সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

নিভৃত মননে

সন্ধ্যার পর থেকে নিদারুণ অস্থিরতায় ভুগছি। কেন এমন লাগছে বুঝতে পারছি না। বারান্দায় বসে বসে মোবাইল সেটের বাটন টিপছিলাম আনমনা হয়ে। কারো সঙ্গে কথা বলতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু কার সঙ্গে কথা বলব ভেবে পাচ্ছি না। হঠাৎ আমার মোবাইল সেটে রিং বাজলো। অজানা নম্বর দেখে লাইন কেটে দিলাম। অচেনা কারো সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করে না। আবার রিং হলো। খুব অন্যমনস্কভাবেই এবার ধরলাম।  - হ্যালো, কে বলছেন?
- আমি... (একটু আমতা আমতা করছে) আবির। আপনি কি তামান্না?
- হ্যাঁ, আমি তামান্না। কিন্তু আপনি কে? 
- আমি আবির হাসান। আপনার দূর সম্পর্কের এক ফুফাতো ভাই। আপনাদের গ্রামের বাড়ি মুকুন্দপুর, ভোলা। আমি কি ঠিক বলেছি? 
- হ্যাঁ। ঠিকই তো বলেছেন কিন্তু আপনি...?
- আপনার বাবার নাম আহমেদ সুলতান কাদেরী।
- হ্যাঁ। আচ্ছা... আপনি দেখছি সবই চিনেন কিন্তু ...
- কিন্তু... আপনি আমাকে চিনতে পারছেন না, এই তো?
-সত্য কথা বললে, হ্যাঁ, আমি আপনাকে চিনতে পারছি না। একটু বিস্তারিত বলুন। অনেক দিন হয়তো দেখা নেই, কথা নেই। 
- আমার বাবার নাম জায়েদ হাসান। আমার নাম আবির হাসান। আমি ছেলেবেলায় আপনাদের বাসায় অনেকবার গিয়েছি। 
আবির হাসান নামটি শোনার পর আমি কোনো কথা বলতে পারিনি। আবিরও না। মনে হলো সহস্রবছরের অনুসন্ধানের পর কাঙ্ক্ষিত ফসিল পেয়ে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি। আবিরও কি তাই? এভাবে কিছুক্ষণ সময় কেটে গেল বিমূঢ় ঘোরের মধ্যে।  
- আমাকে চিনতে পারছেন না? 
- হ্যাঁ। পেরেছি। সেই যে কবে থেকে তোমাকে খুঁজছি আর তোমার দেখা পাইনি। এভাবে কোথায় কোন সাগরের ঝিনুকের পেটে লুকিয়েছিলে? আমি তুমি করে বলে ফেললাম কিছু মনে করো না আবির। 
- না, কিছু মনে করিনি। আমিও ভাবছিলাম তুমি যদি আমাকে আগের মতোই বলতে তাহলে ভালো লাগতো। খুব ভাল লাগতো। সত্যি... খুব ভাল লাগছে তামান্না। খু..উ..ব।  
- কী করছ? কোথায় আছ? কেমন আছ?
- কীভাবে তোমাকে বলব বুঝতে পারছি না। ঢাকায় থাকি। জনবহুল দমবদ্ধ বসবাস অযোগ্য এক শহরে। তুমি?
- কুষ্টিয়াতেই। ঢাকায় স্যাটেল করেছ?
- হ্যাঁ। 
কী বলব, কিছুই ভাবতে পারছি না। বুকের শব্দপাখিরা হঠাৎ কোথায় যেন উড়ে গেল। নিজেকে মনে হলো সহস্রবছরের ফসিল যার মধ্যে প্রাণের স্পন্দন নেই। এমন নির্জীবতা কেন, তা বোঝার জন্য যখন নিজের মধ্যে ডুবে বুঁদ হয়ে পড়ে রইলাম তখন আবিরের কথা শুনে সম্বিত ফিরে পেলাম। 
- কথা বলছ না কেন?    
- ও! হ্যাঁ। এতদিন কোথায় ছিলে? একটিবার খোঁজ-খবর না নিয়ে পারলে? 
- কীভাবে যোগাযোগ রাখি বলো? বড়রা সুযোগ না দিলে ছোটরা পারে না। বেহায়াপনা হয়। 
- তত্ত্বকথা। তোমার কথা সব সময় ঠিক নয়। বড়-ছোট কোনো কথা নয়, ছেলেদের যোগাযোগ রাখা যতটা সহজ মেয়েদের পক্ষে ততটা সহজ নয়। বলো সত্যি বলিনি? 
- হয়তো সত্যি, নয়তো না। তখন দুজনের দুটি ধারা ছিল। হয়তো অবিমৃষ্যকারী ধারা। তেল আর জলের ধারা।  
- তুমি আগের মতোই আছ। পুরনো ছাঁচেই কথা বলো। 
- অনেকটা সময় আমরা দুজনের কেউ কোনো কথা বলতে পারিনি। আমার বুকের ভেতরটা বরফের মতো জমে গেছে। জানি না আবিরেরও সে রকম কিছু হয়েছে কি না। হাজারো কথার ভেতর কথা হারিয়ে ফেললাম। কোনটা বলব? এতদিন পর তার কথা শুনেই এলোমেলো। জীবনের একেক সময় হয়তো একেক কথা জরুরি হয়ে পড়ে। 
- কী করছ আবির? 
- একটা আর্ট ফার্ম দিয়েছি। ছবি আঁকি। আগামী মাসের ১০ তারিখ আমার একটা এক্সজিবিশন আছে। তুমি আসবে... এজন্যই তোমাকে ফোন করা। 
- আমার ফোন নম্বর কোথায় পেলে?
- রুহি খালার কাছ থেকে। 
- তুমি অনেক বড় হয়ে গেছ। আমি ছোটবেলায় ভাবতাম তুমি জীবনে অনেক বড় হবে। তোমার বুদ্ধিদীপ্ত চোখেই আমি দেখতে পেতাম তুমি অনেক বড় মাপের মানুষ। হয়তো আমার স্বপ্নেই তুমি বড় হয়েছ। 
- এভাবে বলো না তামান্না। তবে তোমাদের মতো বড় হওয়ার এক স্বপ্নে তাড়িত হতাম আমি। সে অর্থে হয়ত তোমার স্বপ্নেই আমি এতটা পথ এসেছি। 
- মনে হচ্ছে তুমি ঝিনুকের গর্ভে লুকিয়ে গিয়ে মুক্তোই হয়েছ। খুবই ভালো লাগছে ভাবতে। কিন্তু এই ভালো লাগাটা কোনোভাবেই প্রকাশ করতে পারছি না আবির। জীবন কি আশ্চর্য, তাই না?
- হ্যাঁ... তাই...। জানো তামান্না, তোমার কথা আমার প্রায়ই মনে হতো। বলা যায় প্রতিদিনই নিভৃতক্ষণে। কিন্তু আমি সাহস পেতাম না তোমার সঙ্গে দেখা করতে। পাছে তুমি কী ভাবো? তোমার আব্বু, আম্মু তারাই বা কী ভাবেন? তোমরা এত বড়লোক ছিলে যে তোমাদের বাড়ির দিকে তাকালে আমার চোখ ঝলসে যেত। তখন মনে মনে ভাবতাম তোমাদের মতো যদি কোনোদিন হতে পারতাম! 
- তুমি তো আমাদের চেয়ে অনেক বড় হয়ে গেছ। জানো আবির, আমিও তোমাকে মনে মনে খুঁজতাম। যখন স্কুলে যেতাম তখন মনে মনে ভাবতাম তোমাকে যদি কোথাও দেখতে পেতাম। ছোট্ট শহর কুষ্টিয়া। সেই শহরে গাড়ি দিয়ে যেতাম। সামান্য পথ, পাঁচ মিনিটেই পথ শেষ। পথ কিংবা সময় দীর্ঘ হলে হয়তো কোনোদিন পেয়েও যেতাম। নানান কাজে নিশ্চয়ই তুমি কুষ্টিয়ায় আসতে, তাই না?
- হ্যাঁ। অনেক সময় কাজ ছাড়াও যেতাম। তোমাকে পথে পথে খোঁজতাম। কোনোদিন তোমাকে দেখিনি। বাবা মারা যাওয়ার পর তোমাদের বাড়িতে যেতে সাহস হতো না। কী উছিলায় যাব? বছরান্তে হিসেব করেছি তুমি এই ক্লাসে উঠেছ, আগামী বছর এই ক্লাসে উঠবে। যখন কলেজে পা রেখেছ, একদিন মনে মনে ভাবলাম কলেজে তো আর বাধা নেই। তোমার সঙ্গে একবার দেখা করি। কিন্তু পরে জানলাম তুমি মেয়েদের কলেজে পড়। সেখানে গিয়ে কীভাবে তোমার সাথে দেখা করি বলো? 
- তুমি আসতে পারতে। জানো, আমি ছেলে হলে ঠিকই তোমাকে খঁজে বের করতাম। 
- সবচেয়ে বড় কথা কি ছিল জানো? 
- কী করে জানব?
