শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

ধারাবাহিক উপন্যাস, পর্ব: ৭

অঘ্রানের অন্ধকারে

শাবিনের দুহাত জোড়া কেকের প্যাকেট আর ফুল। সে ডোরবেল বাজাবে কীভাবে বুঝতে পারছে না। রিকশা থেকে নেমে অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকতে গিয়ে বৃষ্টিতে মাথা ভিজে গেছে। চোখের পাতায় বৃষ্টির পানি ঝুলে আছে। তাকাতেও অসুবিধা হচ্ছে। বেশ কসরত করে নাক দিয়ে লিফটের বাটন চেপে এখানে এসেছে।
আজ তুরির জন্মদিন। তুরি বলল, ‘নিকেতনে আসতে পারবেন?’
‘সেখানে কী?’
‘বান্ধবীর বাসা। সেখানে বার্থডে সেলিব্রেট করব। বান্ধবী আমাদের জন্য রান্না করবে বলেছে।’
তুরির জন্য শাবিন দুটো বই আর আড়ং থেকে নোটবুক কিনেছে। কালো কাপড় দিয়ে মোড়ানো। তারওপর সাদাসুতো দিয়ে নকশি সেলাই।
দরজা খুলে গেছে। তুরি দাঁড়িয়ে আছে সামনে। শাবিন অবাক হয়ে বলল, ‘বুঝলেন কীভাবে আমি এসেছি। বেল বাজাইনি।’
চোখের দুই পাতা নাচিয়ে তুরি বলল, ‘ম্যাজিক।’
শাবিন হেসে বলল, ‘নিজেকে অত বুদ্ধিমতী ভাবার কিছু নেই। সিসি ক্যামেরা আছে।’
তুরি হাসছে। তার পাশে একজন মেয়ে এসে দাঁড়িয়েছে। তুরি বলল, ‘আমার বন্ধু, সিলভিয়া।’
ব্যস্ত হয়ে সিলভিয়া বলল, ‘ভিজে গেছেন।’
শাবিন বলল, ‘ও কিছু না। একটু।’
বলে ডাইনিঙের টেবিলে কেক রাখল। ফুলের তোড়া আর নোটবুক তুরির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,‘ হ্যাপি বার্থডে।’
তুরির চোখ জলজল করছে। মনে হচ্ছে সেখানে পানি জমেছে। উপচে পড়বে এখুনি। আস্তে করে বলল, `থ্যাংকস।‘
সিলভিয়া বলল, `ঘরে এসে বসুন।’

শাবিন হাত দিয়ে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে ড্রয়িংরুমে গিয়ে বসল। সাজানোগোছানো ছোটো বাসা। দক্ষিণ পাশে বারান্দা। ওদিকে রাস্তা। অনেকখানি খোলা জায়গা। আলোবাতাস আছে যথেষ্ট। রাস্তার ওপাশে অ্যাপার্টমেন্ট নেই। কন্সট্রাকশন হচ্ছে। তার ওদিকে মেইনরোড।
শাবিন বলল, `বাসায় আর কাউকে দেখছি না!’
সিলভিয়া বলল, `বসুন। চা নিয়ে আসছি। ভাই আর ভাবি থাকেন। তারা কক্সবাজার গেছেন। আমারও যাওয়ার কথা ছিল। আগামী পরশু পরীক্ষা আছে। যেতে পারলাম না।’
সিলভিয়া কিচেনে চলে গেল। তুরি চুপচাপ বসে আছে সামনে। শাবিন বলল, `আপনার অন্য বন্ধুরা আসবে?’
‘আর কেউ আসবে না। আপনি, আমি আর সিলভিয়া। সারাদিন এখানে থাকব। রান্না করব, খাব। নিজেদের মতো সময় কাটাব। আমি বলে এসেছি। আপনি বাসায় জানিয়ে দিন।’
শাবিন কিছুটা অবাক হয়ে বলল, `দিচ্ছি। কিন্তু...’
ভয় পাচ্ছেন? `ভয়ের কিছু নেই। আমরা দুজনই অতি ভালো মানুষ। আপনার কোনো ক্ষতি করব না।’
সিলভিয়া ঘরে ঢুকল লাফাতে লাফাতে। হাত নেড়ে বলল, `তুরি ভদকা খাবি? ডোন্ট মাইন্ড, শাবিন ভাই। আজ থেকে আমরা বন্ধু।’
শাবিন খানিকটা হাসিহাসি মুখ করে বলল, ‘না না ঠিক আছে। লেটস এনজয়। তুরির জন্মদিন আজ।’
তুরি কেমন যেন স্থির হয়ে বসে আছে। তাকে কিছুটা বিব্রত দেখাচ্ছে। শাবিনের মনে হলো বিব্রত হওয়ার তো কিছু নেই।
সিলভিয়া বলল, ‘ভাই-ভাবি যাওয়ার পর আমার বয়ফ্রেন্ড এক বোতল ভদকা দিয়ে গেছে। তার খানিকটা আছে এখনো। অবশ্য তাতে ডাবের পানি মিশিয়েছি। ডাবের পানি দিয়ে ভদকা খেতে অসাম লাগে।’
তুরি বলল, ‘এখন চা খাওয়া। আসছি আমি।’
সিলভিয়ার সঙ্গে তুরি চলে গেল। শাবিন ঘরে একা বসে আছে। ঘরের এককোনায় বুকসেলফ। সব ইংরেজি বই। শাবিন বাংলায় লেখা বই খুঁজল। সেখানে বাংলা কোনো বই নেই। দেয়ালে ওয়াল পেইন্ট। অনেকক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থেকে শাবিন তার কিছু বুঝতে পারল না। ঘরের একপাশে হারমোনিয়াম আর ডুগি-তবলা সাজানো। শাফিন বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল। বৃষ্টি নেই। আকাশে কালো মেঘ আছে।

