শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

প্রবন্ধ/ রবীন্দ্রনাথের ‘লোকহিত’ চিন্তার প্রাসঙ্গিকতা

রবীন্দ্রনাথের সমাজ পরিবর্তনের ভাবনা ছিল গভীরভাবে মানবিক ও অধিকারভিত্তিক। জমিদারি পরিচালনার কাজে তিনি এসেছিলেন পূর্ববঙ্গে। সমাজের নানা অসঙ্গতি ও সাধারণ মানুষের অসহায়ত্ব ও দুর্দশা হৃদয় দিয়ে অনুভব করার সুযোগ পেয়েছিলেন। একই সঙ্গে প্রজাদের অভাব ও দুঃখ দূর করার জন্যে নানা প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ ও জীবনঘন সামাজিক সংস্কারে তিনি হাত দেন। শিলাইদহ ও পতিসরে কৃষি উন্নয়ন, কুটিরশিল্পের প্রসার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, পূর্তকর্ম, স্বাস্থ্যসেবা, সালিশ-বিচারসহ অসংখ্য উন্নয়নমূলক কাজে নিজের উদ্ভাবনীমূলক চিন্তা ও অর্থের সম্মিলন ঘটান। নিজের সন্তান, বন্ধু ও আত্মীয়দের পর্যন্ত এসব কর্মে যুক্ত করেন। এসব কর্মকাণ্ডের অভিজ্ঞতায় শান্তি নিকেতনে শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর প্রতিটি সামাজিক উদ্যোগের মূলে ছিল মানুষের সম্মিলন।

রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন মানুষ সংগঠিত হলে উন্নয়ন সহজ হয়। সেজন্যেই তিনি ১৯০৪ সালে লেখা ‘স্বদেশী সমাজ’ প্রবন্ধে ‘সমাজ’ প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন। শিলাইদহে সমগ্র এলাকাকে কয়েকটি মণ্ডলিতে ভাগ করে কবি সমবায়ভিত্তিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শুরু করেন। যদিও পরবর্তিকালে এসব উদ্যোগ নানা কারণে বেশি দূর এগোয়নি। তবে আরও পরে শান্তি নিকেতনে ‘শান্তি নিকেতন বিশ্বভারতী সমিতি’, শিলাইদহে ‘পল্লী সমিতি’, পতিসরে ‘লোকসভা’, ‘মণ্ডলী’, ও ‘হিতৈষীসভা’সহ বিভিন্ন সংগঠন গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। এসব ভাবনা ও উদ্যোগের পেছনে রবীন্দ্রনাথের লোকসাধারণের হিতসাধনের চিন্তা ছিল একেবারেই মৌলিক ও সৃজনশীল। তাঁর সেই ভাবনার অন্তর্নিহিত সুরটি ধরতে পারলে আমাদের সমকালীন উন্নয়নভাবনাকে আরও মানবিক ও অধিকারভিত্তিক করার তাগিদ অনুভব করব বলে আমার বিশ্বাস। তাঁর ‘কালান্তর’ পর্বের ‘লোকহিত’ প্রবন্ধটি সকল অর্থেই একটি যুগান্তকরী রচনা। এখানে তিনি এমন কিছু মৌলিক বিষয়ের অবতারণা করেছেন যা বর্তমানের সমাজ ভাবনাকেও সমানতালে প্রভাবান্বিত করার ক্ষমতা রাখে।