- বড় কথা ছিল তোমার সঙ্গে দেখা করে আমি কী বলব? সে রকম কোনো কথা বলার ভাষা ও উছিলা পাইনি বলেও যাওয়া হয়নি। তারপর সত্য কথাটা যদি কেউ শুনত যে, এক হতদরিদ্র পিতার এক ছেলের মনের ভেতরে তোমাকে দেখার এমন বাসনা তাহলে মানুষে কি ভাবতো, বলো? তোমার আব্বা-আম্মুই বা কী ভাবতেন? অকৃতজ্ঞ মানুষের দলে আমাকে ভিড়াতেন। তাই না?
- তা নিরেট সত্য। তোমাকে কেউ হয়তো সহ্যই করত না। তবে আমার মনে হতো তোমার ভেতরে তেজের নেভা আগুন আছে। তুমি একদিন অনেক বড় হবে। তুমি যখন বাগানে বসে ছবি আঁকতে তখন আমি তোমাকে দেখতে পেতাম তুমি বড় মানুষের দলে। এইসব উছনে যাওয়া তথাকথিত ধনী মানুষের চেয়ে তুমি অনেক উপরের এক মানুষ।  আবির কোনো কথা বলছে না। টেলিফোনে ভারি বাতাসের সোঁ সোঁ শব্দ হচ্ছে।  আমিও কথা বলতে পারছি না। মন ও মননে এমন অসাড়তা আমি আর কোনোদিন অনুভব করিনি। দম বন্ধ হয়ে আসা এক গুমোট বদ্ধঘরে যেন আটকা পড়লাম। চারপাশের বাতাস ভারি হয়ে উঠছে। জানালালাগোয়া বকুল গাছ থেকে টোপ টোপ করে পাতা ঝরছে। শুধু ভাবছি দিনে দিনে আমি কেমন করে তার কাছে হেরে গিয়েছিলাম। একি পরাজয় নাকি ঈর্ষা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না আজ। নাকি ধনি-দরিদ্রের মধ্যকার বিভেদের হিংস্রতা, নাকি আমার বাবা-মা কর্তৃক আরোপিত হতদরিদ্রদের থেকে দূরে থাকার অনুপনেয় নির্দেশ নাকি, বস্তুর দ্বান্দ্বিকতা, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। তবে আবিরের কথা শুনে আমার পুঁজিবাদ আর্শীবাদপুষ্ট ঠুনকো আভিজাত্যকে এই মুহূর্তে ঘৃণা হচ্ছে। একজন মানুষের জীবনে বড় হওয়া কোনো বিষয় না যদি তার মধ্যে তেজ থাকে, আকাঙ্ক্ষা থাকে। মৌলিকতা আর তেজহীন মানুষের প্রাচুর্য থাকলেই কি...সে আর জড়বস্তুর মধ্যে পার্থক্য কী?  
- হঠাৎ নীরব হয়ে গেলে কেন? কথা বলো তামান্না। নাকি বিরক্ত হচ্ছো?
- না... না... বিরক্ত হব কেন? এত বছরের জমানো কথা... কোনটা রেখে কোনটা বলি বলো... তাই একটু এলোমেলো লাগছে। 
- তোমার দেওয়া পেন্সিল ও রবারটা এখনও আমি যত্ন করে রেখেছি। 
- সত্যি বলছ? 
- হ্যাঁ। আমার টেবিলে সব সময় থাকে। এই তো আমার সামনেই চক চক করছে। সেদিন আমার মেয়েটা কামড়িয়ে একটু সামান্য ভেঙ্গে ফেলেছে। ও চকলেট ভেবে খেয়ে ফেলতে চেয়েছিল।  
- এগুলো এখনও রেখেছ?
- হ্যাঁ। এগুলোই তো আমার আশীর্বাদ। তোমার পেন্সিল দিয়েই আমি ছবি আঁকতে শুরু করেছিলাম। হঠাৎ মনে হলো এত সুন্দর পেন্সিলটা শেষ করে ফেলা ঠিক হবে না। সুন্দর জিনিস দিয়ে সুন্দর কিছু সৃষ্টি করতে হবে। তাই রেখে দিয়েছিলাম। তখন কী দিয়ে ছবি আঁকব, তাই ভেবে পাচ্ছিলাম না। একটা পেন্সিল কেনার সামর্থ্য তো আমাদের ছিল না, তুমি ভালো করেই জানো। তারপর কাঠ কয়লা দিয়ে মাটিতে ছবি আঁকা শুরু করলাম। মাটির বেড়ায়, স্কুলের দেওয়ালে, কলেজের দেওয়ালে অনেক ছবি এঁকেছি। অনেক পোর্টেট। আর তোমার দেওয়া পেন্সিল ও রবার... আমি এখনও রেখে দিয়েছি একটা সুন্দর ছবি আঁকব বলে। এত সুন্দর পেন্সিল দিয়ে কি আলতু-ফালতু ছবি আঁকা যায় বলো? 
