বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-৯

স্নানের শব্দ

মায়ের মৃত্যু শোক এখনো পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি তারেক। মাতৃবিয়োগের যে প্রচণ্ড শক আর শোক, এক জীবনে তার হয়ত কোনো সান্ত্বনাও হয় না। মা চলে যাবার পর থেকে একটা গভীর শূন্যতার হাহাকার যেন প্রচণ্ডভাবে ঘিরে ধরেছে তাকে। যেন এক ঘোর, এক মায়া, এক অদ্ভুত তমসায় সে অনবরত ঘুরপাক খাচ্ছে। মা ছিল, এখন নেই, মানে আর কখনোই তাকে পাওয়া যাবে না, ছোঁয়া যাবে না, দেখা যাবে না, শোনা যাবে না। মা এখন শুধুই কিছু স্মৃতি আর ছবির সমাহার। আগে থেকেই বিশ্বাসী মানুষ তারেক, এখন নিয়মিতই নামাজ পড়ে, সময় মত মসজিদে গিয়ে যেন ভুলে থাকতে চায় মা হারানোর কষ্ট, সেই সঙ্গে দৈনন্দিন ইহলৌকিক কাজ কর্ম। তেমন বৈষয়িক সে আগেও ছিল না, এখন যেন আরও উদাসীন।

দাড়ি কামানোর মত প্রাত্যহিক কর্মটাও ইদানিং ছেড়ে দিয়েছে সে। ফলে এই পনের দিনেই সাদা পাকা অবিন্যস্ত দাড়ি আঙ্গুরলতার মত কয়েক ইঞ্চি বেড়ে নিচের দিকে নেমে এসেছে।
‘দাড়িটা রেখেই দেই, কি বলো?’
পাঁচ আঙ্গুলে বাড়ন্ত দাড়িতে বিলি কাটতে কাটতে শবনমকে উদ্দেশ করে বলে সে।
‘রাখতে চাইলে রাখো। তোমার ইচ্ছা-অনিচ্ছা নিয়ে আমি কোনো কথা বলেছি কখনো?’
‘না, তা বলোনি। তবু তোমার মতামতটা শুনি.. ’
তারেক ঘরের কোণায় রাখা ড্রেসিং টেবিলের লম্বাটে আয়নার কাছে গিয়ে ডানে বামে সামনে পেছনে ঘাড় নাড়িয়ে বিভিন্নভাবে নিজেকে দেখে।
‘দাড়িতে আমাকে কেমন লাগবে, মানাবে কিনা, আবার বেশি বুড়ো বুড়ো দেখাবে কি না .. ’

সাতান্ন বছর বয়সী তারেকের এই সৌন্দর্য সচেতনতায় শবনমের ঠোটের কোণায় মৃদু হাসি ফুটে উঠে মিলিয়ে যায়। অফিস থেকে ফিরে কাপড় বদলে সে বিছানায় কাত হয়ে শুয়ে টিভি দেখছিল। এবার উঠে বসে বলে,
‘তা ওরকম সাদা দাড়ি রাখলে আগের চাইতে একটু বয়স্ক তো দেখাবেই, খানিকটা ভার ভারিক্কীও লাগবে অবশ্য.. আগে তো মানুষ চাচা ডাকতো এবার দাদাজানও ডাকতে পারে। ভেবে দেখো..’
এবার তারেকের ধর্ম বোধের কাছে সৌন্দর্য বোধ হার মানে। আয়নায় চোখ রেখেই সে বলে,
‘নবিজীর সুন্নত। রেখে ফেলছি যখন, তখন আর ফেলি না, থাকুক।’
শবনম আর কোনো মন্তব্য না করে আবার কাত হয়ে শুয়ে টিভি দেখায় মনযোগ দেয়।
‘ভাবছি, আগামী বছর হজে গেলে কেমন হয়?’
আয়নার সামনে থেকে সরে এসে খাটের উপর আধ শোয়া শবনমের পাশে এসে বসে তারেক। শবনম নিউজ দেখছিল বলে তারেকের কথাটা ভাল করে শুনতে পায়নি। তাই রিমোট টিপে টিভির সাউন্ড কমিয়ে আবার জানতে চায় সে।
‘হুম? কি বললা?’
এবার সরাসরি সিদ্ধান্তটাই জানায় তারেক।
‘ওইতো, বললাম, আগামী বছর হজে যাওয়ার নিয়ত করেছি আমি।’
তারপর লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, ‘কয় দিনের আর দুনিয়া বলো! আজ আছি কাল নাই! তুমি যদি যেতে চাও বলো, তাহলে দুজন মিলে হজটা করে আসতে পারি। ভাল প্যাকেজ আছে।’

