বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ৬ ফাল্গুন ১৪৩১
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-১১

স্নানের শব্দ

অফিসে একটা চাপা উত্তেজনা। কারণ নির্ঝর চৌধুরী অবশেষে ইমেইলে তার পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে চাকরিতে ইস্তফা দিয়েছেন তিনি। তার বিদায়টা অবশ্য যথাযথ হলো না। যেন একরকম পালিয়ে বাঁচলেন তিনি। যথাসময়ে নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারার মাশুল দিলেন হয়ত। হয়ত ভেবেছিলেন ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী নেই, ফলে জানবে না কেউ। কিন্তু এতদিন মুখ বন্ধ করে রাখা ভুক্তভোগী নিজেই যে জলজ্যান্ত সাক্ষী হয়ে সব কিছু ফাঁস করে দেবে তা কে জানতো? শেষ অবধি তার কর্মের দায় প্রতিষ্ঠান নেয়নি। ফলে নিজ কর্মফল নিজের ঘাড়ে নিয়ে নিঃশব্দে চলে যেতে হয়েছে তাকে।

সবাই জানে ম্যানেজমেন্ট এখন কোম্পানির জন্য নতুন সিইও খুঁজছে। সেটা তারা প্রতিষ্ঠানের ভেতর থেকেও নিতে পারেন আবার বাইরে থেকেও আনতে পারেন। তাদের মর্জি।
‘ম্যাডাম, ইনহাউজে তো আপনি আর ওসমান গণি সাহেব.. এই দুজনই সিইও হবার যোগ্য।’

মনিরুজ্জামান তার ফাইলে সই নিয়ে চলে যাবার আগে অধোমুখে বলে। শবনম সরাসরি ‘হ্যাঁ বা না’ কিছু বলে না। ‘তবে আমরা মনে করি, সব বিবেচনায় আপনার দিকেই পাল্লা ভারি..’ মনিরুজ্জামান আবার বলে।

’কীভাবে?’ শবনম ভ্রু উঁচিয়ে গম্ভীর মুখে জানতে চায়। কথা বলতে পারার আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠে মনিরুজ্জামানের চেহারা, ‘আপনার এতদিনের অভিজ্ঞতা, বিদেশি ডিগ্রি, সিনসিয়ারিটি, স্টাফদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা সব মিলিয়ে ..’
কথার মাঝখানেই ওকে থামিয়ে দেয় শবনম।
‘শোনো, এইসব যাদের বিষয় তাদের ভাবতে দাও, চেয়ারম্যান সাহেব আছেন, বোর্ড অব ডিরেক্টরস আছেন তারাই ভাববেন, তুমি নিজের কাজে মন দাও।’
‘জ্বি ম্যাডাম, জ্বি।’

মনিরুজ্জামান চলে যাওয়ার পর তিনতলার বোর্ডরুমের দিকে এগোয় শবনম। কোম্পানির জুনিয়ার এক্সিকিউটিভ নিয়োগের ভাইবা আছে আজ। লিখিত পরীক্ষায় যারা ভালভাবে পাশ করেছে মৌখিক পরীক্ষায় তাদেরই ডাকা হয়েছে, দেখে শুনে আরেক দফা যাচাই বাছাই করে নেওয়ার জন্য। সিইও সাহেব উপস্থিত থাকলে এ সব কাজে সাধারণত শবনমের ডাক পড়ে না। তার অনুপস্থিতিতে বোর্ডে বসে তরুণ ভীরু, আত্মবিশ্বাসী আশা নিরাশায় দোদুল্যমান নানা ধরনের মুখগুলি দেখছিল শবনম। প্রশ্ন করছিল টুকটাক। তীক্ষ্ণ চোখে পর্যবেক্ষণ করছিল অন্য বোর্ড সদস্যদের করা প্রশ্নোত্তর পর্ব আর ফাঁকে ফাঁকে চোখ বুলাচ্ছিলেন টেবিলের উপরে রাখা চাকুরিপ্রার্থীদের সিভিগুলোতে। একটা মেয়ের সিভিতে এসে রেফারেন্সের ঘরে চোখ আটকে গেল ওর। ক্যাপিটাল লেটারে প্রফেসর ইমতিয়াজ মতিন এবং তার ডিপার্টমেন্ট আর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম লেখা। সঙ্গে তার কন্টাক্ট নম্বরও দেওয়া আছে। হঠাৎ কি মনে হলো টুক করে সবার অগোচরে নিজের ফোনে ইমতিয়াজের নম্বরটা টুকে নিল শবনম।