- আমিও রেখেছি... বাবুই পাখির বাসাটি। আমার বিয়ের পর মাঝে মাঝে বদলির কারণে এখানে-সেখানে গেলেও আমি বাবুই পাখির বাসাটি সঙ্গেই নিয়ে যাই। আমার বাসা সাজানোর সময় এই বাবুইর বাসাটিও থাকে। কত মানুষ যে নিয়ে যেতে চেয়েছে... এটা কি কাউকে দেওয়া যায়, বলো? এত সুন্দর জিনিস একবার হাত ছাড়া হলে জীবনে আর ফিরে পাব, বলো?
অকস্মাৎ আবার নিরেট নীরবতা। আমার বুকের ভেতরটা এক প্রকার কান্নায় ভেসে যাচ্ছে। চোখ দুটি কেন ঝাপসা হয়ে গেল আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। আমি বুঝতে পারছি না এখন আর কী বলব? বাবুই পাখির বাসাটি আমার ছোট ছেলেটা একটু নষ্ট করে ফেলেছে। আমি কেন তাকে বলব? সব কথা কি তাকে বলা উচিত? 
- তোমার সাথে আমার ক’বার দেখা হয়েছিল মনে আছে, তামান্না?
- আমার মনে নেই। তবে তোমাকে নিয়ে আমাদের বাগান বাড়িতে খেলতাম, তুমি গাছে চড়ে আমাকে জলপাই পেড়ে দিতে, অর্কিড পেড়ে দিতে... তা মনে আছে। তুমি খুবই সাহসী ছিলে। তোমার সাহস দেখে আমি তাজ্জব হয়ে যেতাম। 
- তোমার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে আটবার। আব্বার সঙ্গে যেতাম তোমাদের বাসায়। মামি আমাকে তোমার বড় ভাইয়ের পুরান শার্ট দিতেন পরার জন্য। আব্বাকে টাকা দিতেন চলার জন্য। আব্বা খুব খুশি হতো, তোমার আম্মু-আব্বুকে আশীর্বাদ করত প্রাণ ভরে। 
- এসব কথা বলো না আবির। তুমি শুধু বলো, অর্কিডের কথা, জলপাইয়ের কথা...। আর বলো বাবুই পাখির বাসাটির কথা। সেদিন তোমার জামার নিচে লুকিয়ে এই বাবুই পাখির বাসাটি আমার জন্য এনেছিলে, তাই না? তারপর এক বিকেলে তুমি আমাকে আমাদের বারান্দায় নীরবে ডেকে নিয়ে এটা দিবে কি দিবে না এমন ইত¯তত করে এক সময় দিলে। আমি যে এতটা খুশি হবো তা তুমি ভাবতেই পারোনি। তারপর... খুশিতে তোমার চোখে পানি এসে গিয়েছিল। তাই না? তখন তুমি ফাইভে পড়তে আমি ফোরে... তাই না?  
আবির আর কোনো কথা বলেনি। মনে হলো দীর্ঘশ্বাস আছড়ে পড়ছে সেল ফোনের সেটে। আমার বুকেও অজস্র ঢেউ আছড়ে পড়ছে। একবার ভাবছিলাম আবিরকে বলি আমার বাসায় বেড়িয়ে যেতে। তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছে হয়। আমি বলতে পারলাম না। কারণ, ও ছোটবেলায় একদিন বলেছিল, ধনিরা গরিবদের বাড়িতে বেড়াতে যায় না। ওদের বাড়িতে কেউ বেড়াতে যায় না। ওরা শুধু অন্যদের বাড়িতে যায়। আজকে যদি আবির সেরকম কিছু ভেবে বসে তাহলে এই লজ্জা রাখব কোথায়? 
এক সময় লাইন কেটে গেল। আমি শত চেষ্টা করেও আর কানেকশন পাইনি। মানুষ জীবনে সব কিছু পায় না জানি। কিন্তু আমি অনেক কিছুই পেয়ে গেছি। আবির এখনও আমার দেওয়া পেন্সিল ও রবারটি রেখেছে একটি ভালো ছবি আঁকার প্রত্যাশায়... এর চেয়ে বড় পাওয়া আমার জীবনে আর কী হতে পারে?  
হঠাৎ মনে হলো দক্ষিণ মেরুর শব্দহীন কোনো এক অজানা গহ্বরে আমি প্রবেশ করলাম। সেখানে কতক্ষণ ছিলাম আমার জানা নেই। আমার সমস্ত বিমূঢ়তা কাটিয়ে সম্বিৎ ফিরে পেলাম যখন অপু এসে বলল, ‘আম্মু  তোমার চোখে পানি কেন?’
টিটি/

