শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫ | ৫ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক ভ্রমণ, পর্ব: ৩

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা

বেলা বাড়ার সাথে সাথে গিজার পিরামিড ঘিরে পর্যটকের ভিড় বাড়তে থাকে। পার্কিংয়ে জমতে থাকে বিশাল টুরিস্ট বাসের সারি। যন্ত্রচালিত বাস এবং ছোট ছোট গাড়ির ফাঁকে অশ্বচালিত বাহনের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। গিজায় মানুষ গিজগিজ করতে শুরু করলে পিরামিডের এবড়ো থেবড়ো পাথুরে দেয়াল থেকে অতি সাবধানে নেমে আসেন রানা ভাই এবং হেনা।

একটু বেখেয়াল হয়ে পিরামিডের শরীর থেকে গড়িয়ে পড়লে হাড্ডি গুঁড়ো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বাস্তবায়িত হতে দেরি হবে না। ওরা দুজন নেমে আসার পর সিলভিয়াকে অনুসরণ করে আমরা আবার কাঠের পাটাতন ধরে হেঁটে একটি তিন রাস্তার মোড়ে এসে দাঁড়ালাম। এখানে দাঁড়িয়ে গিজার গ্রেট মিরামিড পুরোটা দেখা যায়। সামনের পিচঢালা পথ ধরে বিরতিহীনভাবে চলছে মাইক্রোবাস, ট্যাক্সি এবং ঘোড়ার গাড়ি। রাস্তার নিচে বালিতে ‘টুরিস্ট পুলিশ’ লেখা সাদা একটা জিপ দাঁড়িয়ে থাকলেও আশপাশে কোনো পুলিশ দেখা গেল না। হয়তো তারা কাছেই কোথাও আড্ডা দিচ্ছেন।

আমরা যখন তে-মাথায় ঘুরে ফিরে ছবি তুলছি, তখন পাশ দিয়ে যাবার সময় টাঙ্গাওয়ালা গতি কমিয়ে কী যেন জিজ্ঞেস করে গেল, উত্তর দিল সিলভিয়া। বুঝলাম, কাছাকাছি অন্য কোনো গন্তব্যে নিয়ে যাওয়ার আহবান ছিল তার, কিন্তু সিলভিয়ার কথা শুনে হাতের চাবুকে শব্দ তুলে ঘোড়া হাঁকিয়ে চলে গেল। ঠিক এই সময় গাড়িসহ এসে হাজির হলো বাসাম। গাইড জানালো, এবারে আমরা যাচ্ছি প্যানোরমা পয়েন্টে। ক্রমেই গিজার গ্রেট পিরামিড থেকে দূরে সরে যাচ্ছি আমরা এবং যতো দূরে যাই ততোই পিরামিডের নান্দনিক সৌন্দর্য দৃশ্যমান হয়ে উঠতে থাকে। সিলভিয়া বলেছিল বেশ কয়েকটি নির্বাচিত জায়গা থেকে পিরামিড সবচেয়ে সুন্দর দেখায়। স্বাভাবিকভাবেই সেইসব স্পট যথেষ্ট বিস্তৃত হলেও পর্যটক বা ছবি শিকারিদের কারণে দাঁড়াবার জায়গা পাওয়াই কঠিন। আমাদের অবশ্য খুব বেশি অপেক্ষা করতে হলো না। আট দশজনের একটা দল জায়গা ছাড়ার পরে দূরে থেকে দেখা হলো দূরের পিরামিড।

বিস্তৃত মরুভূমির বালিতে সকালের ঝলমলে রোদে অনেক দূরের তিনটি পিরামিড তাদের বিস্মৃত প্রায় ইতিহাসের আদিম গৌরব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আসলে যে কোনো বড় জিনিস, প্রকৃতির বিশাল বিন্যাস, কোনো স্থাপনা এমনকি কোনো বড় মাপের মানুষকে নির্ধারিত দূরত্ব থেকেই সবচেয়ে ভালো দেখা যায়। দূরের দৃষ্টি নন্দন পিরামিড দেখে আমার ভ্রাম্যমাণ পাদাবলী থেকে কয়েকটি লাইন মনে পড়ে যায়। ‘দূরের পাহাড় জুড়ে কে যেনো বিছিয়ে রাখে সবুজ মখমল/কাছে গেলে কাঁটা বেঁধে–চোখে পড়ে গুল্ম লতা মাটি ও পাথর/পাহাড় দূরেই ভালো–কাছে এসে তাই আমি বাঁধি নাই ঘর।’ পাহাড়ের মতো পিরামিডও দূর থেকে দেখাই ভালো। স্থাপত্যশিল্পের এই অনন্য নিদর্শন দেখতে হলে তার কাছে যাওয়ার, অমসৃণ পাথর ছুঁয়ে দেখার, শরীর বেয়ে আরোহণ করার দরকার নেই।

