রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৪

মিসরের সবচেয়ে বড় প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা সাক্কারা আসলে সাড়ে দশ বর্গ কিলোমিটারজুড়ে এক বিশাল সমাধি ক্ষেত্র। প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে নীল নদের পশ্চিম তীরে গিজা থেকে দাসুর পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় সে সময়ের রাজধানী মেমফিসের নাগরিকদের সমাধিস্থ করার জন্য বেছে নেয়া হয়েছিল থেকে কয়েক কিলোমিটার উত্তরে সাক্কারার মরু প্রান্তর। বছরের পর বছর ধরে সম্রাট এবং পরিবারের সদস্য ও সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি থেকে শুরু করে সাধারণ পেশাজীবী মানুষের অগণিত মৃতদেহ সমাহিত হয়ে আছে সাক্কারায়।

কায়রো কিংবা গিজা থেকে সাক্কারায় আসার জন্যে গণপরিবহন নেই। পর্যটকদের জন্য প্রাইভেট কার, ট্যাক্সি অথবা দলবেঁধে ভ্রমণের জন্য ভাড়া করা বাস মিনিবাস সহজলভ্য। অসংখ্য নামি-অনামি টুর অপারেটর বিদেশি পর্যটক পরিবহনের জন্য একপায়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের টুর গাইড সিলভিয়া এবং চালক বাসামও পেশাদার পর্যটন ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত। সাক্কারায় প্রবেশের ছাড়পত্র সংগ্রহের জন্যে বাসাম যেখানে এসে দাঁড়ালো সেটি টিকিট ঘর, প্রক্ষালণ কক্ষ এবং আর্কিওলজিকাল সাইটের অফিস মিলিয়ে পাথরের তৈরি একটি কমপ্লেক্স। এই ভবনটির বিপরীতে রাস্তার ওপারে মরুভূমিতে বালির স্তুপ জমতে জমতে পাহাড় হয়ে গেছে আর সেই পাহাড়ের পায়ের কাছে তিনটি পাথরের স্তম্ভ এখনো পুরোপুরি টিকে আছে। আরো কয়েকটি ভাঙাচোরা স্তম্ভ এবং ছড়িয়ে থাকা প্রস্তখণ্ডের মধ্যেও দাঁড়িয়ে আছে কয়েকটি খেজুর গাছ।

কমপ্লেক্স চত্বরে গাড়ি রাখার সঙ্গে সঙ্গেই নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পোশাকধারী পুলিশ এগিয়ে এসে তার খাতার পাতায় গাড়ির নম্বর লিখে সিলভিয়াকে কিছু একটা জিজ্ঞেস করলো। সিলিভিয়া উত্তর দিল বাংলাদেশ! দুবার শোনার পরে ‘ব্যাংলাদেস, ব্যাংলাদেস’ উচ্চারণ করে বড় কষ্টে তার খাতায় আমাদের দেশের নাম অন্তর্ভূক্ত করতে পেরেছে বলে মনে হলো। সম্ভবত জীবনে প্রথমবারের মতো তিনি এই দেশটির নাম শুনেছেন। আসলে তাকেও দোষ দেওয়া যায় না। গিজার গ্রেট পিরামিডের তুলনায় খুব কম পর্যটকই সাক্কারা পর্যন্ত আসে।

সাক্কারার টিকিট কাউন্টারের সামনে বিভিন্ন মূল্যমানের টিকিটের দীর্ঘ তালিকা ঝুলছে। সিলভিয়ার সঙ্গে কথা বলে আমরা আগেই ঠিক করেছিলাম পুরো এলাকা ঘুরে আসার ১৮০ ইজিপশিয়ান পাউন্ডের স্ট্যান্ডার্ড টিকিট কিনব, এ ছাড়া আমাদের বাহনের জন্য দিতে হবে মাত্র পাঁচ পাউন্ড। রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য বর্তমানে সাক্কারার মূল আকর্ষণ স্টেপ মিরামিডে প্রবেশ নিষেধ! অন্য পাঁচ-ছয়টি পিরামিডের ভেতরে প্রবেশের ইচ্ছে না থাকায় ৪৪০ পাউন্ডের টিকিট কেনার প্রয়োজন নেই। বিভিন্ন মূল্যের টিকিট কিনে একেকটি পিরামিডেও প্রবেশ করা যেতে পারে।

নিচে ঘন খেজুরের বন পেরিয়ে অনেক দূরে দূরে কিছু বসত বাড়ির আভাস হাতের ডান দিকে এবং বাঁয়ে বালির পাহাড় রেখে আমরা উপরে উঠতে থাকি। কিছুটা উপরে ওঠার পরে ডান দিকে নেক্রোপলিস এলাকায় ঢুকে গেলে বাঁয়ের সবুজ অদৃশ্য হয়ে যায়। দুদিকেই পাথরের দেয়াল আর মরুর বালিতে ছড়ানো প্রস্তরখণ্ডের ভেতর দিয়ে এগোতে চোখে পড়ে মিসরের এবং প্রকৃতপক্ষে বিশ্বের প্রথম পিরামিড চার হাজার সাতশ বছর আগের অসমাপ্ত নির্মাণ ‘দ্য স্টেপ পিরামিড অব জোসের’। এর নির্মাণ কাজের দায়িত্বে ছিলেন স্থপতি, প্রকৌশলী ও জ্যোতির্বিদ ইমহোটেপ।

আমাদের গাড়িটি পার্কিং এলাকায় পৌঁছালে গাড়ি থেকে নেমে সামনে এগোবার আগেই পথ আগলে দাঁড়ায় ফারাওয়ের ফেরিওয়ালা। তার মেলে ধরা স্কার্ফ, গামছা, রুমাল চাদরের সর্বত্র রামেসেস, নেফারতিতি, তুতেনখামেন, আনুবিস আর হাজার তিন চার বছর আগের দাস-দাসীদের নানা আকার আকৃতির নানা বর্ণের প্রতিকৃতি। ফেরিওয়ালার হাঁকডাক উপেক্ষা করে আমি এগোতে থাকি। কারণ তখন সামনে দেখতে পাচ্ছি গোলাপি, খয়েরি, বাদামি পাথরের তৈরি দীর্ঘ দেয়াল, যার দুপাশের খানিকটা অংশ ভেঙে না পড়লে মনে হতো এটি আধুনিক স্থাপত্যের সাম্প্রতিক কোনো নির্মাণ! সাড়ে দশ মিটার উঁচু এবং দেড় হাজার মিটারের বেশি দীর্ঘ এই দেয়াল এক সময় ঘিরে রেখেছিল পুরো এলাকা। তবে স্টেপ পিরামিডের মতো এই দেয়ালটিও নাকি অসমাপ্ত। সম্রাট জোসেরের সঙ্গে স্থপতি ইমহোটেপের নামও উৎকীর্ণ করা আছে এই দেয়ালে।

