বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ৬ ফাল্গুন ১৪৩১
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-১০

নেই দেশের নাগরিক

বাংলাদেশের ঘুমডাম সীমান্ত দিয়ে ঢুকে এখানে এল ষোলজনের একটা টিম। নবীর সঙ্গে আতিফও রয়েছে। জায়গাটা খাড়াই উতড়াই এবং লোকালয়ের আড়ালে হলেও বড়ই মনোরম। পাহাড়ে ঘেরা এক ছোট্ট রঙিন ছবি। কুলকুল করে বইছে পাহাড়ি ঝর্ণা। অসংখ্য ঘনসবুজ গাছ সারি সারি দাঁড়িয়ে রয়েছে। নানান রঙের পাহাড়ে পাখি কিচিরমিচির করছে। আর এখানেই গুড়ুম গুড়ুম করে অনবরত ছুটছে গুলি। প্রশিক্ষণের গোলাবারুদ। একজন বীর যোদ্ধা বানাতে গেলে যেসব উপকরণ দরকার তার অনেককিছুই রয়েছে এই গোপন জেহাদি প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে।

কায়দাকৌশল শেখানোর জন্যে রয়েছেন, দক্ষ ট্রেনাররা। যাদের অনেকেই একসময় সৈন্যবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। রাতে থাকার জন্যে কাঠ দিয়ে বানানো হয়েছে ছোট ছোট বাড়ি। বাড়িগুলো দেখে মনে হচ্ছে, যেন পাহাড়ের ঢালে ভেসে রয়েছে খেলনা ঘর! একটা পাথুরে টিলার ওপরে দাঁড়াল আতিফ। একেবারে নতুন শাড়ির পাড়ের মতো বিছানো নদীটা। পাহাড়ের ঝুঁটি থেকে খাড়া নেমে গেছে নিচের বসতির দিকে। কাচের মতো স্বচ্ছ নদীর জল। নিজের স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি জলের ওপরে ভেসে উঠছে। আতিফ দেখল, তার মুখ শুকিয়ে অনেকটাই চামটা হয়ে গেছে। চোখের নিচে পড়েছে কালশিটে দাগ। চুলে শেকড়ের জট। হাঁটু ভাঁজ করে বসল আতিফ। দুই হাতের তালু দিয়ে এক খামচা জল তুলে শুকনো মুখটায় ছিটিয়ে দিল, আহঃ, কী শান্তি! কী মধুর বহতা হিম! একটা হিমেল হাওয়া নীল চোখ ভরে গা স্পর্শ করছে! বরফ ঠান্ডা জল তার মুখকে স্বর্গসুখ দিল। চোখের পাতা প্রজাপতির ডানার মতো ফিনফিন করে উঠল। ঘাড় ঘোরালো আতিফ, পাশের পাহাড় থেকে কিছু ঝোপালো পাহাড়ি গাছ মাথা ঝুঁকে নদীর জলে ডালপালা ঠেকিয়ে আছে। বহতা জলের ওপর পড়িমরি করে সেসব ডালপালা ঝুঁকে মুখ দেখার চেষ্টা করছে। গাছপাতার সঙ্গে নদীর কুলকুল স্রোত এমনভাবে ছুঁয়ে যাচ্ছে, যেন মনে হচ্ছে, নদী গাছপাতাকে চুম্বন করে নেমে যাচ্ছে নিচে। পাথরের ফাঁক দিয়ে বের হওয়া গাছের শেকড়গুলোও ধুয়ে যাচ্ছে স্বচ্ছতোয়া জলে। যেন নদী গাছের চরণ ছুঁয়ে নেমে যাচ্ছে মোহনার ঠিকানায়, সমুদ্রের সঙ্গে মধুময় মিলনের আকাঙ্ক্ষায়। নদীর গড়গড় করে বয়ে যাওয়া দেখে মনে হচ্ছে, তার ফিতের মতো শরীর কামনার তাড়নায় এক উচ্ছল তন্বী নারী। গাছের সাথে নদীর সম্পর্ক যে অনন্তকালের। গাছকে আঁকড়েই তো নদী বেঁচে থাকে? গাছের নোয়ানো ডালে বসে পাহাড়ি পাখিরা ডানা ঝাপ্টাচ্ছে। কিচিরমিচির করে গান শোনাচ্ছে। আতিফের মুখ ফুটে বেরিয়ে এল, ‘আহাঃ, মানুষ না হয়ে যদি নদী হতেম!’
“ভালোই হতো, রক্ত বইতে হতো। তখন বুঝতিস কত ঠ্যালা।“ পেছন থেকে ঠেস মারল নবী।