প্যানোরমা পয়েন্টে পিরামিডের পটভূমিতে আমরা বেশ কিছুক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে বসে যৌথ এবং এককভাবে ছবি তুললাম। দেখা গেল স্থিরচিত্রে স্থায়ী হবার বাসনায় কেউ কারো চেয়ে কম নয়। আমাদের সাথে সিলভিয়া এবং বাসামও ছবি তুলতে দাঁড়িয়ে গেল। প্যানোরমার ভিউয়িং পয়েন্টের ঠিক বিপরীত দিকে অস্থায়ী চালাঘর তুলে স্মারক সামগ্রীর বেচা-কেনার বাজার বসেছে। যেখানে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আসা যাওয়া, সেখানে সেদেশের জিনিসপত্র এবং স্যুভেনিয়ারের বাণিজ্য থাকবে এবং সেটাই স্বাভাবিক। নীল, ধূসর কিংবা সাদা পাথরের পিরামিডের সেট, দ্বিতীয় রামসেস এবং নেফারতিতি বা অন্য কোনো ফারাও সম্রাটের ধাতব ও সিরামিকের ছোট ছোট মূর্তি, প্যাপিরাসের পাতায় স্থানীয় শিল্পীদের হাতে আঁকা প্রত্নতাত্ত্বিক মিসরের গুহাচিত্রের নানা দৃশ্যের রঙিন ছবির পসরা সাজানো আকর্ষণীয় সুভেনিয়ার সংগ্রহের প্রলোভন সযত্নে এড়িয়ে আবার গাড়িতে উঠে বসি। এবারে গন্তব্য মরু প্রান্তরে ছড়িয়ে থাকা ওপেন এয়ার এক্সিবিশন।

গিজার পিরামিড থেকে বেশখানিটা দূরে দূরে বিস্তৃত মালভূমি এলাকাজুড়ে এই প্রথমবারের মতো একটি উন্মুক্ত শিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। মিসরের পর্যটন ও পুরাতত্ত্ব মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে শিল্প ও ঐতিহ্যের মিসরীয় সংস্থা ‘আর্ট ডি ইজিপ্ট’। যথারীতি ইওনেস্কোও তার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। বছর খানেকের প্রস্তুতির পর ‘ফর এভার ইজ নাউ’ শিরোনামে মিসরের এই আন্তর্জাতিক ওপেন এয়ার আর্ট এগজিবিশনে স্থান পেয়েছে দেশি বিদেশি দশজন শিল্পী ও ভাস্করের স্থাপনা। আমরা এক একটি শিল্প-স্থাপনা হাতের বামে রেখে সামনে এগোতে থাকি। প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে যেখানে প্রথম যাত্রা বিরতি দিয়েছি সেটি ইতালির শিল্পী লরেঞ্জো কুইনের ভাস্কর্য ‘টুগেদার’। দশটির মধ্যে ছয়টি ভাস্কর্য দেখে ফেলার পরে মনে হয়েছে এটিই আমার দেখা সবচেয়ে ভালো লাগা শিল্পকর্ম। পিরামিডের আকারে যুক্ত করা দুটি হাতের ভেতর দিয়ে অনেক দূরে দৃশ্যমান গিজার তিনটি পিরামিড। স্টেইনলেস স্টিলের তার ব্যবহার করে ৩৬ হাজার পয়েন্টে ওয়েল্ডিং করে জোড়া দিয়ে নয় মাস ধরে তৈরি ভাস্কর্যটি নিঃসন্দেহে একটি সুদৃশ্য শৈল্পিক সৃষ্টি।

