সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-১৯

নেই দেশের নাগরিক

“বন্ধ কর তো, তোর ওই বাউল বাউল কথা। এখন ওসব শোনার সময়? জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ, আর এর এখন মনের সংসারে ঘুড়ি ওড়ানোর শখ হয়েছে! পাছায় যখন গুলি খাবি, তখন বুঝবি, ঘুড়ি উড়বে না নিজেই উড়বি!” চোখ থেকে আগুনের শীষ বের হয়ে আসছে মতির। নৌকার পাটাতনের ওপর রাগ আর বিরক্তি মেশা পায়ের ধাপ হড়াম করে ফেলে বলল, “বকবকানি অনেক হয়েছে। এবার ওপরে উঠে আয়। চাল ফুটোনোর ব্যবস্থা করতে হবে। পেটে কিছু না পড়লে বাউল মউল সব ফুড়ুৎ হয়ে যাবে। তখন মনের আকাশে ঘুড়ি উড়বে না, খিদে উড়বে, খিদে।“ পা দিয়ে আবার হড়াম করে একটা শব্দ করল মতি।
নুহু আঁচ করল, বড়ভাই রেগে বোম হয়ে গেছে। আর বেশি কিছু না ঘাটানোই ভালো। নৌকোর কানা ধরে নিচ থেকে উপরে সোজা একবার শক্তিভরে ঠেলা দিয়ে ভুষ করে নৌকোর পাটাতনে গড়িয়ে পড়ল। গায়ের লবণজল ঝরে পড়ল বাঁশের বাতার পাটাতনে। গামছাটা কোমর থেকে খুলে, দু-তিনবার ঝাড়া দিয়ে দড়ির মতো পাক মেরে আচ্ছা করে চিপল। গলগল করে চুঁইয়ে পড়ল জল। তারপর ভাঁজ খুলে আবারও ‘ঝ্যাৎ’ করে একবার ঝাড়া দিল। আলগা পাতলা করে গা মুছলে, আরিফা বলল, “অ কী করে গা মুছছো দেওরজি, সব পানি তো গায়েই থেকে যাচ্ছে!“
“কই, না তো” বলে চিপে চিপে গা মুছল নুহু। কণা কণা লবণে ভেজা লাল রঙের গামছাটা ছোপ ছোপ সাদাটে হয়ে গেল। গা মুছে নৌকোর খোলের মাথায় গিয়ে বসল। পাটাতনে লেটা মেরে বসে দু-পা নৌকোর দিকে ছড়িয়ে দিল। আগন্তুক নৌকোর আবুলকে উদ্দেশ করে বলল, “একটা বিড়ি দেন, ভেতরে একটু হাওয়া দিই।“ গোসল করে বোঝাই যাচ্ছে, তার মনটা কিছুটা ফুরফুরে হয়েছে। আবুল মনে মনে বিরক্ত হলো, আমি কি বিড়ির ফ্যাক্টরি খুলেছি, যে চাইলেই পাওয়া যাবে? একটা প্যাকেট কোনোরকমে লুঙ্গির গিঁটে গোঁজা ছিল, ওগুলোই এতক্ষণ চলল। আর গোটা তিনেক পড়ে আছে। আমি কি খাব না? না, সব লোককে খাইয়ে দিয়ে আমি শালা হাওয়া খেয়ে বেড়াব! লুকোছুপা ভাব করে আবুল বলল, “আর নেই গ। ফুরিয়ে গেল।“
“কেন দেখলাম যে, এখনও আধবান্ডিল ছিল।“ গোয়েন্দার মতো বলল নুহু। আহা রে, এটা কি ওর বাপের বিড়ি না ওর বাপের পয়সায় কেনা, যে দেখলেই খেতে দিতে হবে? মনকে দাঁত দিয়ে চিবল আবুল। অন্য পানে মুখ ঘুরিয়ে এলেবেলে বলল, “একটা দুটো আছে, ভেঙে গেছে, অ টানা যাবে না।“