বোর্ডের সামনে বসে থাকা ইমতিয়াজের ছাত্রী মেয়েটা দেখা গেল বেশ চটপটে, ঝটপট সবার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। না পারলে দ্রুত বলে দিচ্ছে উত্তরটা তার জানা নেই।

‘ইমতিয়াজ স্যার আপনাদের কি পড়াতেন?’
‘স্যার বিজনেস কমিউনিকেশনস পড়াতেন, ম্যাম’
মেয়েটি চোখের দিকে তাকিয়ে স্পষ্ট উচ্চারণে বলল। ‘এখন তো উনি ডিন। প্রো-ভিসি হয়ে যাবেন কদিন পরে ...

ব্যবসায়িক যোগাযোগের সাধারণ কয়েকটা বিষয় নিয়ে মেয়েটিকে প্রশ্ন করল শবনম। ভালই উত্তর দিল মেয়েটি। ইন্টারভিউ শেষ করতে করতে লাঞ্চ টাইম পার হয়ে গেল। তারপর বোর্ডের অন্যদের সঙ্গে নম্বর মিলিয়ে প্রার্থী সিলেক্ট করে শেষ বিকেলে নিজের রুমে বসে ইমতিয়াজের ফোন নম্বরটা বের করে এক দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে থাকল শবনম। কত কথা যে শরতের মেঘের মতো ভেসে ভেসে মনের মধ্যে এল আর গেল। কিছু মেঘ বৃষ্টি ঝরাল, কিছু মেঘ কালো হাতির মত শুড় তুলে দল বেঁধে অজানায় হারিয়ে গেল আর কিছু মেঘ উড়ে এসে মনের উপর চেপে বসল, ফলে অবচেতনে চাপা পড়ে থাকা স্মৃতিবৃক্ষ থেকে টুপটাপ শুকনো পাতারা ঝরতে থাকল।

শবনমের মনে পড়ে অনেক আগে বন্ধুদের আড্ডায় ইমতিয়াজ একবার কথায় কথায় বলেছিল, ‘ঘরের মধ্যে প্রতিযোগিতা করা তার একেবারেই পছন্দ নয়,’
তবে কি শবনমের মধ্যে প্রতিযোগী মনোভাব খুঁজে পেয়েছিল সে? সেকি ভয় পেয়েছিল, ভেবেছিল ভবিষ্যতে শবনম তাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে? সে কি কোনো ধরনের হীনমন্যতায় ভুগছিল? নাকি ডুবেছিল আত্মমগ্নতায়? তার অনভ্যস্ত মন হয়ত প্রচলিত চাওয়া পাওয়া আর গণ্ডিবদ্ধ জীবনের বাইরে গিয়ে শবনমের পরিবর্তিত অবস্থান মেনে নিতে রাজি ছিল না। মুখচোরা স্বভাবের কারণেই হয়ত কোনোদিন স্পষ্ট করে কিছু বলেওনি সে। অথচ শবনম সবসময় তার হাত ধরে, লেফট রাইট করে তালে তালে পা মিলিয়ে পাশাপাশি চলার কথা ভেবেছে, প্রতিযোগিতা নয়, সহযোগিতা করতে চেয়েছে, সংকটে সাফল্যে, সুখে দুঃখে পাশে থাকতে চেয়েছে। ইমতিয়াজ তাকে পূজা করে মাথায় তুলে রাখুক, আদর করে শোকেসে সাজিয়ে রাখুক এমনটা হয়ত কখনোই চায়নি সে, তবে অবহেলা বা উপেক্ষা? না, সেটা সহ্য করা সম্ভব নয়। একটা নিয়ন্ত্রিত, সমর্পিত, অধস্তন জীবনও তার কাছে যাপনযোগ্য মনে হয়নি কোনোদিন।

