বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-১৯

নেই দেশের নাগরিক

“বন্ধ কর তো, তোর ওই বাউল বাউল কথা। এখন ওসব শোনার সময়? জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ, আর এর এখন মনের সংসারে ঘুড়ি ওড়ানোর শখ হয়েছে! পাছায় যখন গুলি খাবি, তখন বুঝবি, ঘুড়ি উড়বে না নিজেই উড়বি!” চোখ থেকে আগুনের শীষ বের হয়ে আসছে মতির। নৌকার পাটাতনের ওপর রাগ আর বিরক্তি মেশা পায়ের ধাপ হড়াম করে ফেলে বলল, “বকবকানি অনেক হয়েছে। এবার ওপরে উঠে আয়। চাল ফুটোনোর ব্যবস্থা করতে হবে। পেটে কিছু না পড়লে বাউল মউল সব ফুড়ুৎ হয়ে যাবে। তখন মনের আকাশে ঘুড়ি উড়বে না, খিদে উড়বে, খিদে।“ পা দিয়ে আবার হড়াম করে একটা শব্দ করল মতি।
নুহু আঁচ করল, বড়ভাই রেগে বোম হয়ে গেছে। আর বেশি কিছু না ঘাটানোই ভালো। নৌকোর কানা ধরে নিচ থেকে উপরে সোজা একবার শক্তিভরে ঠেলা দিয়ে ভুষ করে নৌকোর পাটাতনে গড়িয়ে পড়ল। গায়ের লবণজল ঝরে পড়ল বাঁশের বাতার পাটাতনে। গামছাটা কোমর থেকে খুলে, দু-তিনবার ঝাড়া দিয়ে দড়ির মতো পাক মেরে আচ্ছা করে চিপল। গলগল করে চুঁইয়ে পড়ল জল। তারপর ভাঁজ খুলে আবারও ‘ঝ্যাৎ’ করে একবার ঝাড়া দিল। আলগা পাতলা করে গা মুছলে, আরিফা বলল, “অ কী করে গা মুছছো দেওরজি, সব পানি তো গায়েই থেকে যাচ্ছে!“
“কই, না তো” বলে চিপে চিপে গা মুছল নুহু। কণা কণা লবণে ভেজা লাল রঙের গামছাটা ছোপ ছোপ সাদাটে হয়ে গেল। গা মুছে নৌকোর খোলের মাথায় গিয়ে বসল। পাটাতনে লেটা মেরে বসে দু-পা নৌকোর দিকে ছড়িয়ে দিল। আগন্তুক নৌকোর আবুলকে উদ্দেশ করে বলল, “একটা বিড়ি দেন, ভেতরে একটু হাওয়া দিই।“ গোসল করে বোঝাই যাচ্ছে, তার মনটা কিছুটা ফুরফুরে হয়েছে। আবুল মনে মনে বিরক্ত হলো, আমি কি বিড়ির ফ্যাক্টরি খুলেছি, যে চাইলেই পাওয়া যাবে? একটা প্যাকেট কোনোরকমে লুঙ্গির গিঁটে গোঁজা ছিল, ওগুলোই এতক্ষণ চলল। আর গোটা তিনেক পড়ে আছে। আমি কি খাব না? না, সব লোককে খাইয়ে দিয়ে আমি শালা হাওয়া খেয়ে বেড়াব! লুকোছুপা ভাব করে আবুল বলল, “আর নেই গ। ফুরিয়ে গেল।“
“কেন দেখলাম যে, এখনও আধবান্ডিল ছিল।“ গোয়েন্দার মতো বলল নুহু। আহা রে, এটা কি ওর বাপের বিড়ি না ওর বাপের পয়সায় কেনা, যে দেখলেই খেতে দিতে হবে? মনকে দাঁত দিয়ে চিবল আবুল। অন্য পানে মুখ ঘুরিয়ে এলেবেলে বলল, “একটা দুটো আছে, ভেঙে গেছে, অ টানা যাবে না।“
