বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ৬ ফাল্গুন ১৪৩১
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-১০

স্নানের শব্দ

কয়েকদিন ধরে এই অচেনা নম্বর থেকে ফোনটা আসছে। ধরলেই নিঃশব্দে কেটে দিচ্ছে। আজকে অফিসে যাওয়ার পথে গাড়িতে আবার রিং বাজতে শুরু করলে, ‘ধরব না’ ‘ধরব না’— ভাবতে ভাবতেই শেষ পর্যন্ত ফোনটা ধরে শবনম। ওই পাশে কারো গভীর নিশ্বাসের শব্দ তার কানে এসে বাড়ি খায়।
‘কে বলছেন?’
‘জ্বি, আমাকে আপনি চিনবেন না। .. কি যদি অভয় দেন একটা কথা বলতে চাই। .. আসলে অনেক দিন ধরেই বলতে চাচ্ছি, কিন্তু কীভাবে বলব, ঠিক বুঝতে পারছি না। মানে সাহস পাচ্ছি না।’

ওই পাশের ভণিতা শুনে শবনম অস্ফুট পুরুষ কণ্ঠের বয়স আন্দাজ করার চেষ্টা করে। মনে হচ্ছে অল্পবয়সী একটা ছেলে। যার কথা বলার ভঙ্গীতে নার্ভাস ভাব স্পষ্ট। যেন, ‘বলবো কি বলবো না’- এমন লজ্জ্বা ও দ্বিধায় দোদুল্যমান এক নবীন কিশোর।
‘আসলে আমি জানি, আপনি আমার চেয়ে বয়সে অনেক বড় হবেন, তবু তবু আপনাকে আমার ভাল লাগে, এই কথাটা জানাতে চাই।’
শবনম হাসবে, না রাগ করবে, ভেবে পায় না।
‘মানে, আমি কি মাঝে মাঝে আপনাকে ফোন করতে পারি, যদি অনুমতি দেন, মানে আপনার বন্ধুত্ব ..’

এবার আর পুরোটা শোনার প্রয়োজন মনে করে না শবনম, ওই পাশের বাক্য সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই বেরসিকের মতো কড়া গলায় বলে,
‘না। শোনো, আর কোনদিন আমাকে ফোন করবে না। এত সাহস হয় কি করে? আচ্ছা, এই কে তুমি, বলো তো, কি নাম তোমার?’
ফোনটা তখনই কেটে যায়। অথবা ওই পাশ থেকে কেটে দেওয়া হয়।

ব্যাগের পকেটে নিজের ফোন সেট রাখতে গিয়ে ঠোটের কোণায় মৃদু একটা হাসি ফুটে ওঠে মিলিয়ে যায় শবনমের। ‘যৌবনের শেষে শুভ্র শরৎকালের’ মতো এই উনপঞ্চাশ বছর বয়সেও নতুন বন্ধুত্বের প্রস্তাব! তার মানে কি এই, যে তার আকর্ষণ বা আবেদন একেবারে ফুরিয়ে যায়নি? (তারেক শুনলে হয়তো গত রাতের উদাহরণ টেনে বলবে, তুমি যে অনন্তযৌবনা, সে তো আমি চিরকালই জানি!) তবে এই ভাবনায় এবার নিজেই নিজের উপর বিরক্ত হয় শবনম। যে যাই বলুক তার নিজের চেয়ে আর কে বেশি জানে যে, এই শরীর ও মনে দিনের শেষে মন্দমন্থর পায়ে দিন শেষে সন্ধ্যা নামছে। এখন নতুন পরিচয়, নতুন সম্পর্কের এইসব আশ্বাস বার্তা বৃথা। এইক্ষণে আর কোনোভাবেই ‘নতুন প্রণয়ের মুগ্ধ দৃষ্টি আকর্ষণ করা’ সম্ভব নয়, এখন ধীরে ধীরে সমস্ত বাসনা ও আকাঙ্ক্ষার অবসান ঘটানোর সময়। আহা, ওই মোহগ্রন্থ’ নওল কিশোর বা যুবক জানে না, এইসব অকিঞ্চিতকর অনুভূতি ভাসতে থাকা ধোঁয়ার মতো, বাস্তবের প্রবল বাতাস এসে এক ধাক্কায় এই কোমল হৃদয়াবেগ ধুয়ে মুছে সাফ করে দিয়ে যায়।

