্লা ও একমাত্র ছেলে জীবন কুমার অনেক আগেই কোলকাতা চলে গেছে। বাবা কালিপদ ও মাকেও নিতে চেয়েছিল তারা। কালিপদ রায় রাজী হননি। বলেছেন, ‘জন্মভূমি ছেড়ে তিনি কোথাও যাবেন না।’
যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে চিঠি লিখে বড় মেয়ে শুক্লা বার বার অনুরোধ করেছে বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভীষণ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। তুমি সবাইকে নিয়ে আমাদের এখানে চলে এসো। কালিপদ রায় জবাবে বলেছেন, ‘মরলে তিনি জন্মভূমিতেই মরবেন। তবু জন্মভূমি ছেড়ে কোথাও যাবেন না।’

ঘটনাটা যেই শুনছে সেই আফসোস করছে। অত্যন্ত সজ্জন অমায়িক ব্যক্তি বাবু কালিপদ। দীর্ঘদিন রতনকান্দি হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষক ছিলেন। অবসরে সকাল বিকেল ছাত্র পড়িয়ে এখন সময় কাটান।
কেউ কেউ রাজাকারদের অভিসম্পাত করছেন। জোহা তালুকদার বার বার আফসোস করছেন। তিনি আদমজি জুট মিলের ম্যানেজার। ২৫ মার্চ পাকিস্তানিরা গণহত্যা শুরু করলে জোহা তালুকদার পরিবার নিয়ে পালিয়ে বাড়ি চলে আসেন। তিনি কান্না গলায় বার বার বলছিলেন, ‘উনি আমার শিক্ষক ছিলেন। এমন মহাজ্ঞানী শিক্ষক, এমন ভালো মানুষ আমার জীবনে আর পাইনি। অংকের জাহাজ বলা হতো তাকে।’
স্ত্রী সাহারাকে বললেন, ‘তাঁর সম্পর্কে একটা মিথ চালু আছে, জানো? আমরা শুনেছি, একবার স্কুলে ইন্সপেক্টর এসেছে। তখন তিনি ক্লাস নাইনে অ্যালজেব্রা করাচ্ছেন। ব্ল্যাকবোর্ডে তিনি অংকটি লিখছিলেন, সেইসময় ইন্সপেক্টর তাঁর ক্লাসে ঢুকে পড়েন।
ইন্সপেক্টর জিজ্ঞেস করেন, ‘কী করাচ্ছেন আপনি?’
কালিপদ স্যার বলেন, ‘স্যার অ্যালজেব্রা করাচ্ছি।’
ইন্সপেক্টর ব্ল্যাকবোর্ডের দিকে তাকিয়ে কালিপদ স্যারের করা অংকটি দেখে বিরক্ত মুখে বললেন, ‘আপনিতো ভুল অংক করাচ্ছেন।’
ইন্সপেক্টরের এই কথায় কালিপদ স্যারের ইগোতে লাগে। তিনি মনে মনে ভীষণ রেগে যান। তারপর তিনি ইন্সপেক্টরকে বিনীত ভাবে তার আসনে বসতে বলেন। অংকটি এক নম্বর দুই নম্বর দিয়ে মোট নয় নম্বর পর্যন্ত লিখলেন ব্ল্যাকবোর্ডে।
ইন্সপেক্টর অবাক হয়ে বললেন, ‘এ কী করছেন আপনি? কালিপদ বাবু বললেন, ‘স্যার, এই অংকটি আমি নয় ধরনের ফর্মুলায় করেছি।’
‘কেন?’
‘এক নম্বর ফর্মুলা হলো ক্লাস সেভেনের ছাত্রদের জন্য। দুই নম্বর হলো ক্লাস এইটের ছাত্রদের জন্য। তিন নম্বর হলো ক্লাস নাইনের ছাত্রদের জন্য। চার নম্বর হলো ক্লাস টেনের ছাত্রদের জন্য। পাঁচ নম্বর হলো কলেজের ফার্স্ট ইয়ারের জন্য। ছয় নম্বর হলো সেকেন্ড ইয়ারের জন্য। সাত নম্বর হলো বিএসসি ছাত্রদের জন্য। আট নম্বর হলো এমএসসি ছাত্রদের জন্য আর নয় নম্বর হলো আপনার মতো ইনসপেক্টরের জন্য।’