আজকাল প্রতিটি রাজনৈতিক দলই সুযোগ পেলেই জনহিতকর কাজের দীর্ঘ তালিকা দিয়ে থাকে। নির্বাচনী ইশতেহারে দলগুলো এখন আরও সুপরিকল্পিতভাবে এসব লোকহিতকর চিন্তাকে তুলে ধরে। তাতে দোষের কিছু নেই। তবে এই ভাবনার মূলে যেন নাগরিক অধিকারের বিষয়টি শক্ত করে প্রোথিত  থাকে সে শিক্ষাই আমরা পাই রবীন্দ্রচিন্তা থেকে। আর বাস্তবায়েনর দিকটিতেও সমান গুরুত্ব দাবি করে। রবীন্দ্রনাথ মনে করেন, পরের উপকার করার জন্যে প্রথমেই অধিকার অর্জন করা চাই। “মানুষ কোনোদিন কোনো যথার্থ হিতকে ভিক্ষারূপে গ্রহণ করিবে না, ঋণরূপেও না, কেবলমাত্র প্রাপ্য বলিয়াই গ্রহণ করিতে পারিবে।” (লোকহিত, রর, দ্বাদশ খণ্ড, পৃ. ৫৮৪)।

এখানে ‘প্রাপ্য’ শব্দটির মধ্যেই অধিকার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তাঁর মতে লোকসাধারণকে সকল অর্থেই ছোট জ্ঞান করে, অনুগ্রহপ্রার্থী মনে করে দৃশ্যমান হিত করার মাঝে মানুষের হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষতই করা হয়। এতে করে তাদের বরং আহতই করা হয়। যারা প্রকাশ্যে হিত করার আত্মাভিমানে মত্ত তাদের জন্যে রবীন্দ্রনাথের বার্তাটি হচ্ছে যে, ‘হিত করিবার একটিমাত্র ঈশ্বরদত্ত অধিকার আছে, সেটি প্রীতি। প্রীতির দানে কোনো অপমান নাই কিন্তু হিতৈষিতার দানে মানুষের অপমান হয়। মানুষকে সকলের চেয়ে নত করিবার উপায় তাহার হিত করা অথচ তাহাকে প্রীতি না-করা।’ (লোকহিত, রর, দ্বাদশ খণ্ড, পৃ. ৫৮৪)।

প্রকৃতপক্ষে যে মানুষ অপর মানুষকে সম্মান করতে পারে না, সে মানুষকে উপকার করতে অক্ষম। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘রাশিয়ার চিঠি’তে লিখেছেন শিক্ষাই সবচেয়ে বড় রাস্তা যা মানুষকে সম্পূর্ণতা এনে দেয়। কেবল রাশিয়ায় নয়, মধ্য এশিয়ায়ও বন্যার বেগে বিজ্ঞানভিত্তিক মানবিক শিক্ষার বিস্তার হয়েছে। তিনি ভারতবর্ষের সম্ভাবনা ও বাস্তবতার সঙ্গে এইসব অঞ্চলের মানুষের উচ্চ মানবিক চেতনা উন্নয়নের প্রয়াসের ব্যবধান অনুভব করে আহত হয়েছেন।

আমরা যারা সুবিধেলোভী ভদ্রলোকেরা সর্বক্ষণ সুবিধে বঞ্চিতদের শুধু দান করে, কৃপা করে মন জয় করতে আগ্রহী তাদের জন্যে রবীন্দ্রনাথের ‘লোকহিত’ ভাবনাগুলো খুবই প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়। রবীন্দ্রনাথ মনে করেন মহাজন ঋণ দিয়ে সুদ গ্রহণ করে থাকে। সেই সুদ অনেক সময় আসলকেও ছাড়িয়ে যায়। সেই মহাজন যদি ঋণগ্রহিতার কাছে সুদের পাশাপাশি কৃতজ্ঞতাও আদায় করতে চায় তাহলেই মুশকিল। তাকে তিনি ‘শাইলকেরও বাড়া’ বলে মনে করেন। সমকালীন বাংলাদেশেও আমরা এমন অসংখ্য হিতকারীদের সন্ধান পাই যাদের মাঝে এ ধরণের আত্মাভিমানের বাড়াবাড়ি বেশ চোখে পড়ে।