শবনমের সেই কিশোরী বয়সে প্রথম প্রেমের চিঠি পাওয়ার থরো থরো কম্পিত দিনগুলির কথা মনে পড়ে। পাপড়ি মুখরিত রঙিন ফুলের জলছাপ দেওয়া হাল্কা নীল রঙের প্যাডে সবুজ কালির বলপেন দিয়ে খুব যত্ন করে লেখা ছিল সেই চিঠি। ভালবাসার বাসনা প্রকাশের পাশাপাশি অনেকগুলো প্রচলিত বাংলা সিনেমার গানের কলি উদ্ধৃত করেছিল পত্রলেখক। শবনমের এখনো মনে আছে সেই লাইনগুলো-
‘এ আকাশকে সাক্ষী রেখে, এ বাতাসকে সাক্ষী রেখে তোমাকে বেসেছি ভালো, তুমি মোর নয়নেরই আলো’
আরেকটা গানের উল্লেখ ছিল চিঠিতে, আরও আগ্রাসী মনোভাবের, সিনেমাতে সম্ভবত নায়ক ফারুক লিপসিং করে প্রেমিকার উদ্দেশে গাইতো গানটি- ‘মরণের পরে যদি জীবন থাকে, সে জীবনে প্রিয়া তুমি আমার হবে’

ইহজীবনে প্রেমিকাকে পাওয়ার আশাবাদ দিয়ে মৃত্যু পরবর্তী জীবনে তাকে কেনো কাছে পাওয়ার প্রত্যাশা করেছিল সেই কিশোর, কে জানে! অবশ্য তার তো ওই চিঠি পাঠানো পর্যন্তই সার, তারপর সে কোথায় যেন লুকিয়ে পড়েছিল। কখনোই প্রকাশ্যে সামনে এসে দাঁড়ায়নি সেই পত্র লেখক। হয়ত সাহস সঞ্চয় করে উঠতে পারেনি, হয়ত সংকোচ কাটাতে পারেনি, হয়ত দ্বিধা আর লজ্জ্বা তাড়াতে পারেনি। হয়ত সেজন্যই মৃত্যু পরের অনিশ্চিত জীবনের প্রতিই আস্থা রেখেছিল সে!

মৌসুমি যেমন একবার বলেছিল, কৈশোর যৌবনের প্রেম হচ্ছে এক ধরনের মায়া, ভ্রান্তি , ইলিউশান। ইলেকট্রিক শক খাওয়ার মতো হঠাৎ একটা ধাক্কা। বিনা মেঘে আসা বৃষ্টির মতো আকস্মিক আর গভীর ঘুমের মধ্যে দেখা স্বপ্নের মত তীব্র কিন্তু ক্ষণস্থায়ী।

ফোনটা আবার বাজে। আবার কি ওই ছেলেটা নাকি? না, এবার কি আশ্চর্য ফোন করেছে মৌসুমী।
‘তোমার কথাই ভাবছিলাম দোস্ত, একটা কারণে..’
কিছুক্ষণ আগে অপরিচিত যুবকের ফোন কলের বিষয়টি হাসতে হাসতে মৌসুমীকে জানায় শবনম।

