সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-২০

স্নানের শব্দ

শবনমকে যদি এই মুহূর্তে কেউ জিজ্ঞেস করে, পদোন্নতি হওয়ার পর সে সুখী কিনা। তাহলে হয়তো সরাসরি এর উত্তর ‘হ্যাঁ’ কিংবা ‘না’ বলে এক কথায় সে দিতে পারবে না। তবে যদি কেউ জানতে চায় সে খুশি কি না, তখন হয়তো সে নিজেকে একজন খুশি মানুষ বা সন্তুষ্ট মানুষ বলে দাবি করতে পারবে।

ক্যারিয়ারে পদ-পদবি অবশ্যই একটা প্রাপ্তি কিন্তু শবনম আসলে আনন্দ খুঁজে পায় তার কাজে। সেজন্যই দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে শুধু রুটিন কাজ না করে কীভাবে প্রতিষ্ঠানটিকে আরও গতিশীল ও শৃঙ্খলাপূর্ণ করা যায় সেসব নিয়ে ভাবছিল সে। বোর্ড মেম্বারদের অনুমোদনের জন্য কিছু পেপার ওয়ার্কও গুছিয়ে রাখছিল। এক ধরনের সূক্ষ্ম আত্মতুষ্টি, হয়তো অবচেতন মনের খুব নিচের স্তরের তলানিতে ছাই চাপা আগুনের মতো হাল্কা আত্মঅহংকারও জন্ম নিয়েছিল শবনমের মনে।
এর মধ্যেই ওসমান গণির দুর্নীতি তদন্তে গঠিত কমিটি ও অফিশিয়াল তথ্য ফাঁসকারীদের চিহ্নিতকরণ কমিটি তাদের তদন্তের ফলাফল প্রকাশ করল। অফিসে বেশ কিছুদিন ধরেই অনেক রকম কানাঘুসা শোনা যাচ্ছিল। তাতে মনিরুজ্জামান ও তার সঙ্গী ছেলেটা মানে ইন্টারনাল অডিটের কিবরিয়া খুব ঘাবড়ে গিয়েছিল।

পর পর দুইদিন ফোনে মনিরুজ্জামানের আকুতি ঝরে পড়লো। ‘ম্যাডাম, একটু কথা বলতে চাই আপনার সাথে, প্লিজ ম্যাডাম একটু সময় দেন! আমরা কি আপনার রুমে এসে দেখা করবো?’

প্রথমে শবনম পাত্তা দিতে চায়নি, পরে বাধ্য হয়েই বললো, ‘অফিসে না। শুক্রবার সকালে আমার বাসায় আসো।’
শবনম দেখলো দুজনেই ভীষণ মুষড়ে পড়েছে। চেহারায় চিন্তার ছাপ। চোখের নিচে নিদ্রাহীনতার কালি। শবনম ওদের ড্রইংরুমে বসিয়ে রাহেলার মাকে বললো চা দিতে। তারপর দুজনের মুখোমুখি বসে ধমকের সুরে বললো,
‘কি ব্যাপার? চেহারা এমন হয়েছে কেনো? যেন কত বছর ধরে খাও না, ঘুমাও না!’
‘ম্যাডাম, খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছে। মনে হচ্ছে খুব খারাপ কিছু ঘটবে। আমার ডিপার্টমেন্টের প্রায় সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। আমাকেও।’
কিবরিয়া বললো কাঁপা কণ্ঠে।
‘আচ্ছা, সে তো করবেই। তুমি কি সব বলে দিয়েছো?’
‘না ম্যাডাম, বলিনি তবে উনারা খুব চেপে ধরেছিল। জেরার পর জেরা। আমার খুব ভয় লাগছে ম্যাডাম। উনারা বলছেন প্রয়োজনে নাকি আবারো ডাকবেন।’
‘শোনো কিবরিয়া, আগে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করো। নিজে শক্ত থাকলে অন্যরা কিছু করতে পারবে না। ওই কথাটা তো জানো, নৌকা এমনি এমনি ডুবে না। পানি যখন বাইরে থেকে নৌকার ভেতরে ঢোকে তখনই নৌকা ডোবে। আর নৌকাতে ফুটা থাকলেই পানি ঢোকার সুযোগ পায়।’
‘আপনি কিন্তু বিষয়টা সিরিয়াসলি দেখবেন ম্যাডাম! আপনার জন্যই কাজটা করেছি।’ মনিরুজ্জামান কাতর স্বরে অনুনয় করে।
‘নিশ্চয়ই দেখব।’ শবনম আশ্বাস দেয়। তারপর একটু থেমে বলে, ‘কাজটা কি শুধু আমার জন্যই করেছো নাকি ওসমান গণিকে অপছন্দ করতে বলে করেছো, ঠিক করে বলো তো!’
‘দুটো কারণই সত্যি ম্যাডাম।’ মনিরুজ্জামান কাঁচুমাচু হয়ে বলে।
‘আমি কি তোমাদের কখনো বলেছিলাম ওসমান গণির দুর্নীতির তথ্য প্রমাণ খুঁজে বের করো! তোমরা নিজ দায়িত্বে সেটা করেছ, হ্যাঁ, এর ফল আমার পক্ষে গেছে বলে আমার কাজে লেগেছে। সেই জন্যই তোমাদের পাশে আছি আমি। চিন্তা করো না।’