অইই দেন, একবার দুবার টানা হলেই হবে, বলত নুহু, কিন্তু আবুলের মনোভাব বুঝে সে কথায় শিকল পরাল। মনে মনে বলল, হায়রে মানুষ, একটা বিড়িও দিতে চায়ছে না। বিড়ি কি আর দেশ ফিরিয়ে দিতে পারবে? না, নতুন কোনো দেশ দিতে পারবে? বিড়ি বড়জোর জানে দুদণ্ড শান্তি দিতে পারে, তা ছাড়া আর কি? নুহু আলগোছে বলল, “ওহঃ তাহলে তো আর কিছু করার নেই। ভাঙা বিড়ি ফুঁকলে ভাগ্যও ভাঙা হয়।“ তারপর মনে মনে বলল, সবই তো চলে গেছে, এবার না হয় বিড়িটাই গেল! এবার শরীরের খোল থেকে রুহুটা গেলেই বাঁচি!
নৌকোর খোলের ওপরে জ্বলে উঠল উনুন। তিন কেজির ছোট্ট গ্যাস সিলিন্ডারটার মুখ দিয়ে দপদপ করে জ্বলছে আগুনের শীষ। লেলিহান শিখা হলকাচ্ছে। যেন নৌকো জ্বলছে। নদী জ্বলছে। মাঝদুপুরের তপ্ত নদীর পেট খিদেয় জ্বলছে। ক্ষুধার্ত নদীর পেট থেকে বেরিয়ে আসছে ক্ষুধার আগুন। যন্ত্রণার জিভ লকলকাচ্ছে। দূর থেকে মনে হচ্ছে, খরতপ্ত নদী গরমে তেতে আগুন ফোটা ফুটছে। ভাত ফুটছে। ছোট্ট হাঁড়িটার মুখের ঢাকনাটা হলবল করে দুলছে। ভেতরের ভাপ ঠেলা দিচ্ছে। ভাতফোটা বাষ্প উতলে কানা দিয়ে চুঁইয়ে পড়ছে। আরিফা হাঁ করে এসব দেখছে। তার খেয়ালি মন এই হাঁড়ি, ঢাকনা, বাষ্প, ভাপে ফুঁড়ে ঢুকে গেছে। দপদপ করে জ্বলছে খিদের আগুন। আরিফা ভাবছে, কখন যে দপ করে নিভে যাবে এ আগুন, তার কোনো ভরসা নেই। আগুন কি আর শুধু আখাতেই জ্বলছে? আগুন পেটেও জ্বলছে। ভাত ফোটা বাষ্প যেভাবে উগলে উঠছে, কষ্টের দলাও আরিফার পেট থেকে উগলে উঠছে। তার ভাপ চুঁইয়ে পড়ছে চোখের অশ্রু হয়ে। আঁচল দিয়ে চোখ মুছল আরিফা। হাঁড়ির কানাটা ন্যাকড়া দিয়ে কাত করে ভাত পাসাতে লাগল। নৌকোর একধারের পাটাতনে রান্নার সিলিন্ডারটা একটা কাঠের তক্তার ওপর বসানো আছে। যেদিক থেকে ঝিরঝির করে বাতাস আসছে, সেদিকটা আড়াল করে পলিথিনের একটা চাদর ঝুলিয়ে দিয়েছে মতি। হাওয়া লেগে পলিথিনটা ল্যালপ্যাল করে নড়ছে। যেন ফেসে যাওয়া ঢোল। আধো জল মেশা সেদ্ধ ভাতের জাউভাত “একটু নুন হলে ভালো হতো।“ খেতে খেতে বলল মতি। “নুনের কৌটোটা তো আনা হয়নি গ।” বলল আরিফা।
“নদীর পানি মিশিয়ে নাও, ঠিক নুনঠা হয়ে যাবে।“ ঠেস মারল নুহু। সে মনে মনে বলল, কপাল জোরে এইই পেটে জুটছে সেটাই ভাগ্য, তারপর আবার নুন দাও, লংকা দাও, পেঁয়াজ দাও, ভড়ঙের শেষ নেই! আর কটা দিন যাক, চালকটা ফুরোলেই, এটুকুও কপালে জুটবে না। তখন শুধু নদীর নুন খেয়েই থাকতে হবে। না হলে পেটে খিল দিয়ে এই নৌকোর খোলেই চিৎ হয়ে পড়ে থাকতে হবে। মতি কিচ্ছু বলল না। একবার চোখ বাঁকা করে কটমট করে নুহুর দিকে তাকাল। ভাতের থালাটা হাতের চেটোয় নিয়ে দ হয়ে বসে খাচ্ছে। হাওয়ার ঝাপটায় হালেমার ঘোমটাটা খুলে গেল। ফোকলা দাঁতে চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছেন জাউভাত। তার দাঁতহীন মাড়িদুটো জাঁতার মতো পিষছে। সেখান থেকে পাক খেয়ে এল খোনা কথা, নুহুকে ধমকালেন, “তোর কথার আবার এ কেমন ছিরি! বড়ভাইয়ের সঙ্গে এমন ঠেস দিয়ে কথা বলতে হয়?”
