শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ৯ ফাল্গুন ১৪৩১
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-১৯

নেই দেশের নাগরিক

“বন্ধ কর তো, তোর ওই বাউল বাউল কথা। এখন ওসব শোনার সময়? জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ, আর এর এখন মনের সংসারে ঘুড়ি ওড়ানোর শখ হয়েছে! পাছায় যখন গুলি খাবি, তখন বুঝবি, ঘুড়ি উড়বে না নিজেই উড়বি!” চোখ থেকে আগুনের শীষ বের হয়ে আসছে মতির। নৌকার পাটাতনের ওপর রাগ আর বিরক্তি মেশা পায়ের ধাপ হড়াম করে ফেলে বলল, “বকবকানি অনেক হয়েছে। এবার ওপরে উঠে আয়। চাল ফুটোনোর ব্যবস্থা করতে হবে। পেটে কিছু না পড়লে বাউল মউল সব ফুড়ুৎ হয়ে যাবে। তখন মনের আকাশে ঘুড়ি উড়বে না, খিদে উড়বে, খিদে।“ পা দিয়ে আবার হড়াম করে একটা শব্দ করল মতি।
নুহু আঁচ করল, বড়ভাই রেগে বোম হয়ে গেছে। আর বেশি কিছু না ঘাটানোই ভালো। নৌকোর কানা ধরে নিচ থেকে উপরে সোজা একবার শক্তিভরে ঠেলা দিয়ে ভুষ করে নৌকোর পাটাতনে গড়িয়ে পড়ল। গায়ের লবণজল ঝরে পড়ল বাঁশের বাতার পাটাতনে। গামছাটা কোমর থেকে খুলে, দু-তিনবার ঝাড়া দিয়ে দড়ির মতো পাক মেরে আচ্ছা করে চিপল। গলগল করে চুঁইয়ে পড়ল জল। তারপর ভাঁজ খুলে আবারও ‘ঝ্যাৎ’ করে একবার ঝাড়া দিল। আলগা পাতলা করে গা মুছলে, আরিফা বলল, “অ কী করে গা মুছছো দেওরজি, সব পানি তো গায়েই থেকে যাচ্ছে!“
“কই, না তো” বলে চিপে চিপে গা মুছল নুহু। কণা কণা লবণে ভেজা লাল রঙের গামছাটা ছোপ ছোপ সাদাটে হয়ে গেল। গা মুছে নৌকোর খোলের মাথায় গিয়ে বসল। পাটাতনে লেটা মেরে বসে দু-পা নৌকোর দিকে ছড়িয়ে দিল। আগন্তুক নৌকোর আবুলকে উদ্দেশ করে বলল, “একটা বিড়ি দেন, ভেতরে একটু হাওয়া দিই।“ গোসল করে বোঝাই যাচ্ছে, তার মনটা কিছুটা ফুরফুরে হয়েছে। আবুল মনে মনে বিরক্ত হলো, আমি কি বিড়ির ফ্যাক্টরি খুলেছি, যে চাইলেই পাওয়া যাবে? একটা প্যাকেট কোনোরকমে লুঙ্গির গিঁটে গোঁজা ছিল, ওগুলোই এতক্ষণ চলল। আর গোটা তিনেক পড়ে আছে। আমি কি খাব না? না, সব লোককে খাইয়ে দিয়ে আমি শালা হাওয়া খেয়ে বেড়াব! লুকোছুপা ভাব করে আবুল বলল, “আর নেই গ। ফুরিয়ে গেল।“
“কেন দেখলাম যে, এখনও আধবান্ডিল ছিল।“ গোয়েন্দার মতো বলল নুহু। আহা রে, এটা কি ওর বাপের বিড়ি না ওর বাপের পয়সায় কেনা, যে দেখলেই খেতে দিতে হবে? মনকে দাঁত দিয়ে চিবল আবুল। অন্য পানে মুখ ঘুরিয়ে এলেবেলে বলল, “একটা দুটো আছে, ভেঙে গেছে, অ টানা যাবে না।“