বর্তমানে ধনের বৈষম্যের চাপে সাধারণ মানুষ ছটফট করছে। তাই তারা অনেক সময়ই সংগঠিত শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে চাচ্ছে। আর ভিক্ষা নিয়ে সন্তুষ্ট নয়, বরং তারা এখন তাদের প্রাপ্যের দাবি করতে আগ্রহী। তাই দয়া করে নয়, নিজের গরজেই তাদের বেঁচে থাকার সুযোগ সৃষ্টি করা আমাদরে কাজ। কেননা, তারা এখন আমাদের ভাবিয়ে তুলতে সক্ষম হয়ে উঠছে। রবীন্দ্রনাথ শতবর্ষ আগেই এমনটি যে হবে তার অনুমান করেছিলেন। “আমাদের ভদ্র সমাজ আরামে আছে, কেননা আমাদের লোক সাধারণ নিজেকে বোঝে নাই। এই জন্যই জমিদার তাহাদিগকে মারিতেছে, মহাজন তাহাদিগকে ধরিতেছে, মনিব তাহাদিগকে গালি দিতেছে, পুলিশ তাহাদিগকে শুষিতেছে, গুরুঠাকুর তাহাদের মাথায় হাত বুলাইতেছে, মোক্তার তাহাদের গাঁট কাটিতেছে, আর তাহারা কেবল সেই অদৃষ্টের নামে নালিশ করিতেছে যাহার নামে সমন-জারি করিবার জো নাই।

আমরা বড়োজোর ধর্মের দোহাই দিয়া জমিদারকে বলি তোমরা কর্তব্য করো, মহাজনকে বলি তোমার সুদ কমাও, পুলিশকে বলি তুমি অন্যায় করো না- এমন করিয়া নিতান্ত দুর্বলভাবে কতদিন কতদিক ঠেকাইব। চালুনিতে করিয়া জল আনাইব আর বাহককে বলিব যতটা পারো তোমরা হাত দিয়া ছিদ্র সামলাও- সে হয় না; তাহাতে কোনো এক সময়ে এক মুহূর্তের কাজ চলে কিন্তু চিরকালের এ ব্যবস্থা নয়। সমাজে দয়ার চেয়ে দায়ের জোর বেশি।” (লোকহিত, রর, দ্বাদশ খন্ড, পৃ. ৫৫১)

সমাজের সেই দায় নিশ্চিত করতে হলে লোকসাধারণের পরস্পরের মাঝে একটা যোগাযোগের রাস্তা চাই। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় “সেটা যদি রাজপথ না হয় তো অন্তত গলির রাস্তা হওয়া চাই।” আর তাঁর মতে, “লেখাপড়া শেখাই এই রাস্তা।” এ শিক্ষা হয়তো গাঁয়ের “মেটে রাস্তা”। “কেবলই রাস্তা”। আপাতত এ-ই যথেষ্ট, কেননা এই রাস্তাটা না হইলে মানুষ আপনার কোণে বদ্ধ হইয়া থাকে। “সে কারণেই একটা বৃহৎ লৌকিক যোগের জন্যে চাই তার অন্তত প্রাথমিক শিক্ষা।” মানুষ যদি মনের চালাচালি করতে না জানে, দেশের জন্যে তার অনুভব কোত্থেকে আসবে? মানুষের মনকে বিস্তৃত না করা গেলে মানুষ তার অন্তরের শক্তি কোত্থেকে পাবে?

