বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫ | ১৬ মাঘ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

পর্ব-১

যে তুমি টলেমির বোন, বধূ

মাত্র একুশটি বছরই তিনি রাজ্য শাসন করেছেন। তার পূর্বপুরুষ ও পূর্ব নারীরা গ্রিস থেকে আগত। প্রায় তিনশো বছর আগে নীল নদের এই দেশে এসে রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর গ্রিক জন্মের গৌরববোধ থেকে যতই এদেশীয় নারীদের সঙ্গে মেলামেশা রোধে কঠোর আইন জারি করা হোক বা এমনকি রাজমুকুট ধরে রাখতে রাজ পরিবারে ভাই ও বোনের বিয়ের প্রথা চালু হোক, যেমনটা ইতিহাস জুড়েই দেখা দেয় যে বহিরাগতরা ভিন্ন ভূ-খণ্ডে এসে অনেক প্রজন্ম ধরে বাস করতে থাকলে একটা সময় রক্তের অবিমিশ্রতা আর ধরে রাখা যায় না।

মহারাজ টলেমি প্রথম সোতেরের বংশধর টলেমি দ্বাদশ ওলেতেসের কথাই ধরা যাক। তার কন্যা ফিলোপেতর কিন্তু আর দশটি গ্রিক মেয়ের মত দীর্ঘকায় নয়। বলতে গেলে খর্বকায়। বর্ণে ততটা শুভ্রাও নয়। চুল খানিকটা কোঁকড়া ও কালো, বর্ণ অনেকটাই তামাটে বা আরও সঠিকভাবে বললে প্রায় মসী বর্ণ ঘেঁষে। কিন্তু টলেমি রাজবংশে এই ফিলোপেতরই প্রথম রাজকন্যা যে মিশরীয় ভাষা শিখছে।

‘তুমি কেন এত কষ্ট করে এতগুলো ভাষা শিখছ, ফিলোপেতর?’ মহারাজা ওলেতেস কৌতূহলী হয়ে মেয়েকে জিজ্ঞাসা করেন।
‘আমার মনে হয় আজ এত এত প্রজন্ম ধরে আমরা এই দেশে বাস করছি। কিন্ত একটি দেশের মানুষের ভাষা না শিখলে বা জানলে বহিরাগতই থেকে যাওয়া হয়। আমরা কি শুধু শাসকই রয়ে যাব? এদেশের হব না কখনো? এদের ভাষাকে ভালবাসব না? জানব না? এ ছাড়া যত বেশি ভাষা জানা যায়, ততই নানা ভূ-খণ্ডের মানুষের হৃদয়ের উত্তাপ ও চিন্তার গতি-প্রকৃতি বোঝা যায়, যা একজন শাসকের জন্য খুবই কাজে লাগে।‘