Header Ad
Header Ad

পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়ে ৭টি অস্ত্রবাহী বিমান পাঠালো তুরস্ক

ছবি: সংগৃহীত

ভারতের সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধের আশঙ্কায় পাকিস্তানকে সরাসরি সামরিক সহায়তা দিচ্ছে তুরস্ক। ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অফ ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ইতোমধ্যে তুরস্ক থেকে সাতটি অস্ত্রবাহী সামরিক বিমান পাকিস্তানে পৌঁছেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৭ এপ্রিল তুরস্কের বিমান বাহিনীর একটি হারকিউলিস সি-১৩০ কার্গো বিমান করাচিতে অবতরণ করে, যাতে নানা ধরনের সামরিক সরঞ্জাম ছিল। এ ঘটনাকে তুরস্কের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের জন্য বৃহত্তর প্রতিরক্ষা সহায়তার অংশ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে।

শুধু একটি বিমানই নয়, ইসলামাবাদের সামরিক ঘাঁটিতেও তুরস্কের আরও ছয়টি কার্গো বিমান অবতরণ করেছে, যেগুলোতেও সামরিক সরঞ্জাম ছিল বলে নিশ্চিত করেছে তুর্কি ও পাকিস্তানি সূত্র।

টাইমস অফ ইন্ডিয়া বিশ্লেষণ করে বলছে, ভারত-অধিকৃত কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক হামলার ঘটনার পর দিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে বেড়ে চলা উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে তুরস্কের এই পদক্ষেপ এসেছে।

তুরস্কের পাশাপাশি পাকিস্তান চীনের সঙ্গেও সামরিক সম্পর্ক জোরদার করছে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে চীন প্রায় ৪০টি দেশে অস্ত্র রপ্তানি করেছে, যার মধ্যে ৮২ শতাংশেরও বেশি অস্ত্র গেছে পাকিস্তানে।

