বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ৬ ফাল্গুন ১৪৩১
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-৯

স্নানের শব্দ

মায়ের মৃত্যু শোক এখনো পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি তারেক। মাতৃবিয়োগের যে প্রচণ্ড শক আর শোক, এক জীবনে তার হয়ত কোনো সান্ত্বনাও হয় না। মা চলে যাবার পর থেকে একটা গভীর শূন্যতার হাহাকার যেন প্রচণ্ডভাবে ঘিরে ধরেছে তাকে। যেন এক ঘোর, এক মায়া, এক অদ্ভুত তমসায় সে অনবরত ঘুরপাক খাচ্ছে। মা ছিল, এখন নেই, মানে আর কখনোই তাকে পাওয়া যাবে না, ছোঁয়া যাবে না, দেখা যাবে না, শোনা যাবে না। মা এখন শুধুই কিছু স্মৃতি আর ছবির সমাহার। আগে থেকেই বিশ্বাসী মানুষ তারেক, এখন নিয়মিতই নামাজ পড়ে, সময় মত মসজিদে গিয়ে যেন ভুলে থাকতে চায় মা হারানোর কষ্ট, সেই সঙ্গে দৈনন্দিন ইহলৌকিক কাজ কর্ম। তেমন বৈষয়িক সে আগেও ছিল না, এখন যেন আরও উদাসীন।

দাড়ি কামানোর মত প্রাত্যহিক কর্মটাও ইদানিং ছেড়ে দিয়েছে সে। ফলে এই পনের দিনেই সাদা পাকা অবিন্যস্ত দাড়ি আঙ্গুরলতার মত কয়েক ইঞ্চি বেড়ে নিচের দিকে নেমে এসেছে।
‘দাড়িটা রেখেই দেই, কি বলো?’
পাঁচ আঙ্গুলে বাড়ন্ত দাড়িতে বিলি কাটতে কাটতে শবনমকে উদ্দেশ করে বলে সে।
‘রাখতে চাইলে রাখো। তোমার ইচ্ছা-অনিচ্ছা নিয়ে আমি কোনো কথা বলেছি কখনো?’
‘না, তা বলোনি। তবু তোমার মতামতটা শুনি.. ’
তারেক ঘরের কোণায় রাখা ড্রেসিং টেবিলের লম্বাটে আয়নার কাছে গিয়ে ডানে বামে সামনে পেছনে ঘাড় নাড়িয়ে বিভিন্নভাবে নিজেকে দেখে।
‘দাড়িতে আমাকে কেমন লাগবে, মানাবে কিনা, আবার বেশি বুড়ো বুড়ো দেখাবে কি না .. ’

সাতান্ন বছর বয়সী তারেকের এই সৌন্দর্য সচেতনতায় শবনমের ঠোটের কোণায় মৃদু হাসি ফুটে উঠে মিলিয়ে যায়। অফিস থেকে ফিরে কাপড় বদলে সে বিছানায় কাত হয়ে শুয়ে টিভি দেখছিল। এবার উঠে বসে বলে,
‘তা ওরকম সাদা দাড়ি রাখলে আগের চাইতে একটু বয়স্ক তো দেখাবেই, খানিকটা ভার ভারিক্কীও লাগবে অবশ্য.. আগে তো মানুষ চাচা ডাকতো এবার দাদাজানও ডাকতে পারে। ভেবে দেখো..’
এবার তারেকের ধর্ম বোধের কাছে সৌন্দর্য বোধ হার মানে। আয়নায় চোখ রেখেই সে বলে,
‘নবিজীর সুন্নত। রেখে ফেলছি যখন, তখন আর ফেলি না, থাকুক।’
শবনম আর কোনো মন্তব্য না করে আবার কাত হয়ে শুয়ে টিভি দেখায় মনযোগ দেয়।
‘ভাবছি, আগামী বছর হজে গেলে কেমন হয়?’
আয়নার সামনে থেকে সরে এসে খাটের উপর আধ শোয়া শবনমের পাশে এসে বসে তারেক। শবনম নিউজ দেখছিল বলে তারেকের কথাটা ভাল করে শুনতে পায়নি। তাই রিমোট টিপে টিভির সাউন্ড কমিয়ে আবার জানতে চায় সে।
‘হুম? কি বললা?’
এবার সরাসরি সিদ্ধান্তটাই জানায় তারেক।
‘ওইতো, বললাম, আগামী বছর হজে যাওয়ার নিয়ত করেছি আমি।’
তারপর লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, ‘কয় দিনের আর দুনিয়া বলো! আজ আছি কাল নাই! তুমি যদি যেতে চাও বলো, তাহলে দুজন মিলে হজটা করে আসতে পারি। ভাল প্যাকেজ আছে।’