অইই দেন, একবার দুবার টানা হলেই হবে, বলত নুহু, কিন্তু আবুলের মনোভাব বুঝে সে কথায় শিকল পরাল। মনে মনে বলল, হায়রে মানুষ, একটা বিড়িও দিতে চায়ছে না। বিড়ি কি আর দেশ ফিরিয়ে দিতে পারবে? না, নতুন কোনো দেশ দিতে পারবে? বিড়ি বড়জোর জানে দুদণ্ড শান্তি দিতে পারে, তা ছাড়া আর কি? নুহু আলগোছে বলল, “ওহঃ তাহলে তো আর কিছু করার নেই। ভাঙা বিড়ি ফুঁকলে ভাগ্যও ভাঙা হয়।“ তারপর মনে মনে বলল, সবই তো চলে গেছে, এবার না হয় বিড়িটাই গেল! এবার শরীরের খোল থেকে রুহুটা গেলেই বাঁচি!
নৌকোর খোলের ওপরে জ্বলে উঠল উনুন। তিন কেজির ছোট্ট গ্যাস সিলিন্ডারটার মুখ দিয়ে দপদপ করে জ্বলছে আগুনের শীষ। লেলিহান শিখা হলকাচ্ছে। যেন নৌকো জ্বলছে। নদী জ্বলছে। মাঝদুপুরের তপ্ত নদীর পেট খিদেয় জ্বলছে। ক্ষুধার্ত নদীর পেট থেকে বেরিয়ে আসছে ক্ষুধার আগুন। যন্ত্রণার জিভ লকলকাচ্ছে। দূর থেকে মনে হচ্ছে, খরতপ্ত নদী গরমে তেতে আগুন ফোটা ফুটছে। ভাত ফুটছে। ছোট্ট হাঁড়িটার মুখের ঢাকনাটা হলবল করে দুলছে। ভেতরের ভাপ ঠেলা দিচ্ছে। ভাতফোটা বাষ্প উতলে কানা দিয়ে চুঁইয়ে পড়ছে। আরিফা হাঁ করে এসব দেখছে। তার খেয়ালি মন এই হাঁড়ি, ঢাকনা, বাষ্প, ভাপে ফুঁড়ে ঢুকে গেছে। দপদপ করে জ্বলছে খিদের আগুন। আরিফা ভাবছে, কখন যে দপ করে নিভে যাবে এ আগুন, তার কোনো ভরসা নেই। আগুন কি আর শুধু আখাতেই জ্বলছে? আগুন পেটেও জ্বলছে। ভাত ফোটা বাষ্প যেভাবে উগলে উঠছে, কষ্টের দলাও আরিফার পেট থেকে উগলে উঠছে। তার ভাপ চুঁইয়ে পড়ছে চোখের অশ্রু হয়ে। আঁচল দিয়ে চোখ মুছল আরিফা। হাঁড়ির কানাটা ন্যাকড়া দিয়ে কাত করে ভাত পাসাতে লাগল। নৌকোর একধারের পাটাতনে রান্নার সিলিন্ডারটা একটা কাঠের তক্তার ওপর বসানো আছে। যেদিক থেকে ঝিরঝির করে বাতাস আসছে, সেদিকটা আড়াল করে পলিথিনের একটা চাদর ঝুলিয়ে দিয়েছে মতি। হাওয়া লেগে পলিথিনটা ল্যালপ্যাল করে নড়ছে। যেন ফেসে যাওয়া ঢোল। আধো জল মেশা সেদ্ধ ভাতের জাউভাত “একটু নুন হলে ভালো হতো।“ খেতে খেতে বলল মতি। “নুনের কৌটোটা তো আনা হয়নি গ।” বলল আরিফা।
“নদীর পানি মিশিয়ে নাও, ঠিক নুনঠা হয়ে যাবে।“ ঠেস মারল নুহু। সে মনে মনে বলল, কপাল জোরে এইই পেটে জুটছে সেটাই ভাগ্য, তারপর আবার নুন দাও, লংকা দাও, পেঁয়াজ দাও, ভড়ঙের শেষ নেই! আর কটা দিন যাক, চালকটা ফুরোলেই, এটুকুও কপালে জুটবে না। তখন শুধু নদীর নুন খেয়েই থাকতে হবে। না হলে পেটে খিল দিয়ে এই নৌকোর খোলেই চিৎ হয়ে পড়ে থাকতে হবে। মতি কিচ্ছু বলল না। একবার চোখ বাঁকা করে কটমট করে নুহুর দিকে তাকাল। ভাতের থালাটা হাতের চেটোয় নিয়ে দ হয়ে বসে খাচ্ছে। হাওয়ার ঝাপটায় হালেমার ঘোমটাটা খুলে গেল। ফোকলা দাঁতে চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছেন জাউভাত। তার দাঁতহীন মাড়িদুটো জাঁতার মতো পিষছে। সেখান থেকে পাক খেয়ে এল খোনা কথা, নুহুকে ধমকালেন, “তোর কথার আবার এ কেমন ছিরি! বড়ভাইয়ের সঙ্গে এমন ঠেস দিয়ে কথা বলতে হয়?”