মুগ্ধ বিষ্ময়ে ফিলোপেতরের দিকে তাকিয়ে থাকেন ওলেতেস। শৈশব থেকেই ফিলোপেতরের সবচেয়ে বেশি আগ্রহ নিত্য নতুন ভাষা শিক্ষায়। গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা বা ভূগোল যে সে পছন্দ করে না, তা‘ নয়। তবে একদম কোলে-পিঠে চড়ার সময় থেকে ফিলোপেতর প্রাসাদের ইথিওপীয় দাসীর কাছ থেকে চট করে শিখে নিচ্ছে অসংখ্য ইথিওপীয় শব্দ, পার্সী মালীর কাছ থেকে জেনে নিচ্ছে পার্সী ভাষায় নানা ফুলের নানা নাম, গন্ধদ্রব্য বেচতে আসা আরবীয় বণিককে জিজ্ঞাসা করছে আরবি ভাষায় বিভিন্ন গন্ধদ্রব্যের প্রতিশব্দ; গ্রিক ও লাতিন ত‘ রাজকন্যা হিসেবে তাকে পড়তেই হয়, সিরীয় ঘোড়সহিসকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জিজ্ঞাসা করছে ঘোড়াকে সিরীয় ভাষায় কি বলে, মিশরীয় পুরোহিতদের কাছ থেকে মিশরীয় আর আরামিক কবিতা সেই বালিকা বয়সেই সে শুনে শুনে পাখি পড়া করছে। আর একটু বড় হতেই ফিলোপেতরের বাবার কাছে একই দাবি বা জেদ তাকে বিভিন্ন ভাষা শেখানো হোক। ফিলোপেতরের বড় বোন কিন্তু দেখতে-শুনতে বিশুদ্ধ গ্রিক। যেমন দীর্ঘকায় তেমনি শুভ্রা। তবে সে সমরবিদ্যায় বেশি আগ্রহী। ঘোড়া ছোটাবে বা তলোয়ার চালাবে। ফিলোপেতর অশ্ব বা তরবারির চেয়ে পড়াশোনায় বেশি আগ্রহী। তা‘ দেখতে দেখতে নয়টা ভাষা অনর্গল পড়তে-লিখতে-বলতে শিখে গেল ফিলোপেতর। কেন জানি না বাদামী, কোঁকড়াচুলো ছোট মেয়ের প্রতিই মহারাজা ওলেতেসের সূক্ষ টানটি রাজপ্রাসাদের সবাই বুঝতে পারে। ওলেতেসের প্রায়ই মনে হয় তার আপাত: মিশরীয় দর্শনা এই মেয়েটি অসম্ভব প্রতিভার অধিকারী। নাহলে একটি পনেরো বছরের মেয়ে নয়টি ভাষায় অনর্গল কথা বলে স্বদেশ সহ আশপাশের নানা রাজ্যের মানুষের হৃদয় জয় করছে? ওলেতেস আরও লক্ষ্য করেছেন যে তার বিশুদ্ধ গ্রিক দর্শনা, সমরবিদ ও ঢ্যাঙ্গা লম্বা, ফ্যাকফেকে সাদা বড় কন্যার পাশে দাঁড়িয়েই শ্যামবর্ণা, হ্রস্বকায় ও কালো চুলের ফিলোপেতর যখন নয়টি ভাষায় কথা বলা শুরু করে, রাজসভায় আসা সেনাপতি-অমাত্য-মন্ত্রী ও নানা দেশ থেকে আগত পুরুষদের চেহারার অবস্থা তখন দেখার মত হয়! যেন কোনো যাদুকরী সামনে দাঁড়িয়ে তার যাদুদণ্ড দিয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে এক অনিঃশেষ মন্ত্রজাল! আর ছোট মেয়েও বাবার তেমন ন্যাওটা। বাবা রোমে যাবেন মিশরের বার্ষিক কর একটু কমানোর আবেদন করতে। ছোট মেয়ে হাজির হয়ে গেল,
‘আমি আপনার সঙ্গে চলি?’
‘বহু দূরের পথ, মা!’
‘কিছু হবে না। আমাকে আপনার সঙ্গী হতে অনুমতি ত‘ দিন?’
‘চলো তবে!’