অইই দেন, একবার দুবার টানা হলেই হবে, বলত নুহু, কিন্তু আবুলের মনোভাব বুঝে সে কথায় শিকল পরাল। মনে মনে বলল, হায়রে মানুষ, একটা বিড়িও দিতে চায়ছে না। বিড়ি কি আর দেশ ফিরিয়ে দিতে পারবে? না, নতুন কোনো দেশ দিতে পারবে? বিড়ি বড়জোর জানে দুদণ্ড শান্তি দিতে পারে, তা ছাড়া আর কি? নুহু আলগোছে বলল, “ওহঃ তাহলে তো আর কিছু করার নেই। ভাঙা বিড়ি ফুঁকলে ভাগ্যও ভাঙা হয়।“ তারপর মনে মনে বলল, সবই তো চলে গেছে, এবার না হয় বিড়িটাই গেল! এবার শরীরের খোল থেকে রুহুটা গেলেই বাঁচি!
নৌকোর খোলের ওপরে জ্বলে উঠল উনুন। তিন কেজির ছোট্ট গ্যাস সিলিন্ডারটার মুখ দিয়ে দপদপ করে জ্বলছে আগুনের শীষ। লেলিহান শিখা হলকাচ্ছে। যেন নৌকো জ্বলছে। নদী জ্বলছে। মাঝদুপুরের তপ্ত নদীর পেট খিদেয় জ্বলছে। ক্ষুধার্ত নদীর পেট থেকে বেরিয়ে আসছে ক্ষুধার আগুন। যন্ত্রণার জিভ লকলকাচ্ছে। দূর থেকে মনে হচ্ছে, খরতপ্ত নদী গরমে তেতে আগুন ফোটা ফুটছে। ভাত ফুটছে। ছোট্ট হাঁড়িটার মুখের ঢাকনাটা হলবল করে দুলছে। ভেতরের ভাপ ঠেলা দিচ্ছে। ভাতফোটা বাষ্প উতলে কানা দিয়ে চুঁইয়ে পড়ছে। আরিফা হাঁ করে এসব দেখছে। তার খেয়ালি মন এই হাঁড়ি, ঢাকনা, বাষ্প, ভাপে ফুঁড়ে ঢুকে গেছে। দপদপ করে জ্বলছে খিদের আগুন। আরিফা ভাবছে, কখন যে দপ করে নিভে যাবে এ আগুন, তার কোনো ভরসা নেই। আগুন কি আর শুধু আখাতেই জ্বলছে? আগুন পেটেও জ্বলছে। ভাত ফোটা বাষ্প যেভাবে উগলে উঠছে, কষ্টের দলাও আরিফার পেট থেকে উগলে উঠছে। তার ভাপ চুঁইয়ে পড়ছে চোখের অশ্রু হয়ে। আঁচল দিয়ে চোখ মুছল আরিফা। হাঁড়ির কানাটা ন্যাকড়া দিয়ে কাত করে ভাত পাসাতে লাগল। নৌকোর একধারের পাটাতনে রান্নার সিলিন্ডারটা একটা কাঠের তক্তার ওপর বসানো আছে। যেদিক থেকে ঝিরঝির করে বাতাস আসছে, সেদিকটা আড়াল করে পলিথিনের একটা চাদর ঝুলিয়ে দিয়েছে মতি। হাওয়া লেগে পলিথিনটা ল্যালপ্যাল করে নড়ছে। যেন ফেসে যাওয়া ঢোল। আধো জল মেশা সেদ্ধ ভাতের জাউভাত “একটু নুন হলে ভালো হতো।“ খেতে খেতে বলল মতি। “নুনের কৌটোটা তো আনা হয়নি গ।” বলল আরিফা।
“নদীর পানি মিশিয়ে নাও, ঠিক নুনঠা হয়ে যাবে।“ ঠেস মারল নুহু। সে মনে মনে বলল, কপাল জোরে এইই পেটে জুটছে সেটাই ভাগ্য, তারপর আবার নুন দাও, লংকা দাও, পেঁয়াজ দাও, ভড়ঙের শেষ নেই! আর কটা দিন যাক, চালকটা ফুরোলেই, এটুকুও কপালে জুটবে না। তখন শুধু নদীর নুন খেয়েই থাকতে হবে। না হলে পেটে খিল দিয়ে এই নৌকোর খোলেই চিৎ হয়ে পড়ে থাকতে হবে। মতি কিচ্ছু বলল না। একবার চোখ বাঁকা করে কটমট করে নুহুর দিকে তাকাল। ভাতের থালাটা হাতের চেটোয় নিয়ে দ হয়ে বসে খাচ্ছে। হাওয়ার ঝাপটায় হালেমার ঘোমটাটা খুলে গেল। ফোকলা দাঁতে চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছেন জাউভাত। তার দাঁতহীন মাড়িদুটো জাঁতার মতো পিষছে। সেখান থেকে পাক খেয়ে এল খোনা কথা, নুহুকে ধমকালেন, “তোর কথার আবার এ কেমন ছিরি! বড়ভাইয়ের সঙ্গে এমন ঠেস দিয়ে কথা বলতে হয়?”