চায়ের সঙ্গে ফ্রেন্সফ্রাই আর স্যান্ডউইচ নিয়ে এসেছে। সিলভিয়া বলল, ‘হুপ করে খেয়ে নিন তো। ঠান্ডা হয়ে যাবে। স্যান্ডউইচ বানিয়েছে তুরি।’
শাবিনের খেতে ইচ্ছে করছে না। সে ভেবেছিল কয়েকটা ফ্রেন্সফ্রাই খাবে শুধু। সিদ্ধান্ত বদলে স্যান্ডউইচ খেয়ে নিল।
চা থেকে সুন্দর গন্ধ আসছে। কী চা কে জানে। দুধ চিনি দিয়ে বানানো। চায়ের রং হয়েছে অসাধারণ।
চায়ে চুমুক দিয়ে সিলভিয়া বলল, ‘মেয়েদের সিগারেট খেতে দেখলে অনেকের চোখ খুলে মাটিতে পড়ে যায়। আশা করি আপনার সেরকম কিছু হবে না।’
সিগারেটের প্যাকেট বের করে সিলভিয়া এগিয়ে দিলো শাবিনের দিকে। শাবিন বলল, ‘আমি অ্যামেচার। রেগুলার না।’
‘আমিও আপনার মতো। ভাই-ভাবি বাসায় নেই। তাই মাস্তি করে নিচ্ছি। তা নাহলে বাসায় সিগারেট, মদ—অসম্ভব।’
শাবিন প্যাকেট থেকে সিগারেট টেনে নিল। সিলভিয়া হাত বাড়িয়ে তুরিকে সিগারেট অফার করল। তুরি নেয়নি। বলল, `নারে খাব না। সিগারেট খাওয়ার পর অনেকক্ষণ মাথার ভেতর কেমন যেন ভোঁতাভাব হয়ে থাকে।’
কেক কাটা হয়েছে হইহই করে। তিনজন একসাথে গলা ছেড়ে জন্মদিনের গান গাইল। প্রত্যেকে প্রত্যেককে কেকের টুকরো মুখে তুলে খাইয়ে দিয়েছে। সিলভিয়া দুহাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরল তুরিকে। অনেকক্ষণ ধরে রাখল।  

দুপুরে খাওয়া হলো দুর্দান্ত। তিনজন মানুষের জন্য রান্না, মনে হচ্ছে বারোজন খেতে পারবে। সাদা ভাত, কয়েকরকমের শাক-সবজি, ভর্তা, মাছভাজা, মাছের ঝোল তরকারি, চিকেন, বিফ, সালাদ, ডাল। শাবিন ধীরেসুস্থে আরাম করে খেয়েছে। খেতে খেতে জানতে চাইল, `গান গায় কে?’
সিলভিয়া বলল, `বড়ো আপা। রেগুলার রেওয়াজ করার সময় পায় না। তার বারোভাজা কাজ।’
তুরি বলল, `সিলভিয়াও ভালো গায়।’
সিলভিয়া বলল, ‘ঘরে হারমোনিয়াম থাকলে সবাই গাইতে পারে। ভালো গাই না। তবে গাই। মানে চেষ্টা করি।’
শাবিন বলল, ‘তাতেই হবে। আজ আপনার গান শুনব।’
‘তুরিও গান গায়, ভালো।’
‘তার গানও শুনব।’
তুরি বলল, ‘আজ না, আরেকদিন।’