মহারাজাও জানেন যে শুধু গ্রিক-লাতিনের আভিজাত্য নয়, দীর্ঘ অশ্ব-শিবিকা-উষ্ট্র-খচ্চরের পিঠে চলা ও আরও ক্লান্তিকর নৌপথে ফিলোপেতর শুধু নানা ভাষা বলে বলে খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে নানা দেশের ও নানা সমাজের মানুষের হৃদয় জয় করে ও তাদের নানা সাহায্য নিয়ে এই দুরূহ যাত্রা অনেকটাই সুগম করে আনবে। কিন্তু রোমে যেতে যেতে ও রোমক সিনেটরদের সঙ্গে বার্ষিক করের বোঝা কমানোর দেন-দরবার করতে করতেই যে বিশুদ্ধ গ্রিক দর্শনা, জ্যেষ্ঠ ও সমরবিদ কন্যা বেরেনিস যে নিজেই পিতার সিংহাসন নিজ অধিকারে পেতে একটি বিদ্রোহ আয়োজন করে ফেলবে, এটা ওলেতেস কল্পনাও করেননি।
‘তোমার বড় বোন বিদ্রোহ করেছে, শুনেছো?‘
‘শুনেছি।‘
‘এখন তাহলে আমরা কি করব?‘
‘রোমক সিনেটররা আপনার অনুরোধ শুনেছে। মিশরের বার্ষিক কর অনেকটাই কমাতে রাজি হয়েছে। খুব অল্প সময়ের সফরে আমরা তাদের কাছ থেকে অনেকটা হৃদ্যতা ও অন্তরঙ্গতা অর্জনে সমর্থ হয়েছি। তাদের অনুরোধ করলে কি তারা এ বিদ্রোহ দমনে আমাদের কিছু সেনা সাহায্য করবে না?’
‘তুমি বলছো কি ফিলোপেতর? এত অল্প সময়ের সফরে এত বড় অনুরোধ কি করা যায়?
‘আপনি দেখুনই না বলে!’
‘তাহলে তোমাকেই সেটা বলতে হবে। সত্যি বলতে...আমি যেন এখনি বৃদ্ধ হয়ে গেছি। এ ক‘দিন আমি শুধু তোমার সঙ্গে থেকেছি। সিনেটরদের সঙ্গে তোমার নয়টি ভাষার বাগ্মীতা দিয়ে, অসম্ভব কূটনৈতিক দক্ষতায় দেশের জন্য যা কিছু করার তুমিই ত‘ করলে। তবে কাল সকালে এই প্রস্তাবও তোমাকেই দিতে হবে।‘
‘আপনি নিশ্চিত থাকুন।‘

ওলেতেস পরিতৃপ্তির নিশ্বাস ছাড়েন। তার দুই পুত্র নিতান্তই ছোট আজো। বড় দুই মেয়েকেই তাই পুত্রের মত বড় করতে হয়েছে। বড়টি সমরবিদ্যার দিকে ঝুঁকলো ছোটটি ঝুঁকলো পাঠ ও কূটনীতিতে। তবে নৃপতি হিসেবে ওলেতেস জানেন রাজশাসনে সমরবিদ্যার চেয়েও পান্ডিত্য আর রাজনীতির জ্ঞানই বেশি কাজে দেয়। তলোয়ার চালাতে বেতনভোগী সৈনিক বা সেনাপতিরা তো থাকেই। দরকার পরিচালনার বুদ্ধি। সেটা তার ক্ষিপ্র অশ্বারোহিনী ও অসিচালিকা বড় মেয়ের চেয়ে নয়টি ভাষা জানা ছোট মেয়েরই যে ঢের ঢের বেশি তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু বড় মেয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করলো কেন? অল্প বয়সেই ওদের মায়ের মৃত্যুর পর থেকে তামাটে বর্ণা আর হ্রস্বকায় বলে টলেমি রাজবংশের সবাই গ্রিক দর্শনা বড় মেয়েটিকে বেশি ভালবাসতো বলেই ছোট মেয়ের দিকে তিনি ঝুঁকে গেছিলেন? নাকি ফিলোপেতরের প্রবল মেধাও তার দৃষ্টি টেনেছিল বেশি? সেই সুপ্ত ক্রোধ থেকেই কি এত বড় কাণ্ড ঘটালো বড় মেয়ে?