“তো কী বলবে? যেখানে জান বাঁচানোই দায় হয়ে পড়েছে, সেখানে আবার নুন-লঙ্কা কেন?” লংকার মতো ঝেঝিয়ে উঠল নুহু।
“কথাটা না হয় মুখ ফুটে বেরিয়েই পড়েছে, তা বলে অত টিটকেনি কেন?” মতিও তড়পাল।
“তোমরা থামবে?” বিরক্ত হলো আরিফা। সে কোলে সাকিবকে বসিয়ে নিয়ে নাড়ু নাড়ু করে জাউভাত খাওয়াচ্ছে।
“ঠিক আছে ঠিক আছে, চুপ কর। খাওয়ার সময় কথা বলতে হয় না। শয়তানে খেয়ে নেয়।“ ঘোমটাটা কপালে টানলেন হালেমা। এঁটো ভাত তার কলসায় চেপ্টে আছে। একবার জিভ দিয়ে চেটে নিলেন। হালেমা জানেন, একসঙ্গে থাকলে এট্টুআট্টু ঠুক্মুক হয়। ওসবে অত গা করলে হবে না। জিনিস যতই মধুর হোক, একসঙ্গে টানা থাকলে তেতো হতে বাধ্য। দুই ভাই এমনিতেই দুই পাণ্ডব। কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে থাকে। রণে-বনে-জঙ্গলে একসাথে। কী মাঠে কী ঘাটে, একজন আরেকজনের তোখিদ নেবেই নেবে। এক-আধ দিন নদী থেকে মাছ ধরে মতির বাড়ি ফিরতে দেরি হলে, নুহুর আর মাটিতে পাছা ঠেকে না। একবার উঠোন, একবার ঘর, একবার দাওয়ায় পায়চারি করে। আরও কিছুটা দেরি হলেই, টর্চলাইটটা হাতে নিয়ে নদীর পানে হনহন করে বেরিয়ে যায়। মতিও যোগ্য যুধিষ্ঠির। সহদরভাইয়ের জন্যে সবসময় মন পড়ে থাকে তার। উপরে উপরে নুহুকে বকাবকি করলেও, মনে কিন্তু উপচে থাকে ভালোবাসা। দরদ। একটু বকেই, পরে নিজেই কষ্ট পায়।
“আপনাদের খাওয়া দাওয়া হলো?” হাঁক পাড়লেন ইয়াসিন মাস্টার।
“হ্যাঁ, হলো, আপনাদের?” পাল্টা খোঁজ নিল মতি।
“হ্যাঁ, আমাদেরও হয়ে গেছে।“ একটা তৃপ্তির ঢেকুর তুললেন ইয়াসিন মাস্টার। তারপর যোহরের নামাজে দাঁড়ালেন। ওজু করে মতিও নামাজ আদায় করতে লাগল। হালেমা ছইয়ের ভেতরে হাঁটু মুড়ে নামাজের নিয়ত ধরলেন। যোহর পেরিয়ে আসরও পেরিয়ে গেল। পশ্চিমের আকাশ সূর্যকে গেলার জন্যে তোড়জোড় করছে। দিগন্ত রাঙিয়ে উঠছে লালাভ আভায়। তুলির আছড়ে রঙের কোলাজ আঁকছেন সন্ধ্যার পিকাসো। যিনি এতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলেন দিগন্তের ক্যানভাসে। ঝাঁক ঝাঁক পাখি দিগন্তের রঙ মেখে, পায়ে ডানায় রঙ নিয়ে ফিরছে বাসায়। তাদের পায়ের নখে করেও চলে যাচ্ছে বিন্দু বিন্দু রাত। আকাশ ফুঁড়ে খাড়া উঠে গেছে রেখার মতো গুচ্চের ফ্যাকাশে দাগ। যেন আকাশের মুখ ভার। তার সেই কষ্ট-রেখা ছড়িয়ে পড়ছে আসমান থেকে আসমানে। যেন আকাশ কোনোমতেই চায়ছে না, সূর্যকে ঘুম দিয়ে দিতে, সূর্যকে তুলে দিতে রাতের হাতে। তাই