তুরি খাচ্ছে না। সে হাত গুটিয়ে বসে আছে। ওদের কথা শুনছে। তারা এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছে না যে ভাত না খেয়ে হাত গুটিয়ে কথা শুনতে হবে।
শাবিন বলল, `খাচ্ছেন না যে!’
সিলভিয়া হাসছে। মিটমিটি হাসি। কিছুটা দুষ্টুমি খেলা করছে হাসিতে। ঠোঁটে হাসি ঝুঁলিয়ে রেখে বলল, `আমাদের এখানে কাউকে খাবার তুলে দেওয়ার ট্রেডিশন নেই। কেন জানি মনে হচ্ছে তুরির খুব ইচ্ছে করছে আপনাকে খাবার তুলে খাওয়াতে।’
লজ্জা পেয়ে তুরি বলল, `যাহ্।’
শাবিন বলল, ‘নিজের খাবারটুকু নিজে নিয়ে খেতে পছন্দ করি। তবে আপনি চাইতে তুলে দিতে পারি।’
সিলভিয়া মুখের খাবার চিবিয়ে গিলে নিয়ে বলল, ‘গান আমি শোনাব, আমার একটা শর্ত আছে।’
‘কী শর্ত? পে করতে হবে? আপনার গান তবে অমূল্য নয়!’
`উহু তা নয়। আমরা বয়সে আপনার এক বা দুবছরের ছোটো হলেও ছোটো। আপনি আমাদের ‘তুমি’ করে বলবেন। বলুন, তুরি, তোমাকে কি আরেকটু রাইস দেব?’
শাবিনের মুখে ভাত ছিল। হাসতে গিয়ে মুখের ভাত বের হয়ে আসছিল প্রায়। হাতের উলটোপিঠ দিয়ে আটকাল। হেসে বলল, `তুরি আমি কি তোমাকে আরেকটু রাইস দিতে পারি?’
তুরি অমনি লজ্জা পেয়েছে। প্লেট তুলে নিজের কোলের দিকে টেনে নিয়ে বলল, `না না, আমার খাওয়া শেষ।’

 দুপুরের পর খেপাটে বৃষ্টি শুরু হলো। খাওয়া শেষে ওরা ড্রয়িংরুমে ছড়িয়েছিটিয়ে বসল। স্টেরিওতে গান বাজছে। তারা তিনজন সিগারেট জ্বালালো।
শাবিন ভেবেছিল বৃষ্টি ছাড়লে চলে যাবে। বৃষ্টি ছাড়ল সন্ধ্যার আগ দিয়ে। মেঘ কাটল না। আকাশ ঘন কালো মেঘে ভারী হয়ে থাকল।
সিলভিয়া বলল, `সন্ধ্যার পর গান শোনাব। তারপর আমরা কার্ড খেলব। বাসায় বলে দিন বন্ধুর এখানে আছেন। আজ ফিরবেন না।’
শাবিন যে মাঝেমধ্যে বন্ধুর বাসায় রাতে থাকে না এমন নয়। তবে আজকের ব্যাপারটা সম্পূর্ণ অন্যরকম। সে কখনো এমন পরিস্থিতিতে থাকেনি। শুরুতে খানিকটা অস্বস্তি লাগলেও এখন তেমনকিছু মনে হচ্ছে না। টেলিফোনে মাকে বলল, `মা, বৃষ্টি হচ্ছে খুব। রাতে ফিরব না। ফ্রেন্ডের বাসায় থেকে গেলাম।’

সন্ধ্যা মিলিয়েছে কিছুক্ষণ হলো। ওরা তিনজন ফ্লোরে বসে আছে। সিলভিয়া ভদকা নিয়ে এসেছে। তিন গ্লাসে ভদকা ঢালল। তিনজন হাতে নিয়ে গ্লাসে গ্লাসে লাগিয়ে বলল, ‘চিয়ার্স।’
শাবিন বলল, `তুরির জন্য শুভকামনা।’
সিলভিয়া বলল, `তার মনের সকল আশা পূরণ হোক।’
বোতলে একেবারে কম নেই ভদকা। সিলভিয়া বেশ দ্রুত খাচ্ছে। তার দেখাদেখি মনে হলো তুরিও বেশি খাচ্ছে। শাবিন তখনো প্রথম গ্লাস শেষ করতে পারেনি। সিলভিয়া আর তুরি দ্বিতীয় গ্লাস নিয়েছে।
শাবিন বলল, `গান!’
সিলভিয়া হারমোনিয়াম ছাড়া খালি গলায় গান গাইল। তার গানের গলা ভীষণ রকমের সুন্দর। সে গাইছে জলের গান ব্যান্ডের গান। রাহুর আনন্দ গায়।

“এমন যদি হতো
আমি পাখির মতো উড়ে উড়ে বেড়াই সারাক্ষণ
পালাই বহুদূরে... ক্লান্ত ভবঘুরে
ফিরব ঘরে, কোথায় এমন ঘর।”