‘মহামান্য রোমক সিনেট- আমি, মিশরের নৃপতি টলেমি দ্বাদশ ওলেতেসের কন্যা ক্লিওপেট্রা সপ্তম ফিলোপেতর, মিশরের বার্ষিক কর হ্রাস করার আবেদনের প্রস্তাব গ্রহণ করায় মিশরের নৃপতি ও জনগণের পক্ষ থেকে আপনাদের কাছে আমাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও অভিবাদন জ্ঞাপন করছি। তবে, কর হ্রাসের আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠার মুহূর্তেই এক ঘোর দু:সংবাদ আমার পিতা নৃপতি টলেমি দ্বাদশ ওলেতেস ও আমার হৃদয়কে শঙ্কাকুল করে তুলেছে এবং এ বিষয়ে আমি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি!’
পঞ্চদশী ফিলোপেতর, এক মাথা সাপের ফনার মত কোঁকড়া চুল আর বাদামী বর্ণা ও হ্রস্বকায় মেয়েটি, রোমক সিনেটের অসংখ্য বর্ষীয়ান পুরুষের সামনে মাথা নিচু করে অভিবাদনের ভঙ্গিতে দু‘হাত ছাড়িয়ে মেলে দেয় তার ন‘টি ভাষার সম্ভার। রিনরিনে সুরেলা কণ্ঠস্বরে লাতিন থেকে গ্রিক, গ্রিক থেকে হিব্রু বা আরামিক, কখনো সিরীয় বা আরবি নানা রূপক-প্রবচন-উপমা-অলঙ্কারে সমৃদ্ধ তার নাতিদীর্ঘ অথচ হৃদয় জয় করা বক্তব্যে তাক লেগে যায় পক্ককেশ রোমক সিনেটরদের।
‘ওলেতেস তো দেখতে বিশুদ্ধ গ্রিক। তবে শুনেছি মিশরীয় রক্ত আছে এমন নারী বিয়ে করেছে ওদের বংশের কেউ কেউ। গত কয়েক প্রজন্ম ধরেই। সন্তান-সন্ততিরা তাই কেউ শুভ্র ও দীর্ঘকায়, কেউ কেউ স্থানীয় চেহারা পেয়েছে। কিন্ত এই মেয়েটি...বাদামী হোক আর হ্রস্ব হোক...এর জ্ঞান ও পান্ডিত্যের পাশে গ্রিক-রোমক নারী কেন, অনেক পুরুষও দাঁড়াতে পারবে না!’

‘তেমনটাই মনে হচ্ছে। এখনো দেহ পূর্ণ নারীর মত পরিপুষ্ট হয়নি- বলতে গেলে এখনো প্রায় নাবালিকা। তাতেই এই? এই মেয়ে বড় হলে কি হবে ভাবতেই ত্রাহি ত্রাহি লাগছে!’

মুগ্ধ রোমক সিনেটররা এ ওর সঙ্গে ফিসফাস করতে থাকেন।
‘হুম- ওর বাবা তো কিছুই করল না। কর হ্রাস করার আবেদন, যুক্তি পেশ, অনুরোধ-অনুনয় তো সব এই কিশোরীই করল। আহা, পিতৃপ্রাণ মেয়ে! ওর বড় বোন বিদ্রোহ করেছে? আপন পিতার বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলেছে? খুব খারাপ কথা!’
‘ভাইয়েরা এখনো ছোট ছোট। শিশু।’
‘তাহলে তো সেনা সাহায্য করাই উচিত। ফিলোপেতরের মোহিনী বক্তৃতা যে স্বর্গের দেবতারাও উপেক্ষা করতে পারবেন না!’
‘হা-হা- ঠিক বলেছো। প্রথম দর্শনে মনে হবে আদৌ সুন্দরী না। কেমন কালো রং, কালো চুল আর ছোটখাটো! কিন্তু যেই না কথা বলতে শুরু করে, অমনি ঘোর ধরে যায়!’
‘এ মেয়ে বড় হলে কি হবে?’
‘চলো-সেটা ভাবতে ভাবতেই রোম ওদের সেনা সাহায্য করুক।’