“তো কী বলবে? যেখানে জান বাঁচানোই দায় হয়ে পড়েছে, সেখানে আবার নুন-লঙ্কা কেন?” লংকার মতো ঝেঝিয়ে উঠল নুহু।
“কথাটা না হয় মুখ ফুটে বেরিয়েই পড়েছে, তা বলে অত টিটকেনি কেন?” মতিও তড়পাল।
“তোমরা থামবে?” বিরক্ত হলো আরিফা। সে কোলে সাকিবকে বসিয়ে নিয়ে নাড়ু নাড়ু করে জাউভাত খাওয়াচ্ছে।
“ঠিক আছে ঠিক আছে, চুপ কর। খাওয়ার সময় কথা বলতে হয় না। শয়তানে খেয়ে নেয়।“ ঘোমটাটা কপালে টানলেন হালেমা। এঁটো ভাত তার কলসায় চেপ্টে আছে। একবার জিভ দিয়ে চেটে নিলেন। হালেমা জানেন, একসঙ্গে থাকলে এট্টুআট্টু ঠুক্মুক হয়। ওসবে অত গা করলে হবে না। জিনিস যতই মধুর হোক, একসঙ্গে টানা থাকলে তেতো হতে বাধ্য। দুই ভাই এমনিতেই দুই পাণ্ডব। কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে থাকে। রণে-বনে-জঙ্গলে একসাথে। কী মাঠে কী ঘাটে, একজন আরেকজনের তোখিদ নেবেই নেবে। এক-আধ দিন নদী থেকে মাছ ধরে মতির বাড়ি ফিরতে দেরি হলে, নুহুর আর মাটিতে পাছা ঠেকে না। একবার উঠোন, একবার ঘর, একবার দাওয়ায় পায়চারি করে। আরও কিছুটা দেরি হলেই, টর্চলাইটটা হাতে নিয়ে নদীর পানে হনহন করে বেরিয়ে যায়। মতিও যোগ্য যুধিষ্ঠির। সহদরভাইয়ের জন্যে সবসময় মন পড়ে থাকে তার। উপরে উপরে নুহুকে বকাবকি করলেও, মনে কিন্তু উপচে থাকে ভালোবাসা। দরদ। একটু বকেই, পরে নিজেই কষ্ট পায়।
“আপনাদের খাওয়া দাওয়া হলো?” হাঁক পাড়লেন ইয়াসিন মাস্টার।
“হ্যাঁ, হলো, আপনাদের?” পাল্টা খোঁজ নিল মতি।
“হ্যাঁ, আমাদেরও হয়ে গেছে।“ একটা তৃপ্তির ঢেকুর তুললেন ইয়াসিন মাস্টার। তারপর যোহরের নামাজে দাঁড়ালেন। ওজু করে মতিও নামাজ আদায় করতে লাগল। হালেমা ছইয়ের ভেতরে হাঁটু মুড়ে নামাজের নিয়ত ধরলেন। যোহর পেরিয়ে আসরও পেরিয়ে গেল। পশ্চিমের আকাশ সূর্যকে গেলার জন্যে তোড়জোড় করছে। দিগন্ত রাঙিয়ে উঠছে লালাভ আভায়। তুলির আছড়ে রঙের কোলাজ আঁকছেন সন্ধ্যার পিকাসো। যিনি এতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলেন দিগন্তের ক্যানভাসে। ঝাঁক ঝাঁক পাখি দিগন্তের রঙ মেখে, পায়ে ডানায় রঙ নিয়ে ফিরছে বাসায়। তাদের পায়ের নখে করেও চলে যাচ্ছে বিন্দু বিন্দু রাত। আকাশ ফুঁড়ে খাড়া উঠে গেছে রেখার মতো গুচ্চের ফ্যাকাশে দাগ। যেন আকাশের মুখ ভার। তার সেই কষ্ট-রেখা ছড়িয়ে পড়ছে আসমান থেকে আসমানে। যেন আকাশ কোনোমতেই চায়ছে না, সূর্যকে ঘুম দিয়ে দিতে, সূর্যকে তুলে দিতে রাতের হাতে। তাই তার যন্ত্রণার রঙ দিগন্ত ফুঁড়ে আঁচড় কাটছে। পশ্চিম আকাশ থেকে তুষারের কণার মতো নেমে আসছে গুঁড়িগুঁড়ি অন্ধকার। নদীর জলে মিশে হয়ে উঠছে দলা। একটু একটু করে গিলে নিচ্ছে নৌকোর ছই, পাটাতন, খোল। ঘাটবাড়ি কৌশা নৌকোটা হয়ে উঠছে রাতবাড়ি। লাল টিপের মতো সূর্যটা খাপি খেতে খেতে দিগন্তের কোলে ঘুমিয়ে পড়তেই হুড়মুড় করে হেঁটে আসতে লাগল অন্ধকার। তার পায়ের দাপাদাপি টের পেল নদী। নীল নদী লালাভ থেকে আচানক কাজলকালো হয়ে গেল। নয়াপাড়া থেকে ভেসে আসা মাগরিবের আজান শেষ হতেই, ছইয়ের মটকা ধরে নেমে এল রাত। নদীতে বিছিয়ে দিল রাতের বিছানা। ঘুম সর্বপ্রথম কাঠি ছোঁয়াল সাকিবের চোখে। আরিফা মুখে ছড়া কেটে, আঁচলের হাওয়া দিয়ে তার চোখে লাগিয়ে দিল ঘুম। হালেমা নামাজ আদায় করে জাফর আলির পাশে কাত হয়ে বসলেন। মানুষটা সারাদিন কিচ্ছুটি মুখে তোলেননি! শুধু পড়ে পড়ে ঘুমিয়েছেন। দু-একবার চ্যাংদোলা করে ধরে প্রস্রাব করিয়েছে দু বেটা। তাও চোখ বুঝে ছিলেন। চোখের পাতা তুলতেই পারেননি।
“এক গাল জাউভাত খেয়ে নাও।“ কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ডাকলেন হালেমা। জাফর কোনো সাড়া দিলেন না। হালেমা গলার স্বর একটু চড়ালেন, “ওগো, শুনতে পাচ্ছ?” কথাটা জোরে কানের কাছে বাজতেই, জাফর ঠোঁট নড়ালেন, “হু”। মুদে থাকা চোখের পাতাগুলোও মিহি করে নড়ল। হালেমা কথায় জোর রেখেই বললেন, “এক গাল খেয়ে নাও, আরিফা জাউভাত করেছে। গায়ে বল পাবে।“
“না, খা ব না।“ জড়ানো স্বর আরও জড়িয়ে বেরোল। মিহি করে খুলে গেছে চোখের পাতা। ঝাপসা দৃষ্টিতে দেখছেন, হালেমা মুখের কাছে বসে আছেন। কুপির হলুদ আলোতে কাঁচা সোনার মতো লাগছে হালেমার জড়ানো মুখ। হীরের মতো জ্বলছে ঘোলাটে চোখ। সন্ধ্যার দক্ষিণি হাওয়ায় পাকাঝুন ভ্রূগুলো হাঁসের সাদা পালকের মতো ফিনফিন করে নড়ছে। থুত্থুরে মুখটা বড় মায়াবি লাগছে আজ। চোখ পিটপিট করা জাফর কি এই সৌন্দর্য এই রূপ এই মায়ায় ঢলে পড়ছে? এসবের ভেতরে যে শক্ত বাঁধন আছে, যে বাঁধন কখনও খণ্ডাবে না, না ইহকাল না পরকালে হবে আলাদা, যে বাঁধন কালেমার পবিত্র উচ্চারণে জনম জনমের জন্যে বাঁধা, সে বাঁধন কি রুহুকে তার শরীরের সঙ্গে আরও এঁটে ধরছে? ঘাড়ে থড়বড়ে হাতটা দিয়ে হালেমা তুলতে গেলে, জাফর মিনমিন করে বললেন, “খিদে নেই, খাব না।“
“খিদে নেই বললেই হলো, সেই কোন সাত-সকালে একগাল মুড়ি খেয়েছেন, সারাদিন পেটে কিচ্ছুটি পড়েনি! পেটে দানাপানি না পড়লে কী করে শ্বাস নেবেন?” পাশ থেকে বলল আরিফা। সে একটা ছোট্ট থালাতে দুমুঠো জাউভাত নিয়ে কুঁজো হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