এ প্রসঙ্গে তিনি ইউরোপের কথা পেড়েছেন। ঐ সময় ইউরোপে প্রাথমিক শিক্ষার প্রয়োজনীয় প্রসার ঘটেছিল বলেই সেখানকার সাধারণ মানুষ লিখতে পড়তে শিখে পরস্পরের কাছে পোঁছানোর উপায় খুঁজে পেয়েছিল। আর এ কারণে সেখানে অধিকার সচেতন লোকসাধারণ আলাদা সত্ত্বায় আপন শক্তিতে জেগে উঠতে পেরেছিল। রাশিয়া ভ্রমণে করে কবি সেখানকার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপে তাদের শিক্ষাব্যবস্থার লোকহিতকর দিকটি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন।’রাশিয়ার চিঠি’-তে কবি এমনি একটি অনুভূতি প্রকাশ করেছেন, “.... এদের শিক্ষা কেবল পুঁথিপড়ার শিক্ষা নয়। নিজের ব্যবহারকে চরিত্রকে একটা বৃহৎ লোকযাত্রার অনুগত করে এরা তৈরি করে তুলেছে। সেই সম্বন্ধে এদের একটা পণ আছে এবং সেই পণ রক্ষায় এদের গৌরববোধ।” (‘রাশিয়ার চিঠি’, রর, দশম খ-, পৃ. ৫৭১)

এই প্রসঙ্গে শান্তিনিকেতনের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কবির আকাক্সক্ষার কথা প্রকাশ পেয়েছে এভাবে, “আমার ছেলেমেয়ে এবং শিক্ষকদের আমি অনেকবার বলেছি, লোকহিত এবং স্বায়ত্ত্বশাসনের যে দায়িত্ববোধ আমরা সমস্ত দেশের কাছ থেকে দাবি করে থাকি শান্তিনিকেতনের ছোটো সীমার মধ্যে তারই একটি সম্পূর্ণ রূপ দিতে চাই। এখানকার ব্যবস্থা ছাত্র ও শিক্ষকদের সমবেত স্বায়ত্ত্বশাসনের ব্যবস্থা হওয়া দরকার- সেই ব্যবস্থায় যখন এখানকার সমস্ত কর্ম সুসম্পূর্ণ হয়ে উঠবে তখন এইটুকুর মধ্যে আমাদের সমস্ত দেশের সমস্যার পূরণ হতে পারবে। ব্যক্তিগত ইচ্ছাকে সাধারণ হিতের অনুগত করে তোলবার চর্চা রাষ্ট্রীয় বক্তৃতামঞ্চে দাঁড়িয়ে হতে পারে না, তার জন্যে ক্ষেত্র  তৈরি করতে হয়- সেই ক্ষেত্র আমাদের আশ্রম।” (‘রাশিয়ার চিঠি’, রর, দশম খণ্ড, পৃ. ৫৭১)।

নানা কারণেই আমাদের উপযুক্ত শিক্ষার বড়োই অভাব অনুভূত হচ্ছে। শিক্ষা এখন যেন অধিকার নয়, গণ্য হচ্ছে বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে। ফলে সৃষ্টি হয়েছে সামাজিক বৈষম্য ও নীতিহীনতা। শিক্ষার মানের তারতম্যের কারণে এক বাংলাদেশে কয়েক বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন এই বাংলাদেশের সমাজ, সংস্কৃতি, আশা-আকাক্সক্ষার ভিন্নতা হতে বাধ্য। গুণগতমানের নৈতিক ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা নিশ্চিত করা গেলে সমাজের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।

সমাজ সকলের বড়ো। যুগে যুগে বাংলাদেশে সমাজব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এখানকার শিক্ষা, শিল্প-সংস্কৃতি, নৈতিকতা সবকিছুই সমাজ থেকেই বয়ে আসতো। এমন কি সকল প্রকার সংকটের মধ্যেও সমাজ নিজেকে রক্ষা করেছে। আমাদের সমাজ লোকসাধারণের জন্য কারিগরিসহ উপযুক্ত শিক্ষার সুযোগ আরও বিস্তৃত করতে পারলে সমাজেরই লাভ হবে। সমাজের নিম্নবর্গের অধিকার-সচেতনতা তখন আরও বাড়বে, ভদ্রলোকদের আরও বেশি জবাবদিহিতার সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হতে হবে। তখন দয়া-দাক্ষিণ্য নয়, অধিকারের ভিত্তিতে এদেশের মানুষের ভাব বিনিময় হবে। তারা পরস্পর সম্মিলিত হবে শিক্ষা নামক অধিকারের সূত্র ধরে। আর তখনই সম্ভব হবে সত্যিকারের সবার জন্যে উন্নয়ন। তখনই নিশ্চিত করা যাবে প্রকৃত লোকহিত। বঙ্গবন্ধু তাঁর সংবিধান, প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা এবং কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনে এমন প্রাসঙ্গিক শিক্ষার ওপর জোর দিয়েছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুকন্যাও আধুনিক গুণমানের শিক্ষার প্রসারে অঙ্গিকারাবদ্ধ। তবে হঠাৎ করে করোনা সংকট এসে পড়ায় আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা স্বাস্থ্য খাতের মতোই বড়ো চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে গেছে। আশা করি সবাই মিলে সচেষ্ট থাকলে এই সংকটকাল নিশ্চয় পাড়ি দিতে পারবো।

