একটি ছোট গল্প
একটি ছেলে যার ছিল অনেক স্বপ্ন। অনেকের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে সে। ছেলেটি খুব ভালো। নম্র-ভদ্র স্বভাবের, কারো সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে না, লেখাপড়ায়ও ভালো। অন্যদিকে ক্যারিয়ার সচেতন, মা-বাবার খেয়াল রাখে, সমাজে সকলেই তাদের ভালো ছেলে হিসেবে জানে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ভালো ছেলেগুলোর প্রেমিকা হয় না। বা প্রেমিকা হলেও সম্পর্ক স্থায়ী হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মন ভাঙার যন্ত্রণা ছেলেটি একা বহন করে বেড়ায়। কেন হয় এমন? তা সে জানে না।
একাকীত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তার ফেসবুকে আইডি খোলা। তার নাম ছিল ধ্রুব। সে স্কুলে খুব চুপচাপ থাকতো। স্কুলে ছিল তার অনেক বন্ধু। কিন্তু সবাই ছিল ছেলে। কোনো মেয়ের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়নি। ফেসবুক আইডি খুলেছে সে ২০১৬ সালে। তখন সে প্রতিদিন সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে ফেসবুক ব্যবহার করতো। সে কখনো ভাবেনি যে তার আজ এই পরিস্থিতির সম্মুখিন হতে হবে। তখন তার ফেসবুক আইডিতেও কোনো মেয়ে বন্ধু ছিল না। ঈদের ছুটিতে নানা বাড়ি যায় সে। জানতে পারে যে তার মামাতো ভাইয়ের ফেসবুক আইডি আছে। ভাইকে তার ফ্রেন্ডলিস্টে অ্যাড করল সে। তার ভাই তাকে পরিচয় করিয়ে দিলো তার অনেক বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে। সঙ্গে তার জিএফ এর সঙ্গে ও। ধ্রুব তার মামাতো ভাই এর জিএফ-কে ভাবি বলে ডাকতো ফেসবুকে। সামনাসামনি তাদের এখনো দেখা হয়নি। ধ্রুব অনেক দুস্টামি করতো তার ভাবির সঙ্গে। হঠাৎ একদিন তার ভাবি তাকে বলল তোমার জি এফ নাই। সে সরাসরি উত্তর দি লো না। ওর ভাবি একজন এর প্রফাইল লিঙ্ক দিয়ে বলল তোমার মতো আমার এই বান্ধবীটিও একা। ধ্রুব তাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠায়। মেয়েটি এক্সেপ্ট করে। তার নাম তানি। তাদের মধ্যে অনেক দিন কথা হয়। তানি কে তার খুব ভালো লেগে যায়।
কিন্তু সাহস হয়নি কখনো বলার। এমন করে অনেক দিন কেটে গেল। ধ্রুবর এইচএসসি পরীক্ষা এসে পড়ে। পরীক্ষার আগে একদিন সাহস করে তানি কেতার ভাললাগার কথা বলে। তানি ৩ দিন এর সময় নেয়। সময় নিয়ে সে আর আসে না। ৩ দিনের জায়গায় ১৫ দিন পার হয়ে যায়; কিন্তু তানি এখনও অনলাইনে আসেনি। আমি আমার বিশ্বাস হারিয়ে ফেলি। তানিকে পাব না বলে ধরে নিলাম। তখন এত কষ্ট লাগেনি। ৩ সপ্তাহ পর একদিন দেখি তানি অনলাইনে। আমি তাকে কিছু বললাম না। সে আমাকে বলল, আমি তোমার প্রোপজাল আমি এক্সেপ্ট করলাম। আমি তখনও এত খুশি হয়নি। আমি তানিকে জিজ্ঞাসা করলাম, এতদিন কোথায় ছিলে?