“কেন রে? রক্ত বইব কেন? নদী তো জীবনধারা, নদী জীবন গড়ে।“
“তো, আমাদের নাফ নদীটা এখন কী বইছে? গোলাপের পাঁপড়ি না মানুষের লাশ?”
“আরে ওসব এখন রাখ তো? এত সুন্দর জায়গায় এসে ওসব রক্ত, লাশ বলতে ইচ্ছে করছে? তুই না, সারাজীবন ওই রসকষহীন ইট-কাঠের মানুষ হয়েই থেকে গেলি! দুনিয়ার এত সুন্দর সৃষ্টির স্বাদ আহ্লাদ কিছু বুঝলি না!”
“এ জীবন আর কটা দিনের? একটা চোখের পলক থেকে আরেকটা চোখের পলক না পড়তেই ইন্তেকাল হয়ে যেতে পারে! এই কয়েক খামচার জীবন লতাপাতা দেখে ফুরিয়ে কী লাভ? বরং আল্লাহর পথে নিজেকে কুরবানি দিই, জান্নাতের দরজা আপনাআপনিই খুলে যাবে। পরকালই তো অনন্তজীবন?“
“ওহঃ! আবার সেই পরকাল, জান্নাত-বেহেশত! তুই একটু থামবি, নবী? তুই হয়ত জানিস ন্যা, আল্লাহর আসমান দিয়ে ঘেরা এই জমিনেও একটা সৌন্দর্যের জান্নাত আছে। পাহাড়, নদী, ঝর্ণা, পাখি, ফুল ফল, চাঁদ, তারা ইত্যাদি ইত্যাদি দিয়ে সে জান্নাত গড়া। সেসব মনপ্রাণ দিয়ে অনুধাবন করলে, সেখানেও বেহেশতের স্বাদ পাওয়া যায়। মনে রাখিস, আল্লাহ যেমন তার কোরআন ও নবীকে পাঠিয়েছেন আমাদের জন্যে, ঠিক তেমনি এই ফুলেফলে ভরা সুন্দর পৃথিবীটাকেও বানিয়েছেন মানুষের জন্যে। অবশ্য তোকে এসব বলে আর কী হবে? তোকে বলাও যা, দেওয়ালকে বলাও তাই।“
“তুই কি এখন যাবি? মাগরিবের আজান পড়ল বলে।“ নামাজের দোহায় দিল নবী।
“আর একটুখানি থাক না। সূর্যাস্তটা দেখে যাই। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে সূর্যাস্ত দেখার মজাই আলাদা।“
“তুই থাক। পেট ভরে দেখ। আমি চললাম। এক্ষণি ডাক পড়বে।“ দাঁত খটমট করতে করতে হনহন করে ক্যাম্পের দিকে চলে গেল নবী। নবী যতই রাগ দেখিয়ে চলে যাক, ওসবে গা করল না আতিফ। সে পাথরের টিলাটার ওপরে খাড়া হয়ে দাঁড়াল। গোটা পশ্চিম আকাশ জুড়ে রঙ বিচ্ছুরণের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। একটু একটু করে হলুদাভ-লাল রঙ মেখে নিচ্ছে পাহাড়ের ঢালে ঝুঁকে থাকা আকাশ। রঙের পিচকিরি দিয়ে রঙ ছিটাচ্ছে দিগন্ত। আর সেসব ক্যানভাসের মতো কাত হয়ে পড়ছে নদীর জলে। রঙিন আকাশ যেন নদীর স্বচ্ছ জলে আলিঙ্গনে মাতাল হয়ে উঠছে। আর এই দিগন্তরাঙা রঙে স্নান সেরে নিচ্ছে কুলোর মতো কোমর ফোলা মেটে রঙের পাহাড়। পাহাড়ের পশ্চিম ঢালে লাল-হলুদের থালা পাকিয়ে ধীরে ধীরে নিচে নেমে যাচ্ছে অস্তগামী সূর্য। যেন রঙিন ক্যানভাসে ভেসে থাকা ডিমের নিরেট কুসুম। সূর্যটাকে দেখে, নাফ নদীর বুকে অস্ত যাওয়া সূর্যটার কথা মনে পড়ে গেল আতিফের। বাড়িতে থাকলেই, একবার না একবার সে নদীর পাড়ে সূর্যাস্ত যাওয়া দেখতে যাবেই যাবে। নাফ নদীর পশ্চিম আকাশের সে সূর্যটাও তো এরকমই লাল-হলুদ ডিমের কুসুমের মতো। ওপারে বাংলাদেশের কক্সবাজারে যখন সূর্যটা ডুবে যেত, তখন মন খারাপ হয়ে যেত তার। মনের আকাশে নেমে আসত বিরহ। লাল রঙ ধীরে ধীরে কালো রঙে ঢেকে যেত। দূরে আবছা হয়ে আসা গাছগুলো সন্ধ্যার আলো মেখে ধীরে ধীরে ডুবে যেত অন্ধকারে।