চলবে...

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১৮

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১৭

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১৬

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১৫

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১৪

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব ১৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১১

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৯

 

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৬

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৫

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৪

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১

 

Header Ad
Header Ad

বলিউডে সেনারা হিরো, বাস্তবে কেন জিরো ভারতীয় বাহিনী!

ছবি: সংগৃহীত

বলিউডের অ্যাকশনধর্মী সিনেমায় ভারতীয় সেনারা সবসময়ই বিজয়ী। কখনো পাকিস্তানি ঘাঁটি ধ্বংস, কখনো আফগানিস্তানে অভিযান—সবখানেই তারা অবিশ্বাস্য দক্ষতায় জয়ী। তবে বাস্তবতা যে এতটা সহজ নয়, তা কাশ্মীরে সাম্প্রতিক হামলায় আবারও স্পষ্ট হলো।

এই হামলায় প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ২৬ জন। অথচ হামলা ঠেকাতে বা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি ভারতীয় সেনারা। হামলার জন্য কোনো পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ছাড়াই পাকিস্তানকে দায়ী করে নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করার চেষ্টা করছে তারা। ঘটনাটির রেশে সীমান্তে দুদেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে, ভারী অস্ত্রসহ মোতায়েন করা হয়েছে সেনা, মাঝেমধ্যেই হচ্ছে গোলাগুলি।

নেটিজেনরা বলিউড সিনেমার বাহাদুর সেনাদের সঙ্গে বাস্তবের ব্যর্থ ভারতীয় সেনাদের তুলনা করে রীতিমতো ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করছে। সিনেমার মতো বাস্তবে অজয় দেবগান বা অক্ষয় কুমারের মতো নায়কোচিত সেনা যে নেই, তা এখন স্পষ্ট।

কেবল স্থলবাহিনী নয়, বিমানবাহিনীর ব্যর্থতাও হাস্যরসের জন্ম দিয়েছে। কাশ্মীর হামলার পর পাকিস্তানে হামলা চালাতে গিয়ে ভারতীয় বিমানবাহিনী ভুল করে নিজের দেশের একটি বাড়ির ওপর হামলা চালায়। এই ঘটনার ভিডিও ও প্রতিবেদন সামাজিকমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যেখানে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে ভারতীয় বাহিনী।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, হামলার পূর্বাভাস থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় সেনারা যথাসময়ে পদক্ষেপ নেয়নি। হামলার ২০ মিনিট পর তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছায়, তখন হামলাকারীরা নিরাপদে পালিয়ে যায়।

২০১৯ সালের ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার সময় মিগ-২১ নিয়ে পাকিস্তানে ঢুকে পড়া ভারতীয় পাইলট অভিনন্দন বর্তমানের ঘটনাও আবার আলোচনায় এসেছে। সেবার তার বিমান ভূপাতিত হয় এবং তাকে আটক করে পাকিস্তান পরে ফিরিয়ে দিয়েছিল।

নেটিজেনরা বলছেন, বলিউডের সিনেমার কল্প-কাহিনীর সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। যুদ্ধ লাগলে তা হবে সমান শক্তির লড়াই, সিনেমার মতো একপাক্ষিক নয়। অধিকাংশই আবার যুদ্ধের বিপক্ষে মত দিয়েছেন, মানবিক বিপর্যয়ের ভয় দেখিয়ে শান্তির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