ওরা দুজন চলে যাওয়ার পর তারেক জানতে চেয়েছিল, অফিসে কোনো সমস্যা কিনা। শবনম মৃদু হেসে বিয়য়টা এড়িয়ে গেছে।

এই মুহূর্তে শবনমের টেবিলের ওপর দুই কমিটির রিপোর্ট পাশাপাশি পড়ে আছে। কিছুক্ষণ আগে এসেছে এইগুলো। ছাদে ঘুরতে থাকা ফ্যানের বাতাসে স্ট্যাপল করা রিপোর্টের পাতাগুলো একটু একটু উড়ছে। তদন্তে অফিসের স্টাফ বাস কেনায় ওসমান গণির দুর্নীতি প্রমাণিত হয়েছে। অবশ্য নিয়মিত বাৎসরিক এডিটের সময় সেটা ঠিকই ধরা পড়তো। ওসমান গণির বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। যেহেতু সে আগেই চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়েছে সেক্ষেত্রে হয়তো তার প্রাপ্য সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে সে। কিংবা প্রতিষ্ঠান ইচ্ছা করলে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাও করতে পারে।

দ্বিতীয় রিপোর্টটি অফিশিয়াল গোপনীয়তা লঙ্ঘন বা জরুরি তথ্য ফাঁসকারীদের শনাক্তকরণ ও দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রসঙ্গে। সেখানে স্পষ্ট ভাষায় লেখা আছে— তদন্তকারীদের কাছে নিশ্চিতভাবে প্রতীয়মান হয়েছে, এই তথ্য ফাঁস করার সাথে অফিসের অভ্যন্তরীণ কর্মচারি কর্মকর্তাদের যোগসাজস রয়েছে। সন্দেহভাজন হিসেবে যে চার জনের নাম এসেছে তার মধ্যে কিবরিয়া আর মনিরুজ্জামানের নামও আছে। কমিটি এই চারজনকেই শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে চাকরিচ্যুত করার জন্য সুপারিশ করেছে।

দুটি রিপোর্টই সরাসরি শবনমের কাছে এসেছে। বোর্ড মেম্বারদের সামনেও এটা তাকেই উপস্থাপন করতে হবে। পারসোনাল সেক্রেটারিকে ফোন করে কড়া এক কাপ কফি পাঠাতে বললো শবনম। প্রচণ্ড মাথা ধরেছে তার। এ কি এক পরীক্ষার মধ্যে ফেললো তাকে বিধাতা! অভিযুক্তদের বরখাস্ত করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নাকি নিতে হবে তাকেই।

ওসমান গণি চাকরি ছেড়ে দিলেও তার অনুসারীরা এখনো অফিসে তৎপর আছে। শবনম যদি মনিরুজ্জামানদের বরখাস্ত না করে তবে স্বাভাবিকভাবেই সেই অনুসারীরা শবনমকে তাদের মদতদাতা হিসেবে চিহ্নিত করবে। এমনিতেই তারা একট রব তুলেছে যে ওসমান গণির পতনে যেহেতু শবনম সবচে বেশি লাভবান হয়েছে, তখন স্বভাবতই কোনো না কোনোভাবে এই ঘটনার সঙ্গে শবনমের যোগসূত্র আছে। একবার যদি এটা তারা প্রমাণ করতে পারে তবে শবনমের পক্ষে এই পদে টিকে থাকা কঠিন হবে।