কেমন হতো আজ সেও যদি ইমতিয়াজের মতো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর হত, দুজন একসঙ্গে গবেষণা করত, সেমিনারে বক্তৃতা করত, দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াতো.. কে জানে জীবনটা তখন আরও বিরক্তিকর আরও একঘেয়ে বা ক্লান্তিকর হয়ে পরতো কি না।

এখন তো বোঝাই যায় শবনম যেমনটা চেয়েছিল ইমতিয়াজ তেমনটা চায়নি। সেই কারণেই হয়ত ওদের কয়েক ব্যাচ জুনিয়র বাংলা সাহিত্যের সাদাসিধে ছাত্রী উম্মে কুলসুম আঁখিকে বিয়ে করে সুখি হয়েছে সে। সুরাইয়াই বোধহয় জানিয়েছিল একবার, প্রবাসে থাকতেই দুই পুত্রের বাবা হয়েছে ইমতিয়াজ। পিএইচডি শেষে কয়েক বছর বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে দেশে ফিরে মোটা বেতনে একটা নামি-দামি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছে সে। অন্যদিকে আঁখি চাকরি বাকরির পথে যায়নি বরং নিপুণ হাতে ঘর সংসার সন্তান সামলেছে।
একবার বছর দুয়েক আগে ফাইনানসিয়াল ইন্টিগ্রিটি নিয়ে মেট্রোপলিটন চেম্বারের একটা রাউন্ড টেবিলে প্রায় আঠারো বছর পরে ইমতিয়াজের সঙ্গে মুখোমুখি দেখা হয়েছিল শবনমের। ছাত্রজীবনের হালকা পাতলা টিংটিঙে শরীরে স্বভাবতই বয়সের মেদমাংশ লাগা, চুল পড়ে বড় হয়ে যাওয়া কপাল, মুখে মানানসই সাদা কালো ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি, স্যুটেড বুটেড ইমতিয়াজকে তার ঘন ভ্রু, চশমার কাঁচের নিচে ঢাকা কালো ছোট চোখ দুটোতে প্রখর আত্মবিশ্বাসী দৃষ্টি আর ঠোঁটের কোণে ঝুলে থাকা বাঁকা হাসির জন্যই হয়ত চিনতে এতটুকু কষ্ট হয়নি শবনমের।

‘কি অবস্থা? কেমন আছো?’
প্রথম ইমতিয়াজই জিজ্ঞেস করেছিল ভদ্রতা করে। তারপর পাশের ভদ্রলোককে ক্যাজুয়াল ভঙ্গীতে হাসিমুখে বলেছিল,
‘আমরা কিন্তু ইউনিভার্সিটিতে ক্লাসমেট ছিলাম।’
শবনম মাথা নেড়ে সায় দিয়েছিল। হ্যাঁ, ক্লাসমেটই তো, একই শ্রেণিকক্ষে দীর্ঘদিন পাশাপাশি বসেছি, আড্ডা দিয়েছি। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় পাশ দেওয়া হলে, যার যার অর্জিত জ্ঞান নিয়ে আমরা চলে গিয়েছি নিজস্ব গন্তব্যে। পুরনো প্রেমের গল্পগুলো তখন টুপ করে ডুবে গিয়েছিল সমুদ্রের গভীর অতলে। নিজেদের আত্মকেন্দ্রের চারপাশে আত্মপ্রতিষ্ঠার নেশায় বুঁদ হয়ে ঘুরছিলাম আমরা, সেই ঘূর্ণন দুইজনকে দুই মেরুতে নিয়ে ফেলেছে। এখন বাকি সব পরিচয় ঢেকে গিয়ে সহপাঠী পরিচয়টিই প্রধান ও একমাত্র পরিচয় হয়ে উঠেছে।