বলিউডের রঙিন পর্দায় ভারতীয় সেনারা 'অপরাজেয়' হলেও বাস্তবে কাশ্মীর হামলার ব্যর্থতা প্রমাণ করেছে, বাস্তব যুদ্ধ সিনেমার গল্পের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন এবং অপ্রত্যাশিত।

Header Ad
Header Ad

কুমিল্লায় বজ্রপাতে স্কুলছাত্রসহ নিহত ৪

ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লায় বজ্রপাতে দুই স্কুলছাত্রসহ ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও একজন। তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে বরুড়া ও মুরাদনগরে পৃথক দুইটি ঘটনায় তাদের মৃত্যু হয়।

জানাযায়, কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার খোশবাস ইউনিয়নের পয়ালগাছা গ্রামে সোমবার দুপুরে বজ্রপাতে দুই স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। মৃত দুইজন বড়হরিপুর উচ্চবিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিল। মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন পয়ালগছা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুজ্জামান বিপ্লব।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে হালকা মেঘের মধ্যে শিশুরা মাঠে ঘুড়ি উড়াতে ব্যস্ত ছিল। হঠাৎ বজ্রপাত হলে দুই ছাত্র মারাত্মকভাবে আহত হয়। স্থানীয়রা দ্রুত তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদের মৃত্যু ঘোষণা করেন। নিহত কিশোর দুজন হলেন পয়ালগাছা গ্রামের মৃত খোকন মিয়ার ছেলে ফাহাদ হোসেন(১৩) এবং আব্দুল বারেক মিয়ার নাতি সায়মন হোসেন (১৩)।

বরুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হাসান বলেন, বরুড়া উপজেলার খোশবাস ইউনিয়নের পয়ালগাছা গ্রামে দু স্কুল ছাত্র নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে একজন। হাসপাতাল থেকে নিহত দুজনের লাশ স্বজনরা বাড়িয়ে নিয়ে যান।

অপরদিকে কুমিল্লার মুরাদনগরে জমির ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

সোমবার সকালে উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানাধীন পূর্বধইর পূর্ব ইউনিয়নের কোরবানপুর পূর্বপাড়া কবরস্থানের পাশের মাঠে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন, পূর্বধইর পূর্ব ইউনিয়নের কোরবানপুর গ্রামের মৃত বীরচরন দেবনাথের ছেলে নিখিল দেবনাথ (৬৪) ও আন্দিকুট ইউনিয়নের দেওড়া গ্রামের জসীম উদ্দীন ভুইয়ার ছেলে জুয়েল ভুঁইয়া (৩০)।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত নিখিল দেবনাথ ও জুয়েল ভূঁইয়া কোরবানপুর পূর্বপাড়া কবরস্থানের পাশের মাঠে পাশাপাশি জমিতে ধান কাটার সময় বজ্রপাতের শিকার হয়। পরে তাদেরকে আশেপাশের লোকজন এসে উদ্ধার করে দেখে তারা ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। বর্তমানে দুজনের মরদেহ নিজ নিজ বাড়িতে আছে।

বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনাস্থল থেকে মুঠোফোনে তারা ঘটনাটি জানতে পারেন। এ ব্যাপারে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।

Header Ad
Header Ad

মে মাসে শেখ হাসিনার বিচার শুরু হচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত

জুলাই-আগস্ট গণঅভুত্থানে গণহত্যার মামলায় আগামী মাসের শুরুতেই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার বিচার শুরু হচ্ছে-আল জাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আলজাজিরার বৈশ্বিক নেতাদের সাক্ষাৎকারমূলক অনুষ্ঠান ‘টক টু আল–জাজিরা’য় এ কথা বলেন তিনি।
আগামী ডিসেম্বর থেকে আগামী বছর জুনের মধ্যেই নির্বাচন হবে বলে ফের জানিয়েছেন তিনি

এ সময় তিনি আরও বলেন, শুধু মানবিক সহায়তা নয়, নিরাপদ প্রত্যাবাসনই রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান।

বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং উদাহরণ সৃষ্টিকারী নির্বাচন উপহার দেয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, নির্বাচনের আগে সংস্কারের তালিকা ছোট হলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন এবং তালিকা বড় হলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনপ্রত্যাশা এখনও তুঙ্গে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান।