নীল নদের দুই তীরের মানুষই জানে যে নৃপতি ওলেতেস নন, তার পঞ্চদশ বর্ষীয়া দ্বিতীয়া কন্যা ফিলোপেতরই শুধু রোম থেকে মিশরের বার্ষিক কর কমিয়েই আনেনি, জ্যেষ্ঠ ভগ্নীর বিদ্রোহ দমন করতে পিতার পক্ষে বিশাল রোমক সেনাবাহিনীও নয়টি ভাষার বাগ্মীতা ও ক্ষুরধার যুক্তি ও কূটনৈতিক চাতুরি দিয়ে অর্জন করে এনেছে। সেটা সেই ৫৫ অব্দের কথা। বেরেনিস নিহত হলো বিদ্রোহ দমনের যুদ্ধে। বোঝা গেল যে দৈহিক শক্তির চেয়েও রাজনীতি আর চাতুরিই সবসময় জয়ী হয়। যেমনটা জিতে গেল- ওলেতেস অথবা ফিলোপেতর? কিন্তু বড় মেয়েকে হত্যার পর নৃপতি ওলেতেসও কেমন অবসাদে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লেন আর দ্রুতই বুড়িয়ে যেতে লাগলেন। মাত্র চার বছরের মাথায় যম তার শিয়রে এসে বসলেন।
‘ফিলোপেতর’
‘বলুন মহারাজ!’
‘আমি সম্ভবত: বেশি দিন আর বাঁচব না। বেরেনিস নিহত। তোমাকেই রাজ্য শাসন করতে হবে। কিন্তু তুমি জানো যে রাজ পুরোহিতেরা একশো ভাগ নারী শাসক পছন্দ করেন না। সেজন্যই হোক বা আমাদের এই টলেমি রাজবংশ রক্তের বিশুদ্ধতার জন্যই হোক, ভাই ও বোনের বিয়ের যে রীতি প্রচলন করে গেছেন...তোমার মা-ও আমার বোন ছিলেন! এই বংশে প্রত্যেক ভাই বা রাজাই হচ্ছে টলেমি আর প্রত্যেক বোন বা রানীই হচ্ছে ক্লিওপেট্রা। এটাই আমাদের বংশীয় উপাধি।‘
‘সে তো জানিই, পিতা! তবু এত কড়াকড়ি করেও একশো ভাগ গ্রিক বিশুদ্ধতা কি রক্ষা করা গেছে? আমি নিজেই কি দেখতে অনেকটা এদেশীয়দের মত নই?’
‘তিনশো বছর ভিন্ন এক ভূ-খণ্ডে বাস করলে রক্তের বিশুদ্ধতা রক্ষা করা যায় না। এই টলেমি রাজ বংশে বারোটি ভাই-বোন বিয়ের পরেও মিশরীয় রক্ত ঢুকে গেছে। আসলে একদম সূচনালগ্নে আমাদের পূর্বপুরুষেরা এসে স্থানীয় নারীদের সঙ্গে সম্পর্ক হলে সন্তান-সন্ততি যে আর গ্রিকদের মত হবে না, সেটা বুঝতে পারেননি। দেখতে দেখতে যখন বোঝা গেল যে রক্তের বিশুদ্ধতা আর রক্ষা করা যাচ্ছে না, তখন নিয়ম-কানুন কঠোর করা হলো ঠিকই, ভাই-বোন বিয়েও চালু হলো...তবে ততদিনেই মিশ্রণ অনেকটাই যা হবার হয়ে গেছে। যে কথা বলছিলাম...!’
‘বলুন?’
‘তোমার মা আমার বোন হলেও মাত্র এক বছরের ছোট ছিলেন। আমার পিতামহ বিয়ে করেছিলেন তার দু‘বছরের বড় বোন বা ক্লিওপেট্রাকে। মোট কথা, সব পাশাপাশি বয়সের বলে দাম্পত্যে বাধা হয়নি কিন্তু...আমি জানি...রাজশাসন ধরে রাখার জন্য তোমাকে বিয়ে করতে হবে তোমার পরের ভাই থিওস ফিলোপেতর দ্বিতীয়কে, যার বয়স মাত্র দশ। তার পরের ভাইটি আরো ছোট। আমি জানি যে উনিশ বছরের তরুণীর সঙ্গে দশ বছরের বালকের দাম্পত্য খুব সুখকর নয়। কিন্তু রাজ্যের স্বার্থে, সিংহাসনের স্বার্থে আর প্রজাশাসনের স্বার্থে...’
‘আমি আপনার নির্দেশ বুঝতে পারছি পিতা...কোন সমস্যা হবে না...যত দিন বেঁচে আছেন, আপনি তো রাজা আছেনই আমাদের সবার মাথার উপর! তারপর রাজ পুরোহিতদের নির্দেশে আমার যা যা করণীয়, সবই আমি পালন করব। অক্ষরে অক্ষরে।‘