আতিফ ঝর্ণাটার দিকে চোখ বড় করে তাকাল, “মাসআল্লাহ!” লাল-হলুদ রঙ পড়ে ঝর্ণার জল যেন রঙের ফোয়ারা হয়ে উঠছে! দিগন্তরাঙা রঙ পেয়ে ঝর্ণা যেন খিলখিল করে হাসছে। আতিফের হৃদয়টাও খিলখিল করে হেসে উঠল। তার মনে এখন বইতে শুরু করেছে এরকমই একটা ঝর্ণা। তুলি টানতে শুরু করেছে এরকমই একটা দিগন্ত। চোখের নীলে ফুটে উঠছে সেসবের আঁচড়। আঁকিবুঁকি। আহ্লাদি স্রোত। জায়গাটা ভালো লেগে গেল আতিফের। সে মনপ্রাণ দিয়ে ট্রেনিং নিতে লাগল। কঠিন কঠিন শারীরিক কসরৎ, দৌড়ঝাঁপ, স্কিপিং, দড়িতে ঝুল্লু খাওয়া, পিঠে ভারী বোঝা নিয়ে পাহাড়ে ওঠা, নিশানা তাক করে গুলি মারা, অনেকক্ষণ শ্বাস বন্ধ করে জলে ডুবে থাকা, নানান ভঙ্গির সাঁতার কাটা, বালির উপর বুক রেখে সরীসৃপের মতো ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে হাঁটা, দৌড়ে গাছে ওঠা, ধকলের পর ধকল। তাকে রক্ত-মাংসের মানুষ থেকে মৃত্যভয়হীন ইস্পাত কঠিন জেহাদি হয়ে উঠতে হবে যে। সেখানে জিরোনোর সময় কোথায়? প্রতিদিন ভোরবেলায় ফজরের নামাজ আর তারপরেই কোরআন তেলাওয়াত দিয়ে দিন শুরু হয় আতিফদের। তারপরেই বিভিন্ন শারীরিক কসরতে ঝাঁপিয়ে পড়া। শত্রুদের নিশ্চিহ্ন করার জন্যে নিজেদের তৈরি করা। আতিফরা হাড়খাটুনি আর ধকলের পর ধকল সহ্য করে নিজেকে এমনভাবে তৈরি করছে যেন শরীরে গুলি লাগলেও ঢুকবে না। রোদে তাপে পুড়ে পুড়ে তার হলুদ ফর্সা চামড়াটা এমন কালশিটে হয়ে গেছে যেন মনে হচ্ছে ইস্পাতের পাতি, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট! সারাদিনের ট্রেনিং শেষে রাতের বেলায় যখন বিছানা নিত আতিফ, বাড়ির কথা তার বড্ড মনে পড়ত। মুষড়ে পড়ত সে। চোখের জলে ভিজে যেত বালিশ। তখন মনে হতো, সে এখনও রক্ত-মাংসেরই মানুষ। এত লোহালক্কড়, গোলাবারুদ, নুড়িপাথর, জল-পাহাড়, অস্ত্র-কামানেও, তার ভেতর থেকে দংখালী গ্রামের জাফর আলির সাদামাটা নামলা ছেলেটা মরে যায়নি। আসলে যার মন আছে, মনে আবেগ আছে, আবেগে প্রেম আছে, সে কখনও পাথর হয়ে যেতে পারে না। যার চোখে একটু হলেও অশ্রু পড়ে, সে কখনও পাষাণ হতে পারে না।