শবনম এবার টিভিটা বন্ধ করে উঠে বসে তারেকের মুখোমুখি হয়। তার দাড়িশোভিত বুড়িয়ে যাওয়া মুখমণ্ডল আর সরল চোখ দুটিতে চোখ রাখে। একটু ইতস্তত করে বলে, ‘আসলে ওইরকম কিছু তো ভাবি নাই। হঠাৎ করে কী বলবো!.. অফিস.. ছুটি নেওয়া ..আপাতত না হয় তুমি একাই করে এসো, আমি দেখি, পরে..’
তারেক আর কথা বাড়ায় না। টুপি মাথায় মসজিদে চলে যায় এশার নামাজ আদায় করতে।
শ্রাবণের ঘরের দরজা লাগানো, ওর কয়েকজন বান্ধবী আজ রাতে থাকতে এসেছে, কি নাকি গ্রুপ স্টাডি করবে সবাই মিলে। ঘরের দরজা ভেদ করে মাঝে মাঝে ওদের হৈ হুল্লোড়ের চাপা অস্পষ্ট শব্দ ভেসে আসছে। কী সুন্দর, ঝলমলে চিন্তাহীন একটা সময় পার করছে ওরা!

বাসার বাধা কাজের লোক রান্নাঘরের পাশে তার নিজস্ব ছোট্ট রুমে ভারতীয় সিরিয়াল দেখায় ব্যস্ত। শবনম একটা হাই তোলে। এটা এমন একটা সময় যখন তার আসলে কিছুই করার থাকে না। এসময় মনের মধ্যে বৈরাগ্য চিন্তা ভর করে। মনে হয় জীবন এক টুকরা মায়া, একটা হঠাৎ দেখা স্বপ্ন, জলের উপর ফুটে ওঠা স্বল্পস্থায়ী বুদ বুদ, মিলিয়ে যাওয়ার মতো একটা করুণ হাল্কা ছায়া। মনে হয় এই জীবনে কিছুই চিরস্থায়ী নয়, কারো উপর রাগ করার কিছু নাই, ঝগড়া বিবাদের কিছু নাই। যেন তার জন্য কোথাও কেউ নাই, কিছু নাই। সমস্তই অনিত্য অস্থায়ী। রুটিন মেনে প্রতিদিন বেলা আসে বেলা যায়, ভাবনার গভীরে, ভেতরে বাইরে মানুষও ধীরে ধীরে নাই হয়ে যায়। একটা অচেনা ধু ধু প্রান্তরে একদম একা দাঁড়িয়ে থাকার মতো অনুভূতি হয় শবনমের। বিচ্ছিন্ন, একাকী, বিষণ্ন। এটা কি তবে মধ্য বয়সের সংকট? মিড লাইফ ক্রাইসিস? এখন যে বয়সে এসে সে দাঁড়িয়েছে সেটা বার্ধক্য নয়, আবার তারুণ্যও নয়। দুয়ের মাঝখানে একটা বয়ঃসন্ধিকাল। যেখান থেকে পালানোর কোনো সুযোগ নেই। নিজের কর্মোদ্যমে ভরা যৌবনকে পেছনে ফেলে এখন অবধারিতভাবে এগিয়ে যেতে হবে বার্ধক্যের দিকে। চাই বা না চাই যৌবনকে বিদায় জানিয়ে এখন গ্রহণ করতে হবে প্রৌঢ়ত্ব কিংবা বার্ধক্যকে। সকলেই তাই করে। শবনমের মা, নানী, নানীর মা সবাই, পৃথিবীর সব মানবীই এই স্তর পেরিয়ে অনন্তে চলে গেছেন। সরল আর স্বাভাবিকভাবেই তো তারা গ্রহণ করেছেন পরিবর্তনকে! মেনে নিয়েছেন। না মেনে নিস্তার নেই বলে?