‘আরে, এটাতো হাসির বিষয় না। এই বয়সে কেউ যদি তোমার প্রতি আকর্ষণ বোধ করে তাহলে বুঝতে হবে, সে তোমার রূপের না, তোমার গুণ বা ব্যক্তিত্বের প্রেমে পড়েছে। আবেগের চেয়ে এই ধরনের সম্পর্কে শ্রদ্ধা, সম্মান, একটা শান্ত সমাহিত ভাব বিরাজ করে। আর কৈশোর যৌবন কোনো ব্যাপার না, প্রেম যেকোনো বয়সেই হতে পারে..’
‘থাক থাক ! বহুত বলছো, আমি কাঠখোট্টা মানুষ, ওসব আমার পোষাবে না।’
‘আচ্ছা, ঠিকাছে, যে জন্য ফোন করছি, কালকে সকালে প্রেস ক্লাবে আমরা কয়েকটা নারী সংগঠন মিলে একটা সমাবেশ করবো। ইস্যু হচ্ছে, ওই যে এখনকার মি টু কে কেন্দ্র করে কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি যৌন হয়রানি.. তো তুমি পারবা নাকি আসতে? অনেককেই ডাকছি আমরা, তুমি তো ভাল পজিশনে আছো, একজন সফল নারী। তুমি এসে কয়েকটা কথা বললে ভাল হয়।’
মৌসুমী এক নিশ্বাসে বলে যায়।
‘ইস্যুটা তো খুবই ভাল, দরকারি, কিন্তু আমার সমস্যা আছে। আমাদের অফিসেও কিছুদিন আগে এরকম একটা কেস ঘটেছে..’
‘হ্যাঁ, জানি তো, সেজন্যই তো বলছি।’
মৌসুমী বেশ জোর দিয়ে বললে শবনম একটু ইতস্তত করে,
‘দেখো বন্ধু জলে বাস করে কুমিরের সাথে দ্বন্দ্ব করা কী সম্ভব? এমনিতেই অফিসে আমার বিরোধী একটা গ্রুপ গুজব ছড়াচ্ছে যে আমি নাকি ওই মেয়েদের দিয়ে সিইওর বিরুদ্ধে এসব করিয়েছি, এখন যদি আবার তোমাদের সাথে যোগ দেই, আর যদি সেসব নিউজ হয়, হবে তো বটেই, তখন বুঝতে পারছো, ওরা আমার বিরুদ্ধে রং চড়িয়ে আরও নানা কথা ছড়াবে। এই মুহূর্তে আসলে আমি ঝামেলাটা নিতে চাচ্ছি না..’
‘কী যে বলো, ঝামেলা কেনো হবে! তোমার নিজস্ব মতামত, স্বাধীন একটা অবস্থান থাকতে পারে না! চাকরি করো মানে কি দাসখত দিয়ে বসছো নাকি? খারাপ লোকেরা উল্টা পাল্টা কথা বলবেই, তাতে দমে গেলে চলবে? প্রতিবাদ করতেই হবে, পিছিয়ে আসার কোনো সুযোগ নাই। নইলে অপরাধীরা প্রশ্রয় পেয়ে যাবে!’

বিপ্লবী নেতার মতো ফোনের অন্য প্রান্তে মৌসুমী জোরালো বক্তৃতা ঝাড়ে। ওকে বাস্তব অবস্থাটা বোঝানোর চেষ্টা বৃথা শবনম বুঝতে পারে। বাস্তব বিবেচনাবোধের চাইতে এখন ন্যায়ের প্রশ্নে অনড় তার অবস্থান, ফলে শিশুকে প্রবোধ দেওয়ার মতো শবনম তার কথায় সায় দেয়।
‘তাতো ঠিকই বলেছ। দেখি, আমি আসব সুযোগ পেলে, জরুরি মিটিং সিটিং না থাকলে.. চলে আসব।’

মৌসুমী এবার সন্তুষ্ট হয়। কিন্তু শবনম জানে, এই সমাবেশে যোগ দিলে অফিশিয়ালি সেটা তার জন্য আত্মঘাতী হতে পারে। সমাবেশে নিশ্চয়ই নির্ঝর চৌধুরীর ঘটনাটাও আলোচনায় আসবে। স্বাভাবিকভাবে কোম্পানির নাম ধামও তখন সামনে আসবে। এইসব জায়গায় কেউ তো আর রেখে ঢেকে কথা কইবে না। সুযোগসন্ধানীরা তখন হয়ত এটাকেই পূঁজি করবে। শত্রুতা করে ম্যানেজমেন্টকে গিয়ে জানিয়ে আসবে যে শবনমই ওই সমাবেশের মূল হোতা। ইচ্ছাকৃতভাবে কোম্পানির ভাবমূর্তি নষ্ট করছে সে। দুষ্ট লোকেরা কে যে কোনদিকে বসে কী ঘোট পাকাচ্ছে কে জানে? অনেকের কাছে মনে হতে পারে এসব শবনমের অতিভাবনা বা অতি সতর্কতা, কিন্তু শবনম তো জানে প্রতিনিয়ত এরকম সতর্ক পদক্ষেপই তাকে এখনকার পর্যায়ে নিয়ে আসতে সাহায্য করেছে।