আবার নিজ হাতে এই ছেলেগুলোর চাকরিই বা কীভাবে খাবে সে? একধরনের কৃতঘ্নতা হবে সেটা। এমন বিব্রতকর, অস্বস্তিদায়ক পরিস্থিতিতে তার চাকরি জীবনে আর কখনো সে পড়েছে কিনা সন্দেহ। মনিরুজ্জামানদের প্রতি এটা অনেকটা লঘু পাপে গুরুদণ্ড হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বুক ফুলিয়ে ওদের পাশে দাঁড়ানোর নৈতিক জোরটাও পাচ্ছে না শবনম। সেটা কি এই জন্য যে ওদের পক্ষে শক্তভাবে দাঁড়াতে গেলে তার নিজের অবস্থানটা নড়বড়ে হয়ে যাবে!

মনিরুজ্জামানরা নিশ্চয়ই শবনমের ভেতরকার টানাপোড়েনের ব্যাপারটা বুঝতে চাইবে না। তারা ওর উপরেই সমস্ত দোষ চাপাবে। ভাববে ওদের ঘাড়ে পা রেখে উপরে উঠে ম্যাডাম ওদের কথা ভুলে গেছে। শুধু ভুলে যাওয়াই নয়, কর্মস্থল থেকে এখন ওদের বিতাড়নও করতে চাইছেন তিনি। তারা হয়তো একবারো ভাববে না এখানে শবনমের কোনো হাত নেই। পরিস্থিতিটা এমন উত্তপ্ত হয়ে আছে যে সেখানে শবনমের কিছুই করার ছিল না।

গরম কফির কাপে চুমুক দিয়ে হঠাৎ নিজের উপরই রাগ হয় শবনমের। কি দরকার ছিল মনিরুজ্জামানদের সমর্থন দেওয়ার বা নেওয়ার? এইসব বাছুরদের সাহায্য না নিলেও তো পারতো সে! না হয় সিইও হতে পারতো না, না হয় যেখানে ছিল সেখানেই থাকতো অন্তত এরকম যন্ত্রণার মধ্যে তো আর পড়তে হতো না। যাকগে যা হবার তাতো হয়েছেই, এখন আর আফসোস করে কি হবে? চিন্তা করতে হবে কীভাবে দুকূলই রক্ষা করা যায়! যাতে সাপও মরে আবার লাঠিও না ভাঙে!

শবনম না চাইলেও বিকাল নাগাদ অফিসের পিয়ন দারোয়ান থেকে শুরু করে প্রতিটি আসবাব, চেয়ার টেবিল, ইট কাঠ পর্যন্ত জেনে গেল তদন্ত কমিটির রিপোর্টের কথা। সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার জন্য বেরুতে যাবে, অমনি শবনমের কক্ষের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো মনিরুজ্জামান। মাথার চুল উসকোখুশকো। চেহারা মলিন।

‘ম্যাডাম, এইটা কি হলো? আপনি থাকতে এই রকম একটা অবস্থায় পড়লাম আমরা ..’
মনিরুজ্জামানের কণ্ঠে হতাশা। শবনম হঠাৎ কি উত্তর দেবে ভেবে পেল না, পি এসকে বলে রেখেছিল কেউ যেন ঘরে না ঢোকে। কোন ফাঁকে কীভাবে মনিরুজ্জামান ঢুকে পড়লো কে জানে! পিএস কি ওয়াশ রুমে গেছে!
‘আমাদের এভাবে বিপদের মধ্যে ফেলে দিয়ে আপনিও কিন্তু ছাড় পাবেন না ম্যাডাম।’
মনিরুজ্জামানের গলার স্বর পাল্টে গেল। চোখ দুটোতে হিংস্র দৃষ্টি। শবনমের চোখে চোখ রেখে সে বললো,
‘আমরা সবাইকে বলবো এই সব আপনি নিজের স্বার্থে আমাদের দিয়ে করিয়েছেন। আপনার প্ররোচনায় আমরা তথ্য ফাঁস করেছি। আপনি হুকুমদাতা।’
‘তুমি কি ব্ল্যাক মেইলিং করতে চাও নাকি? হুমকি দিচ্ছো? এত বাড় বেড়েছে তোমাদের?’
শবনম দাঁতে দাঁত চেপে চাপা গলায় হিসহিস করলো।
‘সেটা আপনি যা মনে করেন ম্যাডাম। কথা পরিষ্কার। আমরা না থাকলে আপনিও থাকবেন না, ব্যাস। যেমনে পারেন এই সিদ্ধান্ত বদলান। নয়তো পরিণতির জন্য আমরা দায়ী থাকব না।’