সেই যে স্নানঘরে, বার্ধক্যের প্রথম চিহ্ন দেখে চমকে উঠেছিল শবনম, সেটা কি ভয়ে, না বিস্ময়ে? নাকি পরিবর্তনের আভাসকে মানতে না পারার বেদনায়! সময় চক্ষুহীন নিষ্ঠুর, সময় ক্ষমাহীন, রুদ্র কঠিন। সময়ের হাত ধরে আমাদের ভেসে যেতে হয় জীবনের প্রতিটি ধাপে।

এই যে ইদানিং এক নতুন উপদ্রব শুরু হয়েছে মাঝরাতে হঠাৎ ভয়ানক গরম লাগা, গলা, বুক, পিঠ অচেনা ঘামে ভিজে যাওয়া, অকস্মাৎ ঘুম ভেঙে বুক ধড়ফড় করে ওঠা, ভীষণ অস্থির লাগা এও তো মধ্যবয়সের এক অস্বস্তিকর লক্ষণ, বার্ধক্যের দিকে ঠেলে দেওয়া। সুন্দর করে বললে, জীবনের আরেকটি অধ্যায়ে পা রাখার সূচনা হলো তোমার শবনম। ফুল্লকোমল বসন্ত শেষ আসছে হিম আচ্ছাদিত শীতকাল। জীবনের প্রতিটি সম্পর্কের কাছে প্রত্যাশা এবার কমিয়ে আনো, নৈর্ব্যক্তিক হও, নয়তো অযথাই দুঃখ পাবে।

তারেক এরই মধ্যে মসজিদ থেকে ফিরে এসেছে। ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজানোর টুংটাং শব্দ হচ্ছে। একটু পরেই শ্রাবণ আর তার বন্ধুদের কলকল্লোলের আভাস পাওয়া গেল। হৈ হৈ করে রাতের খাবার খাচ্ছে ওরা। সামান্য কথায় হিল্লেলিত ঝর্ণার মতো হেসে ভেঙে পড়ছে। ওদের দেখলে কেন যেন তরতর করে বেড়ে ওঠা কচি সবুজ লাউ ডগার উপমাই মনে আসে শবনমের। ওরা যেন কলির মোড়ক সরিয়ে সদ্য মুখ বের করা এক দল আলোময় ফুল। যেন লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ, বর্ষায় স্নাত সবুজ পাতা। শবনম হাসি হাসি মুখে ডাইনিং এ এসে দাঁড়ায়।
‘ভালভাবে খাও মেয়েরা .. সাদমা, তোমার প্লেট খালি কেনো? রুম্পা, তুমি আরেক পিস চিকেন নাও।’
‘জি, আন্টি..’
মেয়েগুলো বিনীত ভঙ্গীতে বলে। শবনমের উপস্থিতিতে তাদের স্বতঃস্ফূর্ততায় সম্ভবত বাঁধা তৈরি করে। এতক্ষণের কলরব থামিয়ে তারা প্লেটে ঝুঁকে খাওয়ায় মনোযোগী হয়।
‘আমরা আমাদের মতো নিয়ে খাচ্ছি মা, চিন্তা করো না।’
শ্রাবণ মুখ তুলে বলে। তবু দুয়েকটা ভদ্রতাসূচক বাক্য বলে শবনম নিজের ঘরে ফিরে আসে। করুক, এবার ওরা প্রাণ খুলে কোলাহল করুক। মেতে থাকুক নিজেদের আনন্দে। কয় দিনের আর এই নির্মল আনন্দ কোলাহল!