শবনম এবার টিভিটা বন্ধ করে উঠে বসে তারেকের মুখোমুখি হয়। তার দাড়িশোভিত বুড়িয়ে যাওয়া মুখমণ্ডল আর সরল চোখ দুটিতে চোখ রাখে। একটু ইতস্তত করে বলে, ‘আসলে ওইরকম কিছু তো ভাবি নাই। হঠাৎ করে কী বলবো!.. অফিস.. ছুটি নেওয়া ..আপাতত না হয় তুমি একাই করে এসো, আমি দেখি, পরে..’
তারেক আর কথা বাড়ায় না। টুপি মাথায় মসজিদে চলে যায় এশার নামাজ আদায় করতে।
শ্রাবণের ঘরের দরজা লাগানো, ওর কয়েকজন বান্ধবী আজ রাতে থাকতে এসেছে, কি নাকি গ্রুপ স্টাডি করবে সবাই মিলে। ঘরের দরজা ভেদ করে মাঝে মাঝে ওদের হৈ হুল্লোড়ের চাপা অস্পষ্ট শব্দ ভেসে আসছে। কী সুন্দর, ঝলমলে চিন্তাহীন একটা সময় পার করছে ওরা!

বাসার বাধা কাজের লোক রান্নাঘরের পাশে তার নিজস্ব ছোট্ট রুমে ভারতীয় সিরিয়াল দেখায় ব্যস্ত। শবনম একটা হাই তোলে। এটা এমন একটা সময় যখন তার আসলে কিছুই করার থাকে না। এসময় মনের মধ্যে বৈরাগ্য চিন্তা ভর করে। মনে হয় জীবন এক টুকরা মায়া, একটা হঠাৎ দেখা স্বপ্ন, জলের উপর ফুটে ওঠা স্বল্পস্থায়ী বুদ বুদ, মিলিয়ে যাওয়ার মতো একটা করুণ হাল্কা ছায়া। মনে হয় এই জীবনে কিছুই চিরস্থায়ী নয়, কারো উপর রাগ করার কিছু নাই, ঝগড়া বিবাদের কিছু নাই। যেন তার জন্য কোথাও কেউ নাই, কিছু নাই। সমস্তই অনিত্য অস্থায়ী। রুটিন মেনে প্রতিদিন বেলা আসে বেলা যায়, ভাবনার গভীরে, ভেতরে বাইরে মানুষও ধীরে ধীরে নাই হয়ে যায়। একটা অচেনা ধু ধু প্রান্তরে একদম একা দাঁড়িয়ে থাকার মতো অনুভূতি হয় শবনমের। বিচ্ছিন্ন, একাকী, বিষণ্ন। এটা কি তবে মধ্য বয়সের সংকট? মিড লাইফ ক্রাইসিস? এখন যে বয়সে এসে সে দাঁড়িয়েছে সেটা বার্ধক্য নয়, আবার তারুণ্যও নয়। দুয়ের মাঝখানে একটা বয়ঃসন্ধিকাল। যেখান থেকে পালানোর কোনো সুযোগ নেই। নিজের কর্মোদ্যমে ভরা যৌবনকে পেছনে ফেলে এখন অবধারিতভাবে এগিয়ে যেতে হবে বার্ধক্যের দিকে। চাই বা না চাই যৌবনকে বিদায় জানিয়ে এখন গ্রহণ করতে হবে প্রৌঢ়ত্ব কিংবা বার্ধক্যকে। সকলেই তাই করে। শবনমের মা, নানী, নানীর মা সবাই, পৃথিবীর সব মানবীই এই স্তর পেরিয়ে অনন্তে চলে গেছেন। সরল আর স্বাভাবিকভাবেই তো তারা গ্রহণ করেছেন পরিবর্তনকে! মেনে নিয়েছেন। না মেনে নিস্তার নেই বলে?