এদিকে, ভারতের সাথে যুদ্ধ শুরু হলে পাকিস্তানের পক্ষে লড়াই করার ঘোষণা দিয়েছে খালিস্তানপন্থী শিখরা। খালিস্তানি নেতা গুরপাতওয়ান্ত সিং পান্নু হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যুদ্ধ বাধলে দুই কোটি শিখ পাকিস্তানের পক্ষে অপ্রতিরোধ্য দেয়াল হয়ে দাঁড়াবে এবং ভারতীয় সেনাদের পাঞ্জাব পার হতে দেওয়া হবে না। পান্নু আরও দাবি করেন, ভারতের বিজেপি সরকার রাজনৈতিক স্বার্থে কাশ্মীরে হামলার নাটক সাজিয়েছে এবং হিন্দুদের হত্যা করে নির্বাচনী ফায়দা তুলতে চাইছে।

তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে সতর্ক করে বলেন, ইন্দিরা গান্ধীর পরিণতি তাদেরও হতে পারে।

Header Ad
Header Ad

বিএনপির ৩ সংগঠনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠন—জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল—আগামী ৯ মে থেকে ২৮ মে পর্যন্ত দেশজুড়ে বিভাগীয় পর্যায়ে সেমিনার ও সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সোমবার (২৮ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কর্মসূচি ঘোষণা করেন যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না।

তিনি জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় তিন সংগঠন সম্মিলিতভাবে ১০টি সাংগঠনিক বিভাগকে ৪টি বৃহত্তর অঞ্চলে ভাগ করে এ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। উদ্দেশ্য হলো—তরুণদের ক্ষমতায়ন, রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং একটি আধুনিক, মানবিক বাংলাদেশ নির্মাণে তরুণ প্রজন্মের মতামত ও চিন্তা সংগ্রহ করা।

প্রথম দিন: "তারুণ্যের ভবিষ্যৎ ভাবনা, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ" শীর্ষক সেমিনার।
দ্বিতীয় দিন: "তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ"।

সেমিনারে তরুণ প্রতিনিধি, শিক্ষার্থী, চিন্তাবিদ ও উদ্যোক্তারা কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, প্রযুক্তি, পরিবেশ ও রাজনৈতিক অধিকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন। এ কর্মসূচি বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা রূপরেখা ও তারেক রহমানের রাজনৈতিক দর্শনের আলোকে পরিচালিত হবে।

চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা বিভাগ:
▪ ৯ মে — কর্মসংস্থান ও শিল্পায়ন নিয়ে সেমিনার
▪ ১০ মে — তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ

খুলনা ও বরিশাল বিভাগ:
▪ ১৬ মে — শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মৌলিক অধিকার নিয়ে সেমিনার
▪ ১৭ মে — তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ

রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ:
▪ ২৩ মে — কৃষি উন্নয়ন, পরিবেশ রক্ষা ও নাগরিক সমস্যা নিয়ে সেমিনার
▪ ২৪ মে — তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ

ঢাকা, ফরিদপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগ:
▪ ২৭ মে — তরুণদের অর্থনৈতিক মুক্তি ও রাজনৈতিক ভাবনা নিয়ে সেমিনার
▪ ২৮ মে — তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ

মোনায়েম মুন্না বলেন, এই কর্মসূচিগুলোর মাধ্যমে তরুণদের প্রত্যাশা, মতামত ও ভাবনাকে রাজনৈতিক নীতিতে যুক্ত করে একটি জনমুখী, অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র গঠনের পথ তৈরি করবে বিএনপি।

Header Ad
Header Ad

পাঁচ জেলায় বজ্রপাতে ১১ জনের মৃত্যু

ছবি: সংগৃহীত

দেশের পাঁচটি জেলায় বজ্রপাতে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার ও সোমবার (২৭ ও ২৮ এপ্রিল) দেশের বিভিন্ন স্থানে এসব মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। কুমিল্লার মুরাদনগর ও বরুড়া উপজেলায় চারজন, কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম ও মিঠামইনে তিনজন, নেত্রকোনার কলমাকান্দা ও মদনে দুজন, সুনামগঞ্জের শাল্লায় একজন এবং চাঁদপুরের কচুয়ায় একজন প্রাণ হারিয়েছেন।