তার যন্ত্রণার রঙ দিগন্ত ফুঁড়ে আঁচড় কাটছে। পশ্চিম আকাশ থেকে তুষারের কণার মতো নেমে আসছে গুঁড়িগুঁড়ি অন্ধকার। নদীর জলে মিশে হয়ে উঠছে দলা। একটু একটু করে গিলে নিচ্ছে নৌকোর ছই, পাটাতন, খোল। ঘাটবাড়ি কৌশা নৌকোটা হয়ে উঠছে রাতবাড়ি। লাল টিপের মতো সূর্যটা খাপি খেতে খেতে দিগন্তের কোলে ঘুমিয়ে পড়তেই হুড়মুড় করে হেঁটে আসতে লাগল অন্ধকার। তার পায়ের দাপাদাপি টের পেল নদী। নীল নদী লালাভ থেকে আচানক কাজলকালো হয়ে গেল। নয়াপাড়া থেকে ভেসে আসা মাগরিবের আজান শেষ হতেই, ছইয়ের মটকা ধরে নেমে এল রাত। নদীতে বিছিয়ে দিল রাতের বিছানা। ঘুম সর্বপ্রথম কাঠি ছোঁয়াল সাকিবের চোখে। আরিফা মুখে ছড়া কেটে, আঁচলের হাওয়া দিয়ে তার চোখে লাগিয়ে দিল ঘুম। হালেমা নামাজ আদায় করে জাফর আলির পাশে কাত হয়ে বসলেন। মানুষটা সারাদিন কিচ্ছুটি মুখে তোলেননি! শুধু পড়ে পড়ে ঘুমিয়েছেন। দু-একবার চ্যাংদোলা করে ধরে প্রস্রাব করিয়েছে দু বেটা। তাও চোখ বুঝে ছিলেন। চোখের পাতা তুলতেই পারেননি।
“এক গাল জাউভাত খেয়ে নাও।“ কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ডাকলেন হালেমা। জাফর কোনো সাড়া দিলেন না। হালেমা গলার স্বর একটু চড়ালেন, “ওগো, শুনতে পাচ্ছ?” কথাটা জোরে কানের কাছে বাজতেই, জাফর ঠোঁট নড়ালেন, “হু”। মুদে থাকা চোখের পাতাগুলোও মিহি করে নড়ল। হালেমা কথায় জোর রেখেই বললেন, “এক গাল খেয়ে নাও, আরিফা জাউভাত করেছে। গায়ে বল পাবে।“
“না, খা ব না।“ জড়ানো স্বর আরও জড়িয়ে বেরোল। মিহি করে খুলে গেছে চোখের পাতা। ঝাপসা দৃষ্টিতে দেখছেন, হালেমা মুখের কাছে বসে আছেন। কুপির হলুদ আলোতে কাঁচা সোনার মতো লাগছে হালেমার জড়ানো মুখ। হীরের মতো জ্বলছে ঘোলাটে চোখ। সন্ধ্যার দক্ষিণি হাওয়ায় পাকাঝুন ভ্রূগুলো হাঁসের সাদা পালকের মতো ফিনফিন করে নড়ছে। থুত্থুরে মুখটা বড় মায়াবি লাগছে আজ। চোখ পিটপিট করা জাফর কি এই সৌন্দর্য এই রূপ এই মায়ায় ঢলে পড়ছে? এসবের ভেতরে যে শক্ত বাঁধন আছে, যে বাঁধন কখনও খণ্ডাবে না, না ইহকাল না পরকালে হবে আলাদা, যে বাঁধন কালেমার পবিত্র উচ্চারণে জনম জনমের জন্যে বাঁধা, সে বাঁধন কি রুহুকে তার শরীরের সঙ্গে আরও এঁটে ধরছে? ঘাড়ে থড়বড়ে হাতটা দিয়ে হালেমা তুলতে গেলে, জাফর মিনমিন করে বললেন, “খিদে নেই, খাব না।“
“খিদে নেই বললেই হলো, সেই কোন সাত-সকালে একগাল মুড়ি খেয়েছেন, সারাদিন পেটে কিচ্ছুটি পড়েনি! পেটে দানাপানি না পড়লে কী করে শ্বাস নেবেন?” পাশ থেকে বলল আরিফা। সে একটা ছোট্ট থালাতে দুমুঠো জাউভাত নিয়ে কুঁজো হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