ফারাও সাম্রাজ্যের তৃতীয় রাজবংশের দ্বিতীয় সম্রাট জোসের রাজত্ব করেছেন ঊনত্রিশ বছর। এরই মধ্যে সিনাই থেকে আসোয়ান পর্যন্ত বিস্তৃত করেছিলেন সাম্রাজ্য, উত্তরের মরু অঞ্চলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বিদ্রোহ দমন করে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করছেন, যার অন্যতম হলো–সে সময়ের রাজধানী মেমফিসের অদূরে এই সাক্কারা নেক্রোপলিসের স্টেপ পিরামিড এবং প্রবেশ পথের সীমানা দেয়াল সংলগ্ন মন্দির। গোলাপি গ্রানাইট পাথরে তৈরি দেয়ালের মাঝখানের অনেক উঁচু অথচ অপরিসর দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে দুপাশের পাথরের তৈরি পিলারের মাঝখানের করিডোর দিয়ে এগোতে থাকি। চার হাজার সাতশ বছর আগে কী প্রক্রিয়ায় কোন যন্ত্রে এ সব বিশাল প্রস্তর খণ্ডের ভেতরে খাঁজ কেটে সঠিক মাপে সংযোজন করে নির্মিত হয়েছে এই বিশাল স্থাপনা! কঠিন শিলা খণ্ডকে সম্পূর্ণ সিলিন্ডারের আকৃতি দিয়ে তৈরি হয়েছে এর সিলিং। ভেতরের কলাম বীম এবং বেদির অনেকটাই এখনো অক্ষত থেকে গেছে। মন্দিরে প্রবেশের জন্য একটি এবং পঁচিশটি পিলার পার হয়ে পিরামিড চত্বরে প্রবেশের জন্য আরো একটি আয়তকার দরজা ছাড়াও একটি আধখোলা ছোট দরজা রয়েছে এই প্রস্তর মন্দিরে। ধারণা করা হয় ইহজগৎ থেকে সরাসরি পরজগতে পারি দেবার জন্যে খোলা রাখা হয়েছিল এই দরজা। তবে দুর্ভাগ্য অসময়োচিত মৃত্যুর কারণে অন্তিম ইচ্ছা অনুসারে নিজের পরিকল্পিত স্টেপ পিরামিডের নির্মাণ কাজ যেমন শেষ হয়নি, তেমনি সেখানে তার দেহাবশেষও রাখা সম্ভব হয়নি। অতএব পারলৌকিক জীবনে তিনি আদৌ পৌঁছাতে পেরেছিলেন কি না, সে ব্যাপারে সন্দেহ থেকেই যায়।

চত্বরের ভেতরে দেয়ালের ছায়ায় বসে রানা ভাইকে যখন সিলভিয়া স্টেপ পিরামিডের আদ্যোপান্ত ইতিহাসের বিবরণ দিচ্ছে তখন আমরা দুজন সামনে এগিয়ে গেছি। দক্ষিণ সমাধি ক্ষেত্রে যাবার জন্যে সিঁড়ি দিয়ে উপরে ওঠার পরে উট চালকদের দুজন প্রথমে আমাদের উটে চড়াবার প্রস্তাব করে। বুঝিয়ে বলতে চেষ্টা করলাম এই বয়সে নড়বড়ে হাড়হাড্ডি নিয়ে উটে উঠে পুরোপুরি ভেঙে পড়তে চাই না। এরপর তারা আমাদের ছবি তুলে দেয়ার জন্যে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। যতই বলি, আমরা নিজেদের ছবি নিজেরাই তুলতে পারি, তা ছাড়া সঙ্গে আমাদের বন্ধুরা আছে। শেষ পর্যন্ত তারা সম্ভবত সাক্কারার ইতিহাসের সঙ্গে সর্প দেবতার একটি সম্পর্কের গল্প বলে দেয়ালে পাথরের তৈরি একসারি সাপের দিকে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এরই মধ্যে রানা ভাই এবং সিলভিয়া এসে পড়ায় উষ্ট্র ভাতৃদ্বয়ের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে আমরা রেলিং দিয়ে ঘেরা একটি গভীর খাত অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যাই।

এরপর বিস্তৃত এলাকাজুড়ে কেবলই পিরামিড, অসংখ্য সমাধি, ছড়ানো ইট-পাথর, অসমাপ্ত অথবা ধ্বংসপ্রাপ্ত এক বিস্তৃত বিরাণভূমি। তবে এখানে পিরামিড বলতে গিজার সেই দৃষ্টি নন্দন বিশাল নির্মাণ নয়, অনেক ক্ষেত্রেই তা কেবলই পাথরের স্তূপ। এখানে অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের পাথর, এমনকি কাদামাটির ইটও ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে উনাসের পিরামিড বা নিউ কিংডম সিমেট্রি বলে উল্লেখ থাকলেও তা সাধারণ পর্যটকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে না। আমরা সিঁড়ি দিয়ে নেমে এমনি একটি পিরামিডের গহ্বরে প্রবেশের চেষ্টা করি। অনেকটা নেমে যাওয়ার পর লোহার রেলিং দেয়া গেটে বাধা পেয়ে ফিরে আসতে হয়। ভেতরে দৃষ্টি দিয়ে দেখি সেখানেও কিছু নেই, কেবলই অন্ধকার।