আমরা এখন এক নয়া পৃথিবীতে বাস করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্যস্ত এই পৃথিবীর ঘাড়ে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে চেপে বসেছে কভিড-১৯। এই  বিশ্বজনিন সংক্রমণে সর্বত্রই সমাজ ও অর্থনীতিতে বিরাট ধাক্কা লেগেছে। হত-বিহ্বল মানুষ এরই মধ্যে নিজেদের শক্তি ও সামর্থ অনুযায়ী বদলে যাওয়া পৃথিবীর সাথে তাল মিলিয়ে চলবার চেষ্টা করছে। নয়া এই বাস্তবতায় বাংলাদেশও তার মতো করে এই সংকট মোকাবেলা করতে চেষ্টা করছে। কিন্তু পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া কিছুটা গতি পাওয়া শুরু হতেই নতুন ধাক্কা হিসেবে এসেছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে সৃষ্টি হওয়া বৈশ্বিক অস্থিরতা। বিশ্বের সাপ্লাই চেইন বিপর্যস্ত এবং জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে আমাদের দেশকেও মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে হচ্ছে। একদিকে করোনা পরবর্তি পুনরুদ্ধারের চাহিদা, আরেক দিকে মল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সঙ্কোচনমুখী আর্থিক নীতি প্রণয়নের চাপ। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের সামনে আছে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়ার যে মানসিকতা বঙ্গবন্ধু আমাদের মধ্যে তৈরি করে দিয়ে গেছেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা তাকে আরও জোরদার করেছেন। সেই লড়াকু মানসিকতার জোরে এদেশের মানুষ এই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে ঠিকই বাস্তবে রূপ দিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস। এমন পরিস্থিতিতে রবীন্দ্রনাথ বরাবরই আত্মশক্তির কথা বলতেন। সচেষ্ট সমাজের কথা বলতেন। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুও সংকটকালে একইভাবে মানবিকতার উদ্বোধনের কথা বলতেন। দুর্যোগে ও দুঃসময়ে মানুষকে এক হতে বলতেন। তিনিও রবীন্দ্র ভাবনায় গভীরভাবে সিক্ত ছিলেন। আর সেজন্যেই চলমান এই বিশ্ব সংকটেও রবীন্দ্রনাথের লোকহিত চিন্তা আগের মতোই সমান প্রাসঙ্গিক। তিনি যে আমাদের চিরকালের সাথী।

 

লেখক: অর্থনীতিবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদযালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর।

ই-মেইল: dratiur@Gmail.com

Header Ad

খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করলেন মাহফুজ-আসিফ-নাহিদ

ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে কুশল বিনিময় করেছেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে তাদের এ কুশল বিনিময় হয়।

সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়া পৌঁছালে উপস্থিত সবাই তাকে স্বাগত জানান। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৩ সমন্বয়ক ও সরকারের উপদেষ্টা তার পাশে এসে দাঁড়ান এবং শারীরিক খোঁজখবর নেন। এ সময় খালেদা জিয়া তাদের অভিনন্দন জানান এবং দেশকে এগিয়ে নিতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার পরামর্শ দেন।

