বাবা দিবসের কবিতা
১
প্রতিবেশিনী নিঃসন্তান হেনাকে আমি আম্মা ডেকেছি শিশুকালে
বিনিময়ে বিস্কুট লেবেঞ্চুস
বিকেলে বারান্দায় বসে আব্বা খবরের কাগজ পড়তেন
হেনা এসে দাঁড়ালেন পাশের দরজায়
- খোকন, তোমার আম্মা কে?
আঙুল তুলে দেখালাম তাকে
আব্বা হাসলেন
- খোকন, তোমার আব্বা কে?
আঙুল তুলে দেখালাম
লজ্জা পেয়ে পালালেন পর্দার আড়ালে
তারপরেও তাকে আমি আম্মা ডেকেছি
বিস্কুট লেবেঞ্চুস
২
এক দুর্যোগের রাতে চার ভাইবোন
হ্যারিকেন জ্বেলে টেবিলের চারপাশে বসে পড়ছি
বাইরে আকাশপাতাল ঝড়বৃষ্টি
অফিসের কাজে আব্বা বাইরে
নাহিনকে আম্মা ঘুম পাড়াচ্ছেন বিছানায়
খাবার টেবিলে চুয়াত্তরের মেনুমাফিক রুটিগুড় প্রস্তুত
দরজার কড়া নড়ে ওঠে সজোর
সঙ্গে ধাক্কা
দৌড়ে গিয়ে বড়ভাই খুলে দিল ছিটকিনি
কাকভেজা আব্বা ঢুকলেন
এক হাতে ছাতা
আরেক হাতে থলে
থলের ভেতরে ছটফটানি
আম্মা তোয়ালে নিয়ে এলে
আব্বা বললেন
কই মাছ
কেরোসিন স্টোভ জ্বেলে
আম্মা আলু দিয়ে রাঁধলেন কই মাছের বিরান
সঙ্গে ভাপ ওঠা মোটা চালের গরম ভাত
খাবারের সেই স্বাদ
আমি আর কখনো পাইনি
৩
একটাই হাতঘড়ি ছিল আব্বার
একষট্টি বছরের জীবনে
কালো বেল্ট, সাদা ডায়াল
দম-দেওয়া ক্যামি ঘড়ি
হযরত আজরাইল হঠাৎ তাঁর রক্তে সাঁতার কাটলেন
রক্ত ভাঙল
আর সাতজনের সংসার
বিছানায় মিশে গিয়ে জড়ান কথায় আম্মাকে বললেন
দুপুরের ট্রেনে বাড়ি ফিরবেন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়
নাকে অক্সিজেনের নল
বেডসাইড টেবিলে শুয়ে-থাকা দম-দেওয়া ঘড়িটায়
দম দেওয়া হয়নি চারদিন
চিরদিনের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ট্টেন থমকে গেল
ঢাকার নার্সিংহোমে
আরএ/