চলবে...

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১৮

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১৭

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১৬

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১৫

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১৪

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব ১৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১১

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৯

 

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৬

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৫

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৪

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১

 

Header Ad
Header Ad

খিলগাঁওয়ের আগুনে পুড়ে ছাই ২০টি দোকান ও দুটি স’মিল

ছবিঃ সংগৃহীত

রাজধানীর খিলগাঁওয়ের তালতলা মার্কেটের পাশের একটি স’মিলে শুক্রবার রাত ৭টা ৩০ মিনিটে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট ৯টা ৩৫ মিনিটে এই আগুন নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়। আগুনে প্রায় ২০টি দোকান ও দুটি স’মিল পুড়ে গেছে।

আগুন নিয়ন্ত্রণের পর ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশনস) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, কেমিক্যাল ড্রাম বিস্ফোরণে স’মিলে লাগা আগুন চারদিক ছড়িয়ে পড়ে।

তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘খিলগাঁওয়ের আগুনে আনুমানিক ২০টি দোকান এবং দুটি স মিল পুড়েছে। আগুনে হয়তো কেমিক্যাল ড্রাম বিস্ফোরিত হয়েছে; যার ফলে আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের নয়টি ইউনিট কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থলে আরো চারটি ইউনিট ছিল, তবে সেগুলোকে কাজ করতে হয়নি।

লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আগুনে কেউ নিখোঁজ রয়েছে এমন কোনো সংবাদ আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত আসেনি। এ ছাড়া আমরা এখন পর্যন্ত আহত ও নিহতের কোনো সংবাদ পাইনি।’

আগুনের উৎসটি কি ছিল প্রাথমিকভাবে জানা গেছে কিনা প্রশ্ন করা হলে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এই মুহূর্তে এ বিষয়ে বলা যাবে না তদন্ত ছাড়া। সিগারেটের মাধ্যমে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে নাকি স্যাবোটেজ হয়েছে— এই প্রত্যেকটা বিষয়ে আমাদের তদন্ত করে দেখতে হবে।