তানি–হ্যাঁ, বলব না কি না বলব, তা চিন্তা করতে করতে আমার জ্বর এসে গিয়েছিল। তাই আস্তে পারিনি। এরপর থেকে অনেক কথা হতো আমাদের। এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর একটি মোবাইল কিনলাম। (আগের মোবাইলটা আম্মুর ছিল) তানি আর আমি এবার মোবাইলে কথা বলেই দিন কাটিয়ে দিতাম। এভাবে ৪/৫টা মাস পার হয়ে গেল।
তানির বাসা বরিশাল, আমার বাসা তখন ভোলায়। আমাদের দেখা করার সুযোগ ছিল না। হঠাৎ একটিন দেখা করার সুযোগ হয়ে গেল। তানি তারিখ ফিক্সড করে জানায়। আমদের সুন্দরভাবে দে খা ও হয়। আমার জীবনের এইদি নটি অতি গুরুত্বপূর্ণ। আমি অন্য দিনের কথা ভুললেও এইদিনের কথা ভুলবো না। জীবনে এই প্রথমবার সরাসরি কোন সমবয়সী মেয়ের সঙ্গে কথা বলছি তারপর আবার আমি তাকে ভালবাসি। তখন জানি না আমি কোন দেশে হারিয়ে গিয়ে ছিলাম। একে অন্যের হাত ধরে অনে ক্ষন বসেছিলাম। অনেক একে অন্যের চোখের দিকে তাকিয়ে আছি। তারপর দিন সে বাসায় চলে গে ল। আমার খুব দুঃখ হচ্ছিল যখন তানি চলে যাচ্ছিল।
মোবাইলে কথা বলতাম। তারপরও কেমন জানি লাগতো আমার। শুধু দেখা করতে ইচ্ছা করত। হঠাৎ একদিন তানির কোনো খোঁজখবর নেই। কল ধরে না। কলও করে না। আমি তো খুব চিন্তিত। ৮ দিন পর কল এলো তার নাম্বার থেকে। কিন্তু কন্ঠটা তার না। কান্না কান্না কন্ঠে সে মেয়েটি বলল, ভাইয়া, আপু আর নেই। আমি প্রথমে বঝুলাম না, কি বলতে চাইছে। জিজ্ঞাসা করলাম, সে কে? উত্তর আসলো সে তানির ছোট বোন। তানি কোথায় জিজ্ঞাসা করতেই উত্তর দিল আপু আর পৃথিবীতে নেই। এ কথা বলেই কেঁদে দিলো। আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। আমি আবার বরিশাল যাওয়ার অনেক চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না।
আবার অই নাম্বারে কল দিলাম। জিজ্ঞাসা করলাম কীভাবে মারা গেল। বলল ৯ দিন আগে এক্সিডেন্ট হয়েছিল। গতকাল কথাও বলেছে। কিন্তু আজ সকাল ৭টা থেকে আবার আগের অবস্থায় ফিরে গেল। অবস্থা খারাপের পথে যেতে থাকে এবং ১১টার দিকে মারা যায়। আমার জীবনে এত দুঃখ কখনো পাইনি। অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছিলাম। হঠাৎ একদিন তানির নাম্বার থেকে ১টা মেসেজ আসলো, যা পাঠিয়েছে তার ছোট বোন। লেখা ছিল, ভাইয়া, ওই দিন আমি আপনাকে সব কথা বলতে পারিনি। আপু আমার কাছে আপনার জন্য একটা মেসেজ দিয়ে গিয়েছিল। মেসেজটা হলো, ‘আমার মনে হয় চলে যেতে হবে। তুমি আমার জন্য
কাঁদবে না। আমার মতো অথবা আমার থেকে আর ভালো কাউকে পেলে জীবন সাথী করে নিও। আমার কথা মনে করে কখনও কাঁদবে না, মন খারাপ করবে না। যদি বেঁচে থাকি, তাহলে দেখা হবে ইনশাল্লাহ।’
এই মেসেজের পর আমার আরও কান্না পেল। কষ্ট নিয়ে কাটিয়ে দিলাম এতটা দিন। তবে দুঃখটা আরও বেড়ে গেল গত মাসের ২৮ তারিখ। আমি আমার বন্ধু জিতু, নাইম, পাবেলের সঙ্গে অনেক্ষণ আড্ডা করে বাসায় ফিরলাম; কিন্তু ঘরে ঢুকতেই কারেন্টটা চলে গেল। আমি আবার আড্ডা দেওয়ার স্থানে গিয়ে বসলাম। ঠিক তখনি আমি দেখতে পেলাম
আমার সামনে একটি গাড়িতে বসে আছে তানি। আমি আমাকে বিশ্বাস করতে পারলাম না। তখনি আমি আমার মোবাইল থেকে তানির নাম্বার এ মিস কল দিলাম। দেখলাম ওই মেয়ে টা তার মোবাইলটি হাত এ নিলো। আমি আবার মিস কল দিলাম। আবার সেই মেয়েটি মোবাইল হাতে নিলো। আমি পুরো নিরুত্তর হয়ে গেলাম, এটা তানি। আমি অনেক্ষণ তার দিকে তাকিয়েছিলাম আর কাঁদছিলাম। হঠাৎ বঝুলাম তানি ও আমাকে দেখেছে। সে গাড়ি থেকে বের হয়ে এলো। আমি মনে করেছিলাম ও আমার দিকে আসবে; কিন্তু না সে তার গাড়ি তে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো আর আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। তানিকে দেখে তখন আমার খুব ঘেন্না হচ্ছিল। আমার সঙ্গে অনেক খারাপ কাজ করেছে সে। আমি ওই স্থান থেকে সঙ্গে সঙ্গে চলে এলাম। চলে আসার সময় আমি পেছন ফিরে তাকালাম। দেখলাম সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
এসএ/