শবনম তার ফোন থেকে ইমতিয়াজের নম্বরটা আস্তে করে বোতাম টিপে ডিলিট করে দেয়। একবার যা হারায় তা একেবারেই হারায় আর ফিরে আসে না, তবে খামোখা কেন যোগাযোগের ক্ষীণ সূত্রটা জিইয়ে রাখা? তারচে নিজেকে একেবারে প্রত্যাহার করে নেওয়াই ভাল। এ সব আসলে সুন্দর ফাঁদ, তোমাকে আটকে ফেলবে আবেগের জালে, কষ্ট দেবে, মিছিমিছি দুঃখ বাড়াবে। নিজেকে বোঝায় সে। কোনো দুর্বলতাকে প্রশ্রয় দেওয়া চলবে না। তারচে নিজের স্বাধীন, স্বাবলম্বী, অর্থপূর্ণ জীবনকে উদযাপন করো। নিজেই নিজের পিঠ চাপড়ে দাও, উচ্চকণ্ঠে বলো, থ্রি চিয়ার্স ফর শবনম। নিজের পেশাগত জীবনের সম্মান, অনিশ্চয়তা, টেনশনের পাশাপাশি এত দূর পর্যন্ত দম ধরে রেখে যে দৌড়ে যাচ্ছো, তার গৌরব ও আনন্দকে গুরুত্ব দাও। উল্লাস কর। উদযাপন কর।

হ্যাঁ, তোমার এ অর্জন এমনি এমনি আসেনি। সেজন্য মূল্য দিতে হয়েছে, সকাল সন্ধ্যা গাধার খাটুনি খাটতে হয়েছে, হাড়ভাঙা পরিশ্রমও করতে হয়েছে। কারো আদরের বিড়াল হয়ে কোলে উঠে মিউ মিউ করার স্বভাব বাদ দিয়ে বাঘিনীর মতো নিঃসঙ্গ সতর্ক গর্জনশীল জীবন বেছে নিতে হয়েছে। তবে দিনশেষে প্রাপ্তিটাও তো কম নয়। নিজের ব্যক্তিত্ব বজায় রেখে কাউকে তোয়াক্কা না করে, স্বাধীনভাবে মাথা উঁচু করে চলতে চাইলে আরাম আয়েশের কিছু ঘাটতি তো হতেই পারে, তাই না?

চলবে…

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

স্নানের শব্দ: পর্ব-১০

স্নানের শব্দ: পর্ব-৯

স্নানের শব্দ: পর্ব-৮

Header Ad
Header Ad

অবশেষে সরিয়ে দেওয়া হলো মাউশির বিতর্কিত ডিজিকে

অধ্যাপক ড. এহতেসাম উল হক ও মাউশির লোগো। ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষক নেতাদের আন্দোলন ও গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক (ডিজি) পদ থেকে অধ্যাপক ড. এহতেসাম উল হককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি শিক্ষা ক্যাডারের ১৪তম বিসিএসের কর্মকর্তা এবং পটুয়াখালী সরকারি কলেজের অধ্যাপক ছিলেন।

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সম্প্রতি তার বিতর্কিত কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর তাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করে মাউশিতে সংযুক্ত করা হয়েছে। এদিকে, নতুন মহাপরিচালক হিসেবে অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খানকে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব মো. মাহবুব আলম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খানের এই দায়িত্ব কেবল সাময়িক, যা পদোন্নতি হিসেবে গণ্য হবে না। পরবর্তীতে নিয়মিত নিয়োগের মাধ্যমে মহাপরিচালক নিয়োগ হলে এই চলতি দায়িত্ব বাতিল হয়ে যাবে।

অধ্যাপক এহতেসাম উল হকের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এর আগে তিনি বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ থাকাকালীন শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়ন চালানোর অভিযোগে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। অভিযোগ রয়েছে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তথ্য তিনি পুলিশের কাছে সরবরাহ করেছিলেন।

২০২৩ সালের ৫ আগস্ট তার অপসারণের দাবিতে কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে। দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার অপসারণের দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ২০২১ সালের জুন মাসে বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে যোগদানের পর থেকে তিনি নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে যান। তিনি বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয় সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠ ছিলেন।

অভিযোগ রয়েছে, অধ্যক্ষ থাকাকালীন তিনি শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন এবং আন্দোলনে অসহযোগিতা করতেন। এমনকি কলেজের গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতেন, যা তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনও ব্যবহার করতেন। তিনি কলেজের বিদ্যুৎ ব্যবহার করে নিজের বাসায় গ্রিল নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ করিয়েছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে চাকরি খেয়ে ফেলার হুমকি দিতেন এবং বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) খারাপ করে দেওয়ার ভয় দেখাতেন। এছাড়া, চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন না দিয়ে বিদায় করে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

ডিজি পদ থেকে এহতেসাম উল হককে অপসারণের খবরে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, একজন বিতর্কিত ব্যক্তি শিক্ষাখাতের এত বড় দায়িত্বে থাকতে পারেন না। তার অপসারণের মাধ্যমে প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রতি সরকারের সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে।

Header Ad
Header Ad

২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ৩৩ ডিসি ওএসডি

ছবি: সংগৃহীত

২০১৮ সালের বিতর্কিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ৩৩ জন জেলা প্রশাসককে (ডিসি) বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত ছয়টি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিতর্কিত নির্বাচনে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনের কারণে এই কর্মকর্তাদের ওএসডি করা হয়েছে। এর আগে একই কারণে আরও ১২ জন কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছিল।

ওএসডি হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের পরিচালক (যুগ্মসচিব) কবীর মাহমুদ, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. মাহমুদুল আলম, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. আবুল ফজল মীর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের সদস্য-পরিচালক (যুগ্মসচিব) মঈনউল ইসলাম, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য (যুগ্মসচিব) মো. ওয়াহিদুজ্জামান, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (সংযুক্ত) এ কে এম মামুনুর রশিদ এবং বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বাপবিবো) সদস্য (যুগ্মসচিব) ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম।

এছাড়া তালিকায় রয়েছেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব কাজী আবু তাহের, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সদস্য (যুগ্মসচিব) মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব (সংযুক্ত) আনার কলি মাহবুব, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য (যুগ্মসচিব) সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী, কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব সাবিনা ইয়াসমিন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আতাউল গনি এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (সংযুক্ত) আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন।

এছাড়া, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব এ জেড এম নুরুল হক, বাংলাদেশ রাবার বোর্ডের পরিচালক (যুগ্ম-সচিব) এস এম আজিয়র রহমান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সচিব (যুগ্ম-সচিব) মো. মাসুদ আলম সিদ্দিক এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম-সচিব গোপাল চন্দ্র দাশসহ আরও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা রয়েছেন।

প্রসঙ্গত, বিতর্কিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই ওই সময়ের রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এবার সেই নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের পর্যায়ক্রমে ওএসডি করা হচ্ছে বলে মনে করছেন প্রশাসনিক বিশ্লেষকরা।

Header Ad
Header Ad

ট্রাম্পের বিস্ফোরক দাবি: চলমান যুদ্ধের সূচনা ইউক্রেনই করেছিল

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য ইউক্রেনকেই দায়ী করে নতুন বিতর্ক উসকে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন রাজনীতিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে পরিচিত ট্রাম্প এবার ইউক্রেনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন, চলমান যুদ্ধের সূচনা ইউক্রেনই করেছিল।

মঙ্গলবার (স্থানীয় সময়) ফ্লোরিডার মার-আ-লাগোতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির প্রতি কঠোর মনোভাব প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ইউক্রেনে একটি নতুন নির্বাচন হওয়া উচিত। বিশ্লেষকদের মতে, এটি জেলেনস্কিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনারই ইঙ্গিত।