তুমুল বৃষ্টি নেমেছে। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। তার ভেতর মনে হচ্ছে সময় স্থির হয়ে আছে। সময় এগুচ্ছে না। ভদকা শেষ হয়ে গেছে। এখন ওরা শুধু সিগারেট খাচ্ছে।
গান শেষ করে সিলভিয়া কখন উঠে গেছে শাবিন খেয়াল করেনি। তুরির দিকে তাকিয়ে মনে হলো তার নেশা হয়েছে। সে অদ্ভুত ভঙ্গিতে দুলছে। দুলতে দুলতে বলল, `আমার কোথাও যাওয়ার নেই। আমার কোথাও থাকার নেই।’
`কী হয়েছে, তুরি?’
`আমার খুব খারাপ একটা ঘটনা আছে। আমি আর বড়ো আপা ছাড়া কেউ জানে না। মা জানত। এখন তো মা নেই। বাবাকে জানানো হয়নি। ইচ্ছে করছে আপনাকে জানাই। কিন্তু কেন জানাব!’
শাবিনের কী যেন হলো। সে উঠে এসে তুরির মাথায় হাত রাখল। আলতো গলায় বলল, `আমাকে সব বলা যায়, তুরি। আমাকে কিছু বলার জন্য কারণ দরকার হয় না।’
তুরি চুপ করে আছে। শাবিন সামনে বসল। হাতদুটো নিজ হাতের মুঠোর ভেতর নিয়ে বলল, ‘বলো।’
লম্বা শ্বাস টানল তুরি। বুকের ভেতর বাতাস ভরে নিল। চোখ তুলে শাবিনের দিকে তাকিয়েছে। এলোমেলো প্রবল বৃষ্টির শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। আশপাশে সিলভিয়াকে দেখা যাচ্ছে না।
তুরির লেখা নোটবুকে নিচের অংশটুকু পড়ে উপন্যাসে জন্মদিনের ব্যাপারটা সাজিয়েছি। তুরি নোটবুকে যা লিখেছে সেটুকু এখানে লিখলাম। তুরি জন্মদিনে মদ খেয়ে মাতাল অবস্থায় শাবিনকে বলে গেল তার সেই অ্যাক্সিডেন্টের একান্ত ব্যক্তিগত কথা।
`ক্লাস নাইনে পড়ার সময় এক ছেলের সঙ্গে পালিয়েছিলাম। তখন আমার বয়স পনেরো বছর। নানানরকম ফ্যাশন করি। নিজেকে হিন্দি সিনেমার নায়িকাদের মতো বানিয়ে রাখতে চাই। মিটুন নামে আমাদের পাড়ায় এক ছেলে ছিল। তার বাবা কন্ট্রাক্টরি করেন। সেই ছেলে সরকারি দলের ক্যাডার। বিশাল ক্ষমতা। মোটর সাইকেল চড়ে ঘুরে বেড়ায়। চোখে সবসময় সানগ্লাস দিয়ে রাখে। তাকে দেখতে হিন্দি সিনেমার নায়কের মতো দেখা যায়। মিটুনের প্রেমে পড়ে গেলাম।’
মিটুন বলল, `চলো বিয়ে করে ফেলি।’
আমি বললাম, `চলো।’
মিটুনের মোটর সাইকেলে চড়ে ওড়না আর মাথার চুল উড়িয়ে অনেকদূরে চলে যেতে চেয়েছিলাম। মিটুন আমাকে নিয়ে গেল মাইক্রোবাসে। আমি মিটুনের সঙ্গে পালালাম।
ফাঁকা একটা বাড়িতে সে আমাকে নিয়ে রাখল। কার বাড়ি জানি না। মিটুন সেই বাড়িতে আমার সঙ্গে থাকে। তিন দিন ছিল। আমরা খুব মজা করতাম। আমাদের দুজনের একান্ত সময়গুলো মিটুন ভিডিও করত। সেই বাড়িতে বড়ো স্ক্রিনের টেলিভিশন ছিল। প্রথম-প্রথম সেসব ছবি দেখতে লজ্জা লাগত। পরে ভালো লাগতে শুরু করল। কেমন যেন উত্তেজনা বোধ করতাম। নিষিদ্ধ উত্তেজনা। মিটুন আমাকে পর্ণো ছবি দেখিয়েছিল। আমি ছবিতে দেখা ওদের মতো করে নিজেকে বানাতে চেয়েছিলাম। নিজেকে একরাতে শরীর আর মনে পর্ণস্টার বানিয়ে ফেললাম। মিটুন তাতে দারুণ খুশি হলো। যত রকমভাবে শারীরিক সুখ নেওয়া যায়, নিতে চাইলাম।