এ ছাড়া আমাদের দেখা সেরা কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে মিসরীয় শিল্পী মোয়াতাজ নাসেরের ১৪ মিটার লম্বা নৌকার আকৃতির আকৃতি এবং অনেকগুলো বৈঠাকে আড়াআড়ি সাজিয়ে নিচের ত্রিভুজের ভেতর দিয়ে পিরামিড অবলোকন ‘বারজাখ’। এখানে সামনে থেকে দেখার পরে উল্টো দিক থেকে দেখার জন্যে আমি স্থাপনাটি ঘিরে রাখা রেলিং অতিক্রম করে উন্মুক্ত বালির চত্বরে হাঁটতে থাকি। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কিশোর বয়সী একজন স্বেচ্ছাসেবক এসে বিনয়ের সাথে জানায়, ‘বালির উপরে হাঁটাচলা করা নিষেধ।’ নিষেধাজ্ঞা শিরোধার্য করে আমরা এসে গাড়িতে উঠে পড়ি। সময়ের কারণে সবগুলো স্থাপনা দেখা সম্ভব না হলেও মিসরের শিল্পী মোতাজ নাসেরের ‘বারজাখ’ এবং ইউক্রেনের আলেক্সান্দার পোনোমারেভের ‘ওরোবোরোস’ স্থাপনা দুটিও ভালো লেগেছে, আর সবচেয়ে বেশি ভালো লাগার বিষয় ছিল এই পুরো পরিকল্পনা।

‘আর্ট ডি ইজিপ্ট’এর প্রতিষ্ঠাতা শিল্পী নাদিন আবদেল গাফ্ফার বলেছেন, এই প্রদর্শনী প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতা ও সমসাময়িক বিশ্বের শিল্প চর্চার এক ঐতিহাসিক মেলবন্ধন। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের শিল্পীদের মধ্যে সৌহার্দ্য বা অভিজ্ঞতা বিনিময়ই শুধু নয় বরং পৃথিবীর সংকটকালে আমরা সবার কাছে শান্তি মানবতা ও আশার বাণী পৌঁছে দিতে চাই।’ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যেতে পারে, ‘আর্ট ডি ইজিপ্ট’এর প্রতিষ্ঠাতা, পরিচালক, শিল্পী এবং নির্বাহীদের সকলেই নারী। সৌরভ এই প্রদর্শনীর ব্যাপারে আগে থেকে না জানালে এই অভিনব শিল্পকর্ম দেখার বিরল সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতাম এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই আয়োজক এবং শিল্পীদের সাথে ধন্যবাদ সৌরভেরও প্রাপ্য।

সমসাময়িক শিল্পের জগৎ থেকে আমরা আবার সাড়ে চার হাজার বছর আগে ফিরে যাই। হাতের ডান দিকে পিরামিডগুলো রেখে আমাদের লাল গাড়ি গিজা নেক্রোপলিসের গ্রেট স্ফিংসের পথে ছুটতে থকে। চলার পথে পিরামিডের পটভূমিতে প্রতি মুহূর্তে দৃশ্য বদলে যায়। দূরে বালির পাহাড় ডিঙ্গিয়ে একদল উট জোর কদমে ছুটে যাচ্ছে, একটি টাঙ্গার ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছে একটি বিদেশি যুগল, পিরামিডে চূড়া পারস্পেক্টিভের কারসাজিতে পর্যটকের হাতের তালুতে স্পর্শ করিয়ে ছবি তুলছে স্থানীয় ফটোগ্রাফার, কক্সবাজারের সমুদ্র তীরে যেমন রঙিন ছাতার নিচে অগণিত পর্যটক শুয়ে বসে থাকেন, তেমনি পিরামিড পেছনে রেখে প্রান্তর জুড়ে সাদা ছাতার নিচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে সময় কাটাচ্ছে বিলাসী টুরিস্ট। তবে এখানে প্রায় প্রত্যেক ছাতার কাছাকাছি হাঁটু মুড়ে বসে আছে একটা বা দুটো উট।
স্ফিংসের কাছাকাছি ভিউ পয়েন্টে আমরা নেমে পড়লে একটু দূরে রাস্তার উপরেই গাড়ি নিয়ে দাঁড়ায় বাসাম। মানুষের মাথা এবং সিংহের দেহ বিশিষ্ট চুনাপাথরের পৌরাণিক প্রাণি স্ফিংসের নির্মাণকাল সম্পর্কে সঠিক তথ্য না থাকলেও সাধারণ ধারণা ফারাও সম্রাট খুফুর পুত্র খাফরের রাজত্বকালে অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ অব্দের কাছাকাছি কোনো এক সময় কঠিন শিলার স্তরে নির্মিত হয়েছিল এই বিশাল মূর্তি।