এ সময় এই ৩ উপদেষ্টা বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে দোয়া চান এবং সরকারের সংস্কার কাজে তার সর্বাত্মক সহযোগিতা চান।

এদিকে সেনাকুঞ্জে গেলে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়া এখানে এসেছেন। একযুগ তিনি আসার সুযোগ পাননি। আমরা গর্বিত এই সুযোগ দিতে পেরে। দীর্ঘদিনের অসুস্থতা সত্ত্বেও বিশেষ দিনে সবার সঙ্গে শরিক হওয়ার জন্য আপনাকে আবারও ধন্যবাদ। আপনার আশু রোগমুক্তি কামনা করছি।

Header Ad

দেশের বাজারে আবারও বাড়ল স্বর্ণের দাম

ছবি: সংগৃহীত

আবারও স্বর্ণের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। এবার ভরিতে ১ হাজার ৯৯৪ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৩৯ হাজার ৪৪৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা আজকেও ছিল এক লাখ ৩৭ হাজার ৪৪৯ টাকা।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বাজুস। শুক্রবার (২২ নভেম্বর) থেকেই নতুন এ দাম কার্যকর হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য বেড়েছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি ভরি ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম পড়বে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৪৪৩ টাকা। এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯৮ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১৪ হাজার ৮৬ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯৩ হাজার ৬৭৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বাজুস আরও জানায়, স্বর্ণের বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে সরকার-নির্ধারিত ৫ শতাংশ ভ্যাট ও বাজুস-নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি ৬ শতাংশ যুক্ত করতে হবে। তবে গয়নার ডিজাইন ও মানভেদে মজুরির তারতম্য হতে পারে।

স্বর্ণের দাম কমানো হলেও দেশের বাজারে অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম। দেশে ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫৭৮ টাকায়। এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ২ হাজার ৪৪৯ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ২ হাজার ১১১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি রুপা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫৮৬ টাকায়।

এর আগে, সবশেষ গত ১৯ নভেম্বর দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম সমন্বয় করেছিল বাজুস। সে সময় টানা চার দফা কমার পর ভরিতে ২ হাজার ৯৪০ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৪৯ টাকা নির্ধারণ করেছিল সংগঠনটি।

এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৩১ হাজার ১৯৭ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১২ হাজার ৪৫৩ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯২ হাজার ২৮৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। যা কার্যকর হয়েছে গত ২০ নভেম্বর থেকে।

এ নিয়ে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত দেশের বাজারে ৫১ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। যেখানে ৩০ বার দাম বাড়ানো হয়েছে, আর কমানো হয়েছে ২১ বার।

Header Ad

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’

ছবি: সংগৃহীত

দেশের জনপ্রিয় নির্মাতা আশফাক নিপুন। কাজের পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমেও বেশ সরব তিনি। কথা বলেন নানা ইস্যু নিয়ে। সেই ধারাবাহিকতায় সরকার পতনের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনেও বিভিন্ন সময় নিজের আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যেও বিভিন্ন বার্তা দিয়েছেন। এবার এমনি একটি বার্তায় দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জনগনের আস্থার বিষয়ে আক্ষেপ জানালেন এই নির্মাতা।

বুধবার (২০ নভেম্বর) আশফাক নিপুন তার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে লেখেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সর্বস্তরের ছাত্র এবং সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল, বাসায় বসে বসে দোয়া করেছিল, যার যা সামর্থ্য দিয়ে সহায়তা করেছিল। কারণ, তারা দেখেছিল লড়াইটা আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শাসক বনাম সাধারণ ছাত্র-জনতার। এটাও অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই যে এই আন্দোলন বেগবান করতে বিরোধী সকল দলের কর্মীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাদের সংগ্রামও গত দেড় দশকের। কিন্তু এটা যদি শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার লড়াই হতো তাহলে সাধারণ মানুষ এই লড়াই থেকে দূরে থাকত। সেই প্রমাণ বিগত ১৫ বছরে আছে।