আলজাজিরার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে জুলাই বিপ্লব, সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়া, সাবেক সরকারের দুর্নীতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।

আলজাজিরার উপস্থাপক ড. ইউনূসকে প্রশ্ন করেন, এটা কি বলা ঠিক যে, শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের ‘মধুচন্দ্রিমা’ এখন সম্ভবত শেষ হয়েছে? কিছু বেশ বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেগুলোর সুনির্দিষ্ট জবাব আপনাকে দিতে হবে। কারণ, পুরোনো ক্ষমতাধরদের প্রভাব রয়েছে, অনেকে রাজনৈতিক শূন্যতাকে কাজে লাগাতে চাইতে পারে।

জবাবে ড. ইউনূস বলেন, মধুচন্দ্রিমা শেষ হোক বা না হোক, বাংলাদেশের মানুষ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান। তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে সরাসরি চলে যেতে এখনও বলছে না। বরং একটা ভালো নির্বাচন উপহার দিতে সরকারই নির্বাচন আয়োজনের দিকে যাচ্ছে। জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা এখনও বলছে না।

লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সমাধান কি বাংলাদেশ একা করতে পারবে?

জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থা ও জাতিসংঘের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কাজ করছি। তারা যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কিছু বোঝাপড়া যাতে তৈরি হয়।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়া হবে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন,
এ প্রশ্নের জবাবের একটি অংশ আওয়ামী লীগকেই নির্ধারণ করতে হবে। দলটি আগে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে–তারা নির্বাচনে যোগ দেবে কিনা। তারা এখনও কিছু ঘোষণা করেনি। তা ছাড়া নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশন কী প্রতিক্রিয়া দেয়, সেটাসহ নানা বিষয় সামনে আসতে পারে।

তাহলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তা নয়। অন্যান্য রাজনৈতিক দল আছে, যারা বলতে পারে যে, এ আইনের অধীনে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।

সাক্ষাৎকারে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ড. ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের প্রসঙ্গ ওঠে। ড. ইউনূস জানান,
তিনি বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেখানে শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে বলেছিলেন তিনি। জবাবে মোদি বলেছিলেন, এটা তার জন্য সম্ভব নয়। শেখ হাসিনা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে কিছু বললে, সেটি তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।

যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, একসঙ্গে কাজ করার নীতি নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। আমরা একসঙ্গেই পারস্পরিক সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ নিতে চাই।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

বলিউডে সেনারা হিরো, বাস্তবে কেন জিরো ভারতীয় বাহিনী!
কুমিল্লায় বজ্রপাতে স্কুলছাত্রসহ নিহত ৪
মে মাসে শেখ হাসিনার বিচার শুরু হচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টা
ঢাকাসহ সারাদেশে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে
সবাই মিলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাই লক্ষ্য: আলী রীয়াজ
ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ
কাশ্মীর সীমান্তে ভারত-পাকিস্তানের ফের গোলাগুলি
টস হেরে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ, একাদশে ৩ পরিবর্তন
দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা
টটেনহামকে উড়িয়ে প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল
শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে পারবেন না মোদি
রেফারির কাছে ক্ষমা চাইলেন মাদ্রিদের ডিফেন্ডার আন্তনিও রুদিগার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা উপহার দিলেন ছাত্রদল নেতা
দুর্নীতির অভিযোগ তুলে দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি
নওগাঁয় গ্রাহকের আমানতের টাকা ফেরত না দেওয়ায় জাতীয় পার্টি’র নেতাকে গণধোলাই
পাকিস্তানের পাশাপাশি বাংলাদেশকেও পানি না দেওয়ার আহ্বান বিজেপি এমপির
এসআই নিয়োগের ফলাফল প্রকাশ, ৫৯৯ জনকে প্রাথমিক সুপারিশ
হাকিমপুরে গরীবের চাল ছাত্রলীগ নেতার গুদামে
চুরির অভিযোগে কুবির দুই শিক্ষার্থী বহিষ্কার
ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগবাড়িয়ে কিছু করার পক্ষে নয় ঢাকা