সকালের সূর্য প্রণামের উদ্দেশ্যে স্ফিংসের মুখ পূর্ব দিকে বলে মত দিয়েছেন গবেষকরা। সামনে অথবা ডাইনে বাঁয়ে অনেক দূর পর্যন্ত দাঁড়ালে পেছনে সার্বক্ষণিকভাবে দৃশ্যামান গিজার গ্রেট পিরামিড। সন্ধ্যায় স্ফিংসের মুখোমুখি বসে দর্শকদের জন্য লাইট এ্যান্ড সাউন্ড শোর ব্যবস্থা আছে। সময় করে মাত্র ৪০ ডলারের টিকেট কিনে রাতের রঙিন আলোয় পিরামিড এবং স্ফিংসের সৌন্দর্য ও ইতিহাসের ধারা বিবরণী শোনা যেতো, কিন্তু সময়টাই শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠেনি।

প্রত্নতত্ত্ববিদ পণ্ডিতদের অনেকেই বলে থাকেন স্ফিংসের মুখে ঠিক যেনো খাফরের চেহারা কেটে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। তা তো হতেই পারে। সম্রাট সেকালের সব স্থপতি, পুরকৌশলী, রাজমিস্ত্রি এবং শ্রমিক যোগাড় করে, তাদের খাইয়ে পরিয়ে, হাতে হাতুড়ি ছেনি তুলে দিয়ে নিজের চেহারাই তো ফটিয়ে তুলতে বলবেন। সেই কারণে ২৫৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রাজত্ব শেষ হয়ে গেলেও স্ফিংস দেখতে এসে অন্তত একবার হলেও মহামহিম খাফরের নাম নিতে হচ্ছে। তবে সাম্রাট বাহাদুরের নাকটা কেমন করে যেনো ভেঙে পড়েছে। তবে এটা নিজের নাক কেটে পরের যাত্রাভঙ্গের মতো কোনো ব্যাপার নিশ্চয়ই নয়। সাড়ে চার হাজার বছর পরে সম্রাটের মুণ্ডু যথাস্থানে আছে এবং সিংহের থাবা ও লেজ যে খসে পড়েনি, এই তো যথেষ্ট।

আমরা ব্যস্ত রাস্তার পাশে স্ফিংসের স্থাপনা ঘিরে গড়ে তোলা পাথরের দেয়ালের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ করেই স্কুলের কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী ছবি তোলার জন্যে হেনাকে ঘিরে ধরল। ছবি তোলার পরে কিছুটা নিচে নেমে ভিন্ন একটা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে চেষ্টা করলাম বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন এই ভাস্কর্য। স্ফিংসের সামনের প্রান্তর জুড়ে পর্যটকরা ঘুরে বেড়াচ্ছে, ছবি তুলছে আবার অল্প দু-চারজন আর্ট এগজিবিশনের স্থাপনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পী গিলেসা কোনোলের শিল্পকর্ম ‘ইটারনিটি নাউ’ দেখছেন। এই স্থাপনাটি সম্পর্কে বলা হয়েছে এটি অতীত বর্তমান এবং ভবিষ্যতের সময়হীন মুহূর্তকে মূর্ত করে তুলে সাড়ে চার হাজার বছরের ইতিহাসের সাথে একীভূত হয়ে গেছে। বিবরণীতে যাই লেখা হোক, শিল্পকর্মটির মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝিনি এবং এটি দেখতেও তেমন আহামরি কিছু মনে হয়নি।