“তো কী বলবে? যেখানে জান বাঁচানোই দায় হয়ে পড়েছে, সেখানে আবার নুন-লঙ্কা কেন?” লংকার মতো ঝেঝিয়ে উঠল নুহু।
“কথাটা না হয় মুখ ফুটে বেরিয়েই পড়েছে, তা বলে অত টিটকেনি কেন?” মতিও তড়পাল।
“তোমরা থামবে?” বিরক্ত হলো আরিফা। সে কোলে সাকিবকে বসিয়ে নিয়ে নাড়ু নাড়ু করে জাউভাত খাওয়াচ্ছে।
“ঠিক আছে ঠিক আছে, চুপ কর। খাওয়ার সময় কথা বলতে হয় না। শয়তানে খেয়ে নেয়।“ ঘোমটাটা কপালে টানলেন হালেমা। এঁটো ভাত তার কলসায় চেপ্টে আছে। একবার জিভ দিয়ে চেটে নিলেন। হালেমা জানেন, একসঙ্গে থাকলে এট্টুআট্টু ঠুক্মুক হয়। ওসবে অত গা করলে হবে না। জিনিস যতই মধুর হোক, একসঙ্গে টানা থাকলে তেতো হতে বাধ্য। দুই ভাই এমনিতেই দুই পাণ্ডব। কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে থাকে। রণে-বনে-জঙ্গলে একসাথে। কী মাঠে কী ঘাটে, একজন আরেকজনের তোখিদ নেবেই নেবে। এক-আধ দিন নদী থেকে মাছ ধরে মতির বাড়ি ফিরতে দেরি হলে, নুহুর আর মাটিতে পাছা ঠেকে না। একবার উঠোন, একবার ঘর, একবার দাওয়ায় পায়চারি করে। আরও কিছুটা দেরি হলেই, টর্চলাইটটা হাতে নিয়ে নদীর পানে হনহন করে বেরিয়ে যায়। মতিও যোগ্য যুধিষ্ঠির। সহদরভাইয়ের জন্যে সবসময় মন পড়ে থাকে তার। উপরে উপরে নুহুকে বকাবকি করলেও, মনে কিন্তু উপচে থাকে ভালোবাসা। দরদ। একটু বকেই, পরে নিজেই কষ্ট পায়।
“আপনাদের খাওয়া দাওয়া হলো?” হাঁক পাড়লেন ইয়াসিন মাস্টার।
“হ্যাঁ, হলো, আপনাদের?” পাল্টা খোঁজ নিল মতি।
“হ্যাঁ, আমাদেরও হয়ে গেছে।“ একটা তৃপ্তির ঢেকুর তুললেন ইয়াসিন মাস্টার। তারপর যোহরের নামাজে দাঁড়ালেন। ওজু করে মতিও নামাজ আদায় করতে লাগল। হালেমা ছইয়ের ভেতরে হাঁটু মুড়ে নামাজের নিয়ত ধরলেন। যোহর পেরিয়ে আসরও পেরিয়ে গেল। পশ্চিমের আকাশ সূর্যকে গেলার জন্যে তোড়জোড় করছে। দিগন্ত রাঙিয়ে উঠছে লালাভ আভায়। তুলির আছড়ে রঙের কোলাজ আঁকছেন সন্ধ্যার পিকাসো। যিনি এতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলেন দিগন্তের ক্যানভাসে। ঝাঁক ঝাঁক পাখি দিগন্তের রঙ মেখে, পায়ে ডানায় রঙ নিয়ে ফিরছে বাসায়। তাদের পায়ের নখে করেও চলে যাচ্ছে বিন্দু বিন্দু রাত। আকাশ ফুঁড়ে খাড়া উঠে গেছে রেখার মতো গুচ্চের ফ্যাকাশে দাগ। যেন আকাশের মুখ ভার। তার সেই কষ্ট-রেখা ছড়িয়ে পড়ছে আসমান থেকে আসমানে। যেন আকাশ কোনোমতেই চায়ছে না, সূর্যকে ঘুম দিয়ে দিতে, সূর্যকে তুলে দিতে রাতের হাতে। তাই তার যন্ত্রণার রঙ দিগন্ত ফুঁড়ে আঁচড় কাটছে। পশ্চিম আকাশ থেকে তুষারের কণার মতো নেমে আসছে গুঁড়িগুঁড়ি অন্ধকার। নদীর জলে মিশে হয়ে উঠছে দলা। একটু একটু করে গিলে নিচ্ছে নৌকোর ছই, পাটাতন, খোল। ঘাটবাড়ি কৌশা নৌকোটা হয়ে উঠছে রাতবাড়ি। লাল টিপের মতো সূর্যটা খাপি খেতে খেতে দিগন্তের কোলে ঘুমিয়ে পড়তেই হুড়মুড় করে হেঁটে আসতে লাগল অন্ধকার। তার পায়ের দাপাদাপি টের পেল নদী। নীল নদী লালাভ থেকে আচানক কাজলকালো হয়ে গেল। নয়াপাড়া থেকে ভেসে আসা মাগরিবের আজান শেষ হতেই, ছইয়ের মটকা ধরে নেমে এল রাত। নদীতে বিছিয়ে দিল রাতের বিছানা। ঘুম সর্বপ্রথম কাঠি ছোঁয়াল সাকিবের চোখে। আরিফা মুখে ছড়া কেটে, আঁচলের হাওয়া দিয়ে তার চোখে লাগিয়ে দিল ঘুম। হালেমা নামাজ আদায় করে জাফর আলির পাশে কাত হয়ে বসলেন। মানুষটা সারাদিন কিচ্ছুটি মুখে তোলেননি! শুধু পড়ে পড়ে ঘুমিয়েছেন। দু-একবার চ্যাংদোলা করে ধরে প্রস্রাব করিয়েছে দু বেটা। তাও চোখ বুঝে ছিলেন। চোখের পাতা তুলতেই পারেননি।
“এক গাল জাউভাত খেয়ে নাও।“ কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ডাকলেন হালেমা। জাফর কোনো সাড়া দিলেন না। হালেমা গলার স্বর একটু চড়ালেন, “ওগো, শুনতে পাচ্ছ?” কথাটা জোরে কানের কাছে বাজতেই, জাফর ঠোঁট নড়ালেন, “হু”। মুদে থাকা চোখের পাতাগুলোও মিহি করে নড়ল। হালেমা কথায় জোর রেখেই বললেন, “এক গাল খেয়ে নাও, আরিফা জাউভাত করেছে। গায়ে বল পাবে।“
“না, খা ব না।“ জড়ানো স্বর আরও জড়িয়ে বেরোল। মিহি করে খুলে গেছে চোখের পাতা। ঝাপসা দৃষ্টিতে দেখছেন, হালেমা মুখের কাছে বসে আছেন। কুপির হলুদ আলোতে কাঁচা সোনার মতো লাগছে হালেমার জড়ানো মুখ। হীরের মতো জ্বলছে ঘোলাটে চোখ। সন্ধ্যার দক্ষিণি হাওয়ায় পাকাঝুন ভ্রূগুলো হাঁসের সাদা পালকের মতো ফিনফিন করে নড়ছে। থুত্থুরে মুখটা বড় মায়াবি লাগছে আজ। চোখ পিটপিট করা জাফর কি এই সৌন্দর্য এই রূপ এই মায়ায় ঢলে পড়ছে? এসবের ভেতরে যে শক্ত বাঁধন আছে, যে বাঁধন কখনও খণ্ডাবে না, না ইহকাল না পরকালে হবে আলাদা, যে বাঁধন কালেমার পবিত্র উচ্চারণে জনম জনমের জন্যে বাঁধা, সে বাঁধন কি রুহুকে তার শরীরের সঙ্গে আরও এঁটে ধরছে? ঘাড়ে থড়বড়ে হাতটা দিয়ে হালেমা তুলতে গেলে, জাফর মিনমিন করে বললেন, “খিদে নেই, খাব না।“
“খিদে নেই বললেই হলো, সেই কোন সাত-সকালে একগাল মুড়ি খেয়েছেন, সারাদিন পেটে কিচ্ছুটি পড়েনি! পেটে দানাপানি না পড়লে কী করে শ্বাস নেবেন?” পাশ থেকে বলল আরিফা। সে একটা ছোট্ট থালাতে দুমুঠো জাউভাত নিয়ে কুঁজো হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