অনেকগুলো সোর্স থেকে আগুনের সৃষ্টি হতে পারে। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকেও আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। তাই তদন্ত ছাড়া এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না।’
এদিকে, দুই ঘণ্টা ধরে ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার রাশেদ বিন খালিদ জানান, ‘শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সেখানে আগুন লাগার খবর পাই।

প্রথমে আমাদের দুটি ইউনিট কাজ শুরু করে। পরে আরো সাতটি ইউনিট যোগ দেয়। এরপর রাত ৯টা ৩৫ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন লাগার পরে ফায়ার সার্ভিসকে সহযোগিতা করতে ছুটে আসেন সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র‍্যাবের সদস্যরা।’

তবে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স মিল থেকে আগুন গাড়ির গ্যারেজে ছড়িয়ে পড়ে। পরে গ্যারেজে থাকা বিভিন্ন গাড়িতে আগুন লেগে সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। এ সময় আশপাশের মানুষ ছোটাছুটি করতে থাকে। উৎসুক জনতার ভিড়ে ফায়ার সার্ভিসকে আগুন নিয়ন্ত্রণে বেশ বেগ পেতে হয়।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা জানান, ওই এলাকায় একটি গাড়ির গ্যারেজ ও রাবারের কাঁচামালের গোডাউন রয়েছে। কিছু গাড়ি বের করা সম্ভব হলেও অনেক গাড়ি পুড়ে গেছে।

খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. দাউদ হোসেন বলেন, ‘ওই স মিল খিলগাঁও থানার কাছেই। পাশের একটি গাড়ির গ্যারেজেও আগুন ছড়িয়েছে। ক্রাউডের কারণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের কাজ করতে সমস্যা হচ্ছিল।

 

Header Ad
Header Ad

পদ্মাপাড়ে মুখে স্কচটেপ প্যাঁচানো ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার  

ব্যবসায়ী আবুল বাসার ওরফে মিন্টু। ছবিঃ সংগৃহীত

রাজশাহী নগরীর পদ্মাপাড়ে মুখে স্কচটেপ প্যাঁচানো একটি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার বিকালে নগরীর লালন শাহ মুক্তমঞ্চ সংলগ্ন এলাকার কাশবন থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। পুলিশের ধারণা, হত্যা করে কাশবনে ফেলে দেওয়া হয়েছে লাশটি।

নিহত ব্যক্তির নাম আবুল বাসার ওরফে মিন্টু (৩৫)। পেশায় ব্যবসায়ী মিন্টু নগরীর মির্জাপুর পূর্বপাড়া মহল্লার বাসিন্দা। বিনোদপুর বাজারে তার ইলেকট্রিক ব্যবসার দোকান আছে।

নগরীর রাজপাড়া থানার ওসি আশরাফুল ইসলাম জানান, কাশবনে ঘুরতে আসা কয়েকজন লাশটি দেখে পুলিশে খবর দেয়। ঘুরতে আসা অনেকে লাশের ছবিটি সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে শেয়ার করে। জানাজানির পর নিহতের পরিবার ঘটনাস্থলে এসে লাশটি শনাক্ত করে।

আশরাফুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে মিন্টুর খোঁজ পাচ্ছিল না পরিবার। কাশবনে তার মুখ পলিথিন দিয়ে ঢাকা ছিল। পলিথিনের ওপর স্কচটেপ প্যাঁচানো ছিল।

ওসি আরও বলেন, ‘আলামত দেখে মনে হয়েছে এটি হত্যাকাণ্ড। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে হত্যা মামলা হবে।’

Header Ad
Header Ad

সার্ক পুনরুজ্জীবনের প্রশ্নে বাংলাদেশকে যে বার্তা দিলো ভারত

ওমানের মাসকটে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বৈঠক। ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি ওমানের রাজধানী মাস্কাটে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার ( ২১ ফেব্রুয়ারি) নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ভারত- বাংলাদেশের মধ্যকার উক্ত বৈঠকের আলোচ্য বিষয়ে কিছু তথ্য তুলে ধরেছেন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল।