সেই যে স্নানঘরে, বার্ধক্যের প্রথম চিহ্ন দেখে চমকে উঠেছিল শবনম, সেটা কি ভয়ে, না বিস্ময়ে? নাকি পরিবর্তনের আভাসকে মানতে না পারার বেদনায়! সময় চক্ষুহীন নিষ্ঠুর, সময় ক্ষমাহীন, রুদ্র কঠিন। সময়ের হাত ধরে আমাদের ভেসে যেতে হয় জীবনের প্রতিটি ধাপে।

এই যে ইদানিং এক নতুন উপদ্রব শুরু হয়েছে মাঝরাতে হঠাৎ ভয়ানক গরম লাগা, গলা, বুক, পিঠ অচেনা ঘামে ভিজে যাওয়া, অকস্মাৎ ঘুম ভেঙে বুক ধড়ফড় করে ওঠা, ভীষণ অস্থির লাগা এও তো মধ্যবয়সের এক অস্বস্তিকর লক্ষণ, বার্ধক্যের দিকে ঠেলে দেওয়া। সুন্দর করে বললে, জীবনের আরেকটি অধ্যায়ে পা রাখার সূচনা হলো তোমার শবনম। ফুল্লকোমল বসন্ত শেষ আসছে হিম আচ্ছাদিত শীতকাল। জীবনের প্রতিটি সম্পর্কের কাছে প্রত্যাশা এবার কমিয়ে আনো, নৈর্ব্যক্তিক হও, নয়তো অযথাই দুঃখ পাবে।

তারেক এরই মধ্যে মসজিদ থেকে ফিরে এসেছে। ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজানোর টুংটাং শব্দ হচ্ছে। একটু পরেই শ্রাবণ আর তার বন্ধুদের কলকল্লোলের আভাস পাওয়া গেল। হৈ হৈ করে রাতের খাবার খাচ্ছে ওরা। সামান্য কথায় হিল্লেলিত ঝর্ণার মতো হেসে ভেঙে পড়ছে। ওদের দেখলে কেন যেন তরতর করে বেড়ে ওঠা কচি সবুজ লাউ ডগার উপমাই মনে আসে শবনমের। ওরা যেন কলির মোড়ক সরিয়ে সদ্য মুখ বের করা এক দল আলোময় ফুল। যেন লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ, বর্ষায় স্নাত সবুজ পাতা। শবনম হাসি হাসি মুখে ডাইনিং এ এসে দাঁড়ায়।
‘ভালভাবে খাও মেয়েরা .. সাদমা, তোমার প্লেট খালি কেনো? রুম্পা, তুমি আরেক পিস চিকেন নাও।’
‘জি, আন্টি..’
মেয়েগুলো বিনীত ভঙ্গীতে বলে। শবনমের উপস্থিতিতে তাদের স্বতঃস্ফূর্ততায় সম্ভবত বাঁধা তৈরি করে। এতক্ষণের কলরব থামিয়ে তারা প্লেটে ঝুঁকে খাওয়ায় মনোযোগী হয়।
‘আমরা আমাদের মতো নিয়ে খাচ্ছি মা, চিন্তা করো না।’
শ্রাবণ মুখ তুলে বলে। তবু দুয়েকটা ভদ্রতাসূচক বাক্য বলে শবনম নিজের ঘরে ফিরে আসে। করুক, এবার ওরা প্রাণ খুলে কোলাহল করুক। মেতে থাকুক নিজেদের আনন্দে। কয় দিনের আর এই নির্মল আনন্দ কোলাহল!