কালিপদ স্যারের এই কথায় ইন্সপেক্টর সাহেব রেগে-মেগে চলে যান। গিয়ে তিনি স্কুলের ডেভলপমেন্ট ফান্ড বন্ধ করে দেন।
তাতে কালিপদ বাবু দমে যাননি। তার অংক ভুল এই কথা তিনি মেনে নিতে পারেননি। কোলকাতা শিক্ষা বোর্ডে তিনি অংকে একশোতে একশো পেয়েছিলেন। কোলকাতা শিক্ষা বোর্ড তাঁকে স্বর্ণপদক দিয়ে সম্মানিত করেছিল। অবসর নেওয়ার পর ছাত্রদের অনুরোধে সকাল বিকেল কয়েক ব্যাজ ছাত্রকে অংক শিখাতেন। সেই দেবতুল্য মানুষটিকে রাজাকাররা গুলি করে মেরেছে। এই কষ্টে জোহা তালুকদার অস্থির হয়ে পড়েছেন।
রাজাকাররা তার মেয়ে হৈমন্তিকে ধরে নিয়ে যাবার সময় তার স্ত্রীসহ ওদের সামনে এসে দাঁড়ালে আলিম রাজাকার দুইজনকে গুলি করে মেরে ফেলে। গুলি শব্দে কেউ তাদের সামনে এগিয়ে আসতে সাহস পায়নি। কালিপদ বাবুর মাথায় গুলি করে আলিম। সঙ্গে সঙ্গে মগজ ছিটকে বেরিয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়। কালিপদ বাবুর স্ত্রীর বুকে গুলি করে। সে অনেকক্ষণ জল জল বলে গোঙরাতে থাকে। গুলির শব্দে ভয়ে প্রতিবেশিরা পালিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর সেও মারা যায় জল না পেয়ে।
প্রতিবেশিরা লাশ ঘিরে নিঃশব্দে চোখের জল ফেলতে থাকে। কেউ বলে, ‘রিস্ক নিয়ে তার এইসময় বাংলাদেশে থাকা ঠিক হয়নি।’
কেউ বলে, ‘তার ছাত্ররা যারা মুক্তিযুদ্ধে গেছে তারা এই ব্যাপারটা মেনে নেবে না। তারা চরম প্রতিশোধ নেবে।’
হৈমন্তিকে চোখ বেঁধে মুখে কাপড় গুজে টেনে-হিচড়ে নিয়ে আসে রাজাকার আলিমের বাড়িতে। আলিমের বউ বাপের বাড়ি গেছে। স্বামী রাজাকারের দলে ভর্তি হয়েছে এটা সে মেনে নিতে পারেনি।
ফাঁকা বাড়িতে দুইজন হৈমন্তিকে চেপে ধরে রাখে। হৈমন্তি প্রাণপণ চেষ্টা করে ওদের হাত থেকে ছুটতে। না পেরে সে ওদের পা জড়িয়ে ধরে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। প্রথমে আলিম তাকে ধর্ষণ করে। তারপর বাকি দুজন পালাক্রমে ধর্ষণ করে। তারপর রাতে তাকে নিয়ে যায় ক্যাম্পে। তখনো বার বার হৈমন্তি তাদের পা জড়িয়ে ধরছিল।

ক্যাপ্টেন আব্বাস খান হৈমন্তিকে দেখে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে। বোঝা যায় হৈমন্তিকে তার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। হৈমন্তি পছন্দ হওয়ার মতো মেয়ে। তার দুধে আলতা গায়ের রং। টানা চোখ জোড়ায় মায়াবি আকর্ষণ। দৃষ্টি কাড়া শরীর। ক্যাপ্টেন আব্বাস খান আর দেরি করে না। হাসি মুখে হৈমন্তির হাত ধরে নিজের রুমে নিয়ে যায়। আলিমরা সালাম দিয়ে খুশি মনে চলে আসে।
রাতে গ্রামে ফিরে সোজা চলে যায় শান্তি কমিটির মেম্বর ফজলুর রহমানের বাড়িতে। সব শুনে ফজলুর রহমান তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেলে। ধন্যবাদ দেয় রাজাকারদের। বলে, ‘তোদের চাকরি আজ থেকে স্থায়ী হলো। এখন বাড়ি গিয়া আরাম কইরা ঘুমা।’
তারপর তিন রাজাকার ফিরে আসে আলিমের বাড়িতে। রাতে তারা একসঙ্গে আনন্দ ফূর্তি করে কাটাবে। এই ভাবনায় তারা আলিমের বাড়িতে ভালো খানাপিনার আয়োজন করে। পাশের বাড়ির এক বুড়ি চাচিকে ডেকে নিয়ে আসে। তাকে রান্নার দায়িত্ব দেয়। তাদের মন ভীষণ ফুরফুরে। ক্যাপ্টেন সাহেবকে তারা খুশি করতে পেরেছে। তার উপর হিন্দু নারী ভোগ করে অসীম ছোয়াবের ভাগীও হয়েছে। সেই আনন্দে তারা আত্মহারা।
মুরগির মাংস আর ভূনা খিচুড়ি খেয়ে অনেক মজা করে গভীর রাতে তারা শুয়ে পড়ে।