‘রাজকুমারী ফিলোপেতর!’ মেমফিসের মন্দিরের প্রধান পুরোহিত স্বয়ং এসে রাজসভায় এসে ফিলোপেতরের সামনে দাঁড়ান।
‘আজ্ঞা করুন, প্রধান পুরোহিত!’
‘নৃপতি ওলেতেসের মৃত্যুর পর তার যাবতীয় শেষকৃত্য সুষ্ঠুভাবে পালিত হয়েছে। এই রাজ্যের নতুন শাসক হিসেবে, দেশবাসী বা প্রজামণ্ডলী আপনার ভ্রাতা টলেমি থিওস ফিলোপেতর দ্বিতীয় ও আপনার শুভ বিবাহ অনুষ্ঠানের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে।‘
‘আমার অমত নেই। রাজ্য ও প্রজামন্ডলীর মঙ্গলার্থে আমার করণীয় সবকিছুই আমি মেনে চলবো।‘
‘মিশর ও তার মানুষের জন্য আপনার প্রগাঢ় প্রেমের কথা কারো অবিদিত নয়, রাজকুমারী! আমি তবে পাঁজি-পুথি দেখে শুভ দিন-ক্ষণ স্থির করি?’
‘করুন।‘
‘জয় যুবরাজ ও যুবরাণী টলেমি থিওস ফিলোপেতর দ্বিতীয়, ক্লিওপেট্রা সপ্তম ফিলোপেতরের জয়!’
প্রধান পুরোহিত গলা তুলতেই সভায় উপস্থিত অন্য পুরোহিত, মন্ত্রী-সেনাপতি-অমাত্যবর্গ সবাই গলা তুললেও ফিলোপেতরের জন্য মৃদু অস্বস্তিও শুরু হয় অনেকের।
‘টলেমি-ক্লিওপেট্রা বা ভাই-বোন বিয়ে এই রাজবংশে নতুন কিছু নয়। দুই/তিন বছরের ছোট বোন বা এক/দুই বছরের ছোট ভাই হলে সমস্যা না। দু‘জনেই যৌবনে পৌঁছালে ওই সামান্য ব্যবধানে দাম্পত্য বা সন্তান জন্মদানে কোন সমস্যা হয় না। কিন্তু এই দশ বছরের বালক এই উনিশের যুবতীর চাওয়া-পাওয়া কি করে মেটাবে? এমন সব মুহূর্তেই রাজপ্রাসাদে দেখা দেয় সমস্যা, গুপ্ত প্রণয় ও ব্যভিচার চরমে ওঠে। এমনকি রাজনারীদের সঙ্গে কোন সুদর্শন, সুঠাম ক্রীতদাসের প্রণয়ও তখন আর অসম্ভব থাকে না।‘
‘যাক- রাজকুমারী ফিলোপেতর বরাবরই বুদ্ধিমতী, বিবেচক। দেশের স্বার্থই তার বরাবরের প্রাধান্য। আর সারাদিন তার যা ব্যস্ততা। ওই বালক স্বামী তো আর দেশ চালাবে না! দেশ চালাবেন ফিলোপেতরই। শুধু কিনা নারী একা কোন রাজ্যশাসন করতে পারে না- তেমনটা ধর্মে বা আইনে বিধান নেই। তাই বালক পতি ও ভ্রাতাকে সামনে রেখে তাঁকেই যা করার করতে হবে।‘
‘আহা-বিয়ের দিনে কেমন সাজবেন ফিলোপেতর? হোন শ্যামবর্ণা বা হ্রস্বকায়া, তিনি কথা বলতে শুরু করলে পুরুষেরা যে তার পায়ে সব গড়াগড়ি খেতে শুরু করে!’
‘শুনছি- তার বিয়ের সাজের প্রস্তুতি এখনি শুরু হয়ে গেছে!’