শবনমকে স্তব্ধ নির্বাক করে দিয়ে যেমন এসেছিল তেমনি আবার ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে গেল মনিরুজ্জামান

চলবে…

আরও পড়ুন>>>

স্নানের শব্দ: পর্ব-১৯

স্নানের শব্দ: পর্ব-১৮

Header Ad
Header Ad

বলিউডে সেনারা হিরো, বাস্তবে কেন জিরো ভারতীয় বাহিনী!

ছবি: সংগৃহীত

বলিউডের অ্যাকশনধর্মী সিনেমায় ভারতীয় সেনারা সবসময়ই বিজয়ী। কখনো পাকিস্তানি ঘাঁটি ধ্বংস, কখনো আফগানিস্তানে অভিযান—সবখানেই তারা অবিশ্বাস্য দক্ষতায় জয়ী। তবে বাস্তবতা যে এতটা সহজ নয়, তা কাশ্মীরে সাম্প্রতিক হামলায় আবারও স্পষ্ট হলো।

এই হামলায় প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ২৬ জন। অথচ হামলা ঠেকাতে বা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি ভারতীয় সেনারা। হামলার জন্য কোনো পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ছাড়াই পাকিস্তানকে দায়ী করে নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করার চেষ্টা করছে তারা। ঘটনাটির রেশে সীমান্তে দুদেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে, ভারী অস্ত্রসহ মোতায়েন করা হয়েছে সেনা, মাঝেমধ্যেই হচ্ছে গোলাগুলি।

নেটিজেনরা বলিউড সিনেমার বাহাদুর সেনাদের সঙ্গে বাস্তবের ব্যর্থ ভারতীয় সেনাদের তুলনা করে রীতিমতো ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করছে। সিনেমার মতো বাস্তবে অজয় দেবগান বা অক্ষয় কুমারের মতো নায়কোচিত সেনা যে নেই, তা এখন স্পষ্ট।

কেবল স্থলবাহিনী নয়, বিমানবাহিনীর ব্যর্থতাও হাস্যরসের জন্ম দিয়েছে। কাশ্মীর হামলার পর পাকিস্তানে হামলা চালাতে গিয়ে ভারতীয় বিমানবাহিনী ভুল করে নিজের দেশের একটি বাড়ির ওপর হামলা চালায়। এই ঘটনার ভিডিও ও প্রতিবেদন সামাজিকমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যেখানে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে ভারতীয় বাহিনী।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, হামলার পূর্বাভাস থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় সেনারা যথাসময়ে পদক্ষেপ নেয়নি। হামলার ২০ মিনিট পর তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছায়, তখন হামলাকারীরা নিরাপদে পালিয়ে যায়।

২০১৯ সালের ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার সময় মিগ-২১ নিয়ে পাকিস্তানে ঢুকে পড়া ভারতীয় পাইলট অভিনন্দন বর্তমানের ঘটনাও আবার আলোচনায় এসেছে। সেবার তার বিমান ভূপাতিত হয় এবং তাকে আটক করে পাকিস্তান পরে ফিরিয়ে দিয়েছিল।

নেটিজেনরা বলছেন, বলিউডের সিনেমার কল্প-কাহিনীর সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। যুদ্ধ লাগলে তা হবে সমান শক্তির লড়াই, সিনেমার মতো একপাক্ষিক নয়। অধিকাংশই আবার যুদ্ধের বিপক্ষে মত দিয়েছেন, মানবিক বিপর্যয়ের ভয় দেখিয়ে শান্তির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