ট্রাম্প আরও বলেন, ইউক্রেনে দীর্ঘদিন ধরে কোনো নির্বাচন হয়নি এবং সেখানে সামরিক আইন চলছে। তার দাবি, জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা মাত্র চার শতাংশে নেমে গেছে, আর দেশটি ধ্বংসের পথে। যদিও যুদ্ধকালীন সময়ে নির্ভরযোগ্য জনমত জরিপ পাওয়া কঠিন, তবে বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা ট্রাম্পের দাবির মতো এতটা কমেনি।

এছাড়া, ইউক্রেনের নির্বাচন প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, "তারা কি জনগণের মতামত নিয়েছে? তারা আলোচনার টেবিলে বসতে চায়, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সেখানে কোনো নির্বাচন হয়নি।"

প্রসঙ্গত, ইউক্রেনে ২০২৪ সালের এপ্রিলে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও দেশটির সংবিধান অনুযায়ী, যুদ্ধকালীন সময়ে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই মন্তব্য কৌতুকপূর্ণ, কারণ তিনি নিজেই ২০২০ সালের মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।

ট্রাম্প আরও দাবি করেন, ইউক্রেন চাইলে যুদ্ধ বন্ধ করতে পারতো এবং তাদের উচিত ছিল রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতায় যাওয়া। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এর অর্থ হলো—ইউক্রেনকে হয় রাশিয়ার মিত্র সরকার গঠনের প্রস্তাবে রাজি হতে হতো, নয়তো প্রতিরোধ ছেড়ে দিয়ে আত্মসমর্পণ করতে হতো।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের সাম্প্রতিক অবস্থান ইঙ্গিত দেয় যে, তিনি পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ইউক্রেনকে সমর্থন না দিয়ে বরং রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি বিতর্কিত শান্তিচুক্তির দিকে এগোতে পারেন, যা পুতিনের জন্য বড় ধরনের কূটনৈতিক জয় হিসেবে বিবেচিত হবে।

সূত্র: সিএনএন

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

অবশেষে সরিয়ে দেওয়া হলো মাউশির বিতর্কিত ডিজিকে
২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ৩৩ ডিসি ওএসডি
ট্রাম্পের বিস্ফোরক দাবি: চলমান যুদ্ধের সূচনা ইউক্রেনই করেছিল
ডিবির সাবেক প্রধান হারুনের ১০০ বিঘা জমি, ৫ ভবন ও ২ ফ্ল্যাট ক্রোকের নির্দেশ
দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন রেখা গুপ্তা, বিজেপির সিদ্ধান্তে চমক
একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতির শহীদ মিনারে না যাওয়ার আহ্বান
নামাজি জীবনসঙ্গী খুঁজছেন আইশা খান
গাইবান্ধায় গাঁজাসহ আটক এএসআইকে কারাগারে প্রেরণ
উপদেষ্টাদের মিটিংয়ে কোন প্রটোকলে গিয়েছিলেন হাসনাত-পাটোয়ারী: ছাত্রদল সেক্রেটারি
সরকারে থেকে ‘নতুন দল’ গঠন করলে মেনে নেওয়া হবে না: মির্জা ফখরুল
হোস্টিং সামিট ২০২৫ অনুষ্ঠিত
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির উদ্বোধনী ম্যাচে পাকিস্তানকে ৩২১ রানের বড় লক্ষ্য দিলো নিউজিল্যান্ড
বৈষম্যবিরোধী নামধারী শীর্ষ নেতার নির্দেশে কুয়েটে ছাত্রদলের ওপর হামলা: রাকিব
যান্ত্রিক ত্রুটিতে আবারও বন্ধ বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র
কুবিতে ছাত্র সংসদের দাবিতে মানববন্ধন ও সন্ত্রাসবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল
২২০ জনকে নিয়োগ দেবে সমরাস্ত্র কারখানা, এসএসসি পাসেও আবেদন
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে ২ দিনব্যাপি খামারি প্রশিক্ষণ
সবার সাত দিন কারাগারে থাকা উচিত: আদালতে পলক
বিপ্লবী সরকারের ডাক থেকে সরে এলেন কাফি  
নাঈম ভাই হেনা কোথায়?: ‘তুই অনেক দেরি করে ফেলেছিস বাপ্পা’