চলবে...
আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>
যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-১৪

 

 

Header Ad

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’

ছবি: সংগৃহীত

দেশের জনপ্রিয় নির্মাতা আশফাক নিপুন। কাজের পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমেও বেশ সরব তিনি। কথা বলেন নানা ইস্যু নিয়ে। সেই ধারাবাহিকতায় সরকার পতনের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনেও বিভিন্ন সময় নিজের আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যেও বিভিন্ন বার্তা দিয়েছেন। এবার এমনি একটি বার্তায় দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জনগনের আস্থার বিষয়ে আক্ষেপ জানালেন এই নির্মাতা।

বুধবার (২০ নভেম্বর) আশফাক নিপুন তার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে লেখেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সর্বস্তরের ছাত্র এবং সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল, বাসায় বসে বসে দোয়া করেছিল, যার যা সামর্থ্য দিয়ে সহায়তা করেছিল। কারণ, তারা দেখেছিল লড়াইটা আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শাসক বনাম সাধারণ ছাত্র-জনতার। এটাও অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই যে এই আন্দোলন বেগবান করতে বিরোধী সকল দলের কর্মীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাদের সংগ্রামও গত দেড় দশকের। কিন্তু এটা যদি শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার লড়াই হতো তাহলে সাধারণ মানুষ এই লড়াই থেকে দূরে থাকত। সেই প্রমাণ বিগত ১৫ বছরে আছে।

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ এখনো দেশের কোনো রাজনৈতিক দলকেই পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারে না। এটাই বাস্তবতা। এই বাস্তবতা মেনে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত কীভাবে সাধারণ জনগণের ভেতর নিজের দলের প্রতি আস্থা তৈরি করা যায় সেই বিষয়ে নিরলস কাজ করা। এই আস্থা ক্ষমতায় গিয়ে অর্জন করা সম্ভব না। কারণ, সাধারণ মানুষ আজীবন এস্টাবলিশমেন্টের বিপক্ষে। এই আস্থা অর্জন করতে হয় ক্ষমতা বলয়ের বাইরে থেকেই।

নিপুন আরও লিখেন, অরাজনৈতিক সরকার দিয়ে দীর্ঘদিন দেশ চালানো যেমন কাজের কথা না ঠিক তেমনি রাজনৈতিক সরকার হতে চাওয়া সকল রাজনৈতিক দলগুলোর বোঝা উচিত মুক্তিযুদ্ধের পরে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে সকল প্রকার পূর্বানুমান (যেমন- বর্ষাকালে আন্দোলন হয় না, নির্বাচনের আগেই কেবল জোরেশোরে আন্দোলন হয়, ঘোষণা দিয়ে বিরোধী সকল পক্ষ আন্দোলনে শামিল না হলে সফল হয় না) অগ্রাহ্য করেই। সেটা সম্ভব হয়েছে সাধারণ মানুষের ন্যায্যতার আকাঙ্ক্ষা থেকেই।

সবশেষ এই নির্মাতা লিখেছেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের এই আকাঙ্ক্ষার দুই পয়সার দাম দেন নাই। সাধারণ মানুষের এই আকাঙ্ক্ষা, ইচ্ছা আর দেশপ্রেমকে পুঁজি করে অরাজনৈতিক এবং রাজনৈতিক যারাই রাজনীতি রাজনীতি খেলতে চাইবে, তাদের দশাও কোন একসময় যেন পলাতক শেখ হাসিনার মতো না হয়, সেই বিষয় নিশ্চিত করতে হবে তাদেরকেই।

Header Ad

‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’: প্রধান উপদেষ্টা

ফাইল ছবি

জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, জুলাই-আগস্ট ছাত্র জনতার বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করেছি। এ নতুন দেশে আমাদের দায়িত্ব সকল মানুষকে এক বৃহত্তর পরিবারের বন্ধনে আবদ্ধ করা। কেউ কারো উপরে না, আবার কেউ কারো নিচেও না, এই ধারণা আমরা আমাদের জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।

তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে সুযোগ ছাত্র-জনতার সাহস ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে সম্প্রতি আমরা অর্জন করেছি, সেটাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী ভবিষ্যৎ গড়তে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ, আহত এবং জীবিত ছাত্র-জনতার কাছে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে চাই। যে সুযোগ তারা আমাদের দিয়েছে, তার মাধ্যমে আমাদের দেশকে পৃথিবীর সামনে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী দেশে পরিণত করতে আমরা শপথ নিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, ছাত্র আন্দোলনে জীবন উৎসর্গ করে যারা দেশ গঠনের সুযোগ করে দিয়েছে জাতি তাদের সারা জীবন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।