আরও অনেকটা পথ হেঁটে সিঁড়ি ভেঙে পুরো স্ফিংস চত্বর না ঘুরে শক্তি এবং সময় বাঁচিয়ে আমার আবার বাসামের গাড়িতে উঠে পড়ি। সাক্কারার পথে গিজা থেকে বেরিয়ে পথের দুপাশে চোখে পড়ে সবুজ গাছপালা কিংবা একটুকরো বাগানে ঘেরা বাড়ি, স্কুল, মসজিদ অথবা দেয়াল দিয়ে ঘেরা কোনো কারখানা। কোথাও কোথাও অসমাপ্ত ভবনের র্নিমাণ কাজ চলছে। তবে বসতবাড়ি কিংবা অন্য যে কোনো দুটি স্থাপনার মাঝখানের খালি জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে পাঁচ সাতটা খেজুর গাছ। পথে ছোট ছোট ফসলের ক্ষেত এবং ক্ষেতের পাশে খেজুর পাতায় ছাওয়া ঝুপড়ি ঘর পেরিয়ে সাক্কারার দূরত্ব কমতে থাকলে খেজুর গাছের সংখ্যা বাড়তে থাকে। প্রথমে যা খেজুরের বাগান মনে হয়েছিল, তা এক সময় খেজুরের বনের মতো মনে হয়। অবশ্য খেজুরের ঘন বনও এক সময় উধাও হয়ে যায়, তার পরিবর্তে স্পষ্ট হয়ে উঠতে থাকে মরুভূমির দৃশ্য। গিজা থেকে সাক্কারার পঁচিশ কিলোমিটার পথের শেষ দিকে এসে আমরা দুপাশের বালিয়াড়ির মাঝখান দিয়ে কিছুটা উঁচু-নিচু পথ পাড়ি দিয়ে আবার উপরে উঠতে থাকি। পর্যটকের চোখে মরুভূমিকে তার প্রকৃত রূপে তুলে ধরতেই বোধহয় এখানে বালির সমুদ্রের মধ্যে কোথাও কোথাও মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে দুই একটা খেজুর গাছ।

(চলবে)

এসএ/

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ২

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১

Header Ad
Header Ad

পশ্চিমবঙ্গে সহিংসতা নিয়ে বাংলাদেশের মন্তব্য ‘অযৌক্তিক’: ভারত

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। ছবি: সংগৃহীত

পশ্চিমবঙ্গে সংশোধিত ওয়াকফ আইন নিয়ে সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় বাংলাদেশের উদ্বেগ প্রকাশের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে ভারত। নয়াদিল্লি থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ মন্তব্যকে ‘অযৌক্তিক’ বলে অভিহিত করেছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) বলেন, পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যে মন্তব্য এসেছে, তা ভিত্তিহীন এবং দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল।

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর যে নিপীড়ন চলে আসছে, তার প্রতি ভারতের দীর্ঘদিনের উদ্বেগের সঙ্গে এই বিষয়টির তুলনা টানার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা একেবারেই অসৎ প্রচেষ্টা। এমনকি যেসব অপরাধী ওইসব ঘটনায় জড়িত, তারা আজও বিচার এড়িয়ে চলেছে।”

এর আগে ৮ এপ্রিল, ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘু মুসলিমদের সুরক্ষা নিশ্চিতে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে আমরা ভারতের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”

এই মন্তব্যকেই ‘হস্তক্ষেপমূলক’ ও ‘অযৌক্তিক’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই সহিংসতা নিয়ে বাংলাদেশকে দায়ী করেছেন। গত ১৬ এপ্রিল নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে এক সভায় তিনি বলেন, “বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একসঙ্গে ষড়যন্ত্র করে পশ্চিমবঙ্গে অশান্তি ছড়িয়েছেন।”

প্রসঙ্গত, নতুন ওয়াকফ আইনের বিরোধিতায় মালদা, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও হুগলি জেলায় ব্যাপক বিক্ষোভ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে। আগুন লাগানো, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সড়ক অবরোধের মতো ঘটনাও ঘটেছে বলে জানা গেছে।

এই ইস্যু শুধু পশ্চিমবঙ্গেই সীমাবদ্ধ নয়—উত্তর প্রদেশসহ ভারতের আরও কিছু রাজ্যেও সংশোধিত ওয়াকফ আইন নিয়ে সংখ্যালঘু মুসলিমদের মধ্যে অসন্তোষ এবং নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।

Header Ad
Header Ad

দর্শনা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবলের আত্মহত্যা

পুলিশ কনস্টেবল শামীম হোসেন। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা চেকপোস্টে ইমিগ্রেশন বিভাগে কর্মরত পুলিশ কনস্টবল শামীম হোসেন (৩০) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে সহকর্মীরা শয়নকক্ষের জানালা দিয়ে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান।