শেষ ফোন এসেছিল দিন দশেক আগে, মা হালেমা জড়ানো গলায় কাঁদতে কাঁদতে আফসোস করেছিলেন, “তোদের পেটে করে জন্ম দিলাম কিন্তু দেশ দিতে পারলাম না রে! যেখানে থাকিস ভালো থাকিস। আমরা কবে আছি কবে নেই বলতে পারব না। আল্লাহর দেওয়া জান, আল্লাহকে সঁপে দিয়েছি।“ তারপর চোখের পাতা ঝাপটিয়ে বলেছিলেন, “শুনছি, তোরা নাকি দেশ স্বাধীন করবি! মতি বলছিল। কর, কর, যুদ্ধ কর, নিজেদের দেশ বানা, আমার দোয়া তোদের মাথায় থাকল, মানুষের দেশ না হলে হয় রে, মাটি না হলে হয় রে, মানুষ কী আর জিন-পরী, যে হাওয়াতে হাওয়াতে আসমানে আসমানে উড়ে উড়ে বেড়াবে?”
হাড়কে ইস্পাত বানানো ছ’মাসের ট্রেনিং শেষ হলো। পারফরমেন্সের মাপকাঠিতে আতিফ এক লাফে একটা ব্যাটেলিয়েনের কমান্ডার হয়ে গেল। তাকে প্রথম দায়িত্ব দেওয়া হলো, আকিয়াবের পুলিশ চৌকিতে বিস্ফোরণ ঘটানোর। আতিফ তখন রাগে টগবগ করে ফুটছে, যেন সে কোনো দুপেয়ে মানুষ নয়, একটা ছটফট করতে থাকা জ্বলন্ত গোলা, ছুটে পড়তে পারলেই শান্তি। ঘাড়ে তার প্রথম দায়িত্ব। প্রথম জেহাদ। আর প্রথম অ্যাটাকে সে বাজিমাত করতে চাইল। সে জেহাদি ব্রিগেডিয়ারদের বুঝিয়ে দিতে চাইল, তার জন্মই হয়েছে বার্মা সেনাদের কোতল করতে।
চার
“দেখো, আমাদের জীবন কিন্তু আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো নয়। আমরা ইহজাগতিক সুখ ত্যাগ করেছি। ভালো ভালো খাবার আর সুন্দর সুন্দর পোশাক আমাদের জন্যে নয়। আমরা পরকালের অনন্ত সুখের জন্যে নিজেকে আল্লাহর পথে সঁপে দিয়েছি। আমরা মুজাহিদ। ‘জিহাদ’ আমাদের ধর্ম। অর্থাৎ সংগ্রাম। মনে রেখো, কুরআনে একচল্লিশবার জিহাদের কথা উল্লেখ আছে। কুরআনে জিহাদকে মুসলমানদের জন্যে একটি ‘কর্তব্য’ বলে উল্লেখ আছে। সেখানে ‘হারব’ বা ‘যুদ্ধ’ শব্দ ব্যবহার না করে ‘জিহাদ’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। মনে রেখো, মুখের ভাষা ও লেখনির সাহায্যে মানুষের মানসিকতা, চিন্তাধারা ও দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন সাধন করা এবং তাদের মধ্যে ‘অন্তর্বিপ্লব’ সৃষ্টি করা জিহাদের যেমন একটা দিক, ঠিক তেমনি, তরবারি ব্যবহার করে অনৈসলামিক সমাজ ব্যবস্থা নির্মূল করে নতুন সুবিচারমূলক ইসলামিক সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাও জিহাদের একটা দিক। সুতরাং একজন মুজাহিদ হওয়া আল্লাহর কাছে কত সম্মানের বুঝতে পারছ?”
“জি হুজুর”। মাথা নড়াল নবী।
“হুজুর, আরও একটু যদি বিস্তারিত ব্যাখা করেন।“ তপসির চাইল আতিফ।
“জিহাদের ব্যাপারে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকিদাহ হলো, ইসলামি পরিভাষায় আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে এবং একমাত্র আল্লাহকে খুশি করার জন্য কুফরি তথা ইসলামবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে মুমিনের সকল প্রচেষ্টা অর্থাৎ দৈহিক, মানসিক, আর্থিক, জ্ঞানবুদ্ধি নিয়োজিত করাকে ‘জিহাদ’ বলে। অন্য অর্থে স্বীয় নফসের বিরুদ্ধে, শয়তানের বিরুদ্ধে, ফাসেকদের বিরুদ্ধে এবং মুশরিক-মুনাফেক-কাফেরদের বিরুদ্ধে জান-মাল ও জবান দিয়ে লড়াই করাকে ‘জিহাদ’ বলে। মহান আল্লাহ বলেন, “আর (তোমরা) তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক যতক্ষণ না ফিতনা (কুফর-শিরক) শেষ হয়ে যায় এবং আল্লাহর দ্বীন সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর জন্যেই হয়ে যায়। (সূরা আনফাল, আয়াত ৩৯)। মনে রেখো, মুসলমানদের ইমামের নেতৃত্বে কিয়ামত পর্যন্ত জিহাদের বিধান বলবৎ থাকবে।“ প্রায় এক নিশ্বাসে কথাটা বললেন গাফফার খাঁ। একমুখ সুন্নত দাড়ি। খুঁট করে চাঁছা গোঁফ। মাথায় ফেজ টুপি। পরনে ইয়া বড় ধবধবে সাদা আলখাল্লা। পায়ের গোড়ালির ওপর পর্যন্ত ঝুলছে। সারা গা থেকে আতরের গন্ধ ম ম করে ছুটছে। ধবধবে ফর্সা মুখ। টানা চোখ। মেহদি করা বাদামি বাবরি চুল। ঢেঁড়স ফালির মতো নাক। হাজি গাফফার আই এস আই এস এর দক্ষিণ-পূর্ব এরিয়ার অন্যতম সংগঠক। তার হাতে আই এস-এর অনেক কাজ অর্পিত।
“হুজুর, মুজাহিদরা শহীদ হলে মৃত্যুর পর কী সম্মান পাবেন?” মনের খুঁতখুঁতানিটা প্রকাশ করল আতিফ।