তারেক শুয়ে পড়েছিল আগেই। সংসারের খুটিনাটি তদারকি সেরে প্রায় আধঘণ্টা পর একটা ঢিলেঢালা সুতির ম্যাক্সি পড়ে শুতে এলো শবনম। ভেবেছিল তারেক বুঝি ঘুমিয়ে গেছে। আসলে যে ঘুমায়নি, শবনম সেটা বুঝলো তারেক যখন পেছন থেকে দুই হাত বাড়িয়ে তাকে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরল। এই স্পর্শ ও আলিঙ্গন একটা গভীর সংকেত, একটা গূঢ় ইঙ্গিত, কয়েক বছর আগেও এই ইঙ্গিত শবনমের সমস্ত শরীরে একটা অন্যরকম শিহরণ ছড়িয়ে দিতো কিন্তু ইদানিং কি হয়েছে, সেই আবেশটা আর শরীরে জাগে না। বরং তারেক হাত বাড়ালেই কেমন যেন একটা অদ্ভুত অনীহা, অস্বস্তি আর অবসাদের সঙ্গে একটা সূক্ষ্ম বিরক্তি ছড়িয়ে পড়ে তার সমস্ত শরীরে মনে। কপালটা অজান্তেই একটু কুঁচকে যায়। তারেক এবার আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে আসে। শবনমের ঘাড়ে তার ঘন উষ্ণ নিশ্বাসের আঁচ এসে লাগে। ঘরের মৃদু আলোতে শবনমের অনিচ্ছুক চেহারা চোখে পড়ে না তারেকের। তার ভালবাসার দীর্ঘ হাত বরাবরের মতো শবনমের দেহরেখা ধরে আরও বিবিধ পথে অগ্রসর হতে চায়। এবার আস্তে করে তারেকের হাতটা নামিয়ে রেখে সামান্য ধাক্কা দিয়ে ওকে সরিয়ে দেয় শবনম।
‘উহু! না.. আজকে থাক প্লিজ.. ’
‘কেনো?’
তারেক নিজেকে সামলে নিয়ে নরম গলায় জানতে চায়, ‘কোনো সমস্যা?’
‘না, কেমন যেন ড্রাই লাগে, বুঝছো, মানে, ঠিক.. কি বলবো! জ্বালা পোড়া হয়! প্রিমেনোপজ সিনড্রম কিনা!’
তারেক এবার হাতটা গুটিয়ে নেয়। পাশ ফিরে চিৎ হয়ে শুয়ে একটা লম্বা হাই তুলে বলে,
‘এখন অনেক রকম লুব্রিকেন্ট পাওয়া যায়। নেটে দেখে নিও। আমরা কিন্তু ট্রাই করতে পারি।’
‘হুম.. একটা আর্টিকেলে ন্যচারাল অয়েলের কথা পড়েছিলাম..’
‘উন্নত দেশে অনেকে পঞ্চাশের পর বিয়ে করে জানো তো! মানসিক প্রস্তুতিটাই আসল। মনের দুয়ারটা আগে খুলে দাও, বন্ধ করে রেখো না.. ’

তারেক সাইকোলোজিস্টের সাইকো থেরাপি দেওয়ার মতো ভঙ্গী করে বলে। বহুদিন পর তারেকের পক্ষ থেকে আসা আহ্বান অগ্রাহ্য করে শবনমের একটু খারাপই লাগে। এবার সেই পাশ ফিরে তারেককে জড়িয়ে ধরলে তারেক অন্য হাতে তাকে বুকে টেনে নেয়। ঘোর লাগা গলায় বলে,
‘শোনো, তুমি তো বুড়ি হয়ে যাও নাই। এখনো অনেক ফিট আছো। মনের বাধাটা সরিয়ে দেও, তারপর দেখো কি হয়, সব বরফ গলে যাবে, ষাট বছরের পর মধ্য বয়সের শুরু বুঝলে?’
শবনম উত্তরে কিছু একটা বলতে চাচ্ছিলো কিন্তু তারেকের ভেজা মোটা ঠোঁট দুটো, তার দাড়িবহুল মুখখানি শবনমের ঠোটের উপর চেপে বসলে সে আর কথা বলতে পারে না। কথা বলার দরকারও পড়ে না। জমাট বাধা হিম বরফ কোনো শব্দ না করেই গলতে থাকে।

চলবে…

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

স্নানের শব্দ: পর্ব-৮

Header Ad
Header Ad

বাংলাদেশ এখন আর আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল নয়: অর্থ উপদেষ্টা

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ এখন আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল নয় বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, “আমরা এখন আর আগের মতো আইএমএফ নির্ভরশীল নই। সেই দিন চলে গেছে। বাজেট সাপোর্টের অর্থ সাধারণত ৫ বছরের মধ্যে ফেরত দিতে হয়, অথচ প্রকল্প চলে ২০ বছর। তাই আমরা প্রতিটি ঋণের আগে অনেক হিসাব-নিকাশ করি। শুধু টাকা দিলেই গ্রহণ করব না। ঋণের বোঝা নিতে আমরা আগ্রহী নই।”

আইএমএফের দীর্ঘসূত্রিতা ও কঠিন শর্তাবলি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “নয় মাস ধরে আইএমএফের টাকা আসছে না। তবে আমরা শক্ত অবস্থান নেব। টাকা না দিলে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইন্দোনেশিয়ায় এমনটাই হয়েছিল, অনেকের চাকরি চলে যায়। এমন ঘটনা মালয়েশিয়াতেও ঘটেছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা এখন ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেট এবং রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখতে পেরেছি আইএমএফের টাকা ছাড়াই। এমনকি এই সরকার আসার পর আইএমএফ থেকে এক টাকাও পাইনি। তবুও আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতি ভালো আছে। রিফর্ম দ্রুত হয়েছে, যা ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।”