তীব্র ব্যথায় আমার শরীর কেঁপে উঠত। প্রথমবার শক্ত করে মিটুনের পিঠ খামচে ধরে প্রচন্ড জোরে চিৎকার দিয়ে উঠেছিলাম। নিজেকে বোঝাতাম। মানিয়ে নিতে চাইতাম। একসময় শরীর অভ্যস্ত হয়ে এলো। আমার শরীর ব্যাপারটাতে যত অভ্যস্ত হয়ে উঠল মিটুন তত বেশি বুনো হয়ে পড়ল।
সেখানে শুধু আমি আর মিটুন। সেই সময়গুলো কী অদ্ভুত সুন্দর ছিল। নতুন এক জীবনের স্বাদ পেয়ে বিয়ের কথা ভুলে গেলাম।
তিন দিনের দিন আমার বিয়ের কথা মনে পড়ল। মিটুনকে বললাম, `কাজি কই? আমাদের বিয়ে!’
সে বলল, `গুছিয়ে নিতে সময় লাগবে। বিয়ের পর এখানে থাকা যাবে না। নিজের বাসায় যেতে হবে।’
`এটা কার বাসা?’
`বন্ধুর চাচাতো বোনের। তার বোন-দুলাভাই ছেলেমেয়ে নিয়ে নেপালে গেছে বেড়াতে। বাসার চাবি বন্ধুকে দিয়ে গেছে গাছে পানি দেওয়ার জন্য। তার কাছ থেকে আমি নিয়েছি।’
তারপরের দিন মিটুন এলো না। তার ফোন বন্ধ। অস্থির হয়ে পড়লাম। মিটুন এলো পরের দিন। চোখ লাল টকটকে। এলোমেলো চুল। রুক্ষ মেজাজ।
বললাম, `কী হয়েছে?’
সে বলল, `মার্ডার। শহরে খুন হয়েছে। সেই খুনের সঙ্গে আমার নাম চলে এসেছে।’
`তুমি খুন করেছ?’
`ধ্যাত। পুলিশের কাছে গিয়ে অপোজিশন আমার নাম বলেছে।’
`সরকার তোমাকে প্রটেকশন দেবে।’
`আলোচনা শুনছি জেলা কমিটি থেকে আমাকে বহিষ্কার করবে। তখন পুলিশ এসে অ্যারেস্ট করবে আমাকে।’
`এখন কী হবে?’
`নেগোসিয়েশন হয়ে গেছে। আপাতত শহর ছেড়ে চলে যাব। মামলা ঘুরে গেলে আসব।’
‘আমি কী করব?’
‘তুমি বাড়ি ফিরে যাও।’
‘আমাদের বিয়ে?’
‘পাগল হয়ে গেছ? এখন বিয়ের কথা বলছ! জেলে যাব নাকি বর্ডার পার হয়ে চলে যাব তার ঠিক নেই।’

গভীর চিন্তার ভেতর পড়ে গেলাম। মিটুন বলল, `এখন বিয়ে করা যাবে না। সবাই বলবে বাচ্চা মেয়েকে ভাগিয়ে এনে বিয়ে করেছি। আমার পলিটিক্যাল ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যাবে। তুমি নিশ্চয় চাও আমি আরও ওপরে উঠি। এমপি ইলেকশন করি।’
`বাড়ি গিয়ে কী বলব?’
`বলবে ইশকুলের পাশ থেকে চার-পাঁচজন লোক জোর করে ধরে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। চোখ বেঁধে নিয়ে গিয়েছিল। কোথায় নিয়ে গেছে তা তুমি জানো না। তুমি কাউকে চিনতে পারোনি।’
আমার জেদ চেপে গেল। বুঝে ফেলেছি মিটুন আমাকে বিয়ে করবে না। তার যা চাওয়ার ছিল সে পেয়ে গেছে। এখন আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে।
বললাম, `তোমার কথা বলে দেব। আামার পেটে যদি তোমার সন্তান আসে।’
মিটুন ঠান্ডা গলায় বলল, ‘ভিডিয়োগুলো আমার কাছে। এডিট করব। সেখানে আমাকে দেখা যাবে না। দেখা যাবে তোমাকে। তুমি বেহেস্তি আনন্দে সেক্স করছ।’
থমকে গেলাম। মিটুনকে খুন করতে ইচ্ছে হচ্ছিল। কিছুই করতে পারলাম না। ঝরঝর করে কাঁদতে থাকলাম।