হাতের ডানে-বাঁয়ে অগুণতি চিহ্নিত এবং তারচেয়ে বেশি নাম গোত্রহীন কবর রেখে সমাধি প্রান্তরের মঝখান দিয়ে আমাদের পথ। হলুদ নির্দেশ ফলকে মেহুর সমাধি, ইদুতের সমাধি, উনাসাঙ্খার সমাধি, নেবুতের সমাধি, নেবকাওরের সমাধি ইত্যাদি লেখা থেকে অনুমান করা যায় এ সবই সম্রাটের আত্মীয় পরিজন বা অভিজাত শ্রেণির মানুষ। আর যাদের কবরে কোনো ফলক নেই সেই লক্ষ লক্ষ মানুষ পুনরুজ্জীবনের স্বপ্ন নিয়ে যাদের মৃত্যু হয়েছিল, হাজার বছর ধরে তারা এই বিস্তৃত মরুভূমিতে শুয়ে আছে। সিলভিয়া একটা গল্প বলেছে। সেই তিন থেকে সাড়ে চার বছর আগের শ্রমজীবী মানুষ, নির্মাণ শ্রমিক, সেবাদাস, সাধারণ সৈনিক, কামার, কুমার, তাঁতীসহ কর্মজীবী মানুষেরা ফারাওয়ের রাজ্যে বিনা পারিশ্রমিকে কেবল মাত্র পেটে-ভাতে কাজ করেই নিজেদের ভাগ্যবান মনে করতো। কারণ তাদেরও বিশ্বাস ছিল সাক্কারা নেক্রোপলিসে সমাধিস্থ হলে ফারাওয়ের সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর পরে যে অনন্ত জীবন সেই দুঃখ-শোক-শ্রম-শংকাহীন জীবনে প্রবেশ করবে তারা। হাজার বছর আগের রাজতন্ত্র ও পুরোহিতের প্রচার এবং সাধারণ মানুষের বিশ্বাস এখনো প্রায় একই রকম থেকে গেছে।

ফিরতি পথে বাঁ দিকে একটা খাল দীর্ঘক্ষণ ধরে আমাদের পাশাপাশি চলছে। খালের দুপারে ডান বাম দুদিকেই ওয়ানওয়ে। দৃশ্যপট আগের মতোই, তবে এবারে ডান দিকে ফসলের চাষ এবং সবুজের সমারোহ দেখে মনে হয় চাষাবাদের পরিমাণ এ দিকে অনেক বেশি। হঠাৎ করেই খেজুর গাছ এবং সবুজ ফসলের ক্ষেতের মধ্যে দেখা যায় অসংখ্য বক। প্রথমে দৃষ্টি বিভ্রম বলে মনে হয়েছিল। এই মরুভূমির দেশে নীল নদের পানি ঢেলে জমিতে ফসল ফলানো সম্ভব হলেও জলাভূমির পাখি বক আসবে কোথায় থেকে! কিন্তু না, সত্যি বকেরা মাঠ জুড়ে এক পা তুলে অপেক্ষা করছে, তবে মাছের জন্য নয় নিশ্চয়ই। আমরা দুপাশে দেখতে দেখতে এগোচ্ছি। মাঝে মধ্যেই দুই একটা গাধা, আবার কোথাও গাধায় টানা গাড়িও দেখা যায়। রানা ভাই পথের দিকে খেয়াল রেখেছিলেন, কোথাও কফিশপ কিংবা চায়ের দোকান পাওয়া যায় কি না!