চলবে….

আরএ

Header Ad
Header Ad

ভারতে ১ম বর্ষের ছাত্রকে বিয়ে করলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা!

ভারতে ১ম বর্ষের ছাত্রকে বিয়ে করলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষেই কনের সাজে সেজে দাঁড়িয়ে ছিলেন অধ্যাপিকা। তিনি আবার বিভাগীয় প্রধান। আর তার সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দিলেন প্রথম বর্ষের এক ছাত্র। এ ঘটনা নিয়ে ক্লাসে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে শোরগোল পড়েছে।

পরে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। ঘটনাটি ঘটে বুধবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের।

তবে প্রশ্ন উঠেছে, এটা কি সত্যি বিয়ে ছিল না কি অভিনয়? যদিও ‘বিয়ের’ ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ওই অধ্যাপিকা তথা অ্যাপ্লায়েড সাইকোলজি বিভাগের প্রধানকে ছুটিতে পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দিলেন প্রথম বর্ষের এক ছাত্র। ছবি: সংগৃহীত

জানা যায়, গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে ছাত্র-শিক্ষিকার আলোড়ন তোলা ‘বিয়ের’ ঘটনা ঘটে, যার সাক্ষী ছিলেন ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীরা।

এদিকে ‘বিয়ের’ ভিডিও দেখে বিভাগীয় প্রধানকে তড়িঘড়ি ছুটিতে পাঠিয়ে দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রেরও খোঁজ মিলছে না। এ নিয়ে সহপাঠীরাও মুখ খুলছেন না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য তাপস চক্রবর্তী বলেন, ‘বিভাগীয় প্রধানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। শ্রেণিকক্ষে তাঁর এমন আচরণের ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। মৌখিকভাবে তিনি তার জবাবও দিয়েছেন। শিক্ষিকা দাবি করেছেন, একটি প্রজেক্টের জন্য শ্রেণিকক্ষে এমন “অভিনয়” করা হয়েছিল।’

কিন্তু মালাবদল, সিঁদুরদান প্রজেক্টের অংশ হলে এবং পুরো বিষয়টিই ‘অভিনয়’ হলে বিভাগীয় প্রধানকে কেন ছুটিতে পাঠানো হল সেই ব্যাখ্যা অবশ্য দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বাবশ

 

Header Ad
Header Ad

বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে আবারও সড়ক অবরোধ তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের

সাত দফা দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজকে একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিসহ সাত দফা দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছেন কলেজটির শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে কলেজের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন তারা।

এর আগে গতকাল বুধবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেল ৫টার পর থেকে কলেজটির মূল ফটকে সামনে ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে আমরণ অনশন’ ব্যানারে অনশন শুরু করেন কলেজটির একদল শিক্ষার্থী। এ সময় তারা সাত দফা দাবি জানান।

আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম তিতুমীর ঐক্যের সাত দফা দাবিগুলো হলো-

১. তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ।

২. তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠন করে ২৪-২৫ সেশনের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করা।

৩. শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ নতুবা অনতিবিলম্বে শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসিক খরচ বহন।

৪. ২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ন্যূনতম দুটি বিষয় ল’ এবং জার্নালিজম সাবজেক্ট সংযোজন।

৫. এছাড়া একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন পিএইচডিধারী শিক্ষক নিয়োগ।

৬. শিক্ষার গুণগতমান শতভাগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আসন সংখ্যা সীমিতকরণ।

৭. আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাগার বিনির্মাণের লক্ষ্যে জমি ও আর্থিক বরাদ্দ নিশ্চিতকরণ।

Header Ad
Header Ad

আ.লীগের ঘোষিত কর্মসূচির বিরুদ্ধে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল

আ.লীগের ঘোষিত কর্মসূচির বিরুদ্ধে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) আগামী পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে আওয়ামী লীগের ঘোষিত কর্মসূচির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা। বুধবার (২৯ জানুয়ারি) রাত সাড়ে দশটার এর দিকে মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে শুরু হয়ে বিজয়-২৪ হলের গেটে গিয়ে শেষ হয়।

এসময় শিক্ষার্থীরা 'আওয়ামী লীগের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না', 'ফ্যাসিবাদের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না', 'দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা', 'গোলামী না আজাদী, আজাদী আজাদী', 'একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর', 'দিয়েছি তো রক্ত, আরও দিব রক্ত', 'রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়' বলে স্লোগান দেয়।

এসময় ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মোজাম্মেল হোসাইন আবীর বলেন, 'প্রিয় সংগ্রামী ভাইয়েরা আপনারা দেখেছেন স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ আগামী ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে তারা কর্মসূচি দিয়েছে। তারা জানে না ৫ আগস্ট আমরা তাদের যেভাবে বিতাড়িত করেছি একইভাবে এবারও আমরা তাদের বিতাড়িত করব। সংগ্রামী ভাইয়েরা আপনাদের উদ্দেশ্য করে বলতে চাই যেখানে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসর, দালালদের পাবেন সাথে সাথে তাদেরকে পুলিশ প্রশাসনের কাছে ধরিয়ে দিবেন। আমাদের নিরবতাকে তারা মনে করেছে আমাদের দুর্বলতা। তোমরা যদি রাজপথে নেমে আসো তাহলে তোমাদের আর ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা বলতে চাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম আন্দোলনের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ জ্বালিত হয়েছিল। ফেব্রুয়ারিতে তোমরা যদি মাঠে নামো তাহলে কুবিয়ানরাও মাঠে নেমে আসবে।'

উল্লেখ্য, গত ২৮ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে ১ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অন্তবর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

ভারতে ১ম বর্ষের ছাত্রকে বিয়ে করলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা!
বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে আবারও সড়ক অবরোধ তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের
আ.লীগের ঘোষিত কর্মসূচির বিরুদ্ধে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল
পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন নাহিদ-আসিফ  
আহমদ আল শারাকে সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট ঘোষণা  
ফেসবুকে হাসনাত-রাব্বানীর তর্কযুদ্ধ : ‘দেশে এসে বিচার করেন, হেডম থাকলে আসেন’  
তৃতীয় দফায় মুক্তি পেতে যাচ্ছেন আরও ১১০ ফিলিস্তিনি  
মুক্তিযুদ্ধকে কটাক্ষ করে রাজনীতিতে কখনোই সফল হবে না : ছাত্রশিবিরকে রিজভী  
যুক্তরাষ্ট্রে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারের সঙ্গে সংঘর্ষে যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত  
জি কে শামীমের দুর্নীতি মামলার রায় আজ  
আজ জহির রায়হানের ৫৩তম অন্তর্ধান দিবস  
আজ সারাদেশে তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে  
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার : ৩ জনের নাম বাদ দিয়ে নতুন তালিকা প্রকাশ  
ছাত্রশিবির এর দলীয় প্রকাশনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ ছাত্রদলের
মসজিদ থেকে জুতা চুরি, পিস্তল দেখিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা, শেষমেশ ধরা যুবক
চুয়াডাঙ্গায় বিপুল পরিমান মাদকদ্রব্য ধ্বংস করেছে বিজিবি
ব্যক্তি স্বার্থে দলের স্বার্থ নষ্ট করলে ছাড় নয়: তারেক রহমান
তৃতীয় বিয়ে করছেন রাখি সাওয়ান্ত, পাত্র পাকিস্তানি পুলিশ কর্মকর্তা!
চার মাসেও সমাধান মেলেনি, ভবনে তালা দিল বাকৃবি শিক্ষার্থীরা
টাঙ্গাইলে ১৫ কোটি টাকা হাতিয়ে এনজিও উধাও, ভুক্তভোগীদের সংবাদ সম্মেলন