মিটুন বলল, ‘তোমার খুব ভালো বিয়ে হবে। তুমি অসম্ভব সুন্দরী। বিয়ের পরও যদি এ কথা তোমার মুখ দিয়ে বের হয় তখনো ওই ভিডিয়ো নেটে ছেড়ে দেব। মনে রাখবে। বাড়ি যাও। গাড়ি তোমাকে ইশকুলের সামনে নামিয়ে দেবে। ওখান থেকে হেঁটে বাড়ি চলে যাবে।’
আমি বাড়ি চলে এলাম।
তারপর লিখলাম।
তুরি কাঁদছে। তার পিঠ ওঠানামা করছে। বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে তুরির কাহিনি। তুরির চোখে পানি। গড়িয়ে পড়বে বলে চোখের কোণায় জমে আছে।
শাবিন উঠে এসে তুরির পিঠে হাত রাখল। তুরির চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ল গালে। তুরি ঝরঝর করে কেঁদে যাচ্ছে। শাবিনের ইচ্ছে করছে তুরিকে বুকের ভেতর জড়িয়ে ধরতে। তুরির মাথায় হাত দিয়ে আস্তে আস্তে চুলে বিলি কাটতে থাকল। তুরির কান্না থামল না।
শাবিন নিজেকে আটকাল না। তুরিকে বুকের ভেতর টেনে নিল। তুরি আচমকা জড়িয়ে ধরল শাবিনকে। যেন সে পরম নির্ভরতার আশ্রয় খুঁজছিল। শাবিনকে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কাঁদতে থাকল। তুরিকে বুকের ভেতর শক্ত করে চেপে ধরে শাবিন ওর পিঠে হাত বোলাচ্ছিল।
তুরি দুহাত দিয়ে শাবিনের শার্ট আঁকড়ে ধরে কেঁদে গেল। তুরির চোখের পানিতে শাবিনের শার্ট ভিজে উঠল। তুরির কান্না থামাল না।

 
বাইরে মাতাল বৃষ্টি। চারপাশ ভাসিয়ে মুষলধারে ঝরে যাচ্ছে।
রাতের খাওয়া হলো সামান্য। দুপুরে যা ছিল তাই গরম করে ওরা খেয়ে নিল। তুরি বলল, আমি কিছু খাব না।
সিলভিয়া জোর করল। অল্পকিছু মুখে দিয়ে তুরি উঠে পড়ল। শাবিনও খেয়েছে সামান্য।
সে রাতে শাবিন আর তুরি একসাথে থাকল। সিলভিয়া ওদের নিজের ঘরে রেখে ভাই-ভাবির বেডরুমে চলে গেছে। যাওয়ার আগে বলল, `ভীষণ টায়ার্ড লাগছে। ঘুমুতে গেলাম। তোরা গল্প কর। আমাকে ডাকবি না। শোন, আমি কিন্তু দরজা লক করে ঘুমাব। কোনো দরকার হলে মোবাইলে কল দিবি।‘
সিলভিয়া চলে যাওয়ার পর ঘরে শাবিন আর তুরি একা হয়ে গেল। হাঁটু মুড়ে দলা পাকিয়ে বিছানার ওপর বসে আছে তুরি। তাকে দেখে মায়া লাগছে। মনে হচ্ছে সে এই পৃথিবীর সবচেয়ে দুঃখী মানুষ।

শাবিন টানটান হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল। তুরির পাশে এত সাবলীলভাবে সে শুয়ে পড়তে পারবে ভাবেনি। কিন্তু পারল। তুরি তার মাথায় হাত রাখল। ধীরে ধীরে চুলে বিলি কাটল। গালে থুতনিতে গলায় হাত বুলাল।
তুরির স্পর্শের ভেতর কিছু ছিল। শাবিন যেন বুঝতে পারল সেই কিছু ব্যাপারটা। উঠে গিয়ে ঘরের আলো নিভিয়ে দিলো। ঘর হয়ে গেল পুরোপুরি অন্ধকার।
শাবিন আদরমাখা হাতে তুরির শরীর থেকে একটা একটা করে সমস্ত কাপড় খুলে নিল। তুরি বাধা দিলো না। শাবিন নিজের কাপড় খুলে ফেলল।
বৃষ্টি হয়তো কিছুক্ষণ থেমেছিল। এখন বাইরে আবার বৃষ্টির তোড় বেড়েছে। উত্তাল বৃষ্টি। দারুণ বৃষ্টিভেজা রাত একটু একটু করে তাদের দুজনকে উষ্ণ করে তুলল।
ততক্ষণে ঘরের আলো চোখে সয়ে এসেছে। জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে রাস্তার আলো এসে ঘরের ভেতরটা আবছা আলোকিত করে রেখেছে। তারা দুজন বিছানায় পরস্পরকে নগ্ন অবস্থায় আবিষ্কার করল।