কায়রো তখনো পনের বিশ মিনিটের পথ। রানা ভাই বাসামকে গাড়ি থামাতে বললেন। সিলভিয়াসহ আমরা দুজন নেমে মাল্টা, পেয়ারা এবং আপেল সাজানো একটা ভ্যানের কাছে দাঁড়ালাম। ভ্যানটা আমাদের রিকশাভ্যান নয়, ঘোড়ায় টানা। পাগড়ি মাথায় ফলওয়ালা আয়েশ করে চা খাচ্ছেন আর তার ঘোড়া দেয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে সামনে বাধা ঝোলা থেকে ছোলা খাচ্ছে। যে ভবনের সামনে ভ্যানটা দাঁড়িয়ে আছে সেটা শুধু রঙচটা নয়, উপরটা অসমাপ্ত আর নিচের অংশ যেকোনো মুহূর্তে খসে পড়বে। আশ্চর্যের বিষয় এই রংচটা ভবনের গায়ে অন্তত গোটা তিনেক স্পিøটএসির কন্ডেন্সার ইউনিট ঝুলছে। বাইরে ধ্বসে পড়ুক, ভেতরটা ঠাণ্ডা রাখা চাই! ফলের দাম কার্ডবোর্ডে লেখাই ছিল, তারপরেও সিলভিয়া ফলওয়ালার সঙ্গে কি কথাবার্তা বললো জানি না। দুটো পলিথিন ব্যাগ ভরে আমরা পেয়ারা এবং মাল্টা কিনে গাড়িতে উঠে বসলাম।

মাআদি এলাকায় ঢুকে পড়ার পরে মনে হলো আমাদের মোবাইল ফোনের জন্য সিম কার্ড কেনা জরুরি। প্যারিসে এবং কুয়ালালামপুরে সিম কেনার অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়েছিল যে কোনো বিমান বন্দরেই মোবাইল ফোন চালু করার ব্যবস্থা থাকবে। কিন্তু কায়রোর এয়ারপোর্টে পর্যন্ত ভুয়া কোভিড টেস্টের ধাক্কায় আমরা জ্ঞানশূন্য হয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম। মাআদির বিখ্যাত নয় নম্বর সড়কে বার দুয়েক চক্কর দিয়েও কোনো সদাশয় ফোনালাপের আউটলেট পাওয়া গেল না। আমরা ক্ষ্যান্ত দিতে বললেও বাসাম নাছোড় বান্দা। শেষ পর্যন্ত সে আমাদের যথাস্থানে পৌঁছে দিয়ে ছাড়লো। ভেতরে ঢুকে বুঝলাম মানুষ প্রায় সব কালে সব দেশে খেতে না পেলেও কথা বলতে চায়। ভিড়ের কারণে দাঁড়াবারও জায়গা নেই। এরই মধ্যে বয়োবৃদ্ধ ডোরম্যানের কল্যাণে একটা লাল সোফার কোণায় বসে পড়ার সুযোগ পেলাম। সিমের দাম শুনে অবশ্য শিগগিরই লাফিয়ে উঠে দাঁড়াতে হলো। এক হাজার মিনিট লোকাল টকটাইম এবং এক জিবি ডেটাসহ সিমের দাম ৪২৫ ইজিপশিয়ান পাউন্ড, যা আড়াই হাজার টাকার সমান। রানা ভাই সিলভিয়াকে ইন্টারপ্রেটার হিসাবে কাজে লাগিয়ে কোন প্যাকেজ নেওয়া সুবিধাজনক তা অনেকক্ষণ ধরে বুঝতে চেষ্টা করছিলেন। আমি বাইরে এসে কায়রোর অভিজাত এলাকায় আশেপাশের বিপনী বিতান, রাস্তায় যানবাহন এবং ফুটপাথে মানুষের চলাচল দেখছিলাম। রানা ভাই তার সিমকার্ড কিনে বাইরে এলে সিলভিয়া সকালে যেখানে গাড়ি রেখে আমাদের পথ দেখাতে বেরিয়েছিল, সেই কিয়স্কের সামনে তাকে নামিয়ে দিয়ে ঘরে ফিরলাম।