বলিউডের রঙিন পর্দায় ভারতীয় সেনারা 'অপরাজেয়' হলেও বাস্তবে কাশ্মীর হামলার ব্যর্থতা প্রমাণ করেছে, বাস্তব যুদ্ধ সিনেমার গল্পের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন এবং অপ্রত্যাশিত।

Header Ad
Header Ad

কুমিল্লায় বজ্রপাতে স্কুলছাত্রসহ নিহত ৪

ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লায় বজ্রপাতে দুই স্কুলছাত্রসহ ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও একজন। তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে বরুড়া ও মুরাদনগরে পৃথক দুইটি ঘটনায় তাদের মৃত্যু হয়।

জানাযায়, কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার খোশবাস ইউনিয়নের পয়ালগাছা গ্রামে সোমবার দুপুরে বজ্রপাতে দুই স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। মৃত দুইজন বড়হরিপুর উচ্চবিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিল। মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন পয়ালগছা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুজ্জামান বিপ্লব।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে হালকা মেঘের মধ্যে শিশুরা মাঠে ঘুড়ি উড়াতে ব্যস্ত ছিল। হঠাৎ বজ্রপাত হলে দুই ছাত্র মারাত্মকভাবে আহত হয়। স্থানীয়রা দ্রুত তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদের মৃত্যু ঘোষণা করেন। নিহত কিশোর দুজন হলেন পয়ালগাছা গ্রামের মৃত খোকন মিয়ার ছেলে ফাহাদ হোসেন(১৩) এবং আব্দুল বারেক মিয়ার নাতি সায়মন হোসেন (১৩)।

বরুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হাসান বলেন, বরুড়া উপজেলার খোশবাস ইউনিয়নের পয়ালগাছা গ্রামে দু স্কুল ছাত্র নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে একজন। হাসপাতাল থেকে নিহত দুজনের লাশ স্বজনরা বাড়িয়ে নিয়ে যান।

অপরদিকে কুমিল্লার মুরাদনগরে জমির ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

সোমবার সকালে উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানাধীন পূর্বধইর পূর্ব ইউনিয়নের কোরবানপুর পূর্বপাড়া কবরস্থানের পাশের মাঠে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন, পূর্বধইর পূর্ব ইউনিয়নের কোরবানপুর গ্রামের মৃত বীরচরন দেবনাথের ছেলে নিখিল দেবনাথ (৬৪) ও আন্দিকুট ইউনিয়নের দেওড়া গ্রামের জসীম উদ্দীন ভুইয়ার ছেলে জুয়েল ভুঁইয়া (৩০)।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত নিখিল দেবনাথ ও জুয়েল ভূঁইয়া কোরবানপুর পূর্বপাড়া কবরস্থানের পাশের মাঠে পাশাপাশি জমিতে ধান কাটার সময় বজ্রপাতের শিকার হয়। পরে তাদেরকে আশেপাশের লোকজন এসে উদ্ধার করে দেখে তারা ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। বর্তমানে দুজনের মরদেহ নিজ নিজ বাড়িতে আছে।

বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনাস্থল থেকে মুঠোফোনে তারা ঘটনাটি জানতে পারেন। এ ব্যাপারে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।

Header Ad
Header Ad

মে মাসে শেখ হাসিনার বিচার শুরু হচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত

জুলাই-আগস্ট গণঅভুত্থানে গণহত্যার মামলায় আগামী মাসের শুরুতেই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার বিচার শুরু হচ্ছে-আল জাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আলজাজিরার বৈশ্বিক নেতাদের সাক্ষাৎকারমূলক অনুষ্ঠান ‘টক টু আল–জাজিরা’য় এ কথা বলেন তিনি।
আগামী ডিসেম্বর থেকে আগামী বছর জুনের মধ্যেই নির্বাচন হবে বলে ফের জানিয়েছেন তিনি

এ সময় তিনি আরও বলেন, শুধু মানবিক সহায়তা নয়, নিরাপদ প্রত্যাবাসনই রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান।

বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং উদাহরণ সৃষ্টিকারী নির্বাচন উপহার দেয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, নির্বাচনের আগে সংস্কারের তালিকা ছোট হলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন এবং তালিকা বড় হলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনপ্রত্যাশা এখনও তুঙ্গে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান।