তিনি বলেন, মাস্কাটে ওই বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সার্ক পুনরুজ্জীবনের প্রসঙ্গটি তুলেছিলেন। দক্ষিণ এশিয়ার সবাই জানে কোন দেশ ও তার কী ধরনের কর্মকাণ্ড সার্ককে কোণঠাসা করে রেখেছে। তৌহিদ হোসেনকে জয়শঙ্কর এ কথাও বলেছেন, সন্ত্রাসবাদের স্বাভাবিকীকরণ করাটা বাংলাদেশের উচিত নয়।

ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের কোনো কোনো উপদেষ্টার কিছু কিছু মন্তব্য নিয়েও প্রশ্ন করা হয়। জবাবে রণধীর জয়সোয়াল বলেন, ভারত এসব মন্তব্য নজরে রেখেছে। ওই ধরনের মন্তব্য ও বাংলাদেশের সঙ্গে কাজকর্মে তার প্রভাব–প্রতিক্রিয়ার বিষয়ও ভারতের গোচরে রয়েছে।

তিনি বলেন, এ ধরনের মন্তব্য অবশ্যই সহায়ক নয়। এর প্রতিক্রিয়া কী, তা তাদেরই ভেবে দেখা দরকার।

নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও বিএসএফের মহাপরিচালকদের বৈঠক সদ্য শেষ হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, বাংলাদেশে ৫ আগস্টের পালাবদলের পর সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগগুলো অতিরঞ্জিত, মিডিয়ার সৃষ্টি।

এ প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে জয়সোয়াল বলেন, গত কয়েক মাসে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর কী হয়েছে, সে বিষয়ে সবাই অবগত। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে ভারতের উদ্বেগ বারবার প্রকাশ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সম্প্রতি ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওই প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। যুক্তরাষ্ট্রকেও এ বিষয়ে ভারতের উদ্বেগের কথা জানানো হয়েছে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

খিলগাঁওয়ের আগুনে পুড়ে ছাই ২০টি দোকান ও দুটি স’মিল
পদ্মাপাড়ে মুখে স্কচটেপ প্যাঁচানো ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার  
সার্ক পুনরুজ্জীবনের প্রশ্নে বাংলাদেশকে যে বার্তা দিলো ভারত
জামায়াতের আমিরকে যানজট মুক্ত করতে গিয়ে প্রাণ দিলেন কর্মী
সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা  
একুশে টিভির জিডি, কর্মচারির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে জামায়াত  
আফ্রিকার রানের চাপে বড় ব্যবধানে হারলো আফগানিস্তান
আগামীকাল দুই বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে
অপারেশন ডেভিল হান্ট: ২৪ ঘণ্টায় গ্রেপ্তার ৪৬১
খিলগাঁওয়ে স-মিলে ভয়াবহ আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১০ ইউনিট
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
পশ্চিম তীরে নতুন করে হামলার নির্দেশ দিলেন নেতানিয়াহু
মেসির অটোগ্রাফ চেয়ে শাস্তি পেলেন রেফারি
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বেনাপোলে হয়নি দুই বাংলার মিলন মেলা
মাতৃভাষার গুরুত্ব ও ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে যা বললেন ড. ইউনূস
চলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানি: তিন দিন পর মামলা, আতঙ্কে যাত্রীরা
বিপ্লবের আত্মত্যাগ উন্নত বাংলাদেশের পথে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে : পররাষ্ট্রসচিব
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে ২০২৪ সালে আওয়ামী সরকারের পতনের কারণ উদঘাটন
চ্যাম্পিয়নশিপের দল শেফিল্ডে মাসে ৪০ কোটি টাকা বেতন পাবেন হামজা চৌধুরী
পবিপ্রবিতে আবাসিক হলগুলোর নাম পরিবর্তন, মুছে ফেলা হলো শেখ পরিবারের নাম