চলবে...

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৯

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৮

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৭

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৬

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৫

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৪

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১

এসএন 

Header Ad
Header Ad

অবশেষে সরিয়ে দেওয়া হলো মাউশির বিতর্কিত ডিজিকে

অধ্যাপক ড. এহতেসাম উল হক ও মাউশির লোগো। ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষক নেতাদের আন্দোলন ও গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক (ডিজি) পদ থেকে অধ্যাপক ড. এহতেসাম উল হককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি শিক্ষা ক্যাডারের ১৪তম বিসিএসের কর্মকর্তা এবং পটুয়াখালী সরকারি কলেজের অধ্যাপক ছিলেন।

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সম্প্রতি তার বিতর্কিত কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর তাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করে মাউশিতে সংযুক্ত করা হয়েছে। এদিকে, নতুন মহাপরিচালক হিসেবে অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খানকে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব মো. মাহবুব আলম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খানের এই দায়িত্ব কেবল সাময়িক, যা পদোন্নতি হিসেবে গণ্য হবে না। পরবর্তীতে নিয়মিত নিয়োগের মাধ্যমে মহাপরিচালক নিয়োগ হলে এই চলতি দায়িত্ব বাতিল হয়ে যাবে।

অধ্যাপক এহতেসাম উল হকের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এর আগে তিনি বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ থাকাকালীন শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়ন চালানোর অভিযোগে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। অভিযোগ রয়েছে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তথ্য তিনি পুলিশের কাছে সরবরাহ করেছিলেন।