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার পূর্বধইর পূর্ব ইউনিয়নের কোরবানপুর পূর্বপাড়া এলাকায় ধান কাটতে গিয়ে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বজ্রপাতে দুজন কৃষক নিহত হন। নিহতরা হলেন নিখিল দেবনাথ (৫৮) ও জুয়েল ভূঁইয়া (৩০)।

একই জেলার বরুড়া উপজেলার খোসবাস উত্তর ইউনিয়নের পয়েলগচ্ছ গ্রামে দুপুর ১২টার দিকে ঘুড়ি ওড়ানোর সময় বজ্রপাতে মারা যায় দুই কিশোর—মোহাম্মদ জিহাদ (১৪) ও মো. ফাহাদ (১৩)। এ সময় আবু সুফিয়ান (সাড়ে ৭) নামের একটি শিশু আহত হয় এবং তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে খয়েরপুর আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের হাওরে ধান কাটার সময় সকালে বজ্রপাতে প্রাণ হারান দুই কৃষক—ইন্দ্রজিৎ দাস (৩০) ও স্বাধীন মিয়া (১৫)। একই সময়ে মিঠামইন উপজেলার শান্তিগঞ্জ হাওরে ধানের খড় শুকাতে গিয়ে বজ্রপাতে নিহত হন ফুলেছা বেগম (৬৫) নামের এক নারী।

নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের ধনুন্দ গ্রামে রবিবার রাত ১০টার দিকে বজ্রপাতে আহত হয়ে পরে হাসপাতালে মারা যান দিদারুল ইসলাম (২৮)। তিনি একটি ইফতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন।
আজ সকাল ৭টার দিকে মদন উপজেলার তিয়োশ্রী গ্রামে মাদ্রাসাগামী শিশু মো. আরাফাত (১০) বজ্রপাতে মারা যায়।

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার আটগাঁও গ্রামের বুড়িগাঙ্গাল হাওরে গরু চরাতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা যান রিমন তালুকদার। তিনি শাল্লা ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার নাহারা গ্রামে সকালে বজ্রপাতের বিকট শব্দে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান বিশাখা রানী (৩৫)। তিনি কৃষক হরিপদ সরকারের স্ত্রী। চিকিৎসক জানান, বজ্রপাতের সরাসরি আঘাতের কোনো চিহ্ন ছিল না, শব্দের প্রভাবে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

 

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়ে ৭টি অস্ত্রবাহী বিমান পাঠালো তুরস্ক
বিএনপির ৩ সংগঠনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা
পাঁচ জেলায় বজ্রপাতে ১১ জনের মৃত্যু
জামিন পেলেন মডেল মেঘনা আলম
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর গঠন করলো সরকার
নিরীহ কাউকে মামলা দিয়ে হয়রানি করা যাবে না: আইজিপি
পাকিস্তানে সামরিক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত: নিউইয়র্ক টাইমস
ঢাকায় অটোরিকশা ও চার্জিং স্টেশন বন্ধে ডিএনসিসির অভিযান শুরু হতে যাচ্ছে
চাঁদা না দিলে রেলের কমান্ড্যান্টকে বদলির হুমকির অভিযোগ দুই ছাত্র প্রতিনিধির বিরুদ্ধে (ভিডিও)
বলিউডে সেনারা হিরো, বাস্তবে কেন জিরো ভারতীয় বাহিনী!
কুমিল্লায় বজ্রপাতে স্কুলছাত্রসহ নিহত ৪
মে মাসে শেখ হাসিনার বিচার শুরু হচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টা
ঢাকাসহ সারাদেশে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে
সবাই মিলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাই লক্ষ্য: আলী রীয়াজ
ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ
কাশ্মীর সীমান্তে ভারত-পাকিস্তানের ফের গোলাগুলি
টস হেরে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ, একাদশে ৩ পরিবর্তন
দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা
টটেনহামকে উড়িয়ে প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল
শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে পারবেন না মোদি