আলতাফ শাহনেওয়াজ
আলতাফ শাহনেওয়াজের তিনটি কবিতা
প্রচ্ছন্ন
অসীম গানে লেখা হচ্ছো তুমি
দূরে পৃথিবী স্মৃতির মাঝে একা
ক্ষতের মতো লিখে যাচ্ছে রাত;
সেসব কিছু গভীর হলে আমি
সিলিংফ্যানে ঝুলিয়ে রাখি ছায়া—
কাঁপন দিয়ে কমার পরে দাঁড়ি।
জানিয়েছিলে বিভূতি নেই দেশে
উড়ে এসেছি পয়সাখেকো ভাই,
পথে ভগ্নি পানি-তেষ্টা পেলে
পরের দেয়া কিছু খাসনে যেন।
এই বাক্যে হাতখরচ শেষে
ভুলেও গেছ হলকা-আঁকা দিন!
গরম বালি রুমালে ফোঁড় তোলে,
বেঁচে ছিলাম একটু পর পর।
গল্পে আছে দৈত্যমাখা ভয়
বজ্র-জাগা দুয়োরানীর মেয়ে
তার জন্য বাতাসটুকু থাক;
এবার পাশে বসো সিলিংফ্যান
কুয়াশা হয়ে লেখো কেবল ‘আমি
ঝুলন্তকে উড়িয়ে দেবো কাল!’
কুহক
কোনো কোনো ঘুম
পাশ ফিরে শোয়
চোখের ভেতর
জমে কাঁটাতার
পথগুলো দূরে
আমায় পেরোয়
গেল কোথা একা
ফিরল না আর।
কেউ আসবে না
বসে থাকা কেন?
গোধূলির দেশে
ছিল আলোলতা
দিন শেষে গ্রহে
মুছে গেলে কথা
আমার কালিমা
লোকালয়ে জাগে...
ওড়ো উন্মাদ
নিদ্রাযন্ত্রে
কবিতা হলো না যখন
পিঠেপিঠি আমার রক্তের বোন যখন মারা গেল,
শাদা অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর ওর লাশ নিয়ে
পদ্মা নদীর ঘুমিয়ে পড়া ঢেউগুলো একটার সঙ্গে আরেকটা
মিলে যাচ্ছিল, বুঝেছিলাম, বোনকে আমি ভালোবাসি খুব;
আম্মার আচমকা হলো স্ট্রোক, স্মৃতিগুলো তাঁর
ভেজা তুলা হয়ে নীরবে ঘুমিয়ে পড়েছিল, তার দিকে
অবোধ্য তাকিয়ে সে সময় বুঝেছিলাম, অনুভব কতটা মেঘের মধ্যে
আনত নীল রংরূপে উঁচু!
একটি বায়বীয় বিষয়—দেশ, যখন সে
না বলার ভারে, চাপ খেতে খেতে
চ্যাপ্টা কোনো কমলালেবুর গভীরে
ভয় পাওয়া গলায়
হোয়াটসঅ্যাপে কল করে
আর সেই কথাগুলো কোথাও পৌঁছবে না ভেবে ঘুমাতে যায়,
বুঝি তখন, ভালোবাসি তোমাকে—
বোন, মা আর নিকটতম রাতের একটু নিচে
ঝুলে থাকা, কাঁদতে না পারা তুমি... ও তুমি,
আকাশের ওপর ক্লাসে পড়া ইল্টু-বিল্টু তারকারাজি—
ফুটি ফুটি তারারা ওপর থেকে তোমাকে কি দেশ বলে?
কথাগুলো হয়তো কবিতা হলো না, হয়তোবা কথার কথা—
ভাষাহীন, সাংকেতিক কবিতার মতো এবং সবকিছু কল না হয়ে
মিসডকলই হয়ে যেতে পারে ছন্দ-অন্ত্যমিল, সারাৎসার নেই বলে—
তাই সন্ধ্যা সমস্ত আজানের সঙ্গে সঙ্গে
অন্ধকারের সাথে কেঁপে ওঠে ইলেকট্রিক তারের ফুটোফাটা দেখে,
সামনের মাসটা কত গাঢ় করে তুলতে পারো তুমি?