২০২৩ সালের ৫ আগস্ট তার অপসারণের দাবিতে কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে। দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার অপসারণের দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ২০২১ সালের জুন মাসে বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে যোগদানের পর থেকে তিনি নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে যান। তিনি বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয় সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠ ছিলেন।

অভিযোগ রয়েছে, অধ্যক্ষ থাকাকালীন তিনি শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন এবং আন্দোলনে অসহযোগিতা করতেন। এমনকি কলেজের গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতেন, যা তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনও ব্যবহার করতেন। তিনি কলেজের বিদ্যুৎ ব্যবহার করে নিজের বাসায় গ্রিল নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ করিয়েছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে চাকরি খেয়ে ফেলার হুমকি দিতেন এবং বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) খারাপ করে দেওয়ার ভয় দেখাতেন। এছাড়া, চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন না দিয়ে বিদায় করে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

ডিজি পদ থেকে এহতেসাম উল হককে অপসারণের খবরে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, একজন বিতর্কিত ব্যক্তি শিক্ষাখাতের এত বড় দায়িত্বে থাকতে পারেন না। তার অপসারণের মাধ্যমে প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রতি সরকারের সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে।

Header Ad
Header Ad

২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ৩৩ ডিসি ওএসডি

ছবি: সংগৃহীত

২০১৮ সালের বিতর্কিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ৩৩ জন জেলা প্রশাসককে (ডিসি) বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত ছয়টি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিতর্কিত নির্বাচনে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনের কারণে এই কর্মকর্তাদের ওএসডি করা হয়েছে। এর আগে একই কারণে আরও ১২ জন কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছিল।

ওএসডি হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের পরিচালক (যুগ্মসচিব) কবীর মাহমুদ, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. মাহমুদুল আলম, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. আবুল ফজল মীর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের সদস্য-পরিচালক (যুগ্মসচিব) মঈনউল ইসলাম, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য (যুগ্মসচিব) মো. ওয়াহিদুজ্জামান, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (সংযুক্ত) এ কে এম মামুনুর রশিদ এবং বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বাপবিবো) সদস্য (যুগ্মসচিব) ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম।

এছাড়া তালিকায় রয়েছেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব কাজী আবু তাহের, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সদস্য (যুগ্মসচিব) মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব (সংযুক্ত) আনার কলি মাহবুব, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য (যুগ্মসচিব) সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী, কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব সাবিনা ইয়াসমিন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আতাউল গনি এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (সংযুক্ত) আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন।

এছাড়া, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব এ জেড এম নুরুল হক, বাংলাদেশ রাবার বোর্ডের পরিচালক (যুগ্ম-সচিব) এস এম আজিয়র রহমান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সচিব (যুগ্ম-সচিব) মো. মাসুদ আলম সিদ্দিক এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম-সচিব গোপাল চন্দ্র দাশসহ আরও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা রয়েছেন।

প্রসঙ্গত, বিতর্কিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই ওই সময়ের রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এবার সেই নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের পর্যায়ক্রমে ওএসডি করা হচ্ছে বলে মনে করছেন প্রশাসনিক বিশ্লেষকরা।

Header Ad
Header Ad

ট্রাম্পের বিস্ফোরক দাবি: চলমান যুদ্ধের সূচনা ইউক্রেনই করেছিল

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য ইউক্রেনকেই দায়ী করে নতুন বিতর্ক উসকে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন রাজনীতিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে পরিচিত ট্রাম্প এবার ইউক্রেনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন, চলমান যুদ্ধের সূচনা ইউক্রেনই করেছিল।

মঙ্গলবার (স্থানীয় সময়) ফ্লোরিডার মার-আ-লাগোতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির প্রতি কঠোর মনোভাব প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ইউক্রেনে একটি নতুন নির্বাচন হওয়া উচিত। বিশ্লেষকদের মতে, এটি জেলেনস্কিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনারই ইঙ্গিত।