আইএমএফের শর্ত প্রসঙ্গে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “তাদের কিছু শর্ত আছে, যেমন—এনবিআরকে স্বতন্ত্র করা এবং ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেট ওপেন করে দেওয়া। তবে আমরা সব শর্ত মানতে চাই না। আমাদের স্বার্থের দিক বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেব। স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের জন্য আমরা এক বিলিয়ন ডলার চেয়েছি, তারা ৫০০ মিলিয়ন দিতে চাচ্ছে—আমরা চিন্তাভাবনা করছি।”

তিনি বলেন, “বিশ্বব্যাংকের প্রকল্প ঋণ চলমান থাকবে। পাশাপাশি এডিবি, এআইআইবি, এনডিবি এবং ইসলামি ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সহায়তা পাইপলাইনে রয়েছে। প্রজেক্ট সাপোর্ট নিয়ে কোনো সমস্যা নেই, তবে বাজেট সাপোর্ট নিয়ে কিছু আলোচনা চলছে।”

অর্থ উপদেষ্টা জানান, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফরে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এআইআইবি, আইএফসি, আইওএম, ওপেক ফান্ডসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। ইউএস সরকারের বিভিন্ন বিভাগ যেমন—এনার্জি, স্টেট, লেবার, কৃষি এবং ট্রেজারি বিভাগের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও আলোচনায় অংশ নিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, “এবারের সফর সফল। আগে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের পেছনে দৌড়াতো সবাই, এখন দেশগুলোর প্রতিনিধিরা সরাসরি ইউএস প্রেসিডেন্ট অফিস ও অন্যান্য বিভাগীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে।”

অর্থসংস্থানের বিষয়েও ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে বলে জানান ড. সালেহউদ্দিন। তিনি বলেন, “ওপেক ফান্ডের সঙ্গে ১০০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয়েছে, যা বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ হবে। আইএফসিও ৫০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।”

সব মিলিয়ে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিকভাবে অনেক সচেতন ও শক্তিশালী। আমরা আর কাউকে চোখ বন্ধ করে অনুসরণ করি না। আমাদের নিজস্ব কৌশলে সামষ্টিক অর্থনীতিকে এগিয়ে নিচ্ছি।”

Header Ad
Header Ad

সেনাবাহিনীকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিলেন মোদি, দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা তুঙ্গে

ছবি: সংগৃহীত

কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর প্রতিক্রিয়া হিসেবে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশটির সশস্ত্র বাহিনীকে হামলার জবাবে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিয়েছেন। এর ফলে সেনাবাহিনী এখন প্রয়োজন অনুযায়ী পরিকল্পিতভাবে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রধানমন্ত্রী মোদি এক উচ্চপর্যায়ের জরুরি বৈঠকে এই ঘোষণা দেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং প্রতিরক্ষা প্রধান জেনারেল অনিল চৌহান। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে আমাদের জাতীয় সংকল্প অটুট। আমি আমাদের সেনাবাহিনীর ওপর পূর্ণ আস্থা রাখি।”

উল্লেখ্য, জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে সংঘটিত ওই হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। বিশ্লেষকদের মতে, এটি ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা। সরকারি সূত্র জানায়, পাকিস্তানভিত্তিক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার সহায়ক সংগঠন ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ হামলার দায় স্বীকার করেছে।

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরপরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-এর প্রধান মোহন ভাগবত প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে পৌঁছান। ধারণা করা হচ্ছে, ওই বৈঠকে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং সম্ভাব্য সামরিক ও কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়।

ভারত ইতোমধ্যেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক চাপ বৃদ্ধি করেছে। পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য সব ধরনের ভিসা বাতিল করা হয়েছে। কেবলমাত্র পাকিস্তানি হিন্দু এবং দীর্ঘমেয়াদি অনুমোদিত বাসিন্দাদের কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের ফলে ভারতে অবস্থানরত প্রায় ১,০০০ পাকিস্তানি নাগরিক দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।

এছাড়াও, ১৯৬০ সালের ঐতিহাসিক সিন্দু পানি চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। এ চুক্তির ফলে পাকিস্তান যে পানির ৮৫ শতাংশ পেত, তা এখন ভারতের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হচ্ছে। পাকিস্তান এ সিদ্ধান্তকে ‘যুদ্ধের ঘোষণা’ বলে আখ্যায়িত করেছে এবং প্রতিক্রিয়ায় ভারতীয় নাগরিকদের ভিসা বাতিলসহ একাধিক দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্থগিত করেছে।