চলবে...

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১৮

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১৭

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১৬

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১৫

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১৪

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব ১৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১১

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৯

 

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৬

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৫

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৪

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১

 

Header Ad

‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’: প্রধান উপদেষ্টা

ফাইল ছবি

জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, জুলাই-আগস্ট ছাত্র জনতার বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করেছি। এ নতুন দেশে আমাদের দায়িত্ব সকল মানুষকে এক বৃহত্তর পরিবারের বন্ধনে আবদ্ধ করা। কেউ কারো উপরে না, আবার কেউ কারো নিচেও না, এই ধারণা আমরা আমাদের জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।

তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে সুযোগ ছাত্র-জনতার সাহস ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে সম্প্রতি আমরা অর্জন করেছি, সেটাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী ভবিষ্যৎ গড়তে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ, আহত এবং জীবিত ছাত্র-জনতার কাছে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে চাই। যে সুযোগ তারা আমাদের দিয়েছে, তার মাধ্যমে আমাদের দেশকে পৃথিবীর সামনে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী দেশে পরিণত করতে আমরা শপথ নিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, ছাত্র আন্দোলনে জীবন উৎসর্গ করে যারা দেশ গঠনের সুযোগ করে দিয়েছে জাতি তাদের সারা জীবন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।

বক্তব্য শেষে সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা। পরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

Header Ad

নওগাঁ শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু

ছবি: সংগৃহীত

নওগাঁ শহরে যানযট নিরসন ও শৃঙ্খলা ফেরাতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, পৌর কর্তৃপক্ষ ও রিকশা মালিক-শ্রমিকদের যৌথ উদ্যোগে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। এতে শহরে শৃঙ্খলা ফিরবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) অভিযানের উদ্বোধন করেন নওগাঁ পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকারের উপ পরিচালক টি.এম.এ মমিন। এ সময় নওগাঁ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জিয়া উদ্দিন, নওগাঁ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন, নওগাঁ জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আফজাল হোসেন ও অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

অভিযান শুরুর পর থেকেই শহরের বরুনকান্দি, মশরপুর, তাজের মোড় ও কালীতলাসহ মোট ৮ টি প্রবেশদ্বারে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। চেক পোষ্টগুলোতে ২ জন পুলিশ সদস্য, ২ জন ছাত্র সমন্বয়ক, ৪ জন রোভার স্কাউট সদস্য ও ২ জন রিকশা মালিক শ্রমিক প্রতিনিধিসহ মোট ১২ জন করে কাজ করছেন।

পৌর প্রশাসক জানান, নওগাঁ শহরে বৈধ যানবাহনের সংখ্যা ৪ হাজার। কিন্তু প্রতিদিন পার্শবতী বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ১০ হাজার রিকশা, ব্যাটারী চালিত অটো রিকশা ও ইজিবাইক শহরে প্রবেশ করে। এতে তীব্র যানযট ও জন মানুষের ভোগান্তি তৈরী হয়। এই দূর্ভোগ লাঘোবে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল ও পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিনের দিক নির্দেশনায় যানবাহন নিয়ন্ত্রনসহ বিশেষ অভিযানের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। বৈধ চালকদের চিহ্নিত করতে তাদের মাঝে পরিধেয় বিশেষ ধরনের জ্যাকেট প্রদান করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