আলজাজিরার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে জুলাই বিপ্লব, সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়া, সাবেক সরকারের দুর্নীতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।

আলজাজিরার উপস্থাপক ড. ইউনূসকে প্রশ্ন করেন, এটা কি বলা ঠিক যে, শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের ‘মধুচন্দ্রিমা’ এখন সম্ভবত শেষ হয়েছে? কিছু বেশ বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেগুলোর সুনির্দিষ্ট জবাব আপনাকে দিতে হবে। কারণ, পুরোনো ক্ষমতাধরদের প্রভাব রয়েছে, অনেকে রাজনৈতিক শূন্যতাকে কাজে লাগাতে চাইতে পারে।

জবাবে ড. ইউনূস বলেন, মধুচন্দ্রিমা শেষ হোক বা না হোক, বাংলাদেশের মানুষ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান। তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে সরাসরি চলে যেতে এখনও বলছে না। বরং একটা ভালো নির্বাচন উপহার দিতে সরকারই নির্বাচন আয়োজনের দিকে যাচ্ছে। জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা এখনও বলছে না।

লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সমাধান কি বাংলাদেশ একা করতে পারবে?

জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থা ও জাতিসংঘের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কাজ করছি। তারা যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কিছু বোঝাপড়া যাতে তৈরি হয়।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়া হবে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন,
এ প্রশ্নের জবাবের একটি অংশ আওয়ামী লীগকেই নির্ধারণ করতে হবে। দলটি আগে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে–তারা নির্বাচনে যোগ দেবে কিনা। তারা এখনও কিছু ঘোষণা করেনি। তা ছাড়া নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশন কী প্রতিক্রিয়া দেয়, সেটাসহ নানা বিষয় সামনে আসতে পারে।

তাহলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তা নয়। অন্যান্য রাজনৈতিক দল আছে, যারা বলতে পারে যে, এ আইনের অধীনে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।

সাক্ষাৎকারে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ড. ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের প্রসঙ্গ ওঠে। ড. ইউনূস জানান,
তিনি বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেখানে শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে বলেছিলেন তিনি। জবাবে মোদি বলেছিলেন, এটা তার জন্য সম্ভব নয়। শেখ হাসিনা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে কিছু বললে, সেটি তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।

যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, একসঙ্গে কাজ করার নীতি নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। আমরা একসঙ্গেই পারস্পরিক সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ নিতে চাই।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

বলিউডে সেনারা হিরো, বাস্তবে কেন জিরো ভারতীয় বাহিনী!
কুমিল্লায় বজ্রপাতে স্কুলছাত্রসহ নিহত ৪
মে মাসে শেখ হাসিনার বিচার শুরু হচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টা
ঢাকাসহ সারাদেশে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে
সবাই মিলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাই লক্ষ্য: আলী রীয়াজ
ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ
কাশ্মীর সীমান্তে ভারত-পাকিস্তানের ফের গোলাগুলি
টস হেরে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ, একাদশে ৩ পরিবর্তন
দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা
টটেনহামকে উড়িয়ে প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল
শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে পারবেন না মোদি
রেফারির কাছে ক্ষমা চাইলেন মাদ্রিদের ডিফেন্ডার আন্তনিও রুদিগার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা উপহার দিলেন ছাত্রদল নেতা
দুর্নীতির অভিযোগ তুলে দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি
নওগাঁয় গ্রাহকের আমানতের টাকা ফেরত না দেওয়ায় জাতীয় পার্টি’র নেতাকে গণধোলাই
পাকিস্তানের পাশাপাশি বাংলাদেশকেও পানি না দেওয়ার আহ্বান বিজেপি এমপির
এসআই নিয়োগের ফলাফল প্রকাশ, ৫৯৯ জনকে প্রাথমিক সুপারিশ
হাকিমপুরে গরীবের চাল ছাত্রলীগ নেতার গুদামে
চুরির অভিযোগে কুবির দুই শিক্ষার্থী বহিষ্কার
ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগবাড়িয়ে কিছু করার পক্ষে নয় ঢাকা