মাঝে মাঝে তার প্রাণ মন যে একসঙ্গে বিদ্রোহ করে না, তা তো নয়, অসহায়ও লাগে, রাগ হয় অবস্থার ওপর, বিরক্তি আসে নিজের অতি সাবধানী মনের উপর। কিছু একটা করতে চায় সে, সহবন্ধুদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে প্রতিবাদ করতে চায় কিন্তু আবার মনে হয় এতদিন ধরে তিল তিল করে গড়ে তোলা তার ক্যারিয়ার একটা সামান্য ভুল পদক্ষেপে ধসে পড়লে এই সমাজে তার পাশে এসে দাঁড়াবার মত কেউই থাকবে না। তার এতদিনের অর্জিত সুনামের কোনো মূল্যায়নই হবে না। আজ উচ্চ পদে ভাল অবস্থানে থেকে স্বাবলম্বী ও আত্মনির্ভরশীল হতে পেরেছে বলেই না এই নিষ্ঠুর সমাজে সম্মানের সঙ্গে মর্যাদা নিয়ে মাথা উঁচু করে টিকে আছে। শবনমের ভেতর থেকে আরেকটা মন চোখ রাঙিয়ে প্রশ্ন করে, নিরাপদ বৃত্তের ভেতরে এভাবে আটকে থাকা তোমার কাছে সম্মানের হলো? এটা তো পরিস্থিতির সামনে কোনো আপত্তি না তুলে বোবা হয়ে, হাত পা ছেড়ে দিয়ে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ।

‘না, না, এভাবে বিষয়টা ব্যাখ্যা করা যাবে না। প্রতিবাদেরও নানা ধরণ আছে, সব সময় যে মাঠে গিয়ে সভা সমাবেশ করে প্রতিবাদ করতে হবে হবে এমন তো নয়.. ‘শবনম তার ভেতরের মনটার সঙ্গে অবিরাম তর্ক চালিয়ে যায়। ‘আমি সবসময়ই সব ধরনের নিপীড়ন নির্যাতনের বিরোধী। অফিসের ভেতরেও তো এক ধরনের সংগ্রাম আমি এককভাবে করেই যাচ্ছি। করছি না? এই যে আমি এত প্রতিকূল পরিস্থিতিতে টিকে আছি, সেটাও তো এক ধরনের প্রতিবাদ। এখন হঠকারী কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে পরে অযথা বিপদে পড়লে কে আমাকে উদ্ধার করবে, কে এসে পাশে দাঁড়াবে? কেউ না।
হ্যাঁ, অনেকেই হয়ত এটাকে আপোষ বলবে, বলবে ক্যারিয়ার বাঁচানোর ধান্দা। কিন্তু শবনম জানে, লড়াইয়ের মাঠে সম্মুখ সমরে নামার যোগ্যতা সবার থাকে না। কেউ কেউ আছে যুদ্ধের মাঠে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে জেনেও বুক চিতিয়ে সামনে এগিয়ে যায়। তারাই হয়ত প্রকৃত বীর, তারাই পরিবর্তনের নায়ক, তারাই নমস্য। তাদের জন্য শবনমের শ্রদ্ধা ও সালাম অশেষ। নিজের এই না-পারা টুকু, এই সীমাবদ্ধতাটুকু অতিক্রমের সুযোগ তার এই জীবনে কোনোদিন আসবে কি না জানে না শবনম।

চলবে…

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

স্নানের শব্দ: পর্ব-৯

স্নানের শব্দ: পর্ব-৮

Header Ad
Header Ad

অবশেষে সরিয়ে দেওয়া হলো মাউশির বিতর্কিত ডিজিকে

অধ্যাপক ড. এহতেসাম উল হক ও মাউশির লোগো। ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষক নেতাদের আন্দোলন ও গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক (ডিজি) পদ থেকে অধ্যাপক ড. এহতেসাম উল হককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি শিক্ষা ক্যাডারের ১৪তম বিসিএসের কর্মকর্তা এবং পটুয়াখালী সরকারি কলেজের অধ্যাপক ছিলেন।

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সম্প্রতি তার বিতর্কিত কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর তাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করে মাউশিতে সংযুক্ত করা হয়েছে। এদিকে, নতুন মহাপরিচালক হিসেবে অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খানকে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব মো. মাহবুব আলম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খানের এই দায়িত্ব কেবল সাময়িক, যা পদোন্নতি হিসেবে গণ্য হবে না। পরবর্তীতে নিয়মিত নিয়োগের মাধ্যমে মহাপরিচালক নিয়োগ হলে এই চলতি দায়িত্ব বাতিল হয়ে যাবে।