(চলবে)

এসএ/

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৩

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ২

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১

Header Ad
Header Ad

হজের ফ্লাইট শুরু মঙ্গলবার, উদ্বোধন করবেন ধর্ম উপদেষ্টা

হজের ফ্লাইট শুরু মঙ্গলবার। ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র হজ ফ্লাইট শুরু আগামী মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল)। ওই দিন ৪১৯ জন সৌদি আরবের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। হজের প্রথম ফ্লাইট উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন।

চলতি বছর ৮৭ হাজার ১০০ জন পবিত্র হজ পালনে সৌদি আরব যাবেন। এর মধ্যে ৫ হাজার ২০০ জন হজযাত্রী সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবং বাকি ৮১ হাজার ৯০০ জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালন করবেন।

প্রথম ফ্লাইটটি রাত ২টা ১৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সৌদি আরবের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। হজ ব্যবস্থাপনাকে নির্বিঘ্ন করতে সরকারি পর্যায়ে ১১২ জন এবং বেসরকারি পর্যায়ে ১ হাজার ৭৪৩ জন গাইড দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি ৭০ জন মোয়াল্লেম হজযাত্রীদের সার্বিক সহায়তা করবেন।

হজযাত্রী পরিবহনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসসহ তিনটি এয়ারলাইনস। ৩১ মে পর্যন্ত হজের ফ্লাইট চলবে। ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে ১০ জুন এবং শেষ হবে ১০ জুলাই।

পবিত্র হজ উপলক্ষে এ বছর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস পরিচালনা করবে ১১৮টি, সাউদিয়া ৮০টি এবং নাস এয়ারলাইনস ৩৪টি ফ্লাইট।

হজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো আরাফাতের ময়দানে হজের খুতবা, যা ৯ জিলহজ মসজিদে নামিরা থেকে প্রদান করা হয়। এবারও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরাসরি সম্প্রচারিত হবে হজের খুতবা, এবং তাৎক্ষণিক অনুবাদ করা হবে ২০টি ভাষায়। 

যেসব ভাষায় হজের খুতবা অনুবাদ করা হবে সেগুলো হলো- বাংলা, ফরাসি (ফ্রেঞ্চ), মালয়, উর্দু, ফারসি, চাইনিজ, তুর্কি, রাশিয়ান, হাউসা, ইংরেজি, সুইডিশ, স্প্যানিশ, সোয়াহিলি, আমহারিক, ইতালিয়ান, পর্তুগিজ, বসনিয়ান, মালায়লাম, ফিলিপিনো এবং জার্মান। 

উল্লেখ্য, ১৪৪৬ হিজরির ৯ জিলহজ (চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২০২৫ সালের ৫ জুন) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে।

Header Ad
Header Ad

ইরানের বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ১৪, আহত সাড়ে ৭ শতাধিক

ছবি: সংগৃহীত

ইরানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্দর শহিদ রাজিতে ভয়াবহ রাসায়নিক বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৪ জন। আহতের সংখ্যা ইতোমধ্যেই ৭৫০ ছাড়িয়ে গেছে। শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে হরমুজগান প্রদেশের রাজধানী বন্দর আব্বাসের কাছে অবস্থিত এই বন্দরে ঘটে বিপর্যয়টি।