তারেক শুয়ে পড়েছিল আগেই। সংসারের খুটিনাটি তদারকি সেরে প্রায় আধঘণ্টা পর একটা ঢিলেঢালা সুতির ম্যাক্সি পড়ে শুতে এলো শবনম। ভেবেছিল তারেক বুঝি ঘুমিয়ে গেছে। আসলে যে ঘুমায়নি, শবনম সেটা বুঝলো তারেক যখন পেছন থেকে দুই হাত বাড়িয়ে তাকে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরল। এই স্পর্শ ও আলিঙ্গন একটা গভীর সংকেত, একটা গূঢ় ইঙ্গিত, কয়েক বছর আগেও এই ইঙ্গিত শবনমের সমস্ত শরীরে একটা অন্যরকম শিহরণ ছড়িয়ে দিতো কিন্তু ইদানিং কি হয়েছে, সেই আবেশটা আর শরীরে জাগে না। বরং তারেক হাত বাড়ালেই কেমন যেন একটা অদ্ভুত অনীহা, অস্বস্তি আর অবসাদের সঙ্গে একটা সূক্ষ্ম বিরক্তি ছড়িয়ে পড়ে তার সমস্ত শরীরে মনে। কপালটা অজান্তেই একটু কুঁচকে যায়। তারেক এবার আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে আসে। শবনমের ঘাড়ে তার ঘন উষ্ণ নিশ্বাসের আঁচ এসে লাগে। ঘরের মৃদু আলোতে শবনমের অনিচ্ছুক চেহারা চোখে পড়ে না তারেকের। তার ভালবাসার দীর্ঘ হাত বরাবরের মতো শবনমের দেহরেখা ধরে আরও বিবিধ পথে অগ্রসর হতে চায়। এবার আস্তে করে তারেকের হাতটা নামিয়ে রেখে সামান্য ধাক্কা দিয়ে ওকে সরিয়ে দেয় শবনম।
‘উহু! না.. আজকে থাক প্লিজ.. ’
‘কেনো?’
তারেক নিজেকে সামলে নিয়ে নরম গলায় জানতে চায়, ‘কোনো সমস্যা?’
‘না, কেমন যেন ড্রাই লাগে, বুঝছো, মানে, ঠিক.. কি বলবো! জ্বালা পোড়া হয়! প্রিমেনোপজ সিনড্রম কিনা!’
তারেক এবার হাতটা গুটিয়ে নেয়। পাশ ফিরে চিৎ হয়ে শুয়ে একটা লম্বা হাই তুলে বলে,
‘এখন অনেক রকম লুব্রিকেন্ট পাওয়া যায়। নেটে দেখে নিও। আমরা কিন্তু ট্রাই করতে পারি।’
‘হুম.. একটা আর্টিকেলে ন্যচারাল অয়েলের কথা পড়েছিলাম..’
‘উন্নত দেশে অনেকে পঞ্চাশের পর বিয়ে করে জানো তো! মানসিক প্রস্তুতিটাই আসল। মনের দুয়ারটা আগে খুলে দাও, বন্ধ করে রেখো না.. ’

তারেক সাইকোলোজিস্টের সাইকো থেরাপি দেওয়ার মতো ভঙ্গী করে বলে। বহুদিন পর তারেকের পক্ষ থেকে আসা আহ্বান অগ্রাহ্য করে শবনমের একটু খারাপই লাগে। এবার সেই পাশ ফিরে তারেককে জড়িয়ে ধরলে তারেক অন্য হাতে তাকে বুকে টেনে নেয়। ঘোর লাগা গলায় বলে,
‘শোনো, তুমি তো বুড়ি হয়ে যাও নাই। এখনো অনেক ফিট আছো। মনের বাধাটা সরিয়ে দেও, তারপর দেখো কি হয়, সব বরফ গলে যাবে, ষাট বছরের পর মধ্য বয়সের শুরু বুঝলে?’
শবনম উত্তরে কিছু একটা বলতে চাচ্ছিলো কিন্তু তারেকের ভেজা মোটা ঠোঁট দুটো, তার দাড়িবহুল মুখখানি শবনমের ঠোটের উপর চেপে বসলে সে আর কথা বলতে পারে না। কথা বলার দরকারও পড়ে না। জমাট বাধা হিম বরফ কোনো শব্দ না করেই গলতে থাকে।

চলবে…

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

স্নানের শব্দ: পর্ব-৮

Header Ad
Header Ad

অবশেষে সরিয়ে দেওয়া হলো মাউশির বিতর্কিত ডিজিকে

অধ্যাপক ড. এহতেসাম উল হক ও মাউশির লোগো। ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষক নেতাদের আন্দোলন ও গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক (ডিজি) পদ থেকে অধ্যাপক ড. এহতেসাম উল হককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি শিক্ষা ক্যাডারের ১৪তম বিসিএসের কর্মকর্তা এবং পটুয়াখালী সরকারি কলেজের অধ্যাপক ছিলেন।

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সম্প্রতি তার বিতর্কিত কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর তাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করে মাউশিতে সংযুক্ত করা হয়েছে। এদিকে, নতুন মহাপরিচালক হিসেবে অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খানকে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব মো. মাহবুব আলম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খানের এই দায়িত্ব কেবল সাময়িক, যা পদোন্নতি হিসেবে গণ্য হবে না। পরবর্তীতে নিয়মিত নিয়োগের মাধ্যমে মহাপরিচালক নিয়োগ হলে এই চলতি দায়িত্ব বাতিল হয়ে যাবে।