এ বিষয়ে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা মোহাম্মদ আসিফ দেশটির গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “পরবর্তী কয়েকটি দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে কোনো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।”

অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী মোদি তার বক্তব্যে বারবার জানিয়েছেন, সন্ত্রাসবাদকে মদত দেওয়া শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, “১৪০ কোটির ভারতের জনগণের ইচ্ছাশক্তি সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষকদের মেরুদণ্ড ভেঙে দেবে। এবার সময় এসেছে সন্ত্রাসের ঘাঁটি চিরতরে ধ্বংস করার। ভারত আর আতঙ্কে ভয় পায় না—আমরা প্রতিটি ষড়যন্ত্রকারীকে খুঁজে বের করব এবং জবাব দেব।”

এই অবস্থায় দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা চরমে উঠেছে। ভারতের কড়া অবস্থান এবং সেনাবাহিনীকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দেওয়ার ঘোষণা গোটা অঞ্চলে সম্ভাব্য সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি করেছে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বিষয়টি গভীর উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

Header Ad
Header Ad

সারাদেশে শিলাবৃষ্টির আভাস, নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্কতা

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের আটটি বিভাগেই দমকা হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টি ও বিক্ষিপ্ত শিলাবৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর।

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) দেওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দেশের উপর দিয়ে লঘুচাপের বর্ধিতাংশ বিস্তৃত থাকায় মঙ্গলবার থেকে শনিবার (৩ মে) পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত ও শিলাবৃষ্টি হতে পারে।

আগামী পাঁচদিনের পূর্বাভাস অনুযায়ী:

- ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রামে বেশি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

- রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় দমকা হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।

- কোথাও কোথাও শিলাবৃষ্টিও হতে পারে।

তাপমাত্রা প্রসঙ্গে জানানো হয়, সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে। তবে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সামান্য ওঠানামা করতে পারে।

আবহাওয়াবিদ শাহানাজ সুলতানা জানিয়েছেন, বুধবার রাত ১টার মধ্যে টাঙ্গাইল, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চলে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিমি বেগে দমকা/ঝড়ো হাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

বাংলাদেশ এখন আর আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল নয়: অর্থ উপদেষ্টা
সেনাবাহিনীকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিলেন মোদি, দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা তুঙ্গে
সারাদেশে শিলাবৃষ্টির আভাস, নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্কতা
'বাংলাদেশি' সন্দেহে আটক সাড়ে ৬ হাজার, অধিকাংশই ভারতীয় মুসলিম
দীপ্ত টিভির সংবাদ বিভাগ বন্ধে সরকারের কোনো নির্দেশনা নেই: তথ্য উপদেষ্টা
এই মুহূর্তে ইমরানকে দরকার পাকিস্তানের, মুক্তি ও সর্বদলীয় বৈঠক নিয়ে আলোচনা!
টাঙ্গাইলে এলজিইডিতে দুদকের অভিযানে অর্থ আত্মসাতের পাওয়া গেছে প্রমাণ
লক্ষাধিক নতুন রোহিঙ্গাকে আশ্রয়ের অনুরোধ জানাল জাতিসংঘ
ডাকাত দেখে আতঙ্কে অসুস্থ গৃহকর্তা, পানি খাইয়ে সেবা করল ডাকাতরা, পরে লুট
‘মানবিক করিডর’ নিয়ে নানা প্রশ্ন : স্পষ্ট করলেন প্রেসসচিব
ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করল পাকিস্তান সেনাবাহিনী
মাদরাসার শিক্ষকদের জন্য বড় সুখবর
দীপ্ত টিভির সংবাদ কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা
সব রুফটপ রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল
মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান
নিলামে তুলেও এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি বিক্রি করতে পারছে না ব্যাংকগুলো
সেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই চার বছর পর সাদমানের সেঞ্চুরি
স্টারলিংকের লাইসেন্স অনুমোদন প্রধান উপদেষ্টার, মাসিক খরচের বিষয়ে যা জানা গেল!
রাখাইনের সঙ্গে মানবিক করিডরের বিষয়টি স্পষ্ট করুন: জামায়াত আমির
প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা পাচ্ছেন দশম গ্রেড, সহকারী শিক্ষক ১২তম