ইরানের জরুরি সেবাবিভাগের মুখপাত্র বাবাক ইয়াকতেপেরেস্ট বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আহতদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে এখনও উদ্ধার তৎপরতা চলছে, তবে বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে তা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মুখপাত্র হোসেন জাফারি জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে নাশকতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনি বার্তাসংস্থা আইএলএনএ-কে জানান, একটি কনটেইনারে থাকা রাসায়নিক পদার্থ থেকেই এই বিস্ফোরণের সূত্রপাত হয়। তিনি বলেন, “বিভিন্ন মাধ্যমে অনেক গুজব ছড়ানো হচ্ছে, তবে সেগুলোতে কান না দিয়ে সরকারি তথ্যের জন্য অপেক্ষা করা উচিত।”

সরকারি বার্তাসংস্থা ফার্স নিউজ জানিয়েছে, ছোট পরিসরে আগুন লাগার পর তা দ্রুত আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে এবং একাধিক বিস্ফোরণ ঘটে। স্থানীয় আবহাওয়া ছিল অত্যন্ত গরম এবং পরিবেশে দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুনের তীব্রতা দ্রুত বেড়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকে জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের শক্তি এতটাই প্রবল ছিল যে ৫০ কিলোমিটার দূর থেকেও কম্পন অনুভূত হয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানায়, দুর্ঘটনাকবলিত কনটেইনারগুলোর মধ্যে সালফারজাতীয় রাসায়নিক থাকার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। যদিও কনটেইনারগুলোর সুনির্দিষ্ট উপাদান এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

সরকারি বার্তাসংস্থা ইরনার প্রতিবেদনে বলা হয়, শহিদ রাজি বন্দরটি ইরানের সবচেয়ে আধুনিক সামুদ্রিক বন্দরগুলোর একটি। এটি হরমুজ প্রণালির উত্তরে, বন্দর আব্বাস থেকে প্রায় ২৩ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। এই প্রণালি দিয়েই বিশ্বের মোট উৎপাদিত তেলের পাঁচ ভাগের এক ভাগ পরিবহন করা হয়, ফলে এ বন্দরের নিরাপত্তা আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Header Ad
Header Ad

ধর্ষণের শিকার জুলাই আন্দোলনে শহীদের মেয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

প্রতীকী ছবি

জুলাই আন্দোলনে ঢাকায় পুলিশের গুলিতে শহীদ পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার জসিম উদ্দিনের মেয়ে লামিয়ার (১৭) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে রাজধানীর শেখেরটেকের ৬নং রোডের ভাড়া বাসা থেকে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এই কলেজছাত্রীর গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর দুমকিতে। তিনি গত ১৮ মার্চ দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন।

‎প্রতিবেশী ও স্থানীয়রা জানান, রোববার বিকেলে মায়ের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল তার। শনিবার মার্কেট থেকে কিছু কাপড়ও কিনেছেন। রাত আটটায় নিহতের মা ছোট মেয়েকে বাসার পাশেই মাদরাসায় দিয়ে আসতে যান। সেই সুযোগে রাত নয়টার দিকে রুমের ভেতর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন লামিয়া।

এরপর স্থানীয় বাসিন্দারা মিলে মরদেহ উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যান।

‎নিহতের মামা সাইফুল ইসলাম জানান, আমি দোকানে বসা ছিলাম। হঠাৎ ফোনে জানতে পারি, আমার ভাগনি মারা গেছে। আমি দৌঁড়ে হাসপাতালে এসে দেখি আমার ভাগনির মরদেহ হাসপাতালে পড়ে আছে। জুলাই আন্দোলনে আমার বোন স্বামীহারা হলো। এখন মেয়েকে হারিয়েছে। এখন আমার ভাগনি চলে গেছে। আমরা কার কাছে বিচার চাইব। কে বিচার করবে আমাদের।

নিহত কলেজছাত্রীর চাচা বলেন, শনিবার রাত ১১টার দিকে তার ভাতিজির আত্মহত্যার খবর পান তিনি। এরপর তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান।