অধ্যাপক এহতেসাম উল হকের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এর আগে তিনি বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ থাকাকালীন শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়ন চালানোর অভিযোগে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। অভিযোগ রয়েছে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তথ্য তিনি পুলিশের কাছে সরবরাহ করেছিলেন।

২০২৩ সালের ৫ আগস্ট তার অপসারণের দাবিতে কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে। দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার অপসারণের দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ২০২১ সালের জুন মাসে বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে যোগদানের পর থেকে তিনি নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে যান। তিনি বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয় সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠ ছিলেন।

অভিযোগ রয়েছে, অধ্যক্ষ থাকাকালীন তিনি শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন এবং আন্দোলনে অসহযোগিতা করতেন। এমনকি কলেজের গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতেন, যা তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনও ব্যবহার করতেন। তিনি কলেজের বিদ্যুৎ ব্যবহার করে নিজের বাসায় গ্রিল নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ করিয়েছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে চাকরি খেয়ে ফেলার হুমকি দিতেন এবং বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) খারাপ করে দেওয়ার ভয় দেখাতেন। এছাড়া, চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন না দিয়ে বিদায় করে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

ডিজি পদ থেকে এহতেসাম উল হককে অপসারণের খবরে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, একজন বিতর্কিত ব্যক্তি শিক্ষাখাতের এত বড় দায়িত্বে থাকতে পারেন না। তার অপসারণের মাধ্যমে প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রতি সরকারের সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে।

Header Ad
Header Ad

২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ৩৩ ডিসি ওএসডি

ছবি: সংগৃহীত

২০১৮ সালের বিতর্কিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ৩৩ জন জেলা প্রশাসককে (ডিসি) বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত ছয়টি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিতর্কিত নির্বাচনে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনের কারণে এই কর্মকর্তাদের ওএসডি করা হয়েছে। এর আগে একই কারণে আরও ১২ জন কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছিল।

ওএসডি হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের পরিচালক (যুগ্মসচিব) কবীর মাহমুদ, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. মাহমুদুল আলম, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. আবুল ফজল মীর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের সদস্য-পরিচালক (যুগ্মসচিব) মঈনউল ইসলাম, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য (যুগ্মসচিব) মো. ওয়াহিদুজ্জামান, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (সংযুক্ত) এ কে এম মামুনুর রশিদ এবং বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বাপবিবো) সদস্য (যুগ্মসচিব) ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম।

এছাড়া তালিকায় রয়েছেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব কাজী আবু তাহের, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সদস্য (যুগ্মসচিব) মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব (সংযুক্ত) আনার কলি মাহবুব, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য (যুগ্মসচিব) সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী, কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব সাবিনা ইয়াসমিন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আতাউল গনি এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (সংযুক্ত) আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন।

এছাড়া, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব এ জেড এম নুরুল হক, বাংলাদেশ রাবার বোর্ডের পরিচালক (যুগ্ম-সচিব) এস এম আজিয়র রহমান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সচিব (যুগ্ম-সচিব) মো. মাসুদ আলম সিদ্দিক এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম-সচিব গোপাল চন্দ্র দাশসহ আরও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা রয়েছেন।

প্রসঙ্গত, বিতর্কিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই ওই সময়ের রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এবার সেই নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের পর্যায়ক্রমে ওএসডি করা হচ্ছে বলে মনে করছেন প্রশাসনিক বিশ্লেষকরা।

Header Ad
Header Ad

ট্রাম্পের বিস্ফোরক দাবি: চলমান যুদ্ধের সূচনা ইউক্রেনই করেছিল

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য ইউক্রেনকেই দায়ী করে নতুন বিতর্ক উসকে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন রাজনীতিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে পরিচিত ট্রাম্প এবার ইউক্রেনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন, চলমান যুদ্ধের সূচনা ইউক্রেনই করেছিল।

মঙ্গলবার (স্থানীয় সময়) ফ্লোরিডার মার-আ-লাগোতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির প্রতি কঠোর মনোভাব প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ইউক্রেনে একটি নতুন নির্বাচন হওয়া উচিত। বিশ্লেষকদের মতে, এটি জেলেনস্কিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনারই ইঙ্গিত।