নওগাঁর পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিন বলেন, নওগাঁ শহরের যানযট দীর্ঘদিনের সমস্যা। পরিকল্পিত ভাবে এই সমস্যা দূর করতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের উদ্যোগে পৌর কর্তৃপক্ষ ও রিকশা মালিক শ্রমিক নেতৃবৃন্দদের সমন্বয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে স্থানীয় বাসিন্দা ও বিভিন্ন ষ্টেক হোল্ডারদের পরামর্শ নিয়ে একটি কর্ম পরিকল্পনা গ্রহক করা হয়েছে।

এ বিষয়ে নওগাঁর জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, অভিযান সফল ভাবে বাস্তবায়ন হলে শহরে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। জনগন এর সুফল পাবেন। সকলকে এই কার্যক্রমে সহযোগিতা প্রদানের আহবান জানান তিনি।

Header Ad

২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে নির্বাচন হতে পারে: উপদেষ্টা সাখাওয়াত

বক্তব্য রাখছেন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে ২০২৬ সালের মাঝামাঝি নির্বাচন হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ অন্তর্বর্তী সরকারের নৌ পরিবহন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ডক্টর এম সাখাওয়াত হোসেন।

সম্প্রতি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউস অব লর্ডসে মানবাধিকার সংগঠন ‘ভয়েস ফর বাংলাদেশ’ আয়োজিত সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

‘ডিসকাশন অন ডেমোক্রেটিক কলাপ্স অ্যান্ড রিবিল্ডিং অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই সম্মেলনে হাউস অব লর্ডসের সিনিয়র সদস্য আলেক্সান্ডার চার্লস কার্লাইল কিউসি সভাপতিত্ব করেন। ভয়েস ফর বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্রডকাস্টার আতাউল্লাহ ফারুকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এম সাখাওয়াত হোসেন।

সম্মেলেনে সাবেক ব্রিটিশ মন্ত্রী পল স্কালি বলেন, বাংলাদেশে যে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে, তার সঠিক তদন্ত শেষে যথাযথ বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে করে এ ধরনের ঘটনার পুররাবৃত্তি না হয়।

লর্ড হোসাইন বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সব সংস্কার এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে সব ধরনের সহায়তা পাবে।

সম্মেলনে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান লেবার দলীয় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি রুপা হক।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’: প্রধান উপদেষ্টা
নওগাঁ শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু
২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে নির্বাচন হতে পারে: উপদেষ্টা সাখাওয়াত
সেনাকুঞ্জে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে খালেদা জিয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ৫ জনকে রোবটিক হাত উপহার
সেনাকুঞ্জের পথে খালেদা জিয়া
সুযোগ পেলে শেখ হাসিনার পক্ষে মামলায় লড়ব: জেড আই খান পান্না
নির্বাচন কমিশন গঠন, সিইসি হলেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব নাসির উদ্দীন
ডিএনএ টেস্টের ফলাফল: ভিনিসিয়ুসের পূর্বপুরুষ ছিলেন ক্যামেরুনের
জামিন পেলেন সাংবাদিক শফিক রেহমান
বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে আসা সেই শাহজাহান ওমর গ্রেপ্তার
মিরপুর ও মহাখালীতে অটোরিকশা চালকদের সেনাবাহিনীর ধাওয়া
‘শেখ হাসিনা এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী’, এমন কথা বলেননি ট্রাম্প
লেবাননে ৮ শতাধিক ইসরায়েলি সেনা নিহত
ভারতে সাজাভোগ শেষে দেশে ফিরল ২৪ বাংলাদেশি কিশোর-কিশোরী
ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে অবরোধ করে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের বিক্ষোভ
গাজায় ইসরায়েলের হামলায় আরও ৮৮ ফিলিস্তিনি নিহত
সাবেক এমপি শাহজাহান ওমরের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর
১২ বছর পর সেনাকুঞ্জে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া
ধামরাইয়ে শ্রমিকবাহী বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ৪