শাবিন শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে তুরিকে। তাকে কোনোভাবেই ছাড়তে চায় না। তুরি খামচে ধরে আছে। তুরির পুরো শরীরে শাবিন পাগলের মতো চুমু দিতে থাকল। চুমু দিতে দিতে উন্মত্তের মতো হয়ে গেল। খেপা, একরোখা।
তুরি গোঙাচ্ছে। শাবিন ডুব দিলো। ডুবে যেতে থাকল। তুরি তার পিঠ খামচে ধরে আছে। তুরির নখ বসে যাচ্ছে শাবিনের পিঠে। ভিজে যাচ্ছে তুরির শরীর। নিজেকে মেলে ধরেছে।
একসময় ওরা শান্ত হয়ে এলো। তুরির মুখের ওপর লেপটে থাকা চুল সরিয়ে শাবিন চুমু খেয়েছে। গালে গাল ঘষেছে। তুরি কাত হয়ে শুয়ে পড়ল। সে কাঁদছে। তার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে বালিশে। শাবিনের অস্বস্তি লাগছে। তুরি কেন কাঁদছে ধারণা করতে পারছে না।
বাইরে বৃষ্টি কমে এসেছে। হালকা ঝিরঝির বৃষ্টি পড়ছে। শাবিন কী করবে বুঝতে পারল না। উঠে গিয়ে বারান্দার দিকের দরজা খুলে দিয়ে সিগারেট জ্বালালো  । ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল তুরি তখনো নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছে।  

 (চলবে)

 

পর্ব ৬: অঘ্রানের অন্ধকারে

পর্ব ৫: অঘ্রানের অন্ধকারে

পর্ব ৪: অঘ্রানের অন্ধকারে

পর্ব ৩: অঘ্রানের অন্ধকারে

পর্ব ২: অঘ্রানের অন্ধকারে

পর্ব ১: অঘ্রানের অন্ধকারে

Header Ad

খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করলেন মাহফুজ-আসিফ-নাহিদ

ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে কুশল বিনিময় করেছেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে তাদের এ কুশল বিনিময় হয়।

সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়া পৌঁছালে উপস্থিত সবাই তাকে স্বাগত জানান। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৩ সমন্বয়ক ও সরকারের উপদেষ্টা তার পাশে এসে দাঁড়ান এবং শারীরিক খোঁজখবর নেন। এ সময় খালেদা জিয়া তাদের অভিনন্দন জানান এবং দেশকে এগিয়ে নিতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার পরামর্শ দেন।

এ সময় এই ৩ উপদেষ্টা বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে দোয়া চান এবং সরকারের সংস্কার কাজে তার সর্বাত্মক সহযোগিতা চান।

এদিকে সেনাকুঞ্জে গেলে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়া এখানে এসেছেন। একযুগ তিনি আসার সুযোগ পাননি। আমরা গর্বিত এই সুযোগ দিতে পেরে। দীর্ঘদিনের অসুস্থতা সত্ত্বেও বিশেষ দিনে সবার সঙ্গে শরিক হওয়ার জন্য আপনাকে আবারও ধন্যবাদ। আপনার আশু রোগমুক্তি কামনা করছি।

Header Ad

দেশের বাজারে আবারও বাড়ল স্বর্ণের দাম

ছবি: সংগৃহীত

আবারও স্বর্ণের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। এবার ভরিতে ১ হাজার ৯৯৪ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৩৯ হাজার ৪৪৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা আজকেও ছিল এক লাখ ৩৭ হাজার ৪৪৯ টাকা।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বাজুস। শুক্রবার (২২ নভেম্বর) থেকেই নতুন এ দাম কার্যকর হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য বেড়েছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি ভরি ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম পড়বে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৪৪৩ টাকা। এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯৮ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১৪ হাজার ৮৬ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯৩ হাজার ৬৭৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বাজুস আরও জানায়, স্বর্ণের বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে সরকার-নির্ধারিত ৫ শতাংশ ভ্যাট ও বাজুস-নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি ৬ শতাংশ যুক্ত করতে হবে। তবে গয়নার ডিজাইন ও মানভেদে মজুরির তারতম্য হতে পারে।

স্বর্ণের দাম কমানো হলেও দেশের বাজারে অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম। দেশে ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫৭৮ টাকায়। এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ২ হাজার ৪৪৯ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ২ হাজার ১১১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি রুপা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫৮৬ টাকায়।

এর আগে, সবশেষ গত ১৯ নভেম্বর দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম সমন্বয় করেছিল বাজুস। সে সময় টানা চার দফা কমার পর ভরিতে ২ হাজার ৯৪০ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৪৯ টাকা নির্ধারণ করেছিল সংগঠনটি।

এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৩১ হাজার ১৯৭ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১২ হাজার ৪৫৩ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯২ হাজার ২৮৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। যা কার্যকর হয়েছে গত ২০ নভেম্বর থেকে।

এ নিয়ে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত দেশের বাজারে ৫১ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। যেখানে ৩০ বার দাম বাড়ানো হয়েছে, আর কমানো হয়েছে ২১ বার।

Header Ad

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’

ছবি: সংগৃহীত

দেশের জনপ্রিয় নির্মাতা আশফাক নিপুন। কাজের পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমেও বেশ সরব তিনি। কথা বলেন নানা ইস্যু নিয়ে। সেই ধারাবাহিকতায় সরকার পতনের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনেও বিভিন্ন সময় নিজের আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যেও বিভিন্ন বার্তা দিয়েছেন। এবার এমনি একটি বার্তায় দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জনগনের আস্থার বিষয়ে আক্ষেপ জানালেন এই নির্মাতা।