ট্রাম্প আরও বলেন, ইউক্রেনে দীর্ঘদিন ধরে কোনো নির্বাচন হয়নি এবং সেখানে সামরিক আইন চলছে। তার দাবি, জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা মাত্র চার শতাংশে নেমে গেছে, আর দেশটি ধ্বংসের পথে। যদিও যুদ্ধকালীন সময়ে নির্ভরযোগ্য জনমত জরিপ পাওয়া কঠিন, তবে বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা ট্রাম্পের দাবির মতো এতটা কমেনি।

এছাড়া, ইউক্রেনের নির্বাচন প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, "তারা কি জনগণের মতামত নিয়েছে? তারা আলোচনার টেবিলে বসতে চায়, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সেখানে কোনো নির্বাচন হয়নি।"

প্রসঙ্গত, ইউক্রেনে ২০২৪ সালের এপ্রিলে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও দেশটির সংবিধান অনুযায়ী, যুদ্ধকালীন সময়ে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই মন্তব্য কৌতুকপূর্ণ, কারণ তিনি নিজেই ২০২০ সালের মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।

ট্রাম্প আরও দাবি করেন, ইউক্রেন চাইলে যুদ্ধ বন্ধ করতে পারতো এবং তাদের উচিত ছিল রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতায় যাওয়া। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এর অর্থ হলো—ইউক্রেনকে হয় রাশিয়ার মিত্র সরকার গঠনের প্রস্তাবে রাজি হতে হতো, নয়তো প্রতিরোধ ছেড়ে দিয়ে আত্মসমর্পণ করতে হতো।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের সাম্প্রতিক অবস্থান ইঙ্গিত দেয় যে, তিনি পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ইউক্রেনকে সমর্থন না দিয়ে বরং রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি বিতর্কিত শান্তিচুক্তির দিকে এগোতে পারেন, যা পুতিনের জন্য বড় ধরনের কূটনৈতিক জয় হিসেবে বিবেচিত হবে।

সূত্র: সিএনএন

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

অবশেষে সরিয়ে দেওয়া হলো মাউশির বিতর্কিত ডিজিকে
২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ৩৩ ডিসি ওএসডি
ট্রাম্পের বিস্ফোরক দাবি: চলমান যুদ্ধের সূচনা ইউক্রেনই করেছিল
ডিবির সাবেক প্রধান হারুনের ১০০ বিঘা জমি, ৫ ভবন ও ২ ফ্ল্যাট ক্রোকের নির্দেশ
দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন রেখা গুপ্তা, বিজেপির সিদ্ধান্তে চমক
একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতির শহীদ মিনারে না যাওয়ার আহ্বান
নামাজি জীবনসঙ্গী খুঁজছেন আইশা খান
গাইবান্ধায় গাঁজাসহ আটক এএসআইকে কারাগারে প্রেরণ
উপদেষ্টাদের মিটিংয়ে কোন প্রটোকলে গিয়েছিলেন হাসনাত-পাটোয়ারী: ছাত্রদল সেক্রেটারি
সরকারে থেকে ‘নতুন দল’ গঠন করলে মেনে নেওয়া হবে না: মির্জা ফখরুল
হোস্টিং সামিট ২০২৫ অনুষ্ঠিত
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির উদ্বোধনী ম্যাচে পাকিস্তানকে ৩২১ রানের বড় লক্ষ্য দিলো নিউজিল্যান্ড
বৈষম্যবিরোধী নামধারী শীর্ষ নেতার নির্দেশে কুয়েটে ছাত্রদলের ওপর হামলা: রাকিব
যান্ত্রিক ত্রুটিতে আবারও বন্ধ বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র
কুবিতে ছাত্র সংসদের দাবিতে মানববন্ধন ও সন্ত্রাসবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল
২২০ জনকে নিয়োগ দেবে সমরাস্ত্র কারখানা, এসএসসি পাসেও আবেদন
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে ২ দিনব্যাপি খামারি প্রশিক্ষণ
সবার সাত দিন কারাগারে থাকা উচিত: আদালতে পলক
বিপ্লবী সরকারের ডাক থেকে সরে এলেন কাফি  
নাঈম ভাই হেনা কোথায়?: ‘তুই অনেক দেরি করে ফেলেছিস বাপ্পা’