ট্রাম্প আরও বলেন, ইউক্রেনে দীর্ঘদিন ধরে কোনো নির্বাচন হয়নি এবং সেখানে সামরিক আইন চলছে। তার দাবি, জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা মাত্র চার শতাংশে নেমে গেছে, আর দেশটি ধ্বংসের পথে। যদিও যুদ্ধকালীন সময়ে নির্ভরযোগ্য জনমত জরিপ পাওয়া কঠিন, তবে বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা ট্রাম্পের দাবির মতো এতটা কমেনি।

এছাড়া, ইউক্রেনের নির্বাচন প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, "তারা কি জনগণের মতামত নিয়েছে? তারা আলোচনার টেবিলে বসতে চায়, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সেখানে কোনো নির্বাচন হয়নি।"

প্রসঙ্গত, ইউক্রেনে ২০২৪ সালের এপ্রিলে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও দেশটির সংবিধান অনুযায়ী, যুদ্ধকালীন সময়ে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই মন্তব্য কৌতুকপূর্ণ, কারণ তিনি নিজেই ২০২০ সালের মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।

ট্রাম্প আরও দাবি করেন, ইউক্রেন চাইলে যুদ্ধ বন্ধ করতে পারতো এবং তাদের উচিত ছিল রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতায় যাওয়া। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এর অর্থ হলো—ইউক্রেনকে হয় রাশিয়ার মিত্র সরকার গঠনের প্রস্তাবে রাজি হতে হতো, নয়তো প্রতিরোধ ছেড়ে দিয়ে আত্মসমর্পণ করতে হতো।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের সাম্প্রতিক অবস্থান ইঙ্গিত দেয় যে, তিনি পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ইউক্রেনকে সমর্থন না দিয়ে বরং রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি বিতর্কিত শান্তিচুক্তির দিকে এগোতে পারেন, যা পুতিনের জন্য বড় ধরনের কূটনৈতিক জয় হিসেবে বিবেচিত হবে।

সূত্র: সিএনএন

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

অবশেষে সরিয়ে দেওয়া হলো মাউশির বিতর্কিত ডিজিকে
২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ৩৩ ডিসি ওএসডি
ট্রাম্পের বিস্ফোরক দাবি: চলমান যুদ্ধের সূচনা ইউক্রেনই করেছিল
ডিবির সাবেক প্রধান হারুনের ১০০ বিঘা জমি, ৫ ভবন ও ২ ফ্ল্যাট ক্রোকের নির্দেশ
দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন রেখা গুপ্তা, বিজেপির সিদ্ধান্তে চমক
একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতির শহীদ মিনারে না যাওয়ার আহ্বান
নামাজি জীবনসঙ্গী খুঁজছেন আইশা খান
গাইবান্ধায় গাঁজাসহ আটক এএসআইকে কারাগারে প্রেরণ
উপদেষ্টাদের মিটিংয়ে কোন প্রটোকলে গিয়েছিলেন হাসনাত-পাটোয়ারী: ছাত্রদল সেক্রেটারি
সরকারে থেকে ‘নতুন দল’ গঠন করলে মেনে নেওয়া হবে না: মির্জা ফখরুল
হোস্টিং সামিট ২০২৫ অনুষ্ঠিত
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির উদ্বোধনী ম্যাচে পাকিস্তানকে ৩২১ রানের বড় লক্ষ্য দিলো নিউজিল্যান্ড
বৈষম্যবিরোধী নামধারী শীর্ষ নেতার নির্দেশে কুয়েটে ছাত্রদলের ওপর হামলা: রাকিব
যান্ত্রিক ত্রুটিতে আবারও বন্ধ বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র
কুবিতে ছাত্র সংসদের দাবিতে মানববন্ধন ও সন্ত্রাসবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল
২২০ জনকে নিয়োগ দেবে সমরাস্ত্র কারখানা, এসএসসি পাসেও আবেদন
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে ২ দিনব্যাপি খামারি প্রশিক্ষণ
সবার সাত দিন কারাগারে থাকা উচিত: আদালতে পলক
বিপ্লবী সরকারের ডাক থেকে সরে এলেন কাফি  
নাঈম ভাই হেনা কোথায়?: ‘তুই অনেক দেরি করে ফেলেছিস বাপ্পা’