বুধবার (২০ নভেম্বর) আশফাক নিপুন তার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে লেখেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সর্বস্তরের ছাত্র এবং সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল, বাসায় বসে বসে দোয়া করেছিল, যার যা সামর্থ্য দিয়ে সহায়তা করেছিল। কারণ, তারা দেখেছিল লড়াইটা আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শাসক বনাম সাধারণ ছাত্র-জনতার। এটাও অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই যে এই আন্দোলন বেগবান করতে বিরোধী সকল দলের কর্মীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাদের সংগ্রামও গত দেড় দশকের। কিন্তু এটা যদি শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার লড়াই হতো তাহলে সাধারণ মানুষ এই লড়াই থেকে দূরে থাকত। সেই প্রমাণ বিগত ১৫ বছরে আছে।

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ এখনো দেশের কোনো রাজনৈতিক দলকেই পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারে না। এটাই বাস্তবতা। এই বাস্তবতা মেনে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত কীভাবে সাধারণ জনগণের ভেতর নিজের দলের প্রতি আস্থা তৈরি করা যায় সেই বিষয়ে নিরলস কাজ করা। এই আস্থা ক্ষমতায় গিয়ে অর্জন করা সম্ভব না। কারণ, সাধারণ মানুষ আজীবন এস্টাবলিশমেন্টের বিপক্ষে। এই আস্থা অর্জন করতে হয় ক্ষমতা বলয়ের বাইরে থেকেই।

নিপুন আরও লিখেন, অরাজনৈতিক সরকার দিয়ে দীর্ঘদিন দেশ চালানো যেমন কাজের কথা না ঠিক তেমনি রাজনৈতিক সরকার হতে চাওয়া সকল রাজনৈতিক দলগুলোর বোঝা উচিত মুক্তিযুদ্ধের পরে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে সকল প্রকার পূর্বানুমান (যেমন- বর্ষাকালে আন্দোলন হয় না, নির্বাচনের আগেই কেবল জোরেশোরে আন্দোলন হয়, ঘোষণা দিয়ে বিরোধী সকল পক্ষ আন্দোলনে শামিল না হলে সফল হয় না) অগ্রাহ্য করেই। সেটা সম্ভব হয়েছে সাধারণ মানুষের ন্যায্যতার আকাঙ্ক্ষা থেকেই।

সবশেষ এই নির্মাতা লিখেছেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের এই আকাঙ্ক্ষার দুই পয়সার দাম দেন নাই। সাধারণ মানুষের এই আকাঙ্ক্ষা, ইচ্ছা আর দেশপ্রেমকে পুঁজি করে অরাজনৈতিক এবং রাজনৈতিক যারাই রাজনীতি রাজনীতি খেলতে চাইবে, তাদের দশাও কোন একসময় যেন পলাতক শেখ হাসিনার মতো না হয়, সেই বিষয় নিশ্চিত করতে হবে তাদেরকেই।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করলেন মাহফুজ-আসিফ-নাহিদ
দেশের বাজারে আবারও বাড়ল স্বর্ণের দাম
‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’
‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’: প্রধান উপদেষ্টা
নওগাঁ শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু
২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে নির্বাচন হতে পারে: উপদেষ্টা সাখাওয়াত
সেনাকুঞ্জে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে খালেদা জিয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ৫ জনকে রোবটিক হাত উপহার
সেনাকুঞ্জের পথে খালেদা জিয়া
সুযোগ পেলে শেখ হাসিনার পক্ষে মামলায় লড়ব: জেড আই খান পান্না
নির্বাচন কমিশন গঠন, সিইসি হলেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব নাসির উদ্দীন
ডিএনএ টেস্টের ফলাফল: ভিনিসিয়ুসের পূর্বপুরুষ ছিলেন ক্যামেরুনের
জামিন পেলেন সাংবাদিক শফিক রেহমান
বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে আসা সেই শাহজাহান ওমর গ্রেপ্তার
মিরপুর ও মহাখালীতে অটোরিকশা চালকদের সেনাবাহিনীর ধাওয়া
‘শেখ হাসিনা এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী’, এমন কথা বলেননি ট্রাম্প
লেবাননে ৮ শতাধিক ইসরায়েলি সেনা নিহত
ভারতে সাজাভোগ শেষে দেশে ফিরল ২৪ বাংলাদেশি কিশোর-কিশোরী
ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে অবরোধ করে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের বিক্ষোভ
গাজায় ইসরায়েলের হামলায় আরও ৮৮ ফিলিস্তিনি নিহত