নিহত শামীম কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ঝুটিয়াডাঙ্গা গ্রামের হাশেম আলীর ছেলে। তার কনস্টবল নং ৫৩২।

চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ইনচার্জ এসআই রমজান আলী জানান, শামীম হত অক্টোবরে দর্শনা ইমিগ্রেশনে যোগদান করে। যোগদানের পর থেকেই গত ৬ মাস ধরে নতুন ইমিগ্রেশন ভবনের ২য় তলার একটি কক্ষে বাস করে আসছিলেন। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় কয়েকজন সহকর্মী খোঁজ নিতে গেলে শামীম হোসেনের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান।

খবর পেয়ে সকালে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা, সহকারী পুলিশ সুপার দামুড়হুদা -জীবননগর) সার্কেল জাকিয়া সুলতানা, দর্শনা থানার ওসি শহীদ তিতুমীর ঘটনাস্থলে আসেন। এরপর বেলা ১১ টায় মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।

চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে আত্মহত্যা। তবে ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে।

পুলিশ কনস্টেবল শামীম হোসেন ২০১৫ সালে পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করে।

Header Ad
Header Ad

দাদা ও চাচার বিরুদ্ধে স্কুলছাত্রীকে বিষ প্রয়োগে হত্যার অভিযোগ

সংবাদ সম্মেলন। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

নওগাঁর আত্রাইয়ে বিষ প্রয়োগ করে দাদা ও চাচার বিরুদ্ধে সানজিদা (১৬) নামে এক কিশোরীকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) সকালে নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন নিহত কিশোরীর স্বজনেরা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নিহত কিশোরীর মামা ফজলুর রহমান। এ সময় অন্যদের মধ্যে ওই কিশোরীর মা খুশি বেগম, নানা মোসলেম প্রামাণিক, চাচা সাইফুল ইসলাম মন্ডল, মামা হামিদুল প্রামাণিক উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্য ফজলুর রহমান বলেন, নিহত কিশোরী সানজিদা আত্রাই উপজেলার আন্দার কোটা গ্রামের বাসিন্দা সৌদি প্রবাসী শামসুল মন্ডলের মেয়ে। সানজিদা উপজেলার ঘোষগ্রাম উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিল। তার বাবা কাজের সূত্রে দীর্ঘদিন ধরে সৗদি আরবে ও আরব আমিরাতে (দুবাই) অবস্থান করছেন। শামসুল মন্ডলের স্ত্রী খুশি বেগম মেয়ে সানজিদাকে নিয়ে স্বামীর বাড়িতে বাস করে আসছিলেন। শামসুল বসতবাড়ির বসতভিটার উত্তর পাশে বাবা মোসলেম মন্ডলের কাছ থেকে জমি কিনে নিয়ে ৪ বছর আগে মাটির বাড়ি তৈরি করেন। সেই বাড়িতেই সানজিদা ও তার মা বসবাস করতো। পরে ওই জায়গায় পাকা বাড়ি করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করলে শামসুলের বাবা মোসলেম ও ভাই সাজিম মন্ডল বাঁধ সাজে। সানজিদার দাদা শামসুলকে বসতভিটার উত্তর পাশে পাকা বাড়ি না করে দক্ষিণ পাশে নীচু জায়গায় বাড়ি করার জন্য বলে আসছিল। এ নিয়ে বিরোধ শুরু হয়। সানজিদার বাবা ও ভাই বিদেশে থাকায় বাড়ি করা নিয়ে বিরোধের জেরে সানজিদা ও তার মায়ের সঙ্গে তাঁর দাদা মোসলেম ও চাচা সাজিমের প্রায় পারিবারিক কলহ লেগে থাকতো। এই কলহের জেরে দাদা মোসলেম মন্ডল ও সাজিম মন্ডল হত্যার উদ্দেশ্যে গত ৯ এপ্রিল হত্যার উদ্দেশ্যে সানজিদার শরীরে বিষ প্রয়োগ করে। পরবর্তীতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১২ এপ্রিল রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে সানজিদা বলে গেছে তার দাদা ও চাচা তাঁর শরীরে ইনজেকশনের মাধ্যমে বিষ প্রয়োগ করেছে। তাঁর এই বক্তব্যের ভিডিও ধারণ করা আছে। এ ঘটনায় রাজশাহী রাজপাড়া থানায় একটি অপমৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে মোসলেম মন্ডল ও সাজিম মন্ডল পলাতক রয়েছেন।

লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, গত ৯ এপ্রিল সকালে সানজিদা প্রাইভেট পড়ার জন্য ঘোষগ্রাম উচ্চবিদ্যালয়ে যায়। প্রাইভেট পড়ে সে বেলা ১১টার দিকে বাড়িতে আসে। এ সময় সাংসারিক কাজে সানজিদার মা খুশি বেগম বাড়ির বাইরে ছিলেন। বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে সানজিদার দাদা মোসলেম ও চাচা সাজিম সানজিদার ঘরের ভেতরে যায়। দাদা মোসলেম সানজিদার পাশে বসে একপর্যায়ে তাকে জাপটে ধরে এবং চাচা সাজিম পকেট থেকে বিষের ইনজেকশন বের করে তার বাম হাতের শিরায় জোর ইনজেকশন প্রয়োগ করে। তারা সানজিদাকে হুমকি দিয়ে বলে এ কথা কাউকে বললে তার মতো বাবা ও ভাইকেও হত্যা করবে। সানজিদার মা খুশি বেগম বাড়িতে এসে মেয়েকে অসুস্থ অবস্থায় দেখতে পেয়ে প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় মেয়েকে নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে ওই দিনই তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১২ এপ্রিল রাতে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু (ইউডি) মামলা হয়েছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে সানজিদার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত মোসলেম ও সাজিমের ফাঁসি দাবি করা হয়।

সাজিম মন্ডলের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়ে তা বন্ধ পাওয়ায় অভিযোগের বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আত্রাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহাবুদ্দীন বলেন, ‘যে মেয়েটি মারা গেছে তার পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় যোগাযোগ করা হয়েছিল। এ ঘটনায় রাজশাহী রাজপাড়া থানায় একটি ইউডি মামলা হয়েছে। সেখানেই নিহত কিশোরীর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

পশ্চিমবঙ্গে সহিংসতা নিয়ে বাংলাদেশের মন্তব্য ‘অযৌক্তিক’: ভারত
দর্শনা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবলের আত্মহত্যা
দাদা ও চাচার বিরুদ্ধে স্কুলছাত্রীকে বিষ প্রয়োগে হত্যার অভিযোগ
গত ৯ মাসে এক আকাশ ভালোবাসা অর্জন করেছি : প্রেসসচিব
বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে সিরিজে আগ্রহ দেখায়নি বেসরকারি চ্যানেল, দেখাবে বিটিভি
সন্ত্রাসী তালিকা থেকে তালেবানকে বাদ দিলো রাশিয়া
ভিনগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব আছে, জানালেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক
ব্রাজিলের ভক্তদের ‘বানরের’ সঙ্গে তুলনা, নিষেধাজ্ঞার মুখে আর্জেন্টিনা
নারীরা কেন বয়সে ছোট পুরুষের সঙ্গে প্রেমে জড়াচ্ছেন?
জুলাই-মার্চ মাসে ৩০.২৫ বিলিয়ন ডলার পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ
সংঘর্ষে উড়ে গেছে বাসের ছাদ, তবুও ১০ কিলোমিটার চালিয়ে ৬০ যাত্রীকে বাঁচালেন চালক
কোলের সন্তান বিক্রি করে অলংকার, মোবাইল কিনলেন মা
চুয়াডাঙ্গায় বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে দু’জন নিহত
ইয়েমেনের তেল বন্দরে মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ৩৮
হবিগঞ্জে ট্রাক-পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ৪
সৌদি আরব-মরক্কো থেকে ৪৬৬ কোটি টাকার সার কিনবে সরকার
গাইবান্ধায় মাদক মামলায় ৩ যুবকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের আহ্বান জানালেন প্রধান উপদেষ্টা
তোপের মুখে ওয়াক্‌ফ আইন স্থগিত করল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট
নিজেকে বরিশাল সিটির মেয়র ঘোষণার দাবিতে মামলা করলেন ফয়জুল করীম