আদাবর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কমল চন্দ্র ধর বলেন, শেখেরটেকের একটি বাসা থেকে ওই কলেজছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, তার মৃত্যুর ঘটনাটি আত্মহত্যাজনিত। তবে ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা সম্ভব হবে। পুলিশ পুরো ঘটনাটি নিবিড়ভাবে তদন্ত করছে।

ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা জানিয়েছিলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই ঢাকার মোহাম্মদপুরে তার স্বামী গুলিবিদ্ধ হন। ১০ দিন পর ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তার শহীদ স্বামীকে দুমকি উপজেলার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।

ভুক্তভোগীর মা বলেন, ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় বাবার কবর জিয়ারত করে নানাবাড়িতে ফেরার পথে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন তার কলেজ শিক্ষার্থী মেয়ে। ধর্ষণের সময় এজাহারভুক্ত আসামিরা তার নগ্ন ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বলেন। এরপর ভুক্তভোগী তার মা ও পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে ২০ মার্চ থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন। সন্ধ্যায় অভিযোগটি মামলা হিসেবে রুজু হয়।

মামলার এজাহারে উপজেলার একটি ইউনিয়নের দুজনের নাম উল্লেখ করা হয়। মামলা হওয়ার দিন রাতে এজাহারভুক্ত ১৭ বছর বয়সী কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ২১ মার্চ অন্য আসামিকে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আদালতের মাধ্যমে তাদের যশোর শিশু সংশোধনাগারে পাঠানো হয়।

জানা যায়, গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার পাঙ্গাসিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে শহিদ জসীম উদ্দিনের মেয়ে তার বাবার কবর জিয়ারত শেষে নানাবাড়ি পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে যাচ্ছিলেন। পথে নলদোয়ানী থেকে অভিযুক্তরা পিছু নেয়। হঠাৎ পেছন থেকে মুখ চেপে ধরে পার্শ্ববর্তী জলিল মুন্সির বাগানে নিয়ে যায় সাকিব ও সিফাত। একপর্যায়ে কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। এমনকি তার নগ্ন ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় তারা।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

হজের ফ্লাইট শুরু মঙ্গলবার, উদ্বোধন করবেন ধর্ম উপদেষ্টা
ইরানের বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ১৪, আহত সাড়ে ৭ শতাধিক
ধর্ষণের শিকার জুলাই আন্দোলনে শহীদের মেয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
সিন্ধুর পানি ছাড়ল ভারত, হঠাৎ বন্যায় ডুবলো পাকিস্তানের কাশ্মীর
রিয়ালের হৃদয়ভাঙা রাত, কোপা দেল রে চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনা
উত্তরায় সেলফি তুলতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় তরুণ-তরুণীর মৃত্যু
জাতীয় গ্রিডে যান্ত্রিক ত্রুটিতে ১০ জেলায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট
আবারও দুই ধাপে ৬ দিনের ছুটি পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা
পাকিস্তানি হামলার আশঙ্কায় বাঙ্কারে আশ্রয় নিচ্ছেন ভারতীয়রা
চীনা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করলো বিএনপি
আওয়ামী লীগ ভারতের গোলামী করা দল : নুরুল হক নুর
ইরানের রাজাই বন্দরে শক্তিশালী বিস্ফোরণ, আহত ৫১৬ জন
প্রায় দুই ঘণ্টা পর মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক
গোবিন্দগঞ্জে মৃত আওয়ামী লীগ নেতার নামে জামাতের মামলা
গুজরাটে ১ হাজারের বেশি বাংলাদেশি গ্রেফতারের দাবি পুলিশের
নওগাঁর রাণীনগর ও আত্রাই বাসীর গলার কাঁটা ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ অবশেষে সংস্কার
যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মেট্রোরেল চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ
গোবিন্দগঞ্জে গাঁজাসহ ট্রাকের চালক-হেলপার গ্রেপ্তার
আদমদীঘিতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা তোহা গ্রেপ্তার
নাটকীয়তা শেষে রাতে ফাইনালে মুখোমুখি রিয়াল-বার্সা