অধ্যাপক এহতেসাম উল হকের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এর আগে তিনি বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ থাকাকালীন শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়ন চালানোর অভিযোগে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। অভিযোগ রয়েছে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তথ্য তিনি পুলিশের কাছে সরবরাহ করেছিলেন।

২০২৩ সালের ৫ আগস্ট তার অপসারণের দাবিতে কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে। দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার অপসারণের দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ২০২১ সালের জুন মাসে বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে যোগদানের পর থেকে তিনি নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে যান। তিনি বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয় সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠ ছিলেন।

অভিযোগ রয়েছে, অধ্যক্ষ থাকাকালীন তিনি শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন এবং আন্দোলনে অসহযোগিতা করতেন। এমনকি কলেজের গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতেন, যা তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনও ব্যবহার করতেন। তিনি কলেজের বিদ্যুৎ ব্যবহার করে নিজের বাসায় গ্রিল নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ করিয়েছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে চাকরি খেয়ে ফেলার হুমকি দিতেন এবং বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) খারাপ করে দেওয়ার ভয় দেখাতেন। এছাড়া, চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন না দিয়ে বিদায় করে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

ডিজি পদ থেকে এহতেসাম উল হককে অপসারণের খবরে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, একজন বিতর্কিত ব্যক্তি শিক্ষাখাতের এত বড় দায়িত্বে থাকতে পারেন না। তার অপসারণের মাধ্যমে প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রতি সরকারের সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে।

Header Ad
Header Ad

২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ৩৩ ডিসি ওএসডি

ছবি: সংগৃহীত

২০১৮ সালের বিতর্কিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ৩৩ জন জেলা প্রশাসককে (ডিসি) বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত ছয়টি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিতর্কিত নির্বাচনে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনের কারণে এই কর্মকর্তাদের ওএসডি করা হয়েছে। এর আগে একই কারণে আরও ১২ জন কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছিল।

ওএসডি হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের পরিচালক (যুগ্মসচিব) কবীর মাহমুদ, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. মাহমুদুল আলম, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. আবুল ফজল মীর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের সদস্য-পরিচালক (যুগ্মসচিব) মঈনউল ইসলাম, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য (যুগ্মসচিব) মো. ওয়াহিদুজ্জামান, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (সংযুক্ত) এ কে এম মামুনুর রশিদ এবং বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বাপবিবো) সদস্য (যুগ্মসচিব) ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম।

এছাড়া তালিকায় রয়েছেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব কাজী আবু তাহের, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সদস্য (যুগ্মসচিব) মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব (সংযুক্ত) আনার কলি মাহবুব, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য (যুগ্মসচিব) সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী, কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব সাবিনা ইয়াসমিন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আতাউল গনি এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (সংযুক্ত) আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন।

এছাড়া, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব এ জেড এম নুরুল হক, বাংলাদেশ রাবার বোর্ডের পরিচালক (যুগ্ম-সচিব) এস এম আজিয়র রহমান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সচিব (যুগ্ম-সচিব) মো. মাসুদ আলম সিদ্দিক এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম-সচিব গোপাল চন্দ্র দাশসহ আরও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা রয়েছেন।

প্রসঙ্গত, বিতর্কিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই ওই সময়ের রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এবার সেই নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের পর্যায়ক্রমে ওএসডি করা হচ্ছে বলে মনে করছেন প্রশাসনিক বিশ্লেষকরা।

Header Ad
Header Ad

ট্রাম্পের বিস্ফোরক দাবি: চলমান যুদ্ধের সূচনা ইউক্রেনই করেছিল

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য ইউক্রেনকেই দায়ী করে নতুন বিতর্ক উসকে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন রাজনীতিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে পরিচিত ট্রাম্প এবার ইউক্রেনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন, চলমান যুদ্ধের সূচনা ইউক্রেনই করেছিল।

মঙ্গলবার (স্থানীয় সময়) ফ্লোরিডার মার-আ-লাগোতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির প্রতি কঠোর মনোভাব প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ইউক্রেনে একটি নতুন নির্বাচন হওয়া উচিত। বিশ্লেষকদের মতে, এটি জেলেনস্কিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনারই ইঙ্গিত।