বক্তব্য শেষে সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা। পরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

Header Ad

নওগাঁ শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু

ছবি: সংগৃহীত

নওগাঁ শহরে যানযট নিরসন ও শৃঙ্খলা ফেরাতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, পৌর কর্তৃপক্ষ ও রিকশা মালিক-শ্রমিকদের যৌথ উদ্যোগে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। এতে শহরে শৃঙ্খলা ফিরবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) অভিযানের উদ্বোধন করেন নওগাঁ পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকারের উপ পরিচালক টি.এম.এ মমিন। এ সময় নওগাঁ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জিয়া উদ্দিন, নওগাঁ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন, নওগাঁ জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আফজাল হোসেন ও অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

অভিযান শুরুর পর থেকেই শহরের বরুনকান্দি, মশরপুর, তাজের মোড় ও কালীতলাসহ মোট ৮ টি প্রবেশদ্বারে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। চেক পোষ্টগুলোতে ২ জন পুলিশ সদস্য, ২ জন ছাত্র সমন্বয়ক, ৪ জন রোভার স্কাউট সদস্য ও ২ জন রিকশা মালিক শ্রমিক প্রতিনিধিসহ মোট ১২ জন করে কাজ করছেন।

পৌর প্রশাসক জানান, নওগাঁ শহরে বৈধ যানবাহনের সংখ্যা ৪ হাজার। কিন্তু প্রতিদিন পার্শবতী বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ১০ হাজার রিকশা, ব্যাটারী চালিত অটো রিকশা ও ইজিবাইক শহরে প্রবেশ করে। এতে তীব্র যানযট ও জন মানুষের ভোগান্তি তৈরী হয়। এই দূর্ভোগ লাঘোবে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল ও পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিনের দিক নির্দেশনায় যানবাহন নিয়ন্ত্রনসহ বিশেষ অভিযানের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। বৈধ চালকদের চিহ্নিত করতে তাদের মাঝে পরিধেয় বিশেষ ধরনের জ্যাকেট প্রদান করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

নওগাঁর পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিন বলেন, নওগাঁ শহরের যানযট দীর্ঘদিনের সমস্যা। পরিকল্পিত ভাবে এই সমস্যা দূর করতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের উদ্যোগে পৌর কর্তৃপক্ষ ও রিকশা মালিক শ্রমিক নেতৃবৃন্দদের সমন্বয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে স্থানীয় বাসিন্দা ও বিভিন্ন ষ্টেক হোল্ডারদের পরামর্শ নিয়ে একটি কর্ম পরিকল্পনা গ্রহক করা হয়েছে।

এ বিষয়ে নওগাঁর জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, অভিযান সফল ভাবে বাস্তবায়ন হলে শহরে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। জনগন এর সুফল পাবেন। সকলকে এই কার্যক্রমে সহযোগিতা প্রদানের আহবান জানান তিনি।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’
‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’: প্রধান উপদেষ্টা
নওগাঁ শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু
২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে নির্বাচন হতে পারে: উপদেষ্টা সাখাওয়াত
সেনাকুঞ্জে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে খালেদা জিয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ৫ জনকে রোবটিক হাত উপহার
সেনাকুঞ্জের পথে খালেদা জিয়া
সুযোগ পেলে শেখ হাসিনার পক্ষে মামলায় লড়ব: জেড আই খান পান্না
নির্বাচন কমিশন গঠন, সিইসি হলেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব নাসির উদ্দীন
ডিএনএ টেস্টের ফলাফল: ভিনিসিয়ুসের পূর্বপুরুষ ছিলেন ক্যামেরুনের
জামিন পেলেন সাংবাদিক শফিক রেহমান
বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে আসা সেই শাহজাহান ওমর গ্রেপ্তার
মিরপুর ও মহাখালীতে অটোরিকশা চালকদের সেনাবাহিনীর ধাওয়া
‘শেখ হাসিনা এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী’, এমন কথা বলেননি ট্রাম্প
লেবাননে ৮ শতাধিক ইসরায়েলি সেনা নিহত
ভারতে সাজাভোগ শেষে দেশে ফিরল ২৪ বাংলাদেশি কিশোর-কিশোরী
ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে অবরোধ করে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের বিক্ষোভ
গাজায় ইসরায়েলের হামলায় আরও ৮৮ ফিলিস্তিনি নিহত
সাবেক এমপি শাহজাহান ওমরের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর
১২ বছর পর সেনাকুঞ্জে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া