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ এখনো দেশের কোনো রাজনৈতিক দলকেই পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারে না। এটাই বাস্তবতা। এই বাস্তবতা মেনে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত কীভাবে সাধারণ জনগণের ভেতর নিজের দলের প্রতি আস্থা তৈরি করা যায় সেই বিষয়ে নিরলস কাজ করা। এই আস্থা ক্ষমতায় গিয়ে অর্জন করা সম্ভব না। কারণ, সাধারণ মানুষ আজীবন এস্টাবলিশমেন্টের বিপক্ষে। এই আস্থা অর্জন করতে হয় ক্ষমতা বলয়ের বাইরে থেকেই।

নিপুন আরও লিখেন, অরাজনৈতিক সরকার দিয়ে দীর্ঘদিন দেশ চালানো যেমন কাজের কথা না ঠিক তেমনি রাজনৈতিক সরকার হতে চাওয়া সকল রাজনৈতিক দলগুলোর বোঝা উচিত মুক্তিযুদ্ধের পরে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে সকল প্রকার পূর্বানুমান (যেমন- বর্ষাকালে আন্দোলন হয় না, নির্বাচনের আগেই কেবল জোরেশোরে আন্দোলন হয়, ঘোষণা দিয়ে বিরোধী সকল পক্ষ আন্দোলনে শামিল না হলে সফল হয় না) অগ্রাহ্য করেই। সেটা সম্ভব হয়েছে সাধারণ মানুষের ন্যায্যতার আকাঙ্ক্ষা থেকেই।

সবশেষ এই নির্মাতা লিখেছেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের এই আকাঙ্ক্ষার দুই পয়সার দাম দেন নাই। সাধারণ মানুষের এই আকাঙ্ক্ষা, ইচ্ছা আর দেশপ্রেমকে পুঁজি করে অরাজনৈতিক এবং রাজনৈতিক যারাই রাজনীতি রাজনীতি খেলতে চাইবে, তাদের দশাও কোন একসময় যেন পলাতক শেখ হাসিনার মতো না হয়, সেই বিষয় নিশ্চিত করতে হবে তাদেরকেই।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করলেন মাহফুজ-আসিফ-নাহিদ
দেশের বাজারে আবারও বাড়ল স্বর্ণের দাম
‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’
‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’: প্রধান উপদেষ্টা
নওগাঁ শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু
২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে নির্বাচন হতে পারে: উপদেষ্টা সাখাওয়াত
সেনাকুঞ্জে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে খালেদা জিয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ৫ জনকে রোবটিক হাত উপহার
সেনাকুঞ্জের পথে খালেদা জিয়া
সুযোগ পেলে শেখ হাসিনার পক্ষে মামলায় লড়ব: জেড আই খান পান্না
নির্বাচন কমিশন গঠন, সিইসি হলেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব নাসির উদ্দীন
ডিএনএ টেস্টের ফলাফল: ভিনিসিয়ুসের পূর্বপুরুষ ছিলেন ক্যামেরুনের
জামিন পেলেন সাংবাদিক শফিক রেহমান
বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে আসা সেই শাহজাহান ওমর গ্রেপ্তার
মিরপুর ও মহাখালীতে অটোরিকশা চালকদের সেনাবাহিনীর ধাওয়া
‘শেখ হাসিনা এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী’, এমন কথা বলেননি ট্রাম্প
লেবাননে ৮ শতাধিক ইসরায়েলি সেনা নিহত
ভারতে সাজাভোগ শেষে দেশে ফিরল ২৪ বাংলাদেশি কিশোর-কিশোরী
ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে অবরোধ করে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের বিক্ষোভ
গাজায় ইসরায়েলের হামলায় আরও ৮৮ ফিলিস্তিনি নিহত