ট্রাম্প আরও বলেন, ইউক্রেনে দীর্ঘদিন ধরে কোনো নির্বাচন হয়নি এবং সেখানে সামরিক আইন চলছে। তার দাবি, জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা মাত্র চার শতাংশে নেমে গেছে, আর দেশটি ধ্বংসের পথে। যদিও যুদ্ধকালীন সময়ে নির্ভরযোগ্য জনমত জরিপ পাওয়া কঠিন, তবে বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা ট্রাম্পের দাবির মতো এতটা কমেনি।

এছাড়া, ইউক্রেনের নির্বাচন প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, "তারা কি জনগণের মতামত নিয়েছে? তারা আলোচনার টেবিলে বসতে চায়, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সেখানে কোনো নির্বাচন হয়নি।"

প্রসঙ্গত, ইউক্রেনে ২০২৪ সালের এপ্রিলে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও দেশটির সংবিধান অনুযায়ী, যুদ্ধকালীন সময়ে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই মন্তব্য কৌতুকপূর্ণ, কারণ তিনি নিজেই ২০২০ সালের মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।

ট্রাম্প আরও দাবি করেন, ইউক্রেন চাইলে যুদ্ধ বন্ধ করতে পারতো এবং তাদের উচিত ছিল রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতায় যাওয়া। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এর অর্থ হলো—ইউক্রেনকে হয় রাশিয়ার মিত্র সরকার গঠনের প্রস্তাবে রাজি হতে হতো, নয়তো প্রতিরোধ ছেড়ে দিয়ে আত্মসমর্পণ করতে হতো।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের সাম্প্রতিক অবস্থান ইঙ্গিত দেয় যে, তিনি পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ইউক্রেনকে সমর্থন না দিয়ে বরং রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি বিতর্কিত শান্তিচুক্তির দিকে এগোতে পারেন, যা পুতিনের জন্য বড় ধরনের কূটনৈতিক জয় হিসেবে বিবেচিত হবে।

সূত্র: সিএনএন

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

অবশেষে সরিয়ে দেওয়া হলো মাউশির বিতর্কিত ডিজিকে
২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ৩৩ ডিসি ওএসডি
ট্রাম্পের বিস্ফোরক দাবি: চলমান যুদ্ধের সূচনা ইউক্রেনই করেছিল
ডিবির সাবেক প্রধান হারুনের ১০০ বিঘা জমি, ৫ ভবন ও ২ ফ্ল্যাট ক্রোকের নির্দেশ
দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন রেখা গুপ্তা, বিজেপির সিদ্ধান্তে চমক
একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতির শহীদ মিনারে না যাওয়ার আহ্বান
নামাজি জীবনসঙ্গী খুঁজছেন আইশা খান
গাইবান্ধায় গাঁজাসহ আটক এএসআইকে কারাগারে প্রেরণ
উপদেষ্টাদের মিটিংয়ে কোন প্রটোকলে গিয়েছিলেন হাসনাত-পাটোয়ারী: ছাত্রদল সেক্রেটারি
সরকারে থেকে ‘নতুন দল’ গঠন করলে মেনে নেওয়া হবে না: মির্জা ফখরুল
হোস্টিং সামিট ২০২৫ অনুষ্ঠিত
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির উদ্বোধনী ম্যাচে পাকিস্তানকে ৩২১ রানের বড় লক্ষ্য দিলো নিউজিল্যান্ড
বৈষম্যবিরোধী নামধারী শীর্ষ নেতার নির্দেশে কুয়েটে ছাত্রদলের ওপর হামলা: রাকিব
যান্ত্রিক ত্রুটিতে আবারও বন্ধ বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র
কুবিতে ছাত্র সংসদের দাবিতে মানববন্ধন ও সন্ত্রাসবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল
২২০ জনকে নিয়োগ দেবে সমরাস্ত্র কারখানা, এসএসসি পাসেও আবেদন
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে ২ দিনব্যাপি খামারি প্রশিক্ষণ
সবার সাত দিন কারাগারে থাকা উচিত: আদালতে পলক
বিপ্লবী সরকারের ডাক থেকে সরে এলেন কাফি  
নাঈম ভাই হেনা কোথায়?: ‘তুই অনেক দেরি